শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৪৯+৫০
Nabila Ishq
আঁধারে রাতের বুকে ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টি এবারে রূপান্তরিত হয়েছে ইলশাগুঁড়ি বৃষ্টিতে। বারান্দার কাঁচের স্লাইড ডোর পরিপূর্ণ ভাবে লাগানো হয়নি।
অর্ধখোলা। হিম শীতল বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ধেয়ে এসে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মিশে যাচ্ছে। পরপর বীভৎস শব্দে বেশ কয়েকটা বজ্রপাত পড়েছে আশেপাশে। ওই সময়টাতে অন্যরকম আকাশের দেখা মিলল। এইযে কেমন মানচিত্রের মতন লম্বা সরু সাদা বেশকিছু দাগ পড়ল আকাশের বুকে। মনে হলো আকাশটা কিছু খণ্ডে বিভক্ত। ক্ষণিকের জন্য দিনের মতন উজ্জ্বলও হলো পৃথিবী। সেই আলোতে অরুর সুশ্রী মুখের স্পষ্ট দর্শন ঘটল। কী দারুণকায়দায় চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে! নিপুণভাবে কাঁপছে ভরাট মসৃণ গোলাপি ঠোঁটজোড়া। এলোমেলো কালো চুলগুলো আশ্চর্য রকমের সৌন্দর্য বহর করে বসেছে। একমুহূর্তের প্রাকৃতিক আলো যেন তন্ময়কে সম্মোহন করে গেল। ব্যাকুল হয়ে ওঠল তার মনপ্রাণ, দৃষ্টি। পা’জোড়া কেমন নিজ গতিতে কয়েকপা এগোল। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব অস্থায়ী ভাবে বিলীন হয়ে গেল।
বিদ্যুৎ লাইন ফল্ট হয়েছিল বুঝি? ট্রান্সফর্মার ফিউজ হয়েছে নিশ্চয়ই। নাহলে হয়তো কন্ট্রোল রুমের সুইচ টিপে দিয়েছে। ব্যস, লাইন সাট ডাউন! আরও কিছুক্ষণ নাহয় থাকতো তেমন। এখনই কেন আসতে হলো বিদ্যুৎ? বাল্বের সাদা রশ্মি অনুভব করেই ঝটপট চোখ মেলে চাইল অরু। লজ্জিত, প্রার্থিত মুখমণ্ডল জুড়ে মুহূর্তেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা, আড়ষ্টতরা ভিড় জমাল। তন্ময়ের নিপুণ দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই পরমুহূর্তে যেন লজ্জায় নেতিয়ে পড়ল। ঠোঁট জোড়া কেমন তিরতির করে কাঁপল। শ্বাসপ্রশ্বাস সহ বুকের ওঠানামার গতিও অস্বাভাবিক দ্রুততম গতিতে চলল। তন্ময় তখনো একচিত্তে চেয়ে দেখল সবটাই। খেয়াল করল খুঁটিনাটি ওর সব হাবভাব, কাজকর্ম। কেমন বিড়ালছানার মতন দৃষ্টি ঘোরাচ্ছে! যেন চুরি করেছে কিছু একটা। অনেকটা মাছ চুরি করে ধরা পড়া বিড়ালের মতন। তন্ময়ের ঠোঁট জুড়ে তখন দুর্লভ হাসির বিচরণ। দুষ্টুমির তাগিদে দু’পা এগুতে-এগুতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
‘কিছু একটার আশায় ছিলি, হুঁ?’
এহেন প্রশ্নে অরুর আশ্চর্যতা সপ্তমে পৌঁছাল। চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে এলো। কোনোরকমে আটকে আসা গলায় আমতাআমতা ভঙ্গিতে বলল,
‘কী? কই! না-না তো। ভ– ভয় পেয়েছিলাম। থান্ডার্স্টর্ম হলো না? এরজন্যই।’
তন্ময় সন্তর্পণে হাসিটুকু গিলে নিয়ে; গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে কয়েক কদম এগোতে নিতেই– সঙ্গে সঙ্গেই অরুও পিছুতে থাকল তালে তাল মিলিয়ে। একপর্যায়ে পিঠ ঠেকল বারান্দার স্লাইডিং ডোরে। তন্ময়ের সুঠোম দেহখানার সম্মুখে প্রায় আড়াল হলো অরুর ছোট্টখাট্টো দেহটি। তন্ময় মাথা ঝুঁকিয়ে কণ্ঠ নামিয়ে– নিচু স্বরে বড়ো চতুরতার সঙ্গে শুধাল,
‘আমি চুমু খাব এই আশায় ছিলি?’
অরু সাথেসাথেই চেঁচিয়ে ওঠে অস্বীকার করে বসে, ‘কখনো না।’
‘চোখমুখ বন্ধ করে অমন কামুকে এক্সপ্রেশনস দিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছিলি তাহলে?’
অরু আহত চোখে চেয়ে রয়। মিনমিনে সুরে জিজ্ঞাস করে, ‘কেমন এক্সপ্রেশনস?’
‘উম– লাইক ইউ আর ইগার্লি ওয়েটিং টু বি কিসড বায় মি।’
অরুর দুর্বল গলার প্রতিবাদী জবাব এলো মিনিটখানেক সময় নিয়ে,
‘ক-কখনো না।’
‘ওহ্, ওখে। তাহলে কি ধরে নিব তুই পছন্দ করছিস না আমার চুমু?’
অরু লজ্জায় স্তম্ভিত হলো, ‘এসব কখন বললাম আমি!’
তন্ময় ভ্রু নাচিয়ে শুধাল, ‘তারমানে পছন্দ করিস?’
‘এহ?’
‘করিস না?’
‘কী!’
কথার মারপ্যাঁচে পড়ে কণ্ঠনালি স্তম্ভিত হলো অরুর। স্বীকার করতেও লজ্জা লাগছে; না করেও উপায়ান্তর খুঁজে পাচ্ছে না! বিপাকে পড়া অরুর মুখটা দেখে আনন্দিত হলো তন্ময়। ফিচেল হেসে ফেলল। সহাস্যমুখে হাত বাড়িয়ে অরু লালচে গাল টেনে দিয়ে সরে এলো। গিয়ে বসল পূর্বের জায়গায়। ল্যাপটপটা খোলা তখনো। কাজে মননিবেশ হওয়া তন্ময়কে দেখে অরু এবারো আশ্চর্য না হয়ে পারলো না। মানুষ কতরকম রূপেগুনে আবদ্ধ! আশ্চর্য! আশ্চর্য! অরু হতাশ নয়নে চাইল হাতে থাকা কফিটার দিক। ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নিতে ডগডগ শব্দে ঠাণ্ডা কফিটাই কয়েক ঢোক গিলে নিলো। ডান হাতে গালটা ডলে নিলো। তন্ময় কফিটা বানিয়েছে বলেই বুঝি এতো ভালো লাগছে?
কফিটা খেতে খেতে আবারো গিয়ে বসল তন্ময়ের সামনে। তন্ময় না তাকিয়েই নিজ কফির মগ তুলে এক ঢোক গিলল। কপাল কুঁচকে এলো মুহূর্তেই। ঠাণ্ডা হয়ে আছে। কফির মগ পাশে রেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘পড়াশোনা নেই? গিয়ে পড়তে বোস।’
‘কফিটা খেয়ে নিই।’
তন্ময় কীভাবে বোঝাবে সামনে ও থাকলে তার কাজে মন বসে না! মস্তিষ্ক চলে না। চোখও স্থির রয় না ল্যাপটপ স্ক্রিনে। ঘুরেফিরে যে সম্মুখে বসা ওকে খুঁজে বেড়ায়!
শাবিহাকে নিয়ে অয়ন শাহজাহান বাড়ি ঢুকল রাতের বারোটা ত্রিশে। মোস্তফা সাহেব লিভিংরুমে শক্ত মুখে বসে আছেন। ঘুমে চোখজোড়া ছোটো হয়ে এসেছে। চায়ের কাপ হাতে তিনি সজাগ থাকার প্রচেষ্টায়। তন্ময় মোবাইল বের করেছিল কেবলই। অয়ন, শাবিহাকে সদরদরজার সামনে দেখেই দাঁড়াল। অয়ন দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে মিইয়ে যাওয়া গলায় জানাল,
‘ভাইয়া, গাড়িটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মাঝরাস্তায়। আমি–’
অয়নের আগাম বাক্য পূর্ণতা পেলো না। কঠিন কণ্ঠে ধমকে ওঠেন মোস্তফা সাহেব,
‘একদম মিথ্যে বলবে না! মিথ্যেবাদী ছেলে। প্রমিজ করে প্রমিজ রাখতে পারো না। তুমি ভবিষ্যতে কী রূপ দেখাবে আমি এখনই দেখছি। কয়টা বাজছে দেখো। কোন ভদ্রবাড়ির ছেলে এতরাত করে বাইরে থাকে?’
অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সাহায্যের আবেদন নিয়ে দৃষ্টি ফেলল তন্ময়ের পানে। তন্ময় চোখে চোখ রেখে আশ্বস্ত করল। চুপচাপ শুনতে থাকার তাগিদা দিলো। অয়ন ভদ্রছেলের মতন মাথা নত করে হবু শ্বশুরের বকাঝকা শুনলো। মোস্তফা সাহেব মিনিটখানেক ভাষণ ঝেড়ে চুপসে গেলেন। তন্ময় এযাত্রায় বলল,
‘শাবিহা! ওপরে যা।’
শাবিহা তড়তড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলে গেল। বাবার ভয়ে ফিরে আরেকটিবার চাইল অবদি না। অয়ন তখনো দাঁড়িয়ে। মোস্তফা সাহেব কড়া চোখে অয়নকে মেপে চলে যেতে উদ্যত হলেন। তন্ময় সদরদরজার দিকে এগুতে এগুতে অয়নের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আয়!’
অয়ন পিছু নিতে নিতে পরিষ্কার গলায় জানাল,
‘ভাইয়া, আমি সত্য বলছিলাম। গাড়ি ব্রেকডাউন খেয়ে বসে যায়। এরজন্যই লেট হয়ে গেল। আমি জেনেশুনে বাঘের খপ্পরে কেন পড়তে চাইব?’
তন্ময় হাসল, ‘আমার বাবাকে বাঘ বলা হচ্ছে, হুঁ?’
অয়ন লজ্জিত গলায় শুধরে নেবার ভঙ্গিতে অস্বীকার করতে উদ্যত হলো,
‘আমি তা মিন করিনি। মানে বলতে চা— ‘
বাগান পেরুতে পেরুতে তন্ময় ওপরে তাকাতেই দেখল অরু দাঁড়িয়ে। অর্ধখন্ডিত চাঁদ দেখছে। বৃষ্টি বন্ধ হতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। শীতল বাতাস ছেড়েছে। চাঁদটা দারুণ সুন্দর ভাবে জ্বলছে। হাত ঘড়িতে বারোটা পঁয়তাল্লিশ! এখনো ঘুমাতে যায়নি? তন্ময় দাঁড়াল। গলা উঁচিয়ে ডাকল,
‘তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কটা বাজে?’
অরু হকচকিয়ে ওঠে হঠাৎ উচ্চকণ্ঠের স্বরে। নিচু তাকাতেই দেখে তন্ময় আর অয়ন দাঁড়িয়ে। অরুকে দেখেই অয়ন হেসে হাত ওঠায়। অরুও হেসে হাত দুলিয়ে শুধায়,
‘কোথায় যাচ্ছেন? আমিও যাব।’
তন্ময় ভ্রু তুলে ফেলে, ‘ফিরে যেন তোকে না দেখি। ঘুমাতে যা।’
অয়নকে নিয়ে তন্ময় বেরোয়। রাস্তাঘাট নিস্তব্ধতায় ঘেরা। কুকুরদল হাঁটছে, চেঁচাচ্ছে। ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তখনকার বিষয়টা নিয়ে তন্ময় এবারে বলে,
‘আমার বাবা ওপরে ওপরে শক্ত হওয়ার মুখোশ পড়ে থাকে। সত্যি বলতে সে খুবই সফট হার্টেড। অত্যন্ত ইমোশনাল। তাকে দেখে এসব বোঝা মুশকিল। তোমায় সে পছন্দ করে। বুঝতে দিতে চায় না। শুধুমাত্র তোমার বয়সটা শাবিহার থেকে কম হওয়াতে ইনসিকুয়্যের অনুভব করছেন। ধীরেসুস্থে মিলিয়ে যাবে আমার বিশ্বাস।’
অয়ন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার তাগিদে বলে,
‘আমি বুঝতে পেরেছি। আমি আরও সতর্ক হব। যথাসম্ভব চেষ্টা করব আংকেলের ইনসিকুয়্যেরিটি দূর করতে।’
‘কিছুই করতে হবে না। আমার বোনকে সুখে রাখো, ভালো রাখো – এটাই একমাত্র চাওয়া আমাদের। ওকে হাসিখুশি দেখা মানেই আমাদের জীবন স্বার্থক। ও তোমায় ভালোবেসে জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেছে। ডু নট লেট হার ডাউন, অয়ন। রেসপেক্ট হার–প্রটেক্ট হার অ্যান্ড লাভ হার প্লিজ।’
অয়নের কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘আই উইল, ভাইয়া। আই উইল! নাহলে তো আপনারা আছেন। হাত পা ভেঙে দেবেন।’
তন্ময় হাসে। হাত উঠিয়ে চাপড়ে দেয় অয়নের কাঁধ। অয়নকে ওদের বাড়ির সামনে এগিয়ে দিয়ে আসে। অয়ন ঢুকতেই তন্ময়ও ফিরে আসে। সদরদরজা লাগিয়ে ওপরে তাকায়। নিপুণভাবে চেয়ে খেয়াল করে অরু লুকিয়ে আছে। চুলগুলো বাতাসে দুলছে। মেয়েটা একদম কথা শোনে না!
শুক্রবার বলতেই ছুটির দিন। শাহজাহান পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য এদিন বাসাতেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একসাথে সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার খাওয়াটা যেনো বাধ্যতামূলক। বাগানে বসে চা খেতে-খেতে আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়াও নিত্যনতুন কোনো বিষয় নয়। সকালের নাস্তায় আজ ছিল পরোটা। পরোটার সঙ্গে রাঁধা হয়েছে—গোরুর ভুড়ি ভুনা, আলু ভাজি , ডিম পোজ। নাস্তা খেয়ে কফি হাতে তন্ময় বাগানে এসে বসেছে কেবলই। ক্ষণিকের মধ্যে একেএকে মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেবও বাগানে এসে বসেছেন। আকাশের হাতে হানি বোটাল। মধু খেতে সে ভালোবাসে। বিশেষ করে সাতসকালে ব্রেকফাস্টের পর খেতে তার দারুণ লাগে। এখনো হানি বোটাল নিয়ে বাগানে উপস্থিত হয়েছে। একটি চেয়ার টেনে বসতে বসতে তন্ময়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,
‘আজকের প্ল্যানিং কী? শুনেছিলাম আজ নাকি অয়নের ফ্যামিলি আসবে? কখন আসবে? জানিয়েছে কিছু?’
তন্ময় নিরুৎসাহিত কণ্ঠে জানাল, ‘সন্ধ্যায় আসবে।’
আনোয়ার সাহেব বড়ো ভাইয়ের পানে চেয়ে শুধাল,
‘ভাইয়া, বাজারসদাই করতে হবে না? এখনই রওনা দিই নাকি? হ্যাঁ, রে তন্ময়! কজন আসবে? জানিয়েছে কিছু?’
‘অয়নের বাবা-মা, বড়ো চাচা, ছোটো মামা-মামি, ভাতিজি আর অয়ন! এ’কজনই আপাতত।’
মোস্তফা সাহেব ছেলের মুখপানে চেয়ে বললেন,
‘কী করব?’
তন্ময় ভেবেচিন্তে জানাল, ‘মা, চাচিদের জিজ্ঞেস করো কী কী রান্নাবান্না করবে! সেই মোতাবেক লিস্ট করে দেক। আমি আর আকাশ গিয়ে নিয়ে আসি।’
ওহি সাহেব উৎসাহিত গলায় বললেন, ‘তোদের যেতে হবে না। আমরাই যাই তিন ভাই। কতদিন বাজার যাই না। ঠিক বললাম তো ভাই?’
মোস্তফা সাহেব মাথা দোলালেন। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে বললেন, ‘ছেলে দুটোও আসুক সাথে।’
তন্ময় আওড়াল, ‘গোষ্ঠী ধরে বাজার করতে যাবা নাকি পুরো বাজারটা তুলে আনতে? আম কনফিউজড!’
জবেদা বেগম যাবতীয় সরঞ্জামের লিস্ট ধরিয়ে দিলেন। লিস্টে নজর বুলিয়ে সেটি ভাঁজ করে পাঞ্জাবি পকেটে ভরে নিলেন মোস্তফা সাহেব।
দু’ভাই আর ছেলেদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সকাল সকাল। অরু অবশ্য সাথে যেতে চাচ্ছিল। তন্ময় চোখ রাঙাতেই দমে গেল। চোখমুখ আঁধার করে ফিরে গেছে। তন্ময় ভাবুক হয়ে পড়ল। চঞ্চল, বাঁচাল, নির্বোধ এই মেয়েটিকে আগাগোড়া জেনেও যেন কিছুই জানা হলো না। নিখুঁত দৃষ্টিতে–প্রগাঢ় হৃদয় ব্যবহার করে কতটুকু বুঝেছে? কতটুকু জানতে পেরেছে? এর পরিপূর্ণ উত্তর তন্ময়ের অজানা। তবে ওর অজানা সব যে সে জানতে চায়। অন্যায় কী? অন্যায় হলেও বা কী? ছোটোখাটো দেহের ওই মেয়েটিকে পা থেকে মাথা অবদি মুখস্থ করতে চাওয়াটা মেন্ডট্যরি। ওর এমন কিছু থাকতে পারবে না যা সে জানে না। বুঝে না!
গতকাল থেকে কালো-কালো মেঘে ঢাকা আকাশটা; এবেলাতে পরিষ্কার হয়ে এসেছে। রক্তিম সূর্যটি আকাশের পূর্বদিক বসে আছে। সূর্যের রশ্মি শহরজুড়ে ভ্যাপসা গরমের সৃষ্টি করছে। বৃষ্টির পরপর এমন তপ্ততা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন। এই গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়েছে তন্ময়। ঘামে পিঠ ভিজে টি-শার্ট শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। কপাল বেয়ে ঘাম গালের পাশ গলিয়ে টপ-টপ করে ঝরছে। মনে হচ্ছে গোসল সেরে বেরিয়েছে কেবলই। মুখটা রক্তিমের চূড়ান্তে। হাতে বাজারের ব্যাগ। ব্যাগ ভর্তি কাঁচাবাজার। ওজন ওয়ালা ব্যাগ নিয়েই হেঁটে-হেঁটে কেনাকাটা চলছে। মোস্তফা সাহেব আড়চোখে একটিবার ছেলের এই দুর্দশা দেখলেন। দেখেই উৎসুক হয়ে পড়লেন। আনচান মনে মুহূর্তেই এগুলেন ছেলের সামনে। ব্যাগভর্তি বাজারটা নিজ হাতে নেওয়ার সামান্য চেষ্টা করলেন। তন্ময় আকস্মিক ডান ভ্রু উঁচিয়ে চাইল। মোস্তফা সাহেব স্বাভাবিক এবং সাবলীল গলায় বললেন,
‘আমি নিই। দে ব্যাগটা।’
আনোয়ার সাহেব বড়ো ভাইকে টপকে তন্ময়ের সম্মুখে চলে এলেন। উদ্যত হলেন তন্ময়ের হাত থেকে ব্যাগটা নেবার জন্যে। সে থাকতে বড়ো ভাইয়া বাজারের ব্যাগ টানবেন? অসম্ভব–
‘আমি নিচ্ছি– আমি নিচ্ছি, ভাইয়া। দে তন্ময়। ব্যাগটা আমিই নিই।’
ওহী সাহেব বড়ো বড়ো চোখে এই দৃশ্য দেখে; তক্ষুনি নিজেও তড়তড়িয়ে এগুলেন। চোখের সামনে বড়ো দুটো ভাই বাজার ব্যাগ টানবেন আর সে ফাঁকা হাতে হাঁটবে? এও সম্ভব? বাম হাতটা কায়দা করে বাড়িয়ে উৎসুক কণ্ঠে বললেন,
‘তন্ময়, তুই আমায় দে ব্যাগটা। ক্লান্ত হয়ে গেছিস। দে —দে।’
আকাশের কপালে চার-পাঁচটা তিক্ত ভাঁজ পড়ল। বিরক্ত চোখে দেখল নিজ পিতা সহ চাচাদের কার্যকলাপ। তার হাতেও তো বড়সড় একটি ব্যাগ রয়েছে। ব্যাগ ভর্তি এটাতেও বাজার। সেও ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে আছে। কই তাকে তো এতো আদিখ্যেতা করা হচ্ছে না! কালো মেঘে ঢাকা মুখটায় যেন অমবস্যা নামল।
চাপা স্বরে ভেঙাল,
‘একেবারে কোলকাতার সিরিয়াল!’
এই অসহ্যকর গরমে তন্ময় বিরক্ত বটে। বিরক্তিতে মুখ বন্ধ। সে ব্যাগটা ডানহাতে শক্ত করে ধরে এগুতে শুরু করল। কোনোপ্রকার কথা বাড়াল না। গরমে ত্যক্তবিরক্ত সে সবাইকে পেছনে ফেলে রেখে এগুচ্ছে। মোস্তফা সাহেব দু’ভাইকে কড়াকড়ি দৃষ্টিয়ে একটিবার পরখ করে নিলেন। নিজেও ছেলের পেছন চললেন। সামনেই কুদ্দুসের কসাইয়ের দোকানটা। দুপুরের আগ দিয়ে দেশীয় তরতাজা গোরু জবা ই করা হয় সরাসরি। ওখান থেকে পাঁচকেজি গোরুর গোস্ত নেওয়া হবে আজকের জন্য। তাহলেই বাজার প্রায়ই শেষপ্রান্তে। লিস্টের সবকিছু ইতোমধ্যে নেয়া শেষ। তন্ময় হাত বাড়িয়ে রিকশা দাঁড় করাল একটা। চোখের ইশারায় আকাশকে বাজারের ব্যাগটা রাখতে দেখিয়ে নিজের হাতেরটাও রাখল। মোস্তফা সাহেব দু’ভাই নিয়ে কুদ্দুসের দোকানের দিক রওনা দিয়েছেন। অদূর হতেই কুদ্দুস বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। শ্যামবর্ণের হ্যাঙলা-পাতলা মাঝবয়সী ভদ্রলোক। চোখমুখ জুড়ে অমায়িকতা। ঠোঁটে দীর্ঘ হাসি লেপ্টে সালাম জানাল চেনাপরিচিত কণ্ঠে। মোস্তফা সাহেব হেসে শুধালেন,
‘তরতাজা গোরুর গোস্ত লাগবে পাঁচ কেজি। গোরু জবা ই দেয়া হয়েছে?’
লাল র ক্ত এখনো কুদ্দুসের হাতে। সে রক্তিম হাত দুটো তুলে দেখিয়ে বিনয়ী হাসল,
‘এখনো হাত জোড়া মাইখা আছে লাল রক্তে। আধঘণ্টাও হয় নাই গোরু কাটছি।’
‘দাও তাহলে পাঁচ কেজি।’
তন্ময় রিকশা গুছিয়ে এগিয়ে এলো। ঝরঝরে গলায় বলল,
‘তুমি চাচ্চুদের নিয়ে উঠে চলে যাও। গোস্ত নিয়ে আমি ফিরছি।’
মোস্তফা সাহেব সহমত পোষণ করলেন না। তিনি চোখমুখ কুঁচকে বিরসমুখে বললেন,
‘এখান থেকে এখানে রিকশায় করে যাব কেন!’
ওহী সাহেব নিজ ছেলেকে পিঠ ঠেলে রিকশার দিক এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘আকাশ যাবে বাজার নিয়ে।’
আকাশ তো একপায়ে রাজি। সে এই তুখোড় গরমে আর হাঁটতে পারবে না। হাঁটতে-হাঁটতে দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তার পক্ষে আর সম্ভব নয় এই বাজারে থাকা। সে চটজলদি উঠে বসল রিকশায়। এদিক-ওদিক না ফিরে রিকশাওয়ালাকে বলল,
‘চাচা, চলুন–চলুন। চটজলদি চলুন।’
টাকা পরিশোধ করে–গোস্তর ব্যাগটা হাত বাড়িয়ে নিলো তন্ময়। বাপ-চাচাদের পায়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলল বাড়ির পথে। ফিরবার পথে চেনাপরিচিত অনেকের সাথে দেখা হলো। মিনিটখানেট থেমে-থেমে ভদ্রতাসূচক কথাও হলো। মোস্তফা সাহেব এখানে-সেখানে একে-ওকে দেখে থামছেন। দু’চারটা কথা বলছেন। ভদ্রসভ্য ভঙ্গিতে তন্ময় সহ তার দুই চাচা তখন মোস্তফা সাহেবের পেছনে দাঁড়িয়ে। রোদের তাপমাত্রা তখন তীক্ষ্ণ। তন্ময় ঘর্মাক্ত বাবার মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বেরোনোর সময় বারংবার বলেছিল ছাতাটা নিতে। কে শোনে কার কথা! গোরুর গোস্ত নিয়ে পৌঁছাতে-পৌঁছাতে দুপুর। মাত্রই যোহরের আজান পড়েছে। সদরদরজার কাছে পৌঁছেই; মোস্তফা সাহেব ছেলের হাত থেকে গোস্তগুলো নিয়ে তাড়া দিলেন,
‘রুমে গিয়ে গোসল করে নে।’
জবেদা বেগম ট্রে করে কয়েক গ্লাস লেবু শরবত নিয়ে আসেন। তন্ময় এক গ্লাস তুলে গিলে নেয় চটপট। বাবার কথামতন ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে ওপরে। অরুর রুমের দরজাটা খোলা। বিছানায় শুয়ে গুনগুনিয়ে ডায়রি লিখছে। এই ডায়েরিটা পূর্বেও দেখেছে তন্ময়। কী এতো লিখে এতে? একবার তার হাতের কাছে এসেও পৌঁছেছিল ডায়েরিটা। ভদ্রতার খাতিরে তখন পড়েনি সে। ভেবেছিল মেয়েমানুষের ডায়েরি; প্রাইভেট কিছু হতে পারে। তার পড়া ঠিক হবে না! তবে এখন তো অরু তার স্ত্রী! পড়া যেতেই পারে। অবশ্যই সে নিজ উদ্যেগে যাবে না চুরি করে পড়তে। তার হাতের কাছে স্বেচ্ছায় এসে যদি ধরা পড়ে– তাহলেই পড়বে। এভাবেও অরুটা তার একদমই বোকাসোকা, সুপার ম্যাসি মেয়েমানুষ। কখন কোথায় কী রাখে ওর মনেই থাকে না! এই ডায়েরি পড়ার সুযোগ নিজেই করে দেবে। শীঘ্রই!
অতিথি আপ্যায়নের জন্য শাহজাহান বাড়ির সকলে তৈরি। অয়ন-রা ঠিকঠাক বলা সময় মতন এসে পৌঁছেছে। মাগরিবের পরপরই। মোট আটজন তারা। মোস্তফা সাহেব সঙ্গে ছেলে, ভাইদের নিয়ে দরজা পর্যন্ত এগিয়েছেন অতিথি আপ্যায়নের জন্যে। অয়নের বাবার সাথে পূর্বপরিচয় ছিলো মোস্তফা সাহেবের। সখ্যতা না হলেও চেনাজানা ছিলো। সেইসূত্র ধরে তাদের কথাবার্তার রাস্তাটা ক্লিয়ার হয়ে গেল। লিভিংরুমে বসেই গল্পগুজব এগুতে শুরু করল সাবলীল ভঙ্গিতেই। পুরুষদের গল্পের মধ্যে আর থাকলেন না, অয়নের মা আর মামি। দুজন উঠে চলে এলেন রান্নাঘরের দিকটায়। সেখানে হুলস্থল কাণ্ড।
জবেদা বেগম, মুফতি বেগম এবং সুমিতা বেগম তখন ব্যস্ততার শিকড়ে। আচমকা তাদের আগমনে জবেদা বেগমের ব্যস্ত হাত দুটো মিনিটের জন্য থামল। মহিলাদের মধ্যে আলাপের কারণ বা যুক্তির দরকার পড়ে আদতেও? মনে হয় না। এইযে মুহূর্তেই পারিবারিক আলোচনায় তারা ব্যস্ত। আলাপে আলাপে অয়নের মা এগুতে চাচ্ছিলেন কাজকর্মে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য। মুফতি বেগম হেসে জানান,
‘কাজকর্ম সব শেষ। এই নাস্তাপানি গুলো লিভিংরুমে নিলেই হবে। ডিনারের প্রেপারেশনও শেষ!’
তন্ময় আর আকাশ এলো ট্রে ভর্তি নাস্তাপানি নিতে। ট্রে দুটো টি-টেবিলের ওপর রাখতেই জবেদা বেগম তন্ময়কে নিচুস্বরে ডাকেন। তন্ময় কাছাকাছি আসতেই তিনি বলেন,
‘একটা মেয়ে হাতের কাছে নেই। সবগুলো ওপরে। গিয়ে বলিস শাবিহাকে একটি শাড়ি পরিয়ে তৈরি করতে।’
দীপ্ত আগ বাড়িয়ে একঝাঁক কোকড়া চুলের মাথা দুলিয়ে বলল, ‘বড়ো মা, আমি যাচ্ছি। ইউ জাস্ট ওয়েট!’
জবেদা বেগম মাথা দোলালেও তন্ময় দোলাল না। সে ভ্রু তুলে কিঞ্চিৎ ভেবেচিন্তে নিজেই পা বাড়াল। দীপ্ত ছুটল তার পিছু। সিঁড়ি শেষে পূর্বদিকের মাথাতেই দেখা গেল অরুকে। উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল।
শুধু একা ও নয়। রুবিও সাথে। তন্ময়কে দেখেই দুটো ছুটে পালাল শাবিহার রুমে। তন্ময় পিছু নিলো। রুমে ঢোকার পূর্বে দরজায় দুটো টোকা মারল। শাবিহা এক কোণেতে লাজুক ভঙ্গিতে বসেছিল। তন্ময়কে দেখেই তড়িঘড়ি করে দাঁড়াল। অরু পাশেই। মিটিমিটি হাসছে। ওর এতো হাসার কারণ কী? উঁকিঝুঁকিরও তো কারণ দেখছে না সে। তন্ময় ভেতরে এসে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে ফেলল,
‘এতো হাসছিস যে?’
অরু মুখে হাত চেপে ফিক করে হেসে ফেলল। হাসার তাগিদে ঠিকঠাক বলতেও পারছিল না। এলোমেলো কণ্ঠে জানাল,
‘শাবিহা আপু লজ্জায় লাল হয়ে আছে দেখুন। কিছুক্ষণ পরপর সিঁড়ির মাথাতে গিয়ে–অয়ন ভাইয়াকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল। একটু —’
শাবিহা একছুটে অরুর মুখ চেপে ধরল। লজ্জায় তার মাথা কাঁটা গেল বড়ো ভাইয়ের সামনে। তন্ময় কাশল ছোটো করে। যেতে উদ্যত হয়ে বলে গেল,
‘শাড়ি পরে রেডি হো। ডাকলে নিচে নেমে আসিস।’
অরু মুখ শাবিহার থেকে ছাড়িয়ে তন্ময়ের পিছুপিছু বেরোল। তন্ময় ওকে টের পেয়ে পদচারণ থামাল। পিছু ফিরে চাইতেই অরু বোকার মত হেসে শুধাল,
‘আজ কয় তারিখ বলুন তো, তন্ময় ভাই!’
তন্ময় ভ্রু তুলল, ‘ক্যালেন্ডার নেই ঘরে?’
অরু পিটপিট করে চাইল। হতাশ হলো বড়ো,
‘আছে কিন্তু– আচ্ছা কিছুই না।’
অরু মাথাটা নত করে ভাবুক মুখাবয়ব ধরে শাবিহার রুমে ফিরে গেল। ও যেতেই তন্ময় মৃদু হাসল। ঘুরিয়েফিরিয়ে ও বোঝাতে চাচ্ছিল সামনে ওর জন্মদিন। তন্ময়ের মনে আছে কী না! অবশ্যই মনে আছে। প্রিয়তমার জন্মদিন মনে না থেকে কোথায় যাবে? ওর জন্মদিন উপলক্ষে এবার একটা ট্যুর দিলে মন্দ হয় না। অরুও খুব ঘুরতে চায়। সিলেট যাবে বলে তার বন্ধুবান্ধব তাকে পাগল করে ফেলেছে। অরুকে সঙ্গে নেবার জন্যে হাজারো রিকোয়েস্ট। তন্ময় ভাবছে রাজি হবে।
একটা বার্থডে সারপ্রাইজও না হয় দেয়া যাবে তখন। তবে তার ভয় তো এক জায়গায়– যা সে কাউকেই বোঝাতে পারে না। বুঝিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না।
শাবিহা অয়নের বিয়েটা প্রায় পাকাপাকি হলো। ডেট ফিক্সড করাটা বাকি রইল। ডেট ফিক্সড করতে অন্য একদিন বসবেন। কথাবার্তার শেষে শাবিহাকে দেখেশুনে ওর গলায় নেকলেস পরিয়ে দিলেন অয়নের মা। রাতের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন তারা। অয়ন একমুহূর্ত থামল। মাথায় শাড়ির আঁচল টানা শাবিহাকে পর্যবেক্ষণ করে দেখল খানিকক্ষণ। মোস্তফা সাহেবের কড়া চোখের সামনে বেশিক্ষণ দেখা সম্ভব হলো না। মাথা নত করে লজ্জিত ভঙ্গিতে বেরিয়ে যেতে হয়েছে বাধ্য ছেলের মতন।
তন্ময় তাদের এগিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছে। অরু লিভিংরুমের সোফাতে বসেছিল। এযাত্রায় আধশোয়া হয়ে আপেল খাচ্ছে। সুন্দর কাজ করা একটি কামিজ পরে আছে। চুলে বিনুনি গেঁথে কাঁধে ফেলে রেখেছে। তন্ময়কে দেখেই আগ্রহী গলায় প্রশ্ন করল,
‘বিয়ের তারিখ কী ডিসাইড করা হয়েছে?’
দীপ্ত জ্ঞানী বয়স্কলোকের হাবভাবে জবাবে বলল, ‘তাড়াহুড়োতে নয়। বরঞ্চ ধীরেসুস্থে এগুনো হবে। আগামী মাসের আগে বিয়ের ডেট পড়বে না। বা হতে পারে এরও পরের মাসে।’
অরু চোখ তুলে চাইল। তন্ময় যেন ওই দৃষ্টি পড়তে পারে। বুঝে ফেলল দৃষ্টিতে কী লেখা। দীপ্তর কথা সত্য জাহির করতেই বলল,
শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৪৭+৪৮
‘বিয়ে দেরি আছে।’
অরু হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আওড়াল, ‘ভেবেছিলাম বিয়ে খেতে পারব এই বুঝি!’
জবেদা বেগম হেসে বলেন, ‘তা তো পারবি। এখন না হলেও পড়ে। নিজের বিয়েও তো খাওয়া বাকি নাকি?’
অরুর মুখ থেকে আপেলটা পড়ে গেল ফ্লোরে। তন্ময়ও খানিক স্তব্ধ হলো বলে!
