রেড রোজ পর্ব ৩৮
ফারহানা নিঝুম
রুম জুড়ে শুধুই দু’জন মানব মানবীর নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। ঐশ্বর্য নিজের উত্তাপে উৎসা কে জ্বা’লিয়ে পু’ড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে।অথচ উৎসা কিছুই করতে পারছে না, করবে কী করে ঐশ্বর্য যে তার হাত দুটো বেঁধে রেখেছে।
ঐশ্বর্য যখন উৎসার অধর ছেড়ে গলায় মুখ গুঁজে দেয়, তৎক্ষণাৎ ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে উৎসা।এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে দম বন্ধ করেই মে’রে ফেলবে। উৎসা ফিসফিসিয়ে বললো।
“হাতটা খুলে দিন না?”
ঐশ্বর্য মা’তাল কন্ঠে বলে।
“ছটফট করবে তুমি!তার থেকে বাঁধা থাকুক।”
“উঁহু করব না ছটফট খুলে দিন।”
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে একে একে বাঁধন আলগা করে দিল। উৎসা ছাড়া পেয়ে ঐশ্বর্য কে জাপটে জড়িয়ে ধরে,রাগে লম্বা নখ গুলো একে বারে গেঁথে দেয় ঐশ্বর্যের পিঠে। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,মুখ তুলে তাকায় উৎসার দিকে।
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, ঐশ্বর্য মুখে ফু দেয়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“র’ক্তা’ক্ত করছো সুইটহার্ট?”
উৎসা ফোড়ন কে’টে বলে।
“ভালোবাসার এত্ত শখ তাহলে তো র’ক্তা’ক্ত হতেই হবে।”
উৎসা ছোট ছোট চোখ করে তাকালো, অতঃপর উৎসার ঘন নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিজের নিঃশ্বাস মিলিয়ে দিলো।জামার ফিতায় টান দিতেই তা আটকে গেল, ঐশ্বর্য ফের টানলো। কিন্তু খুলেনি,রাগে ধপ করে উঠে বসলো বিছানা। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের উদোম গায়ের দিকে।
ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে পাগলের মতো টেবিল থেকে শুরু করে ড্রয়ার চেক করতে লাগলো। উৎসা উঠে বসলো।
“কি খুঁজছেন?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পেয়ে বিজয়ী হাসি হাসলো। ঐশ্বর্যের হাতে সার্জিক্যাল নাইফ দেখে আঁ’তকে উঠে উৎসা।
“এএটা কী? আআপনি এটা দিয়ে কী করবেন?”
“তোমার ফিতে বাধা দিচ্ছে।একে বারে কে’টেই ফেলি।”
উৎসা ভয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো।
“এটা কিন্তু ঠিক নয়, আমার পিঠ কে’টে যাবে!”
ঐশ্বর্য দু পা এগিয়ে আসতেই উৎসা চিৎকার করে বলে।
“না না আমি খুলে দিচ্ছি।”
ঐশ্বর্য থেমে গেল,উৎসা ফিতে ধরে টানাটানি করেও পারলো না।
“আরে বাবা খুলে যা!”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো। এবার নাইফ ফেলে বললো।
“সুইটহার্ট উম্মাহ্।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিঃশ্বাসের ঘনত্ব বাড়ছে, ঐশ্বর্য পাগলামির উর্ধ্বে। উৎসা হিমশিম খাচ্ছে এই পুরুষ কে সামলাতে। ঐশ্বর্য বারংবার উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে একটা শব্দই আওড়াচ্ছে।
“আই লাভ ইউ রোজ,আই লাভ ইউ ইনফিনিটি।”
উৎসা হেসে দেয়, পুরুষ পাগল। বিশেষ করে তার ব্যক্তিগত পুরুষ একটু বেশীই পাগল। ঐশ্বর্য কে নতুন রূপে আবিষ্কার করলো উৎসা,চমকে উঠে সে। অন্তর আ’ত্মা শুকিয়ে আসছে তার,এই কী সেই অস’ভ্য রিক চৌধুরী!তার এই ভিন্ন রূপ হাত পা অসাড় করে দিতে সক্ষম।
“ঐশ্বর্য!”
উৎসা মুখ এলোপাথাড়ি চুমু খেলো ঐশ্বর্য।
“হুস কোনো কথা না। একদম চুপ!”
উৎসা চুপসে গেল।
রাতের শেষ প্রহরে ঐশ্বর্যের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে উৎসা।
“মা তুমি আমাকে ভালোবাসো?”
অনেক দিন পর নিকি তার মায়ের কাছে এসে শুয়েছে। আচমকা মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠেন আফসানা পাটোয়ারী।
“হঠাৎ এটা বলছিস কেন?”
নিকি মলিন হাসলো।
“মাঝে মাঝে তোমাকে দেখলে অবাক লাগে মা, তুমি এমন কেন? তুমি তো আমাদের ভালোবাসতে পারতে?”
আফসানা পাটোয়ারী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, তবে কী সত্যি তিনি তার সন্তানদের ভালোবাসেন না?
শহীদ বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো,বেশ অবাক হলো।এত বছরেও আফসানা তার সন্তানদের মনে জায়গা করে নিতে পারলো না।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিকির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছে জিসান। তার ভীষণ খারাপ লাগছে, নিকির মনটা আজ বড্ড ভার হয়ে আছে।
জিসানও বেশ বিরক্ত,মনটা তার বাংলাদেশে পড়ে আছে ঐশ্বর্য ঠিকই তার বউ নিয়ে চলে এসেছে, অথচ বেচারা জিসান একা রয়ে গেল।
মনে মনে হতাশ হলো জিসান, আকাশ পাতাল ভেবে রুমের দিকে চলে গেল। না সে আর থাকতে পারবে না, আপাতত ঐশ্বর্য কে বুঝিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে একে বারে নিকি কে বিয়ে করে তবেই ফিরবে।
সকালের মিষ্টি রোদ মুখে এসে পড়ছে ঐশ্বর্যের। বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে নেয়, তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্ক জ্ব’লে ওঠে।ঘুম জড়ানো চোখে পিটপিট করে তাকালো,উৎসা জেগে আছে। ঐশ্বর্য আলতো করে উৎসার পেটে হাত দিলো, গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে।যা মেয়েটার খিদে পেয়েছে এটা বুঝতে বাকি নেই ঐশ্বর্যের।
শর্ট প্যান্ট পড়ে বেড থেকে নেমে কিচেনে গেল। কিচেনের লাইট অন করে ফ্রিজ থেকে দুধের গ্লাস বের করে গরম করে নেয়। অন্য গ্যাসে ডিম সেদ্ধ করতে বসালো। ঐশ্বর্য চোখ দুটো খুলে রাখতেই পারছে না, তবুও উৎসার জন্য এটুকু করতেই হবে। অবশেষে কাস্টার্ড দুধ আর ডিম ট্রে করে কিচেনের লাইট অফ করে বেরিয়ে গেল ঐশ্বর্য।
উৎসা ঐশ্বর্যের সাদা শার্ট পরে চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছে। ঐশ্বর্য এসে বিছানায় বসলো,ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“রোজ খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি।”
ঐশ্বর্য চামচ দিয়ে ডিম কেটে উৎসার মুখে তুলে দেয়,উৎসা বেশ আরাম করে খেলো। আসলেই খিদে পেয়েছে, এদিকে ঐশ্বর্য কে দেখে হাসি পাচ্ছে।বেশ ভালো উন্নতি হয়েছে, না হলে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে এলো! বাহ্ বাহ্ উৎসা তোর ভাগ্য দারুণ।
ঐশ্বর্য উৎসার খাওয়া শেষে ট্রে টেবিলের উপর রাখতে যাবে তখনই উৎসা চামচ নিয়ে ঐশ্বর্যের মুখে ধরলো। ঐশ্বর্য বিনা বাক্যে খেয়ে নিলো, খাওয়া দাওয়া শেষে আবারো লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।উৎসা নিজ থেকে ঐশ্বর্যের বুকে নিজের জায়গা করে নেয়। দুজনের ঘুম প্রয়োজন, ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গিয়েছিল। এখন আবার উঠতে হয়েছে, ঘড়িতে নয়টা বাজে। ঐশ্বর্য চায় উৎসা আরেকটু ঘুমাক।
“রোজ পেটে পেইন হচ্ছে?”
“উঁহু।”
ঐশ্বর্য নৈঃশব্দ্যে হাসলো ,উৎসার চুলের ভাঁজে চুমু খায়।
“আই লাভ ইউ।”
“হুঁ।”
ঐশ্বর্য কিছুটা রাগলো ,আই লাভ ইউ অর্থ হুঁ!
সূর্য উঠেছে, চারিদিক সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে।
উৎসা,উঠে দেখলো ঐশ্বর্য নেই। উৎসা ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফিরে এলো।বাইরে আসতেই দেখতে পেলো মিস মুনা কে।
“গুড মর্নিং ম্যাম।”
“গুড মর্নিং মিস মুনা।”
উৎসার চোখ দুটো ঐশ্বর্য কে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও নেই,উৎসা হাঁটতে হাঁটতে করিডোর পার করে যেতেই দেখলো সুইমিং পুলে ঐশ্বর্য সুইমিং করছে। চমকে উঠে উৎসা, এখনও গা কাঁপানো ঠান্ডা, কিন্তু ঐশ্বর্য সুইমিং করছে?
“হেই সুইটহার্ট।”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“আপনি কী পাগল?”
ঐশ্বর্য সাঁতরে এগিয়ে এলো, উৎসার দিকে।
“তোমার জন্য পাগল রেড রোজ, উম্মাহ্।কাল রাতের পর থেকে তো আমি আরও শেষ!”
ঐশ্বর্যের কথায় অস্থির হয়ে উঠে উৎসা, এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে। ঐশ্বর্য ফিক করে হেসে উঠলো।
উৎসা ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে।
“বাজে কথা ছাড়ুন,এই সময় সুইমিং পুলে কী করছেন?মা গোঁ মা শরীরে চর্বি ভরা!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“হায় আমার রোজের আগুনে পুড়ে যাচ্ছি। সে তো কাছে আসবে না,তাই আগুন নিভাচ্ছা সুইমিং করে!”
উৎসা চোখ বড় বড় তাকালো।
“আস্তাগাফিরুল্লাহ, আপনি এত বাজে কেন?”
“কারণ আমার রোজ একটু বেশি ভালো। আমি বেশী ভালো হলে রোজ সুখ কম পাবে।”
কথাটা বলেই চোখ টিপলো ঐশ্বর্য।উৎসা দু হাতে মুখ চেপে ধরে।এই লোকটা বেশরম, নির্ল’জ্জ কখনো ভালো হবে না অস’ভ্য রিক চৌধুরী।
উৎসা বড় বড় পা ফেলে ওখান থেকে চলে গেল। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,বউ তার লজ্জা পেয়েছে।আহা রিক বউ কে লজ্জা দিতে পেরে ভারী আনন্দ লাগে।
বাইরে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা, হয়তো কারো অপেক্ষা করছে। ঐশ্বর্য সেই কখন অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে! উৎসা ভাবলো এই সুযোগে একটু ঘুরে আসবে।যেই ভাবনা সেই কাজ, আচমকা একটা বাইক এসে থামলো উৎসার সামনে।নেমে এলো কেয়া, কেয়া কে বাইকে দেখে বেশ অবাক হলো উৎসা।
“ওয়াও কেয়া আপু তুমি বাইকও চালাতে পারো?”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“হুঁ হুঁ,মাঝে মাঝে চালাই।”
উৎসা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে।
“তাহলে আমিও চালাবো, আমি পারি।”
কেয়া বললো।
“অফকোর্স, এসো।”
উৎসা বেশ আগ্রহ নিয়েই বাইকে বসলো,কেয়া পিছনে বসলো।কেয়া আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়।
“কিউট গার্ল তুমি কিন্তু আস্তে আস্তে চালাবে, প্রথমে স্পিড বাড়াবে না।”
উৎসা মাথা দুলিয়ে হ্যা বললো।
উৎসা বাইক চালাতে লাগল,কিছু দূর যেতেই ব্যালেন্স হারিয়ে উৎসা আর কেয়া দুজনেই উল্টো পড়ে গেল।
যেহেতু উৎসা সামনে ছিল সেই জন্য সে একটু বেশী ব্যথা পেলো।হাত কপাল কেটে যায় তার, কেয়ার হাতে বেশ লাগলো। আশেপাশে দু একজন মিলে ওদের দাঁড় করিয়ে দেয়।
“কিউট গার্ল আর ইউ ওকে?”
উৎসা উঠতে পারছে না, প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে সে।
কেয়া চমকে উঠে।
“ও মাই গড তোমাকে এখুনি হসপিটাল নিতে হবে!”
কেয়া লোকের সাহায্য নিয়ে উৎসা কে হসপিটালে নিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ জিসান কে কল করে,প্রথমে ঐশ্বর্য কে কল করলেও তাকে ফোনে পায়নি। জিসান উৎসার কথা শুনে দ্রুত অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো, ঐশ্বর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং এ আছে। আপাতত তাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে উৎসা, কপালে ব্যান্ডেজ করা।হাতেও লাগিয়ে দিয়েছে, কেয়ার শুধু হাতে ব্যান্ডেজ করেছে।
“কেয়া!”
জিসানের কন্ঠস্বর শুনে ঝাপটে ধরে কেয়া।
“জিসান।”
“আর ইউ ওকে? ঠিক আছিস তুই?”
“হ্যা আমি ঠিক আছি তবে কিউট গার্ল…
“ও মাই গড রিক জানতে পারলে..চল দেখি।”
উৎসা বেডে শুয়ে আছে, জিসান ওর এমন অবস্থা দেখে চমকে উঠে, কপালে পড়ল চিন্তার ভাঁজ। ঐশ্বর্য দেখলে সত্যি রেগে যাবে! কিন্তু তাকে তো জানাতেই হবে। জিসানের ভাবানার মাঝে ঐশ্বর্যের নাম্বার থেকে ফোন এলো।
জিসান শুকনো ঢোক গিললো।
রেড রোজ পর্ব ৩৭
“হ্যালো রিক!”
“কী রে তুই কোথায়?”
জিসান কাঁপা স্বরে বলল।
“এক্সুয়েলি রিক ওই আমরা হসপিটালে!”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়।
“হসপিটালে?”