সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩১

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩১
Jannatul Firdaus Mithila

“ সানশাইন! শুনো না। ও সানশাইন!”
রৌদ্রের একের পর এক পিছু ডাকেও কোনরূপ হেলদোল নেই অরিনের। সে মুখ ফুলিয়ে ধপাধপ পা ফেলে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। রৌদ্র এবার পেছন থেকে কনুই চেপে ধরে মেয়েটার। অরিনকে নিজের দিকে ফিরিয়ে, আহ্লাদী স্বরে বলে,

“ একটু কর্নারে আসবেন মেডাম?”
অরিন তৎক্ষনাৎ নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় রৌদ্রের হাত থেকে।গলায় কিছুটা ঝাঁঝ এনে বলে,
“ দুঃখীত! আমি এখন কোত্থাও যেতে চাচ্ছিনা।”
কথাটা শেষ করে রৌদ্রকে পাশ কাটিয়ে ফের হাঁটা ধরে অরিন।এদিকে তার চলে যাওয়ার পথে সরু চোখে,ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকিয়ে রইলো রৌদ্র। পরক্ষণেই কপালে এক আঙুল স্লাইড করতে করতে বিরবির করলো,
“ অভিমানিনীর অভিমানও তার মতোই সুন্দর! ঠিক আছে, ব্যাপার নাহ!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ বনু! এদিকে এসে বস। সেই কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি!”
অনিকের কথায় স্মিত হাসলো অরিন।ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ভাইয়ের পাশের চেয়ারের কাছে। অনিক উঠে বোনের জন্য চেয়ারটা টেনে দেয় সামান্য। অরিনও চুপ করে বসে পড়ে সেথায়।মেয়েটার এহেন আধার নামানো মুখমণ্ডল দেখে অনিক ভ্রু গোটায়।অরিনের দিকে ক্ষুদ্র দৃষ্টি তাক করে নিচু গলায় বলে,
“ বনু? কি হয়েছে তোর? মনটা এমন খারাপ করে রেখেছিস কেন? কেও কিছু বলেছে বাচ্চা?”
অরিন তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে ‘ না’ জানায়।প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে,
“ না,না! তেমন কিছুই না।আসলে.. এখানটায় ভিষণ গরম। তাই আরকি….”

অনিক এবার খানিকটা অবাক হয় বোনের কথায়।আশেপাশে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নেয় — চারিদিকেই ফ্যানের যথেষ্ট সু-ব্যাবস্থা আছে।যদিও রেহানের বাবার ইচ্ছে মোতাবেক বৌভাত অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারে না করে, তাদের বাড়িতেই করা হচ্ছে। তাই বলে কিন্তু কোনভাবেই মেহমানদের আপ্যায়নে বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি! অনিক মৃদু কাশি দিয়ে বলে ওঠে,
“ বনু! আর ইউ শিওর তোর গরম লাগছে?”

অরিন মাথা ঝাকায়। মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঘটে আরেক কান্ড! কোত্থেকে যেন প্রচন্ড বাতাসের ঝাপটা এসে পিঠের দিকে আছড়ে পড়ছে তার।অরিন খানিকটা হকচকিয়ে ওঠে। তৎক্ষনাৎ পেছনের দিকে ফিরতেই হতভম্ব হয়ে যায় সে। তার ঠিক পেছনেই একটা টেবিল ফ্যান হাতে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। নিজ উদ্যেগে ফ্যানটা ঠিকঠাক মতো বসাচ্ছে ছেলেটা।কিয়তক্ষন বাদে হাতের কাজ শেষ করে বলে,
“ এবার ঠিক লাগছে? না-কি এখনো গরম লাগছে?”
রৌদ্রের এহেন কান্ডে অনিক মিটমিটিয়ে হাসে।অরিনের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নিচু গলায় বলে,
“ বনু! কি জিজ্ঞেস করছে ভাইয়া? এখনো খারাপ লাগছে? ”
অরিন গাল ফুলিয়ে রেখেই কোনমতে মাথা নাড়ায়।তা দেখে রৌদ্র অলক্ষ্যে মুচকি হাসে।এগিয়ে এসে অনিকের কাঁধে হাত রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“ তোর না কোথায় যাওয়ার কথা ছিল?”
অনিক ভড়কায়।সন্দিগ্ধ চোখে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় — রৌদ্র তার দিকেই হিমশীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র চোখের ইশারায় তাকে কি যেন একটা বোঝালো।অনিক ছেলেটাও বিজ্ঞের ন্যায় বুঝে গেলো যা বোঝার! সে তৎক্ষনাৎ বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তা দেখে অরিন পাশ থেকে সন্দিহান কন্ঠে বলে,
“ তুমি আবার উঠলে কেনো?”
অনিক একবার আড়চোখে তাকায় রৌদ্রের দিকে।পরক্ষণেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আনে অরিনের ওপর। স্মিত হেসে বলে,

“ একচুয়েলি বনু! আমার ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ পড়ে গেছে। তুই বরং এখন একটু কষ্ট করে খেয়ে নে।আই প্রমিস, রাতে আমি নিজ হাতে তোকে খাইয়ে দিবো।”
অরিনের মুখটা আবারও থমথমে হয়ে আসে এহেন কথার জবাবে।সে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
“ ঠিক আছে তাহলে।তুমি তোমার কাজ শেষ করে আসো তরপরই নাহয় আমি তোমার সঙ্গে খাবো ভাইয়া!”
এই বলে অরিন বসা ছেড়ে উঠতে নেয় তখনি তার হাতের কব্জি চেপে ধরে রৌদ্র। অরিন ভ্রু কুচকে তাকায় রৌদ্রের দিকে।তার এমন দৃষ্টিকে কোনরুপ তোয়ক্কা না করে রৌদ্র অনিকের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে,
“ ঐপাশের টেবিলে গিয়ে বসে পড়! কুইক!”
অনিক মাথা ঝাকায়।ধীর পায়ে চলে যায় সেখান থেকে। রৌদ্র এবার অরিনের দিকে তাকায়। মুখে তার স্পষ্ট গাম্ভীর্যের ছাপ। সে রাশভারী গলায় বললো,

“ চুপচাপ বস এখানে! কোনরকম ঘাড়ত্যাড়ামি করলে আজকে ঘাড়টা আর ঘাড়ের জায়গায় থাকবেনা।মাইন্ড ইট!”
অগত্যা এরূপ বাক্যে খানিকটা ঢোক গিললো অরিন।লোকটার সঙ্গে মুখেমুখে সে যতই অভিমান করুক না কেন, মনে মনে তো এখনও তাকে যথেষ্ট ভয় পায় সে।অরিন আর কিছু না বলে থমথমে মুখে বসে পড়ে নিজ জায়গায়।সেদিকে তাকিয়ে রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসে।তারপর অনিকের জায়গায় নিজে বসে পড়ে আরামসে। একে একে অরিনের প্লেটে খাবার সার্ভ করে দেয় সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“ নে শুরু কর!”

অরিন মুখ ফুলিয়েই খাবার খেতে শুরু করে। রৌদ্র এবার নিজের প্লেটেও খাবার নিয়ে নেয়।তারপর কি মনে করে যেন সে ঘটালো আরেক কান্ড! টেবিলের নিচ দিয়ে নিজের একহাত রাখে অরিনের উরুর ওপর। হঠাৎ এরম স্পর্শে গলায় খাবার আঁটকে যায় মেয়েটার।বেচারি অনবরত কাশতে থাকে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে নিয়ে। অরিনের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলতে থাকে,
“ ধীরে ধীরে খাবি তো! এতোটা তারাহুরো কেন করছিস জানবাচ্চা!”
কথা বলার ফাঁকে তার হাত যে কখন মেয়েটার পিঠ অব্দি চলে এসেছে তার খবর নেই! অরিন সরু চোখে তাকিয়ে রৌদ্রের পানে।পরক্ষণেই মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,
“ হাত সরান! ভুলে যাবেন না এটা পাবলিক প্লেস!”
রৌদ্র তৎনগদ অরিনের পিঠ হতে হাত সরিয়ে নেয়।গলায় মৃদু খাঁকারি দিয়ে ওঠে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ টানে।অরিনও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে খেতে থাকে একমনে।

ইকরা ঘুরে ঘুরে দেখছে পুরো সিকদার বাড়ি।তার বাবার সাথে ওসমান সাহেবের বন্ধুত্ব খুব ঘনিষ্ঠ হলেও সে খুব কমই এসেছে এ বাড়িতে। একেতো সে ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের মানুষ, তার ওপর খুব লাজুক। তাইতো খুব সহজে কারো সাথে তেমন একটা মিশতে পারেনা সে। এই যে এখন… যেখানে তার সমবয়সী মেয়েগুলো নিচে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে সেখানে সে কি-না একা একা ছাঁদে ঘুরাঘুরি করছে। বরাবরই শান্তশিষ্ট মেয়ে ইকরা।ছাদে ঘুরবার একপর্যায়ে ইকরার চোখ পড়লো অদূরেই থাকা গোলাপ ফুল চাড়া গাছের দিকে।সে দ্রুত পায়ে ছুটে আসে সেদিকে। তারপর চোরা চোখে আশপাশ একবার লক্ষ্য করে। তেমন কাওকে চোখে না পরায় মেয়েটা খানিকটা মুচকি হেসে
একটা ফুল ছিড়ে হাতে তুলে নেয়।মন ভরে সুগন্ধ টেনে নেয় গোলাপ ফুলের।গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণে অজান্তেই
আপনা-আপনি এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে ইকরার ঠোঁটের কোনে।ঠিক তখনি পেছন থেকে ভেসে আসে কারো রাশভারি কন্ঠ!

“ আপনি গাছ থেকে ফুল ছিঁড়লেন কেনো?”
তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠে ইকরা।কাঁপা হাত থেকে তার সাধের ফুলটা গড়িয়ে পড়ে অবহেলায়।সে তড়িৎ পেছনে ফিরে। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় — অনিক একপাশে হেলান দিয়ে, বুকের কাছে দু’হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের দরজায়। ইকরা অনিককে চিনতে পেরে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে রয়। অনিক ধীরে পায়ে এগিয়ে আসে তার কাছে। মেয়েটার কাছ থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে আপাদমস্তক পরোখ করে সে। মেয়েটার সুশ্রী নত মুখখানা হিজাবে বাঁধা। চোখদুটো বুঝি আজ যুদ্ধ করতে নেমেছে তার।যুদ্ধে মানুষ যেমন অস্ত্র ব্যবহার করে, এ মেয়ে বুঝি নিজের চোখকেই আজ সেই অস্ত্র বানিয়েছে। মেয়েটার কাজলটানা চোখগুলো যে আজ বড্ড ঘায়েল করছে তাকে। কথায় আছে — মেয়েদের কাজল দেয়া চোখ না-কি যুবকদের ঘুম কাড়তে সক্ষম। কিন্তু কই! অনিকের তো মনে হচ্ছে, এই মেয়ের চোখদুটো শুধু তার ঘুম নয় বরং তার সকল ধ্যান-জ্ঞান কাড়তে সক্ষম। অনিক বুঝি একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলো। সে কেমন অদ্ভুত কন্ঠে বললো,

“ তুমি….”
তার কথা শেষ হবার পূর্বেই ইকরা মাথানিচু করে ঠোঁট উল্টে বলে,
“ সরি! আসলে… ফুল দেখলে আমি আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারিনা।তাই…”
ইকরার কথার বলার ফাঁকে ফাঁকে ঠোঁট উল্টানো।বারবার এদিক সেদিক তাকানো। কথা বলার মাঝে তার অস্থিরতা, পাদু’টো অস্থিতিশীল। সবটাই একমনে পরোখ করলো অনিক।সে হুট করে অস্ফুট স্বরে বলে,
“ ঠিক আছো?”
তড়িৎ মাথা তুলে ইকরা। চোখদুটো তার অনিকের দিকেই তাক করা।কিন্তু অনিকের ঐ ঘোলাটে হয়ে আসা চোখের পানে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার সক্ষমতা হলো না তার।সে কিয়তক্ষন বাদেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সেখান থেকে। মাথানিচু রেখে বলে,
“ জ্বি ঠিক আছি!”
অনিক কি শুনলো মেয়েটার কথা? কই তার ভাবভঙ্গি দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।সে নিজেদের মাঝের দুরত্ব আরেকটু ঘুচিয়ে নেয়।সঙ্গে সঙ্গে দু-কদম পিছিয়ে যায় ইকরা। অনিক এসব দেখেও ভ্রুক্ষেপহীন। সে ফট করে বললো,

“ তুমি চেনো আমাকে?”
ইকরা মাথা নাড়ায়। তা দেখে চোখে হাসলো অনিক।বললো,
“ কিভাবে চেনো আমায়?”
ইকরা কোনরূপ ভনিতা ছাড়াই স্পষ্ট কন্ঠে উত্তর দিলো,
“ আপনি আমার মেজো মামার ছেলে।বলতে গেলে আমার মামাতো ভাই। সে হিসেবে…. ”
“ হুঁশশ!! এই কথাটা একবার বললে তাই কিছু বললাম না। কিন্তু নেক্সট টাইম যেন এটা না শুনি।”
ইকরার কথার মাঝেই গম্ভীর কণ্ঠে কথাটা বললো অনিক।ইকরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো অনিকের দিকে।হয়তো ভাবছে — হুট করে এহেন কথা বলার কারণ! মেয়েটার এমন দৃষ্টি দেখে মৃদু হাসলো অনিক। নিচু হয়ে মেঝেতে অবহেলায় পড়ে থাকা গোলাপটা তুলে নেয় হাতে। ইকরা পিছিয়ে যায় এক-কদম।অনিক ফুলটা হাতে তুলে উঠে দাড়ায়।তারপর নিজ উদ্যেগে ইকরার হাতে ফুলটা গুঁজে দিয়ে বলতে থাকে,

“ আমি বাদে পৃথিবীর সব ছেলে তোমার ভাই! হতে পারে আমি তোমার কাজিন,তাই বলে আমায় আবার ভাইয়া ডাকতে যেয়ো না যেন।আমি কিন্তু মোটেও তোমায় বোনের নজরে দেখিনা।”
ভড়কায় ইকরা।অনিকের স্পর্শে এমনিতেই অস্বস্তি হচ্ছে তার,তারওপর এমন প্রহেলিকাময় কথাবার্তা! ইকরা খানিকটা আমতা আমতা করে,
“ মানে….”
অনিক এবার চমৎকার হাসলো।ইকরার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“ এখনই বুঝতে হবে না ম্যাম! সময় আসুক।সবটাই জানতে এবং বুঝতে পারবেন।টিল দেট, প্লিজ হেভ সাম পেশেন্স!”

“ এই মেয়ে! দাঁড়া বলছি।”
রৌদ্রের পিছুডাকেও থামলো না অরিন।সে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে হাঁটতে থাকে ব্যস্ত পায়ে।রৌদ্র এবার দৌড়ে চলে আসে অরিনের সামনে। দু’হাত বাড়িয়ে পথ আগলে দাঁড়ায় মেয়েটার।অরিন বুঝি বিরক্ত হলো কিছুটা।সে কেমন চটে যাওয়া কন্ঠে বলে,
“ সরুন রোদ ভাই!”
তৎক্ষনাৎ মুখাবয়বে পরিবর্তন ঘটে রৌদ্রের।কপালের দৃঢ় রগগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ইতোমধ্যে! সে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে, চোয়াল আঁকড়ে ধরে অরিনের। হঠাৎ এমন হওয়ায় ভড়কে যায় অরিন।চোয়ালের ব্যাথায় মৃদু ককিয়ে উঠে সে।যদিও রৌদ্র নিজের সর্ব শক্তির একাংশও প্রয়োগ করেনি হাতে, তবুও অরিনের মনে হচ্ছে তার চোয়ালটা বুঝি এই খুলে পড়লো।অরিন রৌদ্রের হাতটা সরানোর বৃথা চেষ্টা চালায়।কিন্তু কাজের কাজ তো হলোই না,বরং ব্যাথাটা বুঝি আরেকটু বাড়লো তার।খানিকক্ষণ বাদে তার কানে আসে রৌদ্রের কটমট কন্ঠ!

“ কি বললি তুই? আরেকবার বল বেয়াদব! আমি তোর ভাই লাগি? নিজের স্বামীকে ভাই বলতে লজ্জা করেনা তোর? বেয়াদব! আরেকটাবার শুধু ভাই বল, একদম জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো ইডিয়ট! এমন জিভ আমার কোনো দরকার নেই। আমি সারাজীবন বোবা বউ নিয়ে পার করতে পারবো।”
রৌদ্রের এহেন কথার পিঠে ডুকরে উঠে অরিন।তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল ছেড়ে দেয় রৌদ্র। মেয়েটার লাল হয়ে আসা মুখটার দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ নিজের চুপ চেপে ধরে শক্ত হাতে।ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলে এক ঝটকায় মেয়েটাকে নিজের কাঁধে তুলে নেয় রৌদ্র। অরিন কান্না থামিয়ে হকচকিয়ে তাকিয়ে থাকে। রৌদ্রের পিঠে একের পর এক থাপ্পড় দিয়ে বলতে থাকে,
“ নামান বলছি! নিচে নামান অসভ্য লোক।কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
রৌদ্র থামলোনা।মেয়েটাকে কাঁধে তুলেই গটগট পায়ে হাঁটছে সে।অরিনের কথার পিঠে শক্ত গলায় বলে,
“ রাখ তোর সর্বনাশ! আমায় রাগিয়ে এখন আবার সর্বনাশ নিয়ে পড়ে আছে। চল তুই! তোরে দেখাচ্ছি সর্বনাশ বলে কাকে!”

রৌদ্র অরিনকে নিয়ে নিজের গাড়ির সামনে আসে।ভাগ্যিস তখন অনিক ছেলেটাকে ফোন করে বলে দিয়েছিল গাড়িটা বাড়ির পেছন দিকে নিয়ে আসতে। ছেলেটাও কি সুন্দর বাধ্যের ন্যায় কাজটা ঠিকমতো করে দিলো।রৌদ্র অরিনকে কাঁধ থেকে নামিয়ে গাড়ির ব্যাকসিটে বসায়।অরিন ত্যাড়ামি করে গাড়ি থেকে নামতে নিলে আরেক দফা খেঁকিয়ে ওঠে রৌদ্র।
“ এই বেয়াদব! আই সয়্যার, আরেকবার শুধু একপা বাইরে বের কর, দেখবি ঠ্যাং ভেঙে কেমন হাতে ধরিয়ে দেই।”
অগত্যা এহেন ধমকে চুপসে যায় অরিন।মাথানিচু করে জড়সড় হয়ে বসে রইলো ভালো মেয়ের মতো।রৌদ্র এসে পাশে বসে তার।অরিনের দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শক্ত গলায় ফের বলে,

“ এইবার বল কি সমস্যা তোর? কোন আক্কেলে তুই আমায় ভাই ডাকিস? তোর সাথে ভাইয়ের মতো কোন কাজ করেছি আমি? তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি তোকে।বউ তুই আমার! সেখানে তুই কোন দুঃখে আমায় ভাই ডাকিস?”
অরিন নিশ্চুপ! মুখ ফুলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।নাকের পাটা ইতোমধ্যেই ফুলে লাল হয়ে গেছে ।বোঝাই যাচ্ছে — অভিমানিনী দারুণ রেগেছে!রৌদ্রের এখন সেদিকে নজর দেবার বিন্দুমাত্র সময় নেই।সে নিজেও যে ক্ষেপে গেছে দ্বিগুণ। অরিনকে কোনো কথার জবাব দিতে না দেখে আরেকদফা মেজাজ হারায় রৌদ্র। সে এবার আলতো হাতে ঘাড় চেপে ধরে অরিনের। অরিনের ঘাড় চেপে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়। গলায় ঝাঁঝ ঢেলে বললো,
“ কথা কানে যায় না তোর? কি বলেছি আমি?”

অরিন চোখ নামিয়ে নেয় নিজের।নাক টেনে মৃদু ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলে,
“ ভুল হয়ে গেছে! আর বলবো না!”
রৌদ্রের মুখাবয়ব অপরিবর্তিত। সেথায় কি রাগ জমে আছে নাকি অভিমান, তা বোঝা বড় দায়! সে মেয়েটার ঘাড় চেপে তার মুখটা আরেকটু এগিয়ে আনে নিজের দিকে।তারপর এক অদ্ভুত কন্ঠে বলে ওঠে,
“ দেন সে সরি!”

কথাটা শেষ করে মেয়েটাকে আর কিছুই বলার সুযোগ দিলোনা রৌদ্র। সে তৎক্ষনাৎ নিজের ওষ্ঠপুটের সাহায্যে চেপে ধরে অরিনের নরম অধরযুগল। আজ বুঝি রৌদ্রের স্পর্শ বরাবরের মতো আদুরে নয়।আজ কেন যেন মনে হচ্ছে, নিজের সমস্ত রাগ মেয়েটার নরম ওষ্ঠপুটের ওপর ঢেলে দিচ্ছে রৌদ্র। প্রথম প্রথম আলতো ঠোঁটের স্পর্শ দিলেও পরবর্তীতে সে স্পর্শ হয়ে উঠছে কিছুটা জোরালো।রৌদ্র মেয়েটার ওষ্ঠপুট দ্বয় আশ্লেষে টেনে নিচ্ছে নিজের অধরযুগলের মাঝে।মাঝেমধ্যে বসিয়ে দিচ্ছে মৃদু কামড়।তার হাতদুটো বুঝি লাগামহীন! অনবরত বেহায়া স্পর্শে কাপিয়ে তুলছে মেয়েটাকে।রৌদ্র অরিনের নিচের ঠোঁটটায় আলতো করে কামড় বসায়।পরক্ষণেই ঠোঁটটিকে শুষে নিয়ে, আবারও ঠোঁটটা ছেড়ে দেয়। এহেন পাগলামিতে বরাবরের মতো কুপোকাত অরিন।

নিশ্বাসটাও যেন থমকে যাচ্ছে তার।বুকটায় কেমন দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে। একটু কান পাতলেই স্পষ্ট কর্ণগোচর হবে যেকারো। রৌদ্র এবার ঠোঁট ছেড়ে দেয় অরিনের। মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় — অরিনের কুঁচকে বন্ধ করে রাখা আখিদ্বয়,ফুলে আসা ঠোঁট,রক্তিম আভায় ছেয়ে যাওয়া কপোলদ্বয়।মেয়েটা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।নিশ্বাসের উঠানামায় স্পষ্ট তার বক্ষবন্ধনীর উঠানামা। রৌদ্র শুষ্ক ঢোক গিলে। ব্যস্ত হাতে খুলে ফেলে মেয়েটার হিজাব।তারপর অরিনের উম্মুক্ত কণ্ঠদেশে আবারও মুখ গুজে দেয় রৌদ্র। তার একহাত এখনও মেয়েটার ঘাড় চেপে রেখেছে, অন্যহাত অরিনের কোমর চেপে ধরেছে।রৌদ্র অরিনের কণ্ঠদেশে নাক ঘষে। এহেন মাতালকরা স্পর্শ, অরিনের সর্বাঙ্গ কাপিয়ে তুলতে যথেষ্ট। সে মৃদু গোঙানির শব্দ তোলে।রৌদ্র এবার সেখানে আলতো করে দাঁত বসায়।তারপর আবারও চুমুতে
ভরিয়ে তোলে জায়গাটা।ধীরে ধীরে সে মুখ নামিয়ে আনে অরিনের বক্ষবন্ধনীর কাছে।অরিন শুষ্ক ঢোক গিলে। কাঁপা কাঁপা হাতে চেপে ধরে রৌদ্রের চুল।রৌদ্র তখন হিসহিসিয়ে বলে,

“ এবার বল আমি কে তোর?”
অরিনের চোখ বুজে আসে।সে কোনমতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয়,
“ ডাক্তার.. সাহেব!”
রৌদ্র হয়তো এটুকু শুনেই খুশি হতে পারলোনা। এ মুহুর্তে সে হয়তো উম্মাদ বনে গিয়েছে অরিনের সংস্পর্শে এসে। সে কেমন উম্মাদের মতো হাত চালাচ্ছে নিজের। তার হাত যখন অরিনের পেটের ধারে এসে থামলো তখনি বাঁধ সাধলো অরিন।চোখ বন্ধ রেখে কাঁপা গলায় বলে,
“ থেমে যান প্লিজ!”
রৌদ্র থামলো না।অরিনের কথাগুলোকে একপ্রকার উপেক্ষা করে সে নিজের হাতের কাজ চালায়।এরূপ স্পর্শে বুঝি দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম মেয়েটার।রৌদ্র ফের শুধায়,

“ সানশাইন!কেনো এমন করিস প্রতিবার? কেনো রাগাস আমায়?”
অরিন প্রতিত্তোরে মৌন রইলো।চোখদুটো তার এখনো কুঁচকে রাখা।রৌদ্র এবার মুখ তুলে চাইলো অরিনের পানে।মেয়েটার চোয়াল ফের আলতো হাতে চেপে ধরে রাশভারী গলায় বলে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩০ (২)

“ শুনে রাখ মেয়ে! আমার ওপর তোর যত ইচ্ছে রাগ, অভিমান থাকুক না কেন, ভুলেও কোনদিন রাগ কিংবা অভিমানের ছলে আমায় উপেক্ষা বা ছেড়ে যাবার কথা ভাবিস না যেন।আমি রৌদ্র কিন্তু এতোটাও ভালো নই।আমার জিনিস কিভাবে নিজের কাছে আঁটকে রাখতে হয় — তা বেশ ভালোই জানা আছে আমার।হোক সেটা জোর করে, নাহয় আগলে রেখে।রাখতে ঠিকই জানি আমি!জাস্ট কিপ দেট ইন ইউর মাইন্ড!”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here