রেড রোজ ২ পর্ব ১৬
ফারহানা নিঝুম
“আমি বাড়ি যাবো আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিন! প্লিজ প্লিজ আমাকে পৌঁছে দিন না!”
উৎসার গলা কাঁপছে, উৎসা যখন থেকে শুনেছে সাবিনা পাটোয়ারী অসুস্থ তখন থেকেই পাগলামি করছে সে। ঐশ্বর্য বার কয়েক থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
“প্লিজ সুইটহার্ট কাম ডাউন।এত রাতে কী করে যাবে?আর আমি তোমাকে একা ছাড়ব না।”
উৎসা ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
“প্লিজ প্লিজ আপনার আজেবাজে কথা বন্ধ করুন , আমি যেতে চাই। আপনি নিয়ে যাবেন না তো? তাহলে ঠিক আছে আমি একাই যেতে পারব।”
উৎসা পা বাড়ায় রুমের দিকে , নিজের পাসপোর্ট আর যাবতীয় সব কিছু নিয়ে বেরিয়ে এলো।সে কিছু ভাবতে পারছে না আপাতত তাকে যে করেই হোক নিজের মায়ের কাছে যেতেই হবে।
“রোজ স্টপ দেয়ার!রোজ।”
উৎসা দাঁড়ালো না ,মেইন ডোরের দিকে এগুতে লাগলো , ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে উৎসার হাত টেনে ধরে।
“বললাম না তুমি কোথায় যাচ্ছ না!”
“ছাড়ুন আমাকে, আমি যেতে চাই।”
“নো ওয়ে তুমি যাবে না।”
“যাবো না মানে?আরে আপনার কী বুদ্ধিসুদ্ধি সব লো’প পেয়েছে? আমার মা অসুস্থ।”
“যাবে তবে এখন না, আমি তোমাকে নিয়ে যাব।”
“না, আমি একাই যেতে পারব। ছাড়ুন আমার হাত।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঐশ্বর্য ছাড়লো না ,উৎসা চিৎকার করে বলে।
“আপনি কি বুঝবেন মায়ের সম্পর্কে? আপনার তো মা-ই নেই।তাই মায়ের মর্ম বোঝার মত ক্ষমতাও নেই।”
ঐশ্বর্য এতক্ষণ উৎসা কে শান্ত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও এবারে তার ধৈর্যের বাঁধ ভে ঙে গেল। সপাটে চড় বসালো উৎসার গালে,ডান গাল রক্তি’ম হয়ে উঠে তার। ঐশ্বর্য জেদের ব’শে উৎসার গাল চেপে ধরে।
“তোর কী ধারণা আছে কী বলছি?হাউ ডেয়ার ইউ বা’স্টা’র্ড?”
“ছাড়ুন আমাকে। আমি যা বলেছি একদম….
উৎসা কিছুই বলতে পারলো না , ঐশ্বর্য এক প্রকার উৎসার গাল ছি’ড়েই ফেলবে মনে হচ্ছে।
“ইডিয়ট তুই আজ যা বললি তার ফল পেতেই হবে,আই মিন ইট।নাউ গেট লস্ট।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে তার জিনিসপত্র সমেদ ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল।মেইন ডোর লক করে দেয় ঐশ্বর্য ,উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেরিয়ে পড়লো , যে যাই করুক,যাই বলুক তার কিছু যায় আসে না। রাস্তায় নেমে সিরাত কে কল করলো উৎসা।
দুপুর বারোটা সাবিনার পায়ের কাছে বসে আছে উৎসা ,মা ছাড়া সে কিছুই বুঝে না।অথচ তার মায়ের এমন অবস্থা কিন্তু কেউ একবারের জন্যও তাকে জানালো না! সবার প্রতি মনে ছোট্ট অভিমানের পাহাড় তৈরি হলো।
“উৎসা!”
মিহির অস্ফুট স্বরে ডাকা যেনো কানে ঝংকার তুলছে উৎসার।চোখ মুখ শক্ত করে নিল সে।
“যাও কথা বলবে না তুমি আমার সাথে।”
বোনের অভিমান বেশ ধরতে পেরেছে মিহি।
“উৎসা বনু রাগ করিস না তুই আমরা তো…..
“কী তোমরা হ্যা? একটা বারের জন্য কল করে বললে না মায়ের এই অবস্থা? তুমি জানো আমি মায়ের অসুস্থতা স’হ্য করতে পারি না আপু।”
“আমি ওকে নিষেধ করেছিলাম উৎসা।”
উৎসা আর মিহির কথোপকথনের মাঝখানে প্রবেশ করলো রুদ্র , রুদ্র কে দেখে অভিযান গাঢ় হলো উৎসার।
“ভাইয়া তুমি? তুমি নিষেধ করেছো?”
রুদ্র স্বরে বলে।
“হু।”
“কিন্তু কেন?”
“এই জন্য,দেখ তুই নিজেকে!কী ভাবে ছুটে এসেছিস!তোর এই অবস্থা হবে বলেই আমরা নিষেধ করেছি।”
উৎসা কিছু নিতে পারছে না , ভীষণ ভাবে বাজে অসুস্থ লাগছে নিজেকে রুদ্রর কথায় যুক্তি আছে। সত্যি সে দিকবিদিক না ভেবেই তো চলে এসেছে।ওরা তো ওর ভালোই চায়!
“উৎসা তোর গালে এই আঙ্গুলের ছাপ কেন?”
উৎসা চমকে উঠে , অটোমেটিক হাত চলে গেল গালে।
“গ,,গালে? কিসের দাগ?”
“এই তো স্পষ্ট আঙ্গুলের ছাপ মনে হচ্ছে।”
উৎসা কিছুটা ইতস্তত করে মিহি স্বরে বলে।
“কিছু না তো আপু একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম এই যা।”
উৎসা কাউকে কিছুই বললো না ঐশ্বর্যের সম্পর্কে , লোকটা খুব খারাপ। খারাপ না হলে কি তার সাথে এমন আচরণ করতো? সে কখনোই ঐশ্বর্য কে ক্ষমা করবে না।
“তুই ওখানে গিয়ে কী অবস্থা করেছিস নিজের?”
উৎসা মলিন হাসলো।
“আমি ঠিক আছি আপু , কিন্তু তুমি? তোমার এই অবস্থা কেন বলো? আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না তুমি কী করে সবটা মেনে নিলে?”
মিহি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে।
“কী করব বোন? আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।”
উৎসা দাঁতে দাঁত পিষে বলে।
“তোমার জায়গায় আমি হলে পুলিশ কে’স করতাম। কিন্তু তুমি আমার বোন হয়ে এভাবে হার মেনে নিলে?”
মিহি আর কথা বাড়াল না , সে জানে উৎসা কথায় কথা বাড়াবে। এরপর ঠিকই কোনো ভাবে বলবে পুলিশ কে’স করতে।
“আচ্ছা তুই এখন রেস্ট কর ,কাল থেকে তো কত জার্নি করে এসেছি!এখন রেস্ট প্রয়োজন।”
“না আপু আমি মায়ের কাছে থাকি, আমার ভালো লাগছে না।”
উৎসা গিয়ে সাবিনা পাটোয়ারী কে জড়িয়ে ধরলো।
স্নিগ্ধ সকাল সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমিয়ে সবে উঠে বসেছে ঐশ্বর্য। সে বড্ড ক্লান্ত , বলতে গেলে কাল রাত থেকে ক্লান্ত।পাশে থাকা ক্যালেন্ডার দেখে চমকে উঠে ,এ কী এখন অবধি তার মনে হয়েছিল সে কাল রাতে ঘুমিয়েছে এবং এখন উঠেছে। কিন্তু না সে পরশু সোমবার ঘুমিয়েছে এখন বুধবার সকাল। ঐশ্বর্য বুঝতে পারলো এটা ড্রা’গের ইফেক্ট, ঐশ্বর্য লম্বা নিঃশ্বাস টেনে সামনের দিকে এগুতে গিয়েও থেমে গেল। জিসান পেপার হাতে ডিভানের উপর বসে আছে , আর কেয়া দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
“ওয়াও দুজনেই তো দেখছি এক সাথে!”
জিসান উঠে দাঁড়ালো।
“প্রবলেম কি তোর ব্রো?”
কন্ঠে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে , ঐশ্বর্য ড্রয়িং রুমে গেল , ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খেলো।
“আমার কী হবে?”
কেয়া এক প্রকার চেঁচিয়ে উঠলো।
“হাউ ডেয়ার ইউ রিক?তুই কী করে এত ড্রা’গ নিতে পারলি?আর ইউ ম্যাড?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো , টেবিলের উপর থেকে আপেল তুলে নিল।
“ফ্রেন্ডস অ্যাম অল রাইট ইয়ার ,কী হবে আমার?তোরা এত প্যানিক করছিস কেন?”
জিসান স্বস্তি পেলো না।
“মিস বাংলাদেশী যা বললো তা কী সত্যি রিক?”
ঐশ্বর্য থামলো ,উৎসা কে আপাতত স’হ্য করতে পারছে না সে।
কেয়া একই সুরে বলে উঠে।
“হ্যা টেল মি দ্যা ট্রুথ রিক কেন তুই কিউট গার্লের সাথে ওমনটা করলি?সি ইজ ইওর ওয়াইফ।”
ঐশ্বর্য রাগে গজগজ করে বলে।
“আজকেই লাস্ট এরপর আর কখনও ওকে নিয়ে কথা যেনো না হয়,আই রিপিট ওর নাম ধরবি না!”
ঐশ্বর্যের ধমকে জিসান আর কেয়া দুজনেই ভড়কে গেল।
কেয়া আমতা আমতা করে বলল।
“রিক এত প্যানিক করিস কেন? কী হয়েছে তোর?”
ঐশ্বর্য আশেপাশে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো , নিজ মনেই বিড়বিড় করে আওড়াল।
“ট্রাস্ট মি আমি তোর জান খেয়ে ফেলব সুইটহার্ট!তুই যা করলি তাতে আমি ঠিক কী করতে পারি আইডিয়া নেই।”
ঐশ্বর্য কে বিড়বিড় করতে দেখ কপালে ভাঁজ পড়লো জিসানের।
“ব্রো আর ইউ ওকে?”
ঐশ্বর্য এদিক ওদিক মাথা দুলালো।
“হ্যা , অ্যাম ফাইন ডোন্ট ওয়ারি।চল রেডি হয়ে নেই অফিস যেতে হবে।”
ঐশ্বর্য তাড়াহুড়ো করে বেড রুমে চলে গেল। এদিকে কেয়া আর জিসান দু’জনেই অবাক হচ্ছে , ঐশ্বর্য কে কেমন অস্বাভাবিক মনে হলো!
সময়টা পেরিয়ে যাচ্ছে আপন গতিতে ,উৎসা সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান সব কিছু নিজের মায়ের সেবাতে দিল। পুরো সময়টা নিজের মায়ের দেখাশোনা করলো। এদিকে ঐশ্বর্য ঠিক তেমনি , নিজের মতো করে আছে।অফিসের কাজে সম্পূর্ণ ব্যস্ত রাখছে নিজেকে!রাত হতেই সে ক্লাবের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে ,রাতের শেষ সময়টুকু সেখানেই পাড় করে।
রাতের শেষ প্রহর , ঘড়ির কাঁটা ভোর পাঁচটা ছুঁই ছুঁই। ঐশ্বর্য এখনো গ্লাস হাতে ডিভানের উপর বসে আছে।
“রোজ আমি একবার বাংলাদেশ গেলে লিমিট ক্রস হবে সত্যি বলছি!আই সয়ার এত বছরের অপেক্ষার শোধ প্লাস হার্ট করার শাস্তি পাবে তুমি!জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
রেড রোজ ২ পর্ব ১৫
ঐশ্বর্য উঠে বেড রুমের দিকে এগিয়ে গেল , ব্যস সে আর নিতে পারছে না।তার উৎসা কে লাগবেই ,বাই হোক অর বাই ক্রুক।সে কিছুতেই নিজের জিনিস ছাড়বেন না , দরকার পড়লে মে রে ফেলবে! ওটার ক্ষমতাও আছে এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর।