শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৯
সুমাইয়া সুলতানা
আগুন কলেজ থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে। একদিন তো অনুমতি ব্যতীত ছুটি কাটিয়েছে জ্বরের জন্য। মিনার কথায় আরও দুই দিন বাড়িয়ে ছুটি নিয়েছে। যদিও আগুন এখন মোটামুটি সুস্থ। শুধু রাতে অল্প জ্বর ছিল। এতেই মিনা অস্থির হয়ে ছেলেকে দুইদিন বাড়িয়ে তিন দিনের ছুটির জন্য এপ্লিকেশন করালেন। আজকে একটি বিশেষ দিন। সে কথা স্মরণ হতেই আগুনও মায়ের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছে। এদিকে মোম তো একজন আছেই! আগুন বলেছে সে ঠিক আছে। তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
কিন্তু মোম মানতে নারাজ। তার এক কথা, অল্প জ্বরই বা থাকবে কেন? সেজন্য ডাক্তার যেই টেস্ট গুলো দিয়েছেন সেগুলো এখন করাতে হবে। আর মিনাও মোমের কথায় সায় জানিয়েছেন। অগত্যা আগুন বাধ্য হয়ে মোম’কে সাথে নিয়ে পরিচিত এক হসপিটালে টেস্ট গুলো করানোর জন্য চলে গেল। সেখানে আগুনের চেনা-জানা ভালো একজন ডক্টর আছে। মোম বোরকা পড়েছে। চোখ ছাড়া তার আপাদমস্তক বোরকা’র আড়ালে ঢাকা। আগুন নিজের গাড়িতে করেই এসেছে। মোম’কে সিটে বসিয়ে সুন্দর করে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো। নিজে বসে পড়ল ড্রাইভিং সিটে। মোম এটা সেটা বলছে আর আগুন চুপ করে শুনছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আগুন ড্রাইভিং করার পাশাপাশি মুখোশের আড়ালে ঢাকা মোমের ক্ষুদ্র আদল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে। কল্পনা করছে কিভাবে তার পিচ্চি বউ চিকন পাতলা অধর জোড়া নেড়ে নেড়ে তোতাপাখির মতো বুলি আওড়াচ্ছে। হসপিটালে পৌঁছে গেইটের বাইরে গাড়ি পার্ক করে মোমের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করল, আগুন। মোম মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে চক্ষু জোড়া দিয়ে অবলোকন করছে হসপিটালের পরিবেশ। হসপিটালে তেমন ভীড় নেই। স্বল্প মানুষের সমাগম। মানুষ গুলোকে পেছনে ফেলে তারা সম্মুখের দিকে এগিয়ে গেল। একতলার বাম দিকের কর্ণারের কক্ষের সামনে এসে থামলো, আগুন। ভেতরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি ছাড়াও অন্য দুজন লোক দেখা যাচ্ছে। আগুন দরজায় নক করল না। দরজার বাইরে কিছুটা সাইড ঘেঁষে মোম’কে সাথে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর লোক দুজন চলে গেলে আগুন দরজায় নক করল। ভরাট স্বরে বলে উঠলো,
” মে আই কামিং স্যার? ”
কারো গলার আওয়াজ শুনে কক্ষের মধ্যে সুন্দর ডিজাইনের কারুকাজ করা চেয়ারে বসে থাকা ডক্টর আশানুর মাথা উঠিয়ে নজর রাখল দরজায়। চেনা পরিচিত মুখাবয়ব দেখে চোখ দুটো চকচক করে উঠল। বসা হতে উঠে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
” আগুন! কতদিন পর দেখা হলো আমাদের। কেমন আছিস? ”
আগুন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। দরজার বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে। তার পিছনে মোম। আগুনের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আশানুর কাছে এগিয়ে এসে গমগমে গলায় বলল,
” শালা! আমার চেম্বারে আসতে হলে তোকে আবার পারমিশন নিতে হবে নাকি? ঝড়ের গতিতে ঢুকে যাবি। কোনো সমস্যা নেই। ”
আগুন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” সামনে থেকে না সরলে ভেতরে আসবো কিভাবে? ”
আশানুর সরে দাঁড়ায়। আগুন, মোম’কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। মোম’কে দেখে আশানুর ভ্রু কুঁচকে ফেলল। কিছু বলল না। ভদ্রতাসূচক চেয়ারে বসতে বলে নিজেও গিয়ে তার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় বসে পড়ল। আগুন, মোম’কে চেয়ার টেনে বসিয়ে পাশের চেয়ারটায় নিজে বসলো। আশানুর মুচকি হেসে বলল,
” কি খাবি বল? চা নাকি কফি? সাথে অন্য কিছু? ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতে থাকা একটা ফাইল আশানুরের দিকে এগিয়ে দিলো। রাশভারী কন্ঠে বলল,
” কিছু খাবো না। জ্বর এসেছিল দুইদিন আগে। ফ্যামিলি ডক্টর বলেছেন এই টেস্ট গুলো করিয়ে নিতে। যদিও আমার মনে হয় টেস্ট করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবুও তুই একবার চেক করে জানা। ”
” সে না হয় দেখছি। তাই বলে কিছু খাবি না? খালি মুখেই চলে যাবি? তুইও কলেজ নিয়ে ব্যস্ত থাকিস। আমিও হসপিটাল নিয়ে। বন্ধুরা মিলে যে কিছু সময় আড্ডা দিবো সেই সময় টুকুও নেই। এক কাপ কফি অন্তত খেয়ে যা? ”
আগুন বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকায় আশানুরের দিকে। আশানুর নিজেই একজনকে ফোন করে এক কাপ কফি, এক গ্লাস জুস আর বিস্কুট দিয়ে যেতে বলল। মোমের দিকে চেয়ে হাসি মুখে বলল,
” এটা কে? তোর বোন নাকি? বাহ্! আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছে। আগে তো এতোটা ফর্সা ছিল না। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণের ছিল। আর এখন দুধে-আলতা গায়ের রঙ। ”
বলেই হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। পুনরায় বলল,
” বা*ল! মেয়েদের সুন্দর হওয়ার জন্য কত রকমের প্রোডাক্ট বের হয়েছে রে! এইসব মেখেই তো মেয়েরা ময়দা সুন্দরী হয়। তুই আবার ভাবিস না তোর বোন’কে মিন করে কিছু বলেছি। আমি বাকি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললাম আর কি। তা ময়ূরী কেমন আছো তুমি? পড়াশোনা ঠিক ঠাক চলছে তো? পড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হলে নিরদ্বিধায় আমাকে ফোন করে জানাতে পারো। আমি যেহেতু একজন ডক্টর। আশা করি তোমার অনেক হেল্প হবে। ”
আগুন এতক্ষণ চোয়াল শক্ত করে আশানুরের কথা গুলো শুনলো। আশানুর থামতেই টেবিলের উপর বলিষ্ঠ হাতে কিছুটা জোরেই থাপ্পড় দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে বলল,
” আর একটাও যদি আজাইরা কথা বলিস, তাহলে গরম কফি তোর মুখে ঢেলে দিবো। ”
আশানুর হকচকিয়ে যায়। মোমও কিঞ্চিৎ ভয় পেলো। আশানুর ব্যগ্র কন্ঠ বলল,
” রেগে যাচ্ছিস কেন? ওহ-হো! তোর বোনকে ফোন করতে বলায় রাগ করেছিস? আরে এতে রাগ করার কি আছে? তোর বোন মানে তো আমারও বোন। ”
আগুন গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠল,
” শাট-আপ! আর একবার ওকে আমার বোন বললে তোর শ্বাসনালী চেপে ধরবো। ”
আশানুর শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
” ভাই প্লিজ, তুই শান্ত হ্। এটা হসপিটাল। এখানে আমার একটা রেপুটেশন আছে। এভাবে চিৎকার করে আমার ইমেজ খারাপ করিস না। ”
আগুন দমে গেল। মোম’কে এক পলক দেখে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তোকে যেটা বললাম সেই কাজটা কর। ”
আশানুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে শুধাল,
” তোর বোন না হলে ও কে? ”
আগুন ভাবলেশহীন গলায় বলল,
” তোর ভাবি। ”
আশানুরের চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। অবিশ্বাসের সুরে বলে,
” হোয়াট! আমার তো কোনো ভাই নেই। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তাহলে ভাবি আসবে কোথা থেকে? ”
আগুনের মেজাজ খারাপ হলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” অ্যাই! তুই ডি.এম.সি তে চান্স পেয়েছিলি কিভাবে? আর ডাক্তারি পাস করেছিস কিভাবে? নাকি ঘুষ দিয়ে চান্স পেয়েছিলি? ”
ফুঁসে ওঠে আশানুর। ভাব নিয়ে গমগমে গলায় বলল,
” দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তবেই ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলাম, বুঝেছিস? ”
” তাহলে গাধার মতো কথা বলিস কেন? তোর ভাইয়ের বউ কিংবা অন্য কারোর বউকে নিয়ে আমি হসপিটালে আসবো? এই তোর বুদ্ধি? ছাগল জানি কোথাকার! ”
আশানুর চুপসে গেল। পরমুহূর্তেই মোমের দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে বলে উঠে,
” তারমানে এটা তোর বোন নয় বউ? তুই বিয়ে করে ফেলেছিস? তবুও একবার আমাকে জানালি না। গোপন রাখলি? কেন রাখলি? ”
তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল, আগুন। কন্ঠ খাদে এনে বলল,
” বলার সুযোগ পাইনি তাই বলিনি। ভেবেছিলাম বড়ো করে বউ ভাতের আয়োজন করে সবাইকে বলবো। এর ফাঁকে তোকে একবার জানাতে চেয়ে ছিলাম। ব্যস্ততায় আর হয়ে ওঠেনি। সেজন্য জানাতে পারিনি। ”
আশানুর ঠোঁট উল্টে অভিমানী গলায় বলল,
” সে যাইহোক, এসব তোর বাহানা। সত্যিকারের বন্ধু মনে করলে সময় করে ঠিকই বলতি। ”
আগুন বিরক্ত কন্ঠে বলল,
” টেস্ট গুলো কি করবি নাকি চলে যাবো? ”
ওদের কথার মাঝেই একজন লোক এসে কফি, জুস দিয়ে গেল। আগুন কফি খেলেও মোম কিছু খায়নি। জুস টা বিশেষ করে মোমের জন্য অর্ডার করে ছিল আশানুর। আশানুর আর আগুন পুরোনো বন্ধু। স্কুল লাইফ থেকে পরিচয়। খুব ভালো বন্ধুত্ব ওদের দুজনের মধ্যে। আগুন তেমন কিছু শেয়ার না করলেও আশানুর তার জীবনের বেশিরভাগ অনেক কথাই আগুনের সাথে শেয়ার করে। এই যে, আশানুর বিয়ে করেছে। তার বউ আফিফা গরীব ঘরের মেয়ে বলে তার মা আফিফা’কে ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। তখন বিষয়টা আগুন’কে বললে, সে আশানুরের মা’কে রাজি করায়। আশানুর, আফিফা’কে খুব পছন্দ করতো। আফিফাও তাকে পছন্দ করতো। তবে মুখ ফুটে কখনো বলেনি। কারণ, সে গরীব ঘরের মেয়ে। আশানুর যেই স্কুলে পড়াশুনা করেছে সেই একই স্কুলে আফিফাও পড়াশুনা করতো। তবে আশানুর যখন ক্লাস নবম শ্রেণিতে পড়ে তখন আফিফা এসে তাদের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে এসে ভর্তি হয়। প্রথম দেখাতেই আফিফার শ্যামলা’টে মুখশ্রীর মায়ায় পড়ে গিয়েছিল। আফিফা’কে প্রপোজ করলে সে প্রথমে মানতে চায়নি। পরে ঠিকই রাজি হয়ে ছিল। তাদের সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে আজ এক বছর হলো। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার বছর খানিকের মধ্যেই বিয়ে করে নেয়। যার আশি পার্সেন্ট ক্রেডিট আগুনের। আগুন ধমকে পুনরায় বলল,
” উত্তর দিচ্ছিস না কেন? টেস্ট গুলো করবি? ”
” জ্বর যেহেতু এখন নেই আর তোকেও অনেক ফিট লাগছে। তাই আমার মনে হয় টেস্ট গুলো না করালেও চলবে। ”
আগুন, মোমের দিকে তাকায়। মোম ইশারায় বুঝালো টেস্ট করাতে হবে। আগুন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ফিচেল হেসে বলল,
” ভাই, আমার বউ টেস্ট না করিয়ে আমাকে যেতে দিবে না। তুই আর দেরি করিস না। জলদি টেস্ট গুলো করিয়ে দে। ”
এভাবে বারবার বউ বলায় মোমের লজ্জা লাগছে। মোম মাথা নিচু করে বসে রইল। আশানুর ঠোঁট টিপে হাসে। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
” চল, আমার সাথে অন্য রুমে। ”
মোমও উঠে দাঁড়াল। আগুনের সঙ্গে যেতে চাইল। আশানুর বাঁধা প্রয়োগ করল। মুচকি হেসে বলল,
” দুঃখিত। আমি বুঝতে পারিনি তুমি আগুনের বউ। কিছু মনে করো না, কেমন? আজকে তো বেশি কথা বলতে পারলাম না। আমাদের বাসায় আগুন’কে নিয়ে একদিন যেও। সেদিন তোমার সাথে অনেক গল্প করবো। আর শোন, তোমাকে সাথে আসতে হবে না। তুমি এখানেই বসো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ফিরে আসবো। ”
মোম জবাব না দিয়ে আগুনের দিকে তাকায়। আগুন বলল,
” তুমি থাকো। আমরা যাচ্ছি। ”
মোম মেনে নিলো। আগুন চলে যায় আশানুরের সাথে। যেতে যেতে আশানুর চনমনে কন্ঠে জানতে চাইল,
” ভাবির নাম কি রে? ”
” মোম। ”
” সুন্দর। তোর নামের সাথে মিল আছে, বল? ”
আগুন কিছু বলল না। চুপচাপ হাঁটতে থাকলো। আশানুর নিজেই বলল,
” তোর বউয়ের মুখটা দেখতে পারলাম না। সময় করে একদিন আমাদের বাসায় আসিস। বাবা-মা অনেক খুশি হবেন। তুই বিয়ে করেছিস শুনলে আফিফা মোম’কে দেখার জন্য বায়না শুরু করে দিবে। তাই বলছিলাম কি মোম’কে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে একবার ঘুরে যাস। ”
আগুন গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,
” যাবো। শুনলাম তোর বউয়ের নাকি কিছুদিন আগে ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল? এখন সে ঠিক আছে? ”
” হুম। আফিফা একদম ঠিক আছে। তাছাড়া, ও গুরুতর আহত হয়নি। রিকশা থেকে নামতে গিয়ে হাঁটুতে কিঞ্চিৎ ব্যথা পেয়েছিল। হাঁটুর চামড়া কিছুটা ছিলে গিয়েছে। এখন ঠিক আছে। ”
সময়টা দুপুরের কাছাকাছি। তবুও জেদি সূর্য যেন মাথার উপরে আড়াআড়ি ভাবে বসে আছে। খরখরে রোদে বাতাসের ছিটেফোঁটা নেই বললেই চলে। প্রচন্ড গরমে মোম ঘেমে উঠেছে। তারউপর গায়ে বোরকা জড়ানো। আগুনও ঘেমে গিয়েছে। অথচ কাঠখোট্টা রোদের মধ্যে দুই নরনারী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। ইচ্ছে করে এই রৌদ্রজ্বল রাস্তায় দাঁড়ায় নি। দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তাদের সম্মুখে নাঈমা দাঁড়িয়ে আছে। আগুনের টেস্ট গুলো করিয়ে আশানুরের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তারা বেরিয়ে এসেছে। আশানুর বলেছে আজকে টেস্টের রিপোর্ট গুলো দিতে পারবে না। সে একটু ব্যস্ত আছে। জানিয়েছে দুইদিন পর দিবে। রিপোর্টে কি এসেছে জানার জন্য মোমের মন ছটফট করলেও আগুনের তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না।
আগুনের কাছে মনে হয়েছে অযথা টেস্ট গুলো করিয়েছে। আগুন আশাবাদী রিপোর্ট গুলো পজিটিভ’ই আসবে। আশানুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে এসে যখন গাড়িতে উঠতে যাবে, তক্ষুনি কোথা থেকে নাঈমা ওদের সামনে চলে আসে। নাঈমা’কে দেখে আগুন বুকে দু হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়ায়। ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আগুনের পাশে মোম দাঁড়ানো। আগুন ভাবছে, একটা মেয়ে ঠিক কোন লেভেল এর বেহায়া হলে সেদিন এতো কিছু বলার পর, সুন্দর ভাবে সবকিছু বোঝানোর পরও আবার তার নিকট বারবার ফিরে আসে যে তাকে দু পয়সার মূল্যও দেয় না।
নাঈমা আজকে হসপিটালে যায়নি। ও ঠিক করেছে আগুনের সাথে আরেকবার কথা বলবে। আগুন’কে বুঝিয়ে বলবে যেন, আগুনের বউ’কে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করে। সেজন্য সকাল থেকে আগুনের বাসার বাইরে অপেক্ষা করছিল। যখন আগুন, মোম বেরিয়েছে নাঈমাও ওদের পিছু পিছু আশানুরের হসপিটাল পর্যন্ত এসে পড়েছে। বোরকা পরিহিত রমণীকে দেখে নাঈমা বুঝতে পেরেছে এটাই হয়তো আগুনের বউ। কারণ, আগুনের বোন এতো ফর্সা না। আর আগুন অন্য কোনো মেয়েকে সাথে নিয়ে কোথাও বের হওয়ার মতো মানুষ সে নয়। নাঈমা হসপিটালের ভেতরে প্রবেশ করেনি।
হসপিটালের মেইন গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আগুনের ফিরে আসার জন্য প্রতীক্ষা করছিল। ওরা আসতেই একদম আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। নাঈমার চোখ দুটো কিঞ্চিৎ লাল হয়ে আছে। হয়তো কান্না করেছে। ফর্সা বলে কান্নার জন্য আর সূর্যের প্রখর উত্তাপে মুখশ্রীতে হালকা রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। নাঈমা মোমের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়। মোম’কে দেখে বুকের ভেতর ক্ষত’টা তাজা হয়ে উঠেছে। তীব্র ক্ষোভ মাথা নাড়া দিয়ে চলেছে সমান তালে। নাঈমার বুক জ্বলছে।
ভালোবাসা হারানোর আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। ইচ্ছে করছে এই অসভ্য মেয়েটাকে এক্ষুনি নিজের হাতে খু*ন করতে। এই মেয়েটার জন্যই আজ ও আগুন’কে পায়নি। অসভ্য মেয়েটা না থাকলে আগুন কাকে বিয়ে করতো? অবশ্যই নাঈমা’কে করতো। এই মেয়েটার জন্যই আগুন ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অপমান করেছে। এখন নাঈমা যা বলবে তাতে যদি আগুন রাজি হয় তাহলে তো ভালো। নয় তো এই মেয়েটা’কে নাঈমা ছাড়বে না। কিছুতেই না। মোমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নাঈমা, আগুনের দিকে তাকায়। শুষ্ক ঢোক গিলে শান্ত কন্ঠে বলল,
” আমার তোকে কিছু বলার আছে। ”
আগুন ভাবলেশহীন গলায় জবাব দিল,
” আমার তোর কথা শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই। ”
ফুঁসে ওঠে নাঈমা। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
” ইচ্ছে নেই মানে কি, হ্যাঁ? ইচ্ছে না থাকলেও তোকে শুনতে হবে। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বেশ দাম্ভিক ভাবে চওড়া গলায় বলে,
” কার সামনে দাঁড়িয়ে কাকে কি বলছিস কোনো হুঁশ আছে? আমি আগুন শিকদার নিজের’টা ছাড়া অন্য কারো মর্জিতে চলি না। এটাতো তুই খুব ভালো করেই জানিস। তবুও জেদ খাটাতে চলে এসেছিস? ”
নাঈমার চোখ দুটো টলমল করছে। টুপ করে এক ফোঁটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়ল গালে। তুরন্ত হাত দিয়ে গাল মুছে নিলো। রাশভারী গলায় বলল,
” জেদ খাটাতে আসিনি। শুধু কয়েকটা কথা বলতে এসেছি। ”
” যেখানে তোর একটা কথাই শুনতে আমি ইচ্ছুক নই। সেখানে কয়েকটা কথা বলতে চাস? ”
” কথা গুলো বলেই আমি চলে যাবো। ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
” বল। তাড়াতাড়ি বলিস। আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। ”
নাঈমা বার কয়েক ঢোক গিলে শীতল গলায় বলল,
” আচ্ছা, আগুন সত্যি করে বল তো। আমি কি দেখতে খুব খারাপ? পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা নিশ্চয়ই তোর বউ? আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলতো, ওর থেকে কি আমি কম সুন্দরী? নাকি আমার মধ্যে কোনো কিছুর কমতি আছে? তোর বউয়ের মধ্যে যা আছে, আমার মধ্যে তো তাই আছে। তাহলে কেন আমাকে রেখে এই মেয়েটা’কে বিয়ে করলি? কি নেই আমার মধ্যে বল? কি নেই আমার মধ্যে যা এই মেয়েটার মধ্যে আছে? ”
শেষের কথাটা চিৎকার করে বলে ডুকরে কেঁদে উঠল, নাঈমা। এগিয়ে এসে আগুনের সাথে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়। আগুনের হাতের সাথে নাঈমার শরীর কিঞ্চিৎ স্পর্শ লাগে। আগুন ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়। নাঈমা তাচ্ছিল্য হাসে। আগুনের চোখে চোখ রেখে ভাঙা গলায় বলে উঠলো,
” তুই কি অনুভব করতে পারছিস না আমার বুকের জ্বালা? তুই কি শুনতে পারছিস না আমার হৃদয়ের ব্যাকুলতা? তুই কি উপলব্ধি করতে পারছিস না আমার মনের সুক্ষ্ম ব্যথা? এতটা পাষাণ হোস না আগুন। এতটা পাষাণ হোস না। আমি সহ্য করতে পারছি না রে। বিশ্বাস কর পারছি না সহ্য করতে। তুই এই মেয়েটা’কে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বিয়ে করে নে, প্লিজ। শুধু আমাকে ভালোবাসা দে। তোর নামের পাশে এই অসভ্য মেয়েটার নাম কেটে আমার নাম’টা জুড়ে দে। ”
আগুন বিরক্ত হলো। ঘুরেফিরে আবার সেই এক কথা। মোম যেন নিরব ভূমিকা পালন করছে। কিছুই বলছে না। চুপ করে দুজনের কথা গুলো শ্রবণ করছে। আগুনের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। চোয়াল দ্বয় শক্ত হয়ে উঠেছে। রাগ হচ্ছে খুব। রাগে ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। গম্ভীর কণ্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” লিমিট ক্রস করিস না, নাঈমা। তোকে বারবার ওয়ার্নিং দিয়েছি তবুও একই কাজ বারবার করছিস। এখন তো অলরেডি নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। মেয়েদের গায়ে হাত তোলা পছন্দ করি না। ওই টাইপের ছেলেদের মতো হতে পারিনি এখনো। সেজন্য কিছু বললাম না। নয়তো আমার বউ’কে আমার সামনে দাঁড়িয়ে অসভ্য বলার স্পর্ধা দেখানোর জন্য মিনিমাম গুনে গুনে তোকে চার’টা থাপ্পড় মা’রা উচিত ছিল আমার। ফারদার যদি মোম’কে নিয়ে আরেকটা বাজে কথা বলিস, তাহলে তোর জিভ টেনে আমি ছিড়ে ফেলবো। বন্ধুত্বের খাতিরে ভালোবাসা দেখেছিস কিন্তু আমার রাগ এখনো দেখিস নি।
তোকে তো বলেছিলাম আমার সামনে আর আসবি না। আজকে আবারও বলছি, ভালো করে তোর ওই বিকৃত-মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নে। আমি আমার সহধর্মিণী মোম’কে নিয়ে খুব খুশি। আগুনের অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই মোমের বসবাস। যেটা সারাজীবন থাকবে। তোর মতো কুৎসিত মনের অধিকারী নারী কখনোই আগুনের সংস্পর্শে আসতে পারবে না। আর কি বললি? মোমের জন্য তোকে রিজেক্ট করেছি? লাইক সিরিয়াসলি? তোর কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। মোমের সাথে বিয়ে না হলেও তোকে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না। তোকে তো আমি প্রেমিকার নজরে দেখিনি তাহলে বিয়ের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? অন্য কাউকে বিয়ে করলেও অন্তত তোকে বিয়ে কখনোই করতাম না। তোকে আমি জাস্ট বন্ধু ভাবতাম। এর বেশি কিছু না। তবে আজকের পর তোকে আমার বন্ধু ভাবতেও রুচিতে বাঁধবে। এটা আগুন শিকদারের কথা। আর লাস্ট কথা হলো, তোর যদি নূন্যতম লজ্জাবোধ থেকে থাকে তাহলে আর কক্ষনো আমার সামনে আসবি না। ”
বলেই মোম’কে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজ গন্তব্যে প্রস্থান করল। নাঈমা প্রখর রোদে রাস্তার মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আগুনের ছুটন্ত গাড়ির দিকে।
মোম গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে বসে আছে। ওর চোখ দুটো বন্ধ। নাঈমার বলা একের পর এক কথা গুলো স্মরণ করতে লাগলো। মোমের ভীষণ হাঁসফাঁস লাগছে। ওসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দুটি ভিজে উঠেছে টেরই পেলো না। আগুন ড্রাইভিং করায় মনোযোগ দিলেও তার ধ্যান মোমে’তে আবদ্ধ। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মোমের দিকে। মোমের নিশ্চুপতা আগুন মেনে নিতে পারছে না। আগুন ভেবে ছিল, মোম তাকে নাঈমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে।
মেয়েটা কে? কেন, তখন ওই সব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছিল? তার সাথে আগুনের কি সম্পর্ক? মেয়েটা যে আগুন’কে ভালোবাসে, আগুনও তাকে ভালোবাসে কি না? এসব প্রশ্ন করে করে আগুনের কান ঝালা-পালা করে দিবে। কিন্তু না! মোম তো কিছুই বলছে না। আগুন হতাশ হলো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মাঝ রাস্তায় একটু সাইডে গাড়ি দাঁড় করালো। মোম তখনো আগের মতোই বসা। আগুন সিট বেল্ট খুলে মোমের উপর ঝুঁকে আসে। হাত বাড়িয়ে মোমের নেকাব খুলে দেয়। গাড়ির ছোট জানালা গুলো বন্ধ। তবে মোমের সিটের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। আগুন জানালাটা বন্ধ করে দিলো। মুখ উন্মুক্ত হতেই মোম চমকে ওঠে। চকিতে তাকায় আগুনের দিকে। মোমের চোখ দুটো অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে। চোখের কুর্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার ছাপ স্পষ্ট। আগুন একটা হাত মোমের গালে রেখে শান্ত কন্ঠে ডাকল,
” মোম? ”
মোম নিশ্চুপ। আগুনের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বউ অভিমান করলে এসব লেইম ইমোশনাল কথাবার্তা অথবা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বউয়ের অভিমান ভাঙানো তার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। আর কারণ ছাড়াই অযথা অভিমান করলে তো মেজাজ পুরো তুঙ্গে উঠে যাওয়ারই কথা। আগুনের কথা হলো, বউ’কে ভালোবাসবো গোপনে। ভালোবাসা হৃদয়মাঝে লালন করে কাজের মাধ্যমে সেটা প্রকাশ করবো। বউ’কে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বলে মুখে ফেনা তোলার কি আছে? ভালোবাসা গোপনীয় ভাবেই সুন্দর।
আগুন মোমের সিট বেল্ট টাও খুলে ফেলল। নিজের সিটে বসে দু’হাতে মোমের কোমর প্যাঁচিয়ে ধরে এক টানে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। মোম হকচকিয়ে যায়। এক হাতে আগুনের গলা জড়িয়ে ধরল। অপর হাত কাঁধে রেখে আগুনের শার্ট খামচে ধরেছে। আগুন কিছু না বলে মোমের ঠোঁটে একটা ভেজা চুমু খেলো। মোম মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আগুন মোমের থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উঁচু করল। মোম আগুনের দিকে তাকাল না। তার চোখ জোড়া আগুনের শার্টের কলারের উপর নিবদ্ধ। আগুন তপ্ত শ্বাস ছেড়ে শীতল গলায় বলল,
” রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেই মেয়েটার সাথে কথা হলো, ওর নাম নাঈমা। মনে আছে, একদিন একটা মেয়ে আমাদের বাসায় এসেছিল? তখন তোমাকে রুমে থাকতে বলে ছিলাম। রুম থেকে বের হতে নিষেধ করে ছিলাম। তোমাকে তো তখন ওর নাম সহ আমাদের বন্ধুত্বের কথাও জানিয়ে ছিলাম। এই সেই নাঈমা। নাঈমা আমাকে পছন্দ করে। বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তাকে নিয়ে আমি কখনো এরকম কিছু ভাবতাম না। আর এখন তো নাঈমা’কে দেখলে বিরক্ত লাগে। আশা করি তখন আমাদের কথা শুনে বুঝতে পেরেছো নাঈমা আমাকে পছন্দ করলেও আমি তাকে করি না। ”
মোম মনোযোগ দিয়ে আগুনের কথা গুলো শুনলো। তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। আগুন ভারিক্কি গলায় পুনরায় বলল,
” তুমি যদি নাঈমা’কে নিয়ে জেলাস ফিল করো, তাহলে ঠিক আছে। বিষয়টা আমাকে মন থেকে তৃপ্তিদায়ক আনন্দ দিবে। কিন্তু তুমি যদি আমাকে নিয়ে নাঈমা’কে ঘিরে আলতু ফাল’তু চিন্তা করে সন্দেহ করো, আমাকে ভুল বুঝো! প্রথম বার ভালো করে বুঝিয়ে বলবো। ঈভেন, এখনো সমান তালে বুঝিয়ে যাচ্ছি যে, নাঈমার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। প্রয়োজনে কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারো। আমি উত্তর দিয়ে সবটা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো। তবুও চুপ করে থেকো না। তোমার নিশ্চুপ থাকা আমার রাগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি ইগনোর করলে সেটা তুমি সহ্য করতে পারবে না। আমি একবার কারো থেকে মুখ ফেরালে দ্বিতীয় বার আর তার দিকে ফিরে তাকাই না। তাই বলছি সহজ হও আমার সাথে। কথা বলো। ”
মোম আঁতকে উঠল। নাক টেনে টলমল চোখে আগুনের মুখের দিকে তাকায়। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” আমি আপনাকে ভুল বুঝছি না। নাঈমা আপনাকে বারবার ভালোবাসি বলায় শুনতে আমার খারাপ লেগেছে। উনি কেন আপনাকে ভালোবাসি বলবে? আপনি আর ওই নাঈমার সাথে কথা বলবেন না। ”
আগুন ঠোঁট কামড়ে হাসে। শান্ত কন্ঠে শুধাল,
” আচ্ছা, আর কথা বলবো না। তা নাঈমা ভালোবাসি না বললে আর কে বলবে শুনি? ”
মোম মায়াভরা নয়নে চেয়ে সরল গলায় জবাব দিল,
” আমি বলবো। ”
আগুনের চোখ দুটো চকচক করে উঠল। রাশভারী কন্ঠে বলে,
” তাহলে বলো। ”
” কি বলবো? ”
” ভালোবাসার কথা। ”
মোমের গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো। আগুন মুচকি হাসলো। উত্তপ্ত উষ্ণ ঠোঁট জোড়া এগিয়ে মোমের থুতনিতে চুমু খেলো। মোম ফট করে চোখ খুলে তাকায়। আগুন মোমের নাকে নাক ঘষে বলল,
” যাও, তোমার জায়গায় গিয়ে বসে পড়ো। ”
মোম শুনলো না। আগুনের কোল থেকে নামলোও না। বরং মাথাটা ঢুকিয়ে দিলো আগুনের প্রসস্থ বুকে। গলায় মুখ ডুবিয়ে চুপ করে বসে রইল। আগুন তাড়া দিয়ে বলল,
” ড্রাইভিং করবো তো মোম। তোমার সিটে গিয়ে বসো। ”
মোম তবুও গেল না। আগুন দুষ্টু হেসে বলে উঠলো,
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা বোনাস পর্ব
” গাড়িতে রোমান্স করার ইচ্ছা আছে নাকি? আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে তুমি লজ্জা পাবে না তো? ”
মোম এবারেও নিশ্চুপ। শুধু আগুনের বুকে আলতো করে নরম হাতে আঘাত করল। আগুনের ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। মোমের মাথায় চুমু দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। জোর করে আর বউ’কে বুক থেকে সরিয়ে দিলো না। গাড়ির স্পিড স্লো করে এক হাতে ড্রাইভ করছে। অপর হাতে মোম’কে বুকে আগলে রেখেছে। মোমের খুব ভয় করছে। আগুন’কে হারিয়ে ফেলার ভয়। মোম দিবে না। কাউকে দিবে না তার মাস্টার মশাই কে নিয়ে যেতে। মোম আরও শক্ত করে আগুন’কে জড়িয়ে ধরল। প্রসস্থ বক্ষে মাথা রেখে চুপ করে শুনতে থাকলো আগুনের বুকের ধকধক।