সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ২৮
জাওয়াদ জামী
কুহু তাহমিদের পাশে বসে আছে। ওর অস্বস্তি লাগছে। তাহমিদ বাদাম কিনেছে। দু’জনের মাঝখানে বর্ডারের কাজ করছে বাদামের প্যাকেটটা। একা একা তাহমিদের সঙ্গে বসে আছে, কথাটা ভাবতেই ওর কেমন লাগছে।
” বাদামগুলো কি জাদুঘরে রাখার ব্যবস্থা করব ? ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহু ভড়কে গেল। লোকটা ওকে খোঁচা মারা কথাই বলতে পারেনা। কিন্তু কেন ওকে খোঁচা মেরে কথা বলে সেটা বুঝতে পারেনা কুহু। পাছে আবারও খোঁচা মারে, সেই ভয়ে কুহু প্যাকেট থেকে বাদাম নিল।
” শুনলাম আজকাল বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছ। তোমারও বন্ধু জুটেছে! আমি তো ভেবেছিলাম, তুমি বাসার লোকজন ব্যাতীত কারও সঙ্গে কথাই বলোনা। ”
তাহমিদের কথা শুনে ওর দিকে চমকে তাকাল কুহু। কুহুর রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা সে জানলো কিভাবে!
তাহমিদ সামনে তাকিয়ে আছে। তবে ও কুহুর উত্তরের অপেক্ষা করছে।
” এক ফ্রেণ্ডের বার্থ ডে ছিল। তাই সে সবাইকে ট্রিট দিয়েছিল। আমি যেতে চাইনি। কিন্তু ওরা খুব করে রিকুয়েষ্ট করল। তাই যেতে হয়েছিল। ” আমতা-আমতা করে জবাব দিল কুহু।
” মাঝেমধ্যে রিফ্রেশমেন্টের জন্য এদিক-ওদিক যাওয়া যেতেই পারে। তবে সেটা শুধু মেয়েদের সঙ্গে। ছেলেদের সঙ্গে নয়। তোমার আশেপাশে ‘পুরুষ ‘ নট এ্যালাউড। ”
তাহমিদের কথায় আবারও চমকায় কুহু। ‘ পুরুষ ‘ শব্দটা জোর দিয়ে বলেছে সে। কুহু এবার ভালোভাবে তাকাল তাহমিদের দিকে। তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাহমিদের ভাবলেশহীন মুখ দেখে কুহুকে নিরাশ হতে হল। এই ছেলে চাইছে টা কি?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” এত অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আর না বোঝার মত কোন কথাই আমি বলিনি। কখনোই যেন না দেখি, বা না শুনি তুমি কোন ছেলের সঙ্গে মিশছ , বা কথা বলছ। ঐটা আমার অধিকার। নিজের অধিকার অন্য কাউকে দেয়ার মত বোকা আমি নই। ”
” জ্বি ! আপনার অধিকার মানে? ” কুহুর বুক ধুকপুক করছে।
” মানে সিম্পল। তুমি শুধু আমার। মানে আমার আছ, আমার হবে। ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহুর শরীর কাঁপছে। ওর ভয় হচ্ছে। বড়মা যদি জানতে পারে, তবে নিশ্চয়ই সে বিষয়টা সহজভাবে নেবেনা। আর মামীরা? তারা যদি জানেন? তারা জানার সাথে সাথেই হয়তো তাদের বাড়ির পাট চুকাতে হবে কুহুকে। কি করবে এখন কুহু?
” কি এভাবে তব্দা খেয়ে বসে আছ কেন? আছ নাকি জ্ঞান হারিয়েছ? জ্ঞান থাকলে সাড়া দাও। নয়তো আমাকে আবার পানি আনতে যেতে হবে। ”
এবার সত্যিই জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো কুহু। এই ছেলেটা বলে কি? সে কি চায় কুহু সত্যিই জ্ঞান হারাক?
” এই মেয়ে, কথা বলছনা যে ? আনানের সামনে থাকলে তো মুখে কথার ফুলঝুরি ছোটে। ভাইকে বাঁচানোর জন্য কত ট্রিকস খাটাও। আর এদিকে আমার সামান্য কথা শুনেই বোবা হয়ে গেলে। ” কুহুর দিক থেকে সাড়া না পেয়ে আবারও বলল তাহমিদ।
” বাসায় চলুন। আর কখনোই এমন কথা বলবেন না আমাকে। মামীরা জানলে বিষয়টা ভালো দেখাবেনা। ” অনেকক্ষণ পর কথা বলল কুহু।
” মুখ খুলেই বোম ফাটালে! এটা শুধু তুমিই করতে পার। মামীরা জানলে কি হবে? তারা তো আর তোমাকে বিয়ে করবেনা ? বিয়ে করব আমি । তাই আমাদের দু’জনের মাঝখানে তাদেরকে না টানাই ভালো। তাদের কাজ আমার বউকে বরন করা, আমার বউকে সংসারের রীতিনীতি শেখানো, আমার বাচ্চাদের মানুষ করা। এবং সেই কাজগুলো তারা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই করতে পারবে। তাই তাদেরকে সেই সেক্টরেই থাকতে দাও। এই সেক্টরে নিয়ে এসোনা। তুমি ভাবার জন্য দুইদিন সময় পাচ্ছ। দুই দিনের মধ্যে আমাকে উত্তর দেবে। এবং উত্তরটা অবশ্যই পজিটিভ হওয়া চাই। ”
এবার সত্যিই কুহু অজ্ঞান হয়ে যাবে। ওর পাশে বসা মানুষটা যে সহজ-সরল নয় এটা জানতে ওর বাকি নেই। ঠান্ডা মেজাজে হুমকি দিতে পারদর্শী সে। তবে এখন কুহুকে ভয় পেলে চলবেনা। ওকে সাহসী হতে হবে। সেটা হতে চেষ্টাও করল কুহু। সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” আর যদি উত্তরটা নেগেটিভ হয়, তবে? ”
” তবে আর কি? দুইদিন পর থেকেই আমার রুমে, আমার সঙ্গে রাত কাটাতে হবে তোমার। ঠিক এই কারনেই আমি পজিটিভ উত্তর চেয়েছি। কারন কয়েকমাসের মধ্যেই ইউকে চলে যেতে হবে আমাকে। বউ ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকতে পারবনা আমি। ”
” আজেবাজে কথা বলবেননা। আমার শুনতে ভালো লাগেনা। আমাকে অনেক পথ যেতে হবে। ছোট ভাইকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করতে হবে। আরও অনেক কিছুই করার আছে আমার। ”
” তোমাকে আমি অশ্লীল কিছু বলেছি? আমি শুধু আমার বউয়ের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করেছি। এটাকে তোমার আজেবাজে কথা মনে হল! জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি , তোমার মত রসকষহীন কাঠখোট্টা মেয়ে একটাও দেখিনি। বাই দ্য ওয়ে, তোমার যা যা করার তুমি করবে। কেউ তোমাকে বাঁধা দেবেনা। আমার পরিবারের মানুষজন এতটাও খারাপ নয়। তারা আমার বউয়ের স্বপ্ন পূরনে বাঁধা না হয়ে, তার স্বপ্ন পূরনের সারথি হবে। ”
” বাসায় চলুন। নয়তো আমি একাই চলে যাব। ” উঠে দাঁড়াল কুহু।
” এক পা-ও নড়ে দেখ। প্রয়োজনে তোমার পা ভেঙে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাব। ”
তাহমিদের হুমকিতে কাজ হলো। আবারও বসে পরল মেয়েটা। কাঁদোকাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করল,
” এমন করছেন কেন আপনি? বাসায় চলুন না। ”
” বাসায় গেলেও কিন্তু আমাকেই দেখবে সর্বত্র। সেখানে সবার সামনে কিছুই বলতে পারবেনা। নীরবে আমার সব কথা শুনতে হবে। ”
” তাহমিদ , তুমি এখানে? অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। ” জায়রা দাঁড়িয়ে আছে তাহমিদের পাশে।
জায়রাকে দেখে বিরক্তিতে ছেয়ে গেল তাহমিদের মন। এমন সময় এই মেয়েকেই আসতে হলো? ওর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা তাহমিদের।
তাহমিদকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবারও কথা। বলল জায়রা।
” কথা বলছনা যে? এই মেয়েটা কে? বাই এ্যানি চান্স, এই মেয়েটাই কি তোমার হার্টবিট! তোমার বেঁচে থাকার কারন! যার জন্য তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে? ”
এবার ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়াল তাহমিদ। মুখোমুখি হলো জায়রার।
” ইয়াহ্। শি’ জ মাই হার্টবিট। আর কিছু জানতে চাও তুমি? ”
” নাহ্। সে শখ মিটে গেছে। তোমার রুচির বিপর্যয় দেখে আমি অবাক হচ্ছি , তাহমিদ! এই মেয়ের জন্য তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে! কি আছে এই মেয়ের মধ্যে? তোমার সঙ্গে এই মেয়ে যায় ? কোথায় তুমি আর কোথায় এই মেয়ে! এর রূপের বহর দেখে আমি হতাশ। আ.. ”
জায়রা কথা শেষ করতেই পারলনা। তার আগেই ওর গালে সপাটে থাপ্পড় বসিয়ে দিল তাহমিদ।
” আগেবারই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম। আমার লাইফ নিয়ে, আমার পছন্দ নিয়ে অন্য কেউ কথা বলুক সেটা আমার পছন্দ নয়। তুমি কখনো চিন্তা করে দেখছ, আমি তাহমিদ তোমাকে পছন্দ করিনা, কিন্তু অন্য একজনকে ঠিকই নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছি, কেন ? নিশ্চয়ই তার মধ্যে এমন কিছু আমি দেখেছি, যেটা তোমার মধ্যে নেই। তুমি অনেক চেষ্টা করেও তোমার দিকে আমাকে টানতে পারোনি, এটা তোমার ব্যর্থতা। তাহমিদকে আকর্ষন করার ক্ষমতাই তোমার নেই। চেষ্টা তুমি করেছিলে। কিন্তু এই মেয়েটা সেই চেষ্টাই করেনি। ওর এসবের প্রয়োজন নেই। ও জানে, কাউকে আকর্ষন করতে রূপ কিংবা শরীরের দরকার হয়না। এসবের জন্য গুন থাকতে হয়। যেগুলো তোমার মধ্যে নেই। তোমার উত্তর পেয়েছ? এবার যেতে পার। অযথাই আমার মুড খারাপ করে দিলে তুমি। ভবিষ্যতে আমার সামনে আর এসোনা। কারন যে আমার ভালোবাসার মানুষকে অপমান করে তাকে আমি কিছুতেই কাছের মানুষ ভাবতে পারিনা। আমার ঘৃণার খাতায় তার নাম লিখে রাখি। আর যাকে আমি ঘৃণা করি, তাকে মন দিয়েই ঘৃণা করি ৷ আমার ভালোবাসার মত আমার ঘৃণাও সলিড। ”
পার্ক ভর্তি মানুষের সামনে থাপ্পড় খেয়ে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে জায়রার। কয়েকজন বয়স্ক মানুষ ওর দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ হাসছে । থাপ্পড়ের জবাব দিতে ইচ্ছে করলেও তাহমিদের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছেটা মরে গেল। তাহমিদ রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিয়ে আগুন ঝড়ছে।
” চল, এখানে থাকলেই এই বেয়াদব মেয়ের মুখ দেখতে হবে। ” কুহুর হাত ধরে বলল তাহমিদ।
কুহু কোন কিছু না বলে তাহমিদের সঙ্গে পা মেলাল। আজকে ঐ মেয়েটার কথায় একটুও কষ্ট পায়নি। এর আগেও নিজের চেহারা নিয়ে অনেক কথাই শুনেছে। কিন্তু দুই-একজন ব্যতীত কথাগুলোর প্রতিবাদ কেউই করেনি। আজকে তাহমিদ যেভাবে প্রতিবাদ করেছে , এভাবে তো কেউই কখনোই বলেনি। কুহু হাঁটতে হাঁটতে তাহমিদের দিকে তাকায়। তার দৃঢ় চোয়াল আর দৃঢ়ভাবে হাঁটার ভঙ্গি কুহুর কঠিন হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
” দৃষ্টি , তুই কোথায় থাকিস বলতো? আমার জন্য একটু চা করে নিয়ে আয়। মাথাটা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। ”
” এক্ষুণি আনছি , বড়মা। তুমি রুমে গিয়ে শুয়ে থাক। আমি তোমার চুলে তেল দিয়ে দেব। সাথে একটু ম্যাসাজও করে দেব। দেখবে তোমার মাথাব্যথা এক চুটকিতে সেরে গেছে। ”
” তাড়াতাড়ি যা। ”
দৃষ্টি রান্নাঘরে গেল।
” এসেছিস তোরা? এত সময় লাগে বাসা থেকে কাগজপত্র আনতে? ”
কুহু ড্রয়িংরুমে ঢুকেই বড়মাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। বড়মার কথার উত্তর দিতে পারলনা।
” আর বলোনা ফুপু , এই মেয়েটা কাগজগুলো কোথায় রেখেছে মনেই করতে পারলনা। আমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখে সে বাসায় গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। একঘন্টা পরে বাহিরে এসে বলে, কাগজগুলো পায়নি। ” রাখী আক্তারের পাশে বসে অবলীলায় মিথ্যা বলল তাহমিদ।
” এত মনভোলা হলে চলে , কুহু? একটু চালাকচতুর হ বুঝলি? ”
কুহু বড়মার কথায় মাথা নেড়ে সায় জানায়।
” তোমার কি হয়েছে , ফুপু? শরীর খারাপ লাগছে? ”
” মাথাব্যথা করছে , বাপ। দৃষ্টিকে পাঠিয়েছি চা করতে। যদি ব্যথাটা একটু কমে। ”
” আমি ঔষধ দিচ্ছি। তুমি বস, আমি ঔষধ নিয়ে আসছি। বড়মা, আমাকে কফি দিওতো। ” তাহমিদ রুমে চলে গেল।
” বড়মা, আমি রুমে যাই ? ”
” যা। ”
” কোকিলা, তোর পাশে সানাইয়ের পোঁ নেই যে! ”
আনানের কথা শুনে কুহু ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
” সানাইয়ের পোঁ কি, ভাইয়া? ”
” তোর বন্ধুর কথা বলছি, গাধী। সেই চিড়িয়া কই? আজকে ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে পারিনি বলে পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে। ”
কুহু এবার বুঝতে পারল আনান ভাইয়া কার কথা বলছে। ও হাসল।
” সিক্তা রুমে গেছে। এক্ষুনি এসে যাবে। ও আসলে মন খুলে ঝগড়া করো। ”
” কার সঙ্গে ঝগড়া করবে শুনি? আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসলে তোর ভাইয়ের খবর আছে আগেই বলে দিলাম। ” কুহু বেলকনিতে এসেই কুহুর কথা শুনতে পেয়ে বলল।
” কোকিলা, আমাকে চা খাওয়াতে পারবি, বইনা? সকাল থেকে চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। কিন্তু ক্লাসের ঠ্যালায় এখনো খেতে পারিনি। ”
” তুমি একটু অপেক্ষা কর, আমি চা নিয়ে আসছি। সিক্তা, তুই চা খাবি? ”
” তুই চা বানালে খেতে পারি। তোর হাতের চা ভিষণ মজার। পারলে ভাইয়ার জন্যও করিস। ”
” হুঁ। ”
” এভাবে বসে না থেকে কথা বললেই তো হয়। একজনের কথা না শুনলে আমার ভালো লাগেনা। ” আঁড়চোখে সিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল আনান।
” তোমার সঙ্গে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে। আমাকে খোঁচা মারা বন্ধ না করলে তোমার সঙ্গে কথা বলবনা আমি। ” সিক্তার কথা শেষ হতেই ওর কোলের উপরে ঝুপ করে কিছু একটা পরল। সিক্তা চমকে জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখল বকুল ফুলের মালা।
” একজনের জন্য এনেছি। খোঁপায় দিলে ভালো লাগবে। আরও কয়েকটা আছে। চাইলে দিতে পারি। ”
ফুলের মালাটা দেখে সিক্তার ঠোঁটের কোনে ফুটল সুখের হাসি।
” সত্যিই আমার জন্য এনেছ! অন্নেক সুন্দর হয়েছে। আরগুলো কই? দাও ওগুলো? ”
” এখানে আছে নাকি! রুমে আছে। ”
” নিয়ে এস তাড়াতাড়ি। ”
” আনতে পারি, যদি খোঁপায় পরাতে দিস। খুব ইচ্ছে করছে। ” আনান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিক্তার দিকে।
আনানের কথা শুনে সিক্তা ওর দিকে তাকায়। কখনোই আনান ওর সঙ্গে এভাবে কথা বলেনি। আজ তার কি হয়েছে?
” কেন? আমার খোঁপায় কেন তুমি মালা পরাবে? ”
” কেন পরায় জানিসনা? অবশ্য তার আগে অধিকার লাগে। তুই অধিকার দিলেই , পরাতে পারি। দিবি অধিকার? প্রমিজ করছি কখনোই তোর সঙ্গে ঝগড়া করবনা। ”
আনানের গলায় কিছু একটা ছিল, যা সিক্তার হৃদয় ছুঁয়ে দিল। সিক্তা চাইলেও রাগতে পারলনা।
” তোমার কথা বিশ্বাস হয়না। তুমি আগে অনেকবারই বলেছ, ঝগড়া করবেনা৷ কিন্তু দুইদিন পর ঠিকই ভুলে যাও। ”
” এবার আর ভুল হবেনা। সেদিন তোকে কাঁদতে দেখে আমার বুকের পাঁজর ভেঙে যাচ্ছিল। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি, তোর চোখের পানি আমি কখনোই দেখতে চাইনা। তোর চোখের পানির প্রতিটি ফোঁটা আমার বুকের ওপর ভারী পাথরের ন্যায় আছড়ে পরে। তোর প্রতিটি অশ্রুবিন্দুতে লিখা আমার মরন। আর নিজের মরন আমি যেচে আনতে যাবোনা কিছুতেই। ”
সিক্তা অবাক হয়ে তাকাল আনানের দিকে। এ কি সেই আনান ভাইয়া, যে সিক্তাকে রাগানোর জন্য কতকিছুই করত? আজ কেন তার গলায় অনুকম্পা? কেন তার চোখে অনুনয়? কেন?
” দিবি আমাকে অধিকার? আমি বাঁচতে চাই সিক্তা, তোকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হবি তুই? ” আবারও বলল আনান।
আনানের কথা শুনে সিক্তা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আনান হকচকিয়ে গেল সিক্তাকে কাঁদতে দেখে। ও বুঝতে পারলনা, কি এমন বলেছে যে সিক্তা কাঁদতে শুরু করল?
সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ২৭
” এভাবে ভ্যাবলার মত বসে আছ কেন? মালাগুলো এনে খোঁপায় পরিয়ে দাও। এবার থেকে প্রতিদিনই আমার জন্য ফুলের মালা আনতে হবে। আনবে তো? ”
সিক্তার কথা শুনে খুশিতে আনানের দম বন্ধ হয়ে আসছে। ও মাথা নেড়ে সিক্তাকে জানিয়ে দিল, ওর জন্য প্রতিদিন মালা আনবে। এরপর এক দৌড়ে রুমে গেল মালা আনতে।