সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১০

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১০
Jannatul Firdaus Mithila

“ ভাইজান! চলেন বাড়িতে ফিরে যাই।”
তুরাগ সাহেবের কথায় সম্বিৎ ফিরে পায় আরিফ এহসান। ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকালেন তিনি।
এতক্ষন যাবত ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কবির সাহেবের যাওয়ার পানে।পরক্ষণেই এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে লুকোতে চেষ্টা করলেন নিজের ছলছল আঁখিদ্বয়। পাশ থেকে তুরাগ সাহেব বেশ বুঝলেন ব্যাপারটা! তিনি এক কদম এগিয়ে আসেন সম্বন্ধি ভাইয়ের কাছে। কাঁধে আলতো করে ভরসার হাত রেখে বললেন,
“ কাঁদবেন না ভাইজান। কবির এখন রেগে আছে। রাগের মাথায় হয়তো বুঝে নাই ব্যাপারটা।দেখবেন, যখন রাগ কমবে তখন নিজে থেকেই আসবে।”

কথাটা শুনে কবির সাহেব আহত হাসলেন। ছলছল চোখজোড়া পড়নের সাদা পাঞ্জাবির হাতায় মুছে নিয়ে বললেন,
“ এই রাগ কি যেই-সেই রাগ তুরাগ? এই রাগ তো কষ্টের রাগ, ঘৃণার রাগ। হয়তো ওর জায়গায় আমরা থাকলেও এমনটাই করতাম।”
তুরাগ সাহেব নির্বিকার হয়ে শুনলেন কথাটা। প্রতিত্তোরে আদৌও কি বলা উচিত তাই হয়তো ভাবছেন তিনি। একটি ক্ষুদ্র নিশ্বাস ফেলে সটান হয়ে দাড়িয়ে রইলেন আরিফ এহসান। তখনি পাশ থেকে সাব্বির সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
“ ভালো আছো বড়দা?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তড়িৎ গতিতে মাথা ঘোরালেন আরিফ এহসান। চোখের সামনে সাব্বির সাহেবের মৃদু হাসিমাখা মুখখানা দেখে বুকটায় বুঝি তার আবারও ধ্বক করে ওঠলো। তিনি ধরে আসা গলায় ভেঙে ভেঙে বললেন,
“ আছি ভাই! বেশ আছি। তোদের সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি পেয়ে বেশ আছি।”
কথাগুলো বলতে বলতেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন মধ্যবয়স্ক ছিমছাম গড়নের মানুষটা। তার কান্না দেখে সাব্বির সাহেব ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন নিজ জায়গায়। হয়তো মনটা তার এগিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু পরিস্থিতির দোলাচালে তা যে অসম্ভব। সাব্বির সাহেব মাথানিচু করে দাড়িয়ে রইলেন। এ মুহুর্তে কেন যেন চোখগুলো তার ভিষণ জ্বালা করছে। হয়তো ভেতরের জমিয়ে রাখা কষ্টগুলো কান্না হিসেবে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার। এদিকে সাব্বির সাহেবের মন কিছুটা নরম হলেও পাশে দাড়িয়ে থাকা তাশরিক সাহেবের মন যেন ইস্পাতের তৈরি। মানুষটা মুখের আদল শক্ত রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। হয়তো সামনে থাকা লোকগুলোকে এ মুহুর্তে সহ্য হচ্ছে না তার।

“ মেজো আব্বু! ওপাশের ডেকোরেশন প্রায় কমপ্লিট। তা তোমাদের এপাশের কি খবর?”
ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে আসে রৌদ্র। তাকে দেখে আরিফ এহসান মাথা তুললেন। অনিমেষ চোখে তাকিয়ে রইলেন ছেলেটার দিকে।
পড়নের অফ হোয়াট ঢিলেঢালা ট্রাউজারের পকেটে একহাত গুঁজে রাখা। তারওপর সাদা টি-শার্টটি ঘামে ভিজে জবুথবু অবস্থা। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কপালে। আরিফ সাহেবের এমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে, রৌদ্র কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। এলেমেলো দৃষ্টি ফেললো সামনে দাড়িয়ে থাকা চাচাদের ওপর। সাব্বির সাহেব আর তাশরিক সাহেব হয়তো বুঝলেন ছেলেটার অপ্রকৃতস্থতা। তাই সাব্বির সাহেব এবার নিজ থেকে বললেন,
“ ও রোদ। আমাদের বড় ভাইজানের ছেলে।”
ক্ষনিকের মাঝেই অবাক হলেন আরিফ এহসান।রৌদ্রে দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,
“ ও রোদ?”

“হুম” — পাশ থেকে সাব্বির সাহেবের ছোট উত্তর পেয়ে রৌদ্রের কাছে এগিয়ে আসলেন আরিফ এহসান। মুহুর্তের ব্যাবধানে রৌদ্রকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নামাখা গলায় বলতে লাগলেন,
“ আমাদের রোদ? এত বড় হয়ে গেছিস বাবা! সেই কবে দেখেছিলাম তোকে।”
কথাগুলো শেষ করে বুক থেকে সরালেন ছেলেটাকে। রৌদ্রের কাঁধ জড়িয়ে ধরে আবারও বললেন,
“ আমায় চিনেছিস বাবা?”
রৌদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎকাল। মস্তিষ্ক থেকে চেনা জানা কোন সিগনাল না পেয়ে তৎক্ষনাৎ ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে “না” জানায় ছেলেটা। তা দেখে ভেজা চোখে হাসলেন আরিফ এহসান। চোখদুটো কোনমতে মুছে নিয়ে বললেন,
“ আমি তোর বড় চাচ্চু। আরিফ এহসান। তোর বাবার আপন চাচাতো ভাই। ”
ফট করে কিছু স্মৃতি মস্তিষ্কে এসে বিধলো রৌদ্রের। সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সামনে থাকা মানুষটার দিকে। ক্ষনকাল বাদে নিজের অবাকের রেশ কাটিয়ে বললো,

“ আপনি আরিফ চাচ্চু?”
মাথা ঝাকালেন আরিফ সাহেব। মৃদু হেসে বললেন,
“ তুই তো বাবা বেশ বড় হয়ে গেলি। তা কি করছিস এখন?”
“ ও ডাক্তার বড় দা। হার্ট সার্জন। ”
পাশ থেকে সাব্বির সাহেবের কথায় আপ্লূত হলেন আরিফ এহসান। সহাস্যে বলতে লাগলেন,
“ সত্যি! মাশাআল্লাহ। ”
তিনি আরও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই বাড়ির ভেতর থেকে কবির সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে।
“ বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে। সেগুলো রেখে বাইরের মানুষদের সাথে এমন কথা বললে কিভাবে হবে? তাড়াতাড়ি কাজগুলো সম্পন্ন করো।”
কবির সাহেবের বলা কথাগুলো যেন তীরের মতো এসে বিধলো আরিফ এহসানের বুক বরাবর। তিনি আবারও মাথা নিচু করে ফেলেন।তা দেখে রৌদ্রের খানিকটা কষ্ট লাগলো।কিন্তু এ মুহুর্তে তারও যে করার মতো কিছুই নেই।

“ এই শোনো! বাইরে এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলে তোমরা?”
হাতের শুকনো কাপড়গুলো ভাজ করে আলমারিতে তুলতে তুলতে কথাগুলো বললেন রাফিয়া বেগম। স্ত্রীর এহেন প্রশ্নে কিয়ৎকাল মৌন রইলেন সাব্বির সাহেব। মাথানিচু করে বসে রইলেন খাটের এক কোণে। অন্যদিকে স্বামীর কোনরূপ সাড়া না পেয়ে আলমারী ছেড়ে এগিয়ে আসলেন রাফিয়া বেগম। স্বামীর পাশে বসে, হাতের ওপর হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“ কি হয়েছে তোমার? এমন মন খারাপ করে বসে আছো কেন?”
স্ত্রীর কথায় মাথা তুললেন সাব্বির সাহেব। ধরে আসা গলায় প্রতিত্তোরে বললেন,
“ আরিফ ভাই এসেছিলো।”
মুহুর্তেই সাব্বির সাহেবের হাতের ওপর থেকে হাতটা অজান্তেই সরে পড়লো খানিকটা। তিনি তাকিয়ে দেখলেন স্ত্রীর হতবাক হয়ে যাওয়া মুখটা। রাফিয়া বেগম অবাক গলায় বললেন,

“ আরিফ ভাই? উনি এতদিন পর এলেন কেন?”
“ চাচী আম্মার শরীর বেশি খারাপ। উনি নাকি শেষবারের মতো আমাদের দেখতে চেয়েছেন”
প্রথম কথাটায় কিছুটা খারাপ লাগলেও শেষ কথাটায় মুখের আদল শক্ত হয়ে এলো রাফিয়া বেগমের। তিনি গলায় ঝাঁঝ এনে বললেন,
“ যাদেরকে এতোটা কষ্ট দিয়ে বাড়িছাড়া করেছে, তাদেরকে আবার শেষ দেখা দেখতে চাইছে। হাহ! বিষয় টা কেমন হাস্যকর হয়ে গেলোনা? ”
স্ত্রীর গলায় এমন তাচ্ছিল্যের সুর শুনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সাব্বির সাহেব। হয়তো তার স্ত্রীর কথাটা কাঁটায় কাঁটায় সত্যি!

“ রোদের আব্বু?”
হঠাৎ ডাকে খানিকটা চমকে উঠেন কবির সাহেব। নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন জানালার সামনে। ইতোমধ্যেই তার পেছনে এসে দাড়িয়েছেন জুবাইদা বেগম। স্বামীর উদ্দেশ্যে আলতো স্বরে প্রশ্ন ছুড়লেন তিনি,
“ মৃত্যু পথযাত্রী মানুষটাকে একবার দেখে আসলে হতোনা?”
সঙ্গে সঙ্গে পেছনে ফিরলেন কবির সাহেব। মুখের আদল আরও কিছুটা দৃঢ় করে বললেন,
“ আমার মায়ের খুনিকে দেখতে যাবার মতো শক্তি কিংবা ধৈর্য কোনোটাই আমার নেই জবা। আশা করি এ নিয়ে আর কোন কথা বলবেনা। আর খবরদার! বাড়ির ছেলেমেয়েদের কানে যেন একথা
ঘুনাক্ষরেও না যায়।আমি চাই না অবান্তর কোন বিষয় নিয়ে বাড়িটার আনন্দ আমেজ নষ্ট হোক।”
কবির সাহেবের বলা শক্ত কথাগুলো একমনে শুনে গেলেন জুবাইদা বেগম। পরক্ষণেই একটি ক্ষুদ্র নিশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিড়ে।

গোধূলির লগ্ন পেরিয়ে ধরণীতে সন্ধ্যা নামার উপক্রম। আবছা অন্ধকার হতেই পুরো বাড়ি এবং উঠোন জুড়ে হরেকরকম রঙের ঝিলিক বাতির সমারোহ তৈরি হয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন মানুষজনের উপস্থিতি বেড়েছে পুরাতন এই সুউচ্চ দোতলা এহসান বাড়িটিতে। উঠোনের পুরো একপাশ জুড়ে তৈরি হয়েছে স্টেজ।যার চারিদিকটা নানান নান্দনিক ফুলে সজ্জিত। তারপাশেই গান-বাজনার সামগ্রি।সেখানে অবশ্য বিয়ের আমেজ অনুযায়ী মৃদুভাবে গান বাজছে।
বাড়ির গৃহিণীরা রেডি হয়ে একদম ফিটফাট। হাতের কাজগুলো সম্পন্ন করে আর একমুহূর্তও দেরি করেননি তারা। রেডি হয়ে চলে এসেছেন উঠোনে।একে একে এটা সেটা হাতিয়ে দেখছেন , তো আরেকবার পুরনো আত্নীয়দের সাথে কুশলাদি বিনিময় করছেন।
অন্যদিকে, বাড়ির বসার ঘরে আত্মীয়দের ঢল নেমেছে যেন।প্রত্যেক বউদের বাপের বাড়ি থেকে মানুষজন এসেছে। তাদের সঙ্গেই সময় দিচ্ছেন বাড়ির কর্তারা।
“ এই তোমাদের হলো?”

আহির কথায় মুচকি হাসলো ঘরভর্তি মেয়েরা। সোহেলী মাথায় ফুল গাঁথছে,অন্যদিকে মাহি হাতে চুড়ি পড়ছে।মেয়েটা সেই কখন থেকে একটার পর একটা চুড়ি পড়েই যাচ্ছে কিন্তু একটাও যে তার মনের মতন হচ্ছে না। অবশেষে বহু চেষ্টার পর রুহি এসে তাকে চুড়ি পছন্দ করে দিলো।তবেই না মেয়েটা খুশিমনে পড়লো চুড়ি। পাশেই কুহেলী থমথমে মুখে গালে মেকআপ মাখছেই তো মাখছে।থামার নামই নিচ্ছে না। এদিকে সবার এমন কান্ডে মিটমিটিয়ে হাসছে রুহি। মেয়েটা তৈরি হয়েছে প্রায় বহুক্ষণ। অবশ্য তার পুরো কৃতিত্ব পার্লারের মেয়েদের। রুহি মিটমিটিয়ে হাসার একপর্যায়ে অদূরে বসে থাকা অরিনের দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি লেগে থাকলেও, চোখগুলোয় যেন সে হাসি পৌঁছাতে পারলো না।

বরাবরের মতোই সিম্পল সাজে সজ্জিত মেয়েটা।অথচ দেখো কারবার! এতেই যেন তাকে সবার চাইতে বেশি সুন্দর লাগছে।এই যেমন, মেয়েটার হরিনী চোখগুলোতে মোটা করে কাজল দেওয়া। যেন চোখ দিয়েই তিনি মানুষ খুন করবেন আজ! তার সাথে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। পড়নের গাঢ় নীল-গোলাপি মিশেলের শাড়িটা গ্রামীণ ভাজে পড়ানো। অবশ্য শুধু অরিন নয়, আজকে সকলেই একইরকম ড্রেস কোড মিলিয়ে পড়েছে। অরিনের কোমর সমান লম্বা চুলগুলো পেছন দিকে ছেড়ে রাখা।কানে সোনালী ধাচের লম্বাটে দুলগুলো মাথার পেছন অবধি আটকানো। গলায় সিম্পল একটা পাথরের গয়না। ব্যাস! এতেই যেন মেয়েটার ওপর থেকে চোখ ফেরানো দায়। রুহি কিছুক্ষণ অরিনকে একমনে আপাদমস্তক দেখ নিলো।তারপর মুচকি হেসে অরিনকে নিজের কাছে ডাকলো।অরিনও এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো এক কোনে।রুহির ডাক পাওয়া মাত্রই উঠে আসে। রুহির পাশে বসে মিহি স্বরে বললো,

“ কি হয়েছে? ”
রুহি ডানে-বামে মাথা নাড়ায়।অরিনের থুতনিতে আলতো হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
“ মন খারাপ? ”
“ কই নাতো!”
“ সত্যি? ”
“ হুম”
আর কিছু বললো না রুহি।চুপ করে বসে রইলো অরিনের হাতটা ধরে। ঠিক তখনি রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো শিশির। তার পড়নেও একই ড্রেস কোড। রুহি খেয়াল করলো মেয়েটাকে, শিশিরটার আজকে কেমন বেশি খুশি খুশি ভাব। সে মুখ ফুঁড়ে ফিসফিসিয়ে বলেই ফেললো,
“ শিশির আপু আজকে একটু বেশিই খুশি মনে হচ্ছে না অরি?”
অরিন একবার আড়চোখে তাকালো শিশিরের পানে।পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে ব্যাথাতুর হাসি দিয়ে বললো,
“ পছন্দের মানুষটাকে নিজের করে পেতে চলেছে, খুশি নাহয়ে কি আর পারে?”

“ ধূর! কত ধরনের ড্রেস কোড থাকতে তোরা কি-না সবশেষে এই সফেদ লুঙ্গি আর পিত্তি রঙের কুর্তা বেছে নিলি? বলি, তোদের কি অন্যকিছু পছন্দ হয়নি?”
আসিফের নাক সিটকিয়ে বলা কথাগুলো শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে অনিক। গতকাল রাতেই তাশরিক সাহেব এসে এই ড্রেস কোডটা দিলেন।তাইতো সবাই একই বেশে হাজির। এতে অবশ্য খুব একটা বাজে দেখাচ্ছে না তাদের। ভালোই একটা বাঙালিয়ানা ভাইব আসছে। অনিক হাত বাড়িয়ে একটা কালো চশমা পড়ে নেয়।আরেকটা এগিয়ে দেয় আসিফের দিকে।

“ নাও পড়ে নাও। এতে অন্তত একটু স্মার্ট লাগবে তোমায়।”
অনিকের টিপ্পনী দেওয়া কথা-বার্তায় চটে গেল আসিফ। বেচারা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“ এই তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমায় এই পোশাকে স্মার্ট লাগছে না? ”
অনিক একবার আপাদমস্তক দেখে নিলো আসিফকে।পরক্ষণে দৃষ্টি সরিয়ে মেকি ভাব নিয়ে বললো,
“ শোনো আসিফ ভাই! ছেলে মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই স্মার্ট লাগে। তাছাড়া বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলে সবাইকেই একটু-আধটু বুড়ো লাগে।এই যেমনটা তোমায় লাগছে।”
কথাটা শেষ করে একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে পালালো অনিক। তা নাহলে এ মুহুর্তে তার পিঠের অবস্থা ঠিক থাকবে তো? অন্যদিকে অনিকের কথায় হতবুদ্ধির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো আসিফ। বেচারা রাগ করবে তো ধূর, হতবাক হওয়াই যেন শেষ হচ্ছে না তার। আসলেই কি তার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে? আর কতদিন ধৈর্য ধরবে সে? কবে বড় হবে তার প্রনয়িণী? কবে তাকে নিজের করে নিবে সে?

“ আপনারা সবাই বসুন না। কিছু লাগলে বা কোন প্রকার অসুবিধে হলে অবশ্যই বলবেন কেমন?”
সাব্বির সাহেবের মেহমানদারীতে একগাল হাসলেন উপস্থিত মেহমানরা। মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালেন সকলে। সাব্বির সাহেব কিয়তক্ষন তাদের সাথে কথা বলে চলে গেলেন অন্যপাশে।
“ সেজো ভাইজান! বলি দাঁড়াও না।”
“ দেখ তাশরিক! তোর এই চশমা -টশমা সরা আমার সামনে থেকে। কেন বুঝিসনা, আমার কি আর এ-সব পড়বার বয়স আছে রে? ”
তায়েফ এহসানের এহেন কথাতেও দমলেন না তাশরিক সাহেব। তিনি অবশেষে তায়েফ সাহেবের সামনে পথ আটকিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন। দুহাত বাড়িয়ে আগলে দাঁড়ালেন। তা দেখে বিরক্ত হলেন তায়েফ সাহেব। কপালটা কুঁচকে বললেন,

“ তুই কেন এমন বাচ্চাদের মতো করছিস তোশু? আমাদের কি আর এসব রঙ-ঢঙের বয়স আছে বল?”
তায়েফ সাহেবের কথাটাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে তাশরিক সাহেব বলে ওঠেন,
“ কি কখন থেকে বয়স নেই,বয়স নেই করছো? বলি আমরা কি খুব একটা বুড়ো হয়েছি নাকি? আর আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়েতেই যদি একটু-আধটু আনন্দ না করি তাহলে আর কখন করবো বলো?”
এহেন যুক্তিতে হার মানলেন তায়েফ সাহেব। ক্ষুদ্র একটা নিশ্বাস ফেলে বসে পড়লেন পাশের একটি চেয়ারে।অতঃপর বললেন,
“ নে বসলাম। এবার পড়িয়ে দে।”
“ দেটস লাইক মাই ব্রাদার!”
কথাটা বলেই হাতে থাকা চশমাটা পরিয়ে দিলেন তায়েফ সাহেবকে। অন্যদিকে তায়েফ সাহেব ভাইয়ের এহেন পাগলামিতে মৃদু হাসলেন। মনে মনে বললেন,
“ পাগল একটা।”

বাড়ির মেয়েরা সবাই উপস্থিত হয়েছে স্টেজের সামনে। একে একে বসে পড়েছে সবাই। রুহি একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজে চলেছে নিজের ভাইকে। কিন্তু কোথাও যেন রৌদ্রের টিকিটাও নেই। রুহি মন খারাপ করে বসে রইলো চেয়ারে। তার এমন মন খারাপ দেখে পাশ থেকে শিশির বললো,
“ কি হলো আমার বেবিটার? মন খারাপ কেন?”
রুহির মেজাজ খারাপ হলো। কেন জানি শিশিরের এহেন মাখোমাখো কথাবার্তা তার বিলকুল সহ্য হয়না। মেয়েটা বাইরে থেকে মেকি হেসে বললো,

“ নাহ তেমন কিছু না আপু। আসলে ভাইয়া…”
রুহির কথার মাঝেই পুরো বাড়ির কারেন্ট চলে যায়। সকলেই একপ্রকার হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দেয় এ নিয়ে। ঠিক মিনিট খানেক বাদেই কারেন্ট চলে আসে। আর চারিদিকে গান বাজতে শুরু করে। গানের আওয়াজে সকলের দৃষ্টি পড়ে স্টেজের ওপর। মুহুর্তেই সকলের মুখ হা হয়ে আসে। কেননা স্টেজের ওপর বেশ ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে রৌদ্র, অনিক,আসিফ,রামিম। প্রত্যেকেই একহাতে লুঙ্গি ধরে রেখেছে। রৌদ্রের ডানহাতে ঝুলছে একটি সিলভার কালার ঘড়ি।সবার চোখে কালো চশমা।

ছেলেগুলোর এহেন কার্যক্রমে সবার মাঝেই এখন ভিন্ন এক উৎকন্ঠা। সবাই একসাথে চিয়ার্স করে যাচ্ছে তাদের। কেও কেও তো উত্তেজিত হয়ে বাশিও বাজাচ্ছে। প্রায় মিনিট খানেক পর সবাই গানের তালে তালে অসাধারণ স্টেপে নাচ শুরু করে। পেছনে থাকা রামিম,আসিফ খুব একটা ভালো না নাচলেও সামনে থাকা রৌদ্র আর অনিক যেন সেই কমতিটা নিমিষেই পূরণ করে দিচ্ছে। গান বেজে চলছে আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে নেচে যাচ্ছে ছেলেগুলো।

ere naam diyan dhooma pai gayiyan, tu Chandigarh ton aayi ni.
Tenu dekh ke haunke bharde n chaunka vich sipahi ni.
Thodi te kakudi
Thodi te kala til kudiye, jyon daag hai chan de tukde te,
Tenu kala chashma.Tenu kala cWahma.
Tenu kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Tenu kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Tu bobby cut katwa laye ne, te paven panta jean diyan,
har vele gallan kardi aen, bas tu filma de scene diyan.
Mainu samajh na aundi haan diye,
Samajh na aundi haan diye, kehnu haal sunava dukhde de
Tenu kala chashma.Tenu kala chashma.
Tenu kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Tenu kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Jad hello hi kardi aen, mundeya vich bhartu pai janda,
Jehra ik vari takk lainda ae, bas tere joga reh janda.
Tu chhad Punjabi Hindi nu,
hai chhad Punjabi Hindi nu, pind aa ke nikde mukde te.

অন্যদিকে ছেলেগুলোর নাচের দিকে অনিমেষ চোখে তাকিয়ে আছেন কবির সাহেব। মুখে তার মৃদু হাসির ঝলক। পাশ থেকে ভাইয়ের হাসি দেখে সাব্বির সাহেব আধো আধো গলায় বললেন,
“ খুব সুন্দর নাচছে ছেলেগুলো। তাই না ভাইজান?”
“ ছেলেগুলো আমার এতো বড় হয়ে গেলো কবে সাব্বির? ”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৯

Tenu kala chashma. Main keha kala chashma.
Hai ni, kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Hai kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Hai pind ‘Talwandi’ Chaudhariyan vich thode din mehman tusin,
Othon de haye ‘Amreek’ layi, sach janeyo, jind te jaan tusin,
Tusin, suneya, chheti tur jana,
Hai, suneya, chheti tur jana, sade dil ne ukhde ukhde jahe
Tenu kala chashma. Hai ni keha kala chashma.
Sohniye, kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Hai kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Hai kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te.
Tenu kala chashma jachda ae, jachda ae gore mukhde te……….

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here