রেড রোজ ২ পর্ব ৪৫
ফারহানা নিঝুম
জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে আছে উৎসা,মুখে এখনো রুমাল বাঁধা। ঐশ্বর্য এমনতর অবস্থা দেখে চমকে যায়, দাঁড়িয়ে পড়ল সেই মূহূর্তে। চেয়ে রইল ক্ষণকাল! আকস্মিক দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরে উৎসা কে,তবে তার মুখে একটাও কথা নেই।বিয়ে বাড়ি কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে!
রুদ্র ডক্টর কে খবর দিয়েছে,নিকি যেমন ছিল তেমনি উৎসার পাশে বসে আছে।মিহি যতটা সুস্থ হয়েছিল এখন উৎসার অবস্থা দেখে যেনো অসুস্থ হয়ে পড়লো।
টিমটিম লাইট জ্ব’লছে, বিছানায় শুয়ে আছে উৎসা। উৎসার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য, মেয়েটি ঘুমাচ্ছে! ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল বেলকনিতে, অন্ধকার রাত্রিতে তার চোখ দুটো যেনো জ্ব’লে উঠছে। চোখের কার্নিশ কেমন লালচে হয়ে আছে, পকেট থেকে সি’গারেট বের করে টান দিলো। দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে পুরোটা শেষ করলো সে! অবশেষে বেলকনি থেকে চলে এলো রুমের ভেতরে,লাইট অফ করে উৎসার পাশে গিয়ে শোয়।
আলগোছে উৎসার মুখশ্রী স্পর্শ করে, এখনো গালের কিছু ভাগ লাল হয়ে আছে। ঐশ্বর্য রাগছে কি না তা বোঝা দায়!সে যে রিক চৌধুরী, কখন কী মুডে থাকে সহজে ধরাটা বোধহয় কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
চাদরের ভেতর ঢুকে গেল, উৎসার হাত টেনে বুকে এনে ফেলল উৎসা কে।দু হাতে জড়িয়ে ধরে তাকে, উৎসা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।চোখ দু’টো খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। ঐশ্বর্য বাঁধা প্রদান করে, আলগোছে হাত দিয়ে চোখ দুটো বুজতে দিল। উৎসা দূর্বল হাতে ঐশ্বর্য কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ব্যর্থ হলো। ঐশ্বর্য উল্টো তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, উৎসা ফের ঘুমে তলিয়ে যায়। কিন্তু একজন পুরুষ যে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করেছে তা ঘুনাক্ষরেও টের পেলো না সে!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ভোরের আলো ফুটে উঠেছে,ধীরে ধীরে সূর্যের রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সময়টা বোধহয় সাড়ে পাঁচটা ছুঁই ছুঁই হবে! হিমশীতল আবহাওয়া, অল্প বিস্তর বাতাস বইছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে চারি দিকে।দূরে কোথাও পানির কলহের শব্দ আসছে।
বাগানের মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ পুরো বাড়ি মাতিয়ে তুলতে সক্ষম।মালিরা এসেছে সেই কখন! বাগানের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে। কাজের বুয়া স্বভাব সুলভ নিজের কাজ গুলো করে রাখছেন।
বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই নিকি নিজ দায়িত্বে সবার জন্য খাবার তৈরি করছে। বিয়ে নিয়ে পড়ে থাকলে কারো খাওয়া হবে না!কে ভেবেছিল মধ্য রাতে ওরকম একটা ঘট’না ঘটবে?কারো আন্দাজেই ছিল না তা!পুরো বাড়ি যেনো বিষন্নতায় ডুবে আছে,তার পরেও মনের এক কোণে কোথাও একটা শান্তি পাচ্ছে নিকি। জিসান কী সুন্দর তাকে আগলে নিয়েছিল কাল রাতে।তার পাশে ছিল শক্ত হাতে,শেষ রাতে একটুখানি ঘুমোতে পেরেছিল নিকি। না হলে কাল এসবের কারণে ঘুম উবে গিয়েছিল তার। জিসান খুব যত্ন নিয়ে তার চুলে হাত বুলিয়ে ঘুমোতে সাহায্য করেছে।
কষ্টে একটুখানি বুকটা ভারী হয়ে এলো নিকির ,এই মানুষটা নাকি তার জন্য পারফেক্ট নয়!এই মানুষটা কে নাকি তার মা পছন্দ করে না!অথচ নিকি দেখেছে এই মানুষটা তার ভালো থাকার কারণ।
“নিকি?”
জিসানের কন্ঠস্বর শুনে ভাবনার থেকে বেরিয়ে এলো নিকি।
“হ্যা বলুন।”
জিসান এগিয়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিকি কে।
“মিস ইউ।”
নিকি একপেশে হাসলো, জিসান তার চুলের ভাঁজে চুম্বন এঁকে দেয়।
“এক কাপ কফি হবে?”
“এখুনি দিচ্ছি, আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।”
জিসান আবার উপরের রুমে চলে গেল।
ডান হাতের বাহুতে ক্ষীণ ব্যথা অনুভব করতেই বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন আফসানা।
“গুড মর্নিং মিসেস মহিলা।”
সকাল সকাল নিজের ঘরে ঐশ্বর্য কে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন তিনি।
“তুমি এখানে কী করছো?কী চাই?”
ঐশ্বর্য এখনো তাকিয়ে আছে তার হাতে থাকা সিরিঞ্জের দিকে। অতঃপর টুক করে সেটা জানালার দিকে ছু ড়ে ফেলল।
“তো মিসেস মহিলা হাউ আর ইউ?”
“চুপ করো,বাজে কথা রেখে সোজাসুজি বলো এখানে কেন তুমি?”
ঐশ্বর্য একপেশে হেসে বলল।
“আপনাকে প্যানিশ করতে এসেছি মাই ডিয়ার সুইট মম!”
আফসানা ভ্রু যোগল কুঁচকে নিলেন।
“মানে টা কী?কী বলতে চাইছো?”
“লুক অ্যাট ইওর হ্যান্ড মিসেস মহিলা। আপনার হাতে কী এটা?”
আফসানা দৃষ্টি ফেলল নিজের হাতে,লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছু দেওয়া হয়েছে, তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো ঐশ্বর্যের হাতে সিরিঞ্জ ছিল!
“এটা কি? তুমি কী দিয়েছো আমাকে ঐশ্বর্য?”
“জাস্ট ছোট্ট একটা ই’নজেকশন নাথিং এলস।”
আফসানা আঁতকে উঠে।
“মানে কিসের ইন’জেকশন।”
ঐশ্বর্য ভ’য়ংকর হাসলো।
“আপনাকে একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ দিলাম।এই যে ইন’জেকশন টা দিয়েছি এটা দেওয়ার ফলে আপনার মস্তিষ্ক উল্টোপাল্টা হয়ে যাবে। আপনি কাঁদবেন, আবার হাসছেন।দেখা গেল নিজের মাথার চুল ছিঁ’ড়তে চাইছেন, আমার রোজ কে কষ্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে ছোট্ট প্যানিশমেন্ট দেওয়া হলো!”
আফসানা আঁতকে উঠে।
“এই কী বলছো তুমি?কী এসব!”
আকস্মিক আফসানা হাত পা চুলকাতে শুরু করেছেন । ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো, বুকে হাত গুজে বলে।
“রিয়েকশন শুরু হয়েছে মাই ডিয়ার মম। এরপর আপনি সববব ভুলে বসবেন!”
আফসানা রিতিমত পাগলামি শুরু করেছে, ঐশ্বর্য বিন্দাস বেরিয়ে গেল।
ঠিক এক সপ্তাহ পর আফসানা কে ঘর বন্দি করে রাখতে হচ্ছে তাঁদের।এই সব মনে পড়ছে চুপচাপ বসছেন কিন্তু পরক্ষণেই আবার পাগলামি শুরু করেছে! দিকবিদিক সব কিছু ভেবে ওনাকে রুম বন্দি করে রাখতে হচ্ছে ইদানিং।
অনেক দিন হলো বাংলাদেশে ছিল সবাই।আজ অনেক দিন পর জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বাড়িতে আপাতত আফসানা,মিহি , রুদ্র এবং শহীদ।
কেয়ার মনটা খারাপ করছে রুদ্র কে ছেড়ে যেতে। কিন্তু এখন তো সে এখানে থাকতে পারবেনা!
দীর্ঘ দিন পর বাড়িতে এসেছে ঐশ্বর্য আর উৎসা। উৎসার মনটা খারাপ, সবাই কে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে তাদের।
রাতটা কে টে ঘুমিয়ে দুজনের! উৎসা উঠেছে ভোরের দিকে, কমফোর্ট জোনে এগিয়ে গেল।থাই গ্লাসের উপর ঝাপসা হয়ে আছে। উৎসা হাত বাড়িয়ে একটুখানি মুছে দৃষ্টি ফেলল বাইরের দিকে,ওই তো তুষারপাত হচ্ছে। উৎসা মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো, কিচেনে গিয়ে ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেলে।
ঐশ্বর্য ঘুম ঘুম চোখে উঠে এলো,কিচেনের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে কর্ণ স্পর্শ করলো কলিং বেল। ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে মেইন ডোর খুলতেই।দেখলো মিস মুনা কে, ঐশ্বর্য অল্প হেসে বলল।
“মিস মুনা অ্যাম রিয়েলি ভেরী স্যরি। আজকের জন্য আপনার ছুটি,কাল থেকে আপনি আসবেন কেমন?”
মিস মুনা মুচকি হাসলো।
“নো প্রবলেম স্যার। ম্যাম এসেছেন?”
“ইয়া।”
“ওকে স্যার।”
মিস মুনা বের হতেই ঐশ্বর্য ডোর লক করে ভেতরে এলো। কর্ণ স্পর্শ করলো কিচেন থেকে ভেসে আসা শব্দে, ঐশ্বর্য পা বাড়ায়। কালো রঙের ফ্রক আর লেংগিস পড়েছে,এগ রোল বানাচ্ছে। ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরে তাকে,নাক ঘষে তার ঘাড়ে। আকস্মিক এমনতর স্পর্শে ভড়কে গেল উৎসা,হাত দুটো মূহুর্তের মধ্যে থমকে যায়।
“ক,,, কী করছেন?”
ঐশ্বর্য কোমড়ে চাপ দিল, উৎসা যেনো কারে’ন্টের শখ খেয়েছে!
“আরে আপনি….
“হুস কিপ ইউর মাউথ শাট বেইবি।”
উৎসা চুপ করে গেল, ঐশ্বর্য আবারও নাক ঘষে উৎসার ঘাড়ে।
“কাল আমার ফার্স্ট নাইট ছিল ওটাও হলো না দিস ইজ নট ডান রেড রোজ।”
উৎসা মুচড়ে উঠলো, মিনমিনে বললো।
“আপনি সবসময় এমন করেন কেন?”
“তুমি কিছু করো না তাই।”
“কী?”
“উপ্স স্যরি আমি ভুল বললাম। সেদিন তো হোটেলে সবই করেছিলে। উফ্ বেইবি জাস্ট হেল্থ কন্ডিশন ভালো থাকতো তাহলে ওই দিনই আমি তোম….
উৎসা ঐশ্বর্যের মুখ চেপে ধরে, লোকটার লজ্জা নেই ঠিক আছে। কিন্তু উৎসা তো মেয়ে অবশ্যই তার লজ্জা আছে!
“চুপ করুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী, আপনার ক্যারেক্টার কখনও কী ভালো হবে না?”
“মেইন পয়েন্ট টা মিস করে গেলে!”
ঐশ্বর্য ছেড়ে দাঁড়ালো উৎসা কে।হাত বাড়িয়ে উৎসার কফি কাপ তুলে নিল, চুমুক বসিয়ে আবার নাক মুখ কুঁচকে নিল।
“উফ্ রোজ তুমি জানো না আমি সুগার ফ্রি কফি খাই?”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বলল।
“এটা আমার জন্য ছিল।”
“সো হোয়াট?”
“আপনার জন্য কি এখন আমি আপনার মতো সব করব?”
“অভ্যিয়েসলি!বিকজ ইউ আর মাই ওয়াইফ।”
“যান তো আমাকে কলেজে যেতে হবে।”
“হেই বেইবি।”
ঐশ্বর্যের হাত টেনে ধরে ঐশ্বর্য।
“যেতে হবে না কলেজে,এত পড়ে কী হবে?”
“মানে পড়ব না? এটা কেমন কথা?”
“পড়ে কী করবে?”
“চাকরি করব।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“তুমি পড়াশোনা করলেও চাকরি করবে না আর না করলেও চাকরি করবে না!”
উৎসা কপাল কুঁচকে নিল।
“মানে কী? আপনি বলতে কী চাইছেন?”
ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে উৎসা রেগে যাচ্ছে। ঐশ্বর্য উৎসার হাতের ভাঁজে হাত গুঁজে বলে।
“হেই বিউটিফুল লেডি তুমি এমনিতেই আমার বস। আমার বিজনেস আছে না! ওইটাই তুমি সামলাবে, তাই বললাম চাকরি করতে হবে না। বরং আমিই আপনার আন্ডারে কাজ করব!”
ঐশ্বর্য চোখ টিপে।
উৎসা এবারে লজ্জা পেলো।
“আপনি সরুন প্লিজ কলেজে যাই।”
“উঁহু আজকে না।”
“প্লিজ প্লিজ থেকে যাও রোজ।”
উৎসার ভীষণ মায়া হলো ঐশ্বর্যের উপর।
“আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি না। এখন ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবার টা বানাই?”
“ওকে সুইটহার্ট।”
রেড রোজ ২ পর্ব ৪৪
ঐশ্বর্য উঠে উৎসার কপালে চুমু খেয়ে ভেতরে গেল।
উৎসা হেসে ফেলল, ইস্ ঐশ্বর্য কেমন করে! উৎসাও না মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় এই পুরুষের জন্য! উৎসা দ্রুত হাত চালায়, খাবার তৈরি করতে হবে। এদিকে ঐশ্বর্য আবারো উঁকি দিয়ে গেল,আজ তো তার রেড রোজ শেষ। উফ্ থেকে কী না ভুল করলো!
ঐশ্বর্য সিল্কি চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিল।