লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ৩২

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ৩২
Fatima Fariyal

সূর্যের আলো তখনো পুরোপুরি ফুটে উঠেনি। পূর্ব আকাশে ম্লান কমলা রঙের রেখাগুলো ধীরে ধীরে গলে মিশে যাচ্ছে ধূসর মেঘের সাথে। পাহাড়ি গাছ এবং মাটির সোঁদা গন্ধ মিলেমিশে এক অন্যরকম মন-মুগ্ধকর ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকছে। চারদিকে কুয়াশার মতো মেঘে ঢেকে আছে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ঘাট। আবহাওয়ায় কেমন শীতল প্রভাব! রিদির এক মূহুর্ত মনে হলো সে কোন মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। ছাদ খোলা লাল গাড়িতে দাঁড়িয়ে পাখির ডানার মত দু’হাত মেলে চোখ বন্ধ করে সেই শীতলতা অনূভব করতে লাগলো। তার সিল্কি চুলগুলো বাতাসে নেচে গিয়ে বারবার উড়ে এসে পড়ছে চালকের আসনে বসে থাকা আহাদের মুখে। এতে আহাদ বিন্দু মাত্র বিরক্ত হচ্ছে না বরং সে তার প্রেয়সীর সেই অদ্ভুত কোমল মুখের দিকে বারবার তাকিয়ে দেখছে। রিদির সেই বাচ্চামো দেখে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেলে যায়।

গতকাল রাতে যখন কাউকে কিছু না জানিয়ে আহাদের হাত ধরে পালিয়ে এসেছে, তখনও রিদি জানেনা তাদের গন্তব্য কোথায়। আহাদকে কয়েকবার প্রশ্ন করেছে, তবে সে সাবধানতার সাথে এড়িয়ে গেছে! কারন সে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তার প্রেয়সীকে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তারা প্রাইভেট বিমানে করে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়!
চট্টগ্রামে আহাদের পুরনো বন্ধু তুহিন আগে থেকেই সব ব্যাবস্থা করে রেখেছিলো। বিমান বন্দর থেকে বের হতেই তুহিনের সাথে দেখা হয়। তুহিন একটা ছাদ খোলা লাল গাড়ির ব্যাবস্থা করে আর সেটা নিয়েই তারা বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অজানা গন্তব্যের কৌতহলে রিদি দু’চোখের পাতা এক করতে পারনি। অথচ এখন রিদিকে দেখলে বুঝাই যায় না, যে সে নির্ঘুম ছিলো। তাকে দেখলেই বোঝা যায়, সে কতটা আনন্দের সাথে উপভোগ করছে এই মেঘে আছন্ন সূর্য উদয়ের মূহুর্ত। আহাদ শুধু মুগ্ধ নয়নে তার প্রেয়সীকেই দেখছে।
একসময় গাড়ি এসে থামলো নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিচে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে আছে মেঘের সমুদ্র, যেন অসীমতার ক্যানভাসে সাদা তুলোর আঁচড়। জায়গাটা তখন লোকালয় শূন্য, তেমন কোন পর্যটকদের ভীড় নেই বললেই চলে। রিদি গাড়ি থেকে নেমে নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলো পাহাড়ের প্রান্ত পর্যন্ত। এক প্রান্তে গিয়ে আবারও পাখির ডানার মতো দু’হাত মেলে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলো। আহাদ দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে। রিদির সেই দৃশ্য তার নিঃশ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। ওর কালো চুলের গুচ্ছ বাতাসে উড়ছে, সূর্যের আলোয় মুখটা যেন আলোকিত হয়ে উঠেছে। তাকে দেখে আহাদের মনে হলো, মেঘের রাজ্যে কোন ডানা কাটা পরি মেঘ বিলাস করছে। সে ধীরেধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে রিদির কোমর জড়িয়ে ধরলো, থুঁতনি ঠেকাতেই গরম নিঃশ্বাস ছুঁয়ে গেল রিদির ঘাড়ে। রিদি প্রথমে একটু চমকে যায় কিন্তু পরবর্তীতে আহাদের উপস্তিত বুঝতে পেরে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। আহাদ প্রশান্তির নিশ্বাষ ফেলে মৃদু স্বরে ডাকলো,

“রিদি।”
রিদি চোখ বন্ধ রেখেই জবাব দেয়, “হুমম।”
আহাদ রিদির ঘাড়ে চিবুক ঠেকিয়েই বলে উঠলো,
“তুমি জানো আমি তোমায় কেন এই মেঘের রাজ্যে নিয়ে এলাম!”
কিছুটা বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো রিদি, “কেন?”
আহাদ রিদির ডানার মতে মেলে ধরা হাত দুটো নিজের হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে নিলো। অতঃপর অদ্ভুত মাতাল স্বরে বলে উঠলো,
“এই চলন্ত মেঘের ভেলাকে; এই অনন্ত আকাশকে, আমার প্রেয়সীর জলন্ত রুপ ছুঁয়ে দেখাতে চেয়েছিলাম! যেন প্রকৃতি খুব কাছে দেখতে পায়, আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।”
আহাদের মুখে নিজের সামান্য এতটুকু প্রশংসা শুনেই লাজ বরন হলো তার মুখ, ধীরে নিজেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে আহাদের চোখে দৃষ্টি গেঁথে দিয়ে প্রশ্ন করলো,

“ভালোবাসেন আমাকে?”
আহাদ হাসলো, একরকম দুষ্টু কোমলতায় আওড়ালো,
“সন্দেহ আছে কোনো?”
“বলেননি তো কখনো!”
আহাদ হেস্কি স্বরে বললো,
“ভালোবাসলেই মুখে বলা টা কী জরুরী? এই যে আমার হৃদয় দিয়ে ছুঁয়ে দেখার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা! এটা কি কম পরে যাচ্ছে?”
রিদি চিবুক ঠোঁট উল্টে অভিমানের স্বরে বললো,
“তবুও, আমার কী সেই শব্দটা শোনার ইচ্ছে জাগতে পারে না!”

আহাদ মূহুর্তখানেক নীরব তাকিয়ে রইলো সেই অভিমানি মুখটার দিকে। অতঃপর ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসলো, ধীরেধীরে রিদির দিকে তাকিয়েই পিছু হেটে গিয়ে দাঁড়াল মাঝ বরাবর। আকাশের দিকে মুখ তুললো, অতঃপর হঠাৎই ধনুকের মত তার কন্ঠ স্বর ফেঁটে পরলো পাহাড়ের বুক চিরে,
“আই লাভ ইউ রিদিইই! আই লাভ ইউ! আই লা-ভ ইউউউউ!”
তার সেই শব্দ পাহাড়ের বুকে প্রতিধ্বনিত হয়ে বাতাসের সাথে ফিরে আসলো। রিদি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহাদের পাগলামো দেখে। শুধু রিদিই নয়! দূরে থাকা দু-চার জন পর্যটক, তারাও ঘুড়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। রিদি কিছুটা লজ্জিত আবার কিছুটা আনন্দিত হলো। চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো তার, সে ছুটে গিয়ে আছড়ে পরলো আহাদের বক্ষস্থলে। যেনো নিজের লাজ মাখা মুখটা লুকাতে চাইছে! আহাদ তাকে নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে ফিসফিস করে বললো,

“আর বলতে হবে?”
রিদি শুধু না সূচক মাথা নাড়ালো। একটু নীরবতার পর
রিদি আলতো করে সরে গিয়ে বসলো পাহাড়ের ধারে ঝুলন্ত দোলনায়। আহাদ পেছন থেকে এসে দোলনাটা ধীরে ধীরে দুলিয়ে দিতে লাগলো। বাতাসে রিদির গাঢ়ো নীল রঙের ওড়নার কোণ উড়ছে, মেঘের পরতগুলো যেন তাদের ঘিরে নরম চাদরের মতো জড়িয়ে ধরছে। সব মিলিয়ে মূহুর্তটা দুজনের মাঝখানে প্রকৃতির নীরব ভালোবাসা আর মেঘে ঢাকা এক টুকরো অনন্ত সকাল হয়ে মিলিয়ে গেলো।

সকাল সকাল মীর হাউজের ডাইনিং টেবিলে আজ অনেক দিন পর সবাই একত্রে নাস্তা করতে বসেছে। ব্যাস্ততার কারনে যে যার মত নাস্তা করে বেড়িয়ে যেতো, কিন্তু আজ আবার সবাই একত্র হয়েছে। তবুও দুই ভাই-বোন আহাদ আর আহিয়া অনুপস্থিত। আমজাদ মীর সবার দিকে এক ঝলক দেখে নিয়ে হাতের চায়ের কাপটা মৃদু শব্দ করে টেবিলে রাখলেন। আসফাক মীরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
“আসফাক, তোর গুণধর ভাতিজা কই!”
আসফাক চায়ের কাপ থেকে চুমক সরিয়ে হালকা বিরক্তি কন্ঠে বললেন,
“আশ্চর্য! আমি কী করে জানবো?”
“কেনো জানবি না? তার হাড়ির খবর তো সব তুই রাখিস! তাহলে এটা জানিস না কেনো?”
“না ভাইজান! সব জানায় না। তোমার ছেলে যতটুকু জানানোর প্রয়োজন ততটুকই জানায়। বাকিটা তো আমি লুকিয়ে খোঁজ খবর রাখি।”

“তাহলে এখন রাখছো না কেনো?”
“এখন তো তার সঙ্গী আছে। আমি অযথা আর খাটতে যাবো কেনো?”
আমজাদ মীর ভাইয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে নিলো। এমন সময় হালিমা বেগম রান্নাঘর হতে ব্যাস্ত পায়ে আদিবার টিপিনবক্স নিয়ে হাজির হলো। আফরোজা শেখ মুখ তুলে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“হালিমা, আহাদ কোথায়?”
হালিমা বেগম টিপিনবক্সের ঢাকনা লাগিয়ে আদিবার ব্যাগে রাখতে রাখতে বললেন,
“আহাদ কোথায় সেটা তো জানি না আপা! তবে ও বাড়ি থেকে সকাল সকাল রিদিতার মা ফোন করেছিলো।”
আফরোজা শেখ খানিকটা ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
“রিদিতার মা ফোন করেছিলো? কেনো?”
“রিদিতা নাকি বাসায় নেই। গতকাল মধ্যরাতে নাকি তানভীর ওকে বাসা থেকে বেড় হতে দেখেছে। এরপর থেকে মেয়েটা উধাও!”

আসফাক মীর আচমকা শব্দ করে হেসে উঠলেন। যেটা ছিল বিদ্রুপ মেশানো হাসি। হালিমা বেগম কিন্চিৎ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“এভাবে হাসছো কেনো?”
আসফাক মীর হালকা ভঙ্গী করে বললেন,
“হাহা… বোঝা হয়ে গেছে আমার!”
আফরোজা শেখ কিছুটা কপাল গুঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে,
“বোঝা হয়ে গেছে মানে? কী বুঝেছো?”
আসফাক কিছু বলার আগেই আমজাদ মীর নিজের চায়ের কাপটা ঠেলে দিলেন সামনে। গলায় একরকম কঠোর সুর,
“কী বুঝবে আর! যেহেতু্ দুজনেই উধাও, এর মানেটা তো পরিষ্কার। তোমার আদরের ছেলে তোমার আদরের বউকে নিয়ে পালিয়েছে।”

আফরোজা শেখের দৃষ্টি স্থির হয়ে রইলো স্বামির দিকে। বিচক্ষণ আফরোজা শেখ বুঝতে পারলেন, এসব তার পাগল ছেলেরই কান্ড। কাউকে না জানিয়ে সোজা বউ নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু এমনটা করার কী আছে সেটা বুঝলেন না। একটু নীরবতার পর আহিয়াকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখা গেলো। এতক্ষণ আদনান চুপচাপ থাকলেও এবার নড়চড়ে উঠলো। পেশী টানটান হয়ে গেলো, শিড়দাড়া সোজা করে বসলো। আড় চোখে তাকালো আহিয়ার ভঙ্গুর মুখের দিকে। আহিয়া তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেলো, এক নিঃশব্দ অনীহা নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে তুলে সোজা মূল দরজার দিকে হাঁটলো। তখনই আমজাদ মীরের কড়া কন্ঠ স্বর ভেসে এলো,

“কোথায় যাচ্ছো?”
আহিয়ার পা থেমে যায়, ঘুড়ে বাবার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো,
“ভার্সিটি।”
“নাস্তা করে যাও।”
“এখন ইচ্ছে করছে না বাবা। বাহিরে থেকে খেয়ে নিবো পরে।”
“ঠিক আছে তাহলে, যাও।”
এমন সময় আফরোজা শেখ বললেন,
“আজকে তোমার ড্রাইভার আসবে না। ছুটি নিয়েছে। তুমি বরং আদনানের সাথে যাও।”
আহিয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই আদনানের দিকে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বললেন,
“আদনান তুমি তো এখনই বেড় হবে। যাওয়ার পথে আহিয়াকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিও।”
আদনান গভীর ভাবে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বাধ্য ছেলের মত সংযত গলায় বললো,
“ঠিক আছে ছোট আম্মা।”

এই বলে আদনান চেয়ার উঠে দাঁড়াল। পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের সোজা বাহিরে চলে গেলো। আহিয়া কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। এই মূহুর্তে তার এক বিন্দু পরিমানও ইচ্ছে নেই আদনানের সামনে যাওয়ার। তবুও বাধ্য হয়ে ধীরেধীরে তার পিছু গেলো। আদনান গাড়িতে এসে আগে থেকেই বসে রইলো। আজকে আর আগের মত দরজা খুলে দাঁড়াল না। আহিয়ার বুকটা কেমন ভাড়ী হয়ে গেলো। হাহাকার করে উঠলো ভীতরটা, নিজেকে কোন রকম সামলে দরজা খুলে পিছনের ছিটে বসলো। অন্যবারের মত আদনান এবার আর বললো না,
“আমি কী তোর ড্রাইভার? সামনে এসে বস।”

আহিয়া এতেও নিরাশ হলো কিছুটা, নীরবতা ভারী হয়ে ঝুলে রইলো গাড়ির ভেতর। লুকিং গ্লাসে আদনানের চোখ আটকে রইলো আহিয়ার নিস্তব্ধ মুখখানার দিকে। তার দৃষ্টি স্থির, শূন্যে তাকিয়ে আছে। গতকাল রাতের ঘটনা মনে পরতেই আবারও চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। লুকিয়ে মুছে নিলো চোখের কোনের চিকচিক করা অশ্রু বিন্দু। আদনান সবই দেখেছে, তবুও কিছু বলে শান্তনা দেয়ার ভারসাম্য তার ছিলো না। লুকিং গ্লাসটা হাত দিয়ে আহিয়ার মুখের দিক থেকে সড়িয়ে নেয়। অতঃপর গাড়ি স্টার্ড করে সোজা বাড়ির গেট পেড়িয়ে বেড়িয়ে যায়।
গাড়ি যখন ভার্সিটির গেটে থামলো আহিয়া তখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। পুরো পথে একে অপরের সাথে একটা শব্দও বলেনি। আদনান আবার লুকিং গ্লাস বাঁকিয়ে তার দিকে করলো। নীরবতা ভেঙ্গে আয়নার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

“চলে এসেছে, এবার যেতে পারিস।”
আহিয়ার যেনো ধ্যান ভাঙলো। আর দেরি না করে গাড়ি থেকে নামতে উদ্যত হয়। তবে কিছু একটা ভেবে থেমে গিয়ে আদনানের পিঠের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“থ্যাংক ইউ! আর সরি, আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করে আবার এদিকটায় আসতে হলো। আম্মু বলেছিল বলে আসলাম তা না হলে টেক্সি কিংবা রিক্সায় আমি একাই আসতে পারতাম।”
আহিয়ার প্রতেকটা কথা আদনানের গায়ে কাঁটার মত বিঁধল। মনে হলো, আহির কাছে সে খুব অচেনা কোন ব্যাক্তি। যাকে লিফট দিয়েছে বলে এখন তার শুকরিয়া আদায় করছে। আদনান কিছু বলার আগেই আহিয়া গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়। দ্রুত পায়ে হেটে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মিলিয়ে যায়। আদনান সেদিকে তাকিয়ে পিছনের সিটে মাথা হেলিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে আওড়ায়,

“তোকে ছোঁয়া অসম্ভব আহি! কিন্তু ভিষন ভাবে অনুভব করাটা তো অসম্ভব কিছু নয়। আমি না হয় তোকে আর তোর অভিমানগুলোকে হৃদয় দিয়ে অনূভব করে যাবো।”
তার ভিতর থেকে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ভার্সিটির সামনে থেকে বেড়িয়ে ব্যাস্ত শহরের সাথে মিলিয়ে যায়।

সন্ধা তখন আনুমানিক ছয়টা। নীলাচল পাহাড়ের বুক বেয়ে সূর্যের শেষ আলো নামছে ধীরেধীরে। মেঘের ভেতর আলো-ছাঁয়ার খেলায় চারদিক যেন এক রহস্যে মগ্ন।পাহাড়ের বাতাসে শীতলতা আছে, তবুও সেই হালকা ঠাণ্ডা যেন কেমন এক কোমল উষ্ণতা ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজনকেই।
দিন শেষে তারা পৌঁছাল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলগিরি রিসোর্টে। সেখানে তুহিন আগে থেকেই আহাদের কথামত মেঘদূত নামের কটেজটি তাদের নামে বুকিং করে রেখেছিল। কাঠের তৈরি আর উষ্ণ ও নান্দনিক ইন্টেরিয়রের মেঘদূত নামের কটেজটি নীলগিরির সবচেয়ে রোমান্টিক কটেজ। এখান থেকে পাহাড়ের সারি আর মেঘের স্রোত স্বর্গের মত দেখা যায়। আহাদ আর রিদি সারাদিনে বান্দরবানের আরো বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘুড়েছে। নীলাচল থেকে সূর্য উদয়ের মূহুর্ত উপভোগ করার পর তারা গেলো শৈলপ্রপাত, সেখানে শীতল ঝর্ণায় কিছু সময় কাটানোর পর যায় চিম্বুক পাহাড়ে। এরপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে তারা আসে নীলগিরি। সেখানে একসাথে সূর্যাস্ত দেখা শেষে করে। অতঃপর যখন নীলগিরি রিসোর্টে আসে তখন সেখানকার দুইজন স্টাফ এবং ম্যানেজার তাদের মেঘদূত কটেজে নিয়ে আসে।

একজন স্টাফ এগিয়ে এসে আগে দরজা খুলে দিল। আর দরজা খুলতেই চোখে পরে কটেজের ভিতরের রোমাঞ্চকর দৃশ্য। মোমবাতির মৃদু হলদে আলোয় ঘরটা জ্বলমল করছে। শুভ্র বিছানাজুড়ে ছড়ানো গোলাপের পাপড়ি, মেঝেতেও ছড়ানো লাল পাপড়ির রেখা যেন পথ দেখাচ্ছে শয্যা পর্যন্ত। সাদা পর্দার পাশে ঝুলছে ছোট ছোট বল-আকারের বাল্ব, বারান্দার দিকে তাকালে মনে হয়, যেন তারা-মাখা কোনো রাতকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
রিদি এক পা ভেতরে দিয়েই থমকে গেলো। মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো, বুকের ভেতরটা কেমন জানি অজানা অস্বস্তিতে ভরে গেল। তার মনে পড়লো, তাদের বিয়ের রাতও এমনই ছিলো, বরং এই ঘরটা যেন তার চেয়েও বেশি আলোকিত, বেশি অন্তরঙ্গ। এটা দেখে রিদি একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিল। আহাদ আড় চোখে তাকাল তার কাঁধ ঘেঁষে থাকা প্রেয়সীর দিকে। তাকে লজ্জায় গুটিয়ে যেতে দেখে ওষ্ঠজোড়া চেপে মুখ লুকিয়ে হেসে ফেললো। ম্যানেজার অতি নমনীয় কন্ঠে বললো,

“স্যার, মি. তুহিন আমাদেরকে জানিয়েছে আপনারা নবদম্পতি। আপনাদের কটেজটা যেনো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি। তার কথা মত আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।”
আহাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, “গুউউডড।”
“আপনার পছন্দ হয়েছে স্যার?”
আহাদ বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে চোখ টিপে দিলো,
“পারফেক্ট।”
ম্যানেজার তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে হালকা হাসলো। মাথা নত করে সম্মানের সহিতে বললো,
“ঠিক আছে স্যার! কোন দরকার পরলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমরা আসছি, হ্যাভ এ গ্রেট ডে স্যার, ম্যাম!”

আহাদ চোখের ইঙ্গিতে সম্মতি দিলো। চাবির রিং আহাদের হাতে দিয়ে সবাই সেখান থেকে চলে যায়। আহাদ দরজাটা আরেকটু মেলে ভিতরে প্রবেশ করে। একটু ভঙ্গিমা করে চিবুকে আঙুল বুলাতে বুলাতে ভালো করে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো রুমের সাজ সজ্জা। হঠাৎ খেয়াল করল রিদি ভিতরে আসছে না, সে ঘাড় মুড়িয়ে তাকায় পিছনে। রিদি গালির ভিতরটা কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আহাদ নির্লিপ্ত স্বরে বলে উঠলো,
“এই যে রিদি রানি! আপনাকে কী ভিতরে আসার জন্য আলাদা করে আমন্ত্রণ করতে হবে?”
আহাদের কথায় রিদি চোখ পিটপিট করে তাকায় তার দিকে। তবে একটু চুল পরিমানও নড়লো না। আহাদ তার ভিতরের দ্বীধা বুঝতে পারলো, এগিয়ে এসে তার হাত ধরে ভিতরে আনতে চাইলে রিদি এক পা পিছিয়ে গেলো। আহাদ এবার বিরক্ত হলো,

“কী সমস্যা? ভিতরে আসো।”
রিদি মাথা না সূচক নাড়ালো। আহাদ এবার আরো খেপে গেলো, বিরক্তি গলায় বললো,
“রিদি আমি ক্লান্ত! প্লিজ কোন ঝামেলা করো না। ভিতরে আসো।”
রিদি এবার আহাদের দিকে সরাসরি তাকালো। আসলেই অনেকটা ক্লান্ত লাগছে তাকে, গতরাত থেকেই তো কোন বিশ্রাম পায়নি। সে নিজেও ক্লান্ত! তাই আহাদের কথায় ছোট ছোট পা ফেলে ভিতরে আসে। পিছন থেকে আহাদ ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। সেই শব্দে কিন্চিৎ কেঁপে উঠে রিদি। আহাদ কর্নারের ব্রাউন সোফায় ভাড়ী শরীরটা এলিয়ে দেয়। রিদির দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে,

“তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। এরপর আমি যাবো।”
রিদি আমতা আমতা করে বললো,
“আমি তো কোন জামা-কাপড় নিয়ে আসি নি। কী করে..”
আহাদের চাহনি দেখে তার কথা বন্ধ হয়ে গেলো। আহাদ রিদির দিকে তাকিয়ে উঠে যায় অন্য কর্নারে থাকা পিত্তি কালারের লাগেজের দিকে। লাগেজের জিপার খুলে সেখান থেকে একটা লাল রঙের চুড়িদার আর তোয়ালে এনে রিদির হাতে দিয়ে বললো,

“আহাদ রাজা কাঁচা কাজ করে না! সব প্লানিং করেই করে।”
রিদি কিছুটা অবাক হলো, এসবের ব্যাবস্থা কখন করলো এই লোকটা? আহাদের আঙুল স্পর্শ করতেই ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠলো। কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে গেলো। আহাদ হালকা হেসে মাথা নেড়ে আবার সোফায় বসল। পরবর্তিতে চোখ বন্ধ করে নেয় কিছুক্ষণের জন্য। বাইরে হাওয়া বইছে, কটেজের ছোট বাতিগুলো দুলছে।

ততক্ষণে রিদি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে আসে। ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলে সেদিকে তাকায় আহাদ। রিদির সেই ভেজা স্নিগ্ধ মুখ দেখে ভিতরটা কেমন করে উঠলো তার। মাথা ঝাঁকিয়ে আবার তাকাতেই চোখ পড়লো কোমর অব্ধি চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। সামান্য কপাল গুছিয়ে এলো তার, হুড়মুড়িয়ে উঠে লাগেজ থেকে হেয়ার ড্রায়ার বেড় করে রিদিকে টেনে নিলো নিজের কাছে। তার চুকগুলোকে ধীরেধীরে ড্রায়ারের সাহায্যে শুকিয়ে দিতে লাগলো। রিদি চোখ কপালে তুলে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আহাদের চোখে রাগ নেই আছে যত্ন, অধিকার, ভালোবাসার নিঃশব্দ ভাষা। আহাদ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
“এখানকার আবহাওয়া এমনিতেই ঠাণ্ডা, তার উপর যদি চুল এমন ভিজে থাকে তাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। একটু কেয়ারফুল হতে পারো না?”

“আমার কিছু হবে না। অভ্যেস আছে।”
“আচ্ছা?”
“হুম।”
আহাদ চোয়াল শক্ত করে রিদির হাতে ড্রায়ারটা ধরিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। রিদি আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে রইলো, বুঝতে পারলো না হঠাৎ করে তার আবার হলো টা কী? সে তো ভুল কিছু বলেনি? তাহলে এমন রাগের কারনটা কী?

প্রায় আধ ঘন্টার বেশি হবে, আহাদ এখনো বেড় হচ্ছে ওয়াশরুম থেকে। রিদি জানতো না পুরুষ মানুষের শাওয়ার নিতে এত সময় লাগে। অনেক্ষন অপেক্ষার পর অধৈর্য হয়ে সে কটেজের বারান্দার দিকে যায়। একটা দোলনা আছে বারান্দায়, রিদি সেখানে গিয়ে বসতেই দোলনাটা মৃদু দুলতে লাগলো। সেখান থেকে রাতের পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হলো সব ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে। ফুড়ফুড়ে সুন্দর বাতাস এসে রিদির শরীরটা শীতল করে দিলো। কানে আসে পাতার মৃদু শব্দ আর দূরের পাহাড়ি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সে চোখ বন্ধ করে বাতাসটা গভীরভাবে অনুভব করলো, যেন পাহাড়ের হৃদয়ের স্পন্দন শুনছে। আকাশে চাঁদ আছে ঠিকই, কিন্তু মেঘে ঢাকা পড়েছে। ঝাপসা আলোতে সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগে। সে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো, যেন মেঘটাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। তার আঙুলের ডগায় বাতাসের শিরশিরে স্পর্শ। ঠিক তখনই তার পিছনে ভেসে এলো গভীর, ভারী এক শ্বাসের শব্দ। সে বুঝতে পারলো আহাদের উপস্তিতি। রিদির বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো। পেছন ফিরে তাকাতে চাইল, কিন্তু পারলো না। পরমুহূর্তেই আহাদের হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে এল, তার কোমরটা জড়িয়ে ধরলো। রিদির পিঠ গিয়ে ঠেকলো আহাদের বুকের সঙ্গে। রিদির শরীর কেমন শিরশির করে উঠলো তার ছোঁয়ায়। রিদির ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে হেস্কি স্বরে ডাকলো,

“রিদি।”
রিদির ঠোঁট শুকিয়ে গেলো। কাঁপা গলায় উত্তর দিলো,
“হুম…”
আহাদ রিদির পিঠে নাক ঘষে গন্ধ নিলো, অতঃপর বললো,
“আমার ঠাণ্ডা লাগছে… ভিতরে চলো।”
রিদি আরো কেঁপে উঠলো, বললো,
“আপনার ঠাণ্ডা লাগলে আপনি যান… চা খান, কফি খান… আমায় কেন ডাকছেন?”
আহাদ নেশালো গলায় বললো,
“এই ঠাণ্ডা চা কিংবা কফিতে যাবে না।”
“তাহলে?”
“উষ্ণতা প্রয়োজন। চলো ভিতরে যাই।”
এই বলে রিদির হাত ধরে টানলো। কিন্তু রিদি আতকে উঠে বললো,
“না.. নাহ!”

আহাদ ভরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে?”
রিদি মাথা নত করে মিনমিন করে বলে,
“আ স লে… আমার খু.. খুদা লাগছে।”
মূহুর্তেই আহাদে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁতকপাটি দিয়ে বললো,
“এমন একটা মূহুর্তে তোমার খিদে পেয়েছে?”
রিদি চিবুক নামিয়ে উপর নিচ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আহাদের রাগে তার বাদামি চোখ জোড়া লাল হয়ে গেলো। ফুঁসে উঠে কর্কশ গলায় বললো,
“একটা থাপ্পড় খেলে অটোমেটিক্যালি খিদে চলে যাবে তোর। বজ্জাত বেডি!”
আহাদের গর্জনে রিদি আরো ভরকে গেলো। বারান্দার কাঠের একটা অংশ আঁকড়ে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে। আহাদ এগিয়ে এলো আরও কাছে, তার কণ্ঠ যেন বজ্রের মতো গর্জে উঠলো,
“চলো ভিতরে চলো!”

রিদি স্থির। নড়লো না একচুলও। একইভাবে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আহাদের ক্রোধ এবার চরমের উর্ধে পৌঁছে গেলে। কটমট করে তাকিয়ে বললো,
“তোর কাছে দু’টা অপশন জানু! হয় ভিতরে যাবি, না হয় এখান থেকে নিচে ঝাপ দিবি। বল কোনটা?”
রিদির শরীর কেঁপে উঠলো। তারা এখন পাহাড়ের চূড়ায় আছে আর এখান থেকে পরলে তো তার অস্বিত্বও থাকবে না। ভয়ে ভয়ে তাকালো নিচের দিকে, তাকাতেই মনে হলো তার নিচে শুধু ভয়ংকর অন্ধকার। সেই অন্ধকার যেন তাকিয়ে আছে তাকে গিলে ফেলার অপেক্ষায়। আহাদ এগিয়ে এসে রিদির ঘাড় ধরে সামান্য ঝুঁকিয়ে বললো,
“দিবো, দিবো.. ফেলে দিবো?”
“না, না.. নাহ! যাবো তো, আপনার সাথে ভিতরে যাবো।”

রিদি আহাদের সাদা শার্টের বুকের অংশ খাঁমচে ধরে রেখেছে। বুক দ্রুত উঠা নামা করছে আতঙ্কে, তবে এই আতঙ্ক নিচে ফেলে দিবে বলেছে সে জন্য? নাকি অজানা অযহ্য সূচনার জন্য! বুঝতে পারলো না। আহাদ এবার তাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বক্ষস্থলে এনে ফেললো। তাদের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি সমমান তালে বাজতে লাগলো। তখনই এক ঝাপটা বাতাস এসে সব কিছু এলোমেলো করে দিলো। আচমকা রিদিকে কোলে তুলে নিলো সে। তার কপালে মৃদু ঠোঁটের ছোঁয়া রাখলো। কপালে কাপল ঠেকিয়ে রাখলো কয়েকমূহুর্ত, দুজনের নিশ্বাষই ভাড়ী! আহাদ আরেকটু বেশামাল হতেই রিদি মিয়িয়ে গেলো।

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ৩১

মুখগুজে রাখলো আহাদের বুকে। কান পেতে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো সেই তীব্র ধুকপুকানির শব্দ। সেখানে কেবল ভালোবাসা, ভয় আর আকাঙ্ক্ষার এক অদ্ভুত মিশ্র সুর। আহাদ তাকে নিয়ে ধীরেধীরে ভিতরে এসে পর্দা টেনে দিলো। যেনো নিজেদের এই একান্ত মূহুর্ত আড়াল করে দিয়েছে প্রকৃতি থেকে। বাইরে এখন শুধু বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। পাহাড়, মেঘ আর চাঁদ, সব মিলে তাদের দুজনকে ঢেকে রাখলো নিজেদের নরম, নিঃশব্দ আলিঙ্গনে।

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ৩৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here