রেড রোজ ২ পর্ব ১৫

রেড রোজ ২ পর্ব ১৫
ফারহানা নিঝুম

“আপনি এমন করতে পারেন না! আমি আপনাকে সেই রাইট দেইনি, আপনি যখন তখন আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
কথা গুলো গলায় আটকে আসছে উৎসার , কান্নার বেগ বাড়ছে ‌। কিন্তু সেদিক পানে ভ্রুক্ষেপ নেই ঐশ্বর্যের।সে আপন মনে কাউচের উপর বসে সিগা’রেট টানছে।এক পা উঠিয়ে রেখেছে সেন্টার টেবিলের উপর ,অন্য পা কিছুটা ভাঁজ করে ফ্লোর ছুঁয়েছে। মাথা হেলিয়ে দিল কাউচের উপর , উপরের দিকে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক করে সিগা’রেটের ধোঁয়া ছাড়ছে। উৎসা কেশে উঠলো , এমনিতেই এসব স’হ্য করতে পারে না তার উপর ঐশ্বর্য একের পর এক অপছন্দের কাজ গুলোই করছে।

এই তো কত সুন্দর পার্টি চলছিল , ঐশ্বর্য ড্যান্স শেষে উৎসা কে ছেড়ে দেয়।উৎসা অনূভুতির সাগরে ভাসছে , ঐশ্বর্যের কথা গুলো শুনে একটা কথাই বুঝেছে সে। ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে ,এই জন্য এত গুলো বছর অপেক্ষা করেছে , নিজেকে তার থেকে দূরে রেখেছে।এতো কিছু তো ভালোবাসা প্রকাশ করছে।
কিন্তু কেউ একজন আচমকা এসে জড়িয়ে ধরে, কাঙ্খিত মানুষটি কে দেখে অধর প্রসারিত করে হেসে উঠলো উৎসা। সিরাত আর বেনজন এসেছে ,আসলে সেই কল করে বলেছে আসতে। এখানে একা লাগছে তাই ভাবলো ওদের সঙ্গে আড্ডা দেবে।সিরাত বেনজনের সঙ্গে ড্যান্স করে , তৎক্ষণাৎ আচমকা বেনজন উৎসা কে টেনে নেয়। উৎসা ফিক করে হেসে উঠলো,সে ফ্রেন্ড হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। এটাই হয়তো ঐশ্বর্যের পছন্দ হয়নি , আচমকাই জনসম্মুখে পুরো টেবিলটাই উল্টে ফেলে দেয়নি। হঠাৎ এমনতর বি’শ্রী শব্দে চমকে উঠে উপস্থিত সবাই।
উৎসা ভীত নয়নে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে ,সে এদিকেই এগিয়ে আসছে।উৎসার হাত শক্ত করে টেনে ধরে। ব্যাপারটা বেশ ধরতে পেরে দ্রুত এগিয়ে এলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ব্রো প্লিজ ও বুঝতে পারেনি।”
“ইউ জাস্ট শাট আপ জিসান,ও এখানো বাচ্চা না।”
ওদের কথোপকথন কিছুই বুঝতে পারছে না। উৎসা কী এমন করলো যে ঐশ্বর্য রেগে গেল?
উৎসা কে কটেজ থেকে বের করে ডিরেক্ট বাড়িতে প্রবেশ করে। মেইন ডোর লক করে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল উৎসার দিকে।
“আপনি হঠাৎ রেগে গেলেন ক…
উৎসা ছি’টকে দূরে পড়ল, ঐশ্বর্যের দানবীয় হাতে থাপ্পড় খেয়ে রিতিমত কাঁপছে সে।
উৎসা অস্ফুট স্বরে আবারও আওড়াল।
“আমি কিন্তু চলে যাব আপনি খারাপ ব্যবহার করলে!”
উৎসার কথায় ঐশ্বর্য এবারে উঠে দাঁড়ালো , সিগারেট শেষ করে বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“কিছুক্ষণ আগেই তো আমি আমার ফিলিংস নিয়ে তোকে বললাম তাই না রোজ?তার পরেও তুই তোর ওই সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডের সাথে ড্যান্স করলি! সিরিয়াসলি?”
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল , ঐশ্বর্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে। আকস্মিক ভাবে গাল চেপে ধরে উৎসার , ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো উৎসা। মনে হচ্ছে তার গাল ছিঁ’ড়ে যাবে।

“ড্যাম ইট আমি তো তোকে লিগ্যালি বিয়ে করেছি,তুই আমার ওয়াইফ তার পরেও কেন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে…হাউ ডেয়ার ইউ?”
উৎসা অস্ফুট স্বরে বলল।
“বয়ফ্রেন্ড না তো,জাস্ট ফ্রেন্ড। আপনি যেমন কেয়া আপুর ফ্রেন্ড,বেনজন আমারো ফ্রেন্ড।’
ঐশ্বর্য ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে ,উৎসা চেপে ধরা হাতে হাত রাখতেই ঐশ্বর্য তার গাল ছেড়ে দিল।
উৎসা দেয়ালের সঙ্গে ঘেষে নিচে বসে পড়ল , ক্লান্ত লাগছে তার। ঐশ্বর্য গিয়ে সেই আগের জায়গায় কাউচের উপর বসলো। দৃষ্টি তার উৎসার দিকে ,উৎসা এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে , ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ সেভাবেই তাকিয়ে রইল।দেখতে দেখতে মিনিট ঘন্টায় পরিণত হয়, ঐশ্বর্য কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।

এদিকে ভীষণ রকম খিদে পেয়েছে উৎসার, কখন থেকে চেষ্টা করছে ঘুমানোর। কিন্তু পেটে খিদে থাকলে কারই বা শান্তিতে ঘুম আসে? উৎসা শাড়িটা কোনো রকমে সামলিয়ে উঠে দাঁড়ালো , সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে পাতলা একটা ট্রি শার্ট আর প্লাজু পরে নেয়। আবারও নিচে এলো, ড্রয়িং রুমের লাইট অফ করে দেয়। ঐশ্বর্য বেঘো’রে ঘুমাচ্ছে ,উৎসা ধীর পায়ে কিচেনে গিয়ে ঢুকে।লাইট অন করতেই দেখলো সব কিছু কেমন অগোছালো হয়ে আছে।আজ সকাল সকাল মিস মুনা কে ঐশ্বর্য চলে যেতে বলেছিল,সেই সুবাদে রান্না কিছুই হয়নি। পার্টিতে খাওয়া দাওয়া হবে, তাই আর ঐশ্বর্য শুধু শুধু মিস মুনা কে কষ্ট দিলেন না। এদিকে উৎসার পেটে ইঁদুর রা এক প্রকার লাফালাফি করতে। উৎসা বড়সড় দম নিয়ে কিচেন গুছিয়ে নিল আগে, অতঃপর হাত ধুয়ে সবে একটু ফ্রিজ খুলতে যাবে তার পূর্বেই কেউ তার হাত টেনে ধরে।
উৎসা হাত অনুযায়ী সেদিক পানে তাকায়, হাতের মালিক কে দেখে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এই তো দেখলো লোকটা ঘুমিয়ে গেছে, তাহলে আবার উঠলো কখন?
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো কন্ঠে শুধোয়।

“খিদে পেয়েছে?”
উৎসা কিছুই বললো না,তবে ঐশ্বর্য বুঝে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসা কে আচমকা কোলে তুলে কিচেনের শেলফের উপর বসিয়ে দিল।
“ক,,, করে করছেন?”
“সিট।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে বসিয়ে ফ্রিজ খুলে ডিম বের করলো। সাথে আরো কিছু সামগ্রী ,আপাতত ফ্রাইড রাইস কুক করবে। উৎসা ঠায় বসে আছে , ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে রান্না বসালো । রান্না হতে আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন , তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার কাছে আসে। উৎসা নত মস্তকে বসে আছে , ঐশ্বর্য আলগোছে তার পা দুটো ফাঁক করে কোমড় টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো।উৎসা কেমন হাঁসফাঁস করছে , লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় মূহুর্তে।
ঐশ্বর্য পাশে থাকা বাটি থেকে একটি চিজ উঠিয়ে নিল। উৎসার মুখের কাছে ধরে ,উৎসা মুখ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারলো না,তার পূর্বেই ঐশ্বর্য ওর মুখ চেপে ধরে।

“ওপেন ইওর মাউথ!”
উৎসা শুকনো ঢোক গিলে মুখ খুলে, ঐশ্বর্য ওর মুখে চিজ দিল। কিন্তু আকস্মিক ভাবে নিজেও সেটাতে কা’মড়ে ধরে!উৎসার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল,এই বুঝি মনিকোঠা থেকে বেরিয়ে আসবে। দুজনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই, ঐশ্বর্য এগিয়ে আসলেই কিঞ্চিৎ দূরত্ব টুকু গু’ছে যাবে। উৎসার গলা কেমন জানো কাঁপছে!সে সব কিছু ভুলে বসেছে!এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।হুট করেই পেশার কুকারে সিটি বেজে উঠে ,উৎসা আ’তং’কিত স্বরে বলল।

“পু’ড়ে যাবে, খিদে পেয়েছে।”
তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য চিজটা নিজেই খেয়ে নিল। তাড়াতাড়ি পেশার কুকার অফ করে , ঘন্টাখানেকের মধ্যে খাবার তৈরি হয়ে গেল। ঐশ্বর্য টেবিলে সার্ভ করে দিল ,উৎসা নামতে গেল ঐশ্বর্য বাঁধা দেয়। আলগোছে কোলে তুলে নিল তাকে ,উৎসা লজ্জায় নিমজ্জিত।কে বলবে ঘন্টাখানেক আগেও ঝড় বয়ে গেছিল? ঐশ্বর্য রেগে গিয়ে উৎসা কে আ’হ’ত করেছে!

“মা এই নাও তোমার খাবার।”
মিহি টেবিলে খাবার দিয়ে দিল , কিন্তু সাবিনা পাটোয়ারী কিছুই খেতে পারছেন না। এমনিতেই উনি অসুস্থ হয়ে গেছেন মেয়ের এমনতর অবস্থা দেখে।
কিছুটা কাঁপা স্বরে বললেন।
“তুই খেয়ে নে।”
মিহি এসে মায়ের পাশে বসলো ,হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলে।
“কী হয়েছে তোমার মা? এভাবে না খেয়ে থাকলে চলবে?”
সাবিনা পাটোয়ারী আশ্চর্য হলেন, তার মেয়ে কী করে এত স্বাভাবিক আছে? কোথাও ভেতর থেকে সম্পুর্ন ভাবে ভে ঙে পড়েনি তো!মিহির মাথায় হাত রেখে খুব শান্ত কন্ঠেই বললেন।
“মিহি তুই ঠিক আছিস তো মা?”
মিহি মলিন হাসলো।
“আমি সত্যি ঠিক আছি মা, আমার আবার কী হবে?”

সাবিনার‌ কাশি উঠে গেল ,খুক না কেঁশে উঠলেন তিনি।সাথে সাথে মুখ থেকে এক দলা রক্ত বেরিয়ে এলো।মিহি আঁ’ত’কে উঠে।
“মা কী হয়েছে তোমার? র’ক্ত কেন?মা!”
মিহি অস্থির হয়ে উঠে, দ্রুত ফোন নিয়ে রুদ্র কে কল করে। রুদ্র সবে অফিস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। তৎক্ষণাৎ মিহির ফোন পেয়ে রিসিভ করে।
“ভাইয়া মায়ের র’ক্ত বের হচ্ছে? আমি কী করব? ভাইয়া তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।”
রুদ্র চমকে উঠে , মিহি কেঁদেই চলেছে। রুদ্র শুকনো ঢোক গিললো। ব্যস্ত কন্ঠে আওড়াল।
“তুই চিন্তা করিস না আমি এখুনি আসছি,তুই ফুপি কে সামলা।”
রুদ্র গাড়ির স্পিড বাড়ালো , তাড়াতাড়ি হ
যেতে হবে তাকে। এদিকে মিহি সাবিনা কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সাবিনা জ্ঞান হারিয়েছে, মিহি কিছুই বুঝতে পারছে না।এত কিছু একা তার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মিনিট দশেক পর রুদ্র চলে আসে ৎ, দু’জনে মিলে সামনেই নর্থ ইস্ট মেডিকেলে নিয়ে গেল সাবিনা পাটোয়ারী কে।মিহি ভীষণ ভাবে ভে ঙে পড়েছে ,একে তো নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে এত কিছু হলো। এখন আবার তার জন্যেই তার মায়ের এমন করুণ অবস্থা!
“প্লিজ মিহি অন্তত তুই এভাবে ভে ঙে পড়িস না! তাহলে কী করে সবটা সামলাব?”
রুদ্রর কথায় হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো মিহি , রুদ্র আলগোছে জড়িয়ে ধরে মিহি কে।
“নিজেকে শান্ত কর আমরা তো সবাই আছি। আমি নিকি কে কল করে দিয়েছি ও এখুনি এসে পড়বে।”
রুদ্রর কথার মাঝখানে নিকি এলো।
“ভাইয়া!”
নিকি কে দেখে উঠে দাঁড়ালো দুজনেই ‌,মিহি দৌড়ে গিয়ে নিকি কে জড়িয়ে ধরে।নিকি বেশ বুঝতে পারছে মিহির অবস্থা টা।

“মিহি প্লিজ কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তখনই নিকির ফোন বেজে উঠল , ভাগ্যক্রমে সেই মূহূর্তে উৎসা কল করেছে।
“হ্যালো নিকি আপু।”
নিকি জবাব দিতে পারছে না,গলা কাঁপছে তার।
“হ,, হ্যালো উৎসা।”
উৎসা বিছানায় গা এলিয়ে বলে।
“কী গোঁ আপনি তুমিও একটা কল করো না বাড়ির লোকেও কল করে না।কী হয়েছে সবার?”
নিকি মলিন মুখে বলে।
“একটু ব্যস্ত ছিলাম রে,তা বল কেমন আছিস তুই?”
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

“ভালো না ,মা কেমন জানি করছে! আমার মনটাও কেমন করছে! ইদানিং মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।”
নিকি চমকালো,যদি উৎসা একবার জানতে পারে সাবিনার এই অবস্থা তাহলে কী হবে?
“ইমিডিয়েটলি ব্ল্যাড লাগবে , আপনাদের প্যাসেন্টের অবস্থা খারাপ!”
উৎসা চমকে উঠে , মনে হলো কোনো ডক্টর কথা বলছে।
“আপু তুমি কোথায় গো? কোনো ডক্টরের‌ সাথে কথা বলছো?”
নিকি ডক্টর কে চুপ করতে বলতেই যাবে সেই মূহূর্তে মিহি চেঁচিয়ে উঠলো।
“কী হয়েছে মায়ের? আমার মায়ের কী হয়েছে বলুন? আমি দেখা করব এখুনি।”
উৎসা আঁতকে উঠে, এটা তো মিহির কন্ঠস্বর!
“হ্যালো নিকি আপু মিহি আপু কেন কাঁদছে?মা! মায়ের কী হয়েছে বলো না!”
নিকি রিতিমত কাঁপছে।

রেড রোজ ২ পর্ব ১৪

“উৎসা শুন আসলে ফুপির…
“কী হয়েছে আমার মায়ের বলো না!আপু কাঁদছে কেন?”
নিকি লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“ফুপি হসপিটালে ভর্তি আছে উৎসা! অসুস্থ হয়ে গেছে ফুপি।”
উৎসা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছে ,কী শুনলো সে?তার মা হসপিটালে ভর্তি?
“কী? আমার মা হসপিটালে ভর্তি!”

রেড রোজ ২ পর্ব ১৬