সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৮+৭৯
neelarahman
মুভি দেখছে রিমা ও সাইমন ।শেষমেশ একটা পপকর্ন এবং দুটো কোল্ড কফি নিয়েছিল । পপকর্ন একবার রিমা খাচ্ছে একবার সাইমন খাচ্ছে।রিমা হাত দিয়ে দেখলো পপকর্ন নেই। রিমা বললো ,”কিরে সব খেয়ে শেষ করে ফেলেছ? মুভি মাত্র এখন শুরু হল তাহলে পুরো মুভি আমরা কি দেখে খাব ?সব যে তুমি আগে রা*ক্ষসের মত খেয়ে ফেললে?”
“কিছুক্ষণ আগেই না লাঞ্চ করে এলাম তারপর তোমার এত ক্ষুধা কিভাবে লাগে ?তুমি একবারে সবগুলি পপকর্ন খেয়ে ফেললে ।যাও এখন আবার কিনে নিয়ে আসো।”রেগে মেগে বললো রিমা।
“মামা বাড়ির আবদার তো? এত খাওয়া লাগবে না চুপচাপ মুভি দেখ ।”বললো সায়মন।
রিমা রেগে মেগে চুপচাপ তাকিয়ে রইল সাইমনের দিকে ।মনে মনে বলল ,”মুভি দেখে শুধু বের হয়ে নেই তোমার বারোটা বাজাবে।এখানে এত মানুষ তাই কিছু বলতে পারছি না ।”তাই চুপচাপ মুভি দেখায় মনোযোগ দিল রিমা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে দুই মিনিটের মাথায় হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠল নুর সাথে সাথে চোখ খুলল সাদা চোখ খুললে সাদা ভেবাচেকা খেয়ে গেল নূরের অবস্থা দেখে।
স্কুল ড্রেসে ক্রস বেল্ট খুলে ফেলেছে নুর ।সাদাফ দেখলো কামিজ ভিতরে সবকিছুই দৃশ্যমান কাধ থেকে ড্রেসের অল্প একটু অংশ চেন খুলে নিচে ঝুলিয়ে রেখেছে। ঠিক এমন সময় চিৎকার করতে করতে নূর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল সাদাফ কে। সাদাফ অবাক হয়ে গেল নূরের এই অবস্থা দেখে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না এদিকে সাদাফ কে জড়িয়ে ধরে সমান তালে লাফাচ্ছে নূর। আর চিৎকার করে শুধু বলছে পোকা পোকা তাড়াতাড়ি সরাও পোকা একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো একটা পোকা ছিল কিন্তু মাত্রই উড়ে গেল।
নূরের কাধ থেকে জামা নিচে পড়ে আছে । অন্তরবাসের ফিতা সম্পূর্ণ দৃশ্যমান এদিকে নূর সমান তালে লাফিয়ে যাচ্ছে পিছনে জামার চেইন পুরোটা খোলা।
নুর জিজ্ঞেস করল পোকা তাড়াতাড়ি সরাও পোকা ।
সাদাফ বলল ,”কোথায় পোকা ?”
নুর বলল ,”কাঁধে মাত্র দেখেছি কাঁধে একটা পোকা।”
নুর সাদাফ কে জিজ্ঞেস করল ,”গিয়েছে পোকা গিয়েছে ?সাদাফ বললো ,”না যায়নি এখনো আছে ।”
নুর আরো জোরে জড়িয়ে ধরল।
সাদাফ সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।ধীরে ধীরে হাত দুটো উঠিয়ে নূরের উন্মুক্ত পিঠে হাত রাখলো ।বলল পোকা আছে চুপ কর ।আমি সরিয়ে দিচ্ছি ।অথচ পোকা নেই পোকা এর আগে চলে গিয়েছে।
ধীরে ধীরে নূর শান্ত হচ্ছে হঠাৎ উন্মুক্ত পিঠে সাদাফের হাত পড়ায় নূর যেন সতর্ক হয়ে গেল ।সাথে সাথে সাদাফকে খামচে ধরলো নূর।
সাদা ধীরে ধীরে বলল ,”হুঁশ নড়াচড়া করিস না ।পোকা সরিয়ে দিচ্ছি ।”
বলে নূরকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রইল ।নূর ধীরে ধীরে যেন সাদাফের উষ্ণ স্পর্শে গলে যেতে থাকলো ।আরো জেকে ধরল সাদাফকে ।এমনি নূরের শরীর ঠান্ডা লাগছে ভেজা ছিল তার উপরে সাদাফের শরীরের উষ্ণতায় যেনো আরাম পেলো নুর।সাদাফকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নুর। নীলা রহমান লেখিকা
সাদাফ উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ছাড়লো ।তারপর ধীরে ধীরে হাতের বাঁধন আলগা করে নুরকে একটু ছেড়ে বলল ,”পোকা ফেলে দিয়েছি। চলে গিয়েছে । জামা কাপড় ঠিক কর ।”বলেই নূর সরে যাবে ঠিক এমন সময় সাদা নূরের জামার কাধের অংশ টুকু তুলে দিলো।বললো ,”তারাতারি চেন্জ করে নে।আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি এই মুহূর্তে আমি ভিতরে থাকতে পারবো না ।বোঝার চেষ্টা কর ।”
বলেই সাথে সাথে পর্দা সরিয়ে সাদাফ বাইরে গিয়ে পর্দা ঠিক করে দরজার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো ।নূর চুপচাপ ওইভাবে দাঁড়িয়ে রইলো যেন বুঝতে পারলো সাদাফ ভাইয়ের শেষে বলা কথাটুকু।
সাদাফ বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবছে ,”কবে বড় হবে নুর ?কেন হুটহাট যে কোন অবস্থায় আমার কাছে চলে আসে ?কেন মেয়েটা বুঝতে পারে না আমি এখন শক্ত সমর্থ একটি পুরুষ ও স্বামী হই ওর। ও জানে না কিন্তু আমি তো জানি ও আমার বিবাহিত স্ত্রী নিজেকে কিভাবে আমি সংযত করে রাখি কতটুকু কষ্ট হয় আমার সেটা কি ওই মেয়েটা জানে? কেন তুই বড় হচ্ছিস না নূর ?কেন তুই তোর উপরে আমার অধিকার টুকু বুঝতে পারছিস না ?কেন তুই আমার কথার অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে পারিস না? কথাগুলো মনে মনে ভাবছে আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সাদাফ।এমন সময় কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হলো নূর ।সাথে সাথে সাদাফ তাকালো নূরের দিকে।
পিংক কালারের সুতি একটি তাঁতের ড্রেস পড়েছে নুর ।ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে।ড্রেসটা এই ফার্ম হাউসের যে কেয়ারটেকার মেয়েটি আছে তার।
নূরের আজকে ভীষণ লজ্জা লাগছে ।বার বার থেকে থেকে মনে পড়ছে একটু আগের দৃশ্য ।উন্মুক্ত পিঠে সাদাফের হাত ভাবতে শিহরিত হচ্ছে শরীর মন ।তাই সাদাফের দিকে আড় চোখে তাকালো নুর। সরাসরি যেন তাকানোর সাহস করতে পারছে না।
মুভি দেখা শেষ করেই বের হয়ে শপিং মলেই দাড়ালো রিমা।রিমা বলল ,”এসির নিচে বসে থাকতে থাকতে মাথাটা ঠান্ডায় ব্যথা হয়ে গেছে ।যাও কফি নিয়ে এসো ।”
সায়মন তাকালো রিমার দিকে ।বললো ,”তুই জানিস এখানে কফি কত করে ?আড়াইশো টাকা করে ?মানে দুজনে ৫০০ টাকার কফি। কফি কিনে খেলে যাওয়ার সময় ভাড়া পাবো কোথায়? সিএনজি জায়গায় রিক্সা করে যেতে হবে।”
রিমা বলল ,”সিএনজির জায়গায় রিক্সা করে যেতে আমার কোন সমস্যা নেই তবে আজকে যেহেতু ঘুরতে বেরিয়েছি মন খুলে প্রাণ খুলে ঘুরব ।টাকার কথা পকেটের কথা চিন্তা করতে হবে না যাও দুটো কফি নিয়ে এসো।”
“তুই কি আজকে ঠিক করে এসেছিস আমার পকেটে একটা টাকাও রাখবি না ?ঘটনা কি বলতো ?তুই কি ভেবেছিস আমার পকেটে টাকা থাকলে আমি কোন মেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবো এ জন্য?”প্রশ্ন করলো সায়মন।
রিমা সরু চোখে তাকালো সায়মনের দিকে ।তারপর বলল ,”হ্যাঁ এজন্যই ।পকেটে টাকা কেন দরকার ছিল ?কেন তিন হাজার টাকা নিয়েছিলে ভাইয়ার কাছ থেকে ?কাউকে নিয়ে ঘুরতে যেতে ?আমাকে তো জীবনে ২০ টাকা জিনিসও কিনে এনে দাও না।”
“তোকে ২০ টাকা জিনিস কিনে দিতে হবে কেন ?তুই যেখান থেকে টাকা পাস আমি তো সেখান থেকেই টাকা পাই আর আমি কি ইনকাম করি যে তোকে ২০ টাকা জিনিস কিনে দিবো?
এমনি তোর বাপ চাচা আমাকে টাকা দেয় না ।টাকাগুলো তোর ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছি ।ঠিক আছে ভাই টাকা দিয়েছে আর বোন আজকে সব শেষ করে দিল ।এখন আমি যে ফকির ছিলাম সেই ফকির হয়ে ঘুরতে হবে।
কই ভেবেছিলাম আজকে জীবনে প্রেমে প্রথম দিন প্রথম ডেটিং ২০ টাকার বাদাম কিনে পার্কে তোর কাঁধে কাঁধ মাথা রেখে বসবো তুই বাদাম ছুলবি আর আমি খাব । রোমান্সের র ও হইল না মাঝখানে ছবি দেখে মাথা ব্যথা করে এখন আবার কফি খেতে হবে।”বললো সায়মন।
রিমা অবাক হয়ে বলল ,”রোমান্সের র ও হলো না মানে ?তিন ঘন্টা যে হাত ধরে বসে ছিলি ?তোকে যে হাত ধরে বসে থাকতে দিলাম ফ্রি ফ্রি ধরে বসে থাকবি?”
সায়মন বলল ,”কি বললি ?তোর হাত ধরে বসার জন্য আমার এত টাকা খরচ করতে হবে ?আগে বলতি এত দামি হাত ধরতাম না।”
এদিকে নূর নতুন থ্রি পিস পড়ে বাইরে বের হয়ে দেখল সাদাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।নূর বের হয়ে বলল ,”কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন ?শরীর অসুস্থ লাগছে ?”
সাদাফ সাথে সাথে তাকালো নুরের দিকে ।দেখলো হালকা পিংক কালারের তাঁতের ড্রেসটিতে নূরকে খুব সুন্দর লাগছে।বললো,” না কিছু হয়নি আমার।আমি ঠিক আছি।”
নুর সাথে সাথে ঘুরে ঘুরে নিজেকে বিভিন্ন ভাবে দেখিয়ে বলল ,”দেখুন তো এই থ্রিপিসে আমাকে কেমন লাগছে ?এরকম তাতের থ্রি পিস আমি আগে কখনো পড়নি ।আমাকে আরো কয়েকটা কিনে দিবেন?”
সাদাফ মুচকি হাসলো নূরের আবদার শুনে ।এই প্রথম ওর ছোট্ট বউ কোন কিছু আবদার করেছে ওর কাছে ।না জেনে হলেও স্বামীর কাছে আবদার করা এই প্রথম ।অবশ্যই কিনে দিবে কিন্তু মুখ ফুটে বললো ,”আমাকে বলছিস কেন তোর বাপ চাচাকে বল।”
নুর সাদাফের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কে*টে বলল ,”আপনাকে বলেছি আপনি কিনে দিবেন না হলে আমি আমার বাবাদের কাছে বিচার দিব আপনার জন্য আমার ড্রেস নষ্ট হয়েছে।”
সাদাফ মনে মনে ভাবলো ,”না এখন ত্যাড়ামী করা যাবে না ।না হলে সত্যিই বাপ চাচার কাছে গিয়ে বিচার দেবে ।তাহলে তারা জেনে যাবে আজকে এখানে নিয়ে এসেছে ।কেউ জানে না নূরকে যে আজকে এখানে নিয়ে এসেছে স্কুলের টিচারকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যেন বাসায় ফোন করে জানানো না হয়।
তাই এখনো স্কুল থেকে বাসায় ফোন যায়নি ।কিন্তু এতোসবের কিছুই জানেনা নুর তাই নুরকে থামানোর জন্য বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে কিনে দিবো কিন্তু এক শর্ত।”
নুর বলল ,”কি শর্ত?”
সাদাফ বলল ,”তোকে এরকম দশ কালারের দশটা ড্রেস কিনে দিবো কিন্তু আজকে যে আমরা এখানে এসেছি হসপিটালে গিয়েছি এই কথা তুই বাসায় গিয়ে কাউকে বলবি না ।এটা আমাদের দুজনের মধ্যে সিক্রেট।”
নুর বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে এবার চলুন না মাছ ধরবেন ।”
সাদাফ বললো ,”মাছ ধরার এতো চেষ্টা করছি মাছ তো ধরা দিচ্ছে না ।”নীলা রহমান
নুর বলল ,”কখন চেষ্টা করলেন ?”
সাদাফ বলল ,”সেই কখন থেকে তো চেষ্টা করছি ।”
নুর বললো,” চলুন আমরা নৌকায় চড়বো আর সেখানে গিয়ে মাছ ধরবেন।”
সাদাফ বলল ,”তাই নৌকায় গিয়ে মাছ ধরবো ?তাহলে আমি কি পাব শুনি ?তুই তো নৌকায় চড়ে মজা নিবি।আমি কি পাবো?”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৬+৭৭
নুর বলল ,”কি চান ?”
সাদাফ বলল ,”ঠিক তো সিওর হয়ে বলছিস যা চাইবো তাই দিবি?”
নুর বললো,” হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলিনা।”
সাদাফ বললো চল তাহলে মাছ ধরবো আজকে।
