শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৮
Sabihatul sabha
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না, আজকাল ত মানুষ মানুষের জন্য থেকে থাকে না সেখানে ত সময় …
নিরুপমা নিজের বাড়িতে চলে গেছে আজ এক সপ্তাহ হলো।বিশাল বড় বাড়ি নয় আবার ছোট ও নয় খুব সুন্দর একটা বাড়ি।
বাড়ির চারপাশে দেয়াল মাঝ খানে বাড়িটা। বাড়ি আর দেয়ালের মাঝে ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ।
কেউ হঠাৎ এই বাড়ির গেইট খুলে ভেতরে আসলে অবাক হয়ে বলে উঠবে ফুলের বাগানের মাঝে ছোট একটা রাজকন্যার বাড়ি। ফুলের বাড়ি,ফুল দিয়ে চারপাশ ঘেরা। বাড়ির ছ্যাদেও বাহারি রঙের ফুলগাছ।
সেই ছোট থেকে নিরুপমা একটু একটু করে নিজের এই ফুলের বাগান তৈরি করেছে। যেখানেই ফুল দেখেছে নিয়ে এসেছে। ওকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এখানের ৯৯% ফুলের নাম বলতে পারবে না। বিদেশি ফুল গাছ অনেক। ফুল হলেই হলো নাম জেনে কি হবে!?
নিরুপমা ঘুম থেকে হারমোর ভেঙে উঠলো। চোখ পিটপিট করে জানালার দিকে তাকালো।
জানালার পাশে ফুলের গাছের ঢালে বসে একটা কোকিল ডাকছে।
নিরুপমা হাল্কা হেঁসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ শীত শেষে বসন্ত তাহলে এসে গেছে!
গুণ গুণ করে গেয়ে উঠলো ” বসন্ত বহিছে সখী কোকিলা ডাকিল রেএ…”
আজ থেকে প্রতিদিন এই কোকিল এই ঢালে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সুরেলা কণ্ঠে গান গাইবে। নিরুপমার কোকিলের এই মিষ্টি কন্ঠ ভীষণ ভালো লাগে। জানালার পাশে বসে নতুন নতুন ফুলের গাছের সুন্দর সুন্দর ফুলের মাতাল ঘ্রাণ নেওয়া, ফুলের সৌন্দর্য দেখা সাথে কোকিলের মিষ্টি সুর মনের ভেতর অন্য রকম এক আনন্দ দেয়। বসন্তের বাতাসটাও মাতাল করা, অশান্ত মনে শান্তির ছোঁয়া এনে দেয়।
নিরুপমা কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে বারান্দায় বসলো। কিছু সময় মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঘুরে আসলো। ভালো লাগছে না একবার অফিসে যেতে হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিরুপমা রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। এই এক সপ্তাহ সে ছুটিতে ছিল।
নিরুপমা বুঝ হওয়ার পর থেকে আলাদা থাকে। ওর আম্মু মারা যাওয়ার ছয় মাস পর ওর আব্বুও মা-রা যায়। ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে। তারপর থেকে নিরুপমার দায়িত্ব নেয় ওর মামা মামি। নিরুপমার দুই মামা।
পাঁচ বছর নিরুপমা সেখানে ছিল। কোনো এক কারণে নিরুপমা সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়। মামা মামি কম চেষ্টা করেনি ওকে আটকাতে কিন্তু নিরুপমা কারো কথা শুনেনি।
নিরুপমার বড় মামা ছেলে মেয়ে নিয়ে কানাডা থাকে। এক ছেলে দুই মেয়ে। দুই মেয়ে মাঝে মাঝে নিরুপমার কাছে কল দেয়। আর ছেলে সাহেদের সাথে নিরুপমার বেশ ভালো সম্পর্ক।
আর ছোট মামার এক ছেলে কোনো মেয়ে নেই। ছেলেটাকে গুন্ডা বললেও চলে। নিরুপমার মতে সে একটা চরিত্রহীন গুন্ডা।
নিরুপমা কাজের সুবাদে আজ নিজেই থানায় আসতে হয়েছে।
আয়ান ফাইল দেখছিল। বারেক দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’ স্যার স্যার’
আয়ান ফাইল থেকে চোখ তুলে বারেকের দিকে তাকালো,’ কি হয়েছে বারেক.? এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন.? কোনো ভয়ংকর জংলী দেখেছো মনে হচ্ছে! ‘
বারেক মাথা নেড়ে বললো,’ না না স্যার আমি ত এর থেকে ও বড় কিছু দেখে আসছি।’
আয়ান বারেকের এমন কথা শুনে বিরক্ত হলো। বারেক সব সময় এমন করে, ছোট ছোট জিনিস গুলো এমন ভাবে বলবে জেনো বিশাল বড় কিছু হয়ে গেছে।
বারেক কিছু বলার আগেই আয়ানের সামনে এসে হাজির হলো নিরুপমা।
নিরুপমার পাশে আলিফ দাঁড়িয়ে আছে, এটাকে দেখলে আয়ানের মনে হয় নিরুপমার বডিগার্ড, সারাক্ষণ পিছে পিছে ঘুরঘুর করবে।
আয়ান একবার মুখ তুলে নিরুপমার দিকে তাকালো।
সাদা শার্ট ইন করা, জিন্সের প্যান্ট, চুলগুলো বিনুনি করা, হাতে ঘড়ি সাথে সাথে আয়ান চোখ নামিয়ে ফেললো। এমন পোশাকে আয়ান সব সময় নারীদের ঘৃণার চোখে দেখে। ওর পছন্দ না নারীরা কেন ছেলেদের পোশাক পড়বে, কেন ছেলেদের মতো চলবে! নারী হবে নিজের পোশাকে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। অথচ আজ আয়ানের মনে হচ্ছে ওর ধারণা ভুল! নারীদের ও পুরুষের পোশাকে এতো সুন্দর লাগতে পারে.? দেখে একটুও অশ্লীল পোশাক মনে হচ্ছে না, একটুও খারাপ দেখাচ্ছে না মনে হচ্ছে এই পোশাকটা জেনো নিরুপমার জন্য তৈরি।
আয়ান গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,’ বসুন ‘
নিরুপমা বসলো।
আয়ান ফাইলের দিয়ে দৃষ্টি রেখে বললো,’ হঠাৎ এখানে আপনি ? ‘
নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আপনার কাছে আমি ফাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে ছিলাম, আমি আপনার কোনো হেল্প করতে পারবো না তাহলে আবার কেন পাঠিয়েছেন.?’
আয়ান শান্ত কন্ঠে বারেক কে বললো তিন কাপ চা সাথে নাস্তা নিয়ে আসো। নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ উপর থেকে আদেশ ‘
নিরুপমা কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো,’ উপরের আদেশ আমি বুঝে নিব! এমন ছোট খাটো কেইসে আমাকে ডাকবেন না’
আয়ান অবাক হয়ে তাকালো। এটা ছোট কেইস.? পুরো ডিপার্টমেন্ট এতো চেষ্টা করে চোরাকারখানায় কি হচ্ছে, বাচ্চা উধাও কিভাবে হচ্ছে বের করতে পারছে না আর এই মেয়ের কাছে ছোট খাটো মনে হচ্ছে.? ‘
মনে মনে ভীষণ রাগ হলেও নিজে শান্ত রেখে আয়ান আবার বললো,’ আপনি বড় স্যারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন এখানে আমার হাত নেই। ‘
নিরুপমা ফাইলটা আয়ানের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’ নিজের কাজ নিজে করতে শিখুন ইন্সপেক্টর আয়ান চৌধুরী ‘
আয়ান হাল্কা হাসলো। সে কিছু করেনি শুধু উপরের আদেশ ছিল। নিরুপমা অল্প বয়সে নিজের বুদ্ধি আর সাহসীকতা দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছি। এখন পুলিশ ও সিআইডি অফিসারের উপর নিজেদের পুলিশটিম থেকে বেশি বিশ্বাস করে। আর এই মেয়ে ভাবছে আয়ান ওকে ইচ্ছে করে হেল্প চেয়েছে। একটু ভুল ভাবলে ভাবতে দেওয়া উচিত।
আয়ান চুপচাপ বললো,’ চা টা?’
নিরুপমা চায়ের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,’ এটা তুলা থাক অন্য একদিন নিজেই চেয়ে নিব’ বুকের উপর থেকে চশমা চোখে দিয়ে নিরুপমা বের হয়ে যেতে নিলে পেছন থেকে আয়ান বলে উঠলো, ‘ আমার অফিসে শায়েলা সিদ্দিকীর কোনো ফাইল নেই, আপনি সব সরিয়ে নিয়েছেন!’
নিরুপমা আয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
‘ ভয় নেই তাকে একদম মেরে ফেলবো না! এমন বিশ্বাসঘাতক পাপীদের এতো জলদি মৃত্যু দিলে মৃত্যুও রাগ করবে আমার উপর। মৃত্যু হবে ধীরে ধীরে প্রতিদিন নিজের কাছে নিজে মৃত্যু ভিক্ষা চাইবে। দুইদিন পর বাড়িতে পৌঁছে যাবে।’
আয়ান অবাক হয়ে কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ গুলো আগুনের মতো লাল হয়ে জ্বলছে। কি ভয়ংকর এক রুপ এই মেয়ের! এমন রুপেও মুগ্ধ হয়ে গেলো আয়ান চৌধুরী।এমন একটা মেয়েটার উপর রাগ করে থাকতে পারে কেউ..? প্রশ্ন জাগলো আয়ানের মনে…
রাস্তার মধ্যে আলিফ বাইক চালাচ্ছে পেছনে চুপচাপ বসে আছে নিরুপমা। উদ্দেশ্য সিআইডি অফিস।
আলিফ রাস্তার পাশে তাকাতেই ওর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো, থমকে গেলো হাত নিজের এমন অসচেতনার জন্য রাস্তায় বাইক এক্সিডেন করে বসলো দুইজন।
ভাগ্য ভালো ছিল নিরুপমার তেমন ক্ষতি হয়নি। শুধু কোমরে আর হাতে পায়ে লেগেছে আর আলিফের মাথায় বুকে।
হসপিটালে নিয়ে আসা হয় দুইজন কে।
আলিফের কপাল দিয়ে রক্ত পরছে, হাত পা ছিলে গেছে।
অভ্র একবার নিরুপমা ত আরেকবার আলিফের দিকে তাকালো।
আলিফকে ইচ্ছে করে অন্য ডাক্তার ডেকে পাঠিয়ে দিল আর নিরুপমা কে একটা কেবিনে নিয়ে যেতে বলল দুইটা নার্স কে।
নিরুপমা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অভ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বললো,’ আমার তেমন কিছু হয়নি আলিফের মাথা থেকে রক্ত পড়াটা বন্ধ করুন ওর জেনো কিছু না হয়।’
অভ্র রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ বাইক চালানোর সময় হুশ থাকে না.? অবশ্য সাথে মেয়ে বসলে হুঁশ কিভাবে থাকবে!’
অভ্রের মুখে এমন কথা শুনে নিরুপমার বুঝতে বাকি নেই কি বুঝাতে চেয়েছে।
নিরুপমা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ নিজের মাইন্ড চেঞ্জ করুন! এমন ফালতু মাইন্ডের লোককে ডাক্তার কে বানিয়েছে!’
অভ্র নিরুপমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বলে উঠলো, ‘ হুশশচ এটা তোমার বাড়ি নয় এটা হসপিটাল। ‘
‘ সেটা ত আপনারও বুঝা উচিত। আমি আপনার কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা নিব না!’
অভ্র বুকে দুইহাত রেখে বললো,’ ঠিক আছে তাহলে যাও, এখনি আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যাও’
এদের এমন ঝগড়া দেখে নার্স গুলো ড্যাবড্যাব করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হচ্ছেটা কি..? অভ্র স্যার ত রুগীর সাথে প্রয়োজন ছাড়া বারতি একটা কথাও বলে না সেখানে এভাবে ঝগড়া করছে! অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে আছে নার্স গুলো।
নিরুপমা উঠতে গিয়ে আহ্ মা গো বলে আবার বসে পরলো। কোমরে আঘাতটা ভালোই পেয়েছে, এখন দাঁড়াতেও পারছে না। পা কেমন ছিলে গেছে রক্ত শুকিয়ে গেলেও ব্যাথা করছে অনেক।
অভ্র চোখের চশমা ঠিক করে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি যাও’
নিরুপমা কটমট দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাকে আমি পরে দেখে নিব। নার্স আর কোনো ডক্টর নেই.?’
একটা নার্স বলে উঠলো, ‘ ডক্টর আদিত্য স্যার আছে’
অভ্র রাগী চোখে নার্সের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ডক্টর আদিত্য ওই ছেলেটার চিকিৎসা করছে। আপনি ওখানে যান।’.
অভ্র কে রেগে যেতে দেখে নার্স গুলো বের হয়ে গেলো।
‘ আপনি এভাবে তাদের রাগ কেন দেখালেন.? ‘
অভ্র হাতা গুটিয়ে ছোট টোলটা টেনে নিরুপমার সামনে বসলো। ওর হাত টেনে নিয়ে শার্টের হাতা উপরে তুলে ক্ষত স্থান দেখে অবাক হয়ে বললো,’ আপনি মেয়ে ত.? প্রতিদিন আমার কাছে কম পেসেন্ট আসে না। মেয়েরা সাধারণ একটু কাটা স্থান নিয়ে কান্না কাটি শুরু করে, ব্যাথায় ছটফট করে আপনি এমন ক্ষত নিয়ে বসে বসে আমার সাথে ঝগড়া করছেন!
নিরুপমা কিছু বলল না। একটা সময় হয়তো সেও ওই মেয়েদের দলের ছিল। মনের আঘাত পেতে পেতে এখন বাহিরের আঘাত আর স্পর্শ করতে পারে না।
হাত, পা ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দিল।
নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার পরিবারের কাউকে কল দিয়ে বলা উচিত আশার জন্য, আপনি একা বাড়িতে যেতে পারবেন না মনে হচ্ছে ‘
নিরুপমা অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। সেভাবেই উত্তর দিল। আমার বিষয় আমি বুঝে নিব। আপনি আপনার কাজ করেছেন এখন আমার যেতে হবে। আলিফ কেমন আছে দেখতে হবে।
অভ্র হঠাৎ বললো,’ এখনো ত শেষ হয়নি ‘
নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই অভ্র বললো,’ পেছন ঘুরেন আপনার কোমরে আঘাত লেগেছে। ‘
নিরুপমা চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ‘ আমি ঠিক আছি বাকিটা আমি বাড়িতে গিয়ে নিজেই করে নিব’
‘ আমি একজন ডক্টর নিরুপমা আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসার জন্য এটা প্রয়োজন। ‘
‘ ডক্টর বলে সব দেখিয়ে দিব আজব! আমার কোমরের ক্ষত আমি দেখে নিব।’
অভ্র রেগে নিরুপমার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ কিন্তু আমার জিনিসে একটুও হেয়ালিপনা আমার সহ্য করবো না!’
‘ এক্সকিউজমি আপনার জিনিস মানে.?’
‘ আমাকে জোর করতে বাধ্য করবে না জবা ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ‘
নিরুপমা থমকে গেলো অভ্রর মুখে জবা ডাক শুনে।
জবাকে এমন চুপ হয়ে যেতে দেখে অভ্র নরম কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি একজন ডক্টর জবা। আমি শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করবো এর চেয়ে বেশি কিছু না। ‘
জবাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র এক হাতে জবার শার্ট একটু উপরে তুললো।
লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো জবা। এমন লজ্জা কেন লাগছে..? মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা এসে ওর শরীরে ভড় করেছে।
অভ্র খুব সাবধানে নিজের কাজ শেষ করে শার্ট নামিয়ে দিল। জবাকে এমন চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস আঁটকে রাখতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো অভ্র। বাহ্ এই মেয়ে লজ্জা পেতেও পারে! আমি ত ভাবতাম আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ছয় বছর আগের জবা লজ্জা পেতে জানতো, কথায় কথায় লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো। কিছু বললেই হেঁসে উঠলো সে কি মিষ্টি হাসি,মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো অভ্র। সেই জবা হারিয়ে গেছে, সামনে বসা মেয়েটা সেই জবা নয় একই চেহারা, একই সৌন্দর্য, একই সব কিছু, একই মানুষ তবে ভিন্ন দুইটা সত্তা!
নিজের দিকে অভ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জবা এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করলো।
অভ্র জবাকে এখানে বসে থাকতে বলে বের হয়ে গেলো। কিছু সময় পর ফিরে এসে বললো,’ আলিফের বাসা থেকে ওর আব্বু আম্মু এসেছে। সে এখন ভালো আছে আপনার বাড়িতে চলে যাওয়া উচিত। মেডিসিন গুলো আমি লিখে দিয়েছি সময় মতো খেয়ে নিবেন।
নিরুপমা জানতে চাইলো হসপিটাল বিল কত এসেছে..?
অভ্র কিছু না বলে নিরুপমা কে কোলে তুলে নিল।
নিরুপমা আচমকা এমন হওয়াই কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝে উঠতেই হাত পা ছুটাছুটি শুরু করলো।
‘ আর একবার হাত পা ছুটাছুটি করলে কোল থেকে ফেলে বাকি কোমর ভেঙে ফেলবো চুপচাপ গলা জড়িয়ে ধরে থাকো।
অভ্র বের হতেই নার্সরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ফিসফিস করে একজন আরেকজন কে বলছে, ‘ স্যারের বউ নাকি.?’
আরেকজন বলে, ‘ স্যার ত বিয়ে করে নাই’
‘ তাহলে হয়তো গার্লফ্রেন্ড হবে’
‘ মাইয়াটার দিকে দেখ কতো সুন্দর, স্যারের পাশে মানাবে খুব’
‘ হুম ঠিক বলছিস, মেয়েটার চুলগুলো আমি ত প্রথম দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না’
‘ আমিও, মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম’
অভ্র নিরুপমা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পাশে নিরুপমা।
‘বাড়ির ঠিকানা বলো। ‘
শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৭
নিরুপমা সিটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে রইলো। এতোক্ষণ যন্ত্রণা না বুঝলেও আসতে আসতে মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে, কোমরের যন্ত্রণা একটু বেশিই করছে, হাত পা ম্যাচ ম্যাচ করছে। কথা না বাড়ির নিরুপমা বাড়ির ঠিকানা বলে দিল। বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন তারপর এই লোককে বিদায় করতে হবে।