রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৪
ফারহানা চৌধুরী
খুব আচমকা অপ্রত্যাশিত সঙ্গে ঘটলে লোক যেমন প্রচন্ড বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়, অরুর বর্তমান অবস্থাও তেমন। সে হতভম্ব ভাব কাটাল বহু কষ্টে। চোখ-মুখ খিঁচিয়ে শুভ্রর বুকে হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চাইলো তাকে। শুভ্র ছাড়ে তাকে, তবে সরে না। গা ঘেঁষে দাঁড়ায় আরো। অরু ঠোঁট চেপে ধরলো দু’হাতে। হতভম্ব চোখে তাকালো শুভ্রর দিকে। শুভ্রর হাত তখন তার গালে। অরুর তাকানোতে সে ভ্রু নাচালো। অরু মুখে হাত রেখে অস্পষ্ট স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-“এটা কি হলো?”
-“কি হলো?”
অরুর হতবাক স্বর,
-“আপনি কি করলেন এটা?”
শুভ্র বড়ো নির্লজ্জের মতো প্রত্যুত্তর করলো,
-“চুমু খেয়েছি। বউকে চুমু খাওয়া হালাল। চাইলে তুমিও খেতে পারো। আই ও’ন্ট মাইন্ড।”
নিজে বলে নিজেই চমকায়। তবে অরুর সামনে প্রতিক্রিয়াহীন রয়। অরু…. অরু হতভম্ব হয়ে গেলো। এসব কি কথা? শুভ্র এতোটা বেশি নির্লজ্জ কবে হলো? কেমন করে হলো? অরু সরতে গেলে দেখলো সে শুভ্রর বাহুতে আটকা পড়ে আছে। অরু কেন যেন আর সরলো না। তাকালো শুভ্র দিকে। বিস্ময়োর ঝলকানি চোখ জুড়ে। হতভম্ব স্বরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“আপনি এমন কেন করছেন?”
-“কেমন করলাম?”
এখন মাটি ফাঁক হয়ে গেলে বোধহয় ভালো হতো। অরুর আর সহয় হচ্ছে না। কেমন করে কথা বলছে? সে জানে না সে কি করছে? তারপরেও অরুকে এমন করে কেন জিজ্ঞেস করছে। কি হচ্ছে এগুলো? অরু তার বুকে ধাক্কা দিলো হালকা। মৃদ স্বরে বলল,
-“আপনার বোধহয় জ্বর আসছে।”
শুভ্র হকচকিয়ে তাকালো,
-“জ্বর? জ্বর কেন আসবে, আজব?”
-“এমন পাগলের মতো আচরণ করেও জিজ্ঞেস করছেন জ্বর কেন আসবে? জ্বর না আসলে লোকে এমন অদ্ভুত আচরণ করে না। আপনার নির্ঘাত জ্বর হয়েছে। গতকাল তুষার পড়লো তো। আপনি তার মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়েছিলেন, এইসব শীতেই প্রব্যাবলি জ্বর আসছে।”
শুভ্র হাঁ করে চেয়ে রইলো। হতবাক গলায় শুধাল,
-“এসব পাগলের মতো আচরণ? জ্বর হলেই কি লোকে—। অরুউউ!”
তার ভাষায় কুলালো না। কপালে চাপড়ে বিড়বিড় করলো,
-“স্টুপিড মেয়ে!”
অরু চটে গেল,
-“আপনি এমন বললেন কেন?”
-“যা সত্যি বলেছি।”
অরুর নাকের ডগা রাগে লাল হয়ে এলো। পাটা ফুলিয়ে সে তাকালো শুভ্রর দিকে। শুভ্র আচমকা হেসে ফেলল। অরুর ছোট্ট নাকটায় ছোট্ট চুমু খেলো আচমকা। তারপর চলে গেলো নিজের ঘরে। পিছে রেখে গেল হতবিহ্বল অরুকে।
অরুর ঘুম ভাঙলো এলার্মের শব্দে। ফোনে এলার্ম বাজছে বোধহয়। গতকাল সেট করে রেখেছিলো। অরু অসহ্য বিরক্তি অনুভব করলো। চোখ বুঁজেই বিছানা হাতড়ে ফোন খোঁজার উদ্দেশ্যে সন্ধান চালালো। কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেয়েও গেল। চোখের সামনে ফোন তুলে পিটপিট করো তাকালো। কোনোমতে চেপে-টেপে এলার্ম বন্ধ করল। হাত দু’পাশে ছড়িয়ে তাকালো চোখ মেলে। মস্তিষ্ক থিতিয়ে আছে বর্তমানে। সবকিছু বুঝতে সময় নিচ্ছে। তার চোখ সিলিংয়ের দিকে বুঝতে চাইছে সবকিছু। যখন মস্তিষ্ক সচল হলো ধীরে ধীরে গতরাতের কথা মনে পড়লো। সবটা মনে আসছে। স-ব-টা। প্রত্যেকটা ইন্সিডেন্ট মনে করতে করতেই অরুর চোখের আকার বড় হচ্ছে। এবার এলো তখনের দৃশ্য। শুভ্র তার হাত টেনে ধরলো। তারপর…… অরু চোখ খিঁচিয়ে নিলো। শিট! শিট! শিট! কি হলো এগুলো? কি করে হলো? শুভ্র কেমন করে করলো? সে অরুে পছন্দ করে? কি করে সম্ভব? আদতেও পসিবল এসব? শুভ্র তো দু’চোখেও ওকে দেখতে পারে না, তবে? সে এটাকে একটা গ্রীন সিগনাল হিসেবে ধরে নেবে? অরু কম্ফোর্টার টেনে লাজুক হাসে।
দরজায় শব্দ হলো ঠকঠক। কেউ টোকা দিচ্ছে। অরু কান খাঁড়া করলো। ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো দরজার দিকে। শুভ্রর গলা এলো তখন,
-“বাইরে এসো তাড়াতাড়ি। খাবার রেখেছি টেবিলে।”
অরুর গা কেমন শিরশির করে উঠলো। সে কি ডাকের জবাব দিবে? কি বলবে? তার এতো লজ্জা লাগছে! উম্…
-“অরু? ডাকছি আমি। বের হও।”
অরু নিজের দিকে চাইলো। উঠে বসে কম্ফোর্টার সরালো। বিছানা ছেড়ে নেমে পায়ে চপ্পল গলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজার সামনে গিয়ে বুকে হাত দিলো। দু বার বড় বড় করে শ্বাস টেনে দরজা খুললো। শুভ্রকে দেখেই কেমন অস্বস্তিরা আরো বেশি করে জেঁকে বসল। সে একবার তার দিকে চেয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। অরুর লাজুক মুখবিবরের সম্মুখে শুভ্র রইলো নির্বিকার। স্যুট-ব্যুট পরিহিত শুভ্র অরুকে দেখেই বলল,
-“রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি এসো। অফিস যেতে হবে। লেইট না হয় যেন।”
অরু কিছু বলার সুযোগটুকুও পেলো না। শুভ্র চলে গেল তার আগেই। জুতোতে গটগট শব্দ হলো। অরু ভ্র কুঁচকে নিলো তাৎক্ষণাৎ। শুভ্র এতো নির্লিপ্ত কি করে? সব কি ভুলে গিয়েছে? গতকাল এত বড়-সড় ঘটনা ঘটিয়েও ভুলে গেলো কি করে?
অরু কুঁচকানো ভ্রু নিয়েই বাথরুমে ঢুকলো। বের হলো মিনিট দশেকের মাথায়। তারাহুরো করে কোনোমতে তৈরি হয়ে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে গেল। শুভ্র বসে আছে। ফোন টিপছে। মাঝেমধ্যে ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।
যখন ঘড়িতে চোখ তখনই তার সামনে অরু এসে সটান হয়ে দাঁড়ালো। শুভ্র চোখ তোলে। অরুকে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। অরু হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা বেশ ফুরফুরে আজ। কেন? জানা নেই। তবে সবই কেমন ভালো লাগছে। অরুকে চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বলে শুভ্র। অরু চেয়ারের দিকে একবার তাকিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। গুটি গুটি পা ফেলে চেয়ারে গিয়ে বসল।
শুভ্র পাশ থেকে একটা সাদা রঙের কাচের প্লেট নিলো। প্লেটে দু’তিনটে ব্রেড আর পাশ থেকে ভেজে রাখা ডিম তুলে নিলো। প্লেটখানা নিভৃতে এগিয়ে দিলো অরুর দিকে। অরু চুপচাপ নিলো প্লেটটা। নিজের সামনে রাখলো। এমন শুভ্র প্রতিদিনই করে এটা অবাক হওয়ার মতে কিছু না। তবে অরু তখন অবাক হলো যখন দেখলো শুভ্র আরেকটা প্লেট নিচ্ছে। সেখানেও খাবার বাড়লো সমান। তারপর নিজের সামনে রাখতেই অরু কপাল কুঁচকায়। খায়নি সে? এতক্ষণ বসে ছিলো? তার জন্য? এতোটা ভালো আচরণ কেন করছে হঠাৎ? অরুর হজম হচ্ছে না ঠিক। সে কোনোমতে ব্রেডে কামড় বসাতেই শুভ্র মুখ খুলল,
-“আব্…. কালকে আসলে—”
অরুর হাত থেমে গেল। সে ব্রেড নামিয়ে প্লেটে রাখলো। আবারও অস্বস্তিরা এসে জড়ো হলো। তার কাঁধে চেপে বসলো৷ শুভ্র নম্র গলায় বলল,
-“গতকালের জন্য আমি স্যরি।”
অরু চমকালো। হতবুদ্ধি হয়ে তাকালো,
-“হ্যাঁ?”
-“আমি ওমন করতে চাইনি তোমার সাথে অরু। তুমি ভুল ভেবো না, প্লিজ।”
অরুর বুক কাঁপল। কেমন করে বলল,
রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৩
-“মানে?”
শুভ্র এবার চরম বাজে একটা কথা বলল,
-“সব ভুলে যাও অরু। আ’ম স্যরি ফর মাই বিহেভিয়ার।”