রেড রোজ ২ পর্ব ১০

রেড রোজ ২ পর্ব ১০
ফারহানা নিঝুম

সকাল সকাল মুড অফ হয়ে আছে ঐশ্বর্যের।যেই ছেলে দশটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারে না ,সেখানে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে বসে আছে। কাঁচের দেয়ালের কাছে দাড়ালো , বাইরেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তুষারপাত হচ্ছে ,এই মনোরম পরিবেশ যে কারো মন ভালো করে দিতে পারত। কিন্তু বিষা’দের ন্যায় কাজ করছে ঐশ্বর্যের কাছে। কাল রাতে শহীদ কল করেছে ঐশ্বর্য কে।
“হ্যালো।”
“হ্যা বলুন”
“ঐশ্বর্য কেমন আছো?”
“আমি ভালো, তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা তুমি ফিরবে কবে?”
ঐশ্বর্য কখনোই ফিরতে চায় না ,সেই বাড়িতে তো কখনোই না যেখানে তার মায়ের জায়গায় অন্য একজন বসে আছে।

“আপনি যেদিন মিসেস মহিলা কে বাড়িতে থেকে বের করে দিবেন সেদিন ফিরব।”
ঐশ্বর্যের কথায় ভীষণ অবাক হলেন, ঐশ্বর্য আজও সেসব কথা ধরে বসে আছে!
“ঐশ্বর্য কী সব বলছো? উনি তোমার মা হন!”
“স্যরি টু সে কী বললেন আপনি?”
“উনি তোমার মা।”
“আমার মা মনিকা চৌধুরী, আশা করি আপনি মনে রেখেছেন? না কী নামটাও ভুলে গিয়েছেন?”
“ঐশ্বর্য..এসব তোমাকে রাজেশ বলেছে তাই না?”
“একদম না, আঙ্কেল কখনো আপনার সম্পর্কে বা আপনার ওয়াইফ কে নিয়ে কিছুই বলেনি।”
শহীদ গম্ভীর স্বরে আওড়ালো।
“তাহলে এখনো চৌধুরী নিয়ে ঘুরছো কেন?”
“কারণ এটা আমার মাম্মার নামের অংশ।সো প্লিজ আপনি আমাকে কিছু বলতে আসবেন না।”
“ঐশ্বর্য এবার তুমি সত্যি বাড়াবাড়ি করছো!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঐশ্বর্য রাগে ফোন কেটে দিল , নিজের চুল খামচে ধরে সে।তার লাইফটা এত কমপ্লিকেটেড কেন?
ঐশ্বর্য সেই রাতে আর ঘুমাতে পারলো না।
উৎসা প্রায় দুটো পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে , দশটা থেকে তার ক্লাস। উৎসা এখানে আসার পর থেকেই লেইটে গিয়েছে। আজকে মোটেও লেইট করতে চায় না সে , তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে মিস মুনা এখনো আসেনি। হতাশ হলো উৎসা , তার প্রচুর খিদে পেয়েছে। কিন্তু কেউ তো নেই এখন কী করবে?
উৎসা গুটি গুটি পায়ে কিচেনে গেল , ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম বসায়। দু’টো ডিমও নিলো ,ডিম গুলো সিদ্ধ বসালো।তার মধ্যে ফটাফট বেডে জেল মাখিয়ে প্লেটে তুলে ,জুস বের করে গ্লাসে ঢেলে নিল।একে একে সব কিছু ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে রাখে।

উৎসা যত যাই হোক নিজের জন্য খাবার বানাচ্ছে তাতে আরেকজনের টা বানাতে পারবে না! উৎসা নয় মধ্যে মানবতা একটু বেশি,তাই তো অস’ভ্য রিক চৌধুরীর জন্য খাবার বানিয়েছে।
উৎসা যথা সময়ে খেতে বসলো,তার পূর্বে ঐশ্বর্যের রুমে একবার নক করে গেল। পাঁচ মিনিট পার হলো, কিন্তু ঐশ্বর্য এলো না। অবশ্য রুমের ডোর খোলাই ছিল ,উৎসা তবুও বাইরে থেকে একবার ডেকেছিল। উৎসা খাওয়া শেষ করে আবারও খাবার গুলো গুছিয়ে রেখে ঐশ্বর্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
“এই যে অস’ভ্য রিক চৌধুরী আপনাকে খেতে ডেকেছিলাম! ভাগ্য ভালো আমি আপনার জন্য রান্না করেছি।”
ঐশ্বর্য বের হলো না ,উৎসা এবার দরজা খানিকটা ধাক্কা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ঐশ্বর্য কী করছে? আচ্ছা সে কী ঘুমাচ্ছে?

রুম পুরো অন্ধকারে ডুবে আছে , উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে অনুসন্ধান চালায় ঐশ্বর্য কে পাওয়ার উদ্দেশ্যে। আচমকা হাতে টান পড়ে , আঁ’তকে উঠে উৎসা।
“এই..
তৎক্ষণাৎ উৎসার অবস্থান হয় দেয়ালের সাথে ,কেউ তাকে চেপে ধরেছে। উঁহু কেউ বললে ভুল হবে , ঐশ্বর্য তাকে চেপে ধরেছে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ছাড়ুন আমায়,কী করছেন?”
“ক্যান আই কিস ইউ রোজ?”
উৎসা দু হাতে ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
“হোয়াটস রং উইথ ইউ? আমাকে কী আপনার কল গার্ল মনে হয়?যখন তখন আজেবাজে বিহেভ করেন!”
ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে , আবারো উৎসার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।
“রোজ মাঝে মাঝে তোমাকে বাইট করতে মন চায়।”
উৎসা ঐশ্বর্যের থেকে ছাড়া পেতে চায় ,লোকটা এতটা অসভ্য হবে তা ধারণা ছিলো না!

“ছিহ্ আপনার এত অধঃপতন!”
ঐশ্বর্য দু পা এগিয়ে এসে একদম কাছাকাছি দাঁড়ালো উৎসার , এতটাই কাছে যে উৎসা তার নিঃশ্বাসের শব্দে শিউরে উঠছে ।
“ইউ নো তোমাকে দেখলে হুঁ’শ হারিয়ে ফেলি।টাচ করতে মন চায়!”
উৎসা অস্ফুট স্বরে বলল।
“আপনার বাজে কথা বন্ধ করুন।এসব গার্লফ্রেন্ড কে বলুন।”
ঐশ্বর্য কন্ঠ খাদে নামিয়ে আওড়ালো।
“গার্লফ্রেন্ড কে কেন? তুমি তো ওয়াইফ!”
উৎসা তাচ্ছিল্য করে বলে।
“আমি আপনার কেউ না,আর আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।বেনজন? ভুলে গেছেন?”
ঐশ্বর্যের মুখের ভাবান্তর বদলে গেল , দাঁতে দাঁত পিষে ফিচলে হাসে ।এদিক সেদিক মাথা দুলিয়ে উৎসার থেকে সরে দাঁড়ালো , আচমকা উৎসা নিজের কান চেপে ধরে। ছোট্ট কাঁচের টেবিল তুলে আ’ছাড় মে’রে ফেলল ঐশ্বর্য। কাঁচ গুলো টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। উৎসা ভয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল , এদিকে ঐশ্বর্যের হাত পা রিতিমত রাগে কাঁপছে!

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে উৎসা ,ওর সাথে আছে বেনজন আর সিরাত।বেনজন উৎসার কথা শুনে পেট চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে। ঐশ্বর্য উৎসার সাথে কী কী করেছে সব কিছুই বলেছে দু’জন কে।সিরাত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ,তার এটুকু বোঝা হয়ে গেছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী উৎসা কে ভালোবাসে।
“আচ্ছা উৎসা একটা কথা বল ঐশ্বর্য তোকে কী ভাবে চিনে?”
উৎসা চমকে উঠে ,এখন কী বলবে? সত্যি তো সে কখনো ওদের বলেনি ঐশ্বর্য কী হয় তার?
বেনজন সিরাত কে সমর্থন করে বলে।
“হ্যা ঐশ্বর্য কে?”
উৎসা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী আমার মামাতো ভাই।”
বেনজন সিরাত দুজনেই চমকে উঠে।
“হোয়াট?”
“হুঁ , উনি আমার মামাতো ভাই।

আমার বয়স যখন মাত্র বারো বছর তখন ঐশ্বর্যের সাথে বিয়ে হয়। আসলে মামা চেয়েছিলেন আমাদের বিয়ে হোক। আমার বরাবরই ঐশ্বর্য ভাইয়া কে ভালো লাগতো ,ছোট ছিলাম ভীষণ ভাবে ঐশ্বর্য ভাইয়া কে পছন্দ করতাম। তখনো আমি ভালোবাসা এসব বুঝতাম না , শুধু জানতাম আমার ঐশ্বর্য ভাইয়া। কিন্তু হঠাৎ একদিন লাল শাড়ি পড়িয়ে মা বলেছিল ঐশ্বর্য ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সবাই বলেছিল এখন থেকে আমি ঐশ্বর্য ভাইয়ের সাথে থাকব। আমি এতটা খুশি কখনও হয়নি , কিন্তু আমার মন তখনই ভে ঙে গেল যখন ঐশ্বর্য ভাইয়া সবার সামনে আমাকে ফেলে চলে গেল।সেই যে জার্মানি এসেছে আর কখনও ফিরেনি , সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও কখনও আমার সাথে কথা হয়নি। আমার মনে অভিমান হয়েছিল,তবে তা মূহুর্তে উবে গেল ঐশ্বর্য ভাইয়ার এমন আচরণে।”
উৎসা থামলো ,বেনজন আর সিরাত ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বেনজন আশ্চর্য হয়ে বলল।

“ও মাই গুডনেস! এটা তো বাচ্চা কালের লাভ স্টোরি।”
সিরাত কপালে হাত রেখে বলে।
“তার মানে উৎসা ম্যারেড!”
উৎসা ধমকের সুরে বলল।
“জ্বি না আমি বিবাহিতা নই,আর না মানি।আর বেনজন প্লিজ এটাকে লাভ স্টোরি বলা বন্ধ কর। এটা ছোট বেলার ভালো লাগা ছিল ব্যস।”
বেনজন শব্দ করে হেসে উঠলো।
“সিস্টার তোর জন্যেই তোর হাসব্যান্ড এত প্যানিক করে।আর তুই কী না মাঝখান থেকে আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেললি!”
“হাই গাইস।”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে সবাই ঘুরে তাকালো ,কেয়া দাঁড়িয়ে আছে।কেয়া কে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় উৎসা।
“কেয়া আপু তুমি এখানে?”
কেয়া এগিয়ে এলো , এসেই উৎসার গাল টেনে বলে।
“সো কিউট।”
উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করলো ,যখন তখন কেয়া তার গাল টেনে দেয়। আচ্ছা নিজের বয়ফ্রেন্ডের গাল কেন টানে না!হুউ!

“কিউট গার্ল লেটস্ গো সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।”
উৎসা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, তার জন্য আবার কে অপেক্ষা করছে?
“আমার জন্য ওয়েট করছে কে?”
“চলোই না তারপর দেখতে পাবে।”
কেয়া এক প্রকার উৎসা কে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। উৎসা বাইরে যেতেই সুদর্শন পুরুষ কে দেখতে পেলো। গাড়ির ডিস্কের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে‌,আই প্যাড নিয়ে কিছু দেখছে।ওর পাশেই ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনারা এখানে কেন? আমাকে নজর বন্দি করেছেন?”
ঐশ্বর্য মুখ তুলে তাকায় ,উৎসা কে দেখে ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বলে।

“উপ্স সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্যের এই হুটহাট পরিবর্তনে ভয় পায় উৎসা।বেনজন হেসে কু’টি কু’টি অবস্থা।
“তোমাকে নজর বন্দি নয় বাহু বন্দি করব রোজ।”
উৎসা নাক ছিটকে বলে।
“শাট আপ , আপনার এই ইউজলেস কথাবার্তা বন্ধ করুন।”
ঐশ্বর্য নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে।
“ইটস্ হার্ট ডিয়ার। তুমি ওয়াইফ আমার।”
উৎসা চরম পর্যায়ে রেগে গেল ,এক প্রকার দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“বিয়ের রেজিস্ট্রেশন পেপার আছে?কাবিন নামা আছে?কেউ জানে বিয়ের কথা? আপনি আমার কেউ না অস’ভ্য রিক চৌধুরী। এটা ভালো করে বুঝে নিন।”
উৎসা কথাটা বলে বেনজনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো।
“লুক ও আমার বয়ফ্রেন্ড, বুঝতে পেরেছেন!”

ঐশ্বর্য গাড়ির উপর থেকে নেমে উৎসর কাছাকাছি গিয়ে ওর গাল চেপে ধরে।
“ষ্টুপিড রোজ।”
উৎসা কিছুই বুঝলো না ,তবে গালে ক্ষীণ ব্যথা অনুভব করলো।
“ছাড়ুন আমায়! অস’ভ্য রিক চৌধুরী ছাড়ুন। আমার সাথে এমন অস’ভ্যতামো করতে পারেন না।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“অস’ভ্য বলেই তো অস’ভ্যতামো করছি।”
জিসান..
ঐশ্বর্য জিসানের দিকে গাড়ির চাবি ছুড়ে দিল , জিসান ক্যাচ করে নেয়।
উৎসা কে এক প্রকার জোর করেই গাড়িতে তুলে ঐশ্বর্য। উৎসা ছটপট করছে ,তাতে মেজাজ খারাপ হয় ঐশ্বর্যের। উৎসার স্কাফ টেনে ওর হাত দুটো বেঁধে দেয়,উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো।
“জিসান ভাইয়া প্লিজ আপনি অন্তত গাড়িটা থামান
আমার কিন্তু এসব স’হ্য হচ্ছে না মোটেও!”
কেয়া উৎসার চিৎকার শুনে ঘাবড়ে গেল।
“রিক প্লিজ কী করতে চাইছিস তুই?ওকে ছাড় ব্যথা পাচ্ছে।”
ঐশ্বর্য ছাড়লো না, বরং চেপে ধরে রাখলো উৎসা কে।
মিনিট দশেক পর কোর্টে এসে পৌঁছেছে ঐশ্বর্য। জিসানের কিছু কথা বলে নেয় , জিসান ঐশ্বর্যের কথা শুনে চমকে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই কী একটা ভেবে ভেতরে গেল। উৎসা ছটপট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য, কিন্তু ঐশ্বর্য ছাড়েনি। পাঁচ মিনিট পর জিসান বেরিয়ে এলো , ঐশ্বর্য কে কিছু বললো। ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে হাসলো , এবার উৎসা কে টেনে নামালো।

“ছাড়ুন আমাকে প্লিজ!”
ঐশ্বর্য তো শুনলোই না ,উৎসা কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে উকিল সাহেব , উৎসা আঁতকে উঠে।কী করতে চাইছে ঐশ্বর্য?
নিজের সামনে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার দেখে চোখ মুখ শক্ত করে নেয়। উৎসা ঐশ্বর্যের দিকে কড়া চোখে তাকাল।
“আপনার এই ইচ্ছে কখনও পূরণ করব না।”
“আই সয়ার তুমি সাইন না করলে আমি ঠিক কী করতে পারি!”
ঐশ্বর্যের কথায় মাদকতা মেশানো ,উৎসা পালাতে চেয়েও পারলো না। ঐশ্বর্য এক প্রকার ঝাপটে জড়িয়ে আছে তাকে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৯

ঐশ্বর্য ফোন বের করে উৎসা কে দেখালো।
“এটা দেখো!”
উৎসা ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা ভিডিও দেখতে পেলো। ভিডিও দেখা মাত্র স্তম্ভ হয়ে যায়।
“এটা?”

রেড রোজ ২ পর্ব ১১