রেড রোজ ২ পর্ব ৪৬
ফারহানা নিঝুম
বরফ কণা পড়ছে, যার দরুন গাছের পাতা গুলো সারা বরফে ঢেকে গিয়েছে।দূর দূরান্ত পর্যন্ত যত দূর চোখ যায় রাস্তা ঘাট সব বরফের নিচে তলিয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ কয়টা দিন যেনো তুষারপাত একটু বেশি হচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে ঠান্ডা।
বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই নিজেকে যতটা সম্ভব গরম কাপড়ে ঢেকে নিতে হবে, না হলে স্বয়ং মৃ’ত্যু কে আলিঙ্গন করবেন।
টিভির সামনে বসে আছে উৎসা,হাতে তার পপকর্ন আর পেপসি। ঐশ্বর্য এগুলো আনিয়েছে,সেও উৎসার পাশে বসে আছে। উৎসার সম্পূর্ণ দৃষ্টি টিভির দিকে, কিন্তু ঐশ্বর্যের দৃষ্টি উৎসার দিকে।সে পপকর্ন খাচ্ছে আর উৎসা কে দেখছে মেয়েটা তাকে একটুও ভালোবাসে না! আচ্ছা ভালোবাসা যদি দেখাতেই না পারে তাহলে সেটা কীসের ভালোবাসা?
ঐশ্বর্য খানিকটা চেপে গেল উৎসার দিকে,শীতল হাত জোড়া উৎসার কোমড়ে রাখতেই আঁ’তকে উঠে সে।
“এএটা কী করছেন শীত লাগছে আমার!”
ঐশ্বর্য হেসে ফেললো।
“আমার গরম লাগছে ।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল! ঐশ্বর্য আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো, আলতো ভাবে স্পর্শ করলো উৎসার উদর।এবারে উৎসা মুচড়ে গেল,পেট গুড়গুড় করছে তার।
“আমার পেট গুড়গুড় করছে!”
“সব চলে যাবে,জাস্ট ওয়ানস মোর!”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ঐশ্বর্য কিস করতে চাইছে উৎসা কে, মেয়েটা ভীত নয়নে তাকালো ঐশ্বর্যের পানে।হাত পা কাঁপছে তার,দেহের কাঁপুনি বেশ অনুভব করতে পারছে সে।শিরায় শিরায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভূতির ঝ’ড় বয়ে যাচ্ছে।
ঐশ্বর্য হাত টেনে কোলে তুলে নিল উৎসা কে, কিছুটা বেসামাল হলে ক্ষতি কী?সে তো তার ওয়াইফ!
ঐশ্বর্য উৎসা কে উ’ন্মা’দ করে তুলে, বেসামাল হাতের স্পর্শে এবং লাগামহীন কথাবার্তা সব কিছু সমস্ত কায়া নাড়িয়ে দিচ্ছে উৎসার। ঐশ্বর্যের গভীর স্পর্শে গগন কাঁপিয়ে কেঁপে উঠে উৎসা।এবারে সেও প্রতিক্রিয়া দেখালো, ঐশ্বর্যের ছাপা দাড়ি ওয়ালা গালে গাল ঘষে।নাকে ছুঁয়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, আলগোছে টেনে খুলে ঐশ্বর্যের শার্ট । তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্যের ফোন বেজে উঠে, ঐশ্বর্য চমকে উঠে।হাত বাড়িয়ে ফোন তুলে নিলো,কানে নিতেই রাজেশ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। ইমার্জেন্সি দরকার এখুনি, ঐশ্বর্য কে যেতে হবে।
“রোজ জাস্ট অ্যা মোমেন্ট বেইবি।”
ঐশ্বর্য ভেতরে চলে গেল, রাজেশের সঙ্গে আবার কথা বলে।তাকে এখন যেতে হবে, ঐশ্বর্য উঁকি দিয়ে দেখলো উৎসা সোফায় বসে আছে। ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে হোয়াইট শার্ট পড়ে ক্যাজুয়াল লুকে বেরিয়ে এলো। তৎক্ষণাৎ উৎসা তার হাত টেনে সোফায় ফেলে কোলে উঠে বসে।
“রোজ অ্যাম আ’ল বি ব্যাক। প্লিজ!”
উৎসা শুনলো না, ঐশ্বর্যের ঠোঁট ছুঁতে চাচ্ছে সে। কিন্তু ঐশ্বর্য সেই সুযোগ দিচ্ছে না,বার বার নাকে দিয়ে বাঁধা দিচ্ছে। উৎসার রাগ হচ্ছে সে কলার চেপে ধরে তার। ঐশ্বর্য উৎসার হাত ছাড়াতে ব্যর্থ হয়, উৎসা আকস্মিক ঐশ্বর্যের ঘাড়ে কা’ম’ড় বসিয়ে দিল। ঐশ্বর্যের হাত অটোমেটিক ঘাড়ে চলে যেতেই উৎসা সুযোগ বুঁজে ঐশ্বর্যের বুকের মাঝখানে ওষ্ঠা লেপ্টে দেয়।যার দরুন লিপস্টিক লেগে গেল সেখানটায়। ঐশ্বর্য উঠতে চাইলো উৎসা দিল না, ঐশ্বর্যের কানের লতিতে আদুরে চুমু খাচ্ছে।
“আই নিউ ইউ রিক চৌধুরী!”
ঐশ্বর্য উৎসার চোখে তাকিয়ে দেখে অদ্ভুত অনুভূতি, ঐশ্বর্য এটাই চেয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার তাকে যেতে হবেই, না হলে প্রবলেম হবে যে! উৎসার গালে স্লাইড করে ঐশ্বর্য।
“হেই লেডি একটুখানি অপেক্ষা করো। আমি ফিরে আসব দু ঘন্টার মধ্যে।”
উৎসা বেঁকে বসেছে,সে দেবে না যেতে। ঐশ্বর্য এবারে জোরপূর্বক উঠে দাঁড়ালো, উৎসা ধরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ঐশ্বর্য সরে গেল, উৎসা ছলছল চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য ওয়ালেট নিয়ে মেইন ডোরের দিকে এগিয়ে গেল। উৎসা এই বুঝি কেঁদে দেবে,লোকটা কতটা শ’য়তা’ন আজ বুঝলো! এমনি কাছে আসতে চায়, অথচ আজ উৎসা এসেছে তো তাকে গুরুত্ব দিল না!
গাল ফুলিয়ে বসে রইল উৎসা, অপেক্ষা করলো ঐশ্বর্য আসার।
অফিস শেষে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে জিসান, মন মেজাজ ফুরফুরে।তার প্রেয়সী নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে!
বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলো নিকি সোফায় বসে আছে,পরণে তার হলুদ রঙা শাড়ি। জিসানের হৃদয় স্পন্দন থমকালো,এ কী সত্যি তার বউ?আহা অবশেষে প্রেয়সীকে তার পাওয়া হলো।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেল জিসান। জিসান কে দেখে ত্বরিতে উঠে দাঁড়ালো নিকি।
“চলে এসেছেন যে?”
জিসান কোনো কথা বললো না। আকস্মিক হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল,নিকি চমকে উঠে।
“এটা কী করছেন?”
জিসান পকেট থেকে একটা রিং বের করে এগিয়ে দিল।
“তোমাকে জাস্ট নিজের করে পাওয়ার ছিল নিকি, আমি পেয়ে গেছি তোমাকে। এখন শুধু আগলে রাখতে পারলেই হলো।আরো একবার বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে একটু ভালোবাসবে?”
নিকি অঝোরে হেসে ফেলল।
“আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।”
নিকি হাত বাড়িয়ে দিতেই জিসান রিং টা পড়িয়ে দিল। জিসান উঠে দাঁড়ালো,নাকে নাক ঘষে নিকির।
“তাহলে কী আজকে একটু অভদ্র হতে পারি?”
নিকি চমকিত হয়, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল সে।
“ফাজিল।”
“একটুখানি।”
জিসান এগিয়ে যায়, ছুঁয়ে দেয় আলগোছে নিকি কে। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল তার, প্রিয় পুরুষের প্রথম স্পর্শ কেঁপে উঠে ক্ষণে ক্ষণে। একটা মধুর রাত স্মৃতি হয়ে রইল আজীবন নিকি আর জিসানের।একে অপরের স্পর্শে ভালোবাসায় ,আদুরে ছোঁয়ায় পার হতে লাগলো।
ক্লান্ত মধ্য রাতে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে রুদ্র। তীব্র এক য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে বুকের বা পাশে। প্রিয় নারী তার হওয়া সত্বেও কতটা দূরে আছে! রুদ্র এই দূরত্ব কী কখনো মিটবে? আকস্মিক ভাবনার মাঝে কর্কশ শব্দ কানে এসে পৌঁছায়। রুদ্র শোয়া থেকে উঠে বসলো তৎক্ষণাৎ, দ্রুত পায়ে ছুটে গেল আফসানার ঘরের দিকে।
দরজা কিছুটা ফাঁক করে দেখলো আফসানা কেমন পাগলামি করছে!
কখনো কাঁদছে, কখনো হাসছে। মায়ের অবস্থা দেখে ভেতর টা হা’হাকার করে উঠে রুদ্রর। এগুলো তার পাপের শা’স্তি, রুদ্র দরজা টেনে বন্ধ করে দিল। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে উঠল আফসানা, রুদ্র ঘাবড়ে গেল। আফসানা দরোজায় প্রবল বেগে ঘু’ষি দিতে শুরু করে।
“খুল খুল আমি বাইরে আসবো। তোদের সবাই কে দেখে নেব। আমাকে খুলে দে।”
রুদ্র এসব নিতে পারছে না মাথা ধরে যাচ্ছে তার। রুদ্র বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমের দিকে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় ।
বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে উৎসা। এখন রাত সাড়ে বারোটা ছুঁই ছুঁই!পাতলা ট্রি শার্ট সাথে প্লাজু পরে আছে, ঐশ্বর্য যাওয়ার পর অনেকক্ষণ কান্না করেছিল উৎসা। না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো তার,এক সময় ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। অতঃপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল মূহুর্তে,সেই থেকেই ঘুমাচ্ছে উৎসা।
প্যালেসে প্রবেশ করলো ঐশ্বর্য, গাড়ি পার্ক করে ভেতরের দিকে গেল। কলিং বেল বাজায় কিন্তু কেউ এলো না। ঐশ্বর্য ফুলের টবের নিচ থেকে চাবি বের করে মেইন ডোর ওপেন করে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতর টা অন্ধকার হয়ে আছে, শুধু ড্রিম লাইট জ্ব’লছে! ঐশ্বর্য আর লাইট অন করলো না।ডোর লক করে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল, ভেতর গিয়ে চোখ দুটো তার স্থির হয়ে গেল সঙ্গে পা দুটোও।
বিছানায় এলোমেলো হয়ে আছে উৎসা,সাদা শার্ট আর প্লাজুতে বেশ মানিয়েছে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে উৎসা, ঐশ্বর্যের দৃষ্টি ফের আকটে যায় উৎসার স্নিগ্ধ মুখ পানে।পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়লো শীতল র’ক্ত স্রোত, দুপুরের কথা গুলো মনে পড়তেই একপেশে হেসে ফেললো ঐশ্বর্য। দৃষ্টি গেল তার শার্টের দিকে, যেখানে উৎসার ঠোঁটের ছাপ স্পষ্ট! ঐশ্বর্য চাইলেই চেঞ্জ করতে পারতো, কিন্তু করলো না। উপরন্তু উপরে একটা স্যুট জড়িয়ে নেয়। ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে স্যুট খুলে রেখে ডিভানের উপর ছুড়ে ফেলে। এগিয়ে গেল উৎসার পানে, ঝুঁ’কে পায়ের কাছে বসলো। ঐশ্বর্যের ভীষণ ইচ্ছে করলো উৎসা কে স্পর্শ করতে,সে ইচ্ছে কে আর দমিয়ে রাখলো না। আলতো করে ছুঁয়ে দিল তার পা, আরো খানিকটা নুইয়ে গিয়ে চুমু খেল পায়ের পাতায়। অতঃপর একটু একটু করে চুমু দিয়ে দিয়ে উপরে উঠতে লাগল ঐশ্বর্য।
ঘুমের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে উৎসা,এক সময় ঐশ্বর্য উপরে উঠে এলো উৎসার। দুজনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে, ঠান্ডা হাত জোড়া কোমড় স্পর্শ করতেই চোখ দুটো পিটপিট চোখ করে তাকালো উৎসা।নজরে এলো ঐশ্বর্যের মুখশ্রী, উৎসা তাকিয়ে আছে সেই একই ভাবে! ঐশ্বর্য ঠোঁট ছোঁয়ায় উৎসার থুতনিতে!
“ঐশ্বর্য!”
“হেই রেড রোজ আই লাভ ইউ।”
উৎসার মনে পড়ে গেল ঐশ্বর্যের দুপুরের কথা।
“সরুন।”
উৎসা ঐশ্বর্য কে সরিয়ে উঠে বসলো। ঐশ্বর্য একই ভাবে শুয়ে আছে, উৎসার হাত টেনে বুকে এনে ফেলল ঐশ্বর্য।
“অ্যাম স্যরি বেইব।”
“নট ওকে। আমাকে ঘুমোতে দিন।”
উৎসা উঠে পড়লো, চলে গেল বাইরের দিকে। ঐশ্বর্য আবারও ডাকলো।
“সুইটহার্ট প্লিজ স্টপ।”
রেড রোজ ২ পর্ব ৪৫
উৎসা থামলো না রুমে গিয়ে দরজাটা লক করে দিল। ঐশ্বর্য গিয়ে দরজা ধাক্কা দেয়।
“রোজ প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।”
উৎসা ভেতর থেকে বলে উঠে।
“আমার ঘুম পাচ্ছে প্লিজ।”
ঐশ্বর্য অপেক্ষা করলো, কাউচের উপর বসে রইল সেই এক ভাবে।
উৎসা হেসে ফেলল,কারণ ঐশ্বর্যের কাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বার্থ ডে যে!আর বার্থ ডে তে ঐশ্বর্য কে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দেবে সে।
এটাই তো প্ল্যান,তাই তো এত ড্রামা করছে।