শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৪

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৪
Sabihatul sabha

জবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাহাড়ের আঁকাবাকা রাস্তা থেকে নিচের দিকে।
ঠিক এ-ই জায়গা থেকে আসিফের গাড়ি নিচে পড়ে ছিল! নিচে জংগল, সবার ধারনা জংগলে আসিফের লাশ পড়ে ছিল রাতে হয়তো জীবজন্তু ওর লাশটা টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে খেয়েছে।
এতোদিন সবার মতো জবাও এটাই ভেবে ছিল, তেমন ভালো করে ভেবে দেখেনি।আজ এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে সবটা একটা বানানো প্লান।
জবা গভীর কিছু ভেবে আলিফ কে বললো,’ তোমার কি মনে হয় আলিফ.? সবটা এক্সিডেন্ট.? ‘
আলিফ জবার পাশেই ছিল, ‘ না ম্যাডাম, মনে ত হয় না’
জবা আর আলিফ এইসব ভাবতে ব্যস্ত তখনি জবার মোবাইল ভেজে উঠলো।
কল রিসিভ করে কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ নিরুপমা নিরু! ‘

‘ ইয়েস’
‘ আমাকে চিনতে পেরেছেন.? ‘
‘ পরিচয় না দিলে কিভাবে চিনব.?’
‘ আমি আয়ান চৌধুরী ‘
‘ আপনি কি কোনো সেলিব্রিটি যে নাম বললেই আমি চিনে ফেলবো!’
‘ তার মানে আপনি শুধু সেলিব্রিটি দের নাম মনে রাখেন.?’
‘ আমার মন এতো বড় এখনো হতে পারেনি যারতার নাম মনে রাখার মতো!’
অপমানে, রাগে আয়ান টেবিলের উপর ফুলের টব শক্ত করে চেপে ধরলো। এই মেয়ে সব সম্ভব অতিরিক্ত এটিটিউড দেখায়।
‘ আপনি কি কিছু বলবেন.? নাকি কল কেটে দিব.?’
‘ আমি পুলিশ অফিসার আয়ান চৌধুরী ‘
নিরুপমার কন্ঠস্বর আগের মতো শোনালো ‘ তা কেন কল দিয়েছেন.?’
‘ কেইসের বিষয় কথা বলতে ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিরুপমার কন্ঠে বিরক্তি ভাব স্পষ্ট, ‘ কি বলবেন পাঁচ মিনিটের ভেতর বলুন’
আয়ানের ইচ্ছে করলো ফোন কেটে দিতে, একটা মেয়ে কিভাবে এমন ধারালো ছুরির মতো কথা বলতে পারে ? কথায় কোনো মায়া নেই, স্বাদ নেই, এটা কেমন মেয়ে.? এর পরিবার একে সহ্য করে কিভাবে.? এর কি বিয়ে হয়েছে.? থুর আমি এইসব কি ভাবছি! এমন কথা শুনলে ছেলেরা দৌড়ে পালাবে বিয়ে পর্যন্ত যেতে হলে ওর মতো একটা দানব মানব লাগবে। রসকষহীন কাঠখোট্টা একটা পাষাণ পুরুষ লাগবে। এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু!
নিরুপমা বিরক্ত হলো। আয়ান অনেক সময় ধরে চুপ করে আছে।
” আপনাকে দেওয়া ৫ মিনিটের মধ্যে চার মিনিট শেষ ”
আয়ান নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি সরি একটা কাজ মনে পরে গিয়ে ছিল’
” কল দেওয়ার পর কেন এতোকিছু আপনাদের মনে পরে ”
আয়ান থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখন এতো প্রশ্ন করে বাকি এক মিনিট শেষ করে দিবেন!’

” শুরু করুন”
” যেই মেয়েটাকে রেপ করা হয়েছে তার কিছু ফ্রেন্ড এসে অনেক ঝামেলা করে গেছে।”
” এইসব আমাকে কেন বলছেন.? ”
” কথা শেষ করি.?”
” জ্বি বলুন।”
” মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ বলা যায় ওখানে একজন ছেলে নয় পাঁচ জন ছেলে ছিল ”
নিরুপমার চোখে জল জমে উঠে চোখের সামনে ভেসে উঠে কিছু পুরনো স্মৃতি।
” নিরুপমা আপনি শুনতে পাচ্ছেন”
” জ্বি”
” এখন মেয়েটার নাম ঈশা, সে বেশি কিছু বলছে না। আমি আজ হসপিটালে গিয়ে ছিলাম। খুব জলদি অপরাধী ধরা না পরলে সব স্টুডেন্ট রাস্তায় বের হবে, সমস্যা বাড়তেই থাকবে।”
” আমি দেখছি।”

” আরেকটা কথা”
” বলুন”
” আমার মনে হচ্ছে আপনার একবার ওর ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়া উচিত লাস্ট ত ও ফ্রেন্ডের বিয়েতে ওদের বাসায় ছিল”
নিরুপমা কিছু একটা ভেবে বললো,’ এড্রেস পাঠিয়ে দেন ‘
আলিফ নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ম্যাডাম আপনার চোখে পানি!’
নিরুপমা চটজলদি চোখ মুছে বলে উঠলো, ‘ চোখে কি জেনো পড়েছে’
কথাটা বিশ্বাস হলো না আলিফের তবুও চুপচাপ এটাই মেনে নিল। সে ত জানে নিরুপমা কেমন”
গাড়ি থেকে আছে একটা বিশাল বড় বাড়ির সামনে।
আলিফ নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ম্যাডাম একা যাবেন.?’
নিরুপমা আলিফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার বাইক কোথায়.?’
আলিফ মাথার চুল চুলকাতে চুলকাতে বললো,’ আনিনি ত ম্যাডাম’
‘ আলিফ তুমি আমাকে আপু বলে ডাকবে, ম্যাডাম ভালো লাগে না ‘

আলিফ খুশি হয়ে গেলো।
নিরুপমা আলিফকে বললো, ‘ পেছনে একটা রিক্সা নিয়ে আমাকে ফলো করবে কেমন!’
আলিফ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
নিরুপমার গায়ে নীল থ্রি পিস সাথে মুখে হাল্কা মেকআপ, ওড়না এক পাশে দেওয়া, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। যে কেউ দেখলে প্রথম দেখায় চোখ সরানো মৃত্যুর মতো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
নিরুপমা বাড়ির ভেতরে এসে আশেপাশে তাকালো। বিশাল বড় বাড়ি হলেও বাড়িতে তেমন কাউকে চোখে পরছে না।

একজন মহিলা চোখ মুখ কুঁচকে এদিকেই আসছে। হঠাৎ নিরুপমার উপর চোখ পরতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ বড় বেগম গো দেইখা যান একখান পরী নাইমা আইছে আমগর বাড়িতে’
এতো বড় চিৎকার ছিল যে বাড়ির ভেতর থেকে একজন মহিলা দ্রুত বেড়িয়ে আসলো। মহিলার পেছন পেছন একটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে বেড়িয়ে আসলো।
সবাই দরজার সামনে এসে থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো নিরুপমার দিকে। মেয়ে দুইটা ফিসফিস করে কি জেনো বলছে।
নিরুপমা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,’ আসলে একটু পানি…’
মহিলাটা জহুরি চোখে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কে.?’
‘ আমি নিরু নিরুপমা ‘
‘ এখানে কি.?’
‘ এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম ভীষণ পানির পিপাসা পেয়ে ছিল’
মহিলাটা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভেতরে আসো’
চিৎকার করা মহিলাটর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ফিরুজা যাও উনার জন্য পানি নিয়ে আসো’
কি আজব! ফিরুজা হা করে এখনো তাকিয়ে আছে নিরুপমার দিকে।
‘ফিরুজা!’
বেগমের ধনকে ধ্যান ভাঙলো ফিরুজার।

নিরুপমার সবার দিকে তাকিয়ে ঈগল চোখে তাকালো সবার পেছন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা এখনো এক ধ্যানে কেমন চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিরুপমার সারা শরীর দেখছে।
নিরুপমা হেঁসে ভেতরে ঢুকলো। পানি খেয়ে বললো,’ ধন্যবাদ আন্টি এখন আমি আসি’
‘ তোমার বাড়ি কোথায়.? কোথায় থাকো.?’
মহিলার আগ্রহ দেখে মনে মনে নিরুপমা আবারও হাসলো।
মহিলা আবার বলে উঠলো, ‘ আমার ছেলে হিরন বলেই একটা ছেলেকে ঢেকে আনলো। ডাকার প্রয়োজন হয়নি হিরন নাম নিতেই ছেলে হাজির। দরজায় দাঁড়ানো ছেলেটা এটা।
মহিলার মতিগতি নিরুপমা বুঝলো৷ ছেলের বউ করে আনার জন্য এমন আজব আজব কথা বলছে।
নিরুপমা, ‘ আন্টি আমি এখানে নতুন, সামনের মোড়ে আমার বাসা এখন আসি’
” দাঁড়াও ”
নিরুপমা আশেপাশে আবার তাকালো।
মহিলা সেই ছেলেটাকে আবার ডেকে বললো,’ মেয়েটা একা একা বাসায় যাবে তুই একটু এগিয়ে দিয়ে আয়’
যেনো ছেলেটা এমন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

মনে মনে হাসলো নিরুপমা।
গাড়িতে বসে আছে নিরুপমা আর হিরন।
নিরুপমা গরম লাগছে এমন ভাব করে ওড়নাটা সরিয়ে রাখলো।
হিরন গাড়ি চালানো থেকে বেশি চোখ যাচ্ছে নিরুপমার দিকে।
নিরুপমা মাদক চোখে তাকিয়ে রইলো হিরনের দিকে।
হিরনের মাথা ধরে যাওয়ার মতো নেশা উঠে গেলো।
নিরুপমা ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
হিরন গাড়ি থামিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো।
নিরুপমা একটু ঝুঁকে বললো,’ আপনি ঠিক আছেন.? বাসা ত আরও সামনে। ‘
হিরন নেশা চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ কিন্তু…

হিরন কিছু বলার আগেই নিরুপমা বলে উঠলো, ‘ ইশশশ অনেকটা ঘেমে গেছেন।’
নিরুপমা রুমাল দিয়ে হিরনের কপাল মুছতে এগিয়ে আসলো।
হিরন চোখ বন্ধ করে নিল, চোখ বন্ধ করে নিরুপমার হাতের ছোঁয়া পাওয়ার অপেক্ষা।
নিরুপমা হিরনের কপাল থেকে রুমাল নিয়ে নাকে চেপে ধরলো।
হিরন কিছু বুঝে উঠার আগেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো৷
অনেক কষ্টে নিরুপমার দিকে আঙ্গুল তক করে বলে উঠলো, ‘ তুমি.. তুমি.. আর কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারায়।’
নিরুপমা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে আলিফ কে কল দিয়ে বলল,’ কাজ হয়ে গেছে গাড়িতে চলে আসলো৷ ‘
আলিফ দ্রুত গাড়িতে এসে দেখে ছেলেটা জ্ঞান হারিয়েছে।
” এটাকে এখন কি করবে আপু.?’
‘ এটাকে নিয়ে হাত পা বেঁধে রাখো রাতে আমি আবার আসবো। তখন এর ব্যাবস্থা করবো’

অনেক কষ্টে ব্যালকনিতে আসলো নিরুপমা। প্রতিদিন এভাবে দুই তলায় উঠতে নামতে একদম সহজ হয়ে গেছে এটা কিন্তু আজ মনে হচ্ছে শরীর চলছে না।
নিরুপমা ব্যালকনি থেকে রুমে পা দিবে তখনি পেছন থেকে শুনতে পেলো,’ জবা আপনার বিয়ে কোন কাজী অফিসে হয়ে ছিল.?’
এমন একটা প্রশ্ন শুনতেই পা থমকে গেলো জবার।
অভ্র নিজের ব্যালকনি থেকে প্রশ্ন ছুঁড়েছে জবার দিকে।
জবা পেছন ফিরে বুকে দুইহাত গুঁজে বলে উঠলো, ‘ এটা জেনে আপনার কাজ কি.?’
‘ অবশ্যই কাজ আছে, আমার ভাইয়ের বউ আপনি, ভাইয়ের বিয়ের গল্প সবার শুনতে ইচ্ছে হয়!’
‘ কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না’

‘ অভ্র জবার কথায় ওর দিকে আবার প্রশ্ন ছুড়লো,’ বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে কি কি শর্ত রেখে ছিলেন.?’
জবা ভেতর ভেতর ভীষণ ভয় পেলো তাও সাহস দেখিয়ে বললো,’ শর্ত!.? কিসের শর্ত!.? ‘
‘ সেটা ত আপনি ভালো জানেন’
জবা ভয়ে জমে গেলো, এতোক্ষণ ক্লান্ত শরীর ভয়ে কেমন ঝিমঝিম করছে। তাহলে কি অভ্র সব বুঝে গেছে কিভাবে.? আসিফ আর আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কিছু জানে না।’
অভ্র জবার দিকে একটা আপেল ছুড়ে মেরে বললো,’ খেয়ে নিন ঝিমঝিম করা মাথা ঠিক হয়ে যাবে ‘
জবা আপেল হাতে নিয়ে অভ্রের দিকে ছুড়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আমাদের বিষয় থেকে দূরে থাকেন, এইসব আপনার ভাবতে হবে না’
‘ ভাবতে কে চায় বলেন.? কিন্তু ভাবতে ত হয়.!! ভাবি বলে কথা’
‘ ভাবি… বউ নই ওকে.?’
‘ হতে কতক্ষণ! ‘
অভ্রের এমন কথায় জবা আরও রেগে গেলো,’ আপনার বউ হওয়ার থেকে মরে যাওয়া ভালো’
অভ্র ব্যালকনিতে একটু ঝুঁকে বলে উঠলো, ‘ তাহলে মরে যান আমার উপর, দাফন করে নিব আমার বুকে’
জবা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ ফালতু’

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৩

অভ্র বুকে হাত দিয়ে বললো,’ ইশশশ বুকে এসে লেগেছে এতো সুন্দর করে কেউ ফালতু বলে’
জবা বুঝলো ওর সাথে বকবক করে লাভ নেই, জবা আরও কথার জালে ফেঁসে যাবে।
জবা ভেতরে চলে যায়, পেছন থেকে অভ্র আবার বলে, ‘ আপনাদের কাজীর সাথে আজ দেখা হলো’
জবা নিজের রুম থেকে একটা বই অভ্রের দিকে ছুড়ে বলে উঠে, ‘ বেয়াদব ছেলে’
অভ্র হু হু করে হেসে বললো।
জবা মনে মনে বলে উঠলো, ‘ কাজীর সাথে দেখা করেছে! হুহ্ বিয়ে করলে ত কাজী আসবে আজব!’
অভ্র হয়তো জবার মনের কথাটা বুঝতে পারলো। সে আরও শব্দ করে হেঁসে উঠলো।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৫