সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৫

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৫
neelarahman

রাত বাজে বারোটা ।নুর অনেকক্ষণ ধরেই গড়িমসি গড়িমসি করছিল সাদাফের রুমে যাওয়ার জন্য ।সাদাফের গলায় অনেকখানি জায়গায় নূরের নখের আঁ*চর লেগে কে*টে গিয়েছে নূরের ইচ্ছে করছে যেয়ে মলম লা*গিয়ে দিতে।
সাদাফ ভাই তো মলম খুজলেও পাবে না কারণ নূর ওই রুম থেকে নিয়ে এসেছিল তাই বারোটা বাজার সাথে সাথে নূর দরজা খুলে রওনা দিল সাদাফের রুমের উদ্দেশ্যে।
সাদাফ এখন আর রুমে দরজা লাগিয়ে ঘুমায় না ।জানে নূর রাতে একবার হলেও আসবে কোন না কোন বাহানায় অবশ্যই আসবে।

পা*গলিটার এইসব পা*গলামিতে যে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে সাদাফ তাই রুমে দরজা না লাগিয়েই শুয়ে পড়েছে।
ধীরে ধীরে নূর এগিয়ে গেল সাদাফের শিয়রের কাছে ।দেখলো সাদাফ উল্টো হয়ে শুয়ে আছে ।কিন্তু আ*চড় তো লেগেছিল গলায় ।এখন সাদাফ ভাইকে কি করে ঠিক করিয়ে করিয়ে শোয়াবে?
ধীরে ধীরে নূর সাদাফের হাত ধরে টেনে সাদাফকে সোজা করার চেষ্টা করতে লাগলো ।অনেকক্ষণ এভাবে চেষ্টা করল কোন ভাবেই পারলো না ।হয়তো বা সাদাফ ঘুমিয়ে থাকলে পারতো কিন্তু সাদাফ তো জেগে আছে তাই সাদাফ কে এক চুল পরিমাণ নড়াতে পাড়লো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নুর ফিসফিস করে বলতে লাগলো ,”উফ এত ভারী লোকটা ।কি করে যে উঠাই ?মলমটা লা*গিয়ে না দিলে নখের আঁ*চড় লে*গে তো ঘা হয়ে যাবে। মানুষ এতো হা*তির মতো ভারী কি করে হয়?”
সাদাফ আর টিকতে পারল না ।বলে উঠলো ,”তাহলে কি তোর মত চ*ড়ুই পাখির মতো ওজন হবে ?আচ্ছা তোর ওজন কত ৩৫ কেজি নাকি ৩৬ কেজি?”
বলেই বিছানায় চিৎ হয়ে শুলো সাদাফ।পাশে বসে আছে মলম নিয়ে নূর ।নূর থতমতো খেয়ে গেল ।আমতা আমতা করে বলল ,”মোটেও ৩৬ কেজি বা ৩৫ কেজি না আমি গুনে গুনে পুরো ৪১ কেজি।”
“ওরে বাবা গুনে গুনে ৪১ কেজি?? তা ৪১ কেজির এই চ*ড়ুই পাখিটা কি ৮০ কেজির এই হা*তিটাকে সহ্য করতে পারবে?”বললো সাদাফ।

নূর সাথে সাথে বলল ,”সহ্য করতে হবে কেন?”
“যখন করতে হবে তখন বুঝবি ।আবার বলিস না আমি তোকে সাবধান করিনি ।তা আবার এত রাতে কেন এসেছিস ?তোকে বলিনি আমার রুমে রাতের বেলা আসতে মানা?”বললো সাদাফ।
নুর অতশত না ঘাটিয়ে বলল ,”মলম নিয়ে এসেছিলাম আপনার গলায় আঁ*চর লেগেছিল তাই মলম লাগিয়ে দিতে এসেছি।”
সাদাফ কিছুক্ষন নুরের দিকে তাকিয়ে রইল ।তারপর হাত থেকে মলমটা নিয়ে বলল ,”আমি লা*গিয়ে নিব তুই রুম থেকে যা আর যাওয়ার সময় রুমে দরজা চাপিয়ে দিয়ে যাস।”
নূর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো ।তারপর বলল ,”ঠিক আছে মলমটা লা*গিয়ে নিবেন ।”
বলেই রুমে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেল।

পরদিন সকাল নুর তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে নিচে নেমেছে স্কুলে যাবে ।ব্রেকফাস্ট করবে গাড়িতে তাই বড় মাকে বলল আগেই টিফিন প্যাক করে দিতে ।নরিন আফরোজ আগে থেকেই টিফিন প্যাক করে রেখেছে।
নিচে নেমে এসেই সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”চলুন চলুন আজকে আমার স্কুলের জরুরী একটা কাজ আছে ।তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।”

সাদাফ অবাক হয়ে তাকালো নুরের দিকে। প্রতিদিন তো লেট করে নামে আজ এমন কি হল ব্রেকফাস্ট করবে না তাড়াতাড়ি যেতে বলছে ।তারপরও কিছু জিজ্ঞেস না করেই বলল ,”ঠিক আছে বাইরে আয় আমি গাড়ি বের করছি।”
গাড়ীতে কয়েকবার সাদাফ আড় চোখে তাকালো নুরের দিকে ।ভীষণ ছটফট করছে নূর ।যেন কতক্ষণে গাড়ি থামবে কতক্ষনে নামবে ।কিসের এত তারা সাদাফ জানেনা কিন্তু বারবার লক্ষ্য করল নূর কেমন যেন ছটফট ছটফট করছে।
স্কুলের গেটের কাছে এসে গাড়ি থামতেই নূর কোনমতে সাদাফকে বাই বলে সাথে সাথে বের হয়ে গেল ।সাদাফ গাড়ির দরজা লা*গাতে লা*গাতে দেখলো নূর দৌড়ে স্কুলে গেটের ভিতরে ঢুকে গেল।
সাদাফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

আজ অফিসে তেমন বিশেষ কোন মিটিং নেই ।সাদাফের ও মন টিকছে না সকালে নূর কেন এতটা ছটফট করে স্কুলে গিয়েছিল যে মেয়ে স্কুলে যেতেই চায়না। ভাবতে ভাবতেই অফিস থেকে বাবার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল সাদাফ। পথিমধ্যে হঠাৎ নূরের সিটের দিকে চোখ গেল দেখলো একটা ছোট্ট খামের মত কিছু একটা পড়ে আছে।
সাদার সাথে সাথে গাড়ি একটু সাইড করে পার্ক করলো রাস্তায় তারপর ছোট্ট খামটি তুলে নিল সাদাফ।খুলে দেখলো ভিতরে একটি সুন্দর রঙিন চিঠি।
সাদা ফের যেন হৃদয় কেঁ*পে উঠলো কোনমতে চিঠিটি খুলে চোখের সামনে ধরতে চোখ ছা*নাবড়া হয়ে গেল চিঠির ভিতরে কতগুলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয়তো গতকাল দিয়েছে কারণ ফুলের পাপড়ি গুলো একটু মলিন হয়ে গেছে।

চিঠিতে লেখা
আমার হৃদয়ের রানী
তুমি জানো না আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি ।হয়তো তুমিও আমাকে ভালোবাসো ।যদি তোমার মনে হয় আমার এই চিঠিটি তোমার হৃদয়ের দাগ কা*টতে পেরেছে ,তুমিও আমাকে ভালোবাসো, তুমি আমাকে চাও ,তাহলে কাল স্কুলে অবশ্যই সকাল সকাল চলে আসবে। আমি ফুল নিয়ে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য ।সবার সামনে আমি তোমাকে প্রপোজ করবো ।আমি তোমাকে ভালোবাসি ।আর যদি মনে কর তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই এই চিঠিটি ডাস্টবিনে ফেলে দিও ।সকালে কালকে যদি স্কুলে না আসো আমি আমার উত্তর পেয়ে যাব।
ইতি
তোমাকে একান্তে ভালোবাসার মানুষ
রাকিব

চিঠি পড়েই সাথে সাথে চিঠি টি দুমরে মুছরে হাতে মুঠোয় নিয়ে পকেটে ঢুকালো সাদাফ।তারপর পা*গলের মত কোনমতে কার ড্রাইভ করে বাড়িতে আসলো । হাজার বার ভাবলো কেনো অন্য কাওকে তুই চাইলি নুর?
বাড়িতে এসেই সামনে পড়লে নওরিন আফরোজ ।নওরিন আফরোজ সাথে সাথে পানির কথা জিজ্ঞেস করতে চাইলে সাদাফ কারও দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ উপরে চলে গেল ।উপরে গিয়ে সাথে সাথে ঢুকলো নূরের রুমে।
ঢুকে দেখলো সাইমন ও রিমা নূরের রুমে গল্প করছে হঠাৎ চোখ পড়ল নূরের রুমে ড্রেসিং টেবিলের উপরে কয়েকটি ফুল।

সাদাফ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না ।সাথে সাথে নুরের রুমের ভিতরে ঢুকে সবার সামনে চ*ড় মে*রে বসলো নুর কে।
নুর চ*ড়ের তীব্রতা সহ্য করতে পারেনি।তার চেয়েও বেশী তীব্র সাদাফের দেয়া আ*ঘাত যা নুরের হৃদয় সইতে পারেনি।
এত জোরে চ*র পড়ার সাথে সাথে নুর খাট থেকে ছিটকে পরল ফ্লোরে।

নুর সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো। সাইমন সাথে সাথে নুরকে এসে ধরলো ।দেখলো জ্ঞান হারিয়ে গেছে ।নূরের গালে পাঁচটি আঙ্গুলের দা*গ বসে গেছে ।সায়মন সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ভাইয়া মা*রলে কেন কি করেছেন নুর”
রিমা অবাক হয়ে গেল ।সাথে সাথে এসে ধরল নূরকে ।নুরের গালে হালকা ধরে দেখল পাঁচটি আ*ঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে ।তাকালো সাদাফের দিকে ।তারপর আবার নুরকে ডাকতে লাগলো এই নুর নুর ওঠ।ওঠ নুর।
সাদাফ সায়মনের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ওকে শাসন করার অধিকার কি আমার নেই ?”
সায়মন বললো ,”আছে কিন্তু কি করেছে নুর? যার জন্য এমন জোরে তুমি ওকে আ*ঘাত করলে ?যেখানে নূরকে একটি জোরে ধমক দিয়ে দেখো না তুমি।”

সাদাফ: তাহলে বুঝে নে ওর অ*পরাধটাও অনেক গুরুতর।
এদিকে সাদাফের ব্যবহার দেখে আগেই নওরিন আফরোজ এর সন্দেহ হয়েছিল তাই দৌড়ে উপরে এসেই এই অবস্থা দেখলো ।নূর ফ্লোরে নিচে পড়ে আছে সাদাফ রা*গে গড়গড় করছে ।সাইমন ও রিমা নূরের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে হতবাক হয়ে গেল নওরিন আফরোজ।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৩+৪৪

সাথে সাথে জানতে চাইলেন কি হয়েছে নূরের ও নিচে পড়ে আছে কেন ?
হঠাৎ চোখ পরল ঠোঁটের কোনে যেন এক ফোঁটা র*ক্ত ।সাথে সাথে তাকালো সাদাফের দিকে ।সাদাফের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এই আ*ঘাতটা সাদাফের থেকেই এসেছে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here