রেড রোজ ২ পর্ব ১২
ফারহানা নিঝুম
গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে উৎসা , এদিকে বেডের পাশে বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে ঐশ্বর্য। উৎসার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে তার বুকের ভেতরটা জ্ব’লছে।এই যে ঐশ্বর্য কে মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে! ঐশ্বর্য মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে ,এই মেয়ে কে সে শারীরিক ভাবেই কষ্ট দেবে। মানসিক অশান্তি কে শারীরিক শান্তিতে পরিনত করবে!
এই যে ঐশ্বর্য সেই ভোর বেলা থেকে উৎসার রুমে বসে আছে সেটা কী আদেও উৎসা জানতে পারবে?কী করে জানবে সে তো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে!
স্নিগ্ধ সকাল , বাইরে তুষারপাত হচ্ছে , ভেতরে গায়ে ব্যাঙ্কেট চাপা দিয়ে ফুস ফুস করে ঘুমাচ্ছে উৎসা। এদিকে ঐশ্বর্য ভোর সাড়ে ছয়টার সময় উঠে পড়েছে ,ভালো লাগছে না।কাল তো তার ফার্স্ট নাইট ছিল অথচ এই উৎসা একটুও ছুঁতে দেয়নি তাকে!
এলোমেলো উৎসা খানিকটা নড়েচড়ে,এই নড়াচড়ার মধ্যে জামার কিছু অংশ নিচে নেমে গেল। ঐশ্বর্য থমকে গেল ,সে স্পষ্ট উৎসার ইনারের ফিতে দেখা যাচ্ছে। ঐশ্বর্য ঠোঁট জোড়া আলতো করে ভিজিয়ে নিল , কেমন একটা শিহরণ হচ্ছে তার। ঐশ্বর্যের ইচ্ছে করলো এই মূহুর্তে উৎসা কে চেপে ধরে একটা কিস করতে।একে বারে পিষে ফেলতে, কিন্তু কিছুই করলো না। না থাক একটু ঘুমিয়ে নিক এরপর ঐশ্বর্য চেপে ধরবে!
উৎসার এবার ঘুমটা একটু হালকা হয়ে এলো , নড়েচড়ে বসল সে। আচমকা নিজের সামনে ঐশ্বর্য কে দেখে পিছন দিকে চেপে গেল।
“এ কী আপনি এখানে কী করছেন?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ফার্স্ট নাইটের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে এসেছি।আই মিন বাসর করতে এসেছি।”
উৎসা আশ্চর্যের অষ্টম আকাশ ইতিমধ্যেই পাড় করেছে ,এই লোকটা ঠিক করতটা ভয়ঙ্কর তা কাল রাতেই টের পেয়েছে উৎসা। কাল রাতে ঐশ্বর্য কে কী সামলেছে তা একমাত্র উৎসাই জানে!
“ক্যারেক্টারলেস লোক একটা।”
উৎসা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো , ঐশ্বর্য এগিয়ে আসতে যাবে তার পূর্বেই উৎসা ছুট্টে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
“রোজ ওপেন দ্যা ডোর।”
উৎসা ভেতর থেকে চিৎকার করে বলে।
“কখনো না , আপনি যান এখান থেকে অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্যের মাথায় রিতিমত আগুন জ্ব’লছে।
“রোজ আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ, ওপেন দ্যা ডোর রাইট নাউ।”
উৎসার সাড়া শব্দ নেই , চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে ঐশ্বর্যের যাওয়ার! উৎসা শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালো , আচমকা হাত লেগে সুইচ অন করে ফেলে। ফলস্বরূপ ভিজে জবজবে হয়ে উঠে সে , ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো।
“ও মা গো!”
উৎসার চেঁচানোতে চমকে যায় ঐশ্বর্য।
“রোজ হোয়াট হ্যাপেন্ড?রোজ?”
ঐশ্বর্য ওয়াশ রুমের দরজায় জোরে ধা’ক্কা দিতেই খুলে গেল। আকস্মিক ঐশ্বর্যের আগমনে উৎসা পিছুতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে বডি ওয়াশ থেকে শুরু করে সুপ সব কিছু হাতে লেগে নিচে পড়ে গেল। ঐশ্বর্য থমকে দাঁড়ায় ,উৎসা কে এমন অবস্থায় দেখে হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেল। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো ,দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে। উৎসা অস্বস্তিতে পড়ে যায় ,এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী কেমন করে তাকিয়ে আছে! উৎসা নিজের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভ হয়ে গেল, টপস্ টা কেমন শরীরের সাথে লেপ্টে আছে! উৎসা আমতা আমতা করে আওড়ালো।
“দদেখুন এখুনি বের হবেন ঐশ্বর্য ভাইয়া , না হলে আমি কিন্তু…
“উফ্ ডোন্ট কল মি ভাইয়া সুইটহার্ট।আর আমি বের হবো না।”
ঐশ্বর্য দু কদম এগিয়ে আসতেই উৎসা ওয়াশ রুম থেকে বের হতে উদ্যত হলো। এখানে ঘটলো বি’পত্তি!উৎসা সাবানে পা পিছলে পড়তে নেয় , ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে ঝাপটে ধরে তাকে। কিন্তু তবুও উৎসা কে সামলাতে পারে না , অতঃপর দু’জনেই বাথটাবে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।
উৎসা ঐশ্বর্যের শার্ট আঁকড়ে ধরে , দুজনেই বাথটাবের পানিতে ভিজে উঠেছে। উৎসার উপরে ঐশ্বর্য ,উৎসার হৃদয় স্পন্দন থমকালো ,সে এমনতর পরিস্থিতি কখনো পড়েনি। মেয়েটা কেমন ভয় পাচ্ছে , ঐশ্বর্যের ডান হাত আঁকড়ে ধরে আছে উৎসার সরু কোমর খানা।নাজুক হয়ে পড়ছে কিশোরী মেয়ের হৃদয় , অধর দু’টো কেঁপে উঠছে।
“সরুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী,খালি গায়ে পড়ে!”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“উফ্ তোমার এই হটনেসে হার্ট হট হয়ে গেছে। সামথিং ফিল পাচ্ছি।”
উৎসা রিতিমত তম্বা খেয়ে গেল,এ কেমন কথা?ছিহ্ কত খারাপ এই রিক চৌধুরী!
ঐশ্বর্য উৎসার ভাবনার মাঝে ঘাড়ে মুখ গুজে দেয় ,গগন কাঁপিয়ে কেঁপে উঠলো উৎসা। পুরুষালী স্পর্শে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।
“ছাড়ুন।”
“প্লিজ।”
অফিসের প্রথম মিটিং অ্যাটেনড করে জিসান , ঐশ্বর্য আসতে লেইট হচ্ছে। ক্লাইন্ট কে তো আর বসিয়ে রাখা যায় না!
ঘন্টা খানেক পর ঐশ্বর্য অফিসে এলো , সিকিউরিটি গিয়ে দরজা টেনে দেয়। ঐশ্বর্য ঘেমে একাকার অবস্থা , দ্রুত ড্রাইভ করে এসেছে। এমনিতেই দুদিন ধরে অফিসের কাজ লাটে উঠেছে। আপাতত এ কয়দিন কাজ করতে হবে! উৎসা কে রাখার চক্করে সব কিছু শেষ!
“রিক এখন এলি? ব্রো তোর কী সকাল হয় না আর?”
ঐশ্বর্য গায়ের স্যুট খুলে চেয়ারের উপর ঝুলিয়ে বসলো।
“কী বলব জিসান ফার্স্ট নাইট ছিল বুঝ একটু?”
জিসান দাঁতে দাঁত কটমট করে বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শেইম লেস ম্যান।”
“নতুন শব্দ খুঁজে নে।বাই দ্যা ওয়ে তুই আমার জন্য অপেক্ষা করেছিস কেন?”
“আসলে আমি….
“ও প্লিজ এখন বলিস না তুই আমার গার্লফ্রেন্ড!”
“শাট আপ রিক ছিহ্ ছিহ্ আমি কী ইয়ে না কি?”
ঐশ্বর্য শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো।
“আচ্ছা ছাড় কী হয়েছে বল?”
জিসান আজকের মিটিংয়ে ব্যপারে সব কিছু বললো ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য সব কিছু শুনে বেশ স্বস্তি পেলো ,যত যাই হোক জিসানের উপর তার ভরসা আছে। অতঃপর ঐশ্বর্য কাজে লেগে গেল , দীর্ঘ দুই ঘন্টা ধরে সব কাজ শেষ করে। জিসান ওর সাথেই ছিল , দু’জনে এক সঙ্গে লাঞ্চ করে নেয়।
ঐশ্বর্যের একবার মনে হয়েছিল উৎসা কে কল করবে , কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো সে তো কলেজে আছে!
ঐশ্বর্য খাওয়া শেষে আরো কিছুক্ষণ কাজ করে। জিসান বিরক্ত হয়ে বলে।
“ব্রো আজকের জন্য একটুও ঠিক আছে।”
ঐশ্বর্য ল্যাপটপের শাটার অফ করে বললো।
“অ্যাম সো টায়ার্ড!”
“চল লং ড্রাইভে যাই।”
ঐশ্বর্য নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“তুই কী আমার গার্লফ্রেন্ড যে লং ড্রাইভে যাবো?”
জিসান কিছু বলতে গিয়েও বললো না , ঐশ্বর্য ফের হেসে ফেলল। অতঃপর গাড়ির চাবি নিয়ে বললো।
“ওকে চল , বাট আগে হোমে গিয়ে কেয়া কে পিক করব।”
“ওকে।”
সবে ছোট্ট বাচ্চাদের খাইয়ে বের হয়েছে কেয়া, এর মধ্যে কালো মার্সিডিজ কার দেখে অধর প্রসারিত হলো তার।
ঐশ্বর্য আর জিসান দাঁড়িয়ে আছে , ঐশ্বর্য কে দেখেও না দেখার ভান করলো কেয়া।কেয়া পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে জিসান ওর চুল টেনে ধরে।
“কী রে ডেভিল কুইন চলে যাচ্ছিস যে?”
কেয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“আমি থেকে কী করব?তোরা তো আমাকে ছাড়াই চলতে পারিস!”
ঐশ্বর্য বেশ গম্ভীর স্বরে বললো।
“এক্সুয়েলি কেয়া ইজ রাইট জিসান।ওকে ছাড়া তো দিব্যি চলছি! শুধু শুধু তোর কথা শুনে এসেছিলাম ওকে লং ড্রাইভে নিয়ে যাব বলে।”
ঐশ্বর্য থামলো , ঐশ্বর্যের কথা শুনে অসহায় চোখে তাকায় কেয়া। ঐশ্বর্য ফের বললো।
“লেটস্ গো জিসান।”
ঐশ্বর্যের কথাটা বলা শেষ হওয়া মাত্র কেয়া গিয়ে টুক করে গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়ল।
“আমাকে রেখে গেল কিন্তু….
জিসান আর ঐশ্বর্য শরীর দুলিয়ে হেসে ফেললো , তারা কী সত্যি কেয়া কে রেখে চলে যেতো? উঁহু মোটেও না।
“মা আমি অফিসে যাচ্ছি।”রুদ্র আর নিকি সবে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিল , তৎক্ষণাৎ আফসানা ওদের থামিয়ে দেয়।
“রুদ্র অফিসে যেতে পারিস তবে নিকি তুই যাবি না।”
নিকি ভ্রু দয় কুঁচকে নেয়।
“কেন মা? আমি কেন অফিসে যেতে পারব না?”
রুদ্রও শুধোয়।
“হ্যা নিকি কেন যাবে না?”
আফসানা বললেন।
“আজ সন্ধ্যায় ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে ,তাই ও যেতে পারবে না।”
পাত্র দেখতে আসবে,কতটা ঝং’কার তুললো নিকির কানে।
“কী আমাকে দেখতে আসবে?”
“হ্যা। রুদ্র তুই বিকেলে তাড়াতাড়ি ফিরবি।”
রুদ্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“মা নিকি কে দেখতে আসবে আর আমি কিছু জানি না?”
আফসানা ফের বললেন।
“কেউই জানে না , এবং কি তোর বাবাও।”
নিকি বিরক্ত নিয়ে আওড়াল।
“মা আমার অনুমতি ছাড়া তুমি কি করে এসব করতে পারো?”
আফসানা বুকে দু হাত গুজে দাঁড়ালেন।
“কেন করতে পারি না?মা হই তোর ,সব কিছু করার অধিকার আছে।”
নিকি তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বলে।
“মা হও ঠিক আছে, কিন্তু মেয়ের মন বুঝো না।”
আফসানা রেগে গেল।
“কী বলেছিস তুই?আমরা তোকে বুঝি না?”
“মা আমি তোমার সাথে অহেতুক কথা বাড়াতে চাই না।”
“কী কথা বাড়াতে চাস না তুই হুঁ?বিকেলে পাত্র আসবে মনে থাকে যেনো।”
নিকি রাগের মাথায় হাতে থাকা ফাইল গুলো ছু ড়ে ফেলে দিল।জেদ করে সিঁড়ি ডি’ঙিয়ে উপরে চলে যায়।
“নিকি?নিকি শুন।”
নিকি শুনলো না , তবে এটাতে বেশ বিরক্ত রুদ্র।
“মা এটা তুমি মোটেও ঠিক করছো না।বোনের মতামত ছাড়া এভাবে…..
“তুমি চুপ করো , তোমার আর তোমার বাবার লাই পেয়ে মেয়ের অধঃপতন হচ্ছে।”
রুদ্র কিছুই বললো না, হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে। আফসানার প্রতি সবারই চাপা রাগ জমে আছে । তিনি যেটা ভালো মনে হয় ঠিক তাই করবে , অন্যদের মতামতের গুরুত্ব নেই।
রেড রোজ ২ পর্ব ১১
নিকি দরজা বন্ধ করে বসে আছে ,এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য কে মিস করছে। ঐশ্বর্য থাকলে এত কিছু হতো না,নিকি যদি একবার আবদার করে বলে “ভাইয়া আমি বিয়ে করব না” ব্যস তাহলেই ঐশ্বর্য বিয়ে বন্ধ করে দেবে।কত বার আফসানা ঠিক এমনই করেছিল , জোর করে নিকির বিয়ে দিতে চেয়েছে।নিকি ঐশ্বর্য কে সব কিছু বলে দেয় , ঐশ্বর্য সেদিন ফোন দিয়ে কী ঝামেলা করেছে এক মাত্র তারাই জানে। এবং কী ঐশ্বর্য বলেছে নিকি আর রুদ্র কে জার্মানি নিয়ে চলে আসবে। এসব শুনে আফসানা অসুস্থ হয়ে পড়ে ,নিকি ঐশ্বর্য কে অনেক কষ্টে বুঝিয়েছে।এবারে যদি নিকি কিছু বলে তাহলে সত্যি ঐশ্বর্য তাদের জার্মানি নিয়ে যাবে। কিন্তু তখন আফসানা আর শহীদের কী হবে?
ভাবতে পারছে না নিকি , ভীষণ অসহায় লাগছে তার।