শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪২ (২)
তাসনিম জাহান রিয়া
রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার শুধু জানালা দিয়ে এক ফালি রোদ এসে শ্রেয়সীর মুখে আঁচড়ে পড়ছে। শ্রেয়সী নিজের হাত থেকে অনুপমের দেওয়া রিংটা ছুঁড়ে মারে। অতঃপর ধারালো ছুরি দিয়ে হাতের শিরার ওপর একটা টান দেয়। পরপরই রুমের দরজা খোলার শব্দ হয়। অনুপম রুমে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে যায় পায়ের নিচে কিছু পড়ায়। অনুপম পা সরিয়ে রিংটা হাতে তুলে নেয়। রিংটা চিনতে অনুপমের একটু অসুবিধা হয় না। অনুপম মুচকি হাসে। তার জ্ঞান হারানো মেয়ে যে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের ওপর ভীষণ অভিমান করেছে সে বেশ বুঝতে পারছে। অনুপম রুমের লাইট অন করে সামনে তাকাতেই চমকে ওঠে। শ্রেয়সীকে এভাবে দেখবে এটা কল্পনাও করতে পারেনি। শ্রেয়সীকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে। হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। সাদা রঙের টাইলস লাল বর্ণ ধারণ করেছে। অনুপম স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার মাথা কাজ করছে না। অনুপমকে দেখে শ্রেয়সী ঠোঁট এলিয়ে হাসে। শ্রেয়সী খুব আস্তে বলে,
আমার বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছেন বুঝি? বিয়ের দাওয়াত তো খেতে পারবেন না তবে আমার মৃত্যুর পর যে মিলাদ হবে সেখানে পেট ভরে খেয়ে যাবেন কিন্তু।
শ্রেয়সীর কথায় অনুপম দৌড়ে শ্রেয়সীর কাছে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় শ্রেয়সীর গালে। থাপ্পড় খাওয়ার পরও শ্রেয়সী হাসছে। এই প্রথমবার অনুপম শ্রেয়সীর গায়ে হাত তুললো। শ্রেয়সী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।অনুপম শ্রেয়সীকে বার কয়েকবার ডাকে শ্রেয়সী সাঁড়া দেয় না। অনুপম শ্রেয়সীর হাত বেধে শ্রেয়সীকে কোলে তুলে দৌড় দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঘন্টা দুয়েকের ব্যবধানে অনুপম আর শ্রেয়সীর বিয়ে হয়ে গেলো। হসপিটালে রোগী তুলে কাজি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে বিয়ে করার জন্য। দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কারণে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। শ্রেয়সী একটু ঠিক হতেই অনুপম বিয়ে করার জন্য জেদ ধরে বসে। এই কারণে হসপিটাল থেকে শ্রেয়সীকে সোজা কাজি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুপম শ্রেয়সীর সাথে একটা কথাও বলেনি। অনুপম আর শ্রেয়সীকে একটা গাড়িতে দেওয়া হয় আর বাকিরা আরেক গাড়িতে বসে। এখন সবাই শ্রেয়সীদের বাসায় যাবে। শ্রেয়সীকে এখন অনুপমদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে না। হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণ কাউকে তো জানানো হয়নি তাই মাস দুয়েক পরে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বড় অনুষ্ঠান করে শ্রেয়সীকে অনুপমের হাতে তুলে দেওয়া হবে। শ্রেয়সীর বন্ধুরা আগেই চলে গেছে বাসর ঘর সাজানোর জন্য। গাড়িতেও অনুপম শ্রেয়সীর সাথে একটা কথাও বলেনি। শ্রেয়সী কথা বলার চেষ্টা করলেও লাভ হয় না। শ্রেয়সী ব্যর্থ হয়ে গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে দেয়।
বাসায় পৌছে সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে। পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বলে যা আয়োজন করা হয়েছিল তা দিয়েই সবার খাওয়া হয়ে যায়। অনুপম অল্প খেয়েই রুমে চলে যায়। শ্রেয়সীকে শ্রেয়া বেগম খাইয়ে দিচ্ছে। অনুপম নিষেধ করায় শ্রেয়সীকে এই বিষয় নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। শ্রেয়সী যখন রুমে এসে দেখে অনুপম আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করছে। পড়নে সাদা আর নীল রঙের মিশ্রণের একটা পাঞ্জাবি। বিছানায় সাদা আর নীল রঙের মিশ্রণের একটা শাড়ি। এই কাপল সেটটা দুজনে পছন্দ করেই কিনেছিল। বিয়ের দিন রাতে পড়বে বলে। দরজা লাগাতে গিয়ে শ্রেয়সী ইচ্ছে করেই মৃদু চিৎকার করে ওঠে। শ্রেয়সীর চিৎকার শুনে অনুপম ধড়ফড় করে ওঠে বসে দৌড়ে শ্রেয়সীর কাছে আসে। উল্টে পাল্টে শ্রেয়সীর হাত দেখতে শুরু করে অনুপম। অনুপম শ্রেয়সীর দিকে তাকাতেই দেখে শ্রেয়সী মিটি মিটি হাসছে অনুপমের আর বুঝতে বাকি থাকে না শ্রেয়সী এটা ইচ্ছে করে করেছে। শ্রেয়সী মিটি মিটি হাসতে বিছানা থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
অনুপম দরজা লক করে এসে বিছানার ওপর বসে। অপেক্ষা করতে থাকে শ্রেয়সীর জন্য। অনুপম বুক স্লেফ থেকে একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করে। অল্প কিছুক্ষণের মাঝে শ্রেয়সী শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। অনুপম শ্রেয়সীর দিকে এক পলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নেয়। বইয়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। ব্লাউজের গলাটা মোটামুটি বড় তার ওপর পিছনের ফিতাটাও খোলা। আঁচল পুরোটা কাঁধের ওপর তুলে দেওয়ায় পেট, পিঠ দেখা যাচ্ছে। অনুপম বুঝতে পারছে শ্রেয়সী ইচ্ছে করেই এমন করছে।
এই অনুপম একটু ফিতাটা বেঁধে দিন না।
শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪২
অনুপমের সারা শরীর শিরশির করে ওঠে। শ্রেয়সী আবারও একই কথা বলায় অনুপম এক পা এক পা করে শ্রেয়সীর দিকে এগিয়ে যায়। উবু হয়ে ফিতা বেধে দেয়। ফিতা বেধে দেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই শ্রেয়সীর পিঠে আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। শ্রেয়সী মৃদু কেঁপে ওঠে। অনুপম নিঃশব্দে হাসে। শ্রেয়সীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
মেয়ে আমাকে জ্বালাতে এসো না নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।