সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৫৭
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
পরিষ্কার আকাশের সাথে মিতালির সুর তুলে দাঁড়িয়ে নীলাচল। শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ জল অবিরাম ধারায় বইছে। শীতের স্বল্প কুয়াশা ছিড়েখুঁড়ে শির উঁচানো সূর্যের সোনালী আভায় চকচকে চারিপাশ। টিলার ওপর সিমেন্টের বাড়িটা বেশ উজ্জ্বল সেই আলোয়।
বিছানার এক কোনে মুখ ভার করে বসে আছেন সালমা। পৌঁছেছেন প্রায় অনেকটা সময়, অথচ বোরখা খোলেননি এখনো। চেহারায় উদ্বীগ্নের ছাপটুকু স্পষ্ট। প্রৌঢ়ার কোলে মাথা রেখে একটা ছোট্টো আদুরে ছানার মতো শুয়ে আছে
পুষ্পিতা। কদিন যাবত জ্বরের তোড়ে শরীর প্রচন্ড খারাপ।
তারওপর ঠান্ডা,কাশিও হচ্ছে খুব! ফরসা মুখটা শুকনো। হরিণী নয়ন তারা টলটল করছে জলে৷
খোরশেদুল ওর মুখ থেকে থার্মোমিটারটা বের করলেন। হাতে নিয়ে লক্ষ্য করলেন তাপমাত্রা। ফোস করে দম ফেলে বললেন,
“ ৯৯°।”
সালমা স্বস্তির শ্বাস টানলেন এক চোট। চিন্তিত চেহারায় এতক্ষণে হাসি দেখা গেল। বললেন,
“ যাক বাবা, কমেছে!”
পুষ্পিতা মুখ খুলল। রিনরিনে স্বর রুগ্ন বেশ! বলল,
“ তোমরা শুধু শুধু চিন্তা করছিলে! বলেছিলাম না,আমার কিছু হয়নি? এত তাড়াহুড়ো করে আসার কী দরকার ছিল মণি?”
দোর দিয়ে মাত্রই ঢুকছিলেন ফারজানা বেগম। সম্পর্কে সালমার সেই কলেজ জীবনের বন্ধু তিনি। দুহাত ভরতি নাস্তার ট্রেগুলো সমেত কেবলই পা রেখেছেন ঘরে। পুষ্পিতার শেষ কথা শুনতেই,ধমকে উঠলেন চড়া গলায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ চুপ করো মেয়ে! গায়ে এত জ্বর পুষে রেখে আবার বলছে আমার কিছু হয়নি!
আর তুমি আমাকে একবার জানালে না কেন? আমাকে বলতে না পারো শাহেদকে বলতে!”
পুষ্পিতা মিনমিন করে বলল,
“ এরকম জ্বর তো আমার প্রায়ই হয়। আপনারা শুধু শুধু ভাবছেন।”
ফারজানা চোখ রাঙিয়ে বললেন,
“ আবার কথা বলে! সালমা,দেখেছিস তোর মেয়ের অবস্থা? এরকম জ্বর নাকি ওর প্রায়ই হয়! কী দিয়ে মানুষ করেছিস বল তো এটাকে। ঠিকঠাক কিচ্ছু খেতে চায় না। কত বলে কয়ে দুটো ভাত খাওয়াতে হয়। এত রোগ শরীরে তাও কেমন কথা বলছে দ্যাখ।”
দু পা ফেলে হাতের খাবারগুলো টেবিলে রাখলেন তিনি।
খোরশেদকে বললেন,
“ শুনুন ভাইজান,আপনাদের মেয়ে কিন্তু খুব অনিয়ম করে। আমি যদি দু চারটে ধমক টমক দেই তখন কিন্তু আমাকে কোনো দোষ দিতে পারবেন না।”
সালমা বললেন,
“ দোষ কেন দেবো? তুই কি ওর পর? ভালোর জন্যে দুটো কেন,দুশো ধমক দিস। কেউ কিচ্ছু বলবে না। তুই যেভাবে মায়ের মতো ওর খেয়াল রাখিস,এমন কেউ পারে?”
ফারজানা হাসলেন। প্রসন্নের হাসি। তাগিদ দিয়ে বললেন,
“ অনেক কথা হয়েছে,এবার নে সবাই নাস্তা কর। ভাইজান হাত মুখ ধুয়েছেন?”
“ না আসলে…”
“ ওহ, দাঁড়ান আমি জলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শাহেদটা সেই সকালে বাজারে গেছে,এখনো ফিরল না।”
ফারজানা চপল পায়ে আবার চললেন বাইরে। পায়ের বেগ দেখেই ব্যস্ততা ঠাওর করা গেল।
এই টিলার অর্ধেক জায়গা তার স্বামীর নামে। তিনটে বাড়ির মাঝখানে একটা তকতকে উঠোন। কোনার বাম দিকে যে এক চালার বাড়িটা? পুষ্পিতা ওখানেই থাকে।
তার পেছন বরাবর মুখোমুখি স্থানে বিশাল অনাথ আশ্রমের সাইনবোর্ড দেখা যায়। শাহেদের বাবা মোস্তফা কামালের নামেই যেটা তৈরি করেছিলেন ফারজানা।
অনাথ আশ্রমে শখানেক বাচ্চারা থাকে। আশেপাশের বাড়িঘর থেকেও পড়তে আসে অনেকে।
এক্সিডেন্টের পর থেকে পুষ্পিতা এখানে রইলেও, আশ্রমের কাজে যোগ দিয়েছে প্রায় বছর দুয়েক হবে।
ফারজানা দোর চাপিয়ে ঘর ছাড়লেন। খোরশেদুলের
কথাতেও অসন্তোষ,
“ সত্যিই রে পুষ্পিতা! তোর প্রায়ই রাতে জ্বর ওঠে আর তুই কাউকে বলিস না? আমাদেরও তো জানাবি না কি!
কবে একটু নিজের কথা ভাববি?”
পুষ্পিতা কাষ্ঠ হেসে বলল,
“ আমার নিজের বলতে কিছু আছে খালুজান? কী নিয়ে ভাবব বলুন তো! বেঁচে আছি,এই অনেক।”
খোরশেদুলের মুখভঙ্গি বদলায়। ক্ষণ মুহুর্ত থমকায় চাউনীরা। একপল স্ত্রীর দিক চেয়ে বললেন,
“ এভাবে বলছিস কেন? আমরা বুঝি তোর কেউ নই? তুই কি পুরোনো কথা ধরে এখনো আমার ওপর…”
পুষ্পিতা মাঝপথেই বলল,
“ না না, খালুজান। আমি কি তেমন? আমার ওসব মনেও নেই।”
খোরশেদুলের চেহারায় আলো ফিরল না। অতীতের কাজের পরিতাপ পরিছন্ন চিহ্ন তুলল সেথায়। ছোটো থেকে মেয়েটার সাথে কত অন্যায় করেছেন! এখন শেষ বেলায় ভালোবাসলেও বা কী? এত সহজে কি সবাই সব ভুলে যেতে পারে!
ভাবনার মাঝেই হাতের ওপর একটা কোমল হাত পড়ল।
চোখ তুলে চাইলেন ভদ্রলোক। পুষ্পিতা ভেজা গলায় বলল,
“ আমি আমার বাবাকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। হয়ত দেখেছি,কিন্তু মুখের গড়ন মনে নেই। বাবা কেমন হয়,তারা কীভাবে কথা বলে প্রথমবার আপনাকে দেখে বুঝেছিলাম খালুজান। মিথিলা আপু আপনাকে যেভাবে বাবা বাবা ডাকতো,আমারও খুব ইচ্ছে করতো আপনাকে অমন করে ডাকতে। কোনোদিন সাহস নাহলেও,
আমার কাছে আপনি আমার বাবার মতোই খালুজান। মণির পর আমার আরেক গুরুজন।
আর শাসন তো মা-বাবারাই করে। আপনিও আমাকে শাসন করেছেন। আমার বাবা থাকলেও করতো। তাহলে অহেতুক সেসব মনে পুষে রেখে আমি কেন রেগে থাকব বলুন! এতদিনে আমাকে এই চিনলেন আপনারা?”
আবেগে,অনুশোচনায় খোরশেদের চোখ ছলছল করে উঠল। হাতটা তুলে পুষ্পিতার মাথায় রাখলেন তিনি।
মৃদূ হেসে বললেন,
“ তোর মন খুব বড়ো রে মা! এতটুকু মানুষ হয়েও মনের দিক থেকে তুই আমার অনেক ওপরে।”
পুষ্পিতা কিছু বলল না। রোগে ভোগা শরীরটায় নড়ন নেই তেমন। শুধু মণির কোলে আরেকটু দৃঢ় করল নিজেকে।
কাল থেকে ছটফটানো রমণী হাসলেন এবার। খোরশেদুল পুষ্পিতার মাথায় হাত বোলাচ্ছে, চোখ জুড়িয়ে গেল দৃশ্যটায়।
এমনটাই তো তিনি চেয়েছিলেন এক কালে। সেই নাদান শিশু পুষ্পিতা ঘরে আসা থেকেই চেয়েছিলেন,মেয়েটা খোরশেদুলের ভালোবাসা পাক!
এতদিনে হলেও,হচ্ছে তো। এই অনেক!
মাথা নামিয়ে পুষ্পিতার কপালে চুমু খেলেন তিনি। মোলায়েম কণ্ঠে শুধালেন,
“ কিছু খেতে ইচ্ছে করছে?”
ও মাথা নাড়ল দুপাশে।
“ না। খেতে ভালো লাগছে না।”
খোরশেদুল বললেন,
“ ভালো লাগছে না বললে তো হবে না। খেতে হবে! তোর মুখের দিকে কিন্তু ঠিক করে তাকানোও যাচ্ছে না, পুষ্পিতা। তুই যে যে ফল খেতে ভালোবাসিস,আমি সব এনেছি। ঠিক ঠিক করে খাবি, মনে থাকবে?”
পুষ্পিতা ঠোঁট ওল্টাল অনীহা দেখিয়ে। বোঝাল,খাওয়ার রুচি নেই।
খোরশেদ সতর্ক গলায় বললেন,
“ বুঝেছি, তোকে বলে লাভ নেই। সালমা তুমি কিন্তু নিজে দায়িত্ব ওকে সব খাওয়াবে।”
“ সে নাহয় খাওয়ালাম। কিন্তু এখন খালি পেটে তো আর ফল দেয়া যাবে না। একটু স্যুপ করে দেই?”
পুষ্পিতা এবারেও মাথা নাড়ল। গলা থেকে জ্বিভ সব তেতোয় একশা। এর মধ্যে খাবার নামবে?
খোরশেদুল এক ফাঁকে হাত ঘড়ি দেখলেন। সকাল ছাপিয়ে প্রায় দুপুর গড়ানোর সময় হয়ে এসেছে। তৎপর উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ব্যতিব্যস্ত আওড়ালেন,
“ বারোটা বেজে গেছে?
আমার যে কাল অফিসে একটা জরুরি কাজ ছিল। এক্ষুনি রওনা করতে হোতো!”
পুষ্পিতার কণ্ঠে উদ্বেগ,
“ এক্ষুনি? কিন্তু মণি যে বলেছিল আজ আমার কাছে থাকবে?”
“ হ্যাঁ, আমি একাই যাব। তোর এই অবস্থায় তোর মণি যাবে কখনো? পারে না পুরো বছর এখানে এসে থাকতে। যা ছটফট করে বাসায় থাকলে যদি দেখতি!”
“ কিন্তু রাহাত?”
“ ও তো কালই বোর্ডিংয়ে চলে গেছে। ওসব নিয়ে চিন্তা নেই। এই সালমা,আমি আসি বুঝলে। এখন না বের হলে জ্যামে পরতে পারি।”
সালমা বললেন,
“ ফারজানা নাস্তা দিয়ে গেল যে,খাবে না?”
“ হবে না।
এখান থেকে বাস পাওয়া খুব মুশকিল।
কাল থেকে সব স্কুল-প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না? অনেক কাজ জমা! তুই অসুস্থ শুনে আর থাকতে পারিনি।
যাক গে ফারজানাকে বলে আসি।”
ভদ্রলোকের হাবভাবে তাড়াহুড়ো। পুষ্পিতা উঠে বসল।
বলল,
“ আমি রাহাতের জন্যে কিছু জিনিস কিনেছিলাম। যদি নিয়ে যেতেন! বের করে দেব?”
ও উঠতে নিলে বাধ সাধলেন খোরশেদ,
“ উঠতে হবে না। তুই বল,কোথায়? আমি নিয়ে নিচ্ছি।”
“ ওই টেবিলের ড্রয়ারে।”
খোরশেদ ড্রয়ার টেনে খুললেন। পরপর তিনটি বাক্সের দেখা মিলল। ছোট্টো চারকোনাটায় ঘড়ি,আর অন্য দুটো ভরতি চকলেটে। সালমা হেসে বললেন,
“ চকলেট? রাহাত কি আর ছোটো আছে রে? কত লম্বা হয়েছে এখন! একেবারে বড়োসড়ো পুরুষ দেখতে লাগে।”
“ ও যতই বড়ো হোক, আমার কাছে সেই ছোট্ট রাহাতই থাকবে। যে জুতোর ফিতে বাঁধতে হলেও দৌড়ে আসত।”
খোরশেদুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“ ও তোকে খুব মিস করে জানিস! প্রায়ই ফটো এ্যালবাম বের করে তোকে দেখে।”
পুষ্পিতার মুখখানা তলিয়ে গেল অন্ধকারের কূয়োয়। গুমড়ে ওঠা পরিবেশ বদলাতে প্রসঙ্গ কাটালেন তিনি। বললেন,
“ ঠিক আছে, নিয়ে যাই তাহলে। তুই সাবধানে থাকিস।”
সালমাও উঠে এলেন।
“ চলো,এগিয়ে দেই। তুই একটু থাক মা,আমি যাব আর আসব।”
পুষ্পিতা ঘাড় কাত করল।
খোরশেদুল বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। সালমা পিছু পিছু চললেন স্বামীর।
পুষ্পিতার চোখ বেয়ে ক ফোঁটা জল গড়িয়ে গাল অবধি আসে। ওড়নার মাথা তুলে আবার মুছে নেয় তা।
এর কিছু সময় পরেই চৌকাঠে এসে দাঁড়াল শাহেদ। খুকখুকে কাশির শব্দে পুষ্পিতা ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। শাহেদকে দেখে স্বাভাবিক করল চোখমুখ। ছোটো করে বলল,
“ আসুন।”
শাহেদ মাথা নুইয়ে ভেতরে এলো। তার দুহাতের মুঠোয় দুখানা বাজারের ব্যাগ। একটার ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে লাউ শাকের সতেজ পাতা।
সেগুলো এনে রাখল মেঝেতে। জিজ্ঞেস করল,
“ জ্বর কমেছে?”
“ জি।”
“ আঙ্কেল-আন্টি কোথায়?”
“ আন্টি,মানে আপনার মায়ের কাছে গেল। খালুজান রওনা করবেন এখন।”
“ সে কী! আজকেই? মা যে আমাকে দিয়ে এক গাদা বাজার করিয়ে আনলেন,এসবের কী হবে?”
“ জরুরি কাজ আছে,তাই। মণি থেকে যাবে।”
শাহেদ বলল,
“ ওহ।”
তুমি ওষুধ খেয়েছিলে?”
“ জি।”
“ মা বলেছিল, তোমার পিঠে ব্যথার ওষুধ শেষ। এনে দিতে হবে?”
“ না। খালুজান নিয়ে এসেছেন। আপনি চিন্তা করবেন না।”
শাহেদ কাঁধ উঁচাল।
“ ঠিক আছে। আমি তাহলে ওদিকটায় যাই। কিছু আনার দরকার হলে ছোটনকে(কাজের ছেলে) বোলো। এনে দেবে।”
পুষ্পিতা একইরকম হাস্যহীন।
বলল,
“ কিছু লাগবে না। আপনি যান।”
“ আচ্ছা।”
বাজারের ব্যাগদুটো ফের হাতে তুলে শাহেদ বেরিয়ে যায়।
তার খচখচে জুতোর আওয়াজ বড্ড কানে লাগল পুষ্পিতার। সাইনাসের যন্ত্রণায় মাথার এক পাশ দপদপ করছে এখনো। খাটের চ্যাপ্টা কাঠের গায়ে মাথা হেলে দিলো সে! চোখ বন্ধ করল শ্রান্ত দশায়। দীঘল পল্লবে অসুস্থতা আর ক্লান্তি ছুটে এসে বসল অমনি। জ্বরে ভালো ঘুম হয়নি গত রাত। এইটুকুতেই তন্দ্রায় মুঁদে গেল পুষ্পিতা।
জানলা ছাড়া ঘরে বাড়তি আলো নেই। সদ্য দুপুরের নরম রোদ সেখান থেকে লম্বালম্বি ঢুকছে। সদর্পে গিয়ে হাত-পা মেলেছে পুষ্পিতার গোলগাল মুখে।
শুভ্র আদলের ঝকমকে রূপ, স্বল্প তমসায় তলাল সেই আলো কমতেই।
জানলা আর রোদের মাঝখানে এক চওড়া অবয়ব এসে দাঁড়াল হঠাৎ।
একটা লম্বা অন্ধকার লুটিয়ে রইল পুষ্পিতার কপোল জোড়ায়। সহসা ষষ্ঠন্দ্রিয় সচেতন হলো তার।
শ্বেত রঙা কপালে ভাঁজ বসল দু একটা। মনে হলো কেউ একজন চেয়ে আছে। দেখছে ওকে। তীক্ষ্ণ,ক্ষুরধার সেই দৃষ্টির ধরণ! পুষ্পিতার ঘুম শেষ।
ত্রস্ত চোখ মেলে চাইল। ফাঁকা ঘরে চোখদুটো সোজা গিয়ে পৌঁছাল দীর্ঘদেহী সেই মানুষের ওপর। তরুণীর রূগ্ন চোখের ঝাপ্সা চাউনী কাটিয়ে পূর্ণ রূপে ধরা দিলো যে!
পুষ্পিতার শীর্ণ বুক ছ্যাৎ করে উঠল।
থমকে দাঁড়াল পুরো পৃথিবী। সুবিশাল আকাশ চূর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ল মাথায়।
চুল, দাঁড়ি আর গোফের আড়ালে থাকা একটা ফরসা মুখ। ঘোলা নেত্রমণি জ্বলজ্বল করছে হীরের ন্যায়। আড়াই বছর! আড়াই বছর পর আবার মুখোমুখি দুজন। কত গুলো মাস,কয়েকশ দিন,কয়েক হাজার ঘন্টা পর তীব্রকে দেখল পুষ্পিতা। এই মুখ
চেনায় ভুল হতে পারে কখনো?
মেয়েটার শ্বাস প্রস্বাস থিতিয়ে এলো। শীতার্ত বাতাবরণেও ঘেমে গেল সমস্ত শরীর। পিঠের হাঁড় ছুঁয়ে নামল ভীষণ ঠান্ডা, বরফ স্রোত।
কিন্তু তীব্র? এমন অনুভূতি তারও হলো কী?
পুষ্পিতার মতো তারও কি শ্বাস থেমেছে? কমে গেছে বুকের গতি? হয়ত না। এইত,থরথর করে কাঁপতে থাকা মেয়েটার সামনে কী টানটান দেহে দাঁড়িয়ে সে।
চোখের পাতার পতন নেই।
ঠোঁটজোড়াতে নড়ন নেই। শুধু নিষ্পলক, নিষ্প্রাণ নয়ন মেলে সে পুষ্পিতাকেই দেখছে। শক্তপোক্ত গড়নে এক প্রস্থ নিষ্পৃহতা লেপটে।
দুজনের এই চেয়ে থাকার মাঝে কিছু সময় কাটল। হয়ত কয়েক পল! কিন্তু এই তাকানোতেই পুষ্পিতার মনে হলো, বহু যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন কেবল শতাব্দি নামার পালা! পুষ্পিতার তিরতির করা ওষ্ঠাধর দুই প্রান্তে তখন। মানুষটার এই আশাতীত,অপ্রত্যাশিত আগমন,মস্তিষ্ক মেনে নিতে বড্ড সময় লাগিয়ে দিলো।
খুব কষ্টে নিজেকে সামলাল পুষ্পিতা। বিস্ময় মাখা চোখজোড়া নামিয়ে আনল আস্তে।
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৫৬
ঢোক গিলল,ঘন
শ্বাস ফেলল দুবার।
গলার খাঁজে চিবুক ঢুকিয়ে শুধাল,
“ কেন এসেছেন?”