সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৯
Jannatul Firdaus Mithila
বিয়ে পড়ানো শেষ হলো। উপস্থিত অতিথিদেরদের মিষ্টি দেওয়া হচ্ছে একে একে। কবির সাহেব এগিয়ে এসে সাব্বির সাহেবের গলা জড়িয়ে ধরলেন।কানের কাছে মুখ এনে হাসিমাখা কন্ঠে বললেন,
“ বড় ভাইয়ের পাশাপাশি এখন থেকে তোর বেয়াই হয়ে গেলাম আমি।”
সাব্বির সাহেব ভেজা চোখেই হাসছেন। বড় ভাইয়ের পিঠে একহাত রেখে থেমে থেমে বললেন,
“ আলহামদুলিল্লাহ ভাইজান।”
ওদিকে জুবাইদা বেগম হাতে একখানা ছানা মিষ্টি নিয়ে ছুটে এলেন রাফিয়া বেগমের কাছে। হাত বাড়িয়ে বান্ধবীকে মিষ্টিটা খাইয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“ প্রথমে হলাম তোর বান্ধবী, তারপর হলাম জা,এরপর হলাম বেয়াইন। আলহামদুলিল্লাহ!”
রাফিয়া বেগম মিষ্টিটা মুখে নিয়ে চিবুচ্ছেন আলতো করে।পরক্ষণেই নিজের হাতের মিষ্টির প্লেট থেকে একটা মিষ্টি উঠিয়ে খাইয়ে দিলেন জুবাইদা বেগমকে। হাসিমুখে বললেন,
“ আলহামদুলিল্লাহ!”
এদিকে রৌদ্র এখনো জড়িয়ে ধরে আছে মেয়েটাকে। তার মুখ লুকিয়ে আছে মেয়েটার কাঁধে। রৌদ্রের শক্তপোক্ত দেহটা কেঁপে কেঁপে ওঠছে বারকয়েক। সে কি আদৌও কাঁদছে কি-না কে জানে! কিয়তক্ষন বাদে রেহান হাসিমুখে এগিয়ে আসে। রৌদ্রের কাঁধে আলতো হাত রেখে নিচু কন্ঠে বলে ওঠে,
“ ভাই! এবার ছেড়ে দে ভাবিকে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রৌদ্র হয়তো শুনলো সে কথা। সে খানিকটা সময় নিয়ে ছাড়লো অরিনকে। রেহান ইতোমধ্যেই রৌদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে টিস্যুর বক্স। রৌদ্র হাত বাড়িয়ে দুটো টিস্যু নিয়ে নিজের ভেজা চোখদুটো মুছে নিলো আলগোছে। ঘোমটাপরা অরিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ তোর টিস্যু লাগবে জানবাচ্চা?”
অরিন দু’ধারে মাথা নাড়ায়। তা দেখে রৌদ্র হালকা হেসে উঠে দাঁড়ায়।নিজ উদ্যোগে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার হাত চেপে ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়। তারপর একহাতে মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে রেখে আদুরে কন্ঠে বলে,
“ ক্ষুধা লেগেছে তাই-না বউজান? চলো তোমায় খাইয়ে দেই।”
অরিন ঘোমটার আড়ালেই চমকে তাকালো। খানিক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,
“ আপনি খাওয়াবেন?”
রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“ হুট করে ভাব ধরেছেন যে! এর আগে বুঝি কখনো খাইয়ে দেইনি তোমাকে!”
অরিন মাথা নিচু করে নেয় তৎক্ষনাৎ। এতগুলো মানুষের সামনে আবারও শুরু হবে এই লোকের পাগলামি। দূরছাই! কিছুক্ষন পর রৌদ্র আবারও মেয়েটার দিকে নিজের একহাত এগিয়ে দেয়। ফিসফিস করে বলে,
“ বাহু আঁকড়ে ধরো বউজান। বর বর ফিলিংস পেতে হবে তো!”
অরিন হালকা হেসে রৌদ্রের বাড়িয়ে রাখা হাতটার বাহু আঁকড়ে ধরে। অদূরে দাঁড়িয়ে রেহান আর অনিক মিলে এতক্ষণ দেখলো সবটা।পরক্ষণেই ছেলেদুটো মুচকি হেসে চলে গেলো সেখান থেকে।
অতিথিদের খাবার পর্ব চলছে। সেই সাথে চলছে এহসান বাড়ির মানুষদেরও খাবার কার্য। সেন্টারের বড় টেবিলটায় একত্রে বসেছেন সকলে।রৌদ্র আর অরিন বসেছে পাশাপাশি। বেচারা রৌদ্র এখনো বউয়ের মুখ দেখেনি কেননা তার একান্তই বদ্ধ ধারণা — বউকে এহেন সাজে দেখা মাত্রই নিজের সকল ধৈর্য্য এক নিমিষেই হারিয়ে ফেলবেন মশাই। তাই আর যেচে পড়ে রিস্ক নেয়নি বেচারা। সে গম্ভীর মুখে খাবার খাচ্ছে। ভেবেছিলাে বউটাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে কিন্তু তাতো আর হলোই না! এদিকে অরিনের মুখের ওপর এখনো দু’হাত লম্বা ঘোমটা টানা। তার ডাক্তার সাহেবের কঠোর আদেশ — তার বউজানের বউ সাজ যেন বাইরের কেউ না দেখে! যদিও বা এরুপ ব্যাতিক্রমী আদেশে অনেকেরই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তবে তাতে যেন কিছুই যায় আসে না রৌদ্রের।সে কি থোড়াই নিজের এহেন সুন্দরী পিচ্চি বউকে নিয়ে রিস্ক নিবে! উঁহু মোটেও না!
খাবার পর্ব শেষ হতেই ফটোসেশান শুরু হলো।সকলে একে একে ঘোমটাপরা অরিনের সাথেই ছবি তুলে নিলো।রৌদ্র মেয়েটার হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে। তবুও মানুষজনের ছবি তোলা যেন শেষ হচ্ছেই না! রৌদ্র এবার বেজায় বিরক্ত হলো।সে আড়চোখে তাকালো অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা অনিকের পানে।চোখের ইশারায় কাছে ডাকলো তাকে। অনিকও ছুটে এলো এহেন ইশারা পেয়ে। রৌদ্রের পাশাপাশি এসে দাঁড়াতেই রৌদ্র কেমন দাঁতে দাঁত চেপে বিরক্ত গলায় বলতে লাগলো,
“ এই বা*লের ফটোসেশান শেষ করতে বল তারাতাড়ি। বাসায় যেতে হবে বউ নিয়ে। কতকাজ আমার! উফফ!”
এহেন কথায় থতমত খেয়ে বসলো অনিক।রৌদ্রের কথার গভীরার্থ বুঝতে পেরেই বেচারা লজ্জায় কাচুমাচু করতে লাগলো দাঁড়িয়ে। তবুও মাথা নেড়ে সে কোনোমতে বললো,
“ ঠিক আছে দেখছি!”
বলেই অনিক চলে গেলো অন্যপাশে।ফটোগ্রাফারদের কানে কানে ছেলেটা কে জানে কি বললো! ফটোগ্রাফাররা মুচকি হেসে ছবি তোলা বন্ধ করে দিলো আলগোছে। রৌদ্র এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মেয়েটাকে নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসতেই স্টেজে এসে হাজির হলো তারই হসপিটালের গভর্নিং বডির সদস্যরা। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায়।পরমুহুর্তেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সকলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ে। এদিকে অরিনটা বসে থেকেই হাসফাস করছে। একেতো ভারি লেহেঙ্গা, তারওপর মুখের সামনে দু’হাত লম্বা ঘোমটা! মেয়েটার হাসফাস লাগবে না তো কি লাগবে শুনি?
রৌদ্র কথা বলার একফাঁকে আড়চোখে তাকালো অরিনের দিকে। মেয়েটা কেমন নড়েচড়ে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে। রৌদ্র হয়তো টের পেলো কিছু একটা। সে তৎক্ষনাৎ বিনয়ের সঙ্গে সকলকে বলে ওঠে,
“ এক্সকিউজ মি ফর আ হোয়াইল জ্যান্টেলম্যানস।”
লোকগুলো হাসিমুখে সম্মতি জানালেন। রৌদ্রও কদম বাড়িয়ে চলে আসে মেয়েটার কাছে। অরিনের মাথার ওপর আলতো করে হাত রেখে বলে ওঠে,
“ খারাপ লাগছে সানশাইন?”
অরিন মাথা ঝাকায়। তা দেখে রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ডেকে উঠে অনিককে। অনিকও মিনিট দুয়েকের মধ্যে ছুটে আসে। রৌদ্র তখন বলে ওঠে,
“ আমার বউজানকে বাসায় নিয়ে যা। আমি ফিরছি একটু পরে।”
অনিক মাথা কাত করলো। হাত বাড়িয়ে বোনকে আগলে নিলো নিজের সঙ্গে। ফিসফিস করে বোনের উদ্দেশ্যে বললো,
“ গরম লাগছে বনু?”
বিয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম অবশেষে শেষ হলো। এহসান বাড়ির সকলেই নিজেদের ক্লান্ত দেহটা বড় কষ্টে টেনেটুনে এনেছেন বাড়িতে।আত্মীয় স্বজনদের জন্য হোটেলে রুম বুক করা হয়েছে। যদিওবা কাজটা রৌদ্রই করেছে। বাড়ির কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত।গৃহিণীরা ছুটে গিয়েছেন ফ্রেশ হতে।ওদিকে বাড়ির ছোট সদস্যদের মধ্যে চলছে ব্যাপক প্ল্যানিং। প্রত্যেকে বসেছে অরিনের কামরায়। তাদের প্ল্যানিংয়ের মূল উদ্দেশ্য — রৌদ্রের কাছ থেকে টাকা উঠানো। কেননা তাদের ভাষ্যমতে, তারা রৌদ্রের বাসর ঘর সাজিয়েছে সেজন্য তাদের একটা পকেট খরচ আছে না?
এদিকে অরিন নিজের ঘোমটাটা মাথার ওপর উঠিয়ে রেখে,খাটের ওপর বসে পা দুলিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে।বাড়িতে ফেরার সময় তার ভাই কিনে দিয়েছে! সেগুলোই বড় আনন্দে খাচ্ছে মেয়েটা। অনিক বসে আছে তার পাশে। ছেলেটার দৃষ্টি অদূরের ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা ইকরার পানে। ইকরা বারকয়েক ছেলেটার দিকে আড়চোখে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় দু’জনার। এই ফাঁকে অনিক তাকে ইশারায় ঠোঁট গোল করে চুমু দেখায়। তা দেখামাত্রই চোখদুটো বড়সড় হয়ে আসে ইকরার। অনিক তখন ঠোঁট কামড়ে হেসে ওঠে নিঃশব্দে। অন্যদিকে, রুহি ঘরের একপাশে থাকা সিঙ্গেল সোফার ওপর দুপা উঠিয়ে বেশ আরাম করে আচার খাচ্ছে। আচারের প্যাকেটটা আলতো করে মুখে পুরে চোখদুটো নিমিষেই বন্ধ করে ফেলে।তারপর একটু একটু করে আচার মুখে নিয়ে সে কি সুখ নিয়ে চোখবুঁজে স্বাদ নিচ্ছে মেয়েটা! রেহান বুকের কাছে দু’হাত বেঁধে একদৃষ্টিতে দেখছে মেয়েটার খাওয়া। রুহি যখন চোখবুঁজে আচারের স্বাদ নিতে ব্যস্ত তখন তার ওমন মুখভঙ্গি দেখে রেহান বেচারা অস্থির হওয়ার উপক্রম! আজ বউটা তার অসুস্থ বলে বড় কষ্টে নিজেকে সামলাচ্ছে ছেলেটা!
ইফতি বসেছে খাটের অন্যপাশে।তার থেকে খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে বসে আছে মাহিরা।রেহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আহিরা।এমুহূর্তে মেয়েটার সকল ধ্যান যেন তার হাতের ফোনটাতেই নিবদ্ধ। ইফতি বারকয়েক আড়চোখে দেখছে মেয়েটাকে। মেয়েটা কি তবে সত্যি ওর মনের কথাগুলোকে উপেক্ষা করে গেলো? সে-কি তবে ভালোবাসবে না তাকে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বুক চিঁড়ে এক দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসে ইফতির। প্রায় মিনিট দশেক পর রেহান গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। সকলের মনোযোগ নিজের দিকে টেনে গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
“ তা কি সিদ্ধান্ত নিলে তোমরা? রোদের কাছ থেকে কত নিবো?”
তৎক্ষনাৎ পাশ থেকে ফট করে আহি বললো,
“ জিজু, ৫০ এর নিচে নামবেনা কিন্তু।”
এহেন কথা শুনে রুহি কেমন আর্তনাদ করে বলে,
“ কিহ? ৫০ হাজার? এই না না… আমার ভাইয়ের এতো খরচা করিয়ে কি লাভ তোমাদের? আরও কমাও।”
মেয়েটার এহেন ভাই প্রীতি দেখে কপাল কুঁচকায় সকলে। মাঝে থেকে অনিক বলে ওঠে,
“ ঠিক আছে। তোর নিতে হবে না। তোর ভাগেরটা আমায় দিয়ে দিস।”
রুহি সঙ্গে সঙ্গে মুখ ভেংচি কেটে বলে ওঠে,
“ ইশশ! কত শখ।আমারটা আমি তোমায় দিবো কোন দুঃখে? আমারটা আমারই থাকবে।”
কথাটা শুনেই হেসে ওঠে সকলে। অনিক হাসির মাঝেই ঠেস দিয়ে বলে ওঠে,
“ নিজেরটা ষোলআনা!”
রাস্তার শুকনো ধুলো উড়িয়ে রৌদ্রের গাড়িটা মাত্রই এসে থামলো এহসান বাড়ির গেইটের সামনে। কিয়তক্ষন বাদে রৌদ্র হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। অতপর গটগট পায়ে চলে যায় বাড়ির ভেতর। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই তার হাত টেনে ধরে মা এবং চাচিরা। এহেন কান্ডে আবারও কপালে দু-তিনেক বিরক্তির ভাজ পড়লো রৌদ্রের। তবুও সে গম্ভীর মুখে ঘাড় বাকিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
“ কিছু বলবে?”
জুবাইদা বেগম মাথা নাড়লেন।ছেলের হাত টেনে তাকে বসালো বড় সোফায়। তারপর নিজেও বসলেন ছেলের পাশে। রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে বসে রইলো। ছেলেটা না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।প্রায় মিনিট দুয়েক পর,রাফিয়া বেগম আর রাইসা বেগম হাতে ট্রে ভর্তি কয়েক জাতের মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হলেন রৌদ্রের সামনে। রৌদ্র গম্ভীর মুখে তাকায় সেদিকে। গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ কি এগুলো?”
রাফিয়া বেগম আলতো হাসলেন।হাত থেকে ট্রে-টা নামিয়ে রাখলেন টেবিলের ওপর। তারপর একটা বাটিতে গোটা কয়েক মিষ্টি নিয়ে চুপচাপ এসে বসলেন রৌদ্রের অন্যপাশে। রাইসা বেগমও হাতে একগ্লাস পানি নিয়ে অন্য একটা সোফায় গিয়ে বসলেন। কিয়তক্ষন বাদে ড্রয়িং এ আগমন ঘটে মাইমুনা বেগমের।তিনি এসেই আর্তনাদ করে বললেন,
“ কিগো বড় বু! তোমরা আমাকে ছাড়াই এসব শুরু করে দিলে?”
জুবাইদা বেগম স্মিত হাসলেন।মাইমুনা বেগমকে নিজের কাছে ডেকে বললেন,
“ আরে না.. রোদ তো মাত্রই এলো।”
এদিকে সবার এহেন ভুগিচুগি কথাবার্তায় মেজাজ বিগড়ে আসছে রৌদ্রের।ছেলেটা দাঁত খিঁচে বলে ওঠে,
“ আম্মু যা করার তা একটু তারাতাড়ি করবে প্লিজ? অলরেডি রাত সাড়ে বারোটা বাজে।আমি কি আর ঘরে যাবো না?”
অগত্যা ছেলের এহেন লাগামহীন কথায় বাকহারা হয়ে পড়লেন সকলে। রাফিয়া বেগম তৎক্ষনাৎ নিজের দৃষ্টি ফেললেন এদিক ওদিক। জুবাইদা বেগম শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে জিভে কামড় বসালেন আলগোছে। স্বামী তার ভুল বলেনি তাহলে! ছেলেটা তবে সত্যি সত্যি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এরইমধ্যে ব্যাপারটাকে শিথিল করতে রাইসা বেগম সামান্য আমতা আমতা করে বললেন,
“ ইয়ে মানে রোদ… একটু মিষ্টি মুখ করে যা বাবা।”
কথাটা শোনামাত্রই রৌদ্র সঙ্গে সঙ্গে রাফিয়া বেগমের হাতে থাকা মিষ্টির প্লেটটা থেকে একটা আস্ত মিষ্টি তুলে ঢুকিয়ে নিলো গালের পাশে। পরক্ষণেই মিষ্টিটা চাবাতে চাবাতে উঠে দাঁড়ায় বসা ছেড়ে।তারপর সকলের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“ আর কিছু?”
হতবিহ্বল রাফিয়া বেগম মাথা নাড়ায় দুপাশে। রৌদ্র আর কোনরূপ কালবিলম্ব না করে দ্রুত কদমে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে। এদিকে তার চলে যাওয়ার পথে হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে আছে সকলে। মুখে তেমন রা নেই কারো। চোখেমুখে তাদের স্পষ্ট ফুটে উঠেছে হতভম্বতা!
রৌদ্র হাতের প্যাকেটটার দিকে চোখ রেখেই এগোচ্ছে নিজের ঘরের দিকে। কিন্তু দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই পাদু’টো থমকে গেলো তার। সে ধীরে ধীরে চোখ তুলে সামনে তাকায়। পরক্ষণেই তার কুঁচকে রাখা ভ্রু-দ্বয় আপনাআপনি শিথিল হয়ে আসে। দরজার সামনে দু’হাত বুকের কাছে বেঁধে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। তার একপাশে অনিক,আহি,মাহি ইফতি আর অন্যপাশে রুহি, রেহান ইকরা। রৌদ্র হা করে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে। প্যাস্টেল রঙের ভারি কারুকার্যে খচিত লেহেঙ্গাটায় একদম নজরকাড়া লাগছে মেয়েটাকে।তারওপর মুখে পার্লারের ন্যুড বউসাজ। গলায়,কানে মাথায় এমনকি নাকেও দিয়েছে গয়নার উপস্থিতি। রৌদ্র পলক ফেলতে ভুলে গেলো একমুহূর্তের জন্য। নিশ্বাসটা আদৌও ফেলেছে কি-না কে জানে! ওদিকে রৌদ্রের এহেন দৃষ্টি দেখে পাশ থেকে রেহান মুখের কাছে হাত এনে মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। রৌদ্রের ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা চালালেও ছেলেটার ধ্যান যেন মেয়েটার ওপর থেকে সরছেই না। রেহান আরেকবার গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। এবার যেন মেয়েটার কাছ থেকে একটুর জন্য দৃষ্টি সরলো রৌদ্রের। সে তৎক্ষনাৎ গরম চোখে তাকায় রেহানের দিকে। রেহান খানিকটা ভড়কে গিয়ে বলে,
“ আরে এমনে তাকাচ্ছিস কেনো? বউকে নিয়ে ঘরে ঢুকে তারপর ইচ্ছেমতো বউকে দেখিস।আপাতত আমাদের পাওনাটা বুঝিয়ে দে!”
রৌদ্র ভ্রু গোটায়। সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করে,
“ কিসের পাওনা?”
এহেন কথার প্রতিত্তোরে রেহানের বলার পূর্বেই পাশ থেকে অরিন কেমন ফটফট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ শুনুন ডাক্তার সাহেব! সবাই মিলে আপনার বাসর ঘর সাজিয়েছে।তাই আমরা এখন বকশিস চাচ্ছি আপনার কাছে। আপনি বকশিস না দিলে আজ আর ভেতরে ঢুকতে পারবেন না হুহ্!”
মেয়েটার এহেন কথায় বাঁকা হাসলো রৌদ্র। দুষ্ট কন্ঠে বললো,
“ তোরও বকশিস চাই?”
অরিন পরপর মাথা ঝাকায়। ভিষণ বড় একখানা যুক্তি দাড় করিয়ে বলে,
“ হ্যা চাই। কেননা সম্পর্কের দিক থেকে আমি আপনার বউ হওয়ার আগে আপনার কাজিন হই।তাই যেকোনো বকশিসে আমারও একটা আলাদা হক আছে। আর আমি কিন্তু আমার হক মোটেও ছাড়বোনা বলে দিলাম।”
এমন কথায় বাকিরা মুখ টিপে হাসতে লাগলো।রৌদ্রও মুচকি হেসে মেয়েটার পানে তাকালো গভীর চোখে। পাশ থেকে রেহান আরও কিছু বলতে নিলে হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো রৌদ্র। পরক্ষণেই সে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে সেখান থেকে নিজের ক্রেডিট কার্ডটা রেহানের হাতে দিয়ে দেয়। গম্ভীর মুখে বলে,
“ যত লাগে উঠিয়ে নিস।পিন তো তুই জানিস। এন্ড খবরদার … আর কোনো ডিসটার্বেন্স যেন না আসে।”
কথাটা বলেই রৌদ্র এগিয়ে এসে ঝট করে অরিনকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। বাঁকা হেসে দুষ্ট কন্ঠে ফিসফিস করে বলে,
“ এখন তোমার বকশিসটা বাকি বউজান।চলো… ঘরে গিয়ে নিরিবিলি তোমারটা তোমায় বুঝিয়ে দেই।”
পরক্ষণেই রৌদ্র মেয়েটাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। অরিনকে সযত্নে সাজিয়ে রাখা ফুলের বিছানায় বসিয়ে চলে গেলো দরজার কাছে। পরমুহূর্তেই বাকিদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
“ এই যে ঘরে ঢুকছি আজ… আগামী এক সপ্তাহ এ ঘর ছেড়ে বেরোবো ইনশাআল্লাহ। এখন সবাই ফুট এখান থেকে!”
কথাটা বলে একমুহূর্ত থামলো না রৌদ্র। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো সকলের মুখের ওপর। ওদিকে রেহানসহ বাকিরা মুখ টিপে হাসছে।
রৌদ্র এবার নিঃশব্দে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। অরিন মাথা নুইয়ে রেখেছে। রৌদ্র চুপচাপ মেয়েটার পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে পড়লো।অরিন হকচকিয়ে ওঠে। অস্থির গলায় বলে ওঠে,
“ কি করছেন ওপরে উঠুন।”
রৌদ্র হাসলো।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার মুখের দিকে। কিয়তক্ষন নিরব চোখে তাকিয়ে থেকে ফের উঠে দাঁড়ায় রৌদ্র। এসে বসলো মেয়েটার পাশে।তারপর আলতো করে হাত বাড়িয়ে রাখলো মেয়েটার গালের ওপর। নরম কন্ঠে বললো,
“ পাগল হয়ে যাচ্ছি জানবাচ্চা!”
অরিন লাজুক হেসে দৃষ্টি নত করে ফেললো।তা দেখে যেন আরেকধাপ পাগল হলো ছেলেটা।সে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে আসে আরেকটু। মেয়েটাকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে বসালো ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলটার ওপর। পরমুহূর্তেই আয়নায় মেয়েটার লাজুক হয়ে আসা নত মুখপানে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে অরিনের মাথার ঘোমটাটা খুলে দিতে লাগলো আলগোছে। প্রায় মিনিট পাঁচেক লেগে গেলো রৌদ্রের অরিনের গা থেকে গয়নাগাটি খুলতে খুলতে। এতেই যেন মহাবিরক্ত রৌদ্র। ছেলেটা দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
“ এতোকিছু পড়াতে বলছে কে? আমি কি বাসরই করবো? নাকি এই এ-সবই খুলতে থাকবো কোনটা?”
অরিন হতবাক চোখ তুলে তাকায় আয়নায়।রৌদ্র যে ভিষণ বিরক্ত হচ্ছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার! সে কিছুটা সময় নিয়ে মিনমিনে স্বরে বললো,
“ সরি!”
রৌদ্র থমকায়। তড়িৎ আয়নায় চোখ রেখে মেয়েটার নতমুখের পানে তাকায়। পরক্ষণেই মেয়েটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কন্ঠে কেমন অদ্ভুত কোমলতা ঢেলে বলে,
“ এই সানশাইন! মন খারাপ হয়েছে? সরি..সরি আসলে আমি ওভাবে বলতে চাইনি। এই বউজান! তাকা আমার দিকে।”
অরিন চোখ তুলে। রৌদ্র তখন আলতো হেসে মেয়েটার সামনে এসে বসে। মেয়েটার মুখের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে হুট করেই দুষ্ট হেসে বলে,
“ আজ বাসর করবে তো বউজান?”
অরিন তৎক্ষনাৎ নিজের নুইয়ে রাখা মাথাটা আরও খানিকটা নুইয়ে ফেলে। তা দেখে রৌদ্র আবারও দুষ্ট হাসলো। মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো কাভার্ডের কাছে। সেখান থেকে সেকেন্ডের মধ্যে একটা বক্স বের করে নিয়ে চলে গেলো বেড সাইডের টেবিলের কাছে। অরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে সবকিছু। হয়তো বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে লোকটার কর্মকাণ্ডের মানে!
রৌদ্র হাতের বক্সটা খুলে সেখান থেকে গুগল নেস্ট -টা বের করে রাখলো টেবিলের ওপর। তারপর ঘাড় বাকিয়ে তাকালো অরিনের দিকে। ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসির রেশ টেনে ঘরের সুইচবোর্ডের কাছে এগিয়ে গেলো ধীরে ধীরে।
অতপর পুরো ঘরজুড়ে জ্বলজ্বল করতে থাকা সফেদ লাইটটা অফ করে দিয়ে হালকা নিল রঙের ড্রিম লাইটটা অন করে দেয় সে। এপর্যায়ে খানিকটা ভয় লাগতে শুরু করে অরিনের। রৌদ্র নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে এলো মেয়েটার দিকে। অরিনের একদম পেছনে দাঁড়িয়ে রৌদ্র। তার হাতদুটোর শীতল স্পর্শ অরিনের কাঁধ স্পর্শ করতেই কেঁপে ওঠে মেয়েটা। রৌদ্র অলক্ষ্যে মুচকি হাসলো। সে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার মাথায় বেঁধে রাখা খোপাটা আলতো হাতে টেনে খুলে ফেললো।পরমুহূর্তেই মেয়েটার পিঠ বেয়ে কোমর অবধি নেমে গেলো সিল্কি চুলগুলো। রৌদ্র ধীর আঙুলে চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিলো মেয়েটার পিঠের ওপর থেকে।
পরক্ষণেই তার সম্মুখে উম্মুক্ত হলো অরিনের ফর্সা মসৃণ পিঠ খানা। রৌদ্র নেশালো চোখে তাকায় সেদিকে। তার নিশ্বাসের গতিও কেমন ঘন হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। গলাটায় তো বরাবরের ন্যায় খরা নেমেছে। রৌদ্র শুষ্ক ঢোক গিললো পরপর। অরিনের উম্মুক্ত পিঠে তার আঙুল ছোঁয়াতেই ফের কেঁপে ওঠে অরিন। এমুহুর্তে হৃৎপিণ্ডটা তার যে পরিমাণে লাফাচ্ছে না! হৃৎপিন্ডটাকে দেহ থেকে আলাদা করে ম্যারাথনে দাঁড় করিয়ে দিলে নিসন্দেহে ফার্স্ট হয়ে যেতো। রৌদ্র এবার ধীরে ধীরে মেয়েটার পিঠে আঙুল বোলায়।অরিন তৎক্ষনাৎ সটান হয়ে গেলো। রৌদ্র বাঁকা হেসে হাস্কি স্বরে বললো,
“ আজ তোমার সকল কাঁপা-কাঁপির অবসান ঘটবে হানি!সো বি প্রিপেয়ার!”
এহেন কথায় মুহুর্তেই যেন এক অদ্ভুত ঠান্ডা শীতল স্রোত নেমে গেলো অরিনের শীরদাড়া বেয়ে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ সামান্য গলা উঁচিয়ে বললো,
“ হেই গুগল! প্লে দা সং Aise na mujhe tum dekho ”
টেবিলের ওপর রাখা গুগল নেস্টটা তৎক্ষনাৎ সক্রিয় হয়ে বললো,
“ অলরাইট! প্লেয়িং Aise na mujhe tum dekho সং অন ইউটিউব মিউজিক।”
প্রায় সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো ঘরজুড়ে মৃদুশব্দে গানটা বাজতে লাগলো। অরিন তখন সন্দিষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ গান চালাচ্ছেন কেনো?”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। অরিনের মসৃণ পিঠে নাক ঘষে দিলো আলগোছে। পরক্ষণেই সেথায় মুখ গুঁজে রেখে বললো,
“ হতেই পারে আমার রুমটা সাউন্ডপ্রুফ তাতে কি? আমি আবার মোটেও নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে গ্যারান্টি দিতে পারিনা। আমার ভালোবাসার ডোজ একটু বেশি হয়ে গেলে তোমার চিৎকারটা যেন বাইরে না বের হয় তাই আরকি এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা! তাছাড়া আমি কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা হানি!”
এহেন বাক্যে নিশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম অরিনের। রৌদ্র খেয়াল করলো সেটা। সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে, অরিনের চোয়াল চেপে সামান্য উঁচিয়ে তুলে। হাস্কি স্বরে বলে,
“ আই ওয়ানা টেস্ট ইউ হানি!”
অরিন কি বলবো তা নিয়ে পড়লো বিপাকে। এদিকে রৌদ্রের নেশালো দৃষ্টি মেয়েটার তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটের ওপর নিবদ্ধ। অতঃপর হয়তো সেকেন্ড খানেক পেরুলো। পরক্ষণেই এক গভীর আশ্লেষে রৌদ্র একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো অরিনের নরম অধরযুগলের ওপর। সেথায় আলতো করে ছুঁয়ে দিতে লাগলো নিজের ওষ্ঠপুটের সাহায্যে।কখনো কখনো উম্মাদের মতো টানতে লাগলো নরম ওষ্ঠপুট। শুধু এটুকুতেই ক্ষ্যান্ত নয় পাগল ছেলেটা। মেয়েটার নরম অধরযুগলের ওপর মাঝেমধ্যে দাঁত বসিয়ে দিলো আলতো করে। তার অবাধ্য হাতের বিচরণ অরিনের সর্বাঙ্গে। অরিন কাঁপছে। ছেলেটার এহেন বেহায়া স্পর্শে বরাবরের মতো কুপোকাত সে। তার ক্ষুদ্র বদনখানি কাঁপতে কাঁপতে গড়িয়ে পড়তে নিলেই রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে নিজের বুক পিঞ্জরের মাঝে টেনে নিলো। ওষ্ঠপুটের কাজ বহাল রেখেই মেয়েটাকে আলগোছে তুলে নিলো পাঁজা কোলে। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বিছানায়।অরিনের ওষ্ঠপুট ছেড়ে দিয়ে তাকে সযত্নে শুইয়ে দিলো ফুলের বিছানায়। অরিন হাঁপাচ্ছে। সে সাথে তার চোখের পাতায় এসে ভিড় জমিয়েছে রাজ্যসম লজ্জা। রৌদ্র সামান্য ঢোক গিলে মেয়েটার ঘাড়ের পেছনে হাত বাড়িয়ে দিলো।ঘাড়টা আলতো করে চেপে ধরে অরিনকে শোয়া ছেড়ে উঠে বসায় সে। মেয়েটার মুখের কাছে মুখ এনে রৌদ্র হিসহিসিয়ে বলে,
“ আমার বাটনগুলো খোল সানশাইন!”
অরিন সামান্য ঢোক গিলে নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিলো রৌদ্রের শেরওয়ানির গায়ে। একটা একটা করে রৌদ্রের বাটনগুলো খুলছে সে।রৌদ্রের নেশালো চোখ মেয়েটার কন্ঠদেশ হতে নিচের দিকে নামছে। অরিন সবগুলো বোতাম খুলে দিলো অবশেষে। রৌদ্র তখন আবারও একই ভঙ্গিমায় হিসহিসিয়ে বললো,
“ শেরওয়ানিটা খুলে দাও হানি!”
অরিন ফের ফাঁকা ঢোক গিললো। খানিকটা উঁচু হয়ে রৌদ্রের দেহটা উম্মুক্ত করতে লাগলো শেরওয়ানি হতে। শেরওয়ানিটা খুলে ফেলতেই অরিনের সামনে উম্মুক্ত হলো রৌদ্রের লোমহীন পেটানো দেহখানা।তা দেখে অরিনের যেন নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে ক্রমাগত। রৌদ্র নিজের শুষ্ক অধরজোড়া জিভ দিয়ে খানিক ভিজিয়ে নিলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বিছানার পাশে পড়ে থাকা শপিং ব্যাগটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে দিলো অরিনকে।হাস্কি স্বরে বললো,
“ ড্রেসটা চেঞ্জ করে নাও হানি!”
অরিন মাথা নাড়িয়ে শপিং ব্যাগটা খুললো।পরক্ষণেই যা দেখলো তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। সে কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে শপিং ব্যাগ থেকে লাল টকটকে পাতলা ফিনফিনে নাইটিটা বের করে আনলো। চোখের সামনে সেটাকে ধরে খানিক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,
“ এটা পড়বো?”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। দুষ্ট কন্ঠে বললো,
“ আজকে পড়তে দিচ্ছি! নেক্সট টাইম থেকে রাতের বেলা কিছুই পড়তে হবে না হানি।”
ভড়কায় অরিন। মাথাটা হুট করেই কেমন ভো ভো করে ঘুরছে মনে হচ্ছে। চোখদুটোর সামনেও বুঝি আধার নেমে এসেছে হুট করে। অরিন কিছুটা সময় নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে নিলেই বাঁধ সাধে রৌদ্র। অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রৌদ্রের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই রৌদ্র দুষ্ট কন্ঠে বলে,
“ এখানেই চেঞ্জ করো হানি।”
এইবার যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো অরিনের। সে তৎক্ষনাৎ দু’ধারে মাথা নাড়িয়ে নাকচ করে বলে,
“ একদম না! আমি… পারবোনা এখানে চেঞ্জ করতে।”
রৌদ্র ক্ষুদ্র চোখে তাকায় এবার। ভরাট কন্ঠে বলে,
“ মেয়ে মানুষ মানেই নাটক তাইনা? আমার বউ হবি,আমার ঘর করবি অথচ আমার সামনে চেঞ্জ করতেই গাল বাঁকাস? সাচ আ লেইম এক্সকিউজ হানি!”
অরিন মাথাটা নিচু করে নিলো আলগোছে। হাতের আঙুলে নাইটিটা পেঁচিয়ে যাচ্ছে সে। রৌদ্র কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলো। পরমুহূর্তেই খেঁকিয়ে বললো,
“ তুই পাল্টাবি? না-কি আমি পাল্টিয়ে দিবো কোনটা?”
অরিন তৎক্ষনাৎ হকচকিয়ে ওঠে বলে,
“ এই না না.. আমি করছি।”
বলেই সে উদ্যোত হলো ড্রেস চেঞ্জ করতে। এদিকে রৌদ্রও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অরিন বুকভরে নিশ্বাস টেনে লেহেঙ্গাটা খুলতে লাগলো। ধীরে ধীরে রৌদ্রের সামনে উম্মুক্ত হলো নারীদেহের প্রতিটি বাকঁ। একমুহূর্তের জন্য তার নিশ্বাস আঁটকে গেলো কোথাও। হৃৎপিণ্ডটাও ইতোমধ্যে মিস করেছে বেশ কয়েটা বিট। অরিন নাইটিটা পড়তে নিলেই তার হাতদুটো আঁকড়ে ধরে রৌদ্র। অরিন তাকায় নিরেট চোখে। শান্ত কন্ঠে বলে,
“ কি হলো?”
রৌদ্র ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
“ আর পড়তে হবে না হানি।থাকুক যেভাবে আছে।”
অরিন মাথাটা নুইয়ে ফেলে লজ্জায়।রৌদ্র নিজেদের মাঝেরকার দুরত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে আসে। দু’হাত মেয়েটার গালে রেখে, মুখটা খানিক উঁচু করে থেমে থেমে বলে,
“ মেরুন কালার কেনো পড়তে গেলি সানশাইন?”
অরিন আলতো করে নিজের ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে নেয় জিভ দিয়ে। শান্ত কন্ঠে বলে,
“ তোমার পছন্দ তাই!”
রৌদ্র কামুক হাসলো।অরিনকে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজেও ঝুঁকে আসে তার ওপর। মেয়েটার ওষ্ঠপুটের দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
“ একদিনে এতোটা পাগল করলে তো সমস্যা হানি! পাগলের পাগলামিগুলো সামলাতে পারবে তো?”
অরিন বললো না কিছু। শুধু ঠোঁটের কোণে টানলো লাজুক হাসি।রৌদ্র আবারও আঁকড়ে ধরলো মেয়েটার ঠোঁটজোড়া। সেথায় আলতো করে বসিয়ে দিলো দাঁতের পরশ।মাঝেমধ্যে আশ্লেষে টেনে নিলো ভেতরে। তার অবাধ্য হাতদুটো আবারও চলে গিয়েছে নারী দেহের লুকায়িত ভাঁজে। অরিন কেঁপে কেঁপে ওঠছে রৌদ্রের বেসামাল স্পর্শে। রৌদ্র মেয়েটার দিকে তাকায় একপলক। পরক্ষণেই অরিনের হাত টেনে নিয়ে যায় কোনো এক নিষিদ্ধ স্থানে।অরিন তৎক্ষনাৎ কাঁপা হাতটা সরাতে নিলেই বাঁধ সাধে রৌদ্র। মেয়েটার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
“ ডু সামথিং হার্ডকোর বেইবি! আ’ম অন!”
অগত্যা এমন কঠিন কথায় নিজের সকল ধৈর্য্যের অবসান ঘটলো অরিনের। আগুনের স্পর্শে এসে সে নিজেও যেন জ্বলতে লাগলো একইভাবে। ভেতরকার অনুভুতিগুলো ডানা ঝাপটাতে লাগলো মুহুর্তেই। অরিন একহাতে খামচে ধরলো রৌদ্রের পিঠ। রৌদ্র তখন মেয়েটার বক্ষ বিভাজন হতে মুখ তুলে হাস্কি স্বরে বলে,
“ এভাবে না হানি! স্ক্র্যাচ মি লাইক আ ওয়াইল্ড ক্যাট। সকালে যেন আমার সারা গায়ে তোর নখের ছাপ থাকে।”
অরিন এবার লজ্জালু হাসলো। রৌদ্রকে ধাক্কা দিয়ে তাকে পাশে শুইয়ে দিয়ে নিজে তার কোমরের ওপর উঠে বসলো। রৌদ্র কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরিন হালকা হেসে রৌদ্রের সম্পূর্ণ বদনে হাত চালায়।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ঠোঁট কামড়ে চোখবুঁজে নেয়। অরিন ধীরে ধীরে রৌদ্রের বুকের ওপর নিজের ঠোঁটের পরশ একেঁ দেয়।রৌদ্র এবার গুঙিয়ে ওঠে ধীর শব্দে। অরিন থামছেনা। ছেলেটার সম্পূর্ণ বদনে কোথাও ঠোঁটের পরশ, তো কোথাও দাঁতের পরশ আঁকতে ব্যস্ত সে।এভাবে প্রায় মিনিট পাঁচেক চলতেই ফট করে শোয়া ছেড়ে উঠে বসে রৌদ্র।
মেয়েটাকে নিজের আরও খানিকটা কাছে টেনে এনে তার কন্ঠদেশে মুখ গুঁজে দেয় আলগোছে। সেথায় কামড় বসাতেই মৃদু শীৎকার বেরিয়ে আসে মেয়েটার ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে। রৌদ্র থামছেনা।তার অবাধ্য পরশে জুড়িয়ে আসছে মেয়েটার সমস্ত কায়া। অরিন কাঁপতে কাঁপতে হেলে পড়লো বিছানায়। রৌদ্র তখন ব্যস্ত হাতে পরনের প্যান্টটা নিচে নামাতেই মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে অরিন। নিশ্বাস তার জুড়িয়ে আসছে ক্রমাগত। রৌদ্র ধীরগতিতে এগিয়ে আসে মেয়েটার নিকট। একহাতে অরিনের থুতনিতে আলতো করে ধরে মেয়েটাকে ঘুরায় নিজের দিকে। নরম কন্ঠে বলে,
“ আজ তোর দৃষ্টি যেন শুধুমাত্র আমার চোখের দিকেই থাকে। ভুলক্রমেও যেন সে চোখ না সরে আমার দৃষ্টির ওপর থেকে। মনে থাকবে?”
অরিন ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ায়। রৌদ্র আলতো হেসে সরতে নিলেই অরিন কেঁপে কেঁপে বলে ওঠে,
“ আমার ভয় লাগছে রৌদ্র!”
রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মেয়েটার কানের পিঠে দাঁত বসিয়ে দিয়ে হাস্কি স্বরে বললো,
“ ডোন্ট ওয়ারি সানশাইন! ইউ নো হোয়াট? ইট’স অলসো মাই ফার্স্ট টাইম হানি। এন্ড আই সয়্যার, আ’ল হ্যান্ডেল ইট উইথ কেয়ার!”
মধ্যরাত! পুরো ঘরজুড়ে নীল রঙা নরম আবহ। চারিদিকে এক অদ্ভুত চাপা নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে সেই অদ্ভুত চাপা নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়েও ভেসে আসছে একজোড়া কপোত-কপোতীর দমকা নিশ্বাস, চাপা শীৎকার। মাঝেমধ্যে কানে আসছে এক-আধটি দম বন্ধ করা শব্দ!
অরিন গোঙাচ্ছে। তার সম্পূর্ণ কায়া জুড়ে রৌদ্রের অবাধ বিচরণে একেবারে গুড়িয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। শরীর অবশ হয়ে আসছে মৃদু চিনচিনে ব্যথায়।অরিন আর সইতে না পেরে হুট করেই চেচিয়ে উঠে। কেঁপে কেঁপে বলে,
“ রৌদ্র! ইউ আর গোয়িং ঠু রাফ! প্লিজ স্টপ.. আমি আর পারছিনা।”
কে শোনে কার কথা? বহু দিনকার ক্ষুধার্থ বাঘ খাবার পেলে যেমন বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে খাবারের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে,আজ রৌদ্রের হাল হয়েছে তেমন! ছেলেটা থামছেই না কিছুতে।অরিন আবারও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। গুঙিয়ে বলে,
“ ওহ্! ইট’স হার্টিং রৌদ্র!”
রৌদ্র নিজের কর্মে ব্যস্ত থেকেই মেয়েটাকে সেনসেশনাল কন্ঠে বলে ওঠে,
“ ওহ হানি! একটু পরেই তোমায় ব্যাথার ঔষধ দিয়ে দিবো। দরকার পড়লে সারা গায়ে ম্যাসাজ করে দিবো তারপরও থামতে বলোনা প্লিজ! আই কান্ট স্টপ নাউ!”
অরিন ওঠার চেষ্টা চালায়। তবে রৌদ্রের পুরুষালী শক্তির সাথে পেরে ওঠা মুশকিল হয়ে গেলো মেয়েটার জন্য। সে নিস্তেজ শরীরে রৌদ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজের ওপর থেকে সরানোর প্রয়াস চালায়।রৌদ্র দুবার হাত ঠেকায় মেয়েটার।তবে তৃতীয় বার একই কাজ হওয়ায় মেজাজ বিগড়ে যায় ছেলেটার।সে তৎক্ষনাৎ শক্ত গলায় বলে ওঠে,
“ কি সমস্যা তোর? বারবার আটকাচ্ছিস কেনো? শুনে রাখ মেয়ে,আজ তুই কেঁদে কেটে জ্ঞান হারালেও আমার না হওয়া অব্ধি তোকে ছাড়ছিনা আমি। আজকের জন্য আমি সেলফিশ! গোট ইট বেইবি?”
বলেই সে আবারও ডুব দিলো মেয়েটাতে। ওদিকে অরিনের চোখবেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। তা কিসের জন্য কে জানে! প্রায় আধঘন্টা চললো এহেন কার্যক্রম। তক্ষুনি হুট করে ঘটলো আরেক কান্ড। রৌদ্রের এতদামি খাটটা হুট করেই ভেঙে পড়লো মাঝ দিয়ে। চোখের পলকে রৌদ্র আর অরিন গিয়ে পড়লো নিচে। রৌদ্র চোখেমুখে রাজ্যসম বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মুখ কুঁচকে বিরবির করে বলে,
“ শালার! ভাঙার আর সময় পেলোনা?ধূর!!”
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৮
বলেই রৌদ্র মেয়েটার ওপর থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকেও কোলে তুলে নিলো আলগোছে। অরিন হাঁপিয়ে যাচ্ছে অনবরত । তার নিস্তেজ দেহটা রৌদ্রের বাহুডোরে।রৌদ্র তাকে নিয়ে গেলো ঘরের কোণঠেসে থাকা সিঙ্গেল সোফায়। সেথায় অরিনকে শুইয়ে দিয়ে আলতো হেসে বললো,
“ এখনো অনেক বাকি হানি! কাম…লেটস ফিনিশ দিস ওয়ার্ক আউট!”