শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৫
সুমাইয়া সুলতানা
মোমের বাবা-মা আর একদিন পর নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিছুদিন থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন নি তারা। বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে, শুধু মেয়েকে এক পলক দেখবেন বলে এসেছেন। বিয়ে হওয়ার পর আর বাবার বাড়ি যাওয়া হয়নি মোমের। আবার মোমের জন্মদিন ছিল। এই প্রথম জন্মদিনে তাদের মেয়ে তাদের কাছে অনুপস্থিত। মেয়েকে দেখতে পারবেন এবং জন্মদিনে মেয়েটাকে কাছে পাবেন সেজন্য গ্রাম থেকে এতদূর ঢাকা শহরে ছুটে এসেছেন। তবে বেশিদিন তো থাকা সম্ভব না। বাড়িতেও ফেরা প্রয়োজন।
মোমের বোন মুনিয়া বায়না ধরেছে ঢাকা শহরটা একটু ঘুরে দেখবে। রাশেদ আগুন’কে ফোন করে বলে দিয়েছেন, মোম আর মুমিয়া কে নিয়ে যেন শহর টা একটু ঘুরিয়ে আনে। আগুন ভাবলো, মোম এখানে আসার পর সবসময়ই বাসায় থেকেছে। কোথাও যাওয়া হয়নি। আগুনেরও সময় ছিল না। এখন যেহেতু আগুন ছুটিতে আছে একটু বেরিয়ে আসা যাক। আগুন ঠিক করেছে বেশি দূরে যাবে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আশেপাশে ঘুরে দেখাবে আর ওদের বড়সড় শপিংমল-টাও ঘুরিয়ে দেখিয়ে আনবে। ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে আয়মান, ময়ূরী জানায় তারাও যাবে। মোম সুন্দর দেখে একটা সুতির থ্রি-পিস পড়েছে। জামা এবং ওড়নায় সুতো দিয়ে কাজ করা ডিজাইনার ছোট ছোট ফুল রয়েছে। ফুল গুলোতে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের পাথর বসানো। মোম মাথায় হিজাব বেঁধে ওড়না কাঁধের এক পাশে ফেলে রেখেছে। ময়ূরীও থ্রি-পিস পড়েছে। তবে সে হিজাব বাঁধে নি। আয়মানের রুমে ওরা তৈরী হচ্ছে। আগুনদের বাড়ির ড্রাইভার এসে মুনিয়া’কে আগুনের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। আগুন রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে হাঁক ছেড়ে ডাকে,
” ময়ূরী, তোদের এখনো হয়নি? রেডি হতে এতক্ষণ সময় লাগে? ঘুরতে কি রাতের বেলা যাবি নাকি? ”
ময়ূরী মুখে ক্রিম লাগাতে লাগাতে জবাব দিল,
” ভাইয়া আরেকটু সময় দেও। এই তো প্রায় রেডি হয়ে গিয়েছি। ”
” হ্যারি আপ। ”
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে আয়মান। ফেসবুকে একটা রোমান্টিক ভিডিও দেখছে। আগুন’কে জ্বালানোর উদ্দেশ্যে বলল,
” ময়ূরী আরেকটু আরেকটু বলে ঘন্টা খানিক সময় লাগিয়ে দিবে। ততক্ষণে তুমি বোরিং হয়ে যাবে। তুমি চাইলে সেই সময় টুকু ভাবির সাথে একান্তে কাটাতে পারো। ঘুরতে গেলে তো ভাবিকে একা কাছে পাবে না। আমরা থাকবো সাথে। তাই ভেবে দেখো, বুদ্ধি টা কিন্তু খারাপ দেইনি। ”
আগুন চোখ রাঙিয়ে তাকায় কিন্তু আয়মান সেটা দেখতে পেলো না। কারণ তার নজর ফোনে চলমান ভিডিও তে। আগুন চলে যায় আয়মানের রুমে। গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে ওঠে,
” মোম, একটু রুমে আসো তো। ”
বলেই নিজের বেডরুমে চলে গেল। মোম রুমে এসে আবার চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। আগুন হতভম্ব হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে চোয়াল শক্ত করে মোমের বাহু চেপে ধরল। পায়ের সাহায্যে ধারাম করে দরজা বন্ধ করে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” চলে যাচ্ছো কেন? ”
মোম ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
” আপনি না বললেন, একটু রুমে আসতে? একটু তো এসেছি। তাই এখন চলে যাচ্ছি। ”
আগুন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ঝাঁঝ নিয়ে চওড়া গলায় বলল,
” মজা করছো আমার সাথে? ”
মোম তুরন্ত জবাব দিল,
” একদম না। সেই সাহস কি আমার আছে? ”
আগুন, মোমকে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড় করালো। মোম লম্বায় প্রায় আগুনের কাঁধ পর্যন্ত। এভাবে হুট করে দারজার সাথে চেপে ধরায় মোম হকচকিয়ে গেল। ব্যগ্র গলায় জানতে চাইল,
” কিছু বলবেন? ”
আগুন ভ্রু যুগল কুঁচকে গমগমে গলায় বলল,
” ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছো কেন? ”
মোম কন্ঠস্বরকে নিচুতে নিয়ে বলল,
” জ্বি, বাইরে যাচ্ছি তাই ময়ূরী আপু একটু সাজিয়ে দিল। ”
আগুন কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তোমাকে তো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। যদি কারো নজর লেগে যায়? নজর যাতে না লাগে সেজন্য কি করা যায় বলো তো? ”
মোম ঘনঘন পলক ঝাপটায়। ডাগর ডাগর আঁখি তুলে নরম কন্ঠে শুধাল,
” নজর তো বাচ্চাদের লাগে। আমি কি বাচ্চা নাকি? ”
আগুন, মোমের হিজাবের পিনে এক আঙুল রেখে শান্ত গলায় বলল,
” তুমি তো বাচ্চাই। আমার বাচ্চা বউ। এখন জলদি বলো নজর ফোঁটা কোথায় দেওয়া যায়? ”
” কোনো নজর ফোঁটা দেওয়ার দরকার নেই। দেরি হচ্ছে না? চলুন। ”
” দরকার আছে। ”
মোম হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। আগুনের সাথে কথায় পারবে না। লোকটা যা ত্যাড়া। গোমড়া মুখ করে মিনমিন করে বলল,
” চোখে কাজল দিয়েছি। সেখান থেকে আঙুলের ডগায় একটু কাজল নিয়ে কানের পিঠে লাগিয়ে দেন। তাহলেই হবে। ”
” তাহলেও হবে না। আগুন শিকদারের বউ বলে কথা। তোমাকে তো আর ছোট খাটো নজর ফোঁটা দিলে চলবে না! বড়ো করে নজর ফোঁটা দিতে হবে। ”
মোমের এখন বিরক্ত লাগছে। কি সব বাচ্চাদের মতো আচরণ করছে। মোম’কে বলে বাচ্চা আর আগুন নিজেই তো এখন অদ্ভুত কথাবার্তা বলছে, সেটার ক্ষেত্রে? মোম কিঞ্চিৎ রাগী গলায় বলে উঠলো,
” কোনো নজর ফোঁটা দিতে হবে না। আমি দিবো না। আমি যাচ্ছি। আপনিও চলে আসুন। ”
মোম, আগুন’কে সরিয়ে চলে আসতে চাইল কিন্তু পারলো না। আগুন, আলতো করে মোমের চোয়াল চেপে ধরল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আমি যখন বলেছি নজর ফোঁটা দিতে হবে, তার মানে দিতে হবেই। ”
মোম ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল,
” আচ্ছা, দেন আপনি নজর ফোঁটা। ”
আগুন তার অধর জোড়া আস্তে আস্তে মোমের মুখের কাছে নিয়ে আসতেই মোম বুঝল, এই লোক এখন অসভ্যতামি শুরু করবে। তাই আগুন’কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। ঠোঁট ফুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” এখন কোনো দুষ্টুমি করবেন না, মাস্টার মশাই। তাহলে কিন্তু আমি যাবো না। ”
আগুন আবারও মোমের নিকটে চলে আসে। বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে মোমের কোমর প্যাঁচিয়ে কাছে টেনে নিলো। গমগমে গলায় বলে ওঠে,
” যেতে হবে না তোমাকে আর আমিও যাবো না। আয়মান’কে বলে দিবো ও মুনিয়া’কে ঘুরতে নিয়ে যাবে। ”
এরই মধ্যে ময়ূরী ভাইয়া বলে ডেকে উঠল। মোম অসহায় মুখভঙ্গিতে তাকায়। গাল ফুলিয়ে বলল,
” সবাই অপেক্ষা করছে। কি পাগলামো শুরু করেছেন বলুন তো? ”
আগুন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রাশভারী গলায় বলল,
” যেতে চাইলে নজর ফোঁটা দিতে হবে। নজর ফোঁটা না দিয়ে তোমাকে এই রুমের বাইরে এক পা-ও রাখতে দিবো না। ”
আগুনের ভাবলেশহীন কন্ঠে মোমের গা জ্বলে উঠল। মোম কখনো কারো সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলতে পারে না। সকলের সাথে শান্ত মেজাজে নরম কন্ঠে কথা বলে। আর আগুনের রাগকে তো মোম ভয় পায়। ওর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা মোমের পক্ষে কোনো কালেই সম্ভব না। মোম হাত কচলে ভারিক্কি গলায় বলল,
” জলদি করুন। ”
আগুন বাঁকা হাসল। তর্জনী দ্বারা মোমের ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
” সেই তো রাজি হলে শুধুশুধু এতক্ষণ সময় নষ্ট করলে। ”
কথার ইতি টেনে উত্তপ্ত অধর জোড়া মোমের অধরের নিকট তেড়ে আসতেই মোম হাত দিয়ে আগুনের ঠোঁট স্পর্শ করে। মোমের বুক ধকধক করছে। নিঃশ্বাসের গতি জোড়ালো। নিজ কাজে বাঁধা পাওয়ায় আগুনের মনঃক্ষুণ্ণ হলো। মোম নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে ছটফটে গলায় বলে,
” নজর ফোঁটা ঠোঁটে দেয় না, মাস্টার মশাই। ”
আগুন কোমরের চাপ দৃঢ় করে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে। থুতনিতে আঙুল ছুঁয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
” এটা ইউনিক স্টাইল। শুধুমাত্র তোমার জন্য প্রযোজ্য। ”
কথা শেষ করেই মোমের ঠোঁটে রাজত্ব চালালো। গাঢ় করে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিল। মোমের দিকে আর ফিরে তাকাল না। শার্টের কলার ঠিক করে ত্রস্ত পায়ে দরজা খুলে রুম ত্যাগ করল।
শপিংমল হলো একটি আধুনিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন ধরণের দোকান, খাবারের রেস্তোরাঁ, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। এটি সাধারণত একটি বৃহৎ, উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় স্থানে নির্মিত হয়। যেখানে প্রবেশদ্বারে সাধারণত একটি বিশাল ফয়েল এবং সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ থাকে। সার্বিকভাবে, শপিংমল একটি প্রাণবন্ত এবং দর্শনীয় স্থান, যেখানে কেনাকাটা করার পাশাপাশি বিনোদন ও খাবারের সুযোগও রয়েছে।
আগুন প্রথমে তাদের শপিংমলে গাড়ি থামালো। শপিংমল টা ঘুরিয়ে দেখিয়ে আশেপাশে একটু ঘুরাবে। আগুন, মোমের হাত ধরে চুপচাপ হাঁটছে। মোমের লজ্জা লাগছে। সবাই কেমন তাকিয়ে আছে। হাত ছাড়াতে নিতেই আগুন চোখ রাঙিয়ে তাকায়। মোম দমে গেল। গাল ফুলিয়ে আগুনের সাথে পা চালায়। আয়মান হাত নেড়ে নেড়ে মুনিয়া’কে শপিংমলের ভেতরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানগুলো সুন্দর করে একসাথে সাজানো আছে সেগুলো দেখাচ্ছে। পোশাক, জুতা, বৈদ্যুতিন পণ্য, এবং সাজসজ্জার জিনিসপত্রের দোকানগুলো মুনিয়া গোল গোল চোখে তাকিয়ে অবলোকন করছে। প্রতিটি দোকানে বিশেষ ডিসপ্লে এবং আকর্ষণীয় সেলসম্যানদের উপস্থিতি রয়েছে। আগুন, মুনিয়া’কে বলল,
” এখান থেকে তোমার কোন কোন ড্রেস, জুতা গুলো পছন্দ হয়েছে আমাকে বলো। তোমাকে সেই ড্রেস, জুত গুলো কিনে দেওয়া হবে। ”
মুনিয়া গোল গোল চোখে চেয়ে সরল গলায় জবাব দিল,
” আমার তো সব ড্রেস, জুতা পছন্দ হয়েছে, তাহলে কি সবগুলোই আমাকে কিনে দিবেন? ”
মোম চোখ রাঙিয়ে তাকায়। মুনিয়ার মুখটা ছোট হয়ে গেল। আগুন হেসে ফেলল। মুনিয়ার গাল টেনে বলল,
” এতগুলো ড্রেস, জুতা তুমি বাড়িতে নিয়ে যাবে কিভাবে? ”
মুনিয়া ভাবুক গলায় জানায়,
” তাও ঠিক। আচ্ছা, দুইটা ড্রেস আর ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে দুই জোড়া জুতা নিবো। ”
আগুন মুচকি হেসে বলল,
” ঠিক আছে। ”
মুনিয়ার পছন্দ মতো আগুন ওকে ড্রেস আর জুতা কিনে দিল। শপিংমলের মালিকের ছেলে বলে দোকানদার টাকা নিতে চাননি। মাস শেষে দোকান ভাড়া তো দিতেই হয়। বিশাল বড়ো শপিংমলের অর্ধেক টা রাশেদ শিকদার নিজে লোক লাগিয়ে হ্যান্ডেল করেন আর বাকি অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। প্রথম প্রথম নিজেই একা হাতে পুরো শপিংমল সামলেছেন। এখন বয়স হচ্ছে পুরো শপিংমল সামলাতে কষ্ট হয়ে যায়। এতগুলো কর্মচারী, মালের হিসাব, আয়ব্যয় সবকিছু একা হাতে গুছিয়ে উঠতে পারছিলেন না বলে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। আগুন, রাশেদ’কে বলেছিল, পুরোটাই ভাড়া দিয়ে দিতে। কিন্তু রাশেদ সেটা করেন নি। কাজ না করে একেবারে বাড়িতে বসে থাকার কোনো মানে হয়? সারাক্ষণ বসে বসে কাটালে শরীর খারাপ করবে। আগুন চাইলে নিজেদের কেনা মালের থেকে মুনিয়া’কে ড্রেস দিতে পারতো কিন্তু শালীকা কে প্রথম কোনো উপহার দিচ্ছে। এখন সেটা বাবার টাকায় কেনা উপহার হোক আগুন তা চায় না। আগুন, মোমের জন্যও একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনে নিলো। মোম নিষেধ করেছিল কিন্তু আগুন শোনেনি। আগুন, ভাই-বোন কে কিছু লাগবে নাকি জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, তাদের কিছু লাগবে না।
আয়মান সিড়ি দিয়ে দোতালায় উঠতেই আনিকা’কে দেখতে পেলো। লাল রঙের টপস পড়ে কি সুন্দর করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়মান যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেল। তুরন্ত পা চালিয়ে আনিকার কাছে পৌঁছে হাসি মুখে বলল,
” আনিকা, তুমি এখানে কি করছো? বুঝতে পেরেছি, আমার ভালোবাসার টানে রকেটের গতিতে ছুটে এসেছ। তুমি এখানে আসবে আমাকে একবার জানাতে পারতে। আজকে আমাদের প্রেমের পিকনিক হবে। তুমি কি পিজ্জা খাবে নাকি স্যুপ? ”
আনিকা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
” পিজ্জা তো সবসময়ই খাই। তুমি কি কিছু নতুন ভাবতে পারো না? ”
আয়মান মুচকি হেসে বলল,
ঠিক আছে, তাহলে তোমার জন্য আমি পিজ্জার আকারে হৃদয় তৈরি করেছি! সেটা খেও। ”
আনিকা হাসতে হাসতে বলল,
” দূর, হৃদয়ের সাথে পিজ্জার গন্ধ খুব একটা মিল নেই! ”
হঠাৎ করেই আয়মান হাস্যকরভাবে কাঁচা গলায় গান গাইতে লাগলো,
” আমার চড়ুই পাখির ডিম
তোরে লয়া ডেইলি দেখি ড্রিম
দুজনে চাইট্টা খামু একটা, মিমি আইসক্রিম।
তোর বাপে মায়রে সেটিং দিমু ওইটা ব্যাপার না,
আমি পুরা ঢাকার প্রেমিক পোলা কিন্তু ব্যাপার না। ”
আনিকা প্রথমে বিস্মিত হয়ে গেলেও পরে সে হেসে ফেলল। ব্যগ্র গলায় বলল,
” তুমি তো গানের রাজা হরিদাস পাল কিন্তু আজকে তুমি একটা নতুন প্রতিভা দেখাচ্ছো কাঁচা গায়কের! ”
আয়মান সেসব কথায় কান দিল না। মোহনীয় কন্ঠে জাদু ঢেলে বলে উঠলো,
” আনিকা ডার্লিং, এত সুন্দর একটা গান গেয়ে শোনালাম আমাকে পুরষ্কার দিবে না? ”
” কি পুরষ্কার দিবো? ”
আয়মান, আনিকা’কে দু হাতে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানায়,
” তেমন কিছু না। জাস্ট একটা চুমু দিলেই হবে। ”
আনিকা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল,
” যা দুষ্টু। ”
আনিকা’কে লজ্জা পেতে দেখে আয়মান খুশি হলো। এক হাতে ঘাড় চেপে ধরে চুমু খাওয়ার জন্য ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিলো। মুহূর্তেই আয়মান গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলো,
” আইইয়ে মা’আআআ! ”
আয়মানের চিৎকার শুনে আগুন দ্রুত ছুটলো দোতালায়। ময়ূরীও ভাইয়ের সাথে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল। মুনিয়ার হাত ধরে মোমও ওদের পিছু পিছু চলল। আয়মান’কে ঘিরে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আগুন মানুষ গুলোকে সরিয়ে আয়মানের কাছে গেল। আয়মান পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে। নাকমুখ বিকৃত করে রেখেছে যেন সে বিশাল কোনো ব্যথা পেয়েছে। আগুন চিন্তিত ভঙ্গিতে শুধায়,
” পা ধরে বসে আছিস কেন? ব্যথা পেয়েছিস? ”
” আয়মান ক্ষীণ স্বরে জবাব দিল,
” হুম। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে চওড়া গলায় বলল,
” ব্যথা পেয়েছিস কিভাবে? মেয়েদের মতো আবারও পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলি? ”
আয়মান পা ডলে আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। তর্জনী উঁচিয়ে রাগী গলায় বলল,
” এই বেয়াদব মেয়ে হিল জুতা দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করেছে। ”
আগুন তাকায়। লাল রঙের টপস পড়া মোটাসোটা একটা মেয়ে বিরক্তিকর মুখভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি তেজি গলায় বলে ওঠে,
” এই ছেলে! কাকে বেয়াদব বলছো? এত বড়ো দামড়া ছেলে অথচ ম্যানার জানে না। তুমি তো এই শপিংমলের মালিকের ছোট ছেলে, তাই না? মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করো বিষয়টা তোমার বাবাকে জানাতে হবে দেখছি। ”
আগুন মেয়েটিকে শান্ত কন্ঠে শুধাল,
” কি হয়েছে আমাকে বলুন। আমি ওর বড়ো ভাই। ”
মেয়েটি গমগমে গলায় বলল,
” জ্বি, আপনাকেও চিনি। আপনার এই অসভ্য ভাই আনিকা আনিকা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। চুমুও খেতে চাচ্ছিল। কত বড়ো সাহস? ছাড়তে বললে, ছাড়ছিলই না। সেজন্য না পেরে হিল জুতা দিয়ে পায়ে আঘাত করেছি। ”
আগুন রাগী চোখে তাকায় আয়মানের দিকে। আয়মান কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে নিলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আগুন শান্ত কন্ঠে বলল,
” আই এম এক্সট্রিমলি সরি ম্যাম। আমার ভাইয়ের হয়ে আমি আপনাকে সরি বলছি। ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দেন। আমি ওকে বলে দিবো। ভবিষ্যতে আর এমন হবে না। ”
মেয়েটা সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে করতে হনহনিয়ে চলে গেল। আয়মান মাথা তুলে তাকাল। মোমের দিকে নজর পড়তেই একটা মেকি হাসি দিল। বিনিময়ে মোমও কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি উপহার দিল। আগুন আর কথা বাড়াল না। সবাইকে নিয়ে শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসলো। গাড়িতে উঠে বসতে বসতে আয়মান বিড়বিড় করে বলল,
” তার মানে তখন ওই মেয়েটা আনিকা ডার্লিং ছিল না? মেয়েদের রুপে একজন ডাইনী ছিল? সবটাই আমার ভ্রুম ছিল? আচ্ছা ভ্রম ছিল আর যাই ছিল, এত তাড়াতাড়ি ভ্রমটা শেষ হয়ে গেল কেন? এটলিস্ট চুমু টা খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। ফাটা কপাল আমার! ”
এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গিয়েছে। প্রায় এশারের সময়। আয়মান জানায়, ডিনার করে বাসায় যাবে। আগুন ওদের নিয়ে বড়সড় একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করল। সকলের পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। খাবার আসতেই সকলে খাওয়া শুরু করল। খাবার খাওয়ার সময় মোমের পায়ে কারো পা লাগায় মোম ঝুঁকে টেবিলের নিচে উঁকি দিল। আগুনের পা দেখে মুখ কুঁচকে ফেলল। মাথা উঠিয়ে আগুনের দিকে তাকায়। আগুনের ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক। মোম হতাশ হয়ে খাবারে মনোযোগ দিল। আগুন ঠোঁট টিপে হেসে পুনরায় একই কাজ করল। আয়মান খাবারের দিকে নজর রেখে ফিচেল গলায় বলল,
” আজ সিঙ্গেল বলে টেবিলের নিচে বউয়ের সাথে রোমান্স করতে পারি না। ”
এ পর্যায়ে মোমের কাশি উঠে গেল। খাবার তালুতে উঠে গিয়েছে। আগুন তুরন্ত পানির ক্লাস এগিয়ে দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আয়মানের দিকে চেয়ে ধমকে বলল,
” কতদিন নিষেধ করেছি খাবার খাওয়ার সময় কথা বলবি না। কানের নিচে একটা দিলে ঠিক হয়ে যাবে। ”
আয়মান ঠোঁট উল্টে জবাব দিল,
” আজকাল সত্যি কথার ভাত নাই। হুহ্! ”
ডিনার করে সকলে বাসায় চলে যায়। ময়ূরী জানায়, কালকে তার স্পেশাল ক্লাস আছে। আয়মানেরও ভার্সিটি খোলা। অগত্যা আগুন একটা টেক্সি গাড়ি ভাড়া করে ওদের গাড়িতে তুলে দিল। মুনিয়া যেতে চাচ্ছিল না, সে বোনের কাছে থাকবে। আগুন বলেছে থাকতে চাইলে থাকবে, সমস্যা নেই। একটা রুম তো ফাঁকা পড়েই থাকে। কিন্তু ময়ূরী তাকে বুঝিয়ে সাথে নিয়ে গিয়েছে। বলেছে গ্রামে যাওয়ার আগে ওর বাবা-মা আরেকবার এসে মোমের সাথে দেখা করে যাবে। মুনিয়া মেনে নেয় তার কথা। মূলত গাড়িতে চড়তে মুনিয়ার বেশ ভালো লাগে। তাই ময়ূরীর সাথে ওই বাড়িতে ফিরে গেল। এতে আবার গাড়ি করে এখানে আসতে পারবে।
বাসায় ফিরে আগুন ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে পড়ল। মোম’কে গলা উঁচিয়ে ডাকল,
” মোম কফি বানাতে পারবে? পারলে এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাও। ”
মোম মৃদু আওয়াজে জবাব দিল,
” জ্বি, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ”
মোম বারান্দা থেকে এসে তাড়াতাড়ি ড্রেস নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। চটজলদি কফি বানিয়ে রুমে আসলো। আগুনের বেডরুমে দুজন এক সাথে বসার মতো একটা সোফা আছে। সেখানেই বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। মোম কফি দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে মোড়া টেনে বসে চুল আঁচড়াতে লাগলো। আগুন কফিতে চুমুক দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
” পড়াশোনা কেমন চলছে? বাংলা প্রথম পত্র না সৃজনশীল পড়তে দিয়ে ছিলাম, পড়ে ছিলে? ”
মোম চুল বিনুনি করতে করতে গোমড়া মুখে উত্তর দিল,
” পড়ার সময় পায়নি। ”
আগুন মৃদু ধমকে গমগমে গলায় বলল,
” কেন সময় পাও নি? রান্না করা ছাড়া তো তোমার আর কোনো কাজ নেই। সারাক্ষণ তো বসেই থাকো। টিভি না দেখে একটু পড়াশোনা করলেও তো পারো। ”
মোম তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে মৃদু আওয়াজে বলল,
” রান্না করা ছাড়া কি আমার কোনো কাজ নেই? শুধু রান্না করলেই হয়? ঘর গোছানো, ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা, থালাবাসন মাজা, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোঁয়া পছন্দ না বলে, নিজের হাতে কাপড় কেচে ধুই। তাহলে সময় কোথায় পাবো? ”
আগুন অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
” বাপরে! আপনি এত কাজ করেন? তা এত কাজ করতে কে বলেছে শুনি? কতবার বলে ছিলাম একজন কাজের লোক নিয়ে আসি, সে ঘরের কাজ করে দিবে সাথে তোমার একজন সঙ্গীও হবে। কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনলে না। ত্যাড়ামি করে কাজের লোক রাখতে নিষেধ করেছিলে। তুমি নাকি এই ছোট্ট সংসার একা হাতে সামলাতে পারবে। এখন এসব কথা বলছো কেন? ”
মোমের মুখটা চুপসে গেল। আগুন একজন কাজের লোক ঠিক করেছিল কিন্তু মোম কাজের লোক রাখতে রাজি হয়নি। আগুন টিভি এনে দেওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝে নিউজ দেখতো। একদিন নিউজে দেখেছিল কাজের মহিলার সাথে বাসার মালিকের অন্তরঙ্গতার মুহূর্ত। যদিও আগুন তেমন না। তবুও মোম কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। এইসব টুকটাক কাজ মোমের জন্য কোনো ব্যাপার না। বাড়িতে থাকতে এসব কাজ মোম করেছে শুধু রান্নাটা একটু কম পারতো। এখন তো নিত্যদিনের রান্নার কাজ মোটামুটি সবই পারে। রান্না তো কেবল একবার করে। এই অল্প কাজের তেমন চাপ নেই। কিন্তু পড়া পড়েনি বলে, কাজের একটা অযুহাত দিল। মোম মিনমিন করে বলল,
” এখন থেকে নিয়মিত পড়াশুনা করবো। পাক্কা। ”
ল্যাপটপে নজর রেখে আগুন চওড়া গলায় বলল,
” রেজাল্ট খারাপ হলে বাবার বাড়ি রেখে আসবো। এমন ফেল ঠুস মার্কা বউ আমার লাগবে না। ”
ফুঁসে উঠল মোম। উঠে এসে কোমরে হাত দিয়ে আগুনের সামনে দাঁড়াল। আগুন ল্যাপটপ সাইডে রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মোম কিছু না বলে হঠাৎ ধপ করে আগুনের কোলে বসে পড়ল। আগুন হকচকিয়ে যায়। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে কিয়ৎকাল। চাউনী শিথিল করে শান্ত কন্ঠে বলে,
” কাজ করছিলাম না? ”
মোম নরম কন্ঠে মুখ কালো করে জবাব দেয়,
” কোনো কাজ করা লাগবে না। এত কাজ করে কি হবে? কাকে খাওয়াবেন? আপনার বাবার তো টাকা পয়সার অভাব নেই। আপনার টাকা তাদের প্রয়োজন হবে না। তাহলে আর শুধু শুধু কাজ করে কি লাভ? ”
আগুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় কোমলমতির দিকে। মুখটা কেমন থমথমে হয়ে আছে। ফর্সা মুখে রক্তিম আভা ছেয়ে রয়েছে। ঘনঘন শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ চালাচ্ছে। চিকন পাতলা অধর জোড়া মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাসি নেই সেথায়। বারবার শুষ্ক ঢোক গিলছে। সবকিছুই ভালো করে অবলোকন করল আগুন। না! অন্য সময়ের মতো এখন মোমের মুখশ্রী লজ্জায় নেতিয়ে পড়ে নি, বরং এই নিষ্পাপ মুখশ্রীতে ফুটে উঠেছে চাপা অভিমান। আগুন দু হাতে জড়িয়ে ধরল অর্ধাঙ্গিনী’কে। মোম ঠোঁট ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আগুন, মোমের ফুলিয়ে রাখা ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিল। শক্তপোক্ত এক হাত বাড়িয়ে মোমের মসৃণ গালে রাখল। মুচকি হেসে বলল,
” এত কাজ করছি বউ পালার জন্য। নিজের শক্তি সামর্থ্য থাকতে আমার বউ আমার বাবার টাকায় চলবে সেটা তো আমি হতে দিতে পারি না। তাই কাজ করা জরুরী। ”
মোম কাতর গলায় বলল,
” তাহলে বললেন কেন, রেজাল্ট খারাপ হলে বাবার বাড়ি রেখে আসবেন? আমি এতটাও খারাপ স্টুডেন্ট না। সবসময়ই ভালো রেজাল্ট করেছি। ক্লাসে হয়তো ফাস্ট গার্ল ছিলাম না, তবে লাস্ট গার্লও হইনি। রোল নাম্বার দুই-তিনের মধ্যে থাকতো। আপনি জানেন? বর্তমানে দশম শ্রেণিতে আমার রোল দুই। ”
” আমি তো মজা করে বলেছি। তুমি রাগ করছো কেন? ”
মোম ছলছল চোখে চেয়ে বলল,
” মজা করেও কক্ষনো আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলবেন না। দেখা গেল হয়তো সত্যি সত্যি একদিন আপনার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছি। তখন হাজার চেষ্টা করেও আমাকে ফিরে পাবেন না। ”
আগুন সজোরে ধমক মারল। সেই ধমকে মোমের ক্ষুদ্র শরীরে কাঁপন ধরায়। আগুন দাঁতে দাঁত চেপে রাগী গলায় বলল,
” সামান্য একটা কথায় তুমি এত আকাশকুসুম ভেবে বসে আছো কেন? অযথা বেশি কথা আমার পছন্দ না মোম। ”
মোম জবাব দেয় না। মুখ গোমড়া করে আগুনের কোল থেকে উঠে পড়তে চায় কিন্তু আগুন ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আজকে অভিমান করে ছোটার জন্য ছটফট করল না। করলেও বেশি সুবিধা হবে না। আগুনের শক্তির সাথে পারবে না সে। শুধুশুধু নিজের শক্তি খরচ করে লাভ নেই। অগত্যা আগুনের কোলে ঘাপটি মেরে বসেই চুপ করে রইল। আগুন মোমের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। গালে গাল ঘষে শান্ত কন্ঠে বলল,
” আর কক্ষনো ওই কথা বলবো না। আর অভিমান করে থেকো না। ঠিক আছে? ”
মোম এবারেও নিশ্চুপ থাকলো। মোমের থুতনিতে আলতো কামড় দিয়ে আগুন একই ভঙ্গিতে বলল,
” উত্তর দেও। বললাম তো আর বলবো না। ”
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৪
মোম জবাব দিল না। আগুন পড়েছে মহা জ্বালায়। বউ যদি কথায় কথায় এমন পটকা মাছের মতো ফুলে থাকে, তাহলে কি করে হবে? মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে রাগ ভাঙানোর অভ্যাস আগুনের নেই। এক হাতে মোমের ঘাড় চেপে ধরে মুখটা একদম আগুনের মুখের কাছে নিয়ে আসলো। গালে ঠোঁট বুলিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
” এত অভিমান ভালো না মোম। বলেছি তো আর এমন কথা বলবো না। ”
মোম শান্ত চোখে তাকায়। মাথা নেড়ে বুঝালো, ঠিক আছে। মুখে কিছু বলল না। আগুন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মোমের গলায় চুম্বন করে শক্ত করে জড়িয়ে রাখল। মোম ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে আগুনের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল।