শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৩
Sabihatul sabha
জবা ভয়ে জমে গেছে।
শার্লিন বেগম বড় বড় চোখ করে রাগী মুখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
অভ্র নিজের বোকামির উপর ভীষণ বিরক্ত হলো। দরজা ভেতর থেকে না লাগিয়ে সে কেন ওয়াশরুমে গিয়ে ছিল!
শার্লিন বেগম দ্রুত পায়ে ভেতরে এসে দুই হাত ঠোঁটের উপর রেখে বলে উঠলো, ‘ আল্লাহ এইসব দেখার আগে কেন আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেল না! কেন মুখের জবানবন্দ হয়ে গেল না!
জবা অভ্র কে ধাক্কা দিয়ে উঠে গেল।
অভ্র লজ্জায় নিজের তোয়ালের দিকে তাকালো। এটা এদিক সেদিক হলেই সব হারাবে আজ!
শার্লিন ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি বার বার বলেছি এই মাসুম, ভুলাভালা চেহারার পেছনে ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে আছে, সুন্দরী মেয়েদের এই একটা অভ্যাস ছিঃ!!
অভ্র শার্লিন বেগমের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ ছোট আম্মু আপনি বসুন আমি আসছি.’
অভ্র ফিরতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
জবা মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।
শার্লিন বেগম জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি বিধবা! স্বামী মারা গেছে নষ্টামী করার হলে বাহিরে গিয়ে করতে তাই বলে আমাদের ছেলের সাথে যে আজ বাদে কাল আমার মেয়ের স্বামী হবে তার সাথে ? বেলী জানতে পারলে ঠিক কতোটা কষ্ট পাবে.? বার বার ওকে আমি বুঝিয়েছি আজ যাকে আপন ভেবে বুকে টেনে নিচ্ছিস কাল সে তোর বুকেই ছুরি বসাবে হলোও ত তাই!
জবা কোনো কথা বলছে না, লজ্জা নাকি অপরাধবোধে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে!
অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে শার্লিন বেগমের সামনে একটা চেয়ার রেখে বসলো।
জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভাবি প্লিজ ছোট আম্মুকে এক গ্লাস পানি দেন!’
জবা পানির গ্লাসে হাত দেওয়ার আগেই শার্লিন বলে উঠলো, ‘ আর ভালো মানুষ সাজতে হবে না তোমাদের কারো, আমি যা দেখার সব দেখে ফেলেছি। আমার ঘৃণ্ণা হচ্ছে তোমার ভাইয়ের বউ ছিল অভ্র! ‘
অভ্র সব সময় শান্ত আর গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ কিন্তু রেগে গেলে ভিন্ন বিষয়!
অভ্র শার্লিন বেগমের দিক থেকে চোখ সরিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বললো,’ আপনি যা দেখেছেন এবং যা ভাবছেন সবটাই ভুল ছোট আম্মু!’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ ভুল! এখনো ভুল.? আমি ছোট বাচ্চা.? ‘
‘ তিল কে তাল কেন বানাচ্ছেন.? ‘
‘ এখন আমার দোষ.? আসলে চোরের দোষ থাকে না যে চোর ধরে তার সবচেয়ে বড় দোষ! ‘
‘ সবটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি! ‘
‘ তাহলে সত্যিটা কি.?’
‘ সত্যিটা এটাই জবা ভাবি উনার একটা ডাইরি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন উনি খুঁজতে খুঁজতে আমার রুমে চলে আসেন’
‘ এতো রুম থাকতে তোমার রুমে কেন.? আর ও কি পড়াশোনা যানে যে ওর কাছে ডায়েরি থাকবে.? বোকা পেয়েছো আমাকে.?’
‘ ছোট আম্মু বেলী ডায়েরি একটা আমার রুমে রেখে ছিল, এসে ছিল কিছু পড়া বুঝতে সাথে একটা ডায়েরি ছিল আর ও জবা কে বলেছে আমার রুমে ডায়েরি রেখে গেছে ‘
এবার একটু শান্ত হলো শার্লিন তারপর আবার বলে উঠলো, ‘ ডায়েরির সাথে এভাবে… বলতে গিয়েও লজ্জায় চুপ হয়ে গেল শার্লিন বেগম’
‘ এটা একটা এক্সিডেন্ট, আমি ওয়াশরুম থেকে শার্ট নেওয়ার জন্য বের হলাম আর হঠাৎ আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন জবা, যেহেতু ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছি তাই নিচে পানি পরে ছিল তার সাথে পিছলে উনি আমার উপর পরেন আর আমি তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় তখনি আপনি এসে হাজির। ‘
কথায় যুক্তি পেয়ে চুপ করে বসে রইলো শার্লিন বেগম।
জবা ডায়েরিটা হাতে নিয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
শার্লিন বেগম মনে মনে কয়েক বার বলে উঠলো ” মায়া”
ডায়েরি বিছানার উপরে ছিল যা শার্লিন বেগমের চোখে পড়ে, ডায়েরির উপরে সুন্দর করে বড় বড় অক্ষরে লেখা ” মায়া”
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না তবে আয়ানের বিষয় হলে আলাদা ওর সময় থমকে থাকে জবার দরজার দিকে।
জবার কথা ভাবতে ভাবতে সে কম্পিউটারে নিরুপমা নিরু সার্চ দিল।
ফেসবুক একাউন্ট পেয়ে গেলো সাথে সাথে সেখানে বেশ কিছু ভিডিও আছে নিরুপমা নিরুর, এক একটা ভিডিওর ভিউ দেখে আয়ানের চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। মানে কি ভাই এই সিআইডি অফিসার ত বেশ ফেমাস। ভালো করে খুঁজ নিতে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে তেমন কিছু পেল না। পার্সোনাল বিষয় কিছুই লেখা নেই সেখানে সব কাজের বিষয় ভীষণ দ্বায়িত্বশীল অফিসার।
কম্পিউটার বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে কপালে আঙ্গুল দিয়ে কিছু একটা মিলানোর চেষ্টা করলো আয়ান।
নিরুপমা নিরুর বিষয় জানার এতো আগ্রহ কেন আয়ানের.? তার পার্সোনালিটি.? নাকি এটিটিউড? কথার ধরন খুবই সুন্দর সাবলীল।
মুখে মাক্স, চোখে চশমা, মাথায় ক্যাপ, সাথে সাদা শার্ট ছেলে নাকি মেয়ে কন্ঠ না শুনলে কেউ বুঝতেই পারবে না। এতো রুক্ষ কন্ঠ অথচ মেয়েরা মায়ের জাত, মেয়েদের কন্ঠে থাকবে এক ঝাক মধু, কথা শুনলে মনে হবে শীতল নদী, অথচ এই মেয়ে পুরাই আগুন!!
আয়ান ঘার কাত করে তাকালো জবার দরজার দিকে, মেয়েরা হবে আমার জবার মতো। দেখলে দেখতেই ইচ্ছে হবে, কথা শুনলে শুনতেই ইচ্ছে হবে, হাঁটা দেখলে হৃদয় থমকে যাবে।
বেলী দ্রুত এসে জবার রুম থেকে জবাকে নিয়ে নিচে আসলো।
জবা এক হাতে ঘোমটা টেনে ধরে ধীর পায়ে নিচে নেমে আসলো।
বেলী নিচে এসে লেগে গেল আয়ানের সাথে ঝগড়া। সে এখন হরর মুভি দেখবে আয়ান যেনো তার রুমে চলে যায় ।
আয়ান ঝগড়া মুডে পেছন ঘুরে জবা কে দেখে থমকে গেলো।
ডাগরডাগর চোখ, ঘোমটা টেনে ধরে আছে এক হাতে..
আয়ান বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমিও দেখবো! ‘
‘ কি.? সর আয়ানের বাচ্চা, আমি, জবা, মৌরি হরর মুভি দেখবো। ‘
‘ আমি সাথে থাকলে সমস্যা কি.?’
‘ এতো বড় ছেলে আমাদের সাথে কেন দেখবে.? তুই অভ্র ভাইয়ার কাছে যা”
‘ বেলী অভ্র আমার ছোট অথচ তুই আমাকে তুই করে বলিস আর অভ্র কে ভাই.? ‘
‘ যে যেটার যোগ্য!’
আগুনে ঘি ঢালার মতো কথা ছিল এটা। আয়ান রেগে গেলো।
দুই জনের ঝগড়া তুমুল থেকে তুমুল হতে লাগলো।
মৌরির রুম থেকে বাহিরে চিৎকার চেচামেচি শুনা যাচ্ছে। সাথে সাথে মৌরির মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো।
একটু আগে মৌরি সিঁড়ির সামনে জবার জন্য তেল ফেলে এসে ছিল। নিশ্চয়ই জবা নামতে গিয়ে পিছলে পড়েছে! আমার আয়ানের আশেপাশে কেউ আসতে চাইলে আমি তাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিব! দরকার হলে দুনিয়া থেকে।
মৌরি এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে এসে বিকট শব্দে চিৎকার করে উল্টিয়ে নিচে পরলো।
ঝগড়া বন্ধ হয়ে গেল আয়ান আর বেলীর। সবাই ভয়ার্ত চোখে পেছন ফিরে দেখলো সিঁড়ির নিচে পরে আছে মৌরি। দৌড়ে সবাই আসলো চিতকার চেচামেচি শুনে।
শুধু পেছন ভিলেনী হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে জবা। তার মানে নিশ্চয়ই জবা কিছু করেছে! তাহলে কি মৌরির প্লান আগে থেকে জবা জানতো.? আর সেই প্লান ওর দিকেই কৌশলে ঘুরিয়ে দিয়ে ছিল।
মৌরি কে হসপিটাল নিয়ে গেছে আয়ান সাথে গেছে বাড়ির অন্যন্য সদস্য।
জবা মনের সুখে রুমে এসে গুণগুণ করে গান গাইছে আর রুম গুচাচ্ছে।
দরজায় কষাঘাত কয়েকবার করলো কুলসুম বেগম।
জবা দরজার দিকে তাকাতেই কুলসুম বেগম বলে উঠলো, ‘ আমার সময় নেই তুমি অভ্রের সাথে আজ একবার হসপিটালে গিয়ে চেকআপ করে আসবে আর সব ডিটেইলস বলবে সাথে সাথে আমার কাছে পাঠাতে।
জবা ভদ্র মেয়ের মতো আচ্ছা বলে দাঁড়িয়ে রইলো।
কুলসুম বেগম যেতেই জবা ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। আর কয়েকটা প্রমাণ তারপর সে সবকিছুর মুখোশ সামনে আনবে, আর কয়টা দিন এইসব সহ্য করে যেতে হবে।
কুলসুম বেগম যেতেই ওর দরজার সামনে এসে হাজির অভ্র।
জবা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো অভ্রের দিকে তবে বেশিক্ষণ সেই বিরক্ত ধরে রাখতো পারলো না।
অভ্রের হাসি দেখে জবা অন্য পাশে ফিরে বুকে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ উফফফ আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত এভাবে কেউ হাসে.?’
অভ্র পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? তুমি ঠিক আছ.?’
‘ জবা বোকার মতো বলে উঠলো, ‘ উঁহু একদম ঠিক নেই’
অভ্র ব্যস্ত কন্ঠে বললো,’ কি হয়েছে.? ‘
‘ বুকে ব্যাথা’
‘ হঠাৎ বুকে ব্যাথা! একটা গ্যাস্টিকের টেবলেট খেয়ে নেন তারপর একটু রেস্ট নেন ঠিক হয়ে যাবে।’
জবা বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এই ব্যাথা ত গ্যাস্টিকের না’
অভ্র অবাক হয়ে বললো,’ তাহলে কিসের.? ‘
শেষ থেকে শুরু পর্ব ১২
জবা অভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ডাক্তার ত আপনি, আপনিই বলে দেন! দেখি কেমন ডাক্তার আপনি রোগীর রোগ ধরতে পারেন কিনা!’
অভ্র সাথে সাথে জবার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,’ আমি মনের ডাক্তার নই!’
খিলখিল করে হেঁসে উঠলো জবা!