শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৮
Sabihatul sabha
চারপাশে লাইটিং করা লাল সবুজ বাতি জ্বলছে।
ফুলে ফুলে সাজিয়েছে আজ ছাদঁটা আয়ান, মৌরি সব কাজিন মিলে।
জবা নিজের রুমে বেলীর সামনে বসে আছে।
বেলীর মুখের এই জ্বলজ্বল করা হাসি দেখে জবার কিছু সময়ের জন্য সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেলো৷ মেয়েটা বিয়েতে এতো খুশি যে কেউ ওর মুখ দেখলেই বুঝতে পারবে।
বেলী জবার সামনে কড়া হলুদ শাড়ি নিয়ে বসে আছে।
‘ ভাবি তোমার মতো করে শাড়ি পড়িয়ে দাও’
বেলীর বাচ্চাদের মতো আবদারটা বুকে গিয়ে লাগলো জবার। মনে হলো ছোট বোন সামনে বসে আছে।
জবা শাড়ি হাতে নিয়ে বললো,’ এসো!’
বেলী খুশিতে জবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ তুমি এতো ভালো কেন.? ‘
‘ তুমিও অনেক বেশি ভালো বেলী, যে যেমন তার কাছে ওপর পক্ষের মানুষটিকে তাই মনে হয়।’
বেলী হেঁসে বললো,’ তোমার জন্যও একটা গিফট এনেছি।’
জবা বেলীকে শাড়ি পড়াতে পড়াতে হেঁসে বললো, ‘ কি গিফট.? ‘
বেলী বুকে হাত দিয়ে পেছনের দিকে হেলে গিয়ে অভিনয় করে বললো,’ এভাবে হেঁসো না প্লিজ আমার হার্টবিট বেড়ে যায়! ‘
জবা বেলীর অভিনয় দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। মুগ্ধ চোখে বেলী তাকিয়ে রইলো জবার দিকে আর মনে মনে বলে উঠলো, ‘ তোমার মুখের এই হাসি ফিরে আসুক, এমন হাসিতে তোমাকে মানায়!’
জবার দিকে বেলীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জবা বলে উঠলো, ‘ এভাবে কি দেখছো.?’
‘ তোমাকে!’
জবা মুচকি হেঁসে বললো,’ ইশশ কেন ছেলে হলে না টুপ করে বিয়ে করে নিতাম এই মুগ্ধ চোখের মেয়েটাকে।’
বেলী লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলো, ‘ পরের জন্মে ছেলে হয়ে জন্মনিব তোমার জন্য সুন্দরী! ‘
দুইজন হাসাহাসি করে রেডি হলো। জবা সাজগোজ তেমন পারে না বেলী নিজেই সেজে নিল। বেলী রেডি হয়ে জবার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,’ আয়ান ভাই দিতে বলে ছিল তোমাকে এটা তোমার গিফট ‘
জবা তেমন আগ্রহ দেখালো না। প্যাকেটের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।
বেলী আবার বলে উঠলো, ‘ একটা সিক্রেট বলি.?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ হুম বলো’
‘ গিফট আয়ান ভাইয়া করলেও পছন্দ কিন্তু আমার উনি করেছে মানে অভ্র ভাই ‘
তাতেও জবার কোনো তেমন হেলদোল দেখা গেলো না। সে বেলীর দিকে তাকিয়ে গালে হাত রেখে বললো,’ কোনো কালো ছায়া এই মিষ্টি মেয়েটার জীবনে না আসুক, সব সময় এমন প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি থেকো, সব সময় এটা মনে রাখবে নিজের সুখ নিজে আদায় করে নিতে হয়, ছিনিয়ে নিতে হয় অন্য কেউ আসবে না সুখী করতে, সবাই আসে দুঃখ দিতে তুমি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি কি চাও! দুঃখ নাকি সুখ! এভাবে সব সময় থেকো!’
বেলী আরও একবার জবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ তুমি প্রেগন্যান্ট না তাই না.?’
বেলীর মুখে এমন কথা শুনে জবা জেনো ফ্রিজের মতো জমে গেলো।
বেলী শাড়ি ঠিক করে বললো,’ রেডি হয়ে ছাঁদে এসো,এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি প্রথম দিন বুঝতে পেরে ছিলাম কাউকে বলবো না।’
মেহেদী অনুষ্ঠান চলছে।
জবা আয়ানের দেওয়া হলুদের মধ্যে লাল পাড়ের শাড়িটা পড়ে ছাঁদে আসলো। মুখে কোনো সাজসজ্জা নেই, চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে।
জবার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। প্রায় সবার চোখ ঘুরে ঘুরে বার বার জবার দিকে আঁটকে যাচ্ছে। একটা মেয়ে কেন এত সুন্দর হতে হবে.? আয়ান বেচারার অবস্থা নাই বলি। মৌরি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে।
একটু পর অভ্র আসলো ছাঁদে। একবার সবার দিকে তাকিয়ে দূরে গিয়ে রেলিঙের উপর বসলো।
বেলী লজ্জায় বার বার লাল হয়ে যাচ্ছে।
পার্লার থেকে মেয়েরা বেলীকে বাকি সব মেয়েদের মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।
বেলীর মেহেদী আর্টিস্ট জিজ্ঞেস করলো ‘ আপু আপনার বরের নাম কি.?’
বেলী লাজুক হেঁসে তাকালো দূরে বসা অভ্রের দিকে। অভ্র মোবাইলে কি জেনো করছে।
‘ অভ্র ‘
মেয়েটা সুন্দর করে মেহেদীর মাঝ খানে ‘ অভ্র ‘ নামটা লিখলো।
বেলীর মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্নের মতো। এতো সহজে সে তার সখের পুরুষ কে পেয়ে যাচ্ছে। আনন্দে চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো। এটা দুঃখের জল নয়, সুখের আনন্দের কান্না।
আয়ান জবার পাশে এসে দাঁড়ালো।
জবার দিকে তাকিয়ে মাথার চুল চুলকে বললো,’ আপনাকে সুন্দর লাগছে।’
‘ ধন্যবাদ ‘
‘ শুধু ধন্যবাদ.? ‘
‘ ত.?’
আয়ান হতাশ হয়ে বললো,’ নাহ্ কিছু না’
জবা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ চলেন কাজী অফিসে ‘
আয়ান দ্রুত অবাক হয়ে জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কেন.?’
‘ কি বোকা আপনি! কাজী অফিস কেন যায় মানুষ.? ‘
‘ বিয়ে করতে ‘
জবা মুচকি হাসলো।
আয়ান বলে উঠলো, ‘ সত্যি..? আমি ত রেডি এমনিতেই ছোট ভাই বড় ভাইয়ের আগে বিয়ে করে নিচ্ছে লোকে কি বলবে.? চলেন বিয়ে করে নেই’
জবা আয়ানের দিকে ঘুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ এতো তারাহুরো কিসের.? কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না!’
‘ তবুও বড্ড ভয় হয় যে’
‘ কিসের.? ‘
‘ আপনাকে হারানোর! মনে হয় এই বুঝি আপনাকে হারিয়ে ফেললাম, ঘুম ভাঙলেই আপনি অন্য কারো! ‘
জবা হাঁটতে হাটতে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
আয়ান তাকিয়ে রইলো জবার যাওয়ার দিকে।
জবা পেছন ফিরে বললো,’ কোথাও যাচ্ছি না আমি! আপনি না গেলেই হলো’
আজ বিয়ে এতো বড় আয়োজন করা হয়েছে চৌধুরী বাড়ির ছেলে মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
বেলীকে পার্লার থেকে সাজানো হয়েছে। এক এক কাজিনের হাসি ঠাট্টা শুনে লজ্জায় বেলী মরি মরি অবস্থা!
জবা নিজের রুমে সুন্দর দেখে একটা শাড়ি পড়ে নিল। এটা আসিফ দিয়ে ছিল জবাকে এই বাড়িতে এনে। আসিফের দেওয়া প্রথম শাড়ি ছিল! কোথায় আছে আসিফ.? জবা শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তোমাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবো আসিফ, তোমার কাছে যে আমি অনেক ঋণী।আমার মন বলছে তুমি বেঁচে আছো।
অভ্রকে দেখে সব সময় মনে হয়েছে সে বিয়ে নিয়ে খুশি। জবা খেয়াল করেছে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে অভ্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি সে নিষেধ করেনি। সে বিয়েতে রাজি এটা সব সময় বুঝিয়েছে।
বেলী অভ্র খুশি ত জবাও খুশি।
জবা খুব জলদি সবকিছু শেষ করে এই বাড়ি থেকে চলে যাবে। শুধু বিয়েটা শেষ হোক সব কয়টা পাপির মুখুশ টেনে হেঁচড়ে খুলবে।
বেলী জবাকে দেখে হাসলো। জবার মনে হলো ওর দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি বউ সেজে বসে আছে। কথায় আছে না ‘ বিয়ের সাজে মেয়েদের সৌন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে যায় বেলীকে দেখে আজ তাই মনে হচ্ছে।
সামনে দুইজন পেছনে দুইজন বিয়ের ছাউনি মাথার উপর ধরে রেখেছে মাঝে বেলী।
সামনে জবা একপাশ অন্য পাশ মৌরি ধরে রেখেছে।
গান বাজছে, ক্যামেরা ম্যান ভিডিও করছে। দুই পাশে বিয়ের গেস্ট আর মাঝ খান দিয়ে বেলীকে নিয়ে আশা হচ্ছে। বেলীর চোখে মুখে খুশি উপচে পরছে।
বেলীকে স্টেজে বসিয়ে সবাই তাকিয়ে রইলো ছেলে পক্ষ আশার দিকে। সেকেন্ড, মিনিট পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ আসছে না।
ছেলের সাথে আয়ান আর কাজিন, বন্ধু আশার কথা কিন্তু কারো কোনো খবর নেই।
কুলসুম বেগম কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন। কি করবেন বুঝে পাচ্ছেন না!
শার্লিন বেগম হেঁচকি তুলে কান্না করছেন। শফিক সাহেব, শরিফ সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছে।
আয়ান দূরে দাঁড়িয়ে তাদের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে।
সবাই দেখলো ছেলে পক্ষ আসছে আবার গান বাজছে, ভিডিও হচ্ছে, কাজিন, বন্ধুরা নাচছে অথচ বর যেনো পাথর হয়ে গেছে। বরের পা চলছে না।
বেলী স্টেজে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে, বর আসছে বলার পর থেকে লজ্জা ঘিরে ধরেছে।
বর চুপচাপ বেলীর পাশের স্টেজে বসলো।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুধু করলো।
প্রথম বেলীকে কবুল বলতে বলা হলো। বেলী খুশিতে ‘ কবুল! কবুল! কবুল বলে চিৎকার করে উঠলো। ‘
নিজের এমন উত্তেজনায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। হেঁসে উঠলো আশেপাশে সবাই।
কাজী হেসে বললো,’ একবার বলতে বলে ছিলাম তিনবার বলে ফেললে! ‘
বেলী মনে মনে বলে উঠলো, ‘ সখের পুরুষ বলে কথা! আর এখন ত বর!’
কাজী এইবার বর কে বলে উঠলো, ‘ শফিক সাহেবের একমাত্র ছেলে আয়ান চৌধুরী আপনি বিয়েতে রাজি হলে বিসমিল্লাহ বলে বলুন ‘ কবুল!’
শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭
বেলীর কানে কোনো নাম নয় মনে হলো কেউ আগুনের লাভা ঢেলে দিয়েছে। শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা শরীরে উঠে দাঁড়াতে চাইলে মনে হলো মাথা ঘুরছে।
দাঁড়িয়ে নিজের বরের দিকে তাকিয়ে ‘ এ হতে পারে না ‘ অতিরিক্ত শকটের কারনে জ্ঞান হারালো।
ঢলে নিচে পড়ার আগেই জবা ওকে ধরে ফেললো।