রেড রোজ ২ পর্ব ১১

রেড রোজ ২ পর্ব ১১
ফারহানা নিঝুম

লাল রঙের একটি গাউন পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার , ঐশ্বর্য এত খারাপ কী করে হতে পারে?
নিজেকে দেখে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে উৎসার।
পুরো রুমে গোলাপ ফুলে সাজানো হয়েছে ,উৎসা যেনো রাণী।এত এত ফুলের ভিড়ে আস্ত একটি লাল গোলাপ।
কিছুক্ষণ আগেই কেয়া এখানে এসে উৎসা কে রেখে গিয়েছে। কেয়ার উপর অভিমান জন্মেছে উৎসার।
দরজার কাছে এসে থমকে গেল ঐশ্বর্য ,এত ফুলের ভিড়ে আস্ত একটি লাল গোলাপ ফুলকে অপূর্ব লাগছে তার চোখে।

ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল ,আজ তার এগিয়ে যাওয়ার গতি খুবই ধীরে!এক পা দু পা করে নিজ ভঙিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
উৎসা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ ,তার চোখ দুটো অনূভুতি হীন।
ঐশ্বর্য কেবিনেটের উপর ফ্লাওয়ার বাস থেকে লাল গোলাপর তোড়া নিলো। প্রতিটি পাপড়ি ছিড়ে উৎসার উপর ছড়িয়ে দিতে দিতে তার আশেপাশে ঘুরতে লাগে।
“এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড অর! বাট সুইটহার্ট দিস ইজ নট লাভ।”
উৎসা নিশ্চুপ ,তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন এলো না।
ঐশ্বর্য মুচকি হাসে ,উৎসা মিস করে গেল । ঐশ্বর্য সচরাচর এভাবে হাসে না, অদ্ভুত সুন্দর।
ঐশ্বর্য পুরো ফুলের তোড়া উৎসর্গ করে উৎসা কে , অতঃপর হাত টেনে নিজের অতিব কাছে নিয়ে আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রোজ।”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে উৎসা কে ডাকলো ,উৎসা থমকে গেল ক্ষণকালের জন্য।তার মস্তিষ্ক জ্ব’লে উঠে , কিছুটা অবাক করে দিয়ে ঐশ্বর্য কে সরিয়ে দেয়।
“ছুঁবেন না আমাকে আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি।”
ঐশ্বর্য হেসে ফেললো।
“বেইবি আজ আমাদের ফার্স্ট নাইট তাই না!”
উৎসা দু পা পিছিয়ে গেল , ঐশ্বর্য তাতে রাগ করলো। তাই তো দু কদম এগিয়ে গেল।
“ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী কখনো কারো বাধা মানে না সুইটহার্ট।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে।
“আপনি হলেন ক্যারেক্টারলেস,শেইম লেস , ইউজলেস, ব্রেইনলেস একটা মানুষ। যাকে আমি একটা সময় পছন্দ করতাম।”

ঐশ্বর্য উৎসার দু হাত পিছমোড়া করে চেপে ধরে।
“উফ্ এভাবে বলে না।”
“ছাড়ুন আমাকে!”
“না ছাড়লে?”
“আমি সত্যি ভাবতে পারছি না আপনি এতটা খারাপ!”
“ভেবে নাও।”
“আমি আমার উপর অধিকার ফলাতে আসবেন না একদম ,ভুলে যাবেন না আপনি আমাকে ফোর্স করেছেন বিয়ে করতে।”

ঐশ্বর্য হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো , ঐশ্বর্য সত্যি ফোর্স করেছে উৎসা কে।ফোনের ভিডিও দেখে অন্তর আ’ত্মা কেঁপে উঠলো উৎসার। স্পষ্ট তার আর ঐশ্বর্যের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও। সেখানে ঐশ্বর্য উৎসার পুরো মুখশ্রীতে আবেশে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে।উৎসা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠল ,তার ঘাড়ে গলায় চুমু দেয়। উৎসা এসব কিছু দেখে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। কিন্তু এগুলো কখন হলো? অবশ্য ঐশ্বর্যের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না!
“আপনি আমাকে বাজে ভাবে ছুঁয়েছেন! আপনার এত সাহস হলো কি করে?”
উৎসা রাগের মাথায় ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরে , ঐশ্বর্যের উৎসা গালে স্লাইড করে বলে।

“উফ্ এত্ত ষ্টুপিড হলে চলে?”
“মানে?”
“মানে এটাই যে তুমি বড্ড ষ্টুপিড ,কেন জানো? তোমাকে আমি যে ভিডিও টা দেখিয়েছি।ওটা AI দ্বারা বানানো ,জাস্ট তোমার আর আমার ফেইস বসিয়েছি। ব্যস্ত তুমি তো এখানেই শেষ! আচ্ছা একটা কথা বলো তুমি ভয় পেয়েছিলে?”
উৎসার ইচ্ছে করছে ঐশ্বর্য কে ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় বসাতে , কিন্তু নিজের ইচ্ছে কে থমিয়ে রেখে বললো।
“ক্যারেক্টারলেস মানুষ আপনি , আপনাকে দেখলেও আমার….
“ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।আই নো দ্যাট।”
উৎসা ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে ,রাগে শরীর কাঁপছে তার।
“কাম।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে ধরে। উৎসা চিৎকার করে উঠল।
“ছাড়ুন আমায় ছুঁবেন না আমাকে। ঐশ্বর্য ভাইয়া প্লিজ! আমি কিন্তু….
ঐশ্বর্য শুনলো না ,উৎসা কে রুম থেকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
পুরো রুম অন্ধকারে ডু’বে আছে , উৎসার কেন জানি কিছুটা ভয় অনুভব হচ্ছে। ঐশ্বর্য কে মোটেও বিশ্বাস করে না সে!

“আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?”
“হুস.. ডোন্ট সাউন্ড।”
উৎসা শিউরে উঠে , ঐশ্বর্য উৎসা কে রুমে নিয়ে এসেই দরজা লক করে দেয়। অন্ধকারে কিছুই ভালো ভাবে দেখতে পাচ্ছে না উৎসা। ঐশ্বর্য কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে লাইট অন করে দেয় ,চোখ ধাঁধিয়ে যায় উৎসার। খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে নেয় সে।
“রোজ তাকাও।”

উৎসা পিটপিট চোখে তাকালো।সব কিছু দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে সে।
পুরো রুম সাদায় মুড়ানো ,বড় একটি বেড দেয়ালের সঙ্গে ঘেষে রাখা আছে।তার পাশেই ল্যাম্পপোস্ট রাখা , কিছুটা দূরে অ্যাটাচ কাবার্ড ,ডান দিকে ওয়াশ রুম।বেডের সামনাসামনি দেয়ালে বড় সড় টিভি কেবিনেটের উপর রাখা আছে। টিভির সামনে বড় একটি সোফা সেট।বা দিকে সামনে যেতেই বড় একটি দরজা ৎ,সেটা খোলা আছে।বড় বেলকনি , অদ্ভুত সুন্দর। রুম জুড়ে প্রতিটি জিনিস এক্সপেন্সিভ। উৎসা আরেক দফা চমকে যায় যখন নিজের ছবি গুলো দেখলো।এই তো কিছুক্ষণ আগেই যখন উৎসা কে লাল গাউন পড়ানো হয় ঠিক তখন জিসান তার অনেক গুলো ছবি তুলেছে। সেগুলোই বড় বড় ফ্রেমে বন্দী করে দেয়ালে টাঙ্গানো হয়েছে। প্রতিটি ছবির পাশে ঐশ্বর্যের একটি করে ছবি ‌।

“সুইটহার্ট দিস ইজ ইওর গিফট।”
উৎসা এক মূহুর্তের মধ্যে সব ভুলে ঐশ্বর্য কে শুধোয়।
“আমাকে ভালোবাসেন?”
ঐশ্বর্য দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো , দৃষ্টি তার সামনে দাঁড়ানো লাল গোলাপের দিকে।
“উঁহু ভালোবাসি না। ভালোবাসি না বলেই তো এখানে এনে রেখেছি।”
উৎসার মস্তিষ্ক জ্ব’লে উঠে রাগে , মানুষ কত শ’য়তা’ন হতে পারে তা ঐশ্বর্য কে না দেখলে বুঝতে পারবে না।
ঐশ্বর্য দু পা এগিয়ে এলো ,উৎসা সেই মাপ অনুযায়ী দু পা পিছিয়ে যায়। ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে , ইস্ এভাবে তাকে নেগেটিভ ফিল দিচ্ছে।

“রোজ সামথিং নিডস্।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো , হাত পা অসাড় হয়ে আসছে তার।
“আমাকে ছুঁলে আপনার হাতে ঠা’ডা পড়বে।”
“পড়তে দাও।”
“চোখ দিয়ে দেখলে অন্ধ হবেন।”
“হতে দাও।”
“অস’ভ্য।”
“অস’ভ্যতামো করি?”
“ছিহ্!”
“ছিহ্ টু।”
“উফ্।”
“উফ্ টু।”
ঐশ্বর্য হুট করেই উৎসার প্রচুর কাছাকাছি চলে এলো। উৎসা চমকে উঠে , ঐশ্বর্য দু হাতে চেপে ধরে তাকে।

“ক্যান আই কিস ইউ রোজ?”
“না।”
“প্লিজ জাস্ট একবার!”
“একদম না।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে চেপে ধরেই এগুচ্ছে,এক সময় দেয়ালের সাথে মিশে গেল দু’জনে। উৎসা না নিজে সরতে পারছে আর না ঐশ্বর্য কে সরাতে পারছে! বাধ্য হয়ে নিচেই বসে গেল সে , ঐশ্বর্য উৎসার সামনে বসে। দৃষ্টি তার উৎসার ঠোঁটের দিকে ,মুখ এগিয়ে নিতেই উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
ঐশ্বর্য দু আঙ্গুলের সাহায্যে চেপে ধরে সামনে নিয়ে এলো। অতঃপর?

সাবিনা পাটোয়ারী স্তম্ভ হয়ে বসে আছেন সোফার উপর ,তার পাশেই বসে আছে নিকি। রুদ্র কী বলবে সত্যি বুঝতে পারছে না। তৎক্ষণাৎ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো মিহি।চোখ দুটো তার ফুলে আছে , মুখটাও কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
মিহি কে দেখলেই কেমন বুকে ব্যথা অনুভব করছেন সাবিনা পাটোয়ারী।
“ও মা নিকি রুদ্র ভাইয়া কখন এলে?”
রুদ্র চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে , দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মিহি কে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে।
“তুই এত দিন এসব লুকিয়ে রেখেছিস বোন!কী করে?”
মিহি এতক্ষণ নিজেকে সামলে নিলেও এই মূহুর্তে বাচ্চাদের ফুঁপিয়ে উঠলো।
“ভাইয়া আমি আর পারছি না, প্লিজ ওখানে কেউ আর যেতে বলো না। আমি খারাপ মানুষের মধ্যে থাকতে পারব না।”

মিহি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো , রুদ্র ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। এটা প্রথম বার নয় ,এর আগেও একবার এমন হয়েছিল।মিহির স্বামী পার্থ খারাপ একটা মানুষ, মিহি কে বিয়ে করা সত্বেও অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে পর’কীয়া করছে। এদিকে মিহির সাথে খারাপ আচরণ করে,এক সময় মিহি কে শুধু শুধু টাকার জন্য চাপ দেয়।এক সময় বিরক্ত হয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে মিহি , সাবিনা পাটোয়ারী একা মানুষ। স্বামী তার সেই কবে গত হয়েছেন, এখন একটা মেয়ে কে কী ভাবে বাড়িতে রেখে দিবেন? সাবিনা পাটোয়ারী এবং রুদ্র দুজনে মিলে সব কিছু ঠিক করে আবারও মিহি ও পার্থ কে এক সঙ্গে করেছে। কিন্তু মিহি কিছু মাস পরেই জানতে পারে পার্থর অন্য নারীর প্রতি আস’ক্তি।মিহি স’হ্য করতে পারেনি , এদিকে পার্থ ওকে অনেক চাপ দেয়। অবশেষে আর পারেনি ,এবারে পার্থ তাকে মে’রেই ফেলতে চেয়েছে। ইদানিং আমাদের সভ্য সমাজে এসব অন্যায় হচ্ছে দিনকে দিন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সবাই এটা নেয় , কিন্তু কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করতে আসে না।মিহির ক্ষেত্রেও তাই হলো , নিজের প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছে।

রুদ্র আর সাবিনা পাটোয়ারী এবারে আর মিহি কে ওখানে পাঠাতে চাচ্ছেন না।
নিকি মিহি কে নিয়ে দুতলায় চলে গেল , রুদ্র ফুপির পাশে বসলো।
“ফুপি একটা কথা বলি শুনো এবারে সমাজের কথা ছেড়ে আমার বোনটার কথা ভাবো। আমি চাই না এসব মানুষের জন্য আমার বোন সাফার করুক!”
সাবিনা পাটোয়ারী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“কিন্তু রুদ্র তাহলে ওর হবে টা কী?”

রেড রোজ ২ পর্ব ১০

“কেন?মিহি পড়াশোনা জানে দরকার পড়লে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করবে। নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলবে।”
সাবিনা পাটোয়ারী মনে প্রাণে রুদ্র কে বিশ্বাস করে , কিন্তু উৎসা? সে যদি একবার এসব কথা জানতে পারে তাহলে কী হবে সত্যি জানা নেই! গতবার পুলিশ কেস করতে চেয়েছিল উৎসা ,সে তো রুদ্র আর উনি মিলে থামিয়ে। কিন্তু এবারে কী হবে?
এত কিছু ভাবতে পারছেন না সাবিনা পাটোয়ারী , এমনিতেই সকাল থেকে পেশার ফল্ট করছে ওনার।

রেড রোজ ২ পর্ব ১১