রেড রোজ পর্ব ৩২

রেড রোজ পর্ব ৩২
ফারহানা নিঝুম

পুরো বাড়ি সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
আর সন্ধ্যার ঐশ্বর্য এবং উৎসার এংগেইজম্যান্ট পার্টি।
সকাল প্রায় ১১ টা ছুঁই ছুঁই শপিং করতে বেরিয়েছে উৎসা, ঐশ্বর্য এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেছে। ছোট্ট করে হিজাব বেঁধে নেয় উৎসা।

মার্সিডিজ কারে বসে আছে ঐশ্বর্য, অপেক্ষা করছে উৎসা আর কেয়ার।নিকি সেই কখন চলে,পিছনের সিটে নিকি, রুদ্র, জিসান, বসেছে। সামনের সিটটা ওরা ইচ্ছে করেই উৎসার জন্য খালি রেখেছে। কেয়া আর উৎসা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো, দুজনেই একই রকম লং জামা পড়েছে ড। ওড়না এক পাশে দিয়ে বড় করে হিজাব বেঁধেছে।কেয়া ভীষণ খুশি বাঙালি স্টাইলে হিজাব বেঁধে, রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো। মেয়েটা কে দারুণ মানিয়েছে।
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে,গুলুমুলু মুখটা ইশ্ কী কিউট লাগছে! হিজাবে দ্বিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছে,কেয়া গিয়ে পিছনের সিটে বসলো। উৎসা ঐশ্বর্যের পাশেই বসলো, ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভ করছে।
গাছ পালা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের গাড়ি, কিন্তু জিন্দাবাজার যেতেই জ্যামে আটকে গেল। বরাবরই জিন্দাবাজারের এই দিকে অনেক জ্যাম থাকে, ঐশ্বর্যের প্রচন্ড রকম বিরক্ত লাগছে।
কখন জ্যাম ছাড়বে আর কখন ওরা মার্কেটে যাবে?
জার্মানি হলে এতক্ষণে গিয়ে সব শেষ করে ফিরে আসতো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গাড়িতে বসে আছে সবাই, অপেক্ষা করছে জ্যাম, ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ খেয়াল না করলেও আচমকা চোখ পড়লো উৎসার। ঐশ্বর্য অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে,তার পেট গুড়গুড় করছে। মন চাচ্ছে এই রেড রোজের গালে ঠাস করে দুটো চুমু খেতে। উফ্ স্মুথ স্কিন।
“এভাবে কী দেখছেন?”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“এই মূহুর্তে কী ইচ্ছে করছে জানো?”
উৎসা কিছুটা কেঁপে মিনমিনে গলায় বলল।
“কী?”
ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে বললো।
“চুমু, কিস কিস।”

উৎসা চোখ বড় বড় করে তাকালো,পিছনে তাকিয়ে দেখে যে যার মতো বসে আছে। উৎসা ঐশ্বর্যের মতো ফিসফিসিয়ে বললো।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য পরিবর্তন হয়ে গেল, সেকেন্ডের মধ্যে উৎসার গালে ভ’য়ংকর চুমু খেলো।পর মূহুর্তে জেন্টালম্যান হয়ে গেল, শুধু থমকে গেল উৎসা। নিঃশ্বাস গলায় আটকে আছে,কী বলবে বুঝতে পারছে না।
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“কেউ দেখেনি।”
তৎক্ষণাৎ পিছন থেকে রুদ্র বলে উঠে।
“উপ্স স্যরি দেখে ফেলছি।”

উৎসা পিছনে তাকিয়ে দেখে রুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো, রুদ্র পরেই জিসান বলে উঠে।
“আমি কিন্তু সত্যি কিছু দেখিনি।”
উৎসা এবার জিসানের দিকে তাকালো, জিসান কপালে হাত রেখে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। এদিকে কেয়া আর নিকি হাসতে হাসতে শেষ।
উৎসার নাকের পাটা ফুলে ওঠে,ঠাস করে ঐশ্বর্যের বাহুতে কিল বসিয়ে দিল।
“অস’ভ্য অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো, ইশ্ বেইবি তার সামথিং ফিল দিচ্ছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর আলহামরা মার্কেট পৌঁছে গেল,এখানে কিছু পছন্দ হলো না কারোই। ঐশ্বর্য ইউনিক কিছু নেবে, ব্যস হয়ে গেল। সবাই মিলে চললো ব্লু ওয়াটার মার্কেটে।
একে একে লেহেঙ্গা দেখছে উৎসা,নিকি আর কেয়া দুজনেই দেখছে। উৎসা কে কোন টাতে মানাবে? সবাই একে বারে বিয়ের শপিং করেই বাড়ি ফিরবে বলে ঠিক করেছে।
উৎসা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা মিষ্টি কালারের মধ্যে লেহেঙ্গা দেখছে। ঐশ্বর্য এসে পিছনে দাঁড়ালো,তার চোখে পড়ে একটা লাল টকটকে লেহেঙ্গা।ওইটা হাতে তুলে নেয়।
“রেড রোজ এটা ট্রাই করো।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত থেকে লাল লেহেঙ্গা নিলো,গায়ে ধরতেই ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“মাই রেড রোজ।

উৎসার নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগছে। উফ্ ঐই লোকটা আস্ত নির্লজ্জ।
কিয়ৎক্ষণ পর পার্টির জন্য একটা গাউন নিলো উৎসা,নিকি বললো এটা ট্রায়াল রুমে গিয়ে ট্রাই করে আসতে। উৎসা গাউন নিয়ে ট্রায়াল রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
ঐশ্বর্য পিছন পিছন যেতে থাকে, জিসান দেখে বলে উঠল।
“শেইম লেস ম্যান।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করে চুমু ছুড়ে বলে।
“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ, সামথিং নিডস্!”
জিসান কপাল চুলকে নেয়,এই ছেলে ভালো হবে না।

“তুমি কী সত্যি ওদের বিয়েতে মত দিয়েছো শহীদ?”
আফসানার এহেন প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করলো শহীদ।
“তো আমি কী তোমার মত নাটক করি?”
আফসানা দাঁত কটমট করে বললো।
“আমি নাটক করি?”
শহীদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
“কেন কয়েক বছর আগে যে নাটক করেছিলে তা কী ভুলে গেছো?”
“মুখ সামলে কথা বলো শহীদ!”
শহীদ প্রচন্ড রেগে গেলো।

“তোমার লজ্জা বলতে তো কিছুই নেই,আরে এবার তো কিছুটা লজ্জাবোধ করো।ছিহ্।”
আফসানা বেশ বিরক্ত,বছর কয়েক আগে শহীদ কে ছেড়ে আফসানা চলে গিয়েছিল। কিন্তু যখন শুনলো শহীদ জার্মানিতে খুব বড় একটা কোম্পানিতে কাজ করে সেদিন বেশ অবাক হলো আফসানা।মনে মনে খুব আফসোস জাগে তার,সে চেয়েছিল আবার ফিরতে।সেই হিসেবে জার্মানিতে শহীদের খুঁজ খবর নিতে শুরু করে।
খুঁজ নিয়ে জানতে পারে শহীদ আর মনিকা চৌধুরী নামে একটি মেয়ে সম্পর্কে। আফসানা ভীষণ পরিমাণে রেগে গেল,সে চাইছিল শহীদ তার কাছে ফিরুক। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারে শহীদ আর ওই মেয়ে বিয়ে করেছে।
আফসানা এবার আর থাকতে পারলো না, একদিন সকালে শহীদ কে ফোন করে বলে সে প্রেগন্যান্ট।যা পুরোটাই নাটক ছিল।

শহীদ ভীষণ পরিমাণে ঘাবড়ে গেল, আফসানা যাই করে থাকুক। তাদের বাচ্চার তো কোনো দোষ নেই! শহীদ কে এটা সেটা বুঝিয়ে আবার ফিরতে এক প্রকার বাধ্য করে আফসানা। শহীদ বাচ্চার কথায় বাধ্য হয়ে সব ছেড়ে ছুড়ে বাংলাদেশ ফিরে এলো।
বাংলাদেশ এসে শহীদ জনসম্মুখে আফসানা কে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের চার মাসের মাথায় জানতে পারে আফসানা প্রেগন্যান্ট না।সবই তার মিথ্যে নাটক ছিল।
আফসানা কে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল শহীদ, কিন্তু ছয় মাসের মাথায় আফসানা কনসিভ করে। এবারেও বাধ্য হয়ে শহীদ আফসানা কে মেনে নেয়। গুনে গুনে অনেক গুলো বছর পর শহীদ জানতে পারে তার আরও একটি ছেলে আছে। রুদ্রর বড় ভাই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী, শহীদ মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে।মনিকা কোনো অভিযোগ করলো না, শুধু চেয়েছিল তার স্বামী তার ছেলেকে একবার ছুঁয়ে দেখুন।
ঐশ্বর্য এসেছিল, শুধু দুদিনের জন্য, সেই ঐশ্বর্য কে দেখে ভেতর জ্ব’লে উঠে আফসানার।স’তীনের ছেলে মেয়ে কে কেউ বা দেখতে পারে?
নিজের অতীত মনে পড়তেই রাগে ফুসে উঠে আফসানা।

“আহ্!”
ট্রায়াল রুমে প্রবেশ করা মাত্র হুড়মুড়িয়ে কেউ একজন ঢুকে দরজা লক করে দেয়।পিলে চমকে উঠে উৎসার।
“আপনি!”
ঐশ্বর্য কিঞ্চিৎ ঘাড় বাঁকালো, আচমকা উৎসা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
“আরে কী করছেন? উফ্!”
উৎসা কিছুই বলতে পারলো না,আর না বুঝলো।তার কিছু বুঝে উঠার আগেই ঐশ্বর্য এলোপাথাড়ি চুমু খায় পুরো মুখশ্রীতে।
“বেইবি সামথিং ফিল।”
উৎসা নেতিয়ে পড়ছে, ঐশ্বর্যের বেসামাল হাতের স্পর্শে।ঘাড়ে হাজার বার নিজের অধর ছুঁয়ে দিচ্ছে।
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায়!”
উৎসার এ কথা বলা মাত্রই ঐশ্বর্য ঘাড়ে কা’ম’ড় দেয়।
“ইশ্!”

ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো, উৎসা আন্দাজ করতে পেরে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“সুইটহার্ট ক্যান আই কিস ইউ!”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়, শ’য়তা’ন লোক একটা। এতক্ষণ জোর করলো, এখন পারমিশন নিচ্ছে? বাহ্ রে মানবতা!
“একদম না, আমি কিন্তু চিৎকার করব।”
ঐশ্বর্য খানিকটা সরে গিয়ে দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“করো চিৎকার,দেখি কে কী করতে পারে!”
উৎসার মুখ খানি চুপসে গেল, ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসার ললাটে শব্দ করে চুমু খায়।
ঐশ্বর্য সিস বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে পড়ল। উৎসা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে,সে এটুকু বুঝে গেছে এই লোক শোধরানোর না।

শপিং শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল সবার।
জিসান নিকির জন্য কিছু নিয়েছে, আপাতত লুকিয়ে রেখেছে।সময় মতো দিয়ে দেবে, কিন্তু ম্যাডাম তো তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না!
বেচারা জিসান,মনে মনে হতাশ হলো। জার্মানির কত মেয়ে তার জন্য পাগল,অথচ এই মেয়ে তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে!
সবাই যে যার মতো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল, সবাই একে বারে ডিনার করেই ফিরেছে।
উৎসা ড্রয়িং রুমের লাইট অফ করে রুমের দিকেই যাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ কানে এলো গিটারের টুংটাং শব্দ, উৎসা ঘাড় ঘুরিয়ে উপরে দেখার চেষ্টা করলো।
শব্দটা মূলতঃ ছাদ থেকে আসছে, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“এত রাতে ছাদে কে?”

উৎসা বড় বড় পা ফেলে ছাদের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল, ভেতরে উঁকি দিতেই দেখলো ঐশ্বর্য আর জিসান বসে আছে।
“এ কি মিস বাংলাদেশী তুমি এখনও জেগে আছো!”
জিসানের কথায় মৃদু হেসে বলল উৎসা।
“না আসলে…
“বুঝতে পেরেছি, আমার ফ্রেন্ড কে মিস করছো।”
উৎসা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য ফিক করে হেসে উঠলো। উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল।
“আমি অন্য একটা কাজে এসেছি। গিটারের শব্দ পাচ্ছিলাম।”
জিসান জিভ কা’ট’ল, ঐশ্বর্য আমতা আমতা করে বলল।
“কিসের গিটার?”

উৎসা মাথা চুলকে বলে।
“আমি তো শুনতে পেলাম।”
“ভুল শুনেছো,কানে প্রবলেম। ডক্টর দেখাও।”
ঐশ্বর্য এক প্রকার উৎসা কে ধমক দিয়ে চলে গেল। উৎসা কিছুই বুঝলো না।
“যা বাবা জিজ্ঞেস করাতে এত রাগলো কেন?”
জিসান দাঁত কে’লিয়ে বলে।
“ভুল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ফেলেছো।চলো চলো ঘুমাতে যাও।”

রেড রোজ পর্ব ৩১

উৎসা গুটি গুটি পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেল, বন্ধু আর সে দুজনেই পাগল।কখন কী হয় কেউই জানে না, আস্ত পাগল।
উৎসা যেতেই ঐশ্বর্য উঁকি দিয়ে দেখল, জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য ফের ছাদের দিকে গেল। সাথে গেল জিসান, দু’জনে মিলে একটা বড় সারপ্রাইজ দিতে চাইছে উৎসা কে।

রেড রোজ পর্ব ৩৩