সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১১

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১১
বুশরা আহমেদ

আমিরিকা নিউইয়র্ক,,,সিটি ,,
আজকে একটু বেশিই ঠান্ডা পরেছে । বুশরার ঠান্ডা এমনিতেই অনেক বেশি পছন্দের ‌। রাহি আজকে বুশরাকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করাবে ।সেই জন্য বুশরা রেডি হচ্ছে। বুশরার পরনে সাদা রঙের টপস্,চুরিদার পায়জামা, সঙ্গে সাদা রঙের হিজাব,হলকা মেকআপ,হালকা লিপস্টিক।
রাহি নিচে বসে, সোফায় কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ল্যাপটপ এ কাজ করছে ।
বুশরা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো ,,রাহি বুশরার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ল্যাপটপ এ কাজ করছে ।
বুশরা নিচে নেমে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলো ।

রাহি এসে , বুশরার পাশে বসলো।
কেভেন এসে রাহি আর বুশরার খাবার সার্ভ করলো।
বুশরা: ভাইয়া কোথায় রাহি ভাইয়া?
রাহি : আমি আগেই বলেছি তৌফিক ছোট না .. । অফিস এর কাজে ওরে এখানে সেখানে যাওয়া লাগে ।
রাহির কথাতে বুশরার কিছুটা কষ্ট হলেও কিছু বললো না। চুপ চাপ খেতে থাকলো । তখনি তাদের মাঝে উপস্থিত হয় একজন ,,।
মেয়েটা বাসাই এসে রাহি এর সামনের চেয়ারে বসে বললো” হেই আর .এ আমাকে ভুলে গেছিস এতো দিন দেশের বাইরে ছিলি । তাতেই ভুলে গেছিস।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহি : তোকে কি করে ভুলে যাবো বল! আমি আমিরিকায় আসছি এতো দিন। তুই কোথায় ছিলি ।
বুশরা খাওয়া বন্ধ করে মেয়েটাকে প্রয়োগ করছে । মেয়েটার পরণে লেডিস গেঞ্জি, সঙ্গে জিন্সের জ্যাকেট, প্যান্ট। ঘাড় সমান সিল্ক চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, ফর্সা মুখটায় হালকা মেকআপ,গাঢ় লিপস্টিক। এক নজরে যে কেও দেখলে বলবে আমিরিকান। চেহারায় আমিরিকানদের ছাপ। গায়ের রং সাদা ফর্সা।
বুশরা এতোক্ষণ মেয়েটাকে প্রয়োগ করলো ।
মেয়েটা বুশরার দিকে তাকিয়ে বললো,, তুমি নিশ্চয় বুশরা ??
বুশরা : জ্বি!

মেয়েটা: আমি এলিন। তোমার কথা রাহির মুখে অনেক শুনেছি।
বুশরা: ওহ্।
রাহি: তুই কি এখানে বাইক রাইড করে আসছিস ?
এলিন: of course..
রাহি: নুর চল ।। এলিন তুই ও তো যাবি?
এলিন: হুম।সেই জন্য তো আসা।
বুশরা কিছু বুঝলো নাএলিন এর কথার মানে ।রাহি , বুশরা এলিন বাসা থেকে বের হয়ে আসতেই। এলিন বাইক এ বসে বাইক স্টাড দিলো । হেলমেট পরার কারণে বোঝা যাচ্ছে না ছেলে নাকি মেয়ে।।
এলিন: তোরা আয় আমি গেলাম…। বলেই চলে গেল।
রাহি আর বুশরা গাড়ি তে..
বুশরা: এলিন আপু কি আপনার ফ্রেন্ড?

রাহি: হুম।
বুশরা আর কিছু বলবে তার আগেই রাহি বলেলো ,,
এলিন এর সঙ্গে ছোট থেকেই আমার ফ্রেন্ডশিপ,, তৌফিক আমি আর এলিন।
তৌফিক,আমি আর এলিন খুব ভালো বন্ধু ছোট থেকেই।
বুশরা : ওহ্।
কিছুক্ষণের মধ্যেই,বুশরাকে নিয়ে রাহি তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেল ।
রাহি বুশরাকে নিয়ে,, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রবেশ করলো ‌।

রাহি বুশরার হাত ধরে হাঁটছে।সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে। রাহির পরনে সাদা ফুল হাতা টি-শার্ট,
লং জ্যাকেট,চুল গুলো জেল দিয়ে পিছনে ঠেলে দেওয়া,চোখে সানগ্লাস। বুশরাও টপস্ এর উপর লং কোর্ট পরেছে ।দুজনকেই কাপল এর মতো লাগছে।সবাই তাকিয়ে আসে । বুশরা কে নিয়ে রাহি সোজা অফিস রুমে প্রবেশ করলো। অফিস রুমে প্রবেশ করতেই , প্রোফেসর উঠে দাঁড়ালো,,রাহি বসতে বললে সে বসে গেল।
প্রোফেসর: মি. আর . এ আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। সব কাগজ আমি রেডি করে রেখেছি ।
রাহি: স্যার আমার সঙ্গে এতো ফর্মালিটিজ এর দরকার নাই।আমি আপনার ইসটুডেন্ট ছিলাম আর তাই থাকবো ‌।
প্রফেসর: কিন্তু তুমি তো এখন সম্মান এর দিক দিয়ে বড় । আর কত কত টাকা তুমি ডোনেট করো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এর জন্য। তোমার সম্মান আলাদা।
রাহি : না স্যার আমি আপনার কাছে কখোনোই বড় হবো না।আপনি আমাকে আগের মতই রাহি বলেই ডাকবেন। আপনার স্যার এর মতো ।

প্রোফেসর: okay. তুমি বুশরা তাই তো ?
বুশরা : জ্বি।
প্রফেসর: তোমার কথা রাহি আমাকে আগেই বলেছে ।তাই চিন্তা করোনা। কোন প্রবলেম হলে আমাকে বলবে ।
তখনি এলিন প্রবেশ করলো অফিস রুমে,,
এলিন: কি ব্যাপার সব কাজ শেষ।
প্রোফেসর: আরে মামনি কখন আসলে ?
এলিন: এইতো আঙ্কেল। কেমন আছো?
প্রোফেসর: i am alright..my daughter.
বুশরা কিছু ‌না বুঝলেও এইটা বুঝলো ,,এই প্রফেসর এলিন এর আঙ্কেল আর রাহি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পড়াশোনা করেছে ।
বুশরা ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হয়েছে ।বুশরার ইংরেজি নিয়ে পরার খুব ইচ্ছে ছিল।আর রাহি সেইটাও পুরোণ করে দিলো ।

এই দিকে,, তৌফিক সব একটার পর একটা সব মিটিং শেষ করে ,, নিজের প্রাইভেট কেবিনে এসে দেখে ৬ টা মিসড্ কল ।তাও বাংলাদেশের নাম্বার থেকে । কিন্তু বাসার নাম্বার না। আননোন নাম্বার।
তৌফিক কল ব্যাক করতে চাইলো কিন্তু তা না করে ,, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পরলো।
তখনি ফোনটা আবার বেজে উঠল,,
তৌফিক ফোন টা রিসিভ করে বললো ,,
তৌফিক: হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে: নিশ্চুপ….
তৌফিক: কথা যদি বলতে তো বলেন না হলে রাখছি bye ..
ওপাশ থেকে: এতো তাড়া আপনারা?
তৌফিক: কে আপনি ?

ওপাশ থেকে: বাহ্ আমাকে ভুলে গেছেন?
তৌফিক বুঝলো না কে ।
ওপাশ থেকে: আমি আপনার বনুর এক মাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড।
তৌফিক বুঝলো এইটা হিয়া ।
তৌফিক: হিয়া?
হিয়া : এখন চিন্তে পারছেন তাহলে ?
তৌফিক: হুম।কেমন আছো ? কোন প্রবলেম?
হিয়া : এইতো ভালো। না কোন প্রবলেম না । কেন ফোন দেওয়া যাবে না?
তৌফিক: না দেওয়া যাবে।
হিয়া : আপনি কেমন আছেন? আর বুশরা কি অবস্থা?
তৌফিক: হুম ভালো আছি । বনু ভালো আছে । বনুর কাছে এখন কোন ফোন নাই সেই জন্য কথা বলতে পারছে না তোমার সঙ্গে।
হিয়া: ওহ্।
তৌফিক: আর কিছু বলবা !!
হিয়া অনেক কিছু বলতে চাইলেও প্রতি বার আটকে যায়।
হিয়া: না ।
তৌফিক: আচ্ছা রাখি ।ভালো থেকো।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

এইদিকে বুশরা বাসায় এসে নিজের রুমে বসে বসে বোর হয়ে গেছে।রাহি আর এলিন সেই কখন থেকে গল্প করেই চলেছে ।
বুশরা মনে মনে ভেবেই নিলো , এলিন মনে হয় রাহি গার্লফ্রেন্ড।বুশরার মনের মাঝে এক অশান্তি সৃষ্টি হলো ।সব কিছু বিরক্ত লাগছে তার।
তাই বুশরা নিচে এসে কিচেন এ ঢুকে পরলো,,হেভেন কেভেন নিষেধ করলো কিন্তু তা না শুনেই । ছুঁড়ি দিয়ে সবজি কাটতে শুরু করলো।বুশরার মন চাইলো না কিছু করতে কিন্তু তাও সে সবজি দিয়ে সুপ নুডুলস বানাবে সেই জন্য,, সবজি কাটতে থাকলো।
বুশরা মনে মনে ভাবলো,,আমি কেন সব সময় আপনাকে বিশ্বাস করি রাহি ভাইয়া।আপনি তো আমার না তাহলে??
অন্যমনস্ক হয়ে সবজি কাটতে লাগলো ,,হুট করে জোরে কাটতে গিয়ে বুশরার হাতের নখে ছুরির আঘাতে কেটে যায়।বুশরা আহ্ বলে জোড়ে চিৎকার করে।

বুশরার চিৎকারে হেভেন দৌড়ে এলো । রাহি তাড়াতাড়ি করে কিচেন এ চলে আসে বুশরার চিৎকার শুনে। এসে দেখে বুশরার নখের অনেকটাই কেটে গেছে। রক্ত পড়া কিছুতেই কমছে না।রাহি রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু বুশরাকে কিছু বলবে তার আগেই বুশরা চলে যেতে লাগলো।রাহি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে বুশরার রুমে গেল।বুশরা হাত বারবার ধুচ্ছে কিন্তু রক্ত পড়া কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।
রাহি এসে বুশরার হাত টা ধরে বললো ,, যেইটা পারিস না সেইটা করতে যাস কেন?
বুশরা রাহির কাছ থেকে আবার হতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ,,রাহি বলে ,আমাকে রাগিয়ে দেস না নুর।
রাহি বসে বুশরাকে তার কোলে বসিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলো।
রাহি : কষ্ট হচ্ছে??

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১০

বুশরা : নিশ্চুপ।
রাহি: যেইটা পারিস না কেন করিস ‌।আর হেভেনকে বললেই করে দিতো । তুই এই ভাবে আর কত কষ্ট দিবি আমাকে ।
বুশরা : কেন কষ্ট হবে আপনার।আমি আপনার কে ??
রাহি বুশরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,
“” তুই আমার সব নুর,, তুই আমার সেই সুখ যাকে আমি হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও অনুভব করেছি,,তুই চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। কেউ আটকাতে পারবে না তোকে আমার হতে। তুই শুধুই আমার বেবিগার্ল ।”

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here