রেড রোজ ২ পর্ব ২৯

রেড রোজ ২ পর্ব ২৯
ফারহানা নিঝুম

সুইমিং পুল পার্টি সাধারণত একটি মজার এবং রিল্যাক্সিং ইভেন্ট যেখানে অতিথিরা পানির কাছে সময় কাটায় এবং আনন্দ করে।
ভেতরে প্রবেশ করেই চমৎকার পরিবেশ দেখতে পেলো উৎসা।
পুলের চারপাশে সাজসজ্জা রঙিন বেলুন, ফ্লোটিং লাইট, এবং পানির ওপরে ভাসমান ফুলের ডেকোরেশন।
উৎসা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবটা লক্ষ্য করছে।
ট্রপিক্যাল থিমও রাখা হয়েছে । পাম গাছের কৃত্রিম সাজসজ্জা, হাওয়াইয়ান লেই মালা, এবং উজ্জ্বল রঙের অ্যাকসেসরিজ।

উচ্ছ্বসিত এবং ট্রেন্ডি গানের প্লেলিস্ট পরিবেশকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলছে। একের পর এক মিউজিক চলছে। ঐশ্বর্য আর জিসান সামনের দিকে আছে , উৎসা কেয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে।
কিছুটা দূরেই খাবার ও পানীয়র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ককটেল এবং মকটেল, ককটেল পরিবেশন করা হচ্ছে। কেউ ককটেল কেউ বা সফট ড্রিংকস খাচ্ছে।
তার পাশেই গ্রিলড আইটেম ,বারবিকিউর আইটেম যেমন স্যান্ডউইচ, টাকোস, ও হালকা স্ন্যাকস।
সামনের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা চমকে উঠে উৎসা
ড্যান্সিং চলছে ।পুলসাইডে বা পানির মধ্যে হালকা নাচ। উৎসা জহুরি চোখে পরখ করে দেখে
থিম এবং ড্রেস কোড অনেকটাই এক রকম।এই বার ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে তাকে কেন ঐশ্বর্য এমন ড্রেস পড়তে বলেছে!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অতিরিক্ত ব্যবস্থা রয়েছে, ভেতরে আসার সময় খেয়াল করলো হ্যারি সেফটির জন্য
সিকিউরিটি এবং সেফটি , লাইফগার্ড, ফার্স্ট এইড কিট, এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করে রেখেছে।
উৎসা এবারে চমকের অষ্টম আকাশ পাড় করেছে সামনের পুলে কয়েকজন কে দেখে।কত গুলো মেয়ে সুইমিং কস্টিউম পরে ছেলেদের সঙ্গে ক্লোজ হচ্ছে, নাক ছিটকে নিল উৎসা। এটাই কী তবে পুল পার্টি?
উৎসা কেয়া কে ফিসফিসিয়ে বললো।
“আপু এটা কী হচ্ছে?এসব ছিহ্!”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“এটাই পার্টি,এর থেকে বেশী দেখলে তো দেখছি তোমায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো, ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল হ্যারির দিকে।ম্যানলি হাগ করলো দুজনেই।
“হোয়াটস আপ ব্রো?”

ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো , জিসানের সঙ্গেও হাগ করলো হ্যারি। জিসান বলে উঠে।
“ব্রো আফটার সো লং।”
“ইয়েস।”
সবাই হেসে উঠল,হ্যারি কেয়ার দিকে এগিয়ে এলো।
“উপ্স কেয়া বেইবি হাউ আর ইউ?”
কেয়া আলতো হাসলো,মেকি রাগ দেখিয়ে বলে।
“ডোন্ট কল মি বেইবি!”
হ্যারি হাত তুলে সমর্পণ করে বলে।
“ওকে ওকে।”

হ্যারি আরো একজন কে দেখতে পেলো,উৎসা! হ্যা উৎসা কে হ্যারি চিনে না। ঐশ্বর্য কে ইশারায় দূরে নিয়ে গিয়ে শুধোয়।
“ব্রো,হো ইজ সি?”
ঐশ্বর্য আড় চোখে একবার উৎসা কে দেখে বলে।
“মাই ওয়াইফ।”
“হোয়াট?”
“ইয়া!”
“বাট হাউ?আই মিন ওয়েন ডিড ইউ গেট ম্যারেড?”
“উফ্ হ্যারি,আই উইল টেল ইউ লেটার।”
“ওকে।লেটস হেভ অ্যা ফান।”

পার্টি শুরু হয়েছে, সবাই মে তে আছে। আনন্দে উ’ল্লাসে, এদিকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে উৎসা।কী করবে সে? কেয়া কে তো আর আটকে রাখা যায় না? মেয়েটা এ’নজ’য় করতে এসেছে, এখন কতক্ষন তার পাশে বসে থাকবে? কেয়া বলেছিল যাবে না,উৎসা বলেছে সমস্যা নেই তুমি আনন্দ করো।
একটা চেয়ারে বসে আছে উৎসা,হাতে তার সফট ড্রিংকস।
“সুইটহার্ট!”
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসা। ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে, মুখে তার দুষ্টু হাসি।
“কী?”
ঐশ্বর্য ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বলে।
“ক্যান ইউ ড্যান্স উইথ মি?”
উৎসা কপাল কুঁচকে নিল।

“না।”
ঐশ্বর্য ভ্রু নাচিয়ে বলে।
“আচ্ছা?”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো,ঠিক সেই সময় ঐশ্বর্য ওর কোমড় টেনে কাছাকাছি নিয়ে এলো।
“নাচতে তো হবেই!”
উৎসা কিঞ্চিৎ অস্বস্তি নিয়ে আওড়াল।
“দেখুন আপনাদের এসব অদ্ভুত নাচানাচি আমি পারি না,তাই প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।”
“আই অ্যাম হেয়ার,আই উইল বি টিচ।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে গেল, নিজের পা অনুযায়ী টেনে ধীর গতিতে প্রতিটি স্টেপ দিচ্ছে। উৎসার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
“দদেখুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী আমি পরে যাবো প্লিজ ধরে রাখুন।”

ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“ধরে রাখতে বলছো বেইবি!ধরলে কিন্তু…
“উফ্ চুপ করুন, সবসময় বাজে কথা!”
ঐশ্বর্য ছেড়ে দিল উৎসা কে,ভীত নয়নে তাকালো উৎসা।রাত যেমন গভীর হচ্ছে ঠিক তেমনি সবাই মে তে উঠছে। মিনিট দশেক পর দুটো ছেলে এগিয়ে এলো উৎসার কাছে,মেয়ে গুলো অদ্ভুত ভাবে দেখছে উৎসা কে।
“হাই।”
উৎসা স্বভাব সুলভ হাসলো।
“হ্যালো।”
“ইউ আর লুকিং সো হট।”
উৎসা কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে নেয়। ছেলে গুলো কেমন বাজে ইশারা করছে! উৎসা বুঝতে পেরে সরে গেল, জিসানের কাছে গিয়ে বলল।
“ভাইয়া শুনুন।”
“হ্যা মিস বাংলাদেশী বলো।”
উৎসা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললো।
“ভাইয়া আমরা কখন যাবো? আমার ভালো লাগছে না!”
“কী হয়েছে তোমার? আমরা তো আর কিছুক্ষণ পরেই চলে যাব। কিন্তু তোমার কি হয়েছে ?”
“আসলে কেমন অস্বস্তি লাগছে খুব।”
জিসান চিন্তিত হলো।
“ওয়েট আমি এখুনি রিক কে বলছি, তুমি দাঁড়াও।”
জিসান এগিয়ে গেল, ঐশ্বর্য পাশেই ছিল। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে। জিসান এগিয়ে গিয়ে বলে।

“রিক শুন।”
“হুঁ বল।”
“ব্রো মিস বাংলাদেশী কেমন করছে?ওর হয়তো অস্বস্তি হচ্ছে?”
“বাট….
ঐশ্বর্য কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই উৎসার চিৎকার শুনতে পেলো। সুইমিং পুলের পানি পড়ে গেছে উৎসা,সে সাঁতার জানে না। নিজের প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করছে সে।
“হেল্প!ঐ,,, ঐশ্বর্য বাঁচান আমাকে?”
পানিতে রিতিমত নাকানিচোবানি খাচ্ছে উৎসা!
“ও শিট!”
ঐশ্বর্য দ্রুত এগিয়ে গেল,এর মধ্যে পুলের‌ আশেপাশে সবাই এসে জড় হয়েছে। ঐশ্বর্য ভিড় ঠেলে ভেতরে গেল উৎসা চেষ্টা করছে বাঁচার করছে! ঐশ্বর্য দ্রুত ঝাঁপ দিল পুলে, ঝাপটে গিয়ে ধরে উৎসা কে।

“রোজ ডোন্ট ওয়ারি আমি এসে গেছি তো!”
উৎসা গলা জড়িয়ে ধরে ঐশ্বর্যের, কান্না পাচ্ছে তার।এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল সে ম’রে যাবে।
“প্লিজ আমাকে তুলুন আমার ভয় লাগছে!”
ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে উৎসা ভয় পেয়ে গেছে। ঐশ্বর্য উঠতে নিলে উৎসা নাহুচ করে। ইশারা করে নিজের দিকে! ঐশ্বর্য বেশ বুঝতে পারছে তার গায়ের জামা কেমন লেপ্টে আছে। ঐশ্বর্যের রাগ লাগল,কেয়া কে ইশারা করে একটা টাওয়েল আনতে।কেয়া দৌড়ে গিয়ে টাওয়েল নিয়ে এলো ,উৎসা কে নিয়ে উপরে উঠে এলো ঐশ্বর্য। হ্যারি এগিয়ে এসে বলে।
“আর ইউ ওকে গাইজ?”
ঐশ্বর্য মাথা দোলায়,উৎসা কে শুধোয়?
“কী করে?”
উৎসা হাত উঁচিয়ে সামনের দিকে দেখালো,সেই দুটো ছেলেই তাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছে। কারণ উৎসা ওদের ইগনোর করেছিল, ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে কেয়া কে ইশারা করে উৎসা কে নিয়ে যেতে!
উৎসা ঘাবড়ে গেল, ঐশ্বর্য এখন কী করবে?”
কেয়া উৎসা কে নিয়ে বেরিয়ে গেল, এদিকে ঐশ্বর্য বেজায় ক্ষে’পেছে। ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে ওদিকে এগিয়ে গিয়ে ছেলে গুলো কে ইচ্ছে মতো মে’রেছে।
“ব্লা’ডি রাসক্যাল,হাউ ডেয়ার ইউ? আমার ওয়াইফের সঙ্গে এসব করার সাহস হলো কী করে?”
ঐশ্বর্য আজ হয়ত ওদের মে রেই দম নেবে।হ্যারি বুঝতে পারে ঐশ্বর্য কন্ট্রোল হারিয়েছে, জিসান কে ইশারা করে যেতে।

“রিক স্টপ প্লিজ।”
ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে উঠলো।
“হাউ ডেয়ার হি?”ওদের সাহস হলো কী করে উৎসা কে টাচ করার? আমি ওদের….
ঐশ্বর্য কথা বলার মাঝখানে দুটো ঘু ষি বসিয়ে দিল ছেলে গুলোর বুকে!
জিসান কোনো রকমে থামায় ওদের!
“ব্রো ছাড় তুই,এদের দেখে নিচ্ছি।তুই মিস বাংলাদেশীর কাছে যা।”
বাইরে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা আর কেয়া।
“কিউট গার্ল তুমি ঠিক আছো তো?”
উৎসা উপর নিচে মাথা দোলায়। অর্থাৎ সে ঠিক আছে,সেই মূহূর্তে ঐশ্বর্য আর জিসান এলো।
“ব্রো তুই কেয়া আর মিস বাংলাদেশী কে নিয়ে যা। আমি এদিকটা দেখে ফিরব।”
কেয়া তৎক্ষণাৎ না করে।
“না জিসান আমিও থাকব তোর সাথে।”
“ওকে, তাহলে ব্রো তুই প্লিজ যা।আর হ্যাঁ টেক কেয়ার।”
ঐশ্বর্য লম্বা শ্বাস নিলো।

নিস্তব্ধ রাতে তুষারপাত এক অনন্য অনুভূতি নিয়ে আসে। চারপাশ নিস্তব্ধ, যেন প্রকৃতি তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করছে। আকাশ থেকে নেমে আসা সাদা তুষার কণা ধীরে ধীরে মাটিতে জমছে, গাছপালার ডালে, ঘরের ছাদে। প্রতিটি তুষার কণা মনে হয় যেন এক একটি ছোট্ট স্বপ্ন, যা আকাশ থেকে নেমে এসে পৃথিবীকে আবৃত করছে।গাড়ি চলেছে আপন গতিতে,শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম উৎসার। এমনিতেই ড্রেস পুরো ভিজে গেছে তার, ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে ব্যাপার টা তাই তো গাড়ি থামিয়ে ব্যাক সিট থেকে জ্যাকেট জড়িয়ে দিল।
হিস্কি টুনে বলে উঠে।
“আর ইউ কমফরটেবল?”
উৎসা মৃদু স্বরে বলে।
“হুঁ।”
আবারো গাড়ি ড্রাইভ করছে ঐশ্বর্য।

তুষারের সাদা আচ্ছাদন চারপাশকে এক পরাবাস্তব সৌন্দর্যে ভরিয়ে তোলেছে। রাতের অন্ধকারে, চাঁদের আলোয় প্রতিফলিত তুষার যেন মুক্তোর মতো ঝলমল করে। নিস্তব্ধতার মাঝে কখনো দূরে হিমেল বাতাসের হালকা শিস, কখনো তুষার গলে পড়ার ক্ষীণ শব্দ – এ যেন প্রকৃতির এক সুরেলা গান।
আবারও গাড়ি থেমে গেল,এবারে থামার কারণ বোধগম্য হলো না উৎসার।চোখ তুলে ডান দিকে তাকালো, ঐশ্বর্য তার দিকেই তাকিয়ে আছে, অকস্মাৎ বলে উঠে।
“রোজ!”
ঐশ্বর্যের কন্ঠস্বর কেমন নে’শা ভরা, উৎসা ভয় পেলো। ঐশ্বর্য সিট বেল্ট খুলে উৎসার দিকে এগিয়ে এসে টান দিয়ে ওর সিট বেল্ট খুলে ওকে নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো।
“আপনি….
“জাস্ট ওয়ানস মোর।”

ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে, কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে। ঠোঁটের ভাঁজে ভাঁজে প্রশান্তি খুঁজে নিচ্ছে! উৎসা মোটেও এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। উৎসা গলা জড়িয়ে ধরে ঐশ্বর্যের,হাত পা কাঁপছে তার।একে তো ঠান্ডা তার উপর ঐশ্বর্যের মাঝরাস্তায় পাগলামি। মিনিট দুয়েক পর ছেড়ে সিটে হেলান দিল,মাথা ঝিমঝিম করছে তার। উৎসা হতভম্ব হয়ে বসে আছে, ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখলো।
“অ্যাম স্যরি বাট নট স্যরি।ইউ নো না আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুইটহার্ট!”

রেড রোজ ২ পর্ব ২৮

উৎসা নিশ্চুপ,রাগের মাথায় ঐশ্বর্যের হাত টেনে কা’ম’ড় বসিয়ে দিল। ঐশ্বর্য কিছুই বললো না, স’হ্য করে নিলো। উৎসা সর্ব শক্তি দিয়েই কা মড় দিয়েছে, ছেড়ে দিতেই ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে।
“উফ্ বেইবি সামথিং সামথিং!”
উৎসা মুখ কুঁচকে নেয়, ঐশ্বর্য আবারও ড্রাইভ করছে। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩০