রেড রোজ ২ পর্ব ২০
ফারহানা নিঝুম
“হাউ ডেয়ার ইউ রিক?তোরা দুজনে এখানে আমাকে ফেলে চলে এলি?হাউ?”
কেয়া রিতিমত ঐশ্বর্যের উপর ঝা’পিয়ে পড়েছে।
“কেয়া স্টপ দিস ননসেন্স।”
“থামবো না আমি!তোরা কী করে পারলি হুঁ?”
কেয়া কিছু না পেয়ে পাশে থাকা কাউচের উপর থেকে কুশান নিয়ে ঐশ্বর্য আর জিসানের দিকে ছু’ড়ে দিচ্ছে।
জিসান ক্যাচ করে নিল।
“ইয়েস আই ক্যাচ ইট।”
ঐশ্বর্য জিসান কে টেনে নিজের সামনে নিয়ে এলো , ফলস্বরূপ কেয়ার আরো একটি ছু ড়ে দেওয়া কুশান জিসানের মুখে পড়লো। উপস্থিত নিকি আর রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো। জিসান কি’ড়’মিড় করে তাকালো কেয়ার দিকে।
কেয়া ঠোঁট উল্টে বললো।
“তোরা আমাকে ভালোবাসিস না ইয়ার?”
কেয়া কাউচের উপর বসলো , মুখটা তার মলিন হয়ে আছে। ঐশ্বর্য আর জিসান দু’জনেই দু পাশে বসে, ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“এক্সুয়েলি ইউ আর রাইট।আমরা কেউই তোকে ভালবাসি না।তাই না জিসান?”
ঐশ্বর্যের দুষ্টুমি করে বলা কথাটা বেশ ধরতে পেরেছে জিসান। সেও তাল মিলিয়ে বলে।
“হ্যা রে নিকি, আমার ভালোবাসা শুধু আমার বউয়ের জন্য।”
নিকি ভ্রু যোগল কুঁচকে নেয়, জিসান দাঁত দেখালো।কেয়া কটমট করে তাকালো দু’জনের দিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“লায়ার লায়ার।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, রুদ্র তাকালো কেয়ার ভোলাভালা মুখশ্রীর দিকে।
“শুন তুই তো গ্রেমা মিস এলিনার সঙ্গে বাইরে গিয়েছিলি কেয়া! তাহলে আমরা কী করে তোকে বলব?আর বললেই কী তুই চলে আসতে পারতি?”
কেয়া অসহায় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।
“ড্রামা স্টপ কর! ভালো লাগে না। যদি আমি হারিয়ে যেতাম?”
জিসান চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো।
“রিয়েলি?তুই জানিস তোকে যদি ভুলবশত কেউ নিয়ে যায় তাহলে তার লাইফ শেষ।তারা তো আর জানে না তুই ডেবিল কুইন!”
কেয়া ক্ষে’পে গেল।
“আই উইল কি’ল ইউ জিসান।”
একটি সুন্দর সকালের শুরু হয় নরম সোনালি আলোয়, যখন সূর্যের প্রথম কিরণটি ধীরে ধীরে মাটির উপর ছড়িয়ে পড়ে।ঠিক সেই সময় জগিং করতে বেরিয়ে পড়ল ঐশ্বর্য।
আকাশে রঙের মেলা—হালকা কমলা, গোলাপি আর নীলের মিশেলে যেন এক অপূর্ব চিত্রকর্ম। গাছের পাতাগুলো শিশিরবিন্দুতে ভিজে চকচক করছে, মনে হচ্ছে যেন কেউ মুক্তার গয়না ছড়িয়ে দিয়েছে।
পানির বোতল বেঞ্চে রেখে সুঠামদেহী এক পুরুষ ছুটে চলেছে।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ চারপাশে সুরের আবহ তৈরি করে। হালকা ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখলে মন জুড়িয়ে যায়।ছুটতে ছুটতে দেখতে পেলো কিছুটা দূরে একটা ছোট্ট খাল
ছোট্ট খালের জলে সূর্যের আলো পড়ে স্রোতের মাঝে সোনার ঝিলিক তুলে। দূরের গুটি কয়েক মানুষ নজরে এলো ঐশ্বর্যের ,একে একে কাজ করতে যাচ্ছেন তারা । সকালের এই শান্ত পরিবেশে পৃথিবী যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ছুটতে ছুটতে এক সময় হাঁপিয়ে গেল ঐশ্বর্য , ক্লান্ত শরীর নিয়ে বেঞ্চে এসে বসে পড়ে।
“ব্রো তুই পারিসও বটে! এখানে এসেও সব কিছু মেইনটেইন করতে হবে?”
ঐশ্বর্য ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে , সম্পূর্ণ পানি শেষ করে বোতল টা ছুড়ে দিল ।
“অভ্যিয়েসলি,তোর কী মনে হয় দেশ চেঞ্জ হয়েছে বলে আমার রুলস চেঞ্জ হবে?”
“তা হবে কেন?তুই তো দ্যা গ্রেট ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো , অতঃপর বাড়ির পথে পা বাড়ালো।
“লেটস্ গো।”
“আমি ওই বাড়িতে যাবো না।”
উৎসার কথায় কপাল মৃদু কুঁচকে নিলো মিহি।
“কেন? কেন যাবি না তুই?”
মিহি কিছু জিনিস পত্র শহীদের বাড়িতে দিয়ে আসতে বলেছিল উৎসা কে। কিন্তু উৎসা বেঁকে বসল , সে কোনো মতেই যাবে না।
“আমি যাব না আপু,ওই বাড়িতে অস’ভ্য রিক চৌধুরী আছে তুমি বুঝবে না।”
মিহি কিছুই বুঝলো না, ঐশ্বর্য ওখানে আছে তাতে ওর কী?ও কেন এমন করছে?
উৎসা আরো যেতে চাইছে না নিকির কাছে, এমনিতেই নিকি কাল বলেছে আসতে।ওর নাকি কথা আছে , নিশ্চয়ই এখন সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করবে!
মিহি ঠাস করে উৎসার মাথায় চা’টি মা’রলো।
“দয়া করে যা এগুলো দিয়ে আয়।”
উৎসা ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেল।কিছুটা পথ যেতেই মাহমুদ কে দেখতে পেলো। মাহমুদ আফসানার ভাইয়ের ছেলে।
“কী গোঁ কোথায় চললে?”
মাহমুদ কে দেখে মুচকি হাসলো উৎসা।
“মাহমুদ ভাইয়া আপনি!”
মাহমুদ অধর বাঁকালো।
“হ্যা এই এদিকে যাচ্ছিলাম।তা তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
উৎসা সামনের দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমি তো রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি,ওই মামার বাড়ি যাচ্ছিলাম।”
মাহমুদ তৎক্ষণাৎ বলে উঠে।
“হ্যা আমিও যাচ্ছি,চলো তোমাকে নামিয়ে দেব।আর ফুপির সঙ্গে দেখাও করে নেব।”
উৎসা আর না করলো না, মাহমুদের গাড়িতে উঠে বসলো। মাহমুদ গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো, আবারও আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিচ্ছে মাহমুদ, কেমন বি’শ্রী নজরে দেখছে উৎসা কে। দৃষ্টি বারংবার উৎসার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে গভীর দৃষ্টি ফেলছে । উৎসা যদি এটা লক্ষ্য করতো তাহলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে মাহমুদের গালে ঠাঁ’টিয়ে থা’প্প’ড় বসাতো। হয়তো এর থেকেও বেশী!
“হাই হ্যান্ডসাম।”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে পিছন ফিরে তাকালো রুদ্র।সে বাগানে সকাল সকাল হাঁটতে এসেছিল। এটা তার রোজকার অভ্যাস! কিন্তু নিজের পিছনে এখন কেয়া কে আশা করেনি।
কেয়া অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে, অদ্ভুত বললে ভুল হবে। মুগ্ধ চোখে তাকায় রুদ্রর পানে,পরণে কালো রঙের ট্রি শার্ট আর সাথে ট্রাউজার। অসম্ভব সুন্দর লোকটা।
“ওহে ফ্লার্টিং বা’জ মেয়ে নজর সামলাও।চোখ দিয়েই গিলে খাবে নাকি?”
কেয়া অবাক হয়ে গেল, ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
সে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে মানে?
“হোয়াট?”
রুদ্র আরেকটু দুষ্টুমি করে আওড়াল।
“মনে তো হচ্ছে চোখ দিয়েই প্রেগন্যান্ট করে দেবে!”
এবার কেয়ার চোয়াল ঝুলে গেল রিতিমত।
“এইই ছেলেরা প্রেগন্যান্ট হয় না তো! মেয়েটারা হয়!”
রুদ্র ফের বলে উঠে।
“ছেলেরা প্রেগন্যান্ট হয় না ঠিক আছে কিন্তু বাবা তো হয়?ফাদার?”
কেয়ার মাথার উপর দিয়ে গেল সবটা!কী বলছে কী না বলছে কিছুই বুঝলো না!
“ইয়াক ইয়াক কী আজেবাজে কথা!”
রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো।
“তুমি যে ভাবে দেখছো তাতে আমার বেশ লজ্জা লাগছে।”
কেয়া লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নিল, কান্না পাচ্ছে তার।এই লোকটা তাকে কেমন হেনস্তা’ করছে!কেয়া ঠিকঠাক জবাবও দিতে পারছে না।
“ওকে ওকে কুল ডাউন কাঁদতে হবে না মজা করছিলাম।”
রুদ্র হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো,কেয়া ঠোঁট উল্টে আওড়ালো।
“ইউ আর ভেরি ব্যাড বয়। আমি আপনার সাথে কথাই বলব না!”
কেয়া উল্টো পথে হাঁটতে লাগলো, রুদ্র হাক ছেড়ে ডাকলো।
“আরে ফ্লার্টিং বা’জ দাঁড়াও।”
কেয়া এগিয়ে যেতে লাগে, দৃষ্টি গেল সামনের দিকে। উৎসা সবে গাড়ি থেকে নেমেছে।
“কিউট গার্ল।”
কেয়া দৌড়ে গিয়ে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে।
“ও মাই গড কিউট গার্ল তুমি!”
উৎসা কেয়া কে দেখে বেশ চমকালো।
“কেয়া আপু তুমি?এসেছো?কখন?”
“ইয়াস্টার ডে।”
“তোমাকে মিস করেছি।”
‘ওউ আই মিস ইউ টু কিউট গার্ল। এক্সুয়েলি তোমাদের সবাইকে খুব মিস করেছি।”
উৎসা হেসে ফেলল। এদিকে মাহমুদ উৎসা কে দেখেই যাচ্ছে।কেয়া মাহমুদ কে দেখে শুধোয়!
“হো ইজ হি?”
“উনি? উনি হচ্ছেন শহীদ মামার বউ মানে আফসানা মামীর ভাইয়ের ছেলে।”
কেয়া সৌজন্য মূলক হাসলো, মাহমুদও হাসলো।
“হ্যালো। আমি কেয়া।”
“আমি মাহমুদ।”
“নাইস টু মিট ইউ।”
কেয়া লক্ষ্য করলো কথা বলার সময়ও কেম মাহমুদ উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে!
কফি মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা তাও আবার ঐশ্বর্যের সামনে। ঐশ্বর্য বেশ ভাব নিয়ে ডিভানের উপর সিগারেট টানছে।
“আপনার কফি।”
উৎসা আলগোছে টেবিলের উপর রেখে বের হতে নিলে ঐশ্বর্য হাত টেনে ধরে।
“আমার লিগ্যাল ওয়াইফ তুই।তার পরেও অন্যদের কাছাকাছি যাওয়া টা কিসের কারণ?”
ঐশ্বর্যের শক্ত হাতে নিজের নরম তুলতুলে হাতখানি পিষ্ট হচ্ছে। উৎসা ব্যথায় ছটফট করে উঠলো।
“লাগছে হাতে, ছাড়ুন!”
“টেল মি দ্যা ট্রুথ ড্যামেড!”
“কাছাকাছি যাইনি কারো,আর কার কাছে যাওয়ার কথা বলছেন? মাথা কী পুরোটাই গেছে?”
“হ্যা গেছে।”
ঐশ্বর্য গ’র্জে উঠে, চেপে ধরে দেয়ালের সঙ্গে উৎসা কে!
“ইয়েস অ্যাম টোটালি ম্যাড ইয়ার। ওয়াইফ আমার, আমি এখনও টাচ করলাম না সেখানে অন্য কেউ চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে!হোয়াই?”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্যের রাগের কাছে সে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আমি তো কারো কাছে….
“প্লিজ নট নাউ।”
“ব ,,,, ব্যথা পাচ্ছি আমি!”
“লাগার জন্যেই দিচ্ছি।”
“আই হেইট ইউ।”
“ডু,হেইট অ্যাস মাচ অ্যাস ইউ ক্যান। এটাই চাই।”
উৎসা ছটফট করলো। ঐশ্বর্য উৎসার গালে নাক ছোঁয়ায়, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে গালের উপর। উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্য অধর দুখানি এবারে স্পর্শ করছে তার কানের লতি।কিছুটা চিবিয়ে চিবিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো।
“যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ঘৃ’ণার পরিমাণ আকাশ না ছুঁয়ে ফেলে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ততটাই খারাপ হবো । যতক্ষণ না তোমার ঘৃ’ণার বাঁধ না ভে ঙে যায়,ঠিক তখনই আমি তোমার কাছাকাছি আসবো অ্যান্ড অ্যান্ড রিক চৌধুরী তখন তার সীমা অতিক্রম করবে সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত ছেড়ে দিল,উৎসা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা।
“সামথিং সামথিং!”
উৎসা ত্বরিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, কিন্তু দু পা এগোতেই হাতে টান পড়ে।
রেড রোজ ২ পর্ব ১৯
“আহ্ আপু!”
“কী আপু হুঁ?কী হচ্ছে এসব?
নিকি উৎসার কাছেই আসছিল কিন্তু এখানে এসে সেদিনের মতো ওদের কে কাছাকাছি দেখে কিছু একটা সন্দেহ হয় তার মনে।যা এখুনি জানতে হবে তার।
“চুপচাপ সত্যিটা বল উৎসা। আমি কিন্তু কিছুটা বুঝতে পারছি!”
উৎসা শুকনো ঢোক গিলে নেয়, সবটা জানে মানে?নিকি কী আবার ঐশ্বর্য আর উৎসার বিয়ে নিয়ে জেনে ফেলেছে?