সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৪+৬৫
neelarahman
খাবার পর্ব শেষ হতে সবাই কেবিনে বসেই গল্প জুড়ে দিয়েছে যেন ছোট্ট একটি সংসার ।সাদাফ চুপচাপ বিছানায় কপালে একটি হাত রেখে শুয়ে আছে স্যালাইন কিছুক্ষণ আগে খুলেছে ।এমনিও আজ ডিসচার্জ নিয়ে বাসায় চলে যাবে ।তাই কেউ আর বাসায় ব্যাক করেনি সবাই এখানে বসে আছে।
মালি হসপিটালে 12 টার মধ্যেই ডিস্টার্ব হয়ে যায় তবে সাদাফের কিছু টেস্টের কাগজ এবং স্যালাইন চলার কারণে ডাক্তারের সাথে কথা বলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিকাল বেলার মধ্যে চলে যাবে। যদিও আরেকদিন থাকার নিয়ম কিন্তু বিলপে করে বিকালে বের হয়ে যাবে সাদাফ।
নূর আর রিমা নিচে বসে কিছু একটা কাজ করছে ।সাদাফের আর তর সইছে না বহুদিন ধরে নূরের সাথে একটু কথা বলে না আজ খুব একটু কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে ।কিন্তু কোন ভাবেই পারছে না রুমের ভিতর সবাই।
হঠাৎ সাদাফ কপাল থেকে হাত সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”আমার একটু ঘুমানো প্রয়োজন। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে ।তোমরা এক কাজ কর সবাই বাসায় চলে যাও শুধু একজন থাকুক যে আমাকে নিয়ে বাসায় যাবে।”
হুমায়ূন রহমান বলল ,”আসলে কথা খারাপ না অসুস্থ রোগীর রুমে আমরা পুরো একটা ফ্যামিলি সবাই এখানে বসে আছি ।এক কাজ করুক সবাই চলে যাক আমি থাকি আমি সাদাফকে নিয়ে যাব ।”সাদাফ আবার কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ হুমায়ূন রহমানের দিকে তাকিয়ে নূর বলল আমিও থেকে যাই ?তুমি তো ভাইয়াকে নিবে ভাইয়ার কিছু জিনিসপত্র আছে ওগুলো কে নিবে ওগুলো আমি নিব।”
ফজলুর রহমান বলল ,”আমিও থাকছি কারণ অফিসিয়াল অনেক কাজ আছে ভাই আর কত দৌড়াদৌড়ি করবে ?আমি করব ওসব।সাইমন এগুলো বুঝবে না ।সাইমন তুই বাড়তি যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো আছে সবগুলো নিয়ে তোর বড় আম্মু আর আম্মুকে নিয়ে চলে যা।
সাথে রিমা কেউ নিয়ে যা হসপিটালে আসলে এত লোক থাকার কোন প্রয়োজন নেই। নুরকে কিছু বলল না কারণ জানে বলতে গেলে নূর বায়না ধরবে বিষয়টা আরো বেশি হবে তাই চুপচাপ বসে রইল।”
নওরিন আফরোজ উঠে সবকিছু গোছাতে লাগলেন সাথে তারা দিলেন সামিহা বেগমকে ।সামিহা বেগম বললেন ,”দাড়াও আপা বাসনপত্র গুলো সবকিছু একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিচ্ছি।
এগুলো হয়ে গেলে বের হচ্ছি ।সামিহা বেগম কাপড়-চোপড় বাকি সবকিছু গোছগাছ করলেন।”
রিমা উঠে রেডি ।সায়মন রেডি ।সায়মন বললো,” আমি নিচে গিয়ে গাড়ি রেডি করছি বড় আম্মু ।তোমরা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো।”
রিমা নওরিন আফরোজ এর হাত থেকে কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে বলল ,”বড় আম্মু আমি এগুলো নিয়ে নিচে যাচ্ছি তুমি আর ছোট আম্মু নিচে নেমে এসো।”
সবাই চলে গেলেন ।কেবিনে বসে রইল নূর হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমান।সোফায় বসে নুর।
এমন সময় একটি নার্স এসে বলল ,”আপনাদের পেপার রেডি ।একটু নিচে বিল পে করে সবকিছু নিয়ে আসতে হবে ।ফাইলটা নিয়ে আসুন। ডক্টর প্রেসক্রাইব করে দিবে পরবর্তী মেডিসিন গুলো।”
হুমায়ুন রহমান উঠবে এমন সময় ফজলুর রহমান বাধা দিয়ে বললেন ,”ভাইজান আপনি দাঁড়ান আমি এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।”
ফজলুর রহমান ফাইল নিয়ে বের হয়ে গেলেন ।সাদাফ দেখলো ফজলুর রহমান বের হয়ে গেছে কপাল থেকে হাত ছড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”বাবা একটু এদিকে এসো কথা আছে।”
হুমায়ূন রহমান ভাবলেন হয়তো সাদাফের কিছু প্রয়োজন।কিছু চাচ্ছে বা কিছু একটা সাথে সাথে সাদাফের কাছে গেল ।নুর সোফায় বসে তাকিয়ে রইল।
হুমায়ূনুর রহমান আসতেই সাদাফ ইশারা করে আরেকটু কাছে ডাকলেন ।হুমায়ূন রহমান মাথাটা ঝুকিয়ে সাদাফের মুখের কাছে নিয়ে গেলে সাদাফ বলল ,”রুম থেকে বাইরে যাও।”নীলা রহমান
হুমায়ূন রহমান মনে হয় কানে ভুল শুনলেন ।কানে কতক্ষণ হাত বুলিয়ে কান সামনে নিয়ে আবার বললেন ,”কি বললি আবার বল বুঝতে পারিনি?”
সাদাফ সেইভাবে ধীর স্থির ভাবে বলল ,”রুম থেকে বাইরে যাও ৫ মিনিট বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
হুমায়ূন রহমান বিরক্ত চোখে সাদাফের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন ,”তোর কি মাথা নষ্ট হয়েছে ?ফজলুর বাইরে গিয়েছে এক্ষুনি চলে আসবে ।আর আমি বাবা হয়ে কিভাবে মেয়েকে তোর কাছে রেখে পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে যাই ?ল*জ্জা শরম কি নেই তোর?”
“ল*জ্জা শ*রম থাকলে তুমি নিজেই একটু বাইরে চলে যেতে। ছেলের প্রাইভেসির কথা চিন্তা করতে ।তা না করে তুমি খালি তোমার ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছ ।এখন তুমি রুম থেকে বাইরে যাবে নাকি আমি নূরকে বলবো আমাকে নিয়ে বাইরে যেতে?”বললো সাদাফ।
হুমায়ুন রহমান পড়ে গেল মুশকিলে ।উনি ছেলেকে ভালো করে চিনেন জানেন ।এই মুহূর্তে যদি সত্যি সত্যি বের না হয় তাহলে সাদাফ যা বলেছে তাই করবে ।উনি চাচ্ছে না ফজলুর এসে আর কোন সিনক্রিয়েট হোক তাই ছেলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল ,”৫ মিনিট সময় দিলাম কথা মানে শুধু কথা মনে থাকে যেন? কোন কুক্ষণে যে তোকে জন্ম দিয়েছিলাম ?তার প্রায়শ্চিত্ত আমি এখন করছি।”
বসে নুর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও বাবা আর ছেলের ফিসফিস করা কথা কিছুই বুঝতে পারেনি ।নুর ওইভাবে চুপচাপ বসে রইল। আর মনে মনে ভাবছে ,”কি এমন কথা বলছে বাবার সাথে আমাকে কেন বলল না শুধু শুধু বড় আব্বু কে কষ্ট দিচ্ছে।”
হুমায়ূন রহমান ঘুরে একবার তাকালেন নূরের দিকে ।আফসোস হলো মেয়েটার জন্য তার ছেলের পাল্লায় পড়েছে এটা ভাবতেই ।আবার ভাবল তাড়াতাড়ি বের হতে হবে ফজলুর রহমান চলে আসবে ।তাই দ্রুত পা ফেলে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেল ।নুর ভাবলো হয়তো সাদাফ কিছু আনতে বলেছে তাই বড় আব্বু তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।
হুমায়ূন রহমান বের হয়ে যাওয়ার সময় ক্যাবিনে দরজা চাপিয়ে দিলেন ।সাদাফ নুরের দিকে তাকালো ।তাকিয়ে বলল ,”নুর একটু এদিকে আয় ।নুর সরল মনে উঠে সাদাফের বেডের সামনে গিয়ে বলল ,”কিছু লাগবে? আপনার কি খারাপ লাগছে? বড় আব্বু কি ডাক্তার ডাকতে গিয়েছে?”
বিরক্ত হয়ে বলল ,”কথা কম বল ।সময় নেই।তাড়াতাড়ি একটু এদিকে আয় একটু কাছে আয়।”নুর আর একটু কাছে আসলো ।সাদাফ বললো,”আর একটু কাছে আয় নূর ।” নুর একদম সাদাফের কাছাকাছি চলে আসলো ।আর যেন কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।
নুর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদাফ নুরের এক হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় সাদাফের বুকে ফেলে দিল ।নুরকে । নূরে মুখ থুবড়ে পড়েছে সাদাফের বুকে।সাগাফ এক হাত দিয়ে নুরের চুলের পিছন থেকে ধরে নুর কিছু বলবে তার আগে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল।
হৃদয় নিংড়ানো চু*মু খেতে লাগলো সাদাফ।নুরের যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।নুর দু হাত দিয়ে সাদাফের শার্টের কলার খা*মচে ধরলো ।সাদাফ যেন আরেকটু সায় পেলো নূরের কাছ থেকে ।আরো গভীরভাবে নূরকে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো।
এদিকে হুমায়ূণ রহমান মনে মনে ভাবছে জীবনে উনি হয়তো প্রথম বাবা যে ছেলে প্রেম করছে ক্যাবিনের ভিতর আর বাবা হয়ে ছেলে দরজার বাইরে পাহারা দিচ্ছে ।কখন ফজলুর রহমান চলে আসবে এই আশঙ্কায় তার যেন হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
হুমায়ূ রহমান বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কি ছেলেই বা পয়দা করলো এই বয়সে নাকি এখন এসব কাজ করতে হচ্ছে দরজা বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে।
আচ্ছা এখন যদি ফজলুর এসে পড়ে তাহলে কি বলবে?
মনে মনে যেন ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে হুমায়ূন রহমান।
নিজেকে মনে মনে কতশত গালি দিল কেন ছেলেকে বলেছিল আমি তোর বন্ধুর মতো এখন থেকে সব কথা আমার সাথে শেয়ার করবি ছেলে এখন এমন এমন কথা শেয়ার করে যা মানুষ শুনলে পাগল ছাড়া কিছুই বলবে না।
হঠাৎ হুমান রহমানের মাথায় আসলো আচ্ছা ছেলেটা যদি রুমের ভিতরে এখন কোন পাগলামি করে বসে ?কি এক দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিল ছেলেটা ! হুমায়ূন রহমান চিন্তা করলেন একবার কি নক করবে দরজা?
এদিকে সাদাফ নূরকে বেসামাল ভাবে ভালবাসার পরশ দিতে লাগলো ।নূর যেন কাবু হয়ে গেল পুরোটাই ।সাদাফের বুকে নিজের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিল।
ধীরে ধীরে নূরে ঠোঁট ছেড়ে দিল সাদা সাদা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে নুর যেন পুরোই জড়োসড় হয়ে শুয়ে আছে সাদা ফেসবুকে সাদা ধীরে ধীরে নুরে চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল এটা তো শাস্তি দুইদিন আমাকে ফোন দিস নি কেন?
নূর ধীরে ধীরে একটু স্থির হয়ে আনতাম তা করে বলল আমি তো ফোন দিতে চেয়েছিলাম বিশ্বাস করুন আম্মুর মোবাইল দিয়ে আপনার মোবাইলে ফোন ঢুকছিল না আর আপনি হয়তো আমাকে ফোন দিচ্ছিলেন না।
সাদাপুরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল আম্মুর মোবাইল দিয়ে ফোন আসবে না কেন লাস্ট আম্মুর সাথে যখন কথা হলো তখন তো ঠিকই ফোন এসেছিল।
সাদাফ নূরের দিকে তাকিয়ে নুরের ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল ,”তাহলে শাস্তিটা তো ভুলে দিয়ে ফেললাম ।শাস্তিটা ফিরিয়ে নিতে হয় কি বলিস ?বোকা নুর প্রশ্ন করলে কিভাবে ?সাদাফ একটু মুচকি হাসলো ।হেসে সাথে সাথে নূরের ঠোঁটে আবার ছোট্ট করে ভালবাসার পরশ দিলো দিয়ে বলল ,”এভাবে। নে শাস্তি ফিরিয়ে নিলাম।”
নুর ল*জ্জায় সাদাফের বুকে মুখ গুঁজে দিল ।সাদাফ নুরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ,”আচ্ছা এবার তাড়াতাড়ি ওঠ ।বাবা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে যেকোনো সময় তোর বাবা চলে আসবে।”নীলা রহমান
নুর সাথে সাথে চট করে তাকালো সাদাফের দিকে ।তারপর বলল ,”আপনি বড় বাবাকে বাইরে পাঠিয়েছেন এসবের জন্য ?”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বলল ,”না অন্য কিছুর জন্য ।এখন তাড়াতাড়ি ওঠ উঠে আমার জন্য একটা আপেল রেডি কর ।দেখ আমার বাবা তোর বাবা বাইরে এল বলে।”
কি বলবে সাদাফ কে বুঝে উঠতে পারলো না নুর।সাথে সাথে উঠেই একটি আপেল নিয়ে নিচে ছু*রি দিয়ে কা*টতে লাগলো হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ পেল ।সাদাফ বললো ,”ভিতরে এসো।”
হুমায়ূন রহমান দরজা একটু ফাঁকা করে দেখলেন ,”নুর নিচে বসে আপেল কা*টছে ।”
হুমায়ুন রহমানের ক*লিজাটা যেন ঠান্ডা হলো কারণ করিডোরে দেখছে ফজলুর হসপিটাল এর ফাইল নিয়ে এগিয়ে আসছে।
বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেল । হুমায়ন রহমান সাদাফের সমস্ত অফিস ও হসপিটাল এর ফাইল নিয়ে এগিয়ে গেলেন ।ফজলুর রহমান ও গেলেন সাথে সাথে ।সাদাফ ধীরে ধীরে হাটছে নুর সাদাফের সাথে হেঁটে হেঁটে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।
নওরিন আফরোজ আগেই সাদাফের রুম গুছিয়ে রেখেছে ।নিচে সামিহা বেগম বিকালের জন্য নাস্তা বানিয়েছিলেন ।সাদাফ কে দেখে আবার রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন।
সামিহা বেগম তাড়াতাড়ি এসে সাদাফের হাত ধরে বলল ,”তাড়াতাড়ি আগে সোফাতে বস এখান থেকে একবারে চা নাস্তা খেয়ে উপরে যাবি সায়মন নিয়ে যাবে।”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬২+৬৩
সাদাফ ছোট আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল ,”আম্মু ব্যথা আমি হাতে পেয়েছি পায়ে না। সায়মন কে নিয়ে যেতে হবে কেনো?”
মন ভালো নেই তাই বেশি বড় করে লিখতে পারলাম না ।শরীরটা অসুস্থ কমেন্টসে যা বলার বলেন ।আপনাদের সব অভিযোগ আমি মাথা পেতে স্বীকার করে নিলাম।
