সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৯
neelarahman
সাদাফ ডান হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে নূরের কপালের চুলগুলি একটু একটু করে কপাল থেকে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিল।
নুরের শ্বাস-প্রশ্বাস যেন আরও দ্রুত হয়ে গেল সাদাফের এই অল্প একটু স্পর্শে ।সাদাফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপরে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,”এই অল্প একটু স্পর্শে এরকম কেঁপে উঠছিস নূর ?তুই যদি বুঝতে পারতি এই মুহূর্তে আমার কি ইচ্ছে করছে তাহলে হয়তো তোর ভিতরে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যেত।”
নূরের শ্বাস-প্রশ্বাস এতটাই দ্রুত হয়েছে যে সাদা ফুলের বুকে উঠানামা পর্যন্ত স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে সাদাফের যেন দৃষ্টিতে আরো ঘর লেগে যাচ্ছে কেমন নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে ডান হাত দিয়ে ধীরে ধীরে নামিয়ে সাদাফ নূরের কোমর ধীরে ধীরে হালকা টানে নিজের একদম কাছাকাছি মিশিয়ে নূরকে বলল ,”কেন তুই বারবার এসে আমার ভিতরে এই অন্য একটা আমিকে জাগিয়ে দিস নূর ?তুই কি জানিস আমারে অন্য আমি টা কতটা ভ*য়ঙ্কর সহ্য করতে পারবি না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদাফের উষ্ণ গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে নূরের কপালে গালে সব জায়গায় ।নূর যেনো আর নিজের মধ্যে নেই। ভয়ে কি শিহরনে নাকি অন্য কোন অজানা অনুভবে নূরের হাত-পা কাঁপতে লাগলো।
সাদাফ নুরের গালে নিজের নাক ঘষে ঘষে বলল ,”আজকে তোকে ছেড়ে দিলাম যা আজকে আমার এক জায়গায় যেতে হবে আসলেই অনেক জরুরী কাজ ।বন্ধু বান্ধবীরা আসবে হ্যাংআউট আছে আসতে রাত হবে আমার।
কফি খেয়ে বের হয়ে যাব বাইরে যা আমি রেডি হবো এখন ।নাকি তুই চাচ্ছিস তোর সামনে সবকিছু করি ।আমার অবশ্য তাতে কোন সমস্যা নেই একদিন তো দেখবি।”
বলেই সাদাফ নুরের সামনেই টাওয়েল টা এমন ভাবে হাত দিল যেন খুলে ফেলবে ।নুর সাথে সাথে সাদাফের হাত ধরে ফেলল ।চোখ খুলে বলল ,”কি করছেন আমার সামনে কি খুলবেন নাকি?”
“কি করবো তুই তো যাচ্ছিস না ।তাই ভাবলাম হয়তো দেখতে চাচ্ছিস তাই তোর সামনে চেঞ্জ করতে আমার কোন সমস্যা নেই ।তুই তো দেখবি আর তো কেউ না ।”
বলেই কফির মগটা হাতে নিয়ে কফিতে মুখ দিয়ে দেখল কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
কিছু করার নেই সময় নেই তাই ঠান্ডা কফি টাই এক চুমুকে খেয়ে বলল ,”তাহলে বাইরে যা আমি রেডি হব আমার বের হতে হবে।”
নুর কে বাইরে যেতে না দেখে সাদা সুরের কাছে এগিয়ে এসে বলল ,”আসলে চাচ্ছিসটা কি ?কিছু বলবি আমাকে বের হচ্ছিস না কেন?”
নূর আমতা আমতা করে সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,”বলছিলাম যে বলছি কি ওইখানে কি সাবা আপু আসবে?”
সাদাফ এবার বুঝতে পারল নুরের সমস্যাটা কোথায় ?নুরকে খেপানোর জন্য বলল ,”হ্যাঁ সব বন্ধু-বান্ধবীরা যেহেতু আসবে ও তো আসবেই ।”বলেই আলমারি থেকে একটি শার্ট বের করে নূরের সামনে শার্ট পরে বোতাম লাগাতে লাগলো সাদাফ।
তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে একটি আন্ডারওয়ার বের করে বলল ,”এখন আমি এটা পড়বো তুই কি এখনো দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি যাবি। আচ্ছা ব্লাক পড়বো নাকি রেড পড়বো কোন টা ?”
নূর ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল ।সাথে সাথে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।সাদাফ মনে মনে হাসলো ।সাদাফ জানে নিচে গিয়ে অবশ্যই কোন একটা ঘটনা পাকাবে এটা সাদাফ আগে থেকে প্রস্তুত।
সাদাফ রেডি হয়ে একেবারে নিচে নেমে দেখল হুমায়ুন রহমান ফজলুর রহমান নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম সবাই নিচে এমন কি সাইমন নিচে বসে আছে।
কিন্তু নূরকে কোথাও দেখতে পারছে না সাদাফ তো চিন্তা-ভাবনা করেছে নূর অবশ্যই নিচে থাকবে ।কোন না কোন ঘটনা তো অবশ্যই পাকাবে ।
চিন্তা করতে করতে নিচে নামলো হঠাৎ হুমায়ূন রহমান বললো ,”কোথায় যাচ্ছ?”
সাদাফ বাবার দিকে তাকিয়ে ভদ্র ছেলের মত উত্তর দিল ,”এই তো বাবা বন্ধুদের সাথে একটা গেট টুগেদার আছে ।সেখানেই যাচ্ছি ফিরতে রাত হবে আমার একটু।
তোমরা ডিনার করে নিও আমার জন্য অপেক্ষা করো না ।”
বলে যেইনা বের হবে অমনি হুমায়ূন রহমান বলল ,”দাঁড়াও এখনই যাচ্ছ কেন নূরকে তো সাথে নিয়ে যেতে হবে।”
সাদাফ জানত এমন কোন কথাই আসবে কিন্তু অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল ,”নূর নূর কেন যাবে ঐখানে তো বড়দের আমার ফ্রেন্ডের গেট টুগেদার ওইখানে ও যেয়ে কি করবে?”
হুমায়ূন রহমান মনে মনে বলল ,”হায়রে নাটক ঠিকই নুরকে উস্কে দিয়ে এখন এমন ভাব ধরছে কিছুই জানেনা ।ছেলে একটা পয়দা করছে কি খেয়ে আল্লাহ জানে। বহুরূপী একটা। ছোট্ট মেয়েটার মাথা টা চিবিয়ে খেলে।”
তারপর বলল ,”নূর তোর সাথে যাবে ।ও বায়না ধরেছে তাছাড়া কোথাও বের হয় না যাওয়া হয় না তাই ও তোর সাথে যেতে চাইছে নিয়ে যা।
সাথে অবশ্য নুর একা যাবে না রিমা ও সায়মন যাবে ।সবাইকে একসাথে নিয়ে যা। তুই বন্ধুদের সাথে থাকিস ওরা তিনজন নিজেদের মতো আড্ডা দিবে সমস্যা নেই।”
সাদাফ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সাইমনের দিকে ।সায়মন ৩২ টি দাঁত বের করে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিল যেন কিছুই জানে না।
সাদাফ মনে মনে হাসলো জানতো নূর ঠিকই একটা ঘটনা পাকাবে ঠিকই সেই অনুযায়ী কাজ করেছে ।সাদাফ ও চাইছিল নূরকে নিয়ে যেতে ওর বন্ধু বান্ধবীরা সবাই দেখতে চেয়েছে নুরকে ।তাই দেখানোর জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু একা কিভাবে নিয়ে যাবার কথা বলবে তাই নূরকে দিয়ে বলিয়ে ছাড়লো।
রিমা আর নুর দুইজনই রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে ।অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সায়মন ও সাদাফ।যেন চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে ।মা*তাল হয়ে যাচ্ছে দুজন ।এইভাবে গেলে তো সর্বনাশ সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে থাকবে দুই ভাই মনে মনে একই কথা ভাবছে।
দুজনেই ব্ল্যাক কালারের পার্টি ড্রেস পড়েছে ।গলায় ঝুলিয়েছে ছোট্ট এই স্কার্ফ। চুল গুলো সুন্দর ঝরঝরে সিল্কি ছেড়ে রেখেছে ।হালকা-পাতলা মেকআপ গোলাপি লিপস্টিক যেন সদ্য পৃথিবীতে নেমে আসা দুইটা পরী।
সাইমন কি মনে করে যেন তাকালো সাদাফের দিকে ।দেখলো সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।সাইমন মনে মনে ভাবল আজকেও তাকিয়ে আছে আসলে সাদাফ ভাই কার দিকে তাকিয়ে আছে ?নিজের বোনের দিকে নাকি আমার বোনের দিকে ?পরক্ষণে ভাবলো যার দিকেই তাকাক ওর কি?আবার রিমার দিকে তাকিয়ে রইল সায়মন।
সাদাফ হালকা একটু কেযে সাইমন কে বলল ,”আমি গাড়ি বের করছি ।তাড়াতাড়ি ওদেরকে নিয়ে আয় ।”
সাথে সাথে সিচুয়েশন থেকে বাঁচার জন্য বাইরে বের হয়ে গেল সাদাফ।যেভাবে তাকিয়ে ছিল সবাই না জানে কি মনে করবে যদি খেয়াল করে থাকে।
এদিকে বোকা নুর মনে করল ,”এত সুন্দর করে সাজুগুজু করে এসেছে অথচ সাদাফ ভাই ওকে ঠিকমত দেখলো না ।বাইরে বের হয়ে গেল ।মনটা যেন একটু খারাপ হয়ে গেল নূরের।”
তিন জন বাইরে বের হয়ে দেখল সাদা ফ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ।সবাই যার যার মত গাড়ি খুলে সিটে বসে গেল ।রিমা ও নূর পিছনে বসল সাইমন স্বাভাবিক আগের মতই সামনে বসলো।
সাদাফ কোনদিকে না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল ।আড় চোখে শুধু মিররে একবার নূরকে দেখলো ।ভিতরে যেন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে সাদাফের ।
মেয়েটা যেন ওকে মে*রে ফেলতে চাইছে আজকাল বড্ড জ্বা*লাচ্ছে নূর ভীষণ জ্বা*লাচ্ছে।
নূর যদি জানত সাদাফের ঠিক কতখানি কষ্ট হয় নূরের কাছাকাছি এলে নিজেকে নি*য়ন্ত্রণ করে রাখা তাহলে হয়তো বোকা নুর কোনদিনও সাদাফের কাছাকাছি ভিড়তো না।
৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল নির্ধারিত ভেনুতে।
সাদাফ সাইমনের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ওদের নিয়ে ওই এন্ট্রান্স এর সামনে গিয়ে দাঁড়া আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।”
সাইমন নুর ও রিমা কে নিয়ে এন্ট্রান্স এর সামনে চলে গেল ।সাদাফ গাড়ি পার্ক করে এসে ওদেরকে বলল আয় ভিতরে চল।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৮
নূরের বুকটা কেমন দুরদুর করে কাঁপছে ভিতরে সাবা আপু আছে ।না জানি ঐখানে গিয়ে কি কি দেখতে হবে ।চলে তো এসেছে সাদাফ ভাই কে সাবা আপুর কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য কিন্তু ছোট্ট নূর কি পারবে সাদাফ ভাইকে সাবা আপুর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ?মনে মনে ভাবতে লাগলো নূর।
