রেড রোজ পর্ব ৩৭
ফারহানা নিঝুম
স্নিগ্ধ সকাল ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে এলো উৎসার। নড়তে গিয়ে বুঝতে পারলো কেউ তার উপর আছে। উৎসা ভীত নয়নে তাকালো, ঐশ্বর্য। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে উৎসা কে।উৎসা চমকালো, হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেছে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, হয়তো সে জেগেই আছে। উৎসার যতটুকু মনে আছে সে তো বাইরে দরজার কাছে শুয়ে ছিল!
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো চোখে তাকানোর চেষ্টা করলো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“আই লাভ ইউ।”
মা তাল করা কন্ঠে ভালোবাসার কথা শুনে কেমন বুক দুরু দুরু করছে উৎসার।
“বাট আই হেইট ইউ।সরুন আমার উপর থেকে!”
ঐশ্বর্য ফট করে চোখ খুলে,উৎসা কে চেপে ধরে আছে।
“উম্মাহ্উম্মাহ্।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করতেই উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য ফের হাসলো,উৎসার কপালে অধর ঠেকিয়ে বলে।
“তুমি আমার ওয়াইফ, আমি তোমাকে ছুঁতে পারি তাই না রোজ?”
উৎসা চমকে উঠে।
“একদম না। আপনি আমার কাছাকাছি আসবেন না,সরে যান।”
ঐশ্বর্য ফিক করে হেসে উঠলো,সে কী বারণ শুনবে? অবশ্যই না!সে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী, যেটা তার সেটা তার-ই হোক জোর করে বা ছ’ল’না।
ঐশ্বর্য উৎসার গলার উপরিভাগে চুমু খেলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“বউ।”
উৎসা অস্ফুট স্বরে বলল।
“আপনি সরুন।”
“উঁহু।”
উৎসা ঐশ্বর্যের চুলে হাত রাখলো।
“আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন, আমার সঙ্গে….
“হুস,ঠকাইনি। আমি শুধু ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড ছিলাম রোজ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না। ঐশ্বর্য উৎসার হাত বুকে চেপে ধরে।
“চলবে না তুমি ছাড়া,হ্যা আমি শুদ্ধ পুরুষ নই। খুবই অশুদ্ধ পুরুষ, তোমার ভাবনা চিন্তার থেকে খারাপ।বাট আই লাভ ইউ।”
ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেলো,উৎসা উঠতে চাইলো। ঐশ্বর্য সরে গেল,উৎসা উঠে বসলো। ঐশ্বর্য পিছন থেকে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
উৎসা ফিক করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য এই প্রথম বাংলায় ভালবাসি বললো হয়তো!
“রোজ রোজ রোজ আমি তোমাকে ভালোবাসি।রিক চৌধুরী তোমাকে ভালোবাসে।”
উৎসা ঐশ্বর্যের গালে হাত ছুঁয়ে বলে।
“যেদিন আপনি আমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন সেদিনই এই ভালোবাসায় সায় দেব।”
উৎসা নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্য বিছানা থেকে উঠে বাইরের দিকে গেল। উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“তুমি কি আমাকে বোন ভাবো?”
উৎসা রাগের মাথায় কথাটা বলে দেয় নিকি কে। নিকির ভেতর টা কেঁপে উঠে,সে বরাবরই উৎসা কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
নিকি মলিন হেসে বলল।
“আজকে তোর মনে হচ্ছে আমি আদেও তোকে ভালবাসি কী না তাই তো?”
উৎসা চুপ করে গেল , আসলেই তার এভাবে বলা উচিত হয়নি।
“আপু তুমি কী করে আমাকে না জানিয়ে এভাবে পাঠিয়ে দিলে?তাও শুধু ঐশ্বর্য ওনার কথায়?”
নিকি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“তোর ভালোর জন্যই। ঐশ্বর্য ভাইয়া তোকে ভালোবাসে, এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি। বিশ্বাসও করি।”
“কিন্তু আমি করি না।”
উৎসার সাফ জবাব।
“ওই লোকটা একদম বাজে, ওনার সঙ্গে যা হয়েছে আমি এই মূহুর্তে মনে করি সব ঠিক। আমি ওই লোকটা কে একটুও ভালোবাসি না!”
নিকি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কী বলবে বুঝতে পারছে না।
অফিসে আজ জরুরী মিটিং আছে, ঐশ্বর্য আজ আসতে চাইছিল না। কিন্তু কী করবে?কাজ তো করতেই হবে।
অনেক গুলো ডিল প্লাস ফাইল সব কিছু দেখতে হবে।
ঐশ্বর্য আপাতত ফাইল গুলো চেক করছে,এর মধ্যে জিসান এসে উপস্থিত হলো।সে সবে একটা মিটিং শেষ করে বেরিয়ে এসেছে।
“রিক দুটোর দিকে তোর একটা মিটিং আছে।”
ঐশ্বর্য মাথা দুলিয়ে বলে।
“হ্যা এই জন্য ফাইল গুলো স্টাডি করে নিচ্ছি।”
জিসান আর ঐশ্বর্য কাজ গুলো এগিয়ে রাখলেন।এর মাঝে রাজেশ চৌধুরী এসে ঐশ্বর্যের সঙ্গে কিছু জরুরী কথা আলাপ করে নেয়।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল ঐশ্বর্যের। এদিকে উৎসা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে কলেজের পড়া শেষ করেছে। ঐশ্বর্য নেই সেই জন্য আরামের একটা ঘুম দিল। কলিং বেল বাজছে,মিস মুনা গিয়ে দরজা খুলে দিল।
মিস মুনা সচরাচর পাঁচার মধ্যে চলে যান, কিন্তু আজ এখনও আছেন।
“এ কি মিস মুনা আপনি এখনও এখানে?”
মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলো।
“হ্যা স্যার এখুনি চলে যাব, ভাবলাম আপনি আসলেই যাই। ম্যাম তো ঘুমাচ্ছেন তাই।”
ঐশ্বর্য বুঝলো।
“ওকে, আপনি আর কষ্ট করবেন না।দেরী হয়ে গেছে আপনার।”
মিস মুনা ঐশ্বর্যের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে ডোর লক করে দেয়, উঁকি দিয়ে দেখলো উৎসা স্টাডি রুমে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। ঐশ্বর্য বিরক্ত করলো না, আপাতত ফ্রেশ হওয়া দরকার। ঐশ্বর্য বেড রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো,টাওয়াল দিয়ে মাথা বুঝতে বুঝতে স্টাডি রুমে গেল।
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে,উৎসা ঘুমের মধ্যে মৃদু হাসছে। ঐশ্বর্য ঝুকে উৎসার কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়,শীতল ছোঁয়া পেয়ে নড়েচড়ে বসল উৎসা। পিটপিট চোখ করে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো,সদ্য শাওয়ার নিয়ে এসেছে ঐশ্বর্য, চুল থেকে পানি টুপ টুপ করে পড়ছে।উৎসা চোখ সরিয়ে, শ’য়তা’ন পুরুষ। খালি ঠকানোর ধা’ন্দা, ঐশ্বর্য বাচ্চাদের মতো করে বললো।
“জান খিদে পেয়েছে।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“তো খান গিয়ে আমি কি করব?”
“টেবিলে দিয়ে দাও।”
উৎসা ত্যা’ড়ামো করলো না , অবশ্যই তা করলে ঐশ্বর্য তাকে বিরক্ত করবে।
উৎসা টেবিলে খাবার সার্ভ করলো, ঐশ্বর্য বেশ আরাম করে খেতে বসে।উৎসা কাউচে গিয়ে বসলো।
“সুইটহার্ট তুমি খাবে না?”
উৎসা টিভি অন করে বলে।
“আমি খেয়ে ফেলেছি।”
“গুড গার্ল।”
উৎসা টিভি দেখতে বসলো, ঐশ্বর্য এক পলক দেয়াল ঘড়িটা দেখে নেয়।রাত ১২ টা ৫ মিনিট ছুঁই ছুঁই।
ঐশ্বর্য খাওয়া শেষে উৎসার পাশে এসে বসলো। উৎসা খুব মনোযোগ দিয়ে কে জি এফ মুভিটা দেখছে। ঐশ্বর্যের বিরক্ত লাগলো, এগুলো মুভি? ঐশ্বর্য রিমোট নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে দেয়। একটা ইংলিশ মুভি দেয়,উৎসা বিরক্ত হলো। ঐশ্বর্য টিভির দিকে তাকিয়ে আছে, তৎক্ষণাৎ উৎসা চমকে উঠে।একটা অংশ শুরু হয়েছে, যেখানে নায়িকা নায়ক কে কিস করছে।একে অপরের মধ্যে ডুবে আছে,উৎসা খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এদিকে ঐশ্বর্য এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উৎসা ফট করে রিমোট দিয়ে টিভি অফ করে দিলো, ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে।
“আস্তাগাফিরুল্লাহ এসব কি দেখছেন? লজ্জা বলতে কিছু নাই?”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, সত্যি লজ্জা বলতে কিছু নেই তার মাঝে।এটা নিয়ে ঐশ্বর্যের গর্বের শেষ নেই, আচমকা উৎসার হাত টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো।
“সুইটহার্ট আমার লজ্জা বলতে কিছু নেই, তুমি চাইলে সব প্র্যাকটিক্যাল করে দেখাবো।”
উৎসা মূহুর্তে চুপসে গেল, ঐশ্বর্য গভীর চোখে তাকায় গোলাপী অধর যোগলের দিকে।
“দদেখুন এটা কিন্তু….
“একবার প্লিজ!”
উৎসা মিহিয়ে যাচ্ছে, ঐশ্বর্য উৎসার অধর আঁকড়ে ধরতে যাবে সেই মূহূর্তে উৎসা দূরে সরে গেল। ঐশ্বর্য আকস্মিক ভাবে চমকে উঠে, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার।
উৎসা কিছুটা দূরত্ব রেখে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।
“কী হয়েছে?এমন করছো কেন?”
উৎসা ভ্রুকুটি করে তাকালো। ঐশ্বর্য ফের বললো।
“কাছে না আসলে কী করে বোঝাব ভালোবাসি?”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্যের ভাবসাব মোটেও সুবিধার না।
“উঁহু, একদম না।”
উৎসা উঠে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য সাথে সাথে উঠে গেল। নিজের সিল্কি চুল গুলো পিছন দিকে ঠেলে দিলো।
“তোমার এসব পড়ে দেখে নেব রোজ। আপাতত আমার কাছে আসো।”
ঐশ্বর্য এক হাতে টেনে উৎসা কে কাছাকাছি নিয়ে এলো।
“কাছে চাই ইমিডিয়েটলি!”
উৎসা চমকালো,ভয় হচ্ছে তার।সে দূরে সরে গেল।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী সরেন।”
ঐশ্বর্য রাগলো, দাঁতে দাঁত পিষে উৎসা কে জাপটে ধরে।
“রাখ তুই তোর সরা সরি, আমি কাছে চাই।এই মূহুর্তে, ইমিডিয়েটলি।”
উৎসা তম্বা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য ওর গলার ওড়না দিয়েই ওর হাত বেঁধে ফেলে।
“কি করছেন? ছাড়ুন আমায়!”
“চুপ।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে কোলে তুলে নিয়ে বেড রুমে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে দু হাত বেডের দুদিকে বেঁধে দেয়।
“উফ্ সুইটহার্ট তোমার জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো।
“ঐশ্বর্য প্লিজ হাত খুলে দিন।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“অ্যাম স্যরি, আপাতত ভালোবাসা ফিল করাতে হবে।”
“দদেখুন ঐশ্বর্য আপনি কিন্তু আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন!খুলে দিন।”
ঐশ্বর্য শুনলো না, কপালের ঘাম মুছে বলে।
“এখুনি আসছি।উম্মাহ্।”
রেড রোজ পর্ব ৩৬
ঐশ্বর্য ওয়াশ রুমে চলে গেল, এদিকে উৎসা অসহায় চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।কী করবে এখন?এত শক্ত করে বেঁধেছে খুলতেও পারছে না।খক শব্দ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য,উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে পানি দিয়ে এসেছে, ঐশ্বর্য অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে।তার অ্যাডামস আপেল কেঁপে উঠলো,উৎসা দেখলো।ভয়ও পাচ্ছে, ঐশ্বর্য দু কদম এগিয়ে আসতেই অন্তর আ’ত্মা লাফিয়ে উঠছে তার।
“আমি আপনাকে…..
“হিসস কোনো কথা না।”