সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯
neelarahman

পরদিন সকাল নুর পিটপিট করে চোখ খুলল ।খুলে দেখল পাশে বসে আছে নওরিন আফরোজ আর নূরের জন্য খাবার রেডি করছে সামিহা বেগম ।
খাটের ও পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান ।রিমা দাঁড়িয়ে আছে পায়ের কাছে।
সাইমন রুমে নেই সাদাফ ও রুমে নেই।
সাইমনের জরুরী একটা ক্লাস আছে তাই যেতে হয়েছে আর সাদাফের ভীষণ জরুরি মিটিং আছে তাই আজ ফজলুর রহমান আর হুমায়ূন রহমান যাইনি সাদাফকে পাঠিয়েছে।
সাদাফ যেতে চাচ্ছিল না আমতা আমতা করছিল কিন্তু সাদাফ না গেলে হবে না যেহেতু সিইও হয়েছে কোম্পানির তাই সাদাফ কেই যেতে হবে ।

নূরের শরীর ভীষণ ব্যথা এবং দুর্বল লাগছে ।নওরিন আফরোজ সাহায্য করলো নুর কে একটু উঠে বসার জন্য ওষুধ খেতে হবে তাই। নীলা রহমান লেখিকা
নরিন আফরোজ সামিহার দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় আর ওষুধগুলোর সাথে করে নিয়ে আয় ।একদিনে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার পুরো কাহিল হয়ে গিয়েছে ।এমন কিভাবে জ্বর বাধালি বলতো ?”
হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে একটু কেঁশে দিলেন।
মনে মনে ভাবলেন ,”কি করে যে জ্বর বাধালো এটা যদি জানত সবাই তাহলে সাদাফ এর কি অবস্থা হবে সবার সামনে !তাই তিনি চুপ করে থাকায় শ্রেয় মনে করলেন উনি যে রাতে জানতেন নূরের এই অবস্থা কাউকে বললেন না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হুমায়ূন রহমানের ফোনে হঠাৎ টুংটাং শব্দ হতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো সাদাফ ফোন করেছে ।এই নিয়ে অফিসে যাওয়ার পর থেকে দশ বার ফোন করে ফেলেছে ।
ফোন দিয়ে একই কথা নূরের অবস্থা কেমন ! বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে গেছে হুমায়ুর রহমান।
ফোনটি নিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে একটু দূরে গিয়ে ফোন ধরে বলল ,”কি হয়েছে বারবার ফোন করছিস কেন?”

এপাশ থেকে সাদাফ বলে উঠলো ,”ফোন করছি কেন মানে ?জানো না কেন ফোন করেছি ?নূরের অবস্থা কি এখন ?”
হুমায়ুন রহমান বিরক্ত হয়ে বলল ,” নয় বার ফোন দিয়েছিস এই নিয়ে ১০ বার একই কথা বারবার বলছি অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো তবে দুর্বল এইমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।”
“নতুন খবর জানতে পেলাম ফোন না করলে কি জানতে পারতাম ও এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে ?ওকে ওষুধ খাইয়েছ খাবার খাইয়েছো?”জানতে চাইলো সাদাফ।
“শোন সাদাফ আমি কিন্ত ওর বাবা ঠিক আছে ?আমি ওর খেয়াল রাখব বাড়ির সবাই ওর খেয়াল রাখবে তুই একা পাগল হয়ে যাস না।”বললো হুমায়ূন রহমান।

“সাদা বলল হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি তুমি ওর বাবা সবাই আত্মীয় স্বজন কিন্তু কেউ তো আর আমি না।
যাইহোক জরুরী মিটিংয়ে আছি ভালো করে খোঁজখবর রেখো না হলে কিন্তু আমি মিটিং ছেড়ে চলে আসব বলছি।”
“বাবা মাফ কর তুই মিটিংটা একটু শান্তিতে কর আমি এই যে রুমের ভিতরে ঢুকবো আর সারাদিন রুম থেকে বের হব না ।সারাদিন নিজে ওর খেয়াল রাখবো এবার খুশি ?কি খেয়ে যে তোকে পয়দা করেছিলাম আল্লাই জানে এরকম নি*র্লজ্জ ছেলে আমি কোথাও দেখিনি ।
আমরা আমাদের বাবাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনি আর তুই কিনা নির্ল*জ্জের মত আমাকে বলছিস নূরের খেয়াল রাখতে না হলে তুই চলে আসব
বাবার সাথে নাকি মানুষ এই ভাবে কথা বলে।”
সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের সময় তো তোমরা অনেক সভ্য শান্ত ভদ্র ছিলে আমি আর রিমা তো আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছিলাম।”

কথাটি বলেই সাথে সাথে ফোন কে*টে দিল সাদাফ ।বাবার রিয়েকশন আর দেখার প্রয়োজন মনে করলো না।
এদিকে হুমায়ূন রহমান ফোন হাতে নিয়ে টা*স্কি খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ।ছেলে এইমাত্র কি বলল ?দিন দিন ওর মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।অবশ্য দিন দিন কেন ছোটবেলা থেকেই এরকম ঠোঁট কা*টা স্বভাবের।ছোটবেলাও এরকমই করত শুধু সবার চোখের আড়ালে ।একমাত্র হুমায়ুন রহমান জানে ছেলের আসল রূপ।
দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একদিন শুধু মাথায় হাত রেখে বলেছিল আমি তোর বাবা না আমি তোর বন্ধু ।
মনে যে কোন কথা আছে দুনিয়ার কাউকে বলার প্রয়োজন নেই তোর ।সমস্ত কিছু তুই আমাকে বলবি তোর আসল রূপ তুই আমাকে দেখাবি ।কিন্তু অন্য কারো সাথে কখনো খারাপ কিছু করবি না।
দিনটি যেন কাল হয়ে গেছে হুমায়ূন রহমানের জীবনে ।এরপর থেকে ছেলে এহেন কোনো কথা নেই যা বাবাকে এসে শেয়ার না করে ।মাঝেমধ্যে তো ছি মার্কা নি*র্লজ্জ কথাবার্তা হয়েছে শেয়ার করত।শুনে কাশতে কাশতে ম*রার উপক্রম হতো হুমায়ূন রহমান এর।
অথচ পরিবার সমাজ সবার সামনে কতই সভ্য ভদ্র ছেলে সাদাফ ।একমাত্র হুমায়ুন রহমান জানে কি কি কথা বলতে পারে এই ছেলে।

ওর মা যদি কোনদিনও জানতে পেতো নিজের জন্ম নিয়ে কি ধরনের কথা এই মাত্র বললো তার আদরের ছেলে সাদাফ ল*জ্জায় শেষ হয়ে যেতো।
দুপুরে লাঞ্চ টাইম পার হয়ে গেছে এখনো বাসায় ফিরতে পারেনি সাদাফ।
তবে এর মধ্যে আরো তিনবার ফোন করেছিল হুমায়ূন রহমানকে জানিয়েছে নুর সেই যে খেয়েছে খেয়ে ঘুম দিয়েছে আর ওঠেনি।
এদিকে সায়মন নিজের রুমে ওয়াশরুমে গোসল করছে আর চিন্তা করছে আজকে দুইবার ফোন দিয়েছে বে*য়াদব টাকে বে*য়াদবটা ফোন একবারও রিসিভ করেনি ।করেনি তো করেনি ঘরে একটা কা*জ করে যায়নি বিছানাটা এখনও অগোছালো হয়ে আছে।

এদিকে রিমা এতক্ষণ নূরের সাথে ছিল ।নুর ঘুম থেকে উঠছে না তাই গেল নিজের রুমে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ।গিয়ে দেখল দুইবার মোবাইলে ফোন এসেছে ।শ*য়তান টার ফোন এসেছে ।ভাবল ভালোই হয়েছে ফোনের কাছে ছিলো না থাকলেও ধরতো না ।ফোনটা রেখে রিমা গেল গোসল করতে।
ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেই হঠাৎ গতকালের কথা মনে পড়ে গেল ঠোঁটে একটি আঙ্গুল দিয়ে বুলাতে বুলাতে ভাবতে লাগলো গতকালকে দৃশ্য সারা শরীর শি*হরিত হলো রিমার।
সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল রিমা মনে মনে রাগ করলো ভীষণ সাইমনের উপরে কেন এরকম করল কখনো ভালোবাসিতো বলেনি শুনেছি গার্লফ্রেন্ডও আছে এখন অস্বীকার করলে কি নুর তো বলেই দিয়েছে গার্লফ্রেন্ড আছে বিয়ে করবে।

রা*গে শা*ওয়ার অন করে গোসল শেষ করল রিমা। করবে না আর কিছু এই অ*সভ্য লোকটার জন্য ।কোন কা*জও করে দিবে না ।কথাও বলবে না ।মনে মনে ঠিক করে ফেলল রিমা।
সাইমন রুম থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়া করে নিচে নামবে ঠিক এমন সময় সিঁড়িতে ধা*ক্কা খেলো রিমার সাথে ।রিমা পড়ে যাবে তার আগে সায়মন হাত ধরে ফেলল। রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো গরম করে ফেললো।
রিমা: চোখ দুটো কি টিউব লাইট হয়ে গেছে দিনের বেলাও কি চোখে দেখিস না?
সাইমন অবাক হয়ে গেল রিমার কথা শুনে।”দিন দিন এই মেয়ের অবনতি হচ্ছে কত বড় সাহস কাল তো রুমের ভিতর তুই করে বলেছে মেনে নিলাম আজকে জনসম্মুখে অর্থাৎ রুমের বাইরে তুই করে বলছে ?”
সায়মন: তুই কি দিন দিন বেয়া*দ্দব হচ্ছিস বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তুই কি জানিস না?
রিমা: তুই কিসের বা*লের বড় ভাইরে ?রুমে এসে যখন চু*ম্মাচা*টি করিস তখন তুই বড় ভাই থাকিস না ?
কথাটি বলেই রিমা সায়মনের দিকে না তাকিয়ে নিচে চলে গেল ।

সাইমন অবাক হয়ে গেল ।মনে মনে ভাবলো,”একটা চুম*মার জন্য আজকে আমি আমার সম্মান হারিয়ে ফেললাম ?তুমি থেকে তুই ডাইরেক্ট? ও সরি একটা না আসলে দুইটা খেয়েছিলাম।”
সাইমন নিজের হাত দিয়ে নিজে ঠোঁটে দুটো চা*পড় মে*রে বলল ,”আর লোক খুঁজে পাসনি এই ডা*কিনীকে তুই চু*মু খেতে গিয়েছিলি ।এই মেয়ে তোর এখন যেখানে পাবে সেখানে মান-সম্মানের টায়ার পাংচার করে দিবে।”
এদিকে সাদাফ কোনমতে মিটিংটা শেষ করে সাথে সাথে মোবাইল ফোন পকেটে ঢুকিয়ে অফিস থেকে বের হবে ।সাথে সাথে একবার মনে হল অনেকক্ষন হলো নুর কে দেখে না। নুরের ছবিটা একটু দেখার জন্য সাথে সাথে ড্রয়ার থেকে নূরের ছবিটা বের করে একটু দেখলো ।দেখে বুকের সাথে চে*পে ধরে রাতের কথা মনে করতে লাগলো ।
কিভাবে নূর ওকে জড়িয়ে ধরে ভালবাসার কথা বলছিল ওকে চু*মুতে চু*মুতে ভরিয়ে দিচ্ছিল ।ভালবাসার পরশ দিচ্ছিল নূর যদি সজ্ঞানে থাকত তাহলে কি কখনো এরকম করত বোকা মেয়েটা?
মনে মনে ঠিক করল সাদাফ এখন আর নূরের মুখ থেকে জোর করে শোনার জন্য চেষ্টা করবে না যা জানার ছিল তা জেনে গিয়েছে ।

এখন শুধু বিয়ে করার জন্য অপেক্ষা তবে এই বিয়ে প্রস্তাব নুর নিজে দিবে তার প্রিয় বাপ ও চাচাকে মনে মনে ঠিক করল সাদাফ ।এবং মুচকি মুচকি হাসলো বলল ,”তুই নিজে যেয়ে বিয়ের কথা বলবি যে সাদাফ ভাইকে তুই চাস।
আমার বোকা নুর তোকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, একবার শুধু তুই বল তুই আমাকে ভালোবাসিস সবার সামনে তোর জন্য আমি পৃথিবীর সব কিছু করতে পারবো।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৮

আমি যদি গিয়ে বলি তোর বাবা চাচাকে আমি তোকে ভালবাসি বিয়ে করতে চাই বলবে আমার মেয়ে ছোট্ট আমার মেয়ে কিছুই বুঝে না ।আমি তোর মাথা খেয়েছি।অথচ মাথা খেয়েছিস তুই আমার।তাই ছোট্ট মেয়ের মুখ ফুটে বলতে হবে সে সাদাফকে স্বামী হিসেবে চায়।
বাকি সব কিছু দেখার দায়িত্ব আমার।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here