রেড রোজ ২ পর্ব ৮

রেড রোজ ২ পর্ব ৮
ফারহানা নিঝুম

গুটিসুটি হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা , হাত পা থরথর করে কাঁপছে তার। সামনেই কাউচের উপর বসে আছে ঐশ্বর্য ,এক পা লম্বা করে সেন্টার টেবিলের উপর তুলে রেখেছে।চোখে মুখে অদ্ভুত আস’ক্তি তার,এমন মনে হচ্ছে সে মা’তা’ল। ঐশ্বর্য বেশ আয়েশ করে সি’গারেট খাচ্ছে ,তার নিজস্ব ভঙিমায়।
ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে,পরণের গাউন টা বেশ লাগছে।সদ্য ফোঁটা লাল গোলাপ!
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,উৎসা তার ওয়াইফ এটা চরম সত্য।
ঐশ্বর্য আবারও দৃষ্টি বুলালো উৎসার দিকে , গোলাপী ওষ্ঠাদয় তীর তীর করে কাঁপছে। ঐশ্বর্য আনমনে বলে উঠে।

“একটা চুমু খাই?”
উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য অনুনয় করে দাঁড়ালো।
“প্লিজ রোজ একটি চুমু।”
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল।
“উঁহু, আমি হোস্টেলে যাব।সিরাতের সঙ্গে থাকব আজ থেকে, আপনি প্লিজ যেতে দিন।”
ঐশ্বর্য শুনলো তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মিনিট গেল, দেখতে দেখতে আধ ঘন্টা পর উৎসা ভয়ে ভয়ে সামনের দিক পা বাড়াতেই ঐশ্বর্য উৎসা কে ঝাপটে ধরে। আঁ’তকে উঠে উৎসা , অতিরিক্ত ভয়ে ঝাপ্টে ধরে ঐশ্বর্যের কলার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“অ্যাম ঘোস্ট?”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো।
“আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি ঐশ্বর্য ভাইয়া…
“হুস ডোন্ট কল মি ভাইয়া! আমি কিছু জিগ্গেস করেছি?”
উৎসা ফের শুধোয়।
“আপনি ভূত নন, তবুও ভয় পাই।”
“উঁহু এটা না, অন্য কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
“ভা ,,, ভাইয়া না বলতে!”
“উঁহু।”
“তাহলে?”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,রাগে গজগজ করতে করতে আচমকা উৎসার ওষ্ঠাদয় আঁ’ক’ড়ে ধরে।হাত কেঁপে উঠে উৎসার, ক্ষণকালের জন্য থমকে যায় তার হৃদয় স্পন্দন।মিনিট দশেক পর ঐশ্বর্য নিজ থেকেই উৎসা কে ছেড়ে দিল।হাত পা জমে বরফ হয়ে গেছে উৎসার ,ছাড়া পেতেই দৌড়ে ভেতরের রুমে চলে গেল উৎসা। ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ কাউচের উপর বসে রইল , কিন্তু পরক্ষণেই কী উঠে রুমের দিকে গেল।
“রোজ? রোজ ওপেন দ্যা ডোর।”
ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই, ঐশ্বর্য রেগে যায়। মূহূর্তে রাগে শরীর রি রি করে উঠলো তার , এমনিতেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না সে।

“রোজ আর একবার বলব দরজা খুলতে এরপর যদি আর বলতে হয় তাহলে গড প্রমিজ খুব খারাপ হবে!”
তৎক্ষণাৎ এসে দরজা খুলল উৎসা ,চোখ তার লাল হয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে কেঁদেছে সে! ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে নেয়। স্বভাব সুলভ সিল্কি চুল গুলো হাতের সাহায্যে ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিল।
“কী প্রবলেম হুঁ? কান্না কেন?”
উৎসার এই মূহুর্তে মন চাচ্ছে ঐশ্বর্যের মাথা ফা’টিয়ে দিতে। কেউ এত নি’র্লজ্জ কী করে হতে পারে?
“আপনি অস’ভ্য রিক চৌধুরী ,ছিহ্ প্রথম থেকেই আপনাকে আমি ঘেন্না করি। এখন আপনি তা আরো বাড়িয়ে দিলেন!”

ঐশ্বর্য চোখ দুটো ছোট করে নিল, কেমন অদ্ভুত স্বরে বলে।
“ঘেন্না বেড়েছে?যদি বলো তাহলে আরো বাড়াতে পারি , আরেকটা কিস করে।”
উৎসা রেগে ভেতরে গিয়ে নিজের ল্যাকেজ নিয়ে বেরিয়ে এলো।
“আপনার মতো অসভ্য রিক চৌধুরীর সাথে আমি থাকব না।”
“ওকে।”
ঐশ্বর্য গিয়ে আবারো কাউচের উপর বসলো ,উৎসা ল্যাকেজ নিয়ে মেইন ডোরের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার উৎসা ডোর খুলার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না।
“ডোর ওপেন হচ্ছে না কেন?”
ঐশ্বর্যের ভাবলেশহীন জবাব।
“পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা।”
উৎসা কিঞ্চিৎ সন্দেহ নিয়ে শুধোয়।
“এটা কখন করলেন?”
“একটু আগেই।”
উৎসা রাগের ঠেলায় সজোরে লা’থি দিল দরজায়, পরক্ষণে নিজেই ব্যথা অনুভব করলো।
“উফ্!”
“নেক্সট টাইম ভেবে পা ফেলো ,ইউ নো তুমি আমার ওয়াইফ সেই হিসেবে তো আমার সাথেই থাকতে হবে!”
উৎসা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না, দাঁতে দাঁত পিষে ভেতরে চলে গেল। ঐশ্বর্য যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।

রাত প্রায় আড়াইটা জিসান ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে সবে বিছানায় এসে শুয়েছে।মনে মনে ফুর্তি জেগেছে তার, কত গুলো দিন পর অ্যাংরি বার্ড এর সঙ্গে কথা বলবে! জিসান ঝটপট নিকির নাম্বারে কল করলো ‌।
বেঘোরে ঘুমাচ্ছে নিকি ,ফোনের কর্কশ শব্দে কিছুটা নড়ে উঠে।এক সময় ফোন কে টে গেল , কিন্তু জিসান আবারও কল করলো।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন কানে তুললো নিকি।
“হ্যালো।”
“অ্যাংরি বার্ড।”
নিকি থতমত খেয়ে গেল, এই মাঝরাতে ইংরেজের বাচ্চা কল করছে?
“ইংরেজের বাচ্চা।”
জিসান ঠোঁট চেপে হাসলো।
“নাইস নেইম।”
নিকি কোনো রকমে উঠে বসলো।
“কী ব্যাপার হঠাৎ ফোন করলেন যে?”
জিসান আধশোয়া হয়ে বসে।
“এক মিনিট।”

জিসান দ্রুত ফোন কেটে ভিডিও কল লাগালো।
চমকে উঠে নিকি, ভিডিও কল?
নিকি ধরলো,তবে ঠিক মতো তাকাতে পারছে না।
“কী হলো কল কেন?”
জিসান খানিকটা ভেবে বলে।
“মনোহরণী কে দেখছি।”
নিকি ফিচলে হাসে।
“যত্তসব ঢঙ।”
জিসান ফিক করে হেসে উঠলো, কপালে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো।
“অ্যাংরি বার্ড কে মিস করছি।”

নিকি আড়ালে হাসলো , কিছুটা ভাবুক হয়ে বললো।
“তাহলে চলে আসুন বাংলাদেশে।”
জিসান চোখ টিপ লো।
“আসলে কী দেবে?”
নিকি ভ্রু যোগল কুঁচকে নেয়।
“কেনো হ্যা?”
জিসান দুষ্টুমির ন্যায় শুধোয়।
“কিছু তো চাই, রিকের মতো সামথিং….
ফট করে ফোন রেখে দিল নিকি,কী লাগামহীন কথাবার্তা! লোকটা দিন দিন নি’র্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।”
নিকি লজ্জায় লাল হয়ে উঠে,মুখে বালিশ চেপে শুয়ে পড়ল।

সকাল সকাল ঐশ্বর্য ঘুম থেকে উঠে উৎসা কে আশেপাশে খুঁজে চলেছে। আশ্চর্যের বিষয় মেয়েটা কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।
ঐশ্বর্য কিছু একটা ভেবে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলেন,মিস মুনা আছেন।এক মাত্র উনি জানেন পাসওয়ার্ড, আর ঐশ্বর্য ওনাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন।
“মিস মুনা?”
“ইয়েস স্যার।”
“ম্যাম কে দেখেছেন?”
“স্যার ম্যাম কিছুক্ষণ আগেই ল্যাকেজ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। বলেছেন আপনাকে ডিস্টার্ব না করতে।”
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট শিট শিট।”
“এনিথিং রং স্যার?”
ঐশ্বর্য আনমনে বলে।
“নাথিং।”
মিস মুনা নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো , এদিকে ঐশ্বর্য কিছুটা ভাবলো। উৎসা কোথায় যেতে পারে তা!
ঐশ্বর্য হঠাৎ ফিচলে হাসে, হয়তো সে জানে উৎসা এখন কোথায় আছে?
“আহ্ রোজ, ষ্টুপিড রোজ আমার কাছ থেকে যাওয়াটা মোটেও সহজ হবে না তোমার জন্য। তুমি এসেছিলে নিজের ইচ্ছায়, কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছায়। আমি যতক্ষন না তোমাকে পারমিশন দেব তার আগ পর্যন্ত কোথাও যেতে পারবে না।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
ঐশ্বর্য রুমে গিয়ে কাবার্ড থেকে নিজের ড্রেস বের করে ওয়াশ রুমে গেল। দীর্ঘ সময় ধরে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে , ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করে নেয়।পরণে অফ হোয়াইট শার্ট,তার উপর ব্ল্যাক স্যুট,পায়ে ব্র্যান্ডের সু, সিল্কি চুল গুলো বরাবরের মতো হেয়ার ব্রাশ দিয়ে ঠিক করে নিল। টেবিলের উপর থেকে পারফিউম স্প্রে করলো , অতঃপর সবশেষে হ্যান্ড ওয়াচ ও ওয়ালেট নিয়ে বাইরে এলো।
“মিস মুনা আমি বের হচ্ছি, আপনি প্লিজ খাওয়া দাওয়া করে নিবেন।”
মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলেন।

“ওকে স্যার।”
ঐশ্বর্য গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
রাস্তার পাশে একটি বেঞ্চে বসে আছে উৎসা আর বেনজন সিরাত।
“এখন কী করবি উৎসা?”
উৎসা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে।
“আমার জন্য হোস্টেলে একটি রুম নিয়ে দে প্লিজ।”
বেনজন অস্ফুট স্বরে বলল।
“উৎসা ইউ নো না এভাবে রুম অ্যাভেলেবল থাকে না! আমিই মাঝখানের দিকে এসেছি বলে শেয়ারে থাকতে হচ্ছে। এখন তোমাকে রুম আদেও দিবে কি না ডাউট আছে!”
উৎসা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,কী করবে এখন?নিকির উপর বিশ্বাস করে এখানে আসা উচিত হয়নি।এই যে ঐশ্বর্য অস’ভ্য আচরণ করে ,এই ম্যাড লোকের বাড়িতে থাকা মানে শেষষষ!
সিরাত আর বেনজন একে অপরের দিকে তাকালো। সত্যি উৎসার জন্য খারাপ লাগছে ওদের।
“উৎসা এখন কী করবি?”

সিরাতের কথায় চোখ তুলে তাকালো উৎসা, বিরক্ত লাগছে ওর। কী যে করবে এখন?
উৎসা সামনের দিক তাকাতেই একশো ডিগ্রির কারেন্ট লাগলো।ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার এগিয়ে আসছে ,উৎসা দূর থেকেই চিনে গিয়েছে।
উৎসা ল্যাকেজ নিয়ে ভৌ দৌড় ,পালা উৎসা পালা।এই লোকটার কাছে ধরা খাওয়া মানে তুই গা’ধা।
উৎসা পালাতে আর পারলো কই?তার আগেই গাড়ি ঘুরিয়ে উৎসার সামনে চলে এলো ঐশ্বর্য।
উৎসার পা দুটো থেমে গেল , এবার কী হবে?গাড়ি থেকে নেমে এলো ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী , ঈষৎ চমকে উঠে উৎসা। ঐশ্বর্য সুদর্শন সুপুরুষ , এটা মানতেই হবে। ঐশ্বর্য কে এই সাদা কালো ড্রেস আপে দেখে হৃদয় স্পন্দন তার গতিবিধি বদলে নিয়েছে। ফর্সা এই পুরুষের মুখশ্রী লাল হয়ে আছে , ঠোঁট দুটো লাল টকটকে দেখাচ্ছে। উৎসা মনে মনে নিজেকে দু’টো বি’শ্রী গা’লি দিল।ছে ওভাবে কেন তাকিয়ে আছে সে?বেহা’য়া চোখ দুটো, ঐশ্বর্য দু কদম এগিয়ে এসে গাড়ির ডিস্কেথ উপর লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
“হাই সুইটহার্ট ,ওভাবে তাকায় না। ইটস্ হার্ট।”
ঐশ্বর্য শেষের কথাটা বুকে হাত দিয়ে বললো , উৎসা আহা’ম্মক বনে গেল। তৎক্ষণাৎ নিজের সরিয়ে নেয়।
“যাওয়া যাক?”

উৎসার কপালে ভাঁজ পড়লো,সে কী আবার ফিরে যাওয়ার জন্য এসেছে? উঁহু মোটেও না। ভাগ্যিস সকাল সকাল মিস মুনা এসে দরজা খুলেছিল,না হলে ওখানেই থাকতে হতো!
“দেখুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”
পিছন থেকে সিরাত আর বেনজন দৌড়ে এগিয়ে এলো। ঐশ্বর্য কে দেখে দুজনেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“তোমার পারমিশন চাইনি বেইবি,অর্ডার করছি গাড়িতে বসো।”
উৎসা বেঁকে গেল,সে যাবে না মানে যাবে না!
“শুনুন আমি আপনার সাথে যাব না, আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথেই যাচ্ছি।”
ঐশ্বর্য ভ্রু উঁচিয়ে শুধোয়।
“আচ্ছা?তা কে সেই ইডিয়ট?”
উৎসা কিছু না পেয়ে বেনজনের হাত চেপে ধরে।
“লুক ওই আমার বয়ফ্রেন্ড।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৭

ঐশ্বর্য নিশ্চুপ,রাগে হাত পা কাঁপছে তার। চোখের কার্নিশ লাল হয়ে উঠেছে, বারংবার দৃষ্টি বুলাচ্ছে উৎসার হাতের দিকে। উৎসা খুব শক্ত করে বেনজনের হাত চেপে ধরে আছে। ঐশ্বর্য ব্যাপার টা মোটেও ভালো ভাবে নিল না , গাড়ির উপর থেকে নেমে কোমড়ে হাত চেপে দাঁড়ালো। আশেপাশে এক নজর তাকিয়ে উৎসার দিকে এগিয়ে গেল।কী একটা ভেবে সজোরে থা’প্প’ড় বসালো উৎসার গালে , শেষ উৎসা ওখানেই বে’হুঁ’শ। এদিকে বেনজন আর সিরাত হা করে তাকিয়ে আছে , ঐশ্বর্যের দৃষ্টি দেখে দু’জনেই ভৌ দৌড়।

রেড রোজ ২ পর্ব ৯