শেষ বিকেলের প্রণয় সিজন ২ পর্ব ৯
হালিমা চৌধুরী
“এই নিধি, এই ছেলে কে রে?”
অয়নের কথা শুনে নিধি নির্দ্বিধায় বলল,
“আমার বর!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ আর অয়ন দুজনেই তার দিকে অবাক চোখে তাকায়।
“কিভাবে এই ছেলে তোর বর হয়? কি প্রমাণ আছে? বুড়ি মরতেই ছেলে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে ন’ষ্টামি শুরু করে দিয়েছিস নাকি?”
অয়নের কথা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপছে ফারিশ, সে আর দাড়িয়ে না থেকে অয়নের বুকের উপর একটা লা’থি দেয়। মূহুর্তের মধ্যে অয়ন মাটিতে গিয়ে পড়ে। ফারিশ তখনো শান্ত হয়নি, সে মাটি থেকে অয়নের কলার চেপে উঠিয়ে তার গালে চ’ড় দিয়ে বলল,
“শা** নিজের চরিত্রের মত সবার চরিত্র মনে করেছিস নাকি? অ’সভ্যের বা’চ্চা বড়দের কিভাবে সম্মান করে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না, একটা মেয়ের মা মরে গিয়েছে। মেয়েটা কি পরিস্থিতি তে আছে সেটা বুঝে তাকে স্বান্তনা না নিয়ে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছিস! আবার তার মা কে নিয়ে বাজে কথা বলছিস, কু’ত্তার** আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো!”
বলেই ফারিশ অয়ন কে একনাগাড়ে মারতে থাকে। নিধি ফারিশকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শেষে নিধি আর উপায় না পেয়ে ফারিশের সামনে হাতজোর করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“প্লিজ ফারিশ, আপনি অয়ন ভাই কে ছেড়ে দিন। অয়ন ভাইয়ের বাবার কানে যদি এসব যায় তাহলে আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিবে না ওরা। আমার বাবা মা কেও ওরা শান্তিতে বাঁচতে দেয়নি, এখন আমাদেরও দিবে না।”
নিধির কথা শুনেও থামল না ফারিশ, সে অয়ন কে ইচ্ছে মত পিটিয়ে তবেই শান্ত হলো। ফারিশ অয়ন কে মাটি থেকে উঠিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দরজা আঁটকে দেয়। ফারিশ রাগে এখনো থরথর করে কাঁপছে, আজকের এই ফারিশ কে দেখে নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে গেছে একদম। ফারিশ ধীরপায়ে নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বিড়বিড় করে বলল,
“আবর্জনা কোথাকার, আসে আমার বউ কে বিয়ে করতে! বিয়ে করার শখ একদম মিটিয়ে দিয়েছি।”
নিধিকে এভাবে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠল,
“তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো আমাকে? আমি কি তোমাকে মেরেছি, নাকি তোমার শত্রু কে কিছুই বুঝলাম না।”
নিধি ফারিশের কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে যায়। ফারিশ অসহায় দৃষ্টিতে নিধির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
“যার জন্য চু’রি করলাম সেই বলে চো’র, মানবতা আর বেঁচে নেই রে ফারিশ! অফিসের খিটখিটে বসটা আজ তার নিধি রানীর মন ভালো করতে ব্যাস্ত! ভাবা যায় এসব!”
কথাগুলো নিজের মনে বলতে বলতে ফারিশ খাবার নিয়ে নিধির রুমে যায়।
“রাগ দেখাচ্ছো আমাকে?”
কথাটা বলে থমকে যায় ফারিশ, সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,
“কন্ট্রোল ফারিশ কন্ট্রোল, মেয়েটা এখন নিজের মধ্যে নেই যে তোকে সহ্য করবে!”
ফারিশ কে বিড়বিড় করতে দেখে নিধি তার দিকে তাকায়, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ফারিশ ধীরপায়ে গিয়ে নিধির পাশে বসে।
“ছেলে টা তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে, তোমার বর হয়ে আমি কি এসব সহ্য করে নিবো বলো?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল,
“আমি এসব কিছু আর সহ্য করতে পারছি না ফারিশ।”
বলেই নিধি কান্নায় ভেঙে পড়ে, নিধি কে এভাবে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় ফারিশ। সে তাড়াতাড়ি নিধির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,
“আরে পাগলী, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি আগের ন্যায় কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“এমন বংশে জন্মগ্রহণ করেছি আমি, যে আমাদের অর্থ সম্পদ থাকতেও মেয়ে হয়ে এখন আমাকে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আব্বু আর আম্মু রিলেশন করে বিয়ে করেছে, এজন্য আব্বুর ভাই রা তাকে ভাই হিসেবে মানে না। কিন্তু আমার দাদা ঠিকই আমার বাবার নামে তার অর্ধেক সম্পদ লিখে দিয়ে যান। কিন্তু অয়ন ভাইয়ের আব্বু কিছুতেই আমার বাবার জমির ঝামেলা টা ঠিক করে দেয় না। তার এতো বাহাদুরি সহ্য করে আমার বাবা আর টিকে থাকতে না পেরে আমাদের নিয়ে আলাদা ভাবে থেকেছে। এখন যদি তারা জানতে পারে আপনি অয়ন ভাইকে মেরে এই অবস্থা করেছেন তাহলে আপনার জীবনটা বরবাদ করে দিবে তারা।”
নিধির পুরো কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে ফারিশ, শেষের কথা টা শুনে ফারিশ হেসে নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো! আরে এসব চুনোপুঁটি আমার কিছুই করতে পারবে না। আমার কিছু করতে আসলে বরং আমিই তাকে আধমরা করে দিবো।”
ফারিশের কথা শুনে শান্ত হতে পারল না নিধি, সে ফারিশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে ব্যাস্ত। ফারিশ নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“হয়েছে অনেক চিন্তা করে ফেলেছো আমার জন্য, এবার ব্রেকফাস্ট করে নাও তো লক্ষী মেয়ের মত!”
“খাবো না।”
“মার খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে নাকি?”
ফারিশের কথা শুনে কান্না থেমে যায় নিধির, সে অবাক হয়ে ফারিশের দিকে তাকায়।
“আপনি মারবেন আমাকে?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা ভড়কে যায়, সে নিজেকে সামলে বলল,
“বউ কে মাইর দেওয়ার ক্ষমতা সেই আমার, কিন্তু চু’মু দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার!”
হঠাৎ ফারিশ এমন একটা কথা বলে বসবে সেটা ভাবেনি নিধি। সে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
“লাগাম নেই মুখে!”
নিধির কথা শুনে হেসে ফেলে ফারিশ।
রিক্সা থেকে নেমে নিধিদের বাসার সামনে দাড়ায় ইকরা, সে বাসায় ডুকবে এমন সময় দেখে বাসার সামনে একটা ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ, ছেলেটা কে এই মূহুর্তে হাসপাতালে নিতে হবে। আশেপাশে কাউকে দেখছেও না যে ছেলেটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলবে ইকরা। শেষে ইকরা আর কোনো উপায় না পেয়ে একটা সিএনজি ডেকে নিজেই ছেলেটা কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইকরা রা হাসপাতালে এসে পৌছায়, ইকরা ছেলে টা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। ইকরা করিডোরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডক্টর কি বলে সেটা জানার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর বের হয়ে আসে কেবিন থেকে। ডক্টর কে দেখে ইকরা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“উনি ঠিক আছে তো?”
“এখন মোটামুটি ঠিক আছে, তবে যে উনার এই অবস্থা করেছে সে অনেক মারাত্মক লেভেলের গু’ন্ডা মনে হচ্ছে। মেরে ছেলেটার কি বিভৎস অবস্থা করে দিয়েছে!”
“আমি কি উনার সাথে কথা বলতে পারি? কথা বলার মত অবস্থা তে আছে উনি?”
ইকরার কথা শুনে ডক্টর বলল,
“ওহ হ্যাঁ, উনি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”
ডক্টরের কথা শুনে ইকরা আর দাড়িয়ে না থেকে কেবিনে যায় ছেলেটার কাছে। ইকরা বেডের একপাশে বসতেই ছেলেটা নড়েচড়ে উঠে।
“আপনার এই অবস্থা কে করেছে?”
ইকরার কথা শুনে ছেলেটা তার দিকে তাকায়, ছেলেটা ইকরার চোখের দিকে চেয়ে বলল,
“সুন্দরী।”
ছেলেটার মুখে এমন কথা শুনে ভড়কে যায় ইকরা। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
“আপনার পরিবারের কারো নাম্বার দিন, আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি আপনি যে এখানে!”
ইকরার কথা শুনে ছেলেটা অসহায় গলায় বলল,
“এই শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই, কাকেই বা ফোন করবেন আপনি!”
ছেলেটার কথা শুনে তার জন্য মায়া হয় ইকরার।
“কে আপনার এই অবস্থা করেছে?”
ইকরার কথা শুনে ছেলেটা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
“সে অনেক কাহিনি। পরে একদিন বলবো।”
ইকরা ভেবে পাচ্ছে না সে এখানে থাকবে নাকি চলে যাবে। তাই সে ছেলেটা কে বলল,
“আমি চলে যাই? আপনি তো এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন।”
ইকরার কথা শুনে ছেলেটা মিষ্টি হেসে বলল,
শেষ বিকেলের প্রণয় সিজন ২ পর্ব ৮
“আচ্ছা যান।”
ছেলেটার কথা শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ইকরা। সে বেড থেকে উঠে পা বাড়ায় যাওয়ার জন্য, হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে আবার পিছনে ঘুরে বলল,
“আচ্ছা আপনার নাম কি?”
ছেলেটা নির্দ্বিধায় বলল,
“অয়ন।”