রেড রোজ ২ পর্ব ২

রেড রোজ ২ পর্ব ২
ফারহানা নিঝুম

সদর দরজার সামনে কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। এদিকে সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে, ঐশ্বর্য জহুরি চোখে উৎসা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নেয়।
এই তো মিনিট দশেক আগের কথা উৎসা বাড়ির সামনে এসে দরজা খোলা দেখে এগিয়ে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠে।

“আপু দেখো না আমি পড়ে গেছি, তুমি আমার জামা দেও তো।আর হ্যাঁ সঙ্গে টাওয়াল নিয়ে এসো, পুরো কাঁদায় মাখো মাখো।আপু….
উৎসা সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ মে’রে গেল। সামনে কালো রঙের ট্রি শার্ট এবং ম্যাচিং করা ট্রাউজার পড়ে সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। সুদর্শন পুরুষ, উৎসা চমকালো। ঐশ্বর্যের পাশেই আছে জিসান, তাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হলো না উৎসার। তবে নতুন আরো একটি মুখ দেখতে পেলো,কেয়া।উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, নিশ্চুপই এই অস’ভ্য রিক চৌধুরীর নতুন গার্লফ্রেন্ড।
ঐশ্বর্যের তাকিয়ে থাকাতে উৎসা অস্বস্তি বোধ করছে, এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে।
ঐশ্বর্য কাঁদায় মাখো মাখো উৎসা কে দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। ইস্ তার বউ বড় হয়ে গেছে, ঐশ্বর্য গভীর চোখে তাকিয়ে আছে।পরণের জামা পুরো নোংরা হয়ে আছে,তার উপর চুল গুলো এলোমেলো ‌। চোখের চাহনিতে মাদ’কতা মেশানো।
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এমন অবস্থায় নে’শা ধরে যাচ্ছে, একেবারে ফিটফাট থাকলে অ্যাম ডাই।”
কেয়া উৎসা কে দেখে কিঞ্চিৎ উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে গেল।
“হাই আমি কেয়া রিকের ফ্রেন্ড।”
কেয়া হ্যান্ডশেক করতে হাত এগিয়ে দিল,উৎসা ভুলেই গেছে তার হাতে কাঁদা।সে এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে মিনমিনে গলায় বলল।
“আমি উৎসা পাটোয়ারী।”
জিসান ফিক করে হেসে উঠলো।সে তো জানে উৎসা মিসেস উৎসা ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।
“এহহ উৎসা তোর হাত..
উৎসা নিকির কথা শুনে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো কাঁদায় কেয়াকেও নোং’রা করে দিয়েছে।
“অ্যাম স্যরি।”
ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, তাতে উৎসা আরেক দফা চমকে গিয়ে পিছনে যেতে গিয়েও হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।

“আহ্..
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট শিট।”
ঐশ্বর্য এগিয়ে আসতে যাবে তৎক্ষণাৎ উৎসা এক দৌড়ে দুতলায়।
ঐশ্বর্য বুঝলো রোজ তার ভয় পাচ্ছে,গুড ভয় পাওয়া উচিত।তাহলেই তো মজা, ঐশ্বর্য ভয়ে ভয়ে জয় করে নেবে।
নিকি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো উৎসার অবস্থা দেখে।
বিকেলের দিকে শহীদের সঙ্গে দেখা হয় ঐশ্বর্যের। দু’জনের মধ্যে টুকটাক কথাও হলো।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মিস্টার রাজেশ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলছে ঐশ্বর্য। মিস্টার রাজেশ কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আসবেন কোম্পানির কিছু কাজে।
“হ্যা আঙ্কেল বলো।”
“রিক তোমরা ঠিক মতো পৌঁছেছো?”
“হ্যা আঙ্কেল আমরা ঠিক মতো পোঁছে গেছি। তুমি কবে আসবে?”
মিস্টার রাজেশ হাত ঘড়িটা দেখে বললেন।
“রিক একটা মিটিং আছে আমি তোমাকে পরে কল করছি।”
“ওকে আঙ্কেল।বাই।”
“বাই।”

রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে কথা শুনতে উৎসা। মূলতঃ সে ঐশ্বর্যের জন্য ব্ল্যাক কফি নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না একটুও।মনে মনে নিকির উপর ভীষণ অভিমান হচ্ছে তার,সে তো জানে উৎসা এই লোকটা কে একটুও পছন্দ করে না তাহলে কেন বারবার তার কাছে পাঠিয়েছে?
দরজায় টোকা পড়তেই ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। উৎসা নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে, ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“আপু আপনার জন্য কফি পাঠিয়েছে!”
ঐশ্বর্য কিছুক্ষণ আগেই বলেছে উৎসা কে পাঠাতে। আপাতত ঐশ্বর্যের উৎসার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি।
“কাম ইন।”
উৎসা ভেতরে ঢুকে চমকে গেল,কেউ নেই।
“এহহ?এই তো এখানে ছিল! গেল কোথায়?”
উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো ঐশ্বর্য কে, তৎক্ষণাৎ দরজা লক করে সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য।
“হাই জান।”

উৎসা আরেক দফা চমকে উঠে। ঐশ্বর্য অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“এ কী আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করে চুমু ছুড়ে দেয় উৎসার পানে।
“কাছে এসো বুঝাচ্ছি।”
উৎসা এক লাফে দু কদম সরে গেল।
“এহহহহ ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা শখ কত?”
ঐশ্বর্য চেয়ার টেনে বসলো।
“তুমি না আমার বউ? কাছে আসতে সমস্যা কিসের?”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“ফেলে যাওয়ার সময় মনে ছিলনা?”
“উঁহু। এখন কাছে এসো রোজ।”

উৎসা আসলো না,সে সরে যেতে নিলে ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে ঝাপটে ধরে উৎসা কে।
“ছাড়ুন আমায় অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
“শাট আপ।”
উৎসা ছাড়া পেতে মুচড়ে ওঠে, ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার অধর আঁ’ক’ড়ে ধরে।উৎসা জ্ঞান হারাবে, ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শ পাগল করে দিচ্ছে উৎসা কে। ঐশ্বর্য মিনিট দশেক পর নিজেই ছেড়ে দিল।
“শ্বাস নাও।”
উৎসা ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে নেয় , এতক্ষণ নিঃশ্বাস আটকে ছিলো তার।
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“অ্যাম নট গুড পার্সন রেড রোজ, আমি কেমন তা এত দিনে অবশ্যই বুঝে গেছো?”
উৎসার সারা শরীর কেঁপে উঠল।সে অপেক্ষা করলো না দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নির্লজ্জ লোক একটা, ইস্ কী করলো!

বিকেলের দিকে বাগানে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।এর মধ্যে জিসান আর নিকির ভাবও হয়ে গেল। জিসান সেই ছোট থেকেই নিকি কে পছন্দ করে, ফ্যামিলির সঙ্গে এবার কথাটা বলেই নেবে।
রুদ্র ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে,কেয়া এসে রুদ্রর পাশে বসলো।
“হ্যালো হ্যান্ডসাম।কী করছেন?”
“হেই সিনিয়র।”
কেয়া ল্যাপটপে উঁকি দিয়ে দেখল রুদ্র কী করছে?

রুদ্র ফিক করে হেসে উঠলো।উৎসা মহা বিরক্ত নিয়ে সবার জন্য অল্প বিস্তর নাস্তা নিয়ে গেল।
সবাই কে হাতে হাতে প্লেট তুলে দেয়, কিন্তু ঐশ্বর্যের বেলায় যত জ্বা’লা।নিকি কে ইশারা করলো প্লেট , ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে। শ’য়তা’ন মেয়ে তার কাছে আসতেই চায় না!
উৎসা কাঁপা হাতে ঐশ্বর্যের দিকে প্লেট বাড়িয়ে দিল। ঐশ্বর্য নিলো না,উৎসা বিরক্ত হলো।
উৎসাও কিছু বললো না , চুপচাপ নিকির পাশে গিয়ে বসলো। ঐশ্বর্য আই প্যাড নিয়ে পড়ে আছে,উৎসা উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সে কি করছে?
ঐশ্বর্য কিসব ভিডিও দেখছে,উৎসা আর মনো নিবেশ করলো না।

“মা শুনো না আমি না নিকি আপুদের বাড়িতে যাব না।”
মেয়ের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেন সাবিনা পাটোয়ারী।যে মেয়ে সারাদিন ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য পাগল পাগল হয়ে থাকে সে কী না যাবে না!ও বাড়িতে বড়সড় একটা পার্টি আছে, কিন্তু ঠিক কী উপলক্ষে তা কাউকে বলেনি ঐশ্বর্য। হ্যা ঐশ্বর্য নিজ দায়িত্বে পার্টির আয়োজন করেছে,সে কিছু একটা করতে চলেছে।
“কেনো কী হয়েছে?”
“আমি যেতে চাই না মা, ভালো লাগে না।”
সাবিনা পাটোয়ারী আর জোর করলেন না। রাতের দিকে সাবিনা পাটোয়ারী এবং মিহি দু’জনে মিলে বেরিয়ে গেল। উৎসা একাকী বাড়িতেই রইলো।
বড়সড় একটা পার্টির আয়োজন করেছে ঐশ্বর্য,সে আজ অনেক বড় কিছু করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই মিস্টার রাজেশ চৌধুরী চলে এসেছেন।

“ব্রো ওই দেখ সাবিনা আন্টি কিন্তু মিস বাংলাদেশী নেই!”
ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় সেদিক পানে , সত্যি উৎসা নেই। কিন্তু উৎসা কে ছাড়া তো এই পার্টি হবে না!
“গাড়ির চাবি দে।”
জিসান কপাল কুঁচকে নেয়।
“পার্টির মাঝখান থেকে এখন থেকে আবার কোথায় যাবি?”
“কাজ আছে।”
জিসান পকেট থেকে চাবি বের করে দিতেই ঐশ্বর্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।আপাতত গন্তব্য উৎসার বাড়ি।

সোফায় বসে টিভি দেখছে উৎসা। বিরক্ত লাগছে তার ,ইশ ওখানে নিশ্চয়ই কত মজা হচ্ছে!মিস করলো সব কিছু উৎসা। শুধু মাত্র অস’ভ্য রিক চৌধুরীর জন্য!
আচমকা অনুভব করলো কেউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।উৎসা শুকনো ঢোক গিলে পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কেমন গা ছমছম করছে উৎসার। সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে। উৎসা আল্লাহ গোঁ বলে চিৎকার করলো, ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“আমার কাছে আসলে কিন্তু আমি…
“”সুইটহার্ট এত্ত সহজে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তোমাকে ছাড়বে। আফটার অল তুমি আমার ওয়াইফ!”
ঐশ্বর্যের কথা শুনে ছিটকে দূরে সরে গেল উৎসা।
“ভাইয়া আপনি আমার কাছাকাছি আসলে কিন্তু….
“ডোন্ট কল মি ভাইয়া রোজ! আরেকবার ভাইয়া ডাকলে কিন্তু।”

উৎসার কান্না পাচ্ছে এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ছাড়তেই চাচ্ছে।দুতলা থেকে নিচ তলা আবার দুতলা কখন থেকে এটাই করছে সে! কিন্তু ঐশ্বর্যের নাম গন্ধ নেই তাকে ছাড়ার।
জার্মানি থেকে আসার পর থেকেই তাকে বিরক্ত করছে।কই ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে ছিলনা? উঁহু উৎসা বড় হয়ে গেছে, এখন সব বুঝে।
“জান একটু কাছে আসো একটু!”
ঐশ্বর্য হাত উঁচিয়ে দেখালো , উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“ফাজিল লোক, অস’ভ্য রিক চৌধুরী কখনো আপনার কাছে আসবো না।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো,হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দেয়।
“ওকে সুইটহার্ট তোমাকে আসতে হবে না, কিন্তু হ্যা আমি আসলে আজকে তুমি শেষ উম্মাহ্।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করে চুমু ছু’ড়ে দেয়। উৎসার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে।

“ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা,নিকি আপু কোথায় তুমি?”
ঐশ্বর্য বেশ আরাম করে সোফায় গিয়ে বসলো,তাতে উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল।
“কেউ নেই রোজ, সবাই বাইরে গেছে। এখানে শুধু তুমি আর আমি।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো।
“আমি কিন্তু সত্যি সত্যি কেঁদে দেব!”
“কাঁদো যত ইচ্ছে কাঁদো।আর হ্যাঁ কিছু কান্না বাঁচিয়ে রেখো একটু পর যখন আমি ধরবো তখন আবার কাঁদতে হবে।”
উৎসা চুপসে গেল, ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে উৎসা কে ধরে ফেলে।
“সুইটহার্ট আই লাভ ইউ।”
উৎসা চমকালো, ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে?
“সত্যি?”

“হুঁ। আজকে ও বাড়ি পার্টি রেখেছি শুধু তোমার জন্য।আজ আমাদের আবার বিয়ে হবে।”
উৎসার কাছে সবটা কেমন স্বপ্নের মত লাগছিল। উৎসা উদগ্রীব হয়ে ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে, ঐশ্বর্য টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ উৎসা হুমড়ি খেয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেল।
“ও মা গোঁ?”

রেড রোজ ২ পর্ব ১

কোমড়ে লেগেছে উৎসার,সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আশেপাশে দেখছে।রাত সাড়ে বারোটা এখন, তার মানে উৎসা এসব কিছু স্বপ্ন দেখছিল? ঐশ্বর্য জার্মানি থেকে আসেনি?
উৎসা নিজের কল্পনায় কপাল চাপড়াতে লাগলো।
“হায় রে অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৩