সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৫

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৫
Jannatul Firdaus Mithila

“নাইস ফিটিংস হানি!”
লজ্জায় পড়লো অরিন।তড়িৎ সরে যেতে চাইলো রৌদ্রের বাহুডোর থেকে। কিন্তু ছেলেটাকে দেখো! সে-তো ছাড়ছেই না মেয়েটাকে! অরিন এবার লজ্জায় হাসফাস করতে করতে বললো,
“ ছাড়ুন নির্লজ্জ লোক!”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। অরিনের ঠোটেঁর দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে দুষ্ট কন্ঠে বললো,
“ কাছে এসো হানি! আগে একটু নির্লজ্জতা করে নেই, তারপর নাহয় তোমার মুখ থেকে একবার নয় বরং বারেবার নির্লজ্জ ডাকটা শুনবো কেমন?”
অরিন শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো পরপর। মেয়েটার চোখেমুখে স্পষ্ট ভীতি। সে রৌদ্রের বাহুডোরে থেকেই মোচড়াচ্ছে কোনরকম। এদিকে রৌদ্র একেবারেই নির্বিকার! কিয়তক্ষন বাদেই সে নিজের মুখটা অরিনের কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,

“ একটু ভালো করে হলুদ মাখিয়ে দেই বউজান?”
অরিন ভ্রু কুঁচকায় এহেন কথায়। হয়তো সে বোঝেনি রৌদ্রের কথার গভীরতা। সে মুখ খুলে যে-ই না কিছু বলতে যাবে ওমনি রৌদ্র করে বসলো আরেক কান্ড! পাগল ছেলেটা হুট করেই অরিনকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো আলগোছে। অরিন হকচকায়। হাতের মুঠোয় চেপে ধরে রৌদ্রের শার্টের একাংশ। রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। সে ধীরে ধীরে সযত্নে বিছানায় শুইয়ে দিলো অরিনকে। তারপর নিজেও মেয়েটার কোমরের পাশ ঘেঁষে বসে পড়ে নিঃশব্দে। রৌদ্রের একাগ্র দৃষ্টি অরিনের সুশ্রী মুখখানায় নিবদ্ধ। আর অরিন? সে-তো লজ্জায় চোখমুখ কুঁচকে রেখেছে একপ্রকার! রৌদ্র কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকেই ধীরে ধীরে নিজের মুখটা নামিয়ে আনে অরিনের মুখের ওপর। অরিন চোখবন্ধ রেখেই স্পষ্ট টের পাচ্ছে রৌদ্রের উপস্থিতি। তার সম্পূর্ন মুখজুড়ে আছড়ে পড়ছে রৌদ্রের উষ্ণ নিঃশ্বাস। মেয়েটার বুকের উঠানামার গতি তৎক্ষনাৎ বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। শরীরে বয়ে যাচ্ছে মৃদুমন্দ কম্পন! তা খেয়াল হতেই রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটার ঠোঁটের ওপর নিজের বৃদ্ধা আঙুলের হালকা স্পর্শ দিয়ে, সে বলে ওঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ তোমায় মারাত্মক সুন্দর লাগছে বউজান! একদম খেয়ে ফেলার মতো সুন্দর!”
তৎক্ষনাৎ চোখদুটো মেলে তাকায় অরিন।ভ্রু কুঁচকে দৃষ্টি ফেলে রৌদ্রের দিকে। সন্দিহান গলায় বলে ওঠে,
“ খেয়ে ফেলার মতো মানে? এ আবার কেমন উদ্ভট কথা!”
রৌদ্র ফিচেল হাসলো। দুটো আঙুল দিয়ে অরিনের ওষ্ঠের নিম্নভাগ খানিক টেনে ধরে হাস্কি স্বরে বললো,
“ খেয়ে বুঝিয়ে দেই বউজান?”

কথাটা বলতে বোধহয় সেকেন্ড খানেক লাগলো, অথচ মেয়েটার নরম অধরযুগলের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে বিন্দুমাত্র দেরি হলোনা রৌদ্রের। সে তৎক্ষনাৎ নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে টেনে ধরে অরিনের নরম অধরযুগল।সেথায় মৃদুভাবে বসিয়ে দেয় নিজের দাঁতের স্পর্শ। এদিকে তার হাতদুটোও থেমে নেই কিন্তু! তারাও ইতোমধ্যে লেগে পড়েছে নিজেদের বেহায়া স্পর্শে মেয়েটাকে লজ্জায় কুপোকাত করে ফেলতে। অন্যদিকে, হয়রান অরিন। প্রথম দিকে নিজেকে সামলাতে কিছুটা সময় লাগলেও পরমুহূর্তেই ছেলেটার পাগলকরা স্পর্শে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে বেশ ভাবে! তার ক্ষুদ্র বদনখানি কাঁপছে মৃদুমন্দ! রৌদ্র তা টের পেয়েই মেয়েটাকে নিজের বুকপিঞ্জরে আগলে নিয়েছে দৃঢ়ভাবে। সে নিজের ওষ্ঠপুটের কাজ বহাল রেখেই অরিনের চোখের দিকে তাকায়। মেয়েটা আবেশে দু-চোখ কুঁচকে রেখেছে সেই কখন থেকে। রৌদ্র মনে মনে হাসলো খানিকটা। সে ধীরে ধীরে অরিনের কাঁপা হাতদুটো আলতো করে উঠিয়ে দিলো নিজের ঘাড়ের ওপর। অরিন তৎক্ষনাৎ খামচে ধরে ছেলেটার ঘাড়।

প্রায় মিনিট পাঁচেক পর, অরিনের নিশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম হলো।সে দু’হাত দিয়ে ঠেলে দিচ্ছে রৌদ্রের বুক বরাবর। অবশেষে রৌদ্র ছাড়লো মেয়েটাকে।ছাড়া পেতেই সে-কি বেহাল দশা অরিনের! মেয়েটা তৎক্ষনাৎ বুকে হাত রেখে মুখ হা করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। রৌদ্রও হাঁপাচ্ছে বেশ! সে আড়চোখে তাকালো অরিনের দিকে। পরক্ষণেই শার্টের হাতায় নিজের সিক্ত অধরজোড়া খানিক মুছে নিয়ে বললো,

“ উফফ! ইট ওয়াজ ড্যাম টেস্টি হানি! ক্যান উই ডু ইট ওয়ান্স মোর?”
তড়িৎ শক্ত চোখে তাকায় অরিন। দাঁতে দাঁত চেপে, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে ওঠে,
“ আপনি আপনার রুমে যান নির্লজ্জ লোক! সকাল সকাল কি বাসরের ভুত চেপেছে মাথায়? যত্তসব!”
দুষ্ট হাসলো রৌদ্র। চোখেমুখে কপট হতবাক ছাপ ফুটিয়ে বললো,
“ ওহো! এতো কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছিলাম সানশাইন! সে-ই তুমিই কি-না নিজে থেকে বাসরের কথাটা মনে করিয়ে দিলে? উঁহু! এটা মোটেও ঠিক করোনি বউজান। যেহেতু একবার মনে পড়েছে, সেহেতু কিছু-মিছু না করে আমি মোটেও থামবোনা।”

বলেই সে এগিয়ে আসে অরিনের দিকে। এদিকে অরিন তৎক্ষনাৎ কিছুটা দূরে সরে যায় রৌদ্রের নাগাল হতে। রৌদ্র বরাবরের মতো দুষ্ট হাসলো এবারেও।সে হুট করেই খামচে ধরলো অরিনের শাড়ির আঁচলখানা। অরিন হতভম্ব চোখে তাকায় রৌদ্রের দিকে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
“ ছেড়ে দিন! মার্কেট যেতে হবে আমার!”
রৌদ্র ছাড়লোনা।উল্টো আরেকটু বাড়িয়ে ধরলো মেয়েটার আঁচল। কিছুটা এগোতেই যাবে ওমনি তার মনে পড়ে গেলো কিছু একটা! রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মেয়েটার আঁচল ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা হলুদের বাটিটা হাতে তুলে নেয়। তারপর সেটি নিয়েই অরিনের কাছে এসে বলে ওঠে,
“ আমায় হলুদ ছোঁয়াবে না বউজান?”

অরিন মাথা ঝাকায়। হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে হলুদটা স্পর্শ করতেই যাবে ওমনি তার হাতটা খপ করে চেপে ধরে রৌদ্র। অরিন বিস্ময় নিয়ে তাকালো। তার চোখেমুখে স্পষ্ট জিজ্ঞাসা।রৌদ্র খানিকটা স্মিথ হেসে বললো,
“ আগে আমি তোমায় লাগিয়ে দেই! তারপর নাহয় তুমি লাগাবে।”
এপর্যায়ে ফের ভ্রু-দ্বয় কুঁচকে আসে অরিনের। সে তৎক্ষনাৎ গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
“ আপনি তো অলরেডি লাগিয়েছেন। এই-যে আমার গালভর্তি হলুদ!”
রৌদ্র একবার সরু চোখে চাইলো মেয়েটার দিকে। পরক্ষণেই কেমন অসন্তোষের সাথে বলে ওঠে,
“ এইটুকুতে কি আর হয় সানশাইন? আমার বউজানকে হলুদ ছোঁয়াবো,সেটা আবার কম করে কেনো? তোমার জন্য সবকিছুই হবে বেশি বেশি। ঠিক আমার ভালোবাসার মতো!”
অরিন আলতো হাতে কপাল চাপড়ায়। তা দেখে তৎক্ষনাৎ বিচলিত হয়ে মেয়েটার হাতদুটো টেনে ধরে রৌদ্র। অস্থির হয়ে আলতোভাবে মেয়েটার কপাল ঘষে বলতে থাকে,

“ ইশশ্! কি করলি এটা? ব্যাথা লেগেছে না?”
এপর্যায়ে অতিষ্ঠ অরিন। সে অতিষ্ঠ চোখে রৌদ্রের দিকে তাকায়। বলে,
“ এরকম করছেন কেনো? বিয়ের খুশিতে মাথার স্ক্রুগুলো কি ঢিলে হয়ে গেলো ডাক্তার সাহেব?”
কথাটায় যেন ভারি মজা পেলো রৌদ্র। সে তৎক্ষনাৎ হো হো করে হেসে ওঠে ঘর কাপিয়ে। অরিন ভড়কায় এহেন হাসির শব্দে। বাইরে থেকে কেউ শুনতে পেলে যে কেলেঙ্কারি ঘটবে সে-ই খবর কি আর আছে এই লোকের? অরিন তেমন কিছু ভেবে না পেয়ে হুট করেই হাত দিয়ে চেপে ধরে রৌদ্রের মুখ।রৌদ্রের হাসি এখনো চলছে, আওয়াজ যদিওবা কমেছে একটুখানি। অরিন ছেলেটার পানে করুণ চোখে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
“ এভাবে হাসবেন না ডাক্তার সাহেব! বাইরে থেকে কেউ শুনতে পেলে, বিয়ে আর করা লাগবে না…! ”
এহেন কথায় মুহুর্তেই মুখের আদলে পরিবর্তন ঘটলো রৌদ্রের। সে তৎক্ষনাৎ নিজের মুখের ওপর থেকে অরিনের হাতটা নামিয়ে ভরাট গলায় বলে ওঠে,

“ হেই বিউটিফুল লেডি! কান খুলে শুনে রাখো। তোমার আদরনীয় বাপের বড় ভাইয়েরও সাধ্য নাই আমার বিয়েতে বাগড়া দেওয়ার। আমি যেহেতু বলেছি,আমার বিয়ে হবে মানে….হবেই! নাহলেও সমস্যা নাই। ডিরেক্ট বাসর করবো। দেখি কোন বাপের ব্যাটা আমাকে আঁটকায়। এইবার বাসর করার জন্য যদি যুদ্ধের ঘোষণাও করতে হয় তবে আমি সেটাও করবো।তবুও বাসর করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ! ডু ইউ গেট দেট হানি?”
অরিন হতবুদ্ধিভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। এমুহূর্তে তার ঠিক কেমন এক্সপ্রেশন দেওয়া উচিত তা-ই হয়তো ভাবছে সে! প্রায় মিনিট খানেক পর রৌদ্র আবারও দুষ্ট হাসলো। মেয়েটার আঁচলখানা ফের নিজের হাতের মুঠোয় পেঁচাতে পেঁচাতে গলায় কৌতুকের সুর তুলে গাইতে লাগলো,

❝ একখান চুম্মা দে পরান লাগাইলি..
দুইখান চুম্মা দে ভোল্টেজ বাড়াইলি..
তিনখান চুম্মা দে আমায়…….
হাই হলো টেম্পারেচার…….
চড় গেয়া পেয়ার কা বুখার…..
চড় গেয়া পেয়ার কা বুখারহে ❞
এমন একটা পরিস্থিতিতে এহেন গান শুনে হতভম্ব অরিন। বাসরের শোকে লোকটার মাথাটা কি সত্যি গেলো? কিসব হাবিজাবি গাচ্ছে সে? পরক্ষনেই রৌদ্রের মুখে আরেকটা কথা শুনে নিজের এতোশতো কঠোর ভাবনা থেকে মুহুর্তেই ছিটকে বেরিয়ে আসে অরিন। রৌদ্র মেয়েটার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিসব উদ্ভট মুখভঙ্গি দেখিয়ে বলছে,

“ হেই সেক্সি! কাম…. একটা চুম্মাআআ দাও আমায়! তোমার ঐ মিষ্টি ঠোঁট দুটো দিয়ে খুব শক্ত করে একটা চুম্মা দিও কিন্তু!!! কই এসো গো!”
অরিন ভড়কায়। তড়াক পেছনে হটে বলে,
“ পাগল হয়েছেন আপনি?”
রৌদ্র মাথা ঝাকায়। ঠোঁটের কোণে মুগ্ধকর হাসি টেনে বলে,
“ হয়েছি।তো?”
অরিন আর কিছু বললোনা। রৌদ্রের হাতের মুঠো থেকে নিজের আঁচলটা টানতে ব্যস্ত সে। রৌদ্র আবারও দুষ্ট হেসে অরিনের দিকে এগিয়ে এলো। মেয়েটার নত করে রাখা আদুরে মুখখানা খানিক উঁচিয়ে তুলে, নরম কন্ঠে বললো,
“ এমুহূর্তে যা যা করবো,সবকিছুতে জাস্ট লক্ষ্মী মেয়েদের মতো কো-অপারেট করবে।কেমন?”
অরিন কি বুঝলো কে জানে? সে শুধু বাধ্যের ন্যায় মাথ কাত করলো।এটুকুই যেন যথেষ্ট ছিলো রৌদ্রের জন্য। সে এবার মেয়েটাকে আলগোছে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তারপর পাশ থেকে হলুদের বাটিটা সামনে এনে একটু করে হলুদ উঠিয়ে নেয় নিজের হাতে। অরিন এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পাগল প্রেমিকের দিকে। রৌদ্রের চোখেমুখে এক অদ্ভুত দীপ্তি! ঠোঁটের কোণে লেগেই আছে মিষ্টি হাসির রেশ! ছেলেটা একপলক অরিনের দিকে তাকিয়ে হাস্কি স্বরে বললো,

“ চাইলে চোখবুঁজে ফেলতে পারো সানশাইন! কেননা একটুপর যা হবে, তা হয়তো ঠিকঠাক ভাবে নাও দেখতে পারো তুমি।”
অরিন ঘাবড়ে গেলো এহেন বাক্যে। কোনো এক অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে ওঠে তৎক্ষনাৎ। রৌদ্র এবার অরিনের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে এনে নিজের কাজে মনোযোগ টানে। মেয়েটার ফর্সা মসৃণ পাদু’টোর দিকে এগিয়ে এসে বসলো সে।কিয়তক্ষন পাদু’টোর দিকে একমনে চেয়ে থেকে, আচমকাই পাদু’টো টেনে নিজের উরুর ওপর উঠিয়ে আনলো রৌদ্র। অরিন হকচকায়।ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল মেয়েটা। কিয়তক্ষন বাদেই রৌদ্রের উরুর ওপর থেকে নিজের পাদু’টো সরিয়ে আনতে নিলেই রৌদ্র আরেকটু টেনে ধরে অরিনের পাদু’টো। অরিন তখন মিনমিনে স্বরে বলে,

“ এভাবে পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো? আমার পাপ হবে না?”
এহেন বাক্যে রৌদ্র মুখ বাঁকায়। অরিনের পাদু’টোর দিকে তাকিয়ে থেকেই কৌতুকের সুরে বলে ওঠে,
“ সামান্য পা ছুঁয়েছি বলে এতো নাটক? অথচ আর দুটো দিন পর এই পা আরো কতো কতো জায়গায় উঠবে… সেটার বেলায় কি বলবে হানি?”

থমকায় অরিন। রৌদ্রের এমন লাগামহীন কথায় নিশ্বাসটাও যেন আঁটকে আসার যোগাড় তার। সে তৎক্ষনাৎ চোখমুখ কুঁচকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। রৌদ্র মেয়েটার এরূপ অবস্থা দেখে বাঁকা হাসলো যেন। সে এবার ইচ্ছে করে মেয়েটার মসৃণ পাদু’টোতে হাত দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকে অনবরত। এহেন স্পর্শে মুহুর্তেই সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো অরিনের। মেয়েটা তৎক্ষনাৎ ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের। রৌদ্র এবার নিজের হাতের গতি বাড়ালো। মেয়েটার পাদু’টোর আরেকটু ওপরে নিজের হাত এনে একই ভঙ্গিমায় ম্যাসাজ করতে লাগলো। অরিনের মুখ থেকে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে আসে অস্ফুটে স্বর! রৌদ্র সেদিকে কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ না করে হলুদের বাটি থেকে আরও কিছুটা হলুদ তুলে নেয় হাতে। তারপর নিজের হলুদ রাঙা হাতটা দিয়ে অরিনের ফর্সা মসৃণ পাদু’টোতে আলতো করে লাগিয়ে দেয় হলুদের স্পর্শ! অরিন কাঁপছে। দুরুদুরু বুকের কম্পন সহ্য করতে না পেরে হাতদুটো এনে চেপে ধরেছে বুকটার ওপর। নাহ! তবুও যেন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না তেমন।

মেয়েটার পাদু’টোতে হলুদ লাগানো শেষ হলো তার। অবশেষে রৌদ্র এবার বসলো অরিনের কোমরের পাশে। অরিন এখনো চোখমুখ কুঁচকে রেখেছে। রৌদ্র ধীরে ধীরে নিজের এক আঙুল দিয়ে অরিনের ফর্সা মসৃণ উদর হতে শাড়ির আঁচলখানা আলতো করে সরিয়ে দেয়। তারপর সেথায় কিয়তক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে, হুট করেই নিজের শক্ত হাতের নরম স্পর্শ একে দেয় আলতো করে। অরিন কেঁপে ওঠে আরেকবার। দু’হাতে খামচে ধরে বিছানার চাদরখানা। রৌদ্র এবার সেখানেও হলুদ ছোঁয়ায়। হাতভর্তি হলুদ নিয়ে লেপ্টে দেয় মেয়েটার ফর্সা উদরে। কিয়তক্ষন বাদেই সে কেমন দুষ্ট হেসে বলে,

“ ইশশ্! কি সুন্দর লাগছে বউজান! ইচ্ছে করছে এক্ষুণি কামড়ে খেয়ে ফেলি।”
অরিন ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। কন্ঠ তার বাকশূন্য। গায়ের মৃদু কাঁপনে ঠিকঠাক মতো শুয়ে অবধি থাকতে পারছেনা মেয়েটা। রৌদ্র তখন মেয়েটার বুক বরাবর উঠে এলো।হাত দিয়ে আলতো করে অরিনের আঁচলটা বুক হতে সরিয়ে দিয়ে সেথায় মুখ গুঁজে পড়ে রইলো কিছুক্ষণ। নিজ উদ্যোগে অরিনের কাঁপা কাঁপা হাতদুটোকে উঠিয়ে দিলো নিজের কাধঁ বরাবর। রৌদ্র সজোরে মেয়েটার গায়ের সুবাস টেনে নিচ্ছে। পরক্ষণেই আবার কেমন করে মেয়েটার বক্ষ বিভাজনের ওপর নাক ঘষে দিলো আলতো করে। অরিন তৎক্ষনাৎ চেপে ধরে রৌদ্রের চুল। গলায় কপট ঝাঁঝ ঢেলে বলে ওঠে,

“ থামবেন আপনি?”
রৌদ্র আগের স্থানে মুখ লুকিয়েই হাসলো খানিকটা। মুহুর্ত পেরুতেই কেমন দুষ্ট কন্ঠে বললো,
“ না থামলে কি করবে হানি?”
অগত্যা এমন কাঠখোট্টা জবাবে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো অরিন। লোকটাকে ওতো বুঝিয়ে তেমন কোনো লাভ নেই, এ আর বুঝতে বাকি রইলো না তার। তাই সে-ও নিজেকে কোনমতে স্বাভাবিক করে নিয়ে রৌদ্রের চুলের ভাঁজে আঙুল নিয়ে যায়। সেথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
“ ডাক্তার সাহেব!”
“ ইয়েস সানশাইন!”
“ বলুনতো, পুরুষ মানুষের আসল সৌন্দর্য কোথায় লুকায়িত?”
রৌদ্র ফিচেল হাসলো। অরিনের বুকের ওপর মাথা ঠেকিয়ে কিয়তক্ষন ভেবেই চট করে উত্তর দিলো,
“ কোথায় আবার? তার ভালোবাসায়, প্রিয়তমার প্রতি করা তার হাজারো পাগলামিতে আর….”
কথার মাঝে হুট করে থেমে যাওয়ায় ভ্রু কুঁচকায় অরিন।রৌদ্রের চুলের ভাঁজে তার চিকন আঙুলগুলোও থেমে গেলো হঠাৎই। সে তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করে বসে,

“ আর?”
এপর্যায়ে রৌদ্র মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো গভীরভাবে। মেয়েটার বুকে মাথা রেখে ভরাট কন্ঠে বলে,
“ অন্যেরটা জানিনা সানশাইন! তবে আমার সকল সৌন্দর্য একমাত্র তোমাতেই নিবদ্ধ!”
মুগ্ধ হাসলো অরিন।ছেলেটাকে নিজ থেকেই আরেকটু জড়িয়ে ধরলো নিজের সঙ্গে। সন্তুষ্টির স্বরে বলে,
“ এই ছেলে শুনছেন?”
“ জ্বি ম্যাম বলুন।”
অরিন গালভর্তি হাসি টানলো এবার। রৌদ্রের মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
“ ভালোবাসি!”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ প্রতিত্তোর করলোনা এহেন কথার। অরিন তখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“ কি হলো? কি বললাম শোনেননি?”
রৌদ্র মুখ তুলে চাইলো এবার।অরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো একদৃষ্টিতে। অরিন আবারও তাড়া দিয়ে বলে,
“ কি হলো বলুন!”
রৌদ্র মুচকি হাসলো। হাত বাড়িয়ে মেয়েটার নাক টেনে দিয়ে দুষ্ট কন্ঠে বললো,

“ এর জবাব বাসর রাতে দিবো সোনা। টিল দ্যান প্লিজ ওয়েট।”
অরিন গাল ফোলায় এবার। রৌদ্রের শার্টের কলার চেপে তাকে টেনে আনে নিজের কাছে। রৌদ্র মোটেও তেমন ভ্রুক্ষেপ করলোনা এহেন কান্ডে। বরং তার মুখভঙ্গি দেখলে বোঝা যায় — সে বুঝি খুশিই হয়েছে এমনটা করায়। অরিন রাগ নিয়ে কর্কশ গলায় বলে ওঠে,
“ কি বাসর রাতে বলবেন হ্যা? আমার এখনি উত্তর চাই।চাই মানে চাই।”
রৌদ্র মেয়েটার মুখের ওপর আরেকটু ঝুঁকে আসে। তার গালে আলতো করে আঙুল বুলিয়ে আবদারের সুরে বলে,
“ একখান চুম্মা দাও…তাহলে বলবো।”
কথাটা শোনামাত্রই অরিন তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের গাল বরাবর ঠোঁটের পরশ একেঁ দেয়।তা দেখে রৌদ্র কেমন মুখ কুঁচকে বলে,

“ এটা আবার কেমন চুম্মা রে? এমন চুম্মা না দিয়ে তুই বরং আমায় একটা চড় মারতি, তাও বোধহয় ভালো ছিলো।”
অরিন ভ্রু কুঁচকায়।চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকায় রৌদ্রের দিকে। বলে,
“ ভাব নিচ্ছেন?”
রৌদ্র কাঁধ উঁচায় হালকা। গলায় ভিষণ ভাব টেনে বলে,
“ একদম!”
অরিন হেসে ওঠে রৌদ্রের এমন কথা বলার ভঙ্গিতে। সে রৌদ্রের শার্টের কলার চেপে তার মুখটাকে নিজের মুখের একেবারে কাছাকাছি টেনে আনে। তার ঠোঁট যখন রৌদ্রের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই তখনি ঘরের দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ পড়ে। অরিন হকচকায়।সে-ই সাথে হাতদুটো দিয়ে ঠেলে ছেলেটাকে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে দেয় আলগোছে। রৌদ্রও পড়ে গেলো টেনশনে। মেয়েটার কাছে এলেই যেন সময়-পরিস্থিতি সবটা বেমালুম ভুলে যায় সে। এই যেমন এতক্ষণ ভুলেছে! অরিন ভয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো কয়েকটা। ভীতু চোখে তাকালো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে নেমে নিজের পরনের শার্টটা খানিকটা টেনেটুনে ঠিক করে নেয়। পরক্ষণেই ঘাড় বাকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকায়। ফিসফিসিয়ে বলে,

“ রেসপন্স কর।”
তড়িৎ মাথা ঝাকায় অরিন। বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে নেমে এসে দাঁড়ায় দরজার কাছে। ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে কোনমতে বলে,
“ ক-কে?”
ওপাশ থেকে ভেসে আসে আহির কন্ঠ। মেয়েটা দরজায় একের পর এক করাঘাত করছে আর ডাকছে তাকে।
“ অরিপু? হলো তোমার? বলি আজ কি আর মার্কেটে যাওয়া হবে?”
অরিন ঢোক গিললো পরপর। কন্ঠ উঁচিয়ে শোধালো,

“ ইয়ে মানে… আর দশটা মিনিট দেওয়া যাবে কি? আসলে আমি শাড়িটা উল্টো পড়েছি। তাই… ”
অরিনের সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে রাফিয়া বেগমের ব্যস্ত কন্ঠ।
“ এই মেয়ে! সে-ই এক ঘন্টা যাবত ঘরের দোর লাগিয়ে রেডি হচ্ছিস,আবার এখন বলছিস আরও দশমিনিট? বলি… তোকে কি বউ সাজতে বলেছি আমরা?”
এপর্যায়ে ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা অরিনের। মেয়েটা আবারও ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকালো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে হুট করেই দরজাটা খুলে দিলো আলগোছে। অরিন ভড়কায়। চোখ ছানাবড়া করে তাকায় রৌদ্রের পানে। ঠিক তখনি দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকেন রাফিয়া বেগম, জুবাইদা বেগম, এমনকি আহিরা,মাহিরা এবং রুহি। জুবাইদা বেগম পরনের শাড়ির আঁচলটা খানিক ঠিক করতে করতে বলতে লাগলেন,

“ কই হলো তো…”
বাকিটা আর বলতে পারলেন না তিনি।কথাগুলো যেন গলাতেই আঁটকে গেলো তার। সে-ই সাথে সকলের চোখদুটো আঁটকে গেলো অদূরেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা রৌদ্র অরিনের দিকে। অরিন সকলের এহেন দৃষ্টি দেখে ভয়ে ভয়ে গিয়ে দাড়ালোঁ রৌদ্রের পেছনে। রৌদ্র সটানভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে নেই তেমন অভিব্যাক্তি। প্রায় মিনিট খানেক পর,নিজেদের এহেন হতভম্বতা একপাশে রেখে রাফিয়া বেগম বলে ওঠেন,
“ একি অবস্থা তোদের? গায়ে এতো হলুদ এলো কোত্থেকে?”
রৌদ্র এবার ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দেয় —

“ আমি লাগিয়েছি।”
এহেন কথায় মুহুর্তেই তেতে উঠলেন জুবাইদা বেগম। মুখে কপট রাগ টেনে, তিনি কেমন গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“ সবকিছুতে তোর এই আগে হাঁটুনি,পান বাটুনির স্বভাবটা আমার কিন্তু মোটেও ভাল্লাগে না রোদ। আমরা তো বলেছি-ই রাতে হলুদ পর্ব, তন্মধ্যে তুই কেনো আগেভাগে এসে হলুদ ছোঁয়াতে গেলি? কারণটা কি বলতো? তাছাড়া তুই হলুদ বাটা পেলি কোথায়?”
রৌদ্র কিছুক্ষণ মৌন রইলো। পরমুহূর্তেই খানিক গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
“ আমি বেঁটেছি।”
এহেন কথায় মুহুর্তেই ঝটকা খেলেন সকলে। সকলের অবাক কন্ঠ ফুঁড়ে একযোগে বেরিয়ে আসে,

“ কিহ?”
রৌদ্র ভ্রুক্ষেপহীন। সকলের এহেন প্রতিক্রিয়াতেও তার যেন কিছুই যায় আসছেনা। এরইমধ্যে ঘরে ঢুকে রেহান।রৌদ্র আর অরিনের এরূপ অবস্থা দেখে বেশ অবাক হলো সে।তার হতবাক কন্ঠফুড়েঁ বেরিয়ে আসে,
“ কিরে? আমাদের আগে তোদের ওমন হলুদ দিয়ে গোসল দিলো কে?”
“ কেউই দেয়নি।রোদ ভাই নিজেই দিয়েছে।” — পাশ থেকে বলে ওঠে মাহিরা। কথাটা শুনতেই রেহানের মুখখানায় কপট দুঃখী ভাব ছেয়ে গেলো নিমিষেই। ছেলেটা কেমন মিছে মিছে আহত স্বরে বললো,
“ তুই এমন কেন রে ভাই? মাঝে মধ্যে আমাদের একটু তো সুযোগ দিতেই পারিস তাই-না?”
রৌদ্র কিছুই বললোনা প্রতিত্তোরে। তক্ষুনি আহিরা গলায় সুর টেনে বলে ওঠে,
“ যাক ডিসিশন ফাইনাল! বিয়ে করলে রোদ ভাইয়ের মতোই কাউকে বিয়ে করবো,আদারওয়াইজ বিয়েই করবোনা!”

আহিরার এহেন বক্তব্যে হো হো করে হেসে ওঠে ঘরে উপস্থিত সকলে।অন্যদিকে দরজার পাশ ঘেঁষে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতির ভ্রুযুগল আপনা-আপনি কেমন কুঁচকে এলো আহিরার কথায়। সে মনে মনে মুখ বাঁকায়।বলে,
“ শুধু রোদ ভাই কেনো? আশেপাশে আমাদের মতো মানুষগুলোকে কি চোখে পড়ে না মেডামের? ওহ! ভুলেই তো গিয়েছিলাম,মেডাম তো আমায় আবার দু-চোখে সহ্য করতে পারেনা।সেক্ষেত্রে আমায় কি আর তার চোখে ধরবে? হুহ্!”

ঘরভর্তি মানুষজন মুখ টিপে হাসছে।অরিন তো আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে লজ্জায়। রৌদ্র হয়তো বুঝলো মেয়েটার মনের অবস্থা। সে তৎক্ষনাৎ মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকিয়ে অরিনকে বলে,
“ সবার সাথে মার্কেটে যাচ্ছিস ভালো কথা। ভুলেও মুখ থেকে নেকাব সরাবিনা। মনে থাকবে?”
অরিন ধীরে ধীরে মাথা কাত করে। রৌদ্র হাসলো একটুখানি। মেয়েটার মুখের ওপর এসে আছড়ে পড়া চুলগুলোকে আলতো করে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে আবারও নরম কন্ঠে বলে,
“ সাবধানে যাবি। আর প্রতি ১০ মিনিট পরপর আমায় মেসেজ দিয়ে আপডেট জানাবি কেমন?”
এবারেও নিঃশব্দে মাথা কাত করে অরিন। এমন সময় পেছন থেকে রেহান গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। কৌতুকের সুরে বলে,

“ ইয়ে মানে সম্বন্ধীসাহেব! বলছিলাম আমরাও কিন্তু আশেপাশে আছি। তাই একটু রয়েসয়ে নাহয়….”
এরূপ কথায় লজ্জায় পড়লো বাড়ির গুরুজনেরা। তারা তৎক্ষনাৎ জিভে কামড় দিয়ে গটগট পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আলগোছে। রৌদ্র তখন চোখ পাকিয়ে তাকায় রেহানের দিকে। কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
“ তুই কি কোনোদিনও শুধরাবি না?”
রেহান ডানে-বামে মাথা নাড়লো দুয়েকবার। বুঝদারদের ন্যায় বলতে লাগলো,
“ তোকে নিজের বেয়াই না বানানো অবধি শুধরাবো না বলে রাখলাম।”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। অরিনের নত করে রাখা লজ্জালু মুখটার দিকে তাকিয়ে, রাশভারি কন্ঠে বললো,
“ আশায় বান্ধে বাসা! ব্যাপার নাহ! এমন দুয়েকটা আশা থাকা ভালো।”

কথাটা বলেই রৌদ্র কদম বাড়ায় চলে যেতে। দরজা পেরিয়ে যে-ই না একটু সামনে যাবে ওমনি তার মুখোমুখি হয় কবির সাহেব। কবির সাহেব বোধহয় তার তিনভাই এবং ভগ্নিপতিদের নিয়ে মাত্রই ছাঁদ থেকে নেমে এসেছেন আর ওমনি মাঝপথে থমকে গেলেন রৌদ্রকে অরিনের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে। কবির সাহেব একবার আপাদমস্তক পরোখ করলেন ছেলেকে। রৌদ্রের গায়ের শার্টটা যেন হলুদে মাখানো হয়েছে। ছেলেটার দুগালে,গলায়, হাতেও স্পষ্ট হলুদের উপস্থিতি। কবির সাহেব খানিক সময় নিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন,
“ তোমার এ অবস্থা কেনো? আর অরির রুমেই বা গিয়েছিলে কেনো?”
রৌদ্র ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। বুক টানটান করে নির্ভয়ে সে বলতে লাগলো,
“ আমার বউকে হলুদ ছোঁয়াতে গিয়েছিলাম।”

মুহুর্তেই কপালে দু-তিনেক বিরক্তির ভাজঁ পড়লো কবির সাহেবের। তিনি কাঠকাঠ কন্ঠে কোনমতে বললেন,
“ বিয়েতো দিচ্ছিই তাই না? এবার তো অন্তত একটু ধৈর্য্য ধরতে পারো!”
রৌদ্র চোখ সরু করে চাইলো বাবার দিকে। পরক্ষণেই কেমন গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলতে লাগলো,
“ হুম দিচ্ছো তো! বললাম আজকে দিয়ে দিতে কিন্তু তুমি দিচ্ছো কালকে। শোনো আব্বু… বউয়ের কথা মনে পড়লে আমার আবার ধৈর্য্য-সহ্য থাকেনা। তাই যখন-তখন চলে আসি আরকি!”
ছেলের এহেন লাগামহীন কথায় ফের অতিষ্ঠ হলেন কবির সাহেব। তিনি তৎক্ষনাৎ খানিক চেচিয়ে উঠে বললেন,
“ সাব্বির! একটা টেপ আনতো।এই ছেলের মুখে এক্ষুণি টেপ মারবো আমি। বেয়াদব ছেলে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জদের মতো কিসব বলে যাচ্ছে!”

বাবা-ছেলের এরূপ বাক-বিতন্ডায় পাশ থেকে বাকিরা মুখ টিপে হাসছে।এদিকে রৌদ্র কেমন মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,
“ এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো তুমি? যেখানে বিয়ে আমার, উত্তেজিত হওয়ার কথা আমার সেখানে তোমার এতো উত্তেজনা দেখে রীতিমতো শিহরিত আমি!”
এবার যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো কবির সাহেবের। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে বললেন,
“ বেয়াদব ছেলে! এক্ষুণি সরো আমার দুচোখের সামনে থেকে। নাহলে কিন্তু বিয়ে-শাদি দেখবোনা, একেবারে ধরে চড়াবো গাল বরাবর।”
রৌদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে। বাবাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যেতে পেছন থেকে হাঁক ছেড়ে বলে ওঠে,
“ সত্য কথার ভাত নেই এ জগতে! ধুরো! মনটা কেমন বউ বউ করে রে!”
কথাটা বলেই রৌদ্র দিলো ভো দৌড়। তাকে আর পায় কে। এদিকে কবির সাহেব সাপের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করছেন আর বাকিরা মুখ টিপে হাসছেন। কিয়তক্ষন বাদেই কবির সাহেব কেমন সন্দিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
“ নির্লজ্জ ছেলেপেলে কোথাকার! এ সত্যি আমার ছেলে? আমারতো এখন বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবার যোগাড়। অনিক এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে কাজের চাপে। পরনের ধূসর রঙা পাতলা শার্টটাও কেমন ভিজে নেয়ে একাকার অবস্থা। দৌড়াদৌড়ির একপর্যায়ে সে একটুখানি বসলো একজায়গায়। হাতঘড়িতে সময়টা দেখে নিলো একবার। পরক্ষণেই তার ব্যস্ত চোখদুটো আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কাউকে। কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটি যেন এদিকে কোত্থাও নেই। হয়তো অরিনকে সাজাতেই ব্যস্ত সকলে। রৌদ্রের কড়া নিষেধ, আজকে যেন তার বউকে খুব ভারি সাজ না দেওয়া হয়।সেজন্যই বাড়ির মেয়ে সদস্যরা মিলেই সাজাচ্ছে মেয়েটাকে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর অনিক বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অদূরে কথা-কাটাকাটি করতে থাকা পুতুল আর রিমিকে হাতের ইশারায় ডাকলো সে।রিমি তৎক্ষনাৎ পুতুলের সাথে কথা কাটাকাটি থামিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসে অনিকের কাছে। এসেই বলে,

“ কি বলবে অনি ভাইয়া?”
অনিক হাসলো একটুখানি। আশেপাশে একবার সর্তক চোখ বুলিয়ে পকেট থেকে একটা হলদে রঙা চিরকুট বের করে সেটা দিয়ে দেয় রিমির হাতে।তারপর মেয়েটাকে সর্তকতার সাথে বলে ওঠে,
“ আমার একটা কাজ করে দিবে রিমঝিম?”
রিমি মাথা নাড়ায়। হাতের মুঠোয় পুরে রাখা চিরকুটটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ এটা কি?”
অনিক দিলোনা এই জবাব। সে শুধু বললো,
“ এটা একটা চিরকুট রিমঝিম। তুমি কষ্ট করে এটা প্লিজ তোমার ইকরা আপুর হাতে দিয়ে আসবে? অন্য কাউকে দেওয়া কিংবা এ ব্যাপারে কিছু বলাও যাবে না কিন্তু!”
রিমি চিরকুটটা মুঠোয় ধরে ভাবুক স্বরে বললো,

“ উমমম! ঠিক আছে। তোমার কাজটা নাহয় আমি করে দিবো কিন্তু বিনিময়ে কি পাবো শুনি? আমি আবার গিভ এন্ড টেক অপশনে বিশ্বাস করি।”
এইটুকুন হাঁটুর বয়সী মেয়ের মুখে ওমন পাকাঁ কথা শুনে হেসে ফেলে অনিক।সে রিমির মাথায় হালকা গাট্টা দিয়ে, আদুরে কন্ঠে বলে,
“ আই নো জানু! তুমি এটা তোমার ইকরা আপিকে দিয়ে এলে আমি তোমাকে দু- বক্স চকলেট কিনে দিবো।এন্ড আই প্রমিস ইউ দেট!”
“ রিয়েলি?”
“ ইয়াহ!”
কথাটা শোনামাত্রই খুশিতে নেচেঁ উঠে রিমি।মেয়েটা তৎক্ষনাৎ পরনের লেহেঙ্গাটাকে দু’হাতে আগলে ধরে এগিয়ে গেলো বাড়ির ভেতরে। অন্যদিকে অনিক মনে মনে ভিষণভাবে চাইছে, চিরকুটটা যেন ঠিকঠাক মতো পৌঁছে যায় তার মালিকের হাতে।

“ আরে! এগুলো কি গান বাজাচ্ছেন আপনারা? গানে যদি হিট-বিটই না থাকে তাহলে সে গান বক্সে বাজিয়ে কি লাভ ভাই? দেখি সরুন তো।আমি বের করছি গানের কালেকশন।”
আহিরার ওমন হম্বিতম্বিতে দূরে সরে গেলো সকলে। মেয়েটা নিজ উদ্যোগে এসে ফোনের মিউজিক লিস্ট থেকে কিছু পছন্দের গান ছাড়ছে বক্সে।এমন সময় সেথায় এসে উপস্থিত হয় ইফতি। ছেলেটার পরনে এখনো রেগুলার শার্ট-প্যান্ট। হয়তো আরও পরে রেডি হবে সে।কিছুক্ষণ খোঁজ করতেই আহিরা পেয়ে গেলো মনমতো একটা গান।সে তৎক্ষনাৎ গানটা বক্সে ছেড়ে দিলো। তারপর গুনগুন করতে লাগলো গানের তালে তালে।ওদিকে তার দিকে যে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইফতি,সে-ই খবর কি আর আছে মেয়েটার? উঁহু! নেই তো। ইফতি কদম বাড়িয়ে এগিয়ে আসে আহিরার নিকট। প্রায় কিছুটা কাছাকাছি আসতেই আহিরার চোখ গেলো ইফতির পানে।মেয়েটার হাসিমুখটা নিমিষেই কেমন থমথমে হয়ে এলো যেন। সে তড়িৎ পা বাড়ায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।ঠিক তখনি তার বাঁহাতের কনুই চেপে ধরে ইফতি। আহিরা হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে অনবরত। সে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে,
“ হাত ছাড়ুন বলছি!”

ইফতি ছাড়লোনা।বরং মেয়েটাকে টেনে নিয়ে গেলো স্ট্যাজের পেছনে। সেখানে যেতেই আহিরা করে বসলো আরেক কান্ড। সে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চট করে চড় বসিয়ে দিলো ইফতির গাল বরাবর। ইফতি গাল হেলিয়ে রাখলো অন্যপাশে। আহিরা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,
“ লজ্জা করেনা আপনার? হুটহাট একটা মেয়ের অনুমতি ব্যাতিত তাকে ছোবাঁর সাহস পান কোত্থেকে? কে দিয়েছে আপনাকে সে-ই সাহস? আপনি আমার কাজিন…ব্যস সে-ই অবধি সীমাবদ্ধ থাকুন। এরচেয়ে বেশি বাড়তে চাইলে ফলাফল কিন্তু খুব একটা ভালো হবে না জনাব! কথাটা মাথায় রাখবেন।”
কথাটা শেষ করে আহিরা যে-ই না পা বাড়াবে চলে যেতে ঠিক সে-ই মুহুর্তে পেছন থেকে তার হাতের কব্জি টেনে ধরে ইফতি। আহিরা শক্ত চোখেমুখে ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকায়। কর্কশ গলায় কিছু বলতেই যাবে ঠিক তখনি ইফতি মাথা নিচু রেখল কেমন ধরে আসা কন্ঠে বলতে লাগলো,

“ আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি আহিরা।কখন বেসেছি, কিভাবে বেসেছি জানিনা। শুধু এতটুকু জানি… আপনার আমাকে এহেন ইগনোর করাটা আমি সহ্য করতে পারিনা। আপনার হাসি দেখলে যেমন নিজ অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে, ঠিক তেমনি আমায় দেখলে আপনার ঠোঁটের সেই হাসিটা মুছে গেলে, নিজ অজান্তেই বুকটায় কেমন চিনচিন করে ব্যাথা উঠে যায় আমার। আহিরা…”
এপর্যায়ে থামলো ইফতি।রক্তবর্ণ ছলছল চোখজোড়া নিয়ে তাকালো মেয়েটার দিকে। আহিরার বুকটা কেমন হুট করেই কেঁপে ওঠে ছেলেটার এহেন দৃষ্টি দেখে। ইফতি ভেজা চোখেই হাসলো একটুখানি। মেয়েটার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে, সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো মাটিতে। আহিরা হকচকায়। তড়িৎ সরে আসতে চাইলে বাঁধ সাধে ইফতি। ছেলেটা আবারও মোটা হয়ে আসা কন্ঠে বললো,

“ আমার হবেন আপনি আহিরা? কথা দিচ্ছি.. ফুলের মতো আগলে রাখবো আপনাকে। দরকার পড়লে মাথায় তুলে রাখবো তবুও আপনাকে কোনো কষ্ট পেতে দিবোনা ইনশাআল্লাহ। আহিরা…আমাদের জীবনটা খুব ছোট্ট জানেন? এই ছোট্ট জীবনে বেঁচে থাকার জন্য একটা বড়সড় কারণ প্রয়োজন। এই শুনেন না আহিরা…আপনি আমার জীবনের সে-ই বড়সড় কারণটা হবেন কি? বলুন না…হবেন আমার?”
আহিরার কন্ঠস্বর কাঁপছে। সে-ই সাথে কাঁপছে তার ক্ষুদ্র বদনখানি। মেয়েটার একবার ইচ্ছে করছিলো ছেলেটাকে আচ্ছামতো দুয়েকটা কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু ওমা! তার কন্ঠস্বর যেন আজকে তারই সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসেছে! এ-ই যে সময় সুযোগ বুঝে তারা গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদেরকে। ইফতির ছলছল চোখজোড়া আহিরার পানে নিবদ্ধ। আহিরা সেদিকে তাকিয়েই থমকে গেলো যেন। আশ্চর্য! সে কেনো চোখ ফেরাতে পারছেনা ছেলেটার ঐ দুচোখ হতে! আচ্ছা… ইফতি কি জাদু জানে? সে-কি নিজের চোখদুটোকে বলেছে আহিরাকে সম্মোহিত করতে? তাহলে আহিরা কেনো এতোটা সম্মোহিত হচ্ছে? খানিকক্ষণ বাদে ইফতি আবারও চমৎকার হাসলো। আহিরা আড়চোখে দেখলো সে-ই হাসি। থুতনিতে একগোছা দাড়ি ছেলেটার। হাসলে যা চমৎকার লাগে না! আহিরা তো এই হাসিটার প্রেমে বারেবারে হোঁচট খেয়ে পড়তে রাজি কিন্তু এই লোকটার প্রেমে? হুহ্! সে-কি আর ওতো সোজা? সারাদিন মাহিরার সাথে হি হি করে ঘুরে বেড়ায় আর তার কাছে একটু ফাঁক পেলেই এহেন কথা বলে বসে। আশ্চর্য! এই ছেলের মনে আদৌও কি আছে কে জানে!

প্রায় মিনিট দশেক পর ইফতি উঠে দাঁড়ায়। আহিরার হাতদুটোকে ছেড়ে দিয়ে, ধরে আসা কণ্ঠে কোনমতে বলে,
“ ঠিক আছে আহিরা। আপনি নিজের মতো করে সময় নিন। যথেষ্ট ভেবেচিন্তে তারপর নাহয় উত্তর দিবেন।আমি অপেক্ষায় থাকবো। আর হ্যা… একদম টেনশন করবেন না।আপনার যা-ই উত্তর হবে আমি সেটাই মেনে নিবো হাসিমুখে। কেননা আমি ওতোটাও বেয়াড়া ছেলে নই!”
কথাটা বলেই ইফতি চলে গেলো সেখান থেকে। আর পেছনে পড়ে রইলো হতবিহ্বল আহিরা। সে এখনো ভাবছে ইফতির কথাগুলো। তার কানদুটোতে এখনো বাজছে ঐ একটাই কথা —
“ আমার হবেন আপনি আহিরা?”

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে চারপাশে। এদিকে ইকরা ভয়ে দুরুদুরু বুকে মাত্রই এসেছে ছাঁদের চিলেকোঠার ঘরটার সামনে। মেয়েটা যখন কেবলই রেডি হয়ে বেরিয়েছিলো ঠিক তখনি কোত্থেকে যেন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিলো রিমি।মেয়েটা এসেই ইকরার হাতে চিরকুটটা গুঁজে দেয় আলতো করে। ইকরা চিরকুটটা হাতে নিয়ে যে-ই না কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রিমি চলে গেলো ধুপধাপ পা ফেলে। হতবাক ইকরা তখন নিজ থেকেই চিরকুটটা খুলে পড়া শুরু করে।

“ আমার মায়াবিনী!
ভিষণ কাছ দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে। এই অধমটাকে কি সে-ই সুযোগ দিবেন? জানেন মায়াবিনী? আপনার অনুপস্থিতিতে আমার শরীরে একটা মারাত্মক ব্যামো বাসা বেঁধেছে।ডাক্তার বললো — এই ব্যামো না-কি আপনি না এলে কিছুতেই সারবেনা।আশ্চর্য! এমন একটা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবো কখনো ভাবতেই পারিনি আমি। যাকগে… এই মারাত্নক ব্যামো আক্রান্ত রোগীটাকে এক ঝলক দেখা দিয়ে বাধিত করুন মায়াবিনী। আপনার অপেক্ষায় দুকূল ভাসিয়ে বসে আছি ছাঁদের চিলেকোঠার ঘরটায়। মায়াবিনী! আপনি আসবেন তো? জানি আসবেন।না এসে যাবেন কই? আমি ছাড়া আপনার গতি কি বলুনতো?
ইতি…
আপনার ভবিষ্যত বাচ্চা-কাচ্চাদের বাবা!”

চিরকুটটা পড়েই হেসে ফেলে ইকরা।মনে মনে পাগল ছেলেটাকে আচ্ছামতো বকুনি দিতেও ভুললো না সে। পরক্ষণেই সে সকলের অলক্ষ্যে এসে হাজির হয় ছাঁদের চিলেকোঠার ঘরটার সামনে। পুরো ছাঁদ ফাঁকা। দূরে জ্বলজ্বল করছে একটা হলদে টিমটিমে আলোর লাইট। ইকরা কাঁপা কাঁপা হাতে চিলেকোঠার দরজায় ধাক্কা দেয়। মুহুর্তেই সেটা ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে খুলে যায় আপনাআপনি। পুরো ঘরজুড়ে অন্ধকার, নিস্তব্ধতা। কোত্থাও কাউকে চোখে পড়ছে না তার। ইকরা ভীতসন্ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকে। ত্রস্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে ডাকে,
“ শুনছেন ইন্জিনিয়ার? আপনি কি এখানে?”
নাহ! জবাব এলোনা কোনো। ইকরার পুরো শরীর জুড়ে যেন ঘাম ঝড়ে গেলো একমুহূর্তের জন্য। সে ত্রস্ত পায়ে পেছন ফিরে চলে যেতে চাইলেই কেউ একজন হুট করেই ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিলো ভেতর দিয়ে। ইকরা থমকায়।হালকা ঢোক গিলে কাঁপা কাপাঁ গলায় বলে,

“ ক-কে?”
অনিক এগিয়ে আসে নিঃশব্দে। মেয়েটার একদম কাছাকাছি এসে, তার হাতদুটো দিয়ে ইকরার কোমর চেপে ধরে আলগোছে। ইকরা তৎক্ষনাৎ ভড়কে গিয়ে চিৎকার দিতে চাইলেই ঘটলো আরেক কান্ড! অনিক মশাই চট করে নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে টেনে ধরলো মেয়েটার নরম অধরযুগল। ইকরা কাঁপছে। পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ করে।ওদিকে অনিক অস্থির। তার ওষ্ঠপুটের কর্তৃত্বে বেসামাল করতে চাইছে মেয়েটাকে। প্রায় মিনিট তিনেক পেরুতেই অস্থির অনিক মেয়েটার মুখ উঁচিয়ে তুলে খানিকটা। হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিলের ওপর রাখা সুইচটা অন করে দেয় আলগোছে। পরমুহুর্তেই পুরো ঘরজুড়ে দেখা মিলে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের। ঘরটার পুরো সিলিং জুড়ে ফেইরি লাইটের সমারোহ। পাশের দেয়ালের জানালার গায়ে ঝুলন্ত পর্দার আড়ালেও জ্বলছে তারা। টেবিলের ওপর রাখা বড়সড় একটা গিফট বক্স। ইকরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে চারদিকটা দেখলো। অনিক তার এহেন দৃষ্টি দেখে মুচকি হাসলো। সে আলতো করে মেয়েটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মুহুর্তেই আবারও কেঁপে কেঁপে ওঠে ইকরা। অনিক মেয়েটার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

“ কেমন লেগেছে সবটা মায়াবিনী?”
ইকরা লজ্জালু হাসলো খানিকটা। সে নিজের লজ্জা রাঙা মুখটা নত করে নিয়ে কোনরকমে মাথা ঝাকিয়ে বললো,
“ খুব সুন্দর!”
অনিক এবার দুষ্ট হাসলো। মেয়েটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে, তার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
“ তাহলে আমাকেও রিটার্ন গিফট দাও!”
হতবুদ্ধি ইকরা চোখ তুলে চাইলো। অবুঝের মতো বললো,
“ রিটার্ন গিফট মানে?”
অনিক ফিচেল হাসলো। টেবিলের ওপর থেকে গিফট বক্সটা এগিয়ে দিলো ইকরার দিকে।ভরাট কন্ঠে বললো,
“ হিয়ার’জ ইউর গিফট! আর কেউ কাউকে গিফট দিলে তাকেও রিটার্ন গিফট দেওয়া উচিত। এটা ভালো ম্যানার্স বুঝছো?”
ইকরা মাথা নাড়ায়। খানিকটা আহত সুরে সে বলে,

“ কিন্তু আমার কাছে তো দেওয়ার মতো কিছুই নেই। আমি বরং গিফটটা অন্য কোনো সময় নিবো!”
মেয়েটার এহেন ভোলাভালা কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসলো অনিক।তা দেখে ভারি অবাক হলো ইকরা। লোকটা হুটহাট এভাবে হাসছে কেনো? মেয়েটার এরূপ ভাবনার মাঝেই অনিক ইকরার কানে ফিসফিস করে বলে,
“ কে বলেছে তোমার কাছে দেওয়ার মতো কিছুই নেই? আছে আছে… অনেক কিছুই আছে।আপাতত খুব বেশি কিছু চাইবো না আমি। তুমি শুধু একটা ভেজা চুমু দিয়ে দাও আমায়।তাতেই আমার চলবে।”
ভ্রু কুঁচকায় ইকরা। অনিকের দিকে তাকায় সন্দিগ্ধ চোখে। অবুঝ কন্ঠে বলে,
“ ভেজা চুমু আবার কি জিনিস? আশ্চর্য! এই জীবনে এই নাম প্রথম শুনলাম আমি।”
অনিক ঠোঁট কামড়ে হাসে। মেয়েটার ঠোঁটের দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলে,
“ দিবেও তো প্রথমবার! ওপস… সরি.. এটাতো তোমার সেকেন্ড টাইম হবে। কেননা কিছুক্ষণ আগেই তো আমি টেস্ট করে নিলাম।”

এপর্যায়ে সবটা বোধগম্য হলো ইকরার।তৎক্ষনাৎ মেয়েটার ফর্সা সুশ্রী মুখখানায় ছেয়ে গেলো লাল টকটকে আভা। নাকের ডগায় এসে জমেছে মৃদু ঘামের উপস্থিতি। অনিক আড়চোখে দেখলো সবটা। সে আর কোনো সময় নষ্ট না করে, চট করে উঠে বসলো টেবিলের ওপর। তারপর নিজের পাদু’টোর মাঝে বেশ খানিকটা জায়গা করে মেয়েটাকে টেনে আনলো নিজের কাছে। ইকরার নতমুখটা খানিক উঁচুতে তুলে হাস্কি স্বরে বললো,
“ তুমি সর্বনাশী মেয়ে!”
বুঝলোনা ইকরা।তাকালো হতবাক চোখে। অনিক মুগ্ধ হাসলো এবারেও।মেয়েটার লাল টুকটুকে নাকের ডগায় আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,

“ ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি। আমার এই অস্বাভাবিক তৃষ্ণাটা মিটিয়ে দাও মায়াবিনী।”
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো ইকরা।চোখদুটোও যেন খুলে রাখা দায় হয়ে পড়েছে এমুহূর্তে তার জন্য। অনিক তাকালো একবার। পরক্ষণেই নিজ উদ্যোগে ফের চেপে ধরলো ইকরার নরম সিক্ত অধরজোড়া। ইকরা থমকায়। একমুহূর্তের জন্য তার হৃৎস্পন্দনের কয়েকটা বিট যেন মিস হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। তার ক্ষুদ্র বদনখানিও কাঁপছে মৃদুমন্দ। অনিক আলতো করে আগলে নিলো মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে।

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৪

তার অধরজোড়ার বেসামাল স্পর্শে ভেঙ্গে পড়ছে ইকরা। তা টের পেতেই মেয়েটাকে নিজের দু’হাতের বাহুডোরে ভীষনভাবে আগলে নিলো অনিক।
প্রায় মিনিট পাঁচেক পর থামলো ছেলেটা। ওষ্ঠপুট ছেড়ে দিলো মেয়েটার।ইকরা ছাড়া পেয়েই হাঁপাচ্ছে ভীষণ। এদিকে অনিক নিজের ঠোঁটটা খানিক টেস্ট করে নিয়ে বলতে লাগলো,
“ লিপস্টিকটা কি চেরি ফ্লেভারের ছিলো জান?”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here