সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৫০
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
কয়েকদিন পরের কথা। আকাশে-বাতাসে এখন শুধুই প্রেমের গন্ধ বইছে। চারদিকে নতুন ছন্দের নতুন আলো। ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে আজ ১ তারিখ। বিস্তর
আনন্দের হইহই রব মিলিয়ে পুষ্পিতার এবার ফ্ল্যাটে শিফট হবার দিন।
এ নিয়ে কাল থেকে তোড়জোড়ের কমতি নেই।
ভাগ্য ভালো দিনটা শুক্রবার। আয়েশা সকালে উঠেই রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বাসা পালটানো তো কম ঝামেলার নয়। বেশ সময়ের ব্যাপার। কখন বাসা গোছাবেন,কখন রান্না করবেন!
এদিকে পাশের ফ্ল্যাটেও বাসা পাল্টানোর একইরকম আয়োজন। কিন্তু তীব্রদের অত ব্যস্ততা নেই। আসবাব বলতে দুটো খাট,একটা ডিভান,আর দুটো টেবিল-চেয়ার। রান্নাবান্নার বাসন-কোসন আর বিশেষ কী!
একটা পিকাপেই ওদের সব এঁটে গেল। নাহিদের আবার একটা চাকরি হয়েছে। তবে আগেরটার চেয়ে বেতন ভালো।
আজকে ওদের কারোর কাজ নেই। তাই নিজেদের চেয়েও,
প্রেমিকাদের বাসা পালটানোয় দুই পুরুষের মাথা ব্যথা বেশি। এই যে, তীব্র শুরু থেকে কাজে বহাল। সে চারজন লোক ভাড়া করেছে মালামাল টানাটানির জন্যে। তাদের সাথে নিয়ে দুরন্ত পায়ে ঘরে এলো নাহিদ। ঘোষণা দিলো উঁচু স্বরে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আন্টি,ওনারা এসেছেন। কী কী নিতে হবে?”
আয়েশা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন। নাহিদের সাথে চারজন রোগা-পাতলা লোক দাঁড়িয়ে । ভদ্রমহিলা আসবাব দেখালেন।
এক এক করে কাঁধে তুলে নিচে নামলেন তারা।
তীব্র গেটেই আছে। তার কাঁধে মালামাল তোলার তদারকির দায়িত্ব।
আয়েশা চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে রেখে,নিজেও লোকগুলোর সাথে সাথে চললেন। কোথায় কী ঠোকাঠুকি দিয়ে নষ্ট করবে,একটু সাথে থাকা ভালো!
নাহিদ আর যায়নি। সে ঘরেই রয়ে গেল। গলা তুলে একবার দেখল ভেতরটা। চোখের ভেতর হন্যে ভাব! যাকে খুঁজছে, সে কই?
কাঙ্খিত মানুষ তখনই এলো। নাহিদের কণ্ঠ শুনেই হাতের সব কাজ ফেলে আসা ।
অমনি দুজন মুখোমুখি হয়।
চপল নূহা একপ্রস্থ গুটিয়ে গেল সাথে। কপোলে ফুটল লাল পলাশের ঝাঁক।
নাহিদের সরাসরি দৃষ্টি!
যাতে ঘায়েল হয়ে নার্ভাসনেসের ঘাম ছুটল তার।
তীব্রকে দেখলে পুষ্পিতা এত লজ্জা পেতো কেন,সব সে এখন হাড়েহাড়ে বুঝছে।
কুণ্ঠার বান বুকের ভেতর লুকাতে চাইল নূহা। এই যে নাহিদের সরাসরি তাকানো? এই যে তার ঠোঁটের তরল হাসি? সবকিছু থেকে রেহাই পেতে গুটিগুটি পায়ে গিয়ে টেবিল ঘেঁষে দাঁড়াল।
চেয়ারে হাত দিতেই ছুটে এলো নাহিদ। বলল,
“ আপনি পারবেন না,আমি নিচ্ছি!”
নূহা হেসে ফেলল।
ও তো এমনি হাত রেখেছে। ঢেঁড়সটা কী ভাবল,চেয়ার কাঁধে তুলবে ও? ঘাড় নেড়ে বলল,
“ আচ্ছা।”
নাহিদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস,
“ আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে! দুজন একইসাথে বাসা পাল্টাচ্ছি। যাচ্ছিও একই বাসায়। তাও আবার ওপর নিচে! আপনারা যাবেন ভেবে প্রথমে কিন্তু ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল জানেন? তীব্র যে কী সারপ্রাইজটা দিলো আমাকে। অত গাট্টাগোট্টা নাহলে ওকে মাথায় তুলে নাচতাম।”
কিন্তু নূহার মধ্যে একটু চিন্তা দেখা গেল। আয়েশা এখনও জানেন না,তীব্র-নাহিদও একই বিল্ডিংয়ে উঠছে।
শোনার পর যে কী ভাববে!
ওকে চুপ দেখে কপাল কোঁচকায় নাহিদ,
“ কী হলো?”
“ হুঁ? না কিছু না।”
নাহিদ একপল সদর দরজায় দেখল। তারপর চাইল ভেতরের ঘরে। পুষ্পিতা যে কাজ করছে আওয়াজ আসছে এখানে।
ও আস্তে করে বলল,
“ আপনি প্লিজ সব সময় হাসবেন। আপনার হাসিটা ভীষণ সুন্দর। দেখলে শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে!”
নূহা লজ্জা পেলো। কেমন জোরালো বেগে ধ্বক করে কাঁপন ধরল বুকে।
কিন্তু খোঁচা দিতে ভুলল না। ত্যাড়া উত্তর দিলো,
“ সেজন্যেই বুঝি ভালোবাসতে এত সময় লাগিয়েছেন?”
নাহিদ ঠোঁট গোঁজ করে বলে,
“ আবার এসব কথা? পুরোনো অতীত টেনে বর্তমানের সুন্দর সময় নষ্ট করতে নেই।”
ওদের কথার মাঝেই ফিরে এলেন আয়েশা। হন্তদন্ত পায়ের শব্দে নূহা-নাহিদ তৎপর দুরুত্ব রেখে দাঁড়াল।
উনি বললেন,
“ দুটো ভ্যান চলে গেছে বুঝলে, বাবা! তীব্র সাথে আছে। চেয়ার নিচ্ছো কেন? লোক আছে তো!”
“ সমস্যা নেই, আন্টি। এটুকু কাজের জন্যে লোক লাগবে না।”
আরেকবার আপ্লুত হাসলেন তিনি। পরপর তাড়া দিলেন মেয়েকে।
“ তুই পুষ্পিতাকে নিয়ে যা। আমি খাবার গুছিয়ে আসছি। আহহা, বাড়িওয়ালাকে তো চাবিও বুঝিয়ে দেইনি। যাই দিয়ে আসি।”
মায়ের কথায় মাথা নাড়ল নূহা। পুষ্পিতা বস্তাটা টেনেটুনে বসার ঘরে আনল। একজন ভ্যানচালক এসে নিয়ে গেলেন সেটাকে। আয়েশা খাবারগুলো টিফিন ক্যারিয়ারে ভরেছেন। পুরো বাসা ফাঁকা করে একইসাথে নামল সবাই।
একেবারে সামনে পুষ্পিতা। তারপর আয়েশা,নূহা। আর একদম পেছনে নাহিদ। চ্যাপ্টা কাঁধে কাঠের চেয়ার।
সম্মুখের হেঁটে যাওয়া নূহাকে দেখে দেখে কিছুক্ষণ চোখ জুড়াল সে। ফিসফিস করল আচমকা,
“ নূহা,আজকেই আন্টিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেই?”
মেয়েটা চমকে চাইল।
চোখ প্রকট করে বলল,
“ আপনি কি পাগল? এই কাজের মধ্যে আপনার বিয়ের কথা মাথায় এলো কেন?”
ছেলেটা বড়ো নিষ্পাপ ভাষায় বলল,
“ জানি না। আপনাকে ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না এখন।”
নূহা জ্বিভ কাটল। হাঁসফাঁস করে দেখল মাকে। আয়েশার খেয়াল বোধ হয় এদিকে নেই। আরামসে সিঁড়ি ভাঙছেন তিনি। ও একটু স্বস্তি পেলো। পিছু ফিরে মুখ বেঁকিয়ে বলল,
“ আগে আপনি ছেড়ে তুমিতে আসুন। তারপর বিয়ে!”
নাহিদ পরাস্ত গলায় বলল,
“ প্র্যাকটিস করছি তো। কাল রাতেও অনেকবার করেছি। কিন্তু অভ্যেস নেই বলে মুখ ফস্কে আপনিই বেরিয়ে যায়। এখন থেকে রোজ আপনার কাছে এসে দু তিনবার তুমি বলে ডাকব। আপনিও কিন্তু তুমি করে বলবেন।”
নূহা মাথা কাত করল।
“ আগে আপনি, তারপর আমি।”
“ আচ্ছা আচ্ছা। আমি এখন যাই।”
অধীর পায়ের গতি বাড়াল নাহিদ। আয়েশাকে ছাপিয়ে নেমে গেল নিচে। চওড়া দেহের প্রস্থানপথে মূঢ বনে চেয়ে রইল নূহা । এত সরল একটা মানুষ!
কী নির্মল হাসি! কী পাপহীন কথাবার্তা! এমন মানুষ একান্ত হয়ে ওর জীবনে এসেছে,ভালো থাকতে আর কী চাই?
নিচে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন আয়েশা। দেখাদেখি নূহাও থমকাল। ভদ্রমহিলা ঝট করে ফিরতেই, ঘাবড়ে গেল মেয়েটা। শঙ্কা জাগল মনে,
ও কি কিছু করেছে? আম্মু এভাবে দেখছে কেন?
আয়েশা থমথমে গলায় বললেন,
“ সবে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছো। এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করার সময়। বিয়ে-শাদি অনেক দূরে। ছেলেটা আমারও পছন্দ। সময় হলে আমি নিজেই সব কিছুর ব্যবস্থা করব। এর আগে কোনো বাড়াবাড়ি নয়!”
পুরোটা গড়গড় করে বললেন তিনি। অমন করেই আবার হেঁটে গেলেন সামনে। শুধু নূহার নিঃশ্বাসটা আটকে বসল গলাতে। এর মানে আম্মু সব শুনে ফেলেছে! নাহিদ যে তখন বলল, ওকে ছাড়া থাকতে পারছে না? এটাও! এ বাবা,ছিঃ
নূহা লজ্জায় কোথায় ঢুকবে জায়গা পেলো না। শুধু মাথায় হাত দিয়ে হতাশ শ্বাস ফেলল। বিড়বিড় করল,
“ আমি এখন আম্মুকে মুখ দেখাব কী করে?”
সালমা বেগম রওনা করেছেন। জ্যাম পেরিয়ে আসতে যতক্ষণ লাগে! ভদ্রমহিলার গোছগাছের হাত ভালো। নিজের বাড়িতেও সাধ্যমতো সব তকতকে করে রাখেন। নূহাদের পুরো ফ্ল্যাটের জিনিস বইতে মোট চারটা ভ্যান লাগল। প্রথম ভ্যানটা সাথে নিয়ে আগে আগে চলে গেল তীব্র। ব্যাপারটায় পুষ্পিতার একটু মন খারাপ হয়। চুপচাপ খালি ভ্যানের পেছনে উঠে বসল সে। নূহা পাশে বসতে যাবে,অমনি কোত্থেকে এসে দাঁড়াল নাহিদ।
অস্থির চিত্তে বলল,
“ আমার পাশে বসুন, না না বোসো।”
নূহা চোখ রাঙাল। বোঝাল, পুষ্পিতা আছে। কিন্তু উদাস মেয়েটাকে দেখে মনে হলো এসব খেয়ালই করেনি। মৃগনয়নের মনোযোগ পিচের রাস্তায় আটকে।
নাহিদ হাঁপ ছাড়ল। বসতে বসতে বলল,
“ শোনেনি!”
এরপর আয়েশা বসলেন। ফুরফুরে হাওয়া সাথে নিয়ে ভ্যানটা তরতরিয়ে ছুটে চলল সামনে।
বিল্ডিংয়ের এখানে মালভর্তি পিকাপ দেখে অবাক হলেন আয়েশা।
এগুলো তো ওনাদের নয়। ওনারা যে শুধু ভ্যান ভাড়া করেছেন। এসব কার? পরপর ভাবলেন,একইদিনে হয়ত আরো ভাড়াটিয়া উঠছে।
তক্ষুনি কাছে এসে দাঁড়াল নাহিদ। আয়েশাকে কপাল কুঁচকে কোথাও একটা চেয়ে থাকতে দেখে বলল,
“ কোনো সমস্যা, আন্টি?”
“ হু? না আসলে এই পিকাপটা…”
এটুকুতেই ও আগ বাড়িয়ে বলল,
“ ওহ,ওটাতে আমাদের জিনিসপত্র।”
আয়েশা আকাশ থেকে পড়লেন।
“ তোমাদের? তোমরাও কি এই বাড়িতে ভাড়া নিয়েছ?”
“ জি। আপনাকে সেদিন তীব্র বলল না, এ মাসে বাসা ছাড়ার কথা?”
আয়েশা মহাচিন্তায় পড়ে গেলেন। তীব্র বলেছিল ওরাও একই মাসে বাসা ছাড়ছে। কিন্তু বাড়িটাও যে এক তাতো বলেনি।
“ কয় তলায় উঠেছ তোমরা?”
“ চার তলার এফ ফোর। আমি তো জানতামই না তীব্র আগেভাগে এখানে বাসা দেখে রেখেছিল।
বলল তিন তলায় পাশাপাশি খালি পায়নি। পেলে নিয়ে…”
বলতে বলতে ছেলেটা নিজেই আটকে গেল। হুশে এলো একটু বেশিই গড়গড় করে ফেলছে। থতমত ভাব করে কথা ঘোরাল,
“ ইয়ে, আমি যাই।”
পালাই পালাই ভাব করে চলে গেল নাহিদ। কিন্তু আয়েশার ভাবনা গেল না। পুষ্পিতা ফ্ল্যাটে শিফট নিলো, আর ওরাও বাসা পাল্টাল? একই দিনে,একই বাড়ি?
তাও আবার তিনতলায় পাশাপাশি খুঁজছিল তীব্র! এসব কি নাহিদ-নূহা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বলে? না কি অন্য কোনো ব্যাপার?
আচ্ছা,
কোনোভাবে কাণ্ডগুলো তীব্র পুষ্পিতার জন্যে করছে না তো!
আয়েশার কাছে চট করেই যেন প্রশ্নের উত্তর ধরা দেয়। পরিষ্কার হয়ে দাঁড়ায় পেছনের সব চিত্রপট।
তীব্র-পুষ্পিতাকে এ অবধি যতবার পাশাপাশি দেখেছেন,আজ পর্যন্ত চোখে লাগেনি। কিন্তু এইবার
ঘটনাগুলোর ফলাফল জড়িয়ে দুইয়ে-দুইয়ে চার হয়ে গেল।
পুষ্পিতা আশপাশ দেখতে দেখতে হাঁটছিল। তীব্র তো বলে এলো গেটেই দাঁড়াবে। এখানে নেই,তাহলে কি ভেতরে চলে গেছে? ওর জন্যে একটু অপেক্ষাও করল না?
কিন্তু মানুষটা তো এমন না। নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছে।
কোথায় গেল? তার নম্র পায়ের গতি আয়েশা,নূহা নিমিষেই ছুঁয়ে ফেলে। পাশাপাশি আসতেই,
পুষ্পিতার নজর পড়ল নূহার হাসিহাসি মুখে। কদিন ধরেই খুব হাসছে ও!
আগের মত লাফাচ্ছে,গল্প করছে। পুষ্পিতার এত ভালো লাগে এখন! আবার পুরোনো নূহাকেই ফিরে পেলো কাছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে খুব খটকা লাগছে পুষ্পিতার। নূহা
কদিন ধরে হুটহাট বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তাও আবার রাতে।
জিজ্ঞেস করলে বলে, ছাদে হাঁটতে যাচ্ছি। একবার পুষ্পিতাও যেতে চাইল। কিন্তু ও নেয়নি।
দু সপ্তাহ পর পুষ্পিতার পরীক্ষা। সেই ছুঁতো দেখিয়ে টেবিলে বসিয়ে রাখল।
সেদিন তো নাহিদের সাথে ফিসফিস করতেও দেখেছে।
দেখা হলেই দুজনের চোখাচোখিতে মিটিমিটি হাসি। আর ওই যে তখন আসার সময়? নাহিদ যে হুলস্থূল বাঁধাল নূহাকে পাশে বসাতে? পুষ্পিতা ওসব স্পষ্ট শুনেছে।
এখন তো মনে হচ্ছে তীব্রর কথাই ঠিক। ওদের মধ্যে নির্ঘাত কিছু আছে। কিন্তু থাকলেও বা, নূহা বলে না কেন ওকে? লজ্জা পায়? না কি ওকে আর আগের মতো ভালোবাসে না?
ভাবতেই মুখ কালো করে পাশ ফিরল পুষ্পিতা।
নূহাও ফিরল তখনই।
“ কী দেখছিস?”
হাস্যহীন চেহারায় দুপাশে মাথা নাড়ল ও।
নূহা চোখ নাঁচিয়ে বলল,
“ আজকে না,তোকে একটা কথা বলব বুঝলি! অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম বলব,কিন্তু পারিইনি। সব কাজ শেষ করে ফ্রি হই,তারপর হ্যাঁ?”
এই এক কথায় পুষ্পিতার মন খারাপ হুড়মুড় করে পালাল। মুচকি হাসল সে। নূহা কী বলবে সে তো জানা কথা। পুষ্পিতা ঘাড় কাত করল। ছোটো করে বলল,
“ আচ্ছা।”
সবাই মিলে তিন তলায় এলো। ঘরের দরজা তখন বন্ধ। পুষ্পিতা পা বাড়াতে গিয়েও থামে। এই ফ্ল্যাটটা ওর জীবনের প্রথম স্বপ্নপূরণের গল্প। যেটা ও না চাইতেও পেয়েছে। তাও আবার বিনা পরিশ্রমে। হোক,তাও তো ওর নিজের জিনিস এটা। আর সেখানে ও তীব্রকে ছাড়া কী করে ঢুকবে? এতদিন ধরে পুষ্পিতা যে অন্তঃপটে স্বপ্ন এঁকে গেল, তীব্রর হাত ধরে একইসাথে গৃহপ্রবেশ হবে! বাস্তবে
হাত না ধরুক,অন্তত মানুষটাকে পাশে তো চাই।
আয়েশা সবার সামনে ছিলেন। ভেজানো দরজা হাত দিয়ে ঠেললেন তিনি।
কাঠের দোর ঠা করে খুলে এপাশের দেয়ালে গিয়ে মিশল। সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো পুরুষালি স্বর চিৎকার ছোড়ে,
“ ওয়েলকাম!”
পিলে সুদ্ধ চমকে গেল সকলের।
ভেতরে চোখ যেতেই বিস্ময়ের পাহাড় ধ্বসল মাথায়।
পুষ্পিতা নিস্তব্ধ,বিমুঢ়। ওষ্ঠযুগলের বন্দি দশা দু পথে সরে গেল।
চোখ পড়ল সম্মুখে দাঁড়ানো ঐ প্রার্থিত মানুষে। শুধু সে একা নয়,পুরো দলবল এখানে।
শাফিন,মিরাজ,আরমান,মুশফিক সবাই। দেয়ালে বেলুনের মেলা! রঙচঙে কাগজে তৈরি ফুল স্কচটেপে কয়েদি।
তার মাঝে বড়ো বড়ো ইংরেজি অক্ষর বসানো। পুরোটা মিলে তৈরি “ WELCOME PUSHPITA”
নূহা সব তাজ্জব হয়ে দেখছে। ও নিজেও কিছু জানতো না। দৃষ্টিতে প্রশ্ন নিয়ে নাহিদের দিক চাইল সে। ছেলেটা কণ্ঠ নামিয়ে বলল,
“ বিট্টু কদিন ধরেই প্ল্যান করছিল। সেই অনুযায়ী আমরা কাল রাতে এসে সব সাজিয়ে গিয়েছি। কত ভালোবাসে দেখেছেন? প্রেমিকাকে ফ্ল্যাটও দেয়,আবার ওয়েলকামও করে।”
নূহার চোখের সাথে মন জুড়িয়ে গেল। রোদের মতো হাসি নিয়ে দেখল পুষ্পিতাকে। মেয়েটার মুখবিবরে পূর্নিমার রাত। কত খুশি দুচোখে!
যে খুশি দেখে নূহার মনে হলো সেদিন তীব্রর পরিচয় লুকিয়ে ও কোনো ভুল করেনি। যদি তক্ষুনি ভুল করে রাগের বশে পুষ্পিতাকে সব বলে দিতো,এই অনাথ মেয়েটার এত খুশি হওয়া হোতো কখনো? তীব্র তো মানুষ নয়! পুষ্পিতার জীবনে নেমে আসা স্বয়ং স্বর্গদূত। যে ভালোবাসার ছলে প্রেমিকার জন্যে সব করতে পারে।
সবার সব বিস্ময় ছাপিয়ে এগিয়ে এলো তীব্র। বিহ্বল পুষ্পিতাতেই ক্ষুরধার দৃষ্টি তার।
পাশে দাঁড়ানো প্রৌঢ়ার দিকে কোনো মনোযোগই নেই। বড্ড সাবলীল খসখসে হাতটা সামনে বাড়িয়ে বলল,
“ এসো।”
পুষ্পিতা সম্মোহনের ন্যায় চেয়ে। হাতে হাত রাখল শব্দবিহীন। বিবশ পা-টা বাড়িয়ে ঢুকল ভেতরে।
অমনি দুপাশ থেকে বন্ধুরা ফুল ছিটিয়ে দেয়। গোলাপ, গাঁদার পাপড়ি গুলো উড়ে উড়ে ওদের গায়ে লুটিয়ে পড়ে। পুষ্পিতার ঠোঁটদুটো হাসির তোড়ে খুলে গেল। নাহিদ এক লাফে ভেতরে এসে বলল,
“ আমিও দেই। আমারও তো ভাবি।”
সহসা ভ্রু টানটান করলেন আয়েশা। সব কৌতূহল যেন কাটায় কাটায় মিলেছে।
এর মানে নিচে বসে যা ভেবেছেন, সব ঠিক?
তড়িৎ মেয়ের দিকে চাইলেন
তিনি। নূহা এই চাউনীর মানে বুঝল। একটা চোর চোর ভাব করে ঘাড় চুলকাল সে।
আয়েশা ফোস করে শ্বাস ফেললেন। দুপাশে মাথা নেড়ে বললেন,
“ দুই বন্ধু তাহলে একই সাথে উচ্ছ্বন্নে গিয়েছো?
তাই তো বলি, হঠাৎ পাশের বাড়ির ছেলেরা আমার চেয়ার-টেবিল টানে কেন! এবার না বুঝলাম। আমি সাদা মনে কাদা রাখিনি,অথচ ঠিকই আমার মেয়েরা কাদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাহ!”
নূহা মাথা নুইয়ে ঠোঁট উল্টাল। সব সময় মুখে খই ফুটলে কী হবে!
আজকে সে বোবা। মায়ের কথার বিপক্ষে কোনো জবাব জানা নেই। আয়েশা গম্ভীর গলায় বললেন,
“ ঠিক আছে, ঠিক আছে। অত ভদ্র সাজতে হবে না। যা করার সে তো দুজন করেই ফেলেছো। সালমা আপা আসুক,তারপর বাকি কথা হবে।
আমাদের আর কী?
খরচা কমে গেল। দুটো বিয়ে এখন একসাথে, একই সেন্টারে দেয়া যাবে।”
নূহা বেখেয়ালে মাথা নাড়তে গিয়েও সজাগ চোখে চাইল। অমনি মিটিমিটি হাসলেন আয়েশা। মেয়েটা ফের লজ্জা পায়। নিম্নোষ্ঠ চেপে গলায় রাখে চিবুক।
মা এত সহজে মেনে নিলো! অবশ্য মানা করার উপায় আছে? ও আর পুষ্পিতা দুজনেই তো বেছে বেছে দুটো রত্ন যোগাড় করেছে। জেনে শুনে এমন রত্ন ফেরানোর
সাধ্য আছে কারো?
ভেতরে ঢুকেও
আয়েশা একটু বিব্রত হয়ে পড়লেন। এখানে এখন থাকা ঠিক হবে? ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে গুলো আনন্দ করছে তার মাঝে উনি বুড়ো মানুষের কী কাজ?
তক্ষুনি ওনার দিকে চোখ পড়ল মিরাজের। এইরে! এই খালাম্মার কথা তো মনে ছিল না। বিট্টুটাও যে কিছু বলেনি। প্রেমিকাকে স্বাগতম জানানোর উত্তেজনায় বোধ হয় সব ভুলে গেছে।
ওরা যা যা পরিকল্পনা করল,সেসব আয়েশা থাকলে হবে কী করে? কিছু একটা করতে হচ্ছে তো। সহসা এগিয়ে আরমানের কানে কানে কিছু বলল সে।
ছেলেটা মাথা নাড়ল।
চট করে আয়েশার কাছে এসে বলল,
“ আন্টি,আপনি এখানে কেন? এ বাসার ছাদটা এত সুন্দর না! চলুন আপনাকে ঘুরিয়ে আনি!”
বাইরে টাক ফাটা রোদ! অন্যসময় হলে যেতেন না আয়েশা। কিন্তু এই মুহুর্তে ভালোই হলো। ঘাড় নেড়ে বললেন,
“ এসো।”
পুষ্পিতা ঘরের চারপাশ দেখছিল। হঠাৎ কানে এলো গিটারের শব্দ। গলায় গিটার ঝুলিয়েছে শাফিন। টুং টুং করে সুর তুলল।
কিন্তু পুষ্পিতা চমকে গেল, তীব্রকে মুখ খুলতে দেখে। নিরেট,জমাট স্বরে গান ধরল সে,
“ Tera mera rishta hai keisa,
Ek pal door gawara nahi.
Tere liye har roz hain jeete,
Tujhko diya mera waqt sabhi.
Koi lamha mera na ho tere bina!
Har saans pe naam tera!
Kyun ki tum hi ho, ab tum hi ho.
Zindagi ab tum hi ho….
Chain bhi, mera dard bhi
Meri aashiqui ab tum hi ho….”
পুষ্পিতা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে রইল। বিমোহের তোড়ে চক্ষু মুঁদে আসছে। উনি গান জানেন? তাও এত রোমান্টিক গান! সেই গাড়ির ভেতর গান চালানো মানুষটাকেই দেখছে তো!
নূহার ঠোঁটে হাসির ফোয়ারা। আচমকা ওপাশ হতে পাশে এসে দাঁড়াল নাহিদ। বলল নিশপিশ করে,
“ আমার না, ওদের দেখে আরো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।”
ও বিরক্ত চোখে চাইল।
“ আপনি কি একটু চুপ করবেন? দুদিন হলো প্রেমে পড়ল,আর এখনই বিয়ে বিয়ে করছে।”
“ তাহলে? যেটা করতেই হবে,সেটা বলব না?”
“ না, বলবেন না। আমার লজ্জা লাগে বোঝেন না কেন?”
নাহিদ ঠোঁট চেপে হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ তাই? তুমি লজ্জাও পাও? দেখি তো লজ্জা পেলে আপনাকে না মানে তোমাকে কেমন লাগে!”
নূহা লজ্জা পেলো কী না কে জানে! তবে ফিক করে হাসল। বলল,
“ আপনি -তুমি,আপনি-তুমি এসব ঠিক করুন,তারপর লজ্জা পেয়ে দেখাব!”
নাহিদ চ সূচক শব্দ করল। এই এক জায়গায় এসেই সে আটকে যাচ্ছে। আর ওর জ্বিভটাও না! প্রেমে পড়তেই এমন মিরজাফর হয়ে গেল কেন?
ততক্ষণে তীব্রর গান শেষ।
প্রফুল্লতায় একাকার হয়ে সবাই হাত তালি দেয়। শব্দে ঘোর কাটল পুষ্পিতার। এক পল চোখ নামিয়ে আবার চাইল ওর দিকে। তীব্র বলল,
“ বাড্ডার বখাটে বিট্টু তোমার জন্যে গান শিখেছে। মুখস্থ করেছে। বেসুরো গলায় গেয়েছেও প্রথম বার। “খুশি হয়েছো?”
মিরাজ লাফিয়ে-চড়িয়ে বলল,
“ খুশি মানে? আলবাত খুশি। ভাবির চোখমুখ দেখে বুঝতে পারছিস না? কেমন মুগ্ধ হয়ে গেছে। আরে প্রথমবার গেয়েই তো ফাটিয়ে দিলি বিট্টু! মনে হলো সাক্ষাৎ অরিজিৎ সিং আমার সামনে এসে গেয়ে গেল।”
তীব্র কপাল কুঁচকে চাইল। যাতে স্পষ্ট বিরক্তি। ও জ্বিভ কেটে বলল,
“ একটু বেশি প্রসংশা করে ফেললাম, তাই না? আচ্ছা থাক তাতে কী! চল কেক কাটি। যা রোদ। আরমানটা আন্টিকে নিয়ে ছাদে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না।”
নূহা অবাক হয়ে বলল,
“ কেকও আছে না কি?”
মুশফিক বলল,
“ শুধু কেক না। আরো অনেক কিছু আছে!”
চার কোনার ছোটো একটা টেবিল । ওপরে গোলাকার ভ্যানিলা কেক। গায়ে কুটিকুটি অক্ষরে লেখা,
“ তোমার বাড়িতে তোমাকে স্বাগতম!”
পুষ্পিতা হতবিহ্বল এসবে। এতটা যত্ন,এতটা গুরুত্ব ও কোনোদিন পায়নি। তীব্রর সাথে দেখা না হলে হয়ত আজও পেতো না।
তার পেলব ডান হাতটা মুঠোয় নিয়ে তীব্র কেক কাটে।
একটা ছোটো টুকরো মুখে পুড়ে দেয়।
শাফিন দেয়ালের গায়ে গিটার দাঁড় করিয়ে রাখল। এসে বলল,
“ এবার তাহলে আসল কাজ?”
বাকিরা স্বায় মিলিয়ে হইচই করে। নাহিদও বাদ নেই। নূহা কিছু জানে না বলে বোকার মতো চেয়ে।
পুষ্পিতা বুঝতে না পেরে বলল,
“ কী কাজ?”
কেউ কোনো উত্তর দিলো না।
শাফিন পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের এগিয়ে দিলো।
“ নে।”
তীব্র ধরল।
তারপর আচমকা এক হাঁটু গেড়ে বসল পুষ্পিতার সামনে।
তরুনী থমকে গেল,চমকাল।
তীব্র বাক্স মেলে ধরে। স্বর্ণে বাঁধানো চকচকে আংটি ঝলক তুলল সেথায়।
শাফিন,মিরাজ মুখে আঙুল গুঁজে সিটি বাজাচ্ছে। নূহা উল্লাসের তোড়ে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। চোখেমুখে সবার বাঁধ ভাঙা আনন্দ আজ। ঠোঁট ভরেছে তুষ্টির হাসিতে।
শুধু তীব্র-পুষ্পিতার নিশ্চল নয়ন একে-অন্যতে বন্দি। মেয়েটা যখন জড়ের ন্যায় চেয়ে? তীব্র বলল,
“ আজ ভালোবাসার কথা বলব না,ভীতু মেয়ে। আজ বলব,
তুমি আমার একজন হও, ভীতু মেয়ে! শুধু আমার হও। আমার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসার মাঝে,আমার বেঁচে থাকার কারণ হও।”
তারপর থামল সে। এক ফোঁটা দম নিলো। জিজ্ঞেস করল কেমন স্বরে,
“ তীব্রর বুকের ঠিক বা-পাশটায় সারাজীবনের জন্যে বন্দি হতে,তুমি কি তৈরি ভীতু মেয়ে?”
আনন্দ কিংবা খুশি? দুইয়ের দোটানায় পুষ্পিতার আকাশ ভেঙে কান্না পেলো হঠাৎ। কোত্থেকে যেন একটা বেদনার উত্তাপ ছুটে এলো গলায়।
টলমলে চোখে মাথা নাড়ল সে। তীব্র স্বস্তিতে হাসে। পুষ্পিতার
লম্বা-চিকণ অনামিকায় আংটি গলিয়ে দেয়। উঠে দাঁড়াল তারপর। দুরুত্ব ঘোচাল শরীর এগিয়ে। পুষ্পিতার চোখের জল গড়িয়ে পড়ার ভাব। বড্ড যত্নে সেটুকু মুছে দিয়ে বলল,
“ সেদিন বলেছিলাম না, তুমি আর কাঁদবে না? আমি তো তোমাকে কাঁদাতে আসিনি ভীতু মেয়ে! আমি তোমায় ভালোবাসতে এসেছি। সুখের যন্ত্রণায় মারতে এসেছি তোমায়।”
গোটা ঘরে তীব্রর কথা ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। মিরাজ-মুশফিক-নাহিদ-শাফিন, সকলে বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে।
তীব্রর অতীতের সাক্ষি তারা। প্রত্যেক্ষ পরোক্ষ সবেতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। যে ছেলেটা সকাল শুরু করতো কারো নাক ফাটিয়ে। যার রাত ফুরাতো মদের নেশায়! সে আজ এক নারীর প্রেমে কত্ত বদলে গেছে! শুধু কী বিট্টু একা? ওরা বদলায়নি? এই যে শাফিন চাকরি করছে ঢাকায়! কত সহজ জীবন তার! মিরাজ টিউশান নিয়েছে। মুশফিক,আরমান এখনও কিছু করছে না। তবে করার চেষ্টা করছে খুব! এই একটা ব্যাপারে নাহিদ ওদের ইন্সপিরেশন।
নিজের যোগ্যতায় কী দারুণ ভাবে কাজ পায় সে ।ওরাও নাহয় নিজের মেধা খাটিয়ে দেখুক! একেবারেই না হলে বিট্টু তো আছে।
শাফিন সবাইকে ইশারা করল। বোঝাল, এখান থেকে চলে আসতে। এবার ওদের আলাদা স্পেস প্রয়োজন। কেউ কোনো গাঁইগুঁই করল না। নিঃশব্দে এপাশের ঘরে চলে এলো।
বসার ঘর রয়ে গেল শুধু ঐ দুজনের নামে। কিন্তু তাদের আদৌ এসবে খেয়াল আছে? দুজন যে দুজনায় মেতে!
পুষ্পিতার চোখ মোছালেও আবার জলের পুকুর হলো তা। ভেজা গলায় বলল,
“ একটা অনাথ মেয়ে! যার নিজের বলতে কিচ্ছু নেই। তার জন্যে এত কিছু করছেন? এমন কেন আপনি?”
তীব্রর সুদৃঢ় জবাব,
“ কারণ আমি হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছি। আকর্ষণ দিয়ে নয়!”
পুষ্পিতা ঝট করে বুকে মিশে গেল। ঠিক সেদিনের মতো।
কোমল-কালো চুলে হাত বোলায় তীব্র। মাথার এক পাশে চুমু খেয়ে মুখটা হাতে তুলে আনে।
ঠিক চোখের তারায় চেয়ে বলে,
“ সেদিন মনে মনে বলেছিলাম। আজ তোমার সামনে আবার বলছি,
আমার আর কিছু চাওয়ার নেই, ভীতু মেয়ে! শুধু চাই,তুমি আমায় এতটাই ভালো বাসো, যাতে তোমাকে ছাড়া আমার শ্বাস-প্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে আসবে।”
পুষ্পিতার মাথায় চট করে দুষ্টুমি চেপে বসল। কান্না ভুলে দুষ্ট হাসল সে।
ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,
“ ইস,শখ কত!
বখাটে একটা!”
তীব্র শব্দ করে হেসে উঠল। ফরসা কপাল নুইয়ে ঠুকল ওর কপালে।
বলল,
“ এই বখাটে তোমায় কত ভালোবাসে যদি বুঝতে!
তুমি আমার জীবনের একটা অংশ নাও, ভীতু মেয়ে! তুমি আমার হৃদয়ের মালকিন।
আমার তোমাকে দরকার,
আজকে কালকে আর সব সময়। কথা দাও,কখনও
ছেড়ে যাবে না!”
তীব্র হাত বাড়াল। নীরব আশ্বাস চাইল তার।
সেই হাত ছুঁতে পুষ্পিতা ছটফটিয়ে ওঠে। ধড়ফড়িয়ে স্বীয় হাতটা বাড়াতে চায়। তক্ষুনি ও ঘর হতে মুশফিক ছুটে এলো।
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪৯ (২)
পায়ের শব্দে পুষ্পিতার বাড়ানো হাত থামে। ফিরে চায় দুজন।
মুশফিক হড়বড় করে বলল,
“ বিট্টু, শাফিন অসুস্থ হয়ে পড়েছে! কেমন যেন করছে।”
তীব্রর ত্রস্ত নিজের হাত নামিয়ে ফেলল । উদ্বীগ্ন চিত্তে ছুটল সেথায়। পিছু নিলো পুষ্পিতা। কিন্তু কথা দেয়া? সেসব যে আর হলো না!