রেড রোজ ২ পর্ব ৯

রেড রোজ ২ পর্ব ৯
ফারহানা নিঝুম

হা’ড়ভা’ঙা খা’টুনি করেছে এমন মনে হচ্ছে উৎসার , উঠে বসতেই পারছে না। গালে চিনচিনে ব্য’থা অনুভব করছে ,সবে মাত্র উঠেছে। আচ্ছা, সে কী এতক্ষণ ঘুমিয়েছিল?
উৎসা ভাবতে পারছেন না ,উঠে বসলো । দু হাতে মাথা চেপে ধরে , উফ্ মাথাও ব্যথা করছে তার।চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নিচ্ছে সে , তৎক্ষণাৎ সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেল তার। ঐশ্বর্যের রাস্তায় যাওয়া ,বেনজন কে বয়ফ্রেন্ড বলা এবং সবশেষে ঐশ্বর্যের পুরুষালী হাতে থা’প্প’ড় খাওয়া। মস্তিষ্ক জ্ব’লে উঠলো তার , আশেপাশে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইল। জিসান আর ঐশ্বর্য তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে , ঐশ্বর্য কফি খাচ্ছে । এদিকে জিসান গভীর ভাবে কিছু নিয়ে ভাবছে।
উৎসা এক লাফে বিছানা থেকে নেমে ফ্লাওয়ার বাস তুলে নিল।

“অস’ভ্য রিক চৌধুরী আজকে আপনার একদিন কী আমার একদিন! এত সাহস আপনি আমাকে এখানে নিয়ে চলে এলেন?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না, সম্পূর্ণ কফিটা শেষ করে বেড সাইড টেবিলের উপর রাখলো।
“বলো কী বলছিলে?”
ঐশ্বর্যের কথায় গা জ্ব’লে উঠল উৎসার।
“দেখুন একদম বিরক্ত করবেন না, আমি আপনার প্রাইভেট প্রোপার্টি নই। যে আমাকে জোর করে রাখবেন!”
ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো,হাত দুটো টেনে হাড়ভাঙা শব্দ করে। জিসানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
“জিসান বাইরে যা,আর হ্যাঁ ফ্রিজ থেকে কিছু….বের করিস।”
জিসান দাঁতে দাঁত পিষে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“শেইম লেস ম্যান।”
জিসান বের হতেই ঐশ্বর্য উৎসার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।
“লিসেন অ্যাম নট গুড পার্সন, এটা বরাবরই মানি।বাট এই ব্যাড বয় যাই চায় তাই পায় ।”
ঐশ্বর্য থামলো, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে উৎসার কানের কাছে ফিস ফিসফিসিয়ে আওড়ালো।
“ইউ নো তোমাকে দেখে সামথিং ফিল পাই। এই ব্যাড বয় এখন তোমাকে চাইছে, আদ্যারওয়াইজ ওয়াইফ বলে কথা!”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্যের অদ্ভুত কথা গুলো কানে লাগলো।

“দেখুন আমি মোটেও দূর্বল নই ,আর না আপনাকে ভয় পাই।”
উৎসা ঐশ্বর্যের সামনে নিজেকে স্ট্রং দেখালেও ভেতরে ভেতরে ভয় কাজ করছে।
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, সিল্কি চুল গুলো হাতের সাহায্যে ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিল।
“উপ্স জাস্ট ফিদা হয়ে গেছি।”
উৎসা ঈষৎ লজ্জা পেলো,তবে তা রয়ে গেল অপ্রকাশিত।
“ইউ নো ইউ আর ষ্টুপিড রোজ।”
উৎসা এবার চরম পর্যায়ে ক্ষে’পে গেল।
“আমি ষ্টুপিড নাকি আপনি ষ্টুপিড? আচ্ছা আপনার লজ্জা করে না হ্যা?এত বছর পর ওয়াইফ দাবী করছেন, একটুও লজ্জা নেই।”
ঐশ্বর্য আবারো গিয়ে সোফায় বসলো।

“আহ্ ট্রাস্ট মি আমার মধ্যে শেইম বলতে কিছু নেই।ওই যে জিসান বলে না?শেইম লেস ম্যান , আমি বড্ড নির্ল’জ্জ।”
উৎসা ইচ্ছে করছে ফ্লাওয়ার বাস দিয়ে ঐশ্বর্যের মাথা ফা’টিয়ে দিতে! কিন্তু না সে এমন কিছুই করবে না।
উৎসা রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে গেল।
ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে , কিচেনে গিয়ে দেখে মিস মুনা রান্না করে রেখেছেন। উৎসা খাবার গুলো ওভেনে গরম করতে দিয়ে দিলো ,এর মধ্যে নিজের জন্য এক কাপ কফিও করবে ভাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ।
কফি কাপ হাতে নিলো উৎসা,কফি বানাবে বলে। পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

“আমার জন্য এক কাপ অবশ্যই সুগার ফ্রি।”
উৎসার নাকের পাটা ফুলে উঠে,সে কী মেড? করবে না কফি।
উৎসা গিয়ে কাউচের উপর বসলো , টিভি অন করে দেখতে লাগে। উৎসা হবে কাপে চুমুক দেয়।হঠাৎ ঐশ্বর্য এসে উৎসার হাত থেকে কফির কাপ ছু মে’রে নিয়ে নিলো। ঐশ্বর্যের কপালে ভাঁজ পড়লো।
“উঁহু অতিরিক্ত চিনি তো? বললাম না সুগার ফ্রি?”
উৎসা রেগে গেল।
“এটা আমার জন্য ছিল।”
“সো হোয়াট?”
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন!”
ঐশ্বর্য কাপ রেখে এগিয়ে এলো।
“ইস্ সুইটহার্ট এখনও কিছুই করলাম না তার আগেই….
“ছিহ্।”
“ইটস্ হার্ট।”
“দূরে থাকুন।”

উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল, ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে। হঠাৎ দ্রুত গতিতে এগিয়ে এলো ,উৎসা পিছুতে গিয়ে কাউচের উপর ঠাস করে পড়ে গেল! ঐশ্বর্য খানিকটা ঝুঁকে গেল।
“উফ্ রোজ সামথিং সামথিং।”
উৎসা আবারো ধাক্কা দিলো ঐশ্বর্য কে।
“টাচ করবেন না আপনি আমাকে।”
ঐশ্বর্যের হাসিমুখ গম্ভীর হয়ে গেল,কী একটা ভেবে উৎসার বাহু চেপে ধরে।
“টাচ টাচ টাচ।”
ঐশ্বর্য বাহু,হাতে কপালে স্পর্শ করে। উৎসা তেতে উঠল।
“উফ্ অস’ভ্য রিক চৌধুরী,সরুন।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,উৎসা আর পারলো না। দৌড়ে উপরের রুমে চলে গেল।

সকাল সকাল জগিং এ বেরিয়েছে কেয়া ,সেই কখন থেকে দৌড়াচ্ছে।এক সময় হাঁপিয়ে গেল , পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসলো।
“এটা কী লাগবে?”
চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে হেসে ফেলল কেয়া।হাত বাড়িয়ে জিসানের থেকে ওয়াটার বোটাল নিয়ে নিলো।
“কী রে ইডিয়ট সকাল সকাল এখানে কেন?”
জিসান কেয়ার পাশের জায়গাটা দখল করে নেয়।
“দেখ শেইম লেস গার্ল ঐশ্বর্য কে মোটেও সুবিধার লাগছে না।”
কেয়া পুরো পানি শেষ করে শুধোয়।
“কেন আজকে কী হয়েছে?”
“কী হয়নি সেটা বল? রিক উৎসা কে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে কাল। ইভেন আমাকে কী বলেছে জানিস?”
“কী?”
“সামথিং….
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।

“ভালোই তো কিউট গার্ল তো ওর ওয়াইফ।”
“শাট আপ ইয়ার,তুই আর রিক একদম একই!”
কেয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অভিনয় করে বললো।
“আহারে আজ কেউ নেই বলে আমার এই অবস্থা!সো স্যাড।”
জিসান উঠে দাঁড়ালো, সামনের দিক হেঁটে যাচ্ছে।কেয়াও নিজের ব্যাগ নিয়ে ছুট লাগালো।
“আচ্ছা রিক কোথায়?”
“কোথায় আবার ওর বাড়িতে! এখনো ঘুমাচ্ছে হয়তো।”
কেয়া সামনের দিকে যেতেই একটা ক্যাফে নজরে এলো।
“জিসান চল ব্রেকফাস্ট করব।”
“নো মানি।”
“প্লিজ!”
জিসান ফিচলে হাসে।

“কেন তোর সেই ফেইক বয়ফ্রেন্ড গুলো কোথায়?”
কেয়া দাঁতে দাঁত পিষে বলল।
“এবার কিন্তু পাঞ্চ মে’রে দেব।”
জিসান হু হু করে হেসে উঠলো।
“তোর থেকে আমি বেশি স্ট্রং বুঝলি!সো আমি একটা পাঞ্চ দিলে তোকে খুঁজে পাওয়া যাবে না!”
জিসানের বলতে দেরী কেয়ার তার মুখে পাঞ্চ মা’রতে দেরী হলো না। জিসান কঁকিয়ে উঠলো।
“কেয়া, ষ্টুপিড।”
কেয়া ছুট লাগালো।
“দাঁড়া বলছি,কেয়া স্টপ।”
“নো ওয়ে।”

কেয়া গিয়ে ক্যাফেতে ঢুকে,ওয়েটার কে ঢেকে নিজের জন্য আর জিসানের জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসতে বলে। জিসান ভেতরে এসে দেখলো,কেয়া ফোন বের করে ক্যামেরায় সেলফি তুলছে।
“হাই ডুড।”
“ইউ ইডিয়ট আমার নাক ফেটে যেত।”
“সো হোয়াট?”
কেয়ার কথায় তেতে উঠল জিসান ,এই মেয়ে এত কেয়ারলেস কেন?
“আচ্ছা তুই রিক কে ছেড়ে ব্রেকফাস্ট করবি?”
জিসানর কথায় পাত্তা দিল না কেয়া , দু’জনেই ব্রেকফাস্ট করলো।
“নাউ টেল মি রিক লাভস কিউট গার্ল অ্যাম আই রাইট?”
“জানি না,বাট ঐশ্বর্যের যা ব্যাড হেবিট তা মিস বাংলাদেশী জানতে পারলে সব কিছু শেষ!”
কেয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“আমার জন্য একটা রিয়েল হ্যান্ডসাম ছেলে খুঁজ ইয়ার।”
জিসান বিষম খেলো।

“সত্যি?”
কেয়া জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।
“হ্যা।”
“তুই বিয়ে করবি?”
“ইয়েস,বিয়ে করে সংসার করব।”
জিসানের নাকে মুখে উঠে গেল, কাঁশতে লাগলো সে।
“আরে কুল ডাউন।”
জিসান কেয়া কে মোটেও বিশ্বাস করে না।
“দেখ কেয়া তুই আর রিক দু’জনই সেইম ক্যাটাগরির । তোদের বিয়ে হবে কবে আর আমি আমার অ্যাংরি বার্ড কে বিয়ে করব কবে? উফ্ আমার বংশ এখানেই শেষ।”

কেয়া ফের হেসে উঠলো। জিসান একটা জিনিস ঠিক করে নিয়েছে,এ দুটোকে আটঘাট না বেঁধে সে তো আর বিয়ে করতে পারবে না!কেয়া বড্ড অবুঝ,আর রিক বড্ড ঘাড় ত্যা’রা।
“দেখ তোদের লাইফ নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।তোরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,তোদের ছাড়া এক মূহূর্তের জন্য অন্য কিছু ভাবতে পারি না।বাট তোরা তো পাত্তাই দিলি না!”
কেয়া অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে, জিসান এবার মুখ তুলে তাকালো। জিসান সত্যি আবেগী কেয়া জানে জিসান ওদের কতটা ভালোবাসে!
কেয়ার সঙ্গে ঐশ্বর্যের আর জিসানের পরিচয় সাত বছরের। যেখানে ঐশ্বর্য আর জিসান ছোট বেলার বন্ধু , কেয়ার সাথে এখানে জার্মানি আসার পরই পরিচয়।

“জিসান একটা কথা বলি!”
কেয়া কাতর স্বরে বললো , জিসান মাথা দুলিয়ে বলল।
“বল।”
কেয়া দুষ্টুমি করে আওড়ালো।
“আমরা তোকে একটুও ভালোবাসি না ব্রো।তাই তো তোর বংশ নির্বংশ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।”
কেয়া হেসে কু’টি কু’টি অবস্থা, জিসান রাগে কেয়ার চুল টেনে দেয়।
“ডেভিল কুইন।”
“হি হি হি।”

সকাল সকাল বাগানে হাঁটছে নিকি , রুদ্র বেরিয়ে এলো।
“নিকি কোথায় তুই?”
রুদ্রর কন্ঠস্বর শুনে ভেতরে গেল নিকি।
“হ্যা ভাইয়া বলো।”
“এদিকে আয়, কিছু ফাইল দেখানোর আছে।”
নিকি গিয়ে সোফায় বসে, রুদ্র ল্যাপটপ হাতে এগিয়ে এলো।
তাদের কোম্পানি দুজনেই মিলেই সামলায় , রুদ্র আর নিকি না থাকলে এত দিনে শহীদ সর্ব শান্ত হয়ে যেতো।
“এগুলো দেখ কাল এদের সাথে আমাদের মিটিং আছে।”
নিকি ফাইল গুলো হাতে নিলো,প্রায় পাঁচ জন ওদের কোম্পানির নতুন ডিলার। এই ডিল গুলো খুব ইম্পোর্টেন্ট ওদের জন্য।

“হ্যা ভাইয়া আমি দেখে নিয়েছি , আমি তো কাজ গুলো করে রেখেছি। ইভেন প্রেজেন্টেশন রেডি।”
“ওকে।”
রুদ্র খানিকটা স্বস্তি পেল, ল্যাপটপ রেখে সোজা হয়ে বসে।
“আজ একবার পাটোয়ারী বাড়িতে যাবো বুঝলি?”
নিকি ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কেন কি হয়েছে?”
“ফুপি বলেছে একটু জরুরী দরকার আছে তাই যেতে হবে।”
নিকি কিচেনে গিয়ে দুজনের জন্য কফি নিয়ে এলো।
“আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলি!”
“হ্যা বল।”
“তুমি বিয়ে করছো না কেনো?”
নিকির কথায় তম্বা খেয়ে গেল রুদ্র।
“হঠাৎ তুই আমার বিয়ে নিয়ে পড়লি কেন?”
নিকি দাঁত দেখিয়ে বলে।
“মনটা ভাবী ভাবী করছে।”
রুদ্র কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে নেয়।

“তাই?”
“হি হি।”
“ভালো হয়ে যা, না হলে বিয়ে দিয়ে দেব।”
নিকি মুখ বাঁকিয়ে নেয়।
“মোটেও আমি এখন বিয়ে করব না।”
রুদ্র কফির কাপে চুমুক দিল।
“কেন?”
“কারণ আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না!”
রুদ্র চোখে হাসে ‌।
“পাগলী একটা।”
“রুদ্র নিকি খেতে আয়।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৮

আফসানার ডাক শুনে দুজনেই উঠে দাঁড়াল ,খেতে না গেলে আবার রেগে যাবেন। শহীদ কিছু কাজের জন্য শহরের বাইরে গিয়েছেন।নিকি আর রুদ্র ঠিক করেছে বিকেলের দিকে একবার পাটোয়ারী বাড়িতে ঘুরে আসবে। এখন উৎসা নেই , সাবিনা পাটোয়ারী একা আছে । ওদের দায়িত্ব তাদের।
আফসানা ওদের কে খাবার বেড়ে দিলেন ,নিকি আর রুদ্র চুপচাপ খেয়ে নিল। আফসানা তেমন একটা কথা বললেন না , নিজের মতো খাওয়া শেষ করলেন।

রেড রোজ ২ পর্ব ১০