সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৩৬
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
দগদগে তেজি সূর্যটা তখন মাথার ওপর। এক হাত জ্বিভ দেখিয়ে শ্বাস ফেলছে রাস্তার নেড়ি কুকুরের দল। আকাশে কোনও পাখি নেই। পবনে নেই শীতলতা। এমন ফ্যাসফ্যাসে সময়ে রিকশা থেকে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় নামলেন সালমা বেগম। রাহাত নেমেছে মায়েরও আগে। ভদ্রমহিলা চোখ তুলে হাসপাতালের বড়ো সাইনবোর্ডটা দেখলেন এক বার। তারপর ছেলের হৃষ্টপুষ্ট, পেলব হাতটা ধরে হন্তদন্ত পায়ে ভেতরে এলেন।
সরকারি হাসপাতাল! চারপাশে ভিড়ভাট্টায় একশেষ। যেখানে-সেখানে রোগির ছড়াছড়ি। এক দণ্ড মুক্ত শ্বাস ফেলার জো নেই কোথাও। লিফটের সামনেই অনেকক্ষণ হত্যে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর সিরিয়াল পাওয়া গেল। তবে এখানেও স্বস্তি নেই ।
ছয় জনের লিফটে পারলে দশজন উঠে পড়ে। ঠাসাঠাসির মাঝে ছেলেটাকে নিয়ে বড়ো কসরত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন সালমা। চার তলা আসতেই নেমে এলেন ত্রস্ত।
ওয়ার্ড বাম দিকে। যেতে যেতে ঘাম মুছলেন সালমা। কপালটা মসৃন রইলেও চোখদুটো বর্ষার মতো ভিজে গেল আবার। ওয়ার্ডের দরজার এসে ভদ্রমহিলা এদিক-ওদিক চাইলেন। রাহাত চিল্লিয়ে উঠল,
“ ওইতো আব্বু!”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
২৭ নম্বর বেডে শোয়া লোকটাকে দেখেই সালমার বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। একরকম উড়ে গেলেন ওখানে।
মাথা, হাত পা সুদ্ধ ব্যান্ডেজে মোড়ানো খোরশেদ। জ্ঞান ফেরেনি। স্যালাইন চলছে লাগাতার। শক্ত-সামর্থ্য মানুষটাকে প্রথম বার এমন করুণ দশায় দেখে সালমা নিতে পারলেন না। অত অত মানুষের মাঝেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আশপাশ থেকে মানুষ ফিরে ফিরে চাইল। কেউ দেখল অবাক হয়ে! কেউ তার ব্যথা বুঝে সুপ্ত একখানা দীর্ঘশ্বাস বুকে মিটিয়ে নিলো।
রাহাতের চোখে পানি। তরতাজা বাবাটা তার সকাল বেলা অফিসের জন্যে বেরিয়ে গেল। অথচ এখন কেমন বেডে শুয়ে আছে। খোরশেদের বিছানা ঘেঁষে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ বসে আছেন। সালমা আর রাহাতকে কিছুক্ষণ দেখলেন মনযোগ দিয়ে। রয়েসয়ে শুধালেন,
“ জি মানে, আপনারা কি ওনার বাড়ির লোক?”
হঠাৎ প্রশ্নে সালমার কান্না থামে। ফিরে চাইলেন নিকাবের ওপর হতে। কোনওরকমে আওয়াজ ফুটল গলায়,
“ জি। আমি ওনার স্ত্রী। কিন্তু আপনি?”
লোকটি যেন এই কথায় হাজারগুণ স্বস্তি ফিরে পেলেন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন,
“ আমার নাম হাসান আহমেদ। ওনাকে আমিই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপনাদের আমিই ফোন করেছিলাম!’’
সালাম বেগম অবাক হলেন প্রথমে। ভেজা চোখদুটো ভীষণ কৃতজ্ঞতায় লুটিয়ে যেতে চাইল। দুহাত জড়ো করে বললেন,
“ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনার উপকার আমার সারাজীবন মনে থাকবে।”
হাসান আহমেদ পালটা দু হাত এক করে বললেন,
“ না না এভাবে বলবেন না। মানুষ হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।”
পরপরই কপালে চিন্তার রেখা ফুটল। বললেন,
“ কিন্তু, ওনাকে দেখে তো ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছে। ওনার সঙ্গে এমন শত্রুতা কার থাকতে পারে বলুন তো!”
সালমা বুঝতে না পেরে বললেন,
“ ঠিক বুঝলাম না,আপনি যে ফোনে বলেছিলেন ওনার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাহলে শত্রুতার কথা এলো কেন?”
ভদ্রলোক জ্বিভে ঠোঁট ভেজালেন,
“ জি এক্সিডেন্ট তো বটেই। এটাও একধরণের দূর্ঘটনাই। আমি আপনাকে পুরোপুরি মিথ্যেও কিন্তু বলিনি। তবে এই দূর্ঘটনা গাড়ির তলায় পড়ার ছিল না।”
“ দয়া করে একটু খুলে বলুন ভাই। আমি আসলে এখন এতো জটিলতা নেয়ার অবস্থাই নেই,বুঝতেই তো পারছেন।”
“ জি জি,আমি হেয়ালি করছি না। আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কী! আমার অফিসও মতিঝিলে। সব সময়ের মতো লাঞ্চ ব্রেকে চা খাচ্ছিলাম। সেসময় উনিও ওই দোকানে এলেন। চায়ের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ কোত্থেকে কিছু গুণ্ডামতো ছেলেপেলে এলো! এরপর কথা আছে বলে একটু সাইডে নিয়ে গেল ওনাকে। বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি। বলতে পারেন কিছুটা তক্কে তক্কে চেয়েছিলাম বোঝার জন্যে। তারপর দেখলাম হুট করেই ওরা ওনাকে মারধর শুরু করল।”
সালমা আঁতকে বললেন,
“ সে কী! কী বলছেন?”
“ জি। আমি আসলে বীরপুরুষ হতে পারিনি। ওখানে যারা ছিল তারাও পারেনি। অত গুলো লোক কেউ এগোলো না। আমি একা কী করতাম বলুন! আমাদের চোখের সামনেই ওরা ওনাকে বেধরম মেরেছে। এরপর যখন রেখে গেল, তখন কয়েকজন মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। বাকীরা চলে গেছে কিছুক্ষণ হলো। ওনার সেন্স ছিল তখন। ফোনের লকও খুলে দিয়েছিলেন বাড়িতে জানানোর জন্যে। একটু আগে ইঞ্জেকশান দেয়া হলো তো! তাই ঘুমোচ্ছে।”
সব শুনে সালমা বেগমের মাথায় বাঁজ পড়ল। থম মেরে বসে রইলেন অমন। ছোট্ট মাথার অধিকারী রাহাতও সমান বিস্মিত। তার বাবাকে কেউ কেন মারবে?
সালমার সব জট পাঁকিয়ে গেছে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভরা নজর ক্ষণে ক্ষণে স্বামীর ওপর ফেলছেন। লোকটি আরও কিছু কথা বললেন নিজের মতো।
তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এতক্ষণ খোরশেদের বাড়ির লোকের অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি।
কিন্তু সালমার বিস্ময় গেল না। তার মধ্যেই হাজির হল নার্স। ডাকল বেশ রুক্ষ গলায়,
“ বেড নং ২৭ এর বাড়ির লোক এসেছে?”
রাহাত স্তম্ভ হয়ে থাকা মায়ের বাহু ধরে ঝাঁকাল। জানাল ছোটো কণ্ঠে,
“ আম্মু নার্স ডাকছে!”
তড়িঘড়ি করে চোখ মুছলেন সালমা। ত্রস্ত পায়ে কাছে আসতেই উনি বললেন,
“ আপনাকে স্যার ডাকছেন। আসুন আমার সাথে!”
রাহাতকে বাবার পাশে বসিয়ে, সালমা নার্সের পেছনে গেলেন। নিদ্রিত বাবাটাকে দেখে রাহাতের ক্ষুদ্র বুকে মোচড় দেয়। মাংস ফোলা নয়নজোড়া মুছে নেয় হাত উলটে৷ আর একটু এগিয়ে ছোটো ছোটো আঙুল চালিয়ে চুল গুছিয়ে দেয় বাবার।
“ এত কী ভাবছো?”
পুষ্পিতার ধ্যান কাটে। দু কাধ ছলকে ওঠে ঢেউয়ের মতো।
চটপট জানায়,
“ কই, কিছু না তো!”
“ কিছু নাহলে ভেতরে এসো।”
তীব্রর সোজাসাপটা কথায় মেয়েটা ভরকে গেল কিছু। চোখ বড়ো করে বলল,
“ ভেতরে,কেন?”
“ কেন মানে? আমি বলছি তাই।”
পুষ্পিতার মাথাটা গরম হলো অমনি। ঠান্ডা মেয়েটা সহজে রাগে না। কিন্তু আজ মনে হলো তালুতে কেউ কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা খারাপ লোক তো!
তনুজার সাথে ইটিস-পিটিস শুরু করে তাকে ঘরে ডাকা হচ্ছে? কেন, যাবে না পুষ্পিতা। স্যার বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে? মেয়েটা চেষ্টা চালাল গাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার। বিধিবাম! পেলব হাতে এক টান মেরে আস্ত শরীরটাকেই ভেতরে নিয়ে গেল তীব্র। কর্মে তার ভীষণ অধিকারবোধ। পুষ্পিতা হতভম্ব হয়। পালটা হকচকায় দরজা বন্ধ হতেই। ফ্যালফ্যালে বিস্ময় নিয়ে বলল,
“ আমি,আমি…”
তীব্র বলার সময় দিলো না। মুখের ওপর বলল,
“ আমার রুমটা এলোমেলো হয়ে আছে। গুছিয়ে ফ্যালো যাও।”
পুষ্পিতার হতচেতন নয়ন জোড়া কপালে ঠেকে যায়।
কণ্ঠে অবিশ্বাস নিয়ে শুধায়,
“ আমি?”
তীব্র ভ্রু কোঁচকাল,
“ তো? আর কে গোছাবে। যে কাজ পরে করতে হবে সেটা আজ থেকেই শুরু করো। যাও।”
পুষ্পিতা আরেক দফা হোচট খেল। পরে করতে হবে? মানেটা কী! স্যার কীসব বলছেন! মেয়েটা ভেতর ভেতর প্রতিবাদী হওয়ার প্রয়াস খাটাল। রেগেমেগে বলতে চাইল কড়া গলায়,
“ আমি পারব না। আপনার ঘর গোছাতে তনুজাকে নিয়ে আসুন। প্রেম করবেন ওর সাথে,আর কাজ করে দেব আমি? কেন?”
কিন্তু হলো না। তীব্রর প্রতি ভালোবাসায় চুইয়ে পড়া মন,তার বিলাতি চোখ জোড়ার আকর্ষণ পুষ্পিতার মাথা নুইয়ে রাখে। মেয়েটা চুপচাপ ঘাড় কাত করল। প্রতিবাদ তো দূর,উলটে নরম কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“ আপনার ঘরটা যেন কোনদিকে?”
তীব্র একটা হাত লম্বা করে দেখাল। পুষ্পিতা চোখের কোণা দিয়ে তাকে দেখতে চেয়েও দেখল না। চিবুকটা গলায় ঢুকিয়ে চুপচাপ চলে গেল।
তীব্র মুহুর্তে তার পিছু নেয়৷ দরজায় এসেই আঁতকে উঠল মেয়েটা। ঘরের দশা লণ্ডভণ্ড। টেবিল উলটে আছে। ফল,ঝুড়ি সহ কাচের জগ-গ্লাস ভেঙেচুরে পুরো ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে।
পুষ্পিতা আর্তনাদ করল মৃদূ গলায়,
“ এ কী!”
হতবাক হয়ে তীব্রর দিক চাইল ফিরে। অথচ যার জন্যে ঘরের এই দশা,তার মাঝে হেলদোল দেখা গেল না।
বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো মানুষটা উলটে প্রশ্ন করল,
“ দেখেছো কী অবস্থা? যাও যাও একটু পরিষ্কার করে দাও।”
পুষ্পিতা আশ্চর্য না হয়ে পারছে না! কীভাবে কথা বলছে দ্যাখো! যেন তার ঘরের বউ। হুহ,বউতো করবে সেই তনুজাকে। তাহলে ওর সাথে এত অধিকার কীসের? যখন-তখন হাত ধরে টানবে। ঘর গোছাতে বলবে। নেহাত সে মুখের ওপর কিছু বলতে পারে না। অন্য কেউ হলে!
পুষ্পিতার ভাবনার পথে মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিটকে এলো,
“ মুখের ওপর বলতে পারলেও কী বলতি? যার প্রেমে মনে মনে নাকানিচুবানি খাচ্ছিস,তাকে মানা করা এতো সোজা?”
পুষ্পিতা নিজের কাছে নিজেই থতমত খেল। সত্যিই তো, স্যার, যাকে ও ভালোবাসে তাকে না বলতে পারবে কখনও? পুষ্পিতার নজর পালটে গেল দুঃখে। স্যার এখন তনুজার হলে কী হবে! ওর ভালোবাসা তো আর কমে যায়নি।
সুন্দর সেই চাউনী দুটো তীব্র সরাসরি দেখল। কিছু বুঝল কী না জানা নেই!
তাগাদা দিলো,
“ কী হলো? এখনও দাঁড়িয়ে আছো? শুরু করবে কখন?”
তারপর হাত উলটে ঘড়ি দেখল একবার। মেয়েটা মনে মনে ভেঙচি কাটে।
শুধায় গোমড়ামুখে ,
“ ঝাড়ু কোথায়?”
“ রান্নাঘরে।”
পুষ্পিতা চলে যায় সেদিক। রান্নাঘরের দরজার পেছনে ফুলঝাড়ু রাখা। পুষ্পিতা হাতে তুলে ফিরতেই চমকে উঠল একটু!
তীব্র যে কখন এখানে এসে দাঁড়িয়েছে! ও ক্ষণিকের ধড়ফড় করা বুকটা স্বস্তিতে ঢাকে। তীব্র কেমন ভাবে চেয়ে আছে! চাউনীর দশা দূর্জ্ঞেয়।
পুষ্পিতা ভেতর ভেতর মরণ শ্বাস ফেলল। এমন করে তাকিয়ে তাকিয়েই স্যার ওর সর্বনাশটা করেছে। কী আছে এতে? প্রেম না অন্য কিছু! এতো কী দেখে স্যার? আজকাল উনি একটু বেশিই চেয়ে থাকছেন না!
পুষ্পিতা মাথা নুইয়ে ঘরের পথে ফিরে আসতে নেয়।
সেই আবার পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরল তীব্র।
মেয়েটা থমকাল। ঘুরে চাইল চকিতে। কথাবার্তা বিহীন,
হুট করে হাতটা টেনে কাছে আনল তীব্র। প্রকোপে হাত থেকে ঝাড়ুটা খসে পড়ল পুষ্পিতার।
মেয়েটা ভরকে ওঠা নয়ন দুটো সেদিকে তাক করতেও পারে না, হঠাৎ মুঠোর মাঝে নরম কিছুর স্পর্শ!
তড়িৎ ঘুরে চায় ও। তরতাজা একটা রজনীগন্ধা ফুল তীব্র গুঁজে দিয়েছে সেথায়। পুষ্পিতা হোচট খেল। ভ্রুযুগল কপাল ছড়িয়ে উঠে গেল চূড়ায়। হাঁ করার আগেই তীব্র ভয়ানক কাণ্ড ঘটায় আরেকটা। সুগন্ধে মম করা আস্ত বেলি ফুলের মালা তার কব্জিতে প্যাঁচিয়ে দেয়। পুষ্পিতার মস্তিষ্ক তখন রুদ্ধ, স্নায়ুপথ বন্ধ। অচল নিউরনের সমস্ত গতি!
নিস্তব্ধ চোখে তীব্রর মুখের দিক চেয়ে থাকল শুধু। ছেলেটা ঠোঁট কামড়ে হাসে।
ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“ কী ভেবেছো? তোমাকে দিয়ে কাজ করাব? স্যার হওয়ার সুবাদে ফেসিলিটি নিচ্ছি?”
পুষ্পিতা হতভম্বতার তোপে হ্যাঁ-না বলেনি। পল্লব ঝাপটে একবার ফুলটাকে দেখল,আরেকবার কব্জিতে বাঁধা সেই মালাটাকে।
স্যার হঠাৎ এসব কেন দিলেন?
তীব্র ওর মেলে রাখা হাতের মুঠোটা নিজেই বন্ধ করে দেয়। পুষ্পিতা তখন দ্বিধাদ্বন্দের জোয়ারে গলা অবধি ভিজে।
এতো কৌতুহলের দাপাদাপি নিতে পারছে না। বলেই ফেলল মুখ ফস্কে,
“ ফুল,ফুল কেন স্যার?”
তীব্র ভণিতাহীন,
“ কারণ আছে।”
পুষ্পিতার চোখে প্রশ্ন ছুটছে। থামার কোনও নামই নেই।
তীব্রর শার্টের বোতাম আচমকা ঘেঁষে এলো বুকের কাছে। কান বরাবর এসে ঠোঁট দুটো থামল। সহসা মুঠোর মাঝে ধরে রাখা হাতটা থরথর করে ওঠে পুষ্পিতার।
ওষ্ঠাগতপ্রাণে স্তম্ভ হওয়ার চেষ্টা চালায়। প্রখর রোদে তাণ্ডব চালানো সূর্যের চেয়েও উত্তপ্ত মানুষটার নিঃশ্বাস এসে ছুঁয়ে যায় সেখানে। খুব ফিসফিসিয়ে বলে,
“ হ্যাপি সিক্স মান্থস টু সি ইউ!”
বিদ্যুৎ শক খেলে শরীর যেমন ঝাঁকুনি খায়,পুষ্পিতার অমনই হলো। স্তম্ভিত মেয়েটা চোখ বুজে নিলো জোরে। বুকের গতি জোরালো। স্যারের সাথে ওর দেখা হওয়ার ছ মাস হয়ে গেছে? আর স্যার সেটা মনেও রেখেছেন? কিন্তু কেন? ও কি স্যারের বিশেষ কেউ!
তীব্র ঠোঁট সরাল। তবে শরীর নয়। পুষ্পিতার তিরতির করা নেত্রপল্লব ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছেটা খুব করে মাথা তোলে আজ। ভিতু মেয়ে ওকে ভালোবাসে! নূহা তো কয়েকবার বলেছে এই কথা। তীব্রর বুকটা তৃপ্তিতে ভরে যায় ভাবতেই, এমন প্রতীমার মতো একটা মুখ সে সারাজীবন দেখবে।
তীব্রর ওষ্ঠপুট আচমকা ভীষণ অভদ্র হতে চাইল। ভিতু মেয়ে তো ওকে ভালোবাসে। তাহলে আজ একটু ছুঁয়ে দিলে ক্ষতি হবে? মনের ইচ্ছেকে যদি প্রাধান্য দেয়া হয়! যদি ওই রক্তজবার মতো ঠোঁট দুটোকে তীব্র আজ নিজের করে নেয়! ভুল হবে সেটা? না,কীসের ভুল? ভালোবাসায় কোনও ভুল নেই।
তীব্র বুক ভরে দম ফেলল। ঢোক গিলল বড়ো করে। উষ্ণ হাতটা পুষ্পিতার হাত ছেড়ে উঠে গেল গালে। মেয়েটা শক্ত খুঁটি বনেছে। তীব্রর ছোঁয়ায় দেহটা আরো শক্ত হয়ে গেল।
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৩৫
ঠকঠক করা অধরযুগলের নৈকট্যে তীব্র যখনই আসতে নিলো,ডোরবেলটা স্বশব্দে বেজে উঠল অমনি।
সম্বিৎ ফিরল দুজনের। চট করে চোখ খুলল পুষ্পিতা। তেমনি শশকের ন্যায় ব্যস্ত ভাবে সরে গেলো তীব্র।
কী হতে যাচ্ছিল! কী হতে পারতো! পুষ্পিতা বুঝেছে কী না একবার জানার চেষ্টাতেও রইল না। অপ্রস্তুত ভাবটা ঢাকতে লম্বা পায়ে এগোলো দরজার দিকে।