সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৭০

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৭০
Jannatul Firdaus Mithila

“এখনো অনেক বাকি হানি! কাম…লেটস ফিনিশ দিস ওয়ার্ক আউট!” ঘাবড়ে যায় অরিন।তড়াক দূর্বল দেহটা নিয়ে উঠতে নিলেই তার কোমর চেপে ধরে রৌদ্র। বাঁকা হেসে মেয়েটার দিকে ঠোঁট কামড়ে তাকায়। একহাঁটু সোফাতে ভর দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে আসতেই মোচড়াতে লাগলো অরিন। তা দেখে বেজায় বিরক্ত রৌদ্র। কন্ঠে একরাশ বিরক্তির ঝাঁঝ ঢেলে দাঁত খিঁচে বললো,

“ এতোকিছু করার পরও মোচড়ানো থামছেনা কেনো তোর?”
অরিন নির্বাক। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চেপে বসে আছে মাথা নুইয়ে। মেয়েটাকে এমন নির্বাক হয়ে বসে থাকতে দেখে এবার যেন বড্ড মায়া হলো রৌদ্রের।চোখমুখ থেকে মুহুর্তেই এতক্ষণের ঝাঁঝালো ভাবটা সরে গিয়ে সেথায় ভর করলো একরাশ মায়া। সে তৎক্ষনাৎ হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসলো।অরিনের দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় টেনে চেপে ধরলো শক্ত করে। অরিন এখনো নিশ্চুপ! রৌদ্র বিচলিত হয়ে মেয়েটার হাতদুটো খানিক ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো,
“ এই সানশাইন! তাকা আমার দিকে!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অরিন ধীরেসুস্থে চোখ তুলে তাকায়। মেয়েটার ক্লান্ত হয়ে আসা চোখদুটো দেখমাত্রই অস্থির হয়ে ওঠে রৌদ্র। মনে মনে নিজেকে বিরাট মাপের অপরাধী সাব্যস্ত করতেও ভুললো না সে।প্রথমবার যেহেতু, মেয়েটাকে এভাবে নাজুক না করলে কি আর হতোনা? সে কিভাবে পারলো এতোটা কন্ট্রোললেস হতে? কই সে তো এমন ছিলোনা! মনের এহেন জোরালো ভাবনায় এমুহূর্তে নিজের কাছেই নিজেকে কেমন অপরাধী লাগছে রৌদ্রের! সে তৎক্ষনাৎ উঠে এসে মেয়েটাকে নিজের বুকের মাঝে আলতো করে চেপে ধরে অপরাধী সুরে বলতে লাগলো,
“ আ’ম সো সরি বউজান! আমার সত্যি আরেকটু জেন্টেল হওয়ার দরকার ছিলো। আমি.. আমি সত্যি বুঝতে পারিনি জানবাচ্চা।প্লিজ আমায় মাফ করে দে।”

কন্ঠ জুড়িয়ে আসছে রৌদ্রের।সে সাথে চোখদুটোও কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে ক্রমাগত। অরিন ধীরেসুস্থে নিজের হাতদুটো উঠিয়ে আনে রৌদ্রের পিঠে। দূর্বল কন্ঠে কোনমতে বলে,
“ ইট’স ওকে হানি!”
রৌদ্র হাসলো খানিকটা। অরিনকে বুক থেকে সরিয়ে, মেয়েটার কপাল বরাবর ঠোঁটের পরশ একেঁ দিলো সযত্নে।পরক্ষণেই ধীমী স্বরে বলে,
“ ফ্রেশ করিয়ে দেই বউজান চলো!”
অরিন মৃদু হাসলো। হাতদুটো দিয়ে রৌদ্রের গলা জড়িয়ে নরম কন্ঠে বললো,
“ আপনি করাবেন?”

রৌদ্র সরু চোখে তাকায় এবার। মুখটা খানিক নিচু করে অরিনের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
“ আর কি কি করলে আপনি আমায় ‘ আপনি ’ বাদে ‘তুমি’ বলবেন সানশাইন? অনুমতি দিলে আমি অভাগা কি ব্যাপারটাকে খতিয়ে দেখতে পারি?”
অরিন হেসে দিলো ফিক করে। রৌদ্রের বুকের ওপর মাথা ঠেকিয়ে আলতো স্বরে বলে ওঠে,
“ কোনো দরকার নেই ডাক্তার সাহেব!”
“ তাহলে বল ‘ তুমি ’ ”
অরিন আগের ন্যায় হাসলো। মিনমিনে স্বরে বললো,
“ ফ্রেশ করিয়ে দাও হানি!”
রৌদ্র মুচকি হেসে তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে হাস্কি স্বরে বললো,
“ যো হুকুম হানি!”

বাথটাব ভর্তি হচ্ছে উষ্ণ পানিতে। কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। করছে পানির উষ্ণতার তদারকি।তার থেকে খানিকটা দূরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। পড়ে রেখেছে রৌদ্রের দেওয়া সফেদ তোয়ালেটা। যার দৈর্ঘ্য তার হাঁটুর কয়েক আঙুল নিচ অব্ধি।সে ক্লান্ত কন্ঠে রৌদ্রকে ডেকে বলে ওঠে,
“ আর কতক্ষণ ডাক্তার সাহেব? খারাপ লাগছে আমার।”
রৌদ্র তড়িঘড়ি করে বাথটাব ভর্তি পানিতে হাত চুবায়। দেখে নেয় উষ্ণতার মাত্রা। যখন মনে হলো পানির উষ্ণতা একেবারেই ঠিকঠাক তখনি সে পা বাড়ায় অরিনের দিকে। মেয়েটাকে ফের কোলে তুলে এনে সযত্নে নামিয়ে দিলো বাথটাবে। গায়ে পানির স্পর্শ লাগতেই অরিনের গা-টা কেমন জ্বলে ওঠলো মুহুর্তেই।সে তৎক্ষনাৎ খপ করে চেপে ধরলো রৌদ্রের বাহু। মুখ কুঁচকে বললো,

“ আমি গোসল করবোনা।”
রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। অরিনের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
“ এভাবে বলেনা সানশাইন।ফ্রেশ হতে হবে তো সোনা! এ অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে তোমারই খারাপ লাগবে। তাই একটু কো-অপারেট করো আমার সাথে।”
অরিন ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে গা ডুবিয়ে বসলো পানিতে। রৌদ্র আলতো হেসে বসলো বাথটাবের বাইরে। হাতে বডি ওয়াশ নিয়ে মেয়েটার গায়ে লাগাতেই বাঁধলো আরেক কান্ড! অরিন চোখবুঁজে অর্ধ-ডুবে বসে আছে স্বচ্ছ পানিতে। যার দরুন তার গায়ের তোয়ালেটা হাঁটু থেকে খানিক উঁচুতে উঠে এসেছে অজান্তেই। রৌদ্রের বেহায়া চোখদুটো গিয়ে আটঁকালো সেদিকে। রৌদ্র পরপর শুকনো ঢোক গিললো। চোখদুটোকে একপ্রকার টেনেহিঁচড়েও সরাতে পারছেনা সে। তবুও সে নিজেকে বহুকষ্টে সামালালো।মনে মনে নিজেকে শাসিয়ে বলতে লাগলো, “ আজ আর না… আজ আর না!”

কিন্তু বেহায়া মন বলে কথা। সে কি আর ওতো কথা শোনে? রৌদ্র একবুক নিশ্বাস টেনে নিজ কাজে মনোযোগ টানলো। হাতের লিকুইড ওয়াশটা অরিনের গায়ের মসৃণ ত্বকে লাগাতেই আবেশে চোখদুটো আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেলো তার। কি নরম শরীর!শরীর নয় এ যেন তুলা! রৌদ্র মিটিমিটি হেসে নিজ কাজ করতে লাগলো। মেয়েটার পুরো গায়ে সোপ লাগিয়ে পাশ থেকে হ্যান্ড শাওয়ারটা তুলে নিলো রৌদ্র। সেটা ধীরে ধীরে অরিনের গায়ে তাক করতেই ঝিরিঝিরি পানি পড়ে মেয়েটার শরীর ধুয়ে যেতে লাগলো। রৌদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। পানির ফোঁটাগুলো নিজ আঙ্গিকে গড়িয়ে পড়ছে মেয়েটার গা বেয়ে। ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গে। হুট করেই পানির ফোঁটাগুলোকে দেখে কেনো যেন ভিষণ জেলাস ফিল হচ্ছে রৌদ্রের। এ আবার কোন কাহিনি হচ্ছে কে জানে! রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চোয়াল শক্ত করে হ্যান্ড শাওয়ারটা দূরে ছুড়ে ফেলে। অরিন হকচকিয়ে ওঠে এরূপ শব্দে। ঘটনার আকস্মিকতায় তোয়ালেটা যে সেই কখন ঢিলে হয়ে গেছে তা বুঝি টেরই পেলোনা মেয়েটা। রৌদ্র এখনো চোয়াল শক্ত করে হ্যান্ড শাওয়ারটার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের কাঁধে হাত রাখতেই ধ্যান ভাঙলো ছেলেটার।তড়িৎ ঘাড় বাকিয়ে চাইলো মেয়েটার পানে। অস্ফুটে কিছু বলবে তার আগেই তার চোখ গেলো অন্য কোথাও। অরিন রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,

“ কি হলো? সেটা এভাবে ছুড়ে ফেললেন কেনো?…”
কথা বলার একপর্যায়ে অরিন স্পষ্ট টের পেলো তার গা থেকে তোয়ালেটা আলগা হয়ে নিচে নেমে গেছে। মুহুর্তেই থমকে গেলো মেয়েটা। বুক কেঁপে ওঠলো অজানা ভয়ে। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল।সে তড়িঘড়ি করে দু’হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করবার চেষ্টা করতেই তার হাতদুটো খপ করে চেপে ধরে বাঁধ সাধে রৌদ্র। অরিন থমকায়।লজ্জায় মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা তার। এদিকে রৌদ্রের হাল বেহাল! চোখদুটো আঁটকেছে বেহায়ার মতো। বুকের ভেতর নৃত্য তুলতে ব্যস্ত তার হৃৎপিণ্ড। একটু কান পাতলেই বাইরে থেকে স্পষ্ট শোনা যাবে তা। রৌদ্র জিভ দিয়ে নিজের শুষ্ক অধরজোড়া খানিক ভিজিয়ে নিলো। গলাটায় হঠাৎ খরা নেমেছে মনে হচ্ছে! সে ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো ক্রমাগত। নাহ! কাজ হচ্ছে না। চরিত্র আবারও নষ্ট হতে চাইছে তার। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ নিজের চোখদুটো বন্ধ করে আবারও মেলে তাকালো। কাঁপতে থাকা মেয়েটার দিকে মোহগ্রস্ত দৃষ্টি তাক করে হাস্কি স্বরে বললো,

“ সানশাইন আয় না প্লিজ!”
অরিন শুষ্ক ঢোক গিলে।মুহুর্তেই তার সম্পূর্ণ বদনে বয়ে গেলো এক মৃদু ঝংকার। সে তৎক্ষনাৎ দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে অনুনয়ের সুরে বললো,
“ নাহ প্লিজ!”
রৌদ্র এবার দুষ্ট হাসলো।অরিনের হাতদুটো ছেড়ে দিয়ে
চোখে চোখ রেখে বসা ছেড়ে উঠে এলো বাথটবে। তারপর মেয়েটার কোমর চেপে তাকে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে এনে আনলো চোখের পলকে। অরিন হকচকিয়ে ওঠে এহেন কান্ডে। ওদিকে রৌদ্রের বেসামাল হাতের স্পর্শও যেন পাগল করে ছাড়বে তাকে।রৌদ্র ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে হাস্কি স্বরে বললো,
“ আই থিংক… আমি আবারও অধৈর্য্য হচ্ছি সানশাইন।”

ভড়কায় অরিন। চোখদুটো যেন এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে তার। সে তৎক্ষনাৎ জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো রৌদ্রের হাতের বাঁধন থেকে। খানিকটা সরে এসে কাঠকাঠ কন্ঠে বললো,
“ আজ আর কাছে আসবেন না আপনি। দূরে থাকুন বলছি!”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। বাথটাবের গায়ে দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে বেশ আয়েশ করে বসলো। কন্ঠে দুষ্টুমি টেনে বললো,
“ আর যদি তুমি নিজেই আসতে চাও তখন?”
অরিন ভাবনায় পড়লো এবার। কি বললো এই লোক? সে যাবে মানে? তার কি মাথানষ্ট যে সে ইচ্ছে করে যাবে? অরিন তৎক্ষনাৎ দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে ভিষণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,
“ মোটেও না!”
রৌদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো এবার। পুনরায় বাঁকা হেসে বললো,
“ উইল সি!”

সফেদ রঙা পাতলা ফিনফিনে শার্ট গায়ে জড়িয়ে,পেটের ওপর দু’হাত চেপে সোফার ওপর পা তুলে বসে আছে অরিন। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। মেয়েটার ভেজা চুলগুলো মুছে দিচ্ছে সযত্নে। চুল মোছার একপর্যায়ে রৌদ্র খেয়াল করলো মেয়েটার দিকে। বিচক্ষণ মস্তিষ্ক কিছু একটা বুঝে ফেলে তৎক্ষনাৎ। সে সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজ থামিয়ে অরিনের মাথা বরাবর আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
“ একটু বস জানবাচ্চা, আমি এই যাবো আর আসবো কেমন?”

অরিন ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে রেখেই মাথা নাড়ায় কোনমতে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ছুটলো ঘরের বাইরে। এদিকে পেট ব্যাথায় কুপোকাত অরিন।উবু হয়ে পড়ে রইলো সোফায়। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে আসে রৌদ্র। হাতে প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে। এসেই মেয়েটাকে ওমন উবু হয়ে কাতরাতে দেখে বড্ড অপরাধবোধ অনুভব হয় তার। সে তড়িঘড়ি করে অরিনের সামনে এসে বসলো। হাতের প্লেটটা সামনের টেবিলের ওপর রেখে, অরিনের দুবাহু চেপে তাকে উঠিয়ে বসালো নিজের উরুর ওপরে। অতঃপর মেয়েটার গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো,
“ খাবারটা খেয়ে নে সানশাইন। এরপরেই ঔষধ দিয়ে দিবো কেমন?”
অরিন মাথা এলিয়ে রেখেছে রৌদ্রের কাঁধে। রৌদ্র হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর থেকে প্লেটটা নিয়ে অল্প করে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো মেয়েটাকে।

একপ্লেট খাবার শেষ করতে নরমালি মিনিট দশেক লাগলেও আজ অরিনকে খাবার খাওয়াতে রৌদ্রের লেগেছে পাক্কা আধঘন্টা। তবুও ভালো।মেয়েটার খাওয়াতো হলো। অরিনকে খাবার খাইয়ে রৌদ্র উঠে চলে যায় কাবার্ডের দিকে। সেথায় মিনিট দুয়েক খোঁজ চালিয়ে ফিরে আসে ফার্স্ট এইড বক্স আর একটা কাগজের প্যাকেট নিয়ে। অরিনের পাশে সবগুলো রেখে অতঃপর আবারও চলে যায় ঘর ছেড়ে।এবার ফিরে আসে গ্লাস ভর্তি উষ্ণ দুধ নিয়ে। দুধের গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে কাগজের প্যাকেট থেকে দরকারী দুটো ঔষধ বের করে, হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে অরিনের মুখের সামনে ধরে রৌদ্র। অরিন তৎক্ষনাৎ মুখ কুঁচকে ফেলে দুধ দেখে।

মেয়েটা আবার দুধ খেতে গেলেই করে যতসব বাহানা! রৌদ্র এসবে মোটেও বিরক্ত হলোনা। বরঞ্চ মেয়েটাকে নিজের বুকে টেনে এনে ভিষন যত্নের সাথে ঔষধ আর দুধটা একটু একটু করে খাইয়ে দিতে লাগলো। অরিন প্রথম প্রথম ভং ধরলেও এখন কি সুন্দর বাধ্যদের ন্যায় খেয়ে যাচ্ছে। রৌদ্রও হাঁফছেড়ে বাঁচলো মেয়েটার খাওয়া দেখে।দুধের গ্লাসটা সম্পূর্ণ খালি হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রৌদ্র। খালি গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে অরিনকে শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের মাঝে। তাকে নিয়েই পেছনের দিকে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো রৌদ্র।
মেয়েটার মাথার ওপর আলতো করে চুমু একেঁ বললো,

“ এখনো খারাপ লাগছে?”
অরিন বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে আছে রৌদ্রের বুকে। সেথায় থেকেই খানিক নড়েচড়ে প্রতিত্তোরে বললো,
“ উঁহু!”
রৌদ্র মেয়েটার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বললো,
“ জাস্ট ১০ মিনিট ধৈর্য্য ধর সোনা। ব্যাথা কমে যাবে একদম!”
অরিনও মেনে নিলো এহেন বাক্য। চুপচাপ পড়ে রইলো রৌদ্রের বুকের মাঝে। রৌদ্র সময় কাটাতে গল্প করতে লাগলো। অরিনও বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে তার প্রেমিক পুরুষের কথা।
সময় পেরুলো।অরিনের পেট ব্যাথাও কমে গেলো। সে রৌদ্রের বুকে খানিক নড়চড় করতেই রৌদ্রের ঘুম ভেঙে গেলো হুট করে। ছেলেটা গল্প করতে করতে কখন যে তার চোখদুটো লেগে এসেছিলো কে জানে! সে তৎক্ষনাৎ অরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ পেট ব্যাথা কমেছে সানশাইন?”
অরিন আলতো করে নাক ঘষে রৌদ্রের বুক বরাবর। ক্ষীণ স্বরে বলে, “ হুম!”
রৌদ্র মৃদু হাসলো। মেয়েটাকে বুকে নিয়েই উঠে বসলো সোফায়। হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে সেখান থেকে হেপারিন অয়েন্টমেন্টটা বের করে আনে। আঙুলের ডগায় একটুখানি অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে অরিনের দিকে না তাকিয়েই বলে,
“ শার্ট খোলো হানি!”
চমকে তাকায় অরিন। ভুল শুনলো কিনা তা যাচাই করতে ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে,
“ কি?”
রৌদ্র শান্ত চোখে তাকায়। ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ শার্ট খোলো হানি, ব্রুজ বেশিক্ষণ থাকলে দাগ বসে যাবে গায়ে।”
অরিন তৎক্ষনাৎ মিইয়ে গিয়ে বুকের কাছের শার্টটা চেপে ধরে। রৌদ্র বাঁকা চোখে তাকায়। দুষ্ট হেসে বলে,
“ নতুন কিছু দেখার নেই হানি। সো বি কা’ম!”
লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো মেয়েটা।লোকটা কি ভয়ংকর কথা বলে!একেকটা কথা না যেন তীরের ফলা।কথা দিয়েই মেরে ফেলবে মেয়েটাকে। এদিকে অরিনকে এখনো একইভাবে বসে থাকতে দেখে বাঁকা হাসে রৌদ্র। দুষ্ট কন্ঠে বললো,

“ শুড আই স্টার্ট কাডলিং এগেইন হানি?”
তড়িৎ গতিতে নাকচ করে ওঠে অরিন।অস্থির কন্ঠে বলে,
“ না..একদম না!”
রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিজেদের মাঝেরকার দুরত্ব নিজ উদ্যোগে কমিয়ে দিয়ে এগিয়ে আসে। হাত বাড়িয়ে মেয়েটার শার্টের ওপরের দুটো বাটন খুলে দিয়ে গলার কাছটা উম্মুক্ত করে দিলো আলগোছে। আঙুলের ডগায় নেওয়া মলম টুকু আলতো করে লাগিয়ে দিলো ব্রুজের ওপর। অরিন তৎক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে এহেন স্পর্শে।খপ করে চেপে ধরে শার্টের একাংশ। রৌদ্র আড়চোখে দেখলো সবটা। পরক্ষণেই বাঁকা হেসে আলতো করে ফু দিতে লাগলো মলম দেওয়া জায়গা গুলোতে। ইচ্ছে করে মেয়েটার সর্বাঙ্গে অবাধ বিচরণ চালালো নিজের হাত দুটোর। অরিনের নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে ক্রমাগত। বুকের দ্রুত উঠানামা গতিতে স্পষ্ট ব্যক্ত হচ্ছে তা। রৌদ্র মোহগ্রস্তের ন্যায় তাকিয়ে রইলো। তারও যে বেহাল দশা মেয়েটাকে এভাবে দেখে। গলার কাছ থেকে প্রায় অনেকটা নিচে নেমে গিয়েছে মেয়েটার শার্ট। অধিক নড়াচড়ার দরুন পা থেকে বেশ খানিকটা উপরে উঠে গিয়েছে শার্টটা। রৌদ্র পরপর শুকনো ঢোক গিললো। নিজের সকল ধৈর্য্যকে একপ্রকার সাইডে রেখে সে আলতো করে ঘাড় চেপে ধরে অরিনের। মেয়েটার মুখটা নিজের কাছে টেনে এনে হিসহিসিয়ে বলে,

“ ড্যাম! হুট করেই কেমন গরম লাগছে হানি!”
অরিন বুঝলো কি না কে জানে! তার আগেই রৌদ্র হুট করেই আঁকড়ে ধরলো মেয়েটার নরম ওষ্ঠপুট। আশ্লেষে টেনে নিলো নিজ অধরজোড়ার মাঝে। পরক্ষণেই আলতো করে দাঁত বসিয়ে ফের শুষে নিলো অধরজোড়া।এহেন বেপরোয়া কান্ডে দূর্বল অরিন।রৌদ্রের হাতদুটোও কেমন সঙ্গ দিয়ে ছুটছে অবাধভাবে। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর রৌদ্র ঠোঁট ছেড়ে দিলো মেয়েটার। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে মুখ গুঁজে দিলো মেয়েটার কন্ঠদেশে। সেথায় অসংখ্য ছোট ছোট আদুরে পরশ একেঁ দিতে লাগলো ভিষণ আবেশে। অরিন ধীরে ধীরে তার হাতদুটো উঠিয়ে আনে রৌদ্রের পিঠ বরাবর। সেথায় আলতো করে খামচে ধরতেই, রৌদ্র আলতো করে দাঁত বসালো মেয়েটার কন্ঠদেশে। অরিন মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে মৃদু শীৎকার। রৌদ্র শুনলো সবটা। এতেই যেন আরেকধাপ পাগল হতে লাগলো বেপরোয়া ছেলেটা। সে তৎক্ষনাৎ অরিনের গলা চেপে ধরে আলতো হাতে।মেয়েটার গালের ওপর নাক ঘষে ক্ষীণ কন্ঠে বলে,

“ থেমে যাবো?”
অরিন নিশ্চুপ। ক্ষনে ক্ষনে কাঁপছে তার সম্পূর্ণ কায়া। রৌদ্র নিরেট চোখে তাকিয়ে রইলো। হয়তো সে অপেক্ষায় আছে মেয়েটার উত্তরের।কিয়তক্ষন বাদে রৌদ্র দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে অরিনের কাছ থেকে সরে যেতে চাইলেই তৎক্ষনাৎ তার বাহু আঁকড়ে ধরে অরিন। রৌদ্র থমকায়। শান্ত চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। অরিনের সারা মুখে লেপ্টে আছে এক আকাশসম লজ্জার ছাপ। নাকের ডগাটাও কেমন লাল টুকটুকে হয়ে আছে যেন। অরিন আর অপেক্ষা করলোনা। ফট করে জড়িয়ে ধরলো রৌদ্রকে।রৌদ্রও যেন পেয়ে গেলো তার কাঙ্ক্ষিত উত্তর। তবুও সে মেয়েটাকে একটুখানি বাজিয়ে দেখতে দুষ্ট কন্ঠে বললো,

“ আর ইউ শিওর হানি?”
অরিন মাথা দোলালো নিঃশব্দে। রৌদ্র বাঁকা হেসে ক্ষীণ স্বরে বললো,
“ এবার কিন্তু মাঝপথে থামবো না আমি। চলবে তো?”
অরিন আর কিছু বলতে পারলোনা। বলবেই বা কিভাবে? এ কথার প্রতিত্তোরে বলার মতো ভাষা আছে তার? মেয়েটার এরূপ নিরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে রৌদ্র মুচকি হাসলো। চটপট উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকেও পাঁজা কোলে তুলে নিলো আলগোছে।ফিচেল হেসে হাস্কি স্বরে বললো,
“ সোফাটা এতকিছু সহ্য করতে পারবেনা সানশাইন। এরচেয়ে বরং সেফ প্লেসে চল!”
অরিন মুচকি হেসে কাঁধ জড়িয়ে ধরলো রৌদ্রের।রৌদ্রও পা বাড়ালো ছাঁদের চিলেকোঠার দিকে।

নিস্তব্দ রাত। ছাঁদের ওপরটাও কেমন বিদঘুটে অন্ধকারে আচ্ছন্ন। অরিন চোখবুজেঁ নেয় এহেন অন্ধকার দেখে।রৌদ্র তা খেয়াল করতেই আলতো হেসে বললো,
“ ভয় লাগছে?”
অরিন ক্ষীণ স্বরে উত্তর দেয় — হুম।
রৌদ্র মুচকি হেসে মেয়েটার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
“ আমি থাকতে আবার কিসের ভয় তোমার?”
অরিন শব্দ করে হাসলো।দু’হাতে রৌদ্রের দুগাল টেনে দিয়ে বললো,
“ আপনার জন্যই তো ভয়!”
রৌদ্র চিলেকোঠার ঘরে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটাকেও আলগোছে নামিয়ে দিলো কোল থেকে। তারপর চলে গেলো দরজা লাগাতে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো নেশালো চোখে। ধীরপায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো সে।অরিন দাঁড়িয়ে আছে জড়সড়ভাবে। রৌদ্র কাছে এসেই তার কোমর টেনে ধরে। হাস্কি স্বরে বলে,
“ কাম হানি! লেটস স্টার্ট আওয়ার ইনকমপ্লিট ওয়ার্কআউট!”

সকাল সাড়ে আটটা।
ড্রয়িং রুমে উপস্থিত বাড়ির কর্তারা। বড় সোফাটায় গা এলিয়ে বসে পত্রিকা পড়ছেন কবির সাহেব। পাশেই সাব্বির সাহেব বসে আছেন চায়ের অপেক্ষায়। অন্যদিকে তায়েফ সাহেব আর তাশরিক সাহেব মাত্রই বাইরে থেকে হাটাহাটি শেষ করে বাড়িতে ঢুকলেন। তায়েফ সাহেব পায়ের গতি বাড়িয়ে সিঙ্গেল সোফাটায় এসে বসলেন। ওদিকে রেহান আর অনিক কি যেন একটা নিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। রুহি এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।ইদানীং সকাল সকাল উঠতে গেলেই যেন শরীর ভেঙে আসে মেয়েটার।
রেহান আর অনিক ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই বাড়ির সদর দরজার দিকে কর্কশ শব্দ তুলে কলিং বেলটা বেজে ওঠে। রেহান সেদিকে পা বাড়াতে উদ্যোত হতেই সাব্বির সাহেব বাঁধ সাধলেন।হাসিমুখে বললেন,

“ তুমি বসো বাবা।আমি দেখছি!”
রেহানও আর নড়চড় করলোনা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো নিজ জায়গায়। এরইমধ্যে চায়ের ট্রে নিয়ে ড্রয়িংএ উপস্থিত হলেন রাফিয়া বেগম ও জুবাইদা বেগম। জুবাইদা বেগম একে একে সবাইকে চা দিয়ে অবশেষে গেলেন স্বামীর নিকট। কবির সাহেবও চা দেখে হাত থেকে পত্রিকাটা নামিয়ে রাখলেন পাশে। পরক্ষণেই চায়ের কাপটা তুলে নিলেন হাতে। এদিকে সাব্বির সাহেব দরজা খুলতেই দেখতে পেলেন দুজন অজ্ঞান লোককে। তিনি হাসিমুখেই জিজ্ঞেস করলেন,

“ জ্বি? কি চাই?”
“ জ্বি আসলে আমরা খাট নিয়ে এসেছি।”
এহেন কথায় ভ্রু কুঁচকান সাব্বির সাহেব।তৎক্ষনাৎ বুঝতে না পেরে ফের বলে ওঠেন,
“ খাট? কিসের খাট? আপনারা বোধহয় ভুল বাড়িতে চলে এসেছেন!”
বাড়ির সম্মুখ দরজায় হতবিহ্বলের মতো দাঁড়িয়ে আছে ডেলিভারি ম্যান দুজন। সাব্বির সাহেবের এহেন কথায় তারা একবার একে-অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। পরক্ষণেই ডেলিভারি ম্যানদের মধ্যে একজন নিজের শার্টের বুকপকেট থেকে অর্ডারের রিসিটটা বের করে এনে ফের একবার খেয়াল করে বললেন,
“ স্যার! ঠিকানাতো এই বাড়ির।”
সাব্বির সাহেব ভ্রু গোটায়। হাত বাড়িয়ে কাগজটি নিয়ে নেন নিজের হাতে। অতঃপর কাগজটা চেক করে দেখলেন — ডেলিভারি ম্যানদের কথাই ঠিক।অর্ডার এ বাড়ি থেকেই দেওয়া। সাব্বির সাহেব আগের মতো ভ্রু কুচকে সন্দিহান গলায় বললেন,

“ কে দিয়েছে অর্ডার?”
ডেলিভারি ম্যান কোনরূপ ভনিতা ছাড়াই বললেন,
“ জনাব রৌদ্র!”
ব্যস! এটুকু কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে সদ্য চায়ের কাপে চুমুক বসানো কবির সাহেবের নাকেমুখে উঠে গেলো তৎক্ষনাৎ! তিনি কাশতে কাশতে বুক চেপে ধরলেন নিজের। জুবাইদা বেগম হতবিহ্বলতায় পলক ফেলতে ভুলে গেলেন যেন। ওদিকে অনিক এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের লজ্জালু মুখটা কোনমতে লুকিয়ে যাচ্ছে। রেহান মুখ টিপে হাসছে।নাহ! বেচারার হাসি বাড়ছে বৈ কমছেনা।সে তৎক্ষনাৎ একহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে। অন্যদিকে,হতবাক তাশরিক সাহেব চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পেছনের সোফায় বসতে গিয়ে ঘটালেন আরেক কান্ড! বেচারা বোধহয় ভুলেই গিয়েছিল তিনি যেখানে বসতে যাচ্ছেন সেখানে আগে থেকেই বসে আছেন তায়েফ সাহেব।তাশরিক সাহেব হতবুদ্ধির ন্যায় ভুলক্রমে বসে পড়লেন তায়েফ সাহেবের কোলে। তায়েফ সাহেব তৎক্ষনাৎ নিজের সকল ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। মুখ কুঁচকে বলতে লাগলেন,

“ তশু! আমি সোফা নই ভাই।ওঠ!”
তাশরিক সাহেব চমকে ওঠেন এরূপ কথায়। তড়াক পেছনে তাকান তিনি। ভ্রু কুচঁকে বললেন,
“ এতো জায়গা থাকতে এখানেই বসতে হবে কেনো তোমার?”
তায়েফ সাহেব আর টিকতে না পেরে তৎক্ষনাৎ চিমটি কাটলেন তাশরিক সাহেবের কোমরে।তা টের পেতেই তাশরিক সাহেব তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ালেন।কোমর ডলতে ডলতে মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
“ গায়ের জোরে পারোনা বলে এভাবে চিমটি কাটাে তাইনা?”
তায়েফ সাহেব মুখ বাঁকালেন।আপাতত তাশরিক সাহেবের কোনো কথাতেই মনোযোগ নেই তার।মনোযোগ সব নতুন খাট নিয়ে। ওদিকে এতক্ষণে নিজেকে কোনমতে সামলে কবির সাহেব উঠে দাড়ালেন। গটগট পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলেন দোতলায়। তার পিছু পিছু ছুটে এলেন বাকিরাও।

রৌদ্রের ঘরের সামনে এসেই থমকে গেলেন সকলে। সদ্য বিবাহিত ছেলের ঘরের দরজায় টোকা দিতে কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব হচ্ছে মানুষটার! তবুও কবির সাহেব নিজের মুখভঙ্গি যথেষ্ট গম্ভীর রাখলেন। হাত উঁচিয়ে ঘরের দরজায় দুটো টোকা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো নিজে থেকে। কবির সাহেব থামলেন। চোখ তুলে চাইলেন ঘরের ভেতর। পরক্ষণেই যা দেখলেন তাতে লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলেন সকলে। রাফিয়া বেগম তৎক্ষনাৎ জিভে কামড় বসিয়ে সরে গেলেন সেখান থেকে। জুবাইদা বেগম আহত চোখে তাকিয়ে রইলেন।এদিকে কবির সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে কোমড়ের পেছনে দু’হাত বেধেঁ ফুঁসছেন ক্রমাগত। ঘরের ভেতরটা দেখে মনে হচ্ছে ঘরটার ওপর দিয়ে রীতিমতো কোনো সুনামি বয়ে গেছে। খাটটাও কেমন অবহেলিত হয়ে ভেঙে পড়ে আছে। সারা ঘরজুড়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা! সাব্বির সাহেব তক্ষুনি আর্তনাদ করে বড় ভাইকে হতবুদ্ধির ন্যায় জিজ্ঞেস করে বসলেন,

“ ভাইজান! আমার মেয়েটা সুস্থ আছে তো?”
এহেন কথায় কবির সাহেব চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।দাঁতে দাঁত চেপে গলায় ঝাঁঝ ঢেলে বলতে লাগলেন,
“ তোর কমনসেন্স কি সব বিক্রি করে দিয়ে এসেছিস সাব্বির? অরি সুস্থ আছে কি-না সেটা আমি কিভাবে বলবো? বলবে তো তোর গুনধর জামাই!”
সাব্বির সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন। ঠিকই তো।হতবুদ্ধির ন্যায় কি থেকে কি জিজ্ঞেস করে বসলেন মানুষটা! তিনি তৎক্ষনাৎ দাঁতে জিভ কাটললেন। নিজের বলা বোকা কথায় এমুহুর্তে লজ্জায় কুন্ঠা যাওয়ার মতো অবস্থা তার।এরইমধ্যে কবির সাহেব গলা উঁচিয়ে বলে ওঠেন,
“ কোথায় সেই হতচ্ছাড়া?”

বাকিরা একে অপরের দিকে একবার তাকালেন আড়চোখে। পরক্ষণেই রেহান মাঝ থেকে ফোড়ন কেটে বলে ওঠে,
“ আই থিংক, এটা অনিক ভালো বলতে পারবে।”
হকচকিয়ে ওঠে অনিক। তাকিয়ে দেখে একযোগে কয়েক জোড়া শক্ত চাহনি ইতোমধ্যেই তার পানে নিবদ্ধ। ছেলেটা ভয়ে ভয়ে শুষ্ক ঢোক গিললো পরপর। পরমুহূর্তেই বুকের ওপর হাত রেখে বললো,
“ আসতাগফিরুল্লাহ! এসব কি বলো তুমি রেহান ভাই? আমি কিভাবে জানবো ভাইয়া কোথায়?”
কবির সাহেব গম্ভীর মুখে সেখান থেকে পা বাড়ালেন ছাঁদের দিকে। বাকিরা আর পা বাড়ালোনা সেদিকে। এমনিতেই কি কম লজ্জা পেয়েছে মানুষগুলো? যে এখন যেচে পড়ে আরেকটু লজ্জা পেতে হবে তাদের!
এদিকে প্রায় মিনিট দুয়েকের মাঝেই কবির সাহেব এসে উপস্থিত হলেন চিলেকোঠার ঘরের সামনে। দরজা থেকে একহাত দূরে দাড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে গলা উঁচিয়ে বললেন,

“ রোদ? এই রোদ? বেরিয়ে এসো তারাতাড়ি!”
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রৌদ্র, অরিন। এরই মধ্যে বাইরে থেকে ভেসে আসা চেচামেচিতে ঘুমটা কেমন হালকা হয়ে এলো রৌদ্রের।চোখেমুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ নিয়ে ছেলেটা শুয়ে থেকেই ফিরলো দরজার পানে।এই লোকটার কি তাকে ডিস্টার্ব করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই? সে ঘুমিয়েছেই বা কখন? সময় দেখলে হয়তো দেখা যাবে ঘন্টা খানেক আগেই ক্লান্ত দেহটা নিয়ে কোনমতে চোখদুটো মুদেছে সে।এরইমধ্যে এহেন ডিস্টার্বেন্স! এ যেন সরাসরি থার্ড ক্লাস কর্মকাণ্ড! রৌদ্র খানিক নড়েচড়ে উঠে বসলো।পাশেই অরিনটা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।গত রাত থেকে মেয়েটার ওপর দিয়ে যা দখল গিয়েছে না! ক্লান্ত হয়ে বেঘোরে ঘুমানোটা নিতান্তই স্বাভাবিক বিষয়! রৌদ্র কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার নিষ্পাপ মুখের দিকে। অরিনের ঠোঁট দু’টোর বেশ খানিকটা জায়গা এখনো স্পষ্ট কালচে হয়ে আছে। গলার কাছটাতেও কেমন রক্ত জমে গিয়েছে কয়েক জায়গায়। রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো একটুখানি।পরক্ষণেই হালকা নিচু হয়ে মেয়েটার কপাল বরাবর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো আলগোছে। অরিন নড়েচড়ে উঠে খানিকটা। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মেয়েটার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে আওরায়,

“ হেই বউজান! সকাল হয়নি হানি।ঘুমাও তুমি!”
ঘুমন্ত অরিন সামান্য নড়েচড়ে আবারও তলিয়ে গেলো ঘুমের দেশে। রৌদ্র তখন বিছানা ছেড়ে নেমে আসে। বাইরে থেকে এই বুঝি দরজাটা ভেঙে ফেলবেন কবির সাহেব।রৌদ্র বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফ্লোরে পড়ে থাকা পাতলা ফিনফিনে শার্টটা গায়ে জড়িয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। তারপর এগিয়ে এসে দরজাটা হালকা খুলে দিয়ে বেরিয়ে আসে রুম ছেড়ে। পরনের ট্রাউজারের পকেটে দু’হাত গুঁজে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,
“ কি সমস্যা? সকাল সকাল এতো তোড়জোড় কিসের?”
কবির সাহেব তেতে উঠলেন। গলা উঁচিয়ে বলে বসলেন,
“ তুমি জানোনা কেনো তোড়জোড় চলছে? কি শুরু করলে তু…”
বাকিটা বলার আগেই রৌদ্র কেমন গম্ভীর কণ্ঠেই বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
“ আস্তে কথা বলো।আমার বউজান ঘুমাচ্ছে।”

থমকে গেলেন কবির সাহেব। এখন কি বলবেন তিনি? ছেলেকে শাসন করবেন? কিন্তু কি নিয়ে? সঠিক কোনো কারণ না পাওয়ায় খানিকটা থতমত খেয়ে গেলেন বেচারা।তিনি কিছুটা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বললেন,
“ খাট অর্ডার করেছো?”
রৌদ্র গা-ছাড়া ভাব নিয়ে প্রতিত্তোরে বললো,
“ হ্যা করেছি।কই এসেছে নাকি?”
কবির সাহেব চোয়াল শক্ত করলেন।দাঁতে দাঁত চেপে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,
“ ও একটা বাচ্চা মেয়ে বেয়াদব! ওর দিকটাও একটু ভাবা উচিত তোমার।”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো।সামান্য কাঁধ ঝাঁকিয়ে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললো,
“ ভুলে যেওনা আব্বু! আমার বউজানের একটা পার্সোনাল ডাক্তার সাহেব আছে। তাকে অসুস্থ করলেও আমি করবো,আবার সুস্থ করলেও আমি করবো।সো টেনশন নিও না।”

বিস্ফোরিত নেত্রে তাকালেন কবির সাহেব। এই বুঝি চোখদুটো দিয়ে ঝলসে দিবেন ছেলেকে।অথচ রৌদ্রকে দেখো! সে কেমন ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কবির সাহেব অতিষ্ঠ হয়ে বললেন,
“ মুখে লাগাম টানো নির্লজ্জ ছেলে। নাহলে এই বয়সে এসে গাল বরাবর চড় খেলে খুব একটা ভালো দেখাবেনা নিশ্চয়ই!”
রৌদ্র কথাটাকে একপ্রকার বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে লম্বা একটা হামি টানলো। মুখের কাছে হাত এনে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
“ আর কিছু বলবে? না মানে… আমি একটু ঘুমাতাম আরকি!”

কবির সাহেব ফুঁসছেন রীতিমতো। কোমরের পেছনে বেঁধে রাখা হাতদুটোও শক্ত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তিনি বুঝে গেলেন ছেলে তার লাগামহীন হয়ে গেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে তিনি দাঁত কিড়মিড় করতে করতে প্রস্থান ঘটালেন সেখান থেকে। এদিকে তিনি চলে যেতেই মুচকি হাসলো রৌদ্র। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ফের চলে গেলো চিলেকোঠার ঘরে। দরজা লাগিয়ে এগিয়ে গেলো বিছানায়। পাতলা ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে ঢুকেই ঘুমন্ত অরিনকে ধীরেসুস্থে টেনে নিলো নিজের বুকের মাঝে। ঘুমন্ত অরিন ঘুম জড়ানো কন্ঠেই অস্ফুটে বলে ওঠে,
“ উমমমম!”
রৌদ্র মুচকি হাসলো। মেয়েটার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেও বলে ওঠলো,
“ উমমমমম,টু!”

সকাল গড়িয়ে বেলা নামবার যোগাড়। অরিনের ঘুম এতক্ষণে বুঝি ভাঙলো। সে খানিক নড়চড় করতেই টের পেলো তার ক্ষুদ্র দেহটা কারো শক্ত পোক্ত হাতের বাঁধনে আঁটকে আছে। অরিন ঘুম জড়ানো চোখেই পিটপিট করে চাইলো। সম্মুখে ঘুমন্ত রৌদ্রের মুখটা দেখতেই ঠোঁটের কোণে নিজ অজান্তেই ফুটে ওঠলো মিষ্টি হাসির রেশ। অরিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত মানুষটার দিকে। কে বলবে এতো নিষ্পাপ মুখশ্রীর লোকটা নাকি তার কাছে এলেই এতোটা বেপরোয়া হয়ে পড়ে! অরিন মুচকি হেসে রৌদ্রের গালের ওপর আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।নাক বরাবরও একই কাজ করতে ভুললোনা সে। পরক্ষণেই রৌদ্রের বাঁধন থেকে সরে আসতে নিলেই ঘুমন্ত রৌদ্র অরিনকে চেপে ধরে আরেকটু।ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

“ ঠোঁটের ওপর কি সিল মারা নাকি রে বউজান? সেখানে দিলে না যে!”
তড়িৎ চমকে উঠে অরিন।ভাবনায় পড়ে যায় লোকটাকে নিয়ে। সে তাহলে এতক্ষণ জেগেই ছিলো? আর অরিন কি-না ভেবে বসেছিলো কতকিছু! রৌদ্র ফের বললো,
“ একটা বেড-কিস দাও বউজান!”
অরিন মুগ্ধ হাসলো। খুব সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হচ্ছে একটা গুরুগম্ভীর পুরুষের ঘুম জড়ানো কন্ঠ। যা শুনলে প্রেমে বিপুল অবিশ্বাসী মানুষটাও হয়তো প্রেমে পড়তে বাধ্য! অরিন আরেকবার নতুন করে প্রেমে পড়লো তার শখের পুরুষের। এগিয়ে এসে নিজে থেকে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো মানুষটার। এখন থেকে এই সুদর্শন যুবককে স্পর্শ করতে আবার টেক্স লাগবে নাকি তার? যখন-তখন স্পর্শ করবে, কে আটকাবে তাকে শুনি?

ঘরে নতুন খাট দেখেই চমকে উঠে অরিন।সকল ইতস্ততা ছাপিয়ে সে তড়িৎ পেছনে ফিরে রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করে,
“ এটা কোত্থেকে এলো?”
রৌদ্র দরজার সাথে গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’হাত পকেটে গুঁজে রাখা। অনিমেষ চোখজোড়া মেয়েটার দিকেই নিবদ্ধ। সে খানিক সময় নিয়ে দুষ্ট হেসে বললো,
“ তোমার ডাক্তার সাহেব সব দিক থেকেই ফাস্ট হানি! তাছাড়া রোম্যান্সের ব্যাপারে কোনো চান্স নিবোনা আমি!”
অরিন আর কিছু বললোনা।সর্বাঙ্গ জুড়ে ব্যাথার দরুন এমনিতেই যাচ্ছে তাই অবস্থা তার।তারওপর রৌদ্রের ওমন মোহগ্রস্ত দৃষ্টি!তা যেন মেয়েটার ইতস্ততা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ।অরিন চুপচাপ পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে গেলো কাবার্ডের কাছে।সেখান থেকে তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই হুট করেই থমকে গেলো রৌদ্রের দুষ্ট কন্ঠে। রৌদ্র ঘরে পায়চারি চালাচ্ছে আর দুষ্ট কন্ঠে সুর তুলে গাইছে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬৯

“ Raat ka nasha abhi… aankh se gaya nahin..
Tera nashila badan baahon ne chhoda nahin..
Aankhen to kholi magar sapna woh toda nahin..
Haan wohi wohi…”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৭১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here