সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১২

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১২
বুশরা আহমেদ

বুশরা: কেন কষ্ট হয় আপনার ।
কে হই আমি আপনার??
রাহি মনে মনে বললো,,
” তুই আমার সব নুর, তুই আমার সেই সুখ যাকে আমি হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও অনুভব করেছি , তুই চাইলেও আমার না চাইলেও আমার ।কেউ আটকাতে পারবে না তোকে আমার হতে। তুই শুধুই আমার বেবিগার্ল।””
রাহিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বুশরা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠে যেতে লাগলো।
কিন্তু রাহি বুশরাকে উঠতে না দিয়ে জোরে বুশরার কোমর জড়িয়ে ধরে ,বুশরার হাত এ ব্যান্ডিস করে দিল।

বুশরা: ছাড়ুন আমায়?
রাহি : যদি না ছেঁড়ে দেই?
বুশরা: আপনার girlfriend রাগ করতে পারে।
রাহি: আমার গার্লফ্রেন্ড আসে তুই জানলি কেমন করে?আর কে আমার গার্লফ্রেন্ড?
বুশরা : কেন এলিন আপু।
রাহি না হেসে পারলো না।
রাহি বুঝলো বুশরার অভিমান এর কারণ।
রাহি বললো এলিন শুধুই আমার ফ্রেন্ড।আর হ্যাঁ শুধু আমার না তৌফিক এরো খুব ভালো ফ্রেন্ড।
বুশরা নিশ্চুপ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহি: আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। কিন্তু আমার একজন হৃদয় হরণী আছে জানিস তো ‌। আর এই পৃথিবীতে তাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।
বুশরা কানের কাছে মুখ নিয়ে রাহি এতোক্ষণ যে কথা গুলো বললো ।আর বুশরা রাহির এতো কাছে আসতে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বুশরা রাহির কথা গুলো শুনলো কি না তার ঠিক নেই, সে এতোক্ষণ শুধু রাহির নিঃশ্বাস ,রাহির এতো কাছে আসা টা উপলব্ধি করলো।
রাহি বুশরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে
বললো ,
ফ্রেস হয়ে আমার রুমে আয় ।

রাহি কথাটা বলেই চলে গেল।বুশরা এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,মনে করার চেষ্টা করছে যে রাহি কি বললো , কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। নিজেকে নিজেই গালি দিতে লাগলো। কেন যে এমন হয় তার ,সে নিজেও জানে না। রাহি যখনি তার কাছে আসে তখনি সব কিছু কেমন অনুভূতি হয় তার। এই গুলোর কারণে সে নিজের উপর খুব বিরক্ত।
এখন প্রায় রাত ১০ টা তৌফিক বাসায় ফিরে নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেস হয়ে নিলো । তারপর বুশরার রুমের সামনে এসে আগের মতই নক করল,
তৌফিক: বনু আসবো।
বুশরা : হুম আসো ।পারমিশন নেওয়ার কি আছে ।
তৌফিক: মুচকি হেসে বলল, এইটা তো আমাদের পারিবারিক শিক্ষা।যে কারো রুমে প্রবেশ করার আগে জিঙ্গেস করতে হয় সেইটা যে কেউ হতে পারে।
বুশরা: হ্যাঁ তা ঠিক।

তৌফিক: তুই যে University তে ভর্তি হলি সেখানে আমি ,রাহি ভাইয়া, এলিন ও পড়েছি ।
বুশরা : এলিন আপুকে তুমি চিনো?
তৌফিক: হ্যাঁ। তুর সঙ্গে তো আজকে এলিন এর দেখা করা কথা।দেখা হয়েছে ?
বুশরা : হুম। এইটাও বলেছে তুমি, রাহি ভাইয়া,আর এলিন আপু খুব ভালো বন্ধু।মানে বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যেতে পারে।
তৌফিক: হুম তা বলতে পারিস।
বুশরা : আর এটটা কথা ছিল,,
তৌফিক: হুম বল।
বুশরা কিছু বলবে তার আগেই রাহি পাশের রুম থেকে জোরে ডেকে উঠল,,
নুর,,, তোকে কি আর একবার ইনভাইটেশন কার্ড পাঠানো লাগবে আমার রুমে আসার জন্য।
তৌফিক এর সঙ্গে কথা বলতে বলতে বুশরা রাহির রুমে যাওয়ার কথা ভুলেই গেছে । আজ যে তার কপালে কি আছে এই ভেবে শুকনো ঢোক গিললো।

বুশরা তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে যাবে তখন তৌফিক বললো আরে আস্তে যা।আর একটা কথা ,,
বুশরা : , হুঁ তাড়াতাড়ি বল।
তৌফিক: হিয়া ফোন করেছিল ।ওর সঙ্গে কথা বলে নিস।
বুশরা : আচ্ছা আমি রাহি ভাইয়ার রুমে গেলাম।
বলেই বুশরা রাহির রুমে চলে গেল।
বুশরা রাহি এর রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো ,,
আসবো ?

ভিতর থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই তাই বুশরা আর কোন কথা না বলে ভিতরে ঢুকে পরলো ।
বুশরা লক্ষ্য করলো ভিতরে কেউ নেই । রুমের লাইট খুঁজে অন করলো ।এই রুমটা বেশ বড় বললেও ভুল হবে।অনেক বড় ।দুইটা রুম এক জায়গায় করলে এই রুম হবে ।এক সাইডে বড় একটা টেবিল তার উপর দুইটা ল্যাপটপ।দেখেই মনে হচ্ছে এই গুলো সব অফিসের দরকারি কাগজ। তার টেবিলের সামনা সামনে একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।
বুশরা অনেকটা আবাক হলো। এই রকম সেম সে নুর ভিলা তেও দেখেছে। কিন্তু কি আছে এই পর্দার নিচে।
বুশরার ইচ্ছে হলো দেখতে কিন্তু পরক্ষণেই তৌফিক এর বলা কথাটা মনে হলো ,, অন্যের জিনিস না বলে দেখাটা অন্যায়।

বুশরা কালো পর্দাটার দিকে তাকিয়ে রইল, তখনি রাহি বেলকুনি থেকে ডেকে উঠল, “নুর কি করছিস রুমে লাইট অন করে ,,? এখানে আয় ?”
রাহির কথার আওয়াজ কর্নপাত হতেই বুশরা বেলকুনি তে গেল।
গিয়ে দেখলো রাহি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, চোখের উপর হাত দিয়ে আছে ।
বুশরা রাহির পাশে এসে দাঁড়াল।
রাহি : নুর..
বুশরা : হুম।
রাহি : আমার মাথা টা প্রচুর ব্যাথা করছে একটু টিপে দিবি??
রাহির এই রকম কথা বুশরা কখনো শুনেনি। বুশরা সব সময় রাহির চওড়া কথা শুনে শুনে অভ্যস্ত আজ হঠাৎ এমন কথা কেন??

বুশরার অনেকটা কষ্ট হতে লাগলো।যেই মানুষ টা কে সে সব সময় কঠর হতে দেখেছে যে সব সময় রাগী আজ তার কষ্টে এক ব্যাথার ছাপ। কিন্তু যে কেউ দেখলে বলবে এইটা তো স্বাভাবিক।যে কারো মাথা ব্যথা হতেই পারে। কিন্তু রাহির মাথা ব্যথা এইটা সে মেনে নিতে পারছে না। রাহির বলা এই সামান্য কথাটাও তাকে‌ অকাশ সমান কষ্ট দিচ্ছে।
বুশরা রাহির কপালে হাত রেখে দেখলো রাহির জ্বর আসছে কি না দেখার জন্য।
রাহির কপালে হাত রাখতেই বুশরা অনেক অবাক হলে সঙ্গে চিন্তিতও হয়ে গেল।রাহির প্রচন্ড জ্বর সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

বুশরা : রাহি ভাইয়া তোমার তো অনেক জ্বর এই অবস্থায় এখানে বসে আছো কেন? রুমে যাবে চলো । বলেই রাহির হাত ধরে উঠানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু ৬ ফুট লম্বা চওড়া পেশীবহুল শক্তিশালী পুরুষ টার সঙ্গে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি মেয়েলি শরীর টা পেরে উঠছে না।
বুশরা কোন উপায় না পেয়ে তৌফিক কে ডাকলো,,
বুশরা: ভাইয়া, কোথায় তুমি রাহি ভাইয়ার রুমে আসো ।
তৌফিক বুশরার গলার স্বর শুনে তাড়াতাড়ি করে রাহির রুমে আসলো ,,
তৌফিক: কি হয়েছে ,, কোথায় তুই।
বুশরা : এখানে আছো বেলকুনিতে ।
তৌফিক: একি কী অবস্থা তোমার ভাইয়া।
রাহি: কিছু হয় নি। তোর বনুকে বল এতো চিন্তা না করতে ।
বুশরা : রাহিকে থামিয়ে দিয়ে বলল,, তুমি চুপ করবে রাহি ভাইয়া। তোমার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।আর বলছো কিছু হয় নি। ভাইয়া তুমি রাহি ভাইয়া কে একটু রুমে শুয়ে দেও । আমি পারছি না।
তৌফিক : হুম।

তৌফিক রাহিকে বেডে শুয়ে দিল।
বুশরা একটা বাটিতে পানি নিয়ে রাহির মাথার কাছে বসলো ।
তৌফিক মেডেসিন বক্স টা বুশরার হাতে দিতেই বুশরা রাহিকে মেডিসিন খাইয়ে দিল।
বুশরা : ভাইয়া ডাক্তার কে কল করে আসতে বলো ।
রাহি চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো ।।,
তৌফিক: বনু এই অবস্থায় আসা অনেক টাফ । Snow fall হচ্ছে।আর চারিদিকে রাস্তা প্রায় বন্ধ।
বুশরা বাহিরে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই তো। বুশরা তৌফিক কে বললো আচ্ছা তুমি নিচে গিয়ে খেয়ে নেও।
তৌফিক: তুই খাবি না।
বুশরা: হুম পরে খাবো।

তৌফিক আর কিছু বললো না ,,সে এইটা ঠিকি বুঝতে পারেছে তার বনুও রাহিকে অনেক ভালোবাসে ফেলেছে।
বুশরা রাহির মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।রাহি চোখ বন্ধ করে আছে।
রাহি নিজের মনে মনে বললো,, আমি জানি নুর তুই আমাকে না চাইতেও ভালোবেসে ফেলেছিস । কিন্তু আমি যে তোকে সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসি । তোর থেকে নিজেকে ১৬ টা বছর দুরে রেখেছি। তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস। আমি নিজের কাছে কথা দিয়েছিলাম আমার কাছে আনার পর তোকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।আর যদি তুই কষ্ট পাস তাহলে আমিও নিজেকে কষ্ট দিব।তোর কষ্ট আমি দেখতে পারি না। আমার বুক ফেটে যায়।তাহলে কেন তুই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস।তোর যতটা না কষ্ট হয় তার থেকে হাজার গুণ বেশি আমার কষ্ট হয় ।কবে বুঝবি জানপাখি।
বুশরা রাহির জ্বর মেপে দেখছে ।রাহির জ্বর কিছুতেই কমছে না। বুশরা কিছু না ভেবে,রাহির পাশ থেকে উঠে নিচে চলে গেল।নিচে গিয়ে দেখলো তৌফিক সোফায় বসে আসে হেভেন ,কেভেন এর সঙ্গে কি জানো কথা বলছে ।
বুশরা দেরি না করে কিচেনে এসে সুপ বানিয়ে উপরে চলে গেল।
রাহির রুমে এসে ,সুপটা রেখে রাহির মাথায় হাত রেখে রাহিকে ডাকলো ,,,

রাহি ভাইয়া,,,
রাহি আস্তে করে চোখ খুললো।বুশরা রাহিকে ধরে বসিয়ে দিলো। তারপর রাহিকে সুপটা খাইয়ে দিতে লাগলো।রাহিও চুপচাপ খেতে থাকলো।
রাহি : তুই খেয়েছিস ?
বুশরা: না।
রাহি সুপ এর বাটিটা হাতে নিয়ে বুশরাকে খাইয়ে দিতে গেলে, বুশরা না করলো কিন্তু রাহি জোর করে খাইয়ে দিল।
খাওয়া শেষ হলে,, বুশরা রাহিকে শুয়ে দেয় ।রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১১

রাহি চোখে বন্ধ করে তার প্রিয়সির হাতের ছোঁয়া অনুভব করতে করতে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে তার খেয়াল নেই।
বুশরা রাহির জ্বর মেপে দেখলো জ্বর কিছুতেই কমছে না।সে আবার জলপট্টি দিয়ে দিতে লাগলো। জলপট্টি দিতে দিতে।বুশরা কখন রাহির পাশে ঘুমে পরেছে তা আজানা।
এক ঘরে এক বিছানায় দুইটা মানুষ,এক প্রাণ ঘুমে বিভোর।কি হতে পারে এর শেষ পরিণতি।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here