রেড রোজ ২ পর্ব ৪৩

রেড রোজ ২ পর্ব ৪৩
ফারহানা নিঝুম

সকাল টা বিরক্তিকর ভাবেই শুরু হয়েছে নিকির।
সকাল সকাল আফসানা এসে বলেছে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে আর সেই ছেলেটা হলো তার বান্ধবীর ছেলে। সেদিন যে দেখতে এসেছিল তারাই।কি আশ্চর্য নিকি কে এক বারের জন্য জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি!
মনে ক্ষোভ নিয়ে বাগানে বসে আছে নিকি, দৃষ্টি তার সামনের গাছের পানে। গুটি কয়েক পাখি বসে আছে, কিছুক্ষণ উড়েও চলে গেল,চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিকি।তার জীবন টা পাখিদের মতো হলেও তো হতে পারতো! যখন যেখানে ইচ্ছে উড়ে চলে যেতে পারতো!
নিজে পাশে আরও একজনের অস্তিত্ব অনুভব করলো নিকি। রুদ্র এসে পাশে বসলো ,নিকি ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।

“তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?”
রুদ্রর প্রশ্নে আকাশ পানে তাকায় নিকি। হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে।
“হ্যা পছন্দ করি।”
“জিসান কে?”
“হুঁ।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল রুদ্র।
“কিন্তু মা তো মানবে না!”
“ওনার মানাতে আর না মানাতে আমার কিছু যায় আসে না। জীবন টা আমার, আমি কিসে সুখী থাকব তা সবার আগে।”
রুদ্র আলতো হাসলো।
“তবে তাই হোক।”
নিকি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রুদ্র তাকে আশ্বস্ত করে এ বিষয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঘুম ভে’ঙ্গে যেতেই উৎসা দেখলো ঐশ্বর্য পাশে নেই,উঠে বসলো তৎক্ষণাৎ। আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নেয়, না সত্যি ঐশ্বর্য নেই।কর্ণ স্পর্শ করে বাথরুম থেকে আসা পানির শব্দে। অতঃপর বুঝতে পারলো ঐশ্বর্য বাথরুমে আছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে উৎসার,মাথা চেপে ধরে উৎসা।খক শব্দ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য, গায়ে জড়ানো আছে বাথরোব। উৎসা মুখ তুলে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে, ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।এই লোকটা অসুস্থ শরীর নিয়ে গোসল করে একদম ফিটফাট হয়ে বেরিয়ে এসেছে! ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের দিকে,চুল গুলো ঝেড়ে ফেলে হাতের সাহায্যে।পাশ থেকে শার্ট নিয়ে গায়ে জড়ায়।সাথে বসে প্যান্টও পড়ে নিল, বাথরোব রেখে দিল সাইডে।বডি স্প্রে করলো, হেয়ার ব্রাশ দিয়ে চুল গুলো সেট করে নিল। পায়ে ব্র্যান্ডের লুফার পড়ে নিল, নিজেকে তৈরি করতেই ব্যস্ত সে।অথচ একজন যে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তা লক্ষ্যই করেনি ঐশ্বর্য।

একজন ছেলের এত কিছু লাগে?আজ উৎসা জানলো,এত দিন তার মনে হতো ছেলে মানুষের তেমন একটা কিছু লাগে না। কিন্তু আজকের পর সব বুঝতে পারছে ছেলে মানুষ মেয়েদের থেকে কম নয়!
“হোয়াট?”
“না আমি!”
উৎসা চুপ করে গেল, কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে! ইস্ ঐশ্বর্য এত সুন্দর এটা আগে জানতো না।কী আশ্চর্য এই লোকটা নাকি তার হাসব্যান্ড!
“বেইবি সামথিং সামথিং!”
ঐশ্বর্যের সামথিং সামথিং গুলো একটু বেশি এলোমেলো করে দেয় উৎসা কে।সে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
“আপনি না অসুস্থ ছিলেন! তাহলে সকাল সকাল শাওয়ার নিয়েছেন কেন?”
উৎসা থামলো তবে পরক্ষণেই কী ভেবে চিৎকার করে উঠলো।
“ও মা আপনার ব্যান্ডেজ তো ভিজে গিয়েছে তাই না!দেখি দেখি।”
উৎসা ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ঐশ্বর্যের বুকে হাত রাখলো। ঐশ্বর্য হাত ধরে ফেলল উৎসার,চোখ তুলে তাকায় উৎসা।

“কী হলো দেখতে দিন?”
ঐশ্বর্য দেখতে তো দিলই না উল্টো উৎসার দিকে ঝু কে তার বুকের মাঝখানে ওষ্ঠা ছুঁয়ে দিল। কিঞ্চিৎ চমকায় উৎসা
“গেট রেডি কুইকলি, উই হ্যাভ টু গো।”
“কোথায় যাবো?”
“গেলেই দেখতে পাবে।নাউ গো গো, হ্যারি আপ।”
উৎসা গিয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলো, ঐশ্বর্য উৎসা কে নিয়ে বের হয়। গাড়িতে বসে আছে উৎসা, ঐশ্বর্য ড্রাইভিং করছে। উৎসা কাঁপা স্বরে শুধোয়।
“আপনি কি পারবেন?”
“হোয়াট?”
“ড্রাইভিং যে করছেন?হাতে ব্যথা করছে না?”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে ফেলল।
“এত চিন্তা? ইটস্ হার্ট সুইটহার্ট।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে দৃষ্টি ফেলল বাইরের দিকে,গাছ পালা পিছনে ফেলে ছুটে চলেছে তারা। ঐশ্বর্য এক পলক দেখে নিল উৎসার মুখশ্রী, তৎক্ষণাৎ ঘ’টে গেল অ’ঘ’টন ঘটে যায়। হঠাৎ করেই একটা গাড়ি সামনে চলে আসাতে দুজনের গাড়ি ধা’ক্কা খেলো।
“শিট!”
ঐশ্বর্য দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এলো,উৎসাও তার পিছু পিছু নেমে আসে। ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় তার গাড়ির দিকে, অনেকটাই স্ক্যাজ পড়েছে গাড়িতে। কপালে ভাঁজ পড়ল ঐশ্বর্যের, লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই একজন বেরিয়ে এলো।
ঐশ্বর্য এগিয়ে যাবে তার পূর্বেই পিছন থেকে উৎসা বলে উঠে।
“রিফাত!”
ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে গেল, ঘাড় ফিরিয়ে দেখে উৎসা তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে ফিরে তাকালো ঐশ্বর্য, একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে।
“উৎসা তুমি এখানে?”

উৎসা আলতো হাসলো, রিফাত আর উৎসা একই স্কুলে পড়াশোনা করেছে এবং কী একই কোচিংয়ে ছিল।
“হ্যা আমি তো এখানেই!”
রিফাত এগিয়ে গিয়ে উৎসার হাত টেনে ধরে।
“ইয়ার তুমি না জার্মানি চলে গেলে?”
উৎসা কিঞ্চিৎ হেসে বলে উঠে।
“না ফিরে এসেছি,ছুটি চলছে। কিন্তু তুমি?”
“আমি তো এখন বাবার বিজনেস দেখাশোনা করছি।”
“পড়াশোনা?”
“ওগুলো আমার দ্বারা হবে না!”
শব্দ করে হেসে উঠলো উৎসা ‌। এদিকে গুরুগম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য,এমন মনে হচ্ছে দুজনে প্রেমিক প্রেমিকা কে লুকিয়ে দেখা প্রতিবেশী সে!
ঐশ্বর্য কে এতক্ষণে দেখলো রিফাত।

“উনি কে? নিশ্চয়ই তোমার ভাই?”
উৎসা কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই ঐশ্বর্য বলে উঠে।
“আপনি গাড়িটা দেখে চালাতে ভালো হতো না?সি আমার গাড়ির কী হাল করেছেন?”
রিফাত গাড়ির দিকে দৃষ্টি ফেলল, সত্যি খুব বাজে স্ক্যাজ পড়ে গেছে।
“অ্যাম রিয়েলি স্যরি মিস্টার…
“ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।”
“ওহ্ হ্যালো মিস্টার রিক, আমি রিফাত।”
“ইয়া আই নো এখুনি বললেন।”
রিফাত মৃদু হাসলো, ঐশ্বর্য হ্যান্ড ওয়াচ দেখে ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে।
“রোজ উই আর গ্রেডিং লেইট,কাম ফাস্ট।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো,উৎসা ভালো ভাবে কথা বলতে পারলো না পর্যন্ত রিফাতের সঙ্গে। ওকে তো বলাই হয়নি ঐশ্বর্য ওর ভাই না ওর স্বামী। দুষ্টু স্বামী একটা, সবসময় ত্যা’ড়ামো করে।

আকাশের বুকে কালো মেঘের আনাগোনা চলছে।এই ভালো তো এই ঘন কালো মেঘে ঢাকা পড়ছে আকাশ। চোখের বাধ মানছে নিকির, ঐশ্বর্যের হাত দু’টো চেপে ধরে অসহায় চোখে তাকায়।
“ভাইয়া আমি বিয়ে করতে চাই না তো!”
ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে শুধোয়।
“সত্যি? কখনো বিয়ে করবি না?”
নিকি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,এই সিরিয়াস মুডে রসিকতা করছে?
“টেল মি কখনো কী বিয়ে করবি না?নাকি জিসান ছাড়া কাউকে বিয়ে করবি না?”
উৎসা এই বারে বুঝতে পারলো দুই ভাই বোনের কথা।এতক্ষণ ধরে তো সবটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল!
নিকি উপর নিচে মাথা দোলায়, এখন লজ্জা পেলে সারাজীবন শেষ হয়ে যাবে।
“হ্যা আমি জিসান কে বিয়ে করতে চাই।”
ঐশ্বর্য আলতো হাসলো।
“গ্রেট রেডি মাই প্রিন্সেস বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”
নিকি জাপটে ধরে ঐশ্বর্য কে।এই মানুষ ছাড়া সে তো শূন্য হয়ে যেতো।কে বলেছে সৎ ভাই বোন কখনো আপন হয় না?এই তো ঐশ্বর্য তাকে কতটা ভালোবাসে! তাদের বড় ভাই সে।

সকাল সকাল পুরো বাড়ি ডেকোরেশন করা হচ্ছে। হয়তো কারো বিয়ে। গায়ে হলুদের স্টেজ থেকে শুরু করে বিয়ের স্টেজ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে সাজানো হয়েছে।
লাল গোলাপ এবং আরো কিছু ইউনিক ফুলের ডেকোরেশন করা হয়েছে।
আফসানা রিতিমত তম্বা খেয়ে গিয়েছেন।তার অনুপস্থিতিতে বিয়ে বাড়ি সাজানো হচ্ছে, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার বিয়েটা কার?
“ঐশ্বর্য কী হচ্ছে এসব?”
কিঞ্চিৎ বিরক্ত নিয়ে শুধোয় আফসানা। ঐশ্বর্য হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে উঠে।
“বিয়ের ডেকোরেশন হচ্ছে কেন দেখতে পাচ্ছেন না?”
আফসানা রাগে রি রি করে উঠলো।
“সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে বিয়েটা কার?”
ঐশ্বর্য আলতো হাসলো।
“আমার আর আমার সুইটহার্ট এর!”
আফসানা বুঝে গেল ঐশ্বর্য আর উৎসার বিয়ে!তার মেজাজ টা পুরো বিগ’ড়ে গেলো।এরা আসার পর থেকেই কিছুই ভালো হচ্ছে না তার জীবনে!
“আপনি মিথ্যে কেন বললেন?
আকস্মিক পিছন থেকে বলে উঠে উৎসা। উৎসা কে দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো ঐশ্বর্য।

“মিথ্যে হবে কেন?”
উৎসা দু’হাত বুকে গুঁজে শুধোয়।
“আচ্ছা! আমাদের বিয়ে এটা ডাহা মিথ্যে কথা না?”
“নো।”
“মানে?”
“সুইটহার্ট আবার বিয়ে করতে মন চাচ্ছে।বি রেডি।”
ঐশ্বর্য সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল, উৎসা আ’হা’ম্মক বনে গেল। ওদের বিয়ে অথচ সে-ই জানে না?
উৎসা তড়িঘড়ি করে উপরের দিকে ছুটে গেল।
“নিকি আপু?”
নিটি ড্রেস দেখছিল, উৎসা কে এত অস্থির দেখে বলে উঠে।
“কী হয়েছে তোর?”
“আপু তোমার ভাইয়ের মাথা গেছে।”

“কেন?”
“আমাদের নাকি বিয়ে!”
নিকি পেট চেপে হেসে উঠলো।
“এটাতে মাথা খারাপের কী হলো?”
উৎসা হতাশ হওয়ার ন্যায় বলে।
“উফ্ বুঝতে পারছো না একবার তো হয়েছে বিয়ে তাহলে আবার কেন?”
নিকি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

রেড রোজ ২ পর্ব ৪২

“শুন বিয়ে জীবনে একবারই হয়,সেই মোমেন্ট ধরে রাখা উচিত। ভাইয়া হয়তোবা চাইছে তোকে নতুন করে আবার আপন করে নিতে!”
উৎসা থমকালো, সত্যি কী তাই? ঐশ্বর্য কী তাকে আপন করতে চাইছে?নাকের উপরিভাগ শিরশির করে উঠলো উৎসার। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার সর্বাঙ্গ!

রেড রোজ ২ পর্ব ৪৪