সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৬
বুশরা আহমেদ
বেসিন এ নিয়ে গিয়ে রাহি বুশরার হাত ধরে তা এমন ভাবে ভাবে ঘুসে ঘুসে ধুতে লাগলো এতে মনে হচ্ছে রাহি বুশরার হাতের চামড়া টা চিড়ে ফেলবে । রাহি বুশরার হাত এতো জোরে ঘুসতেছিল যে বুশরার হাত কেটে গিয়ে তা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রাহির অতিরিক্ত রাগের কারণে সে কি করছে তার নিজেরও খেয়াল নেই। রাহি বুশরার হাত বেসিনের পানিতে ধুয়ে ফেলছে ,বুশরার হাত কেটে যাওয়ায় সেখানে পানি ভরায় অতিরিক্ত জ্বালা করতে লাগলো। বুশরা আর সহ্য না করতে পেরে , তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো রাহির হাতে ।
রাহির একনজর বুশরার দিকে তাকিলো ,,রাহির বেবিগার্ল এর চোখে পানি,এইটা দেখে রাহির বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। রাহি বুশরাকে কোলে তুলে নিলো ।
বাথটাবে নিয়ে গিয়ে,তাকে শুয়ে দিলো। রাহি Shower টা অন করে দিয়ে বললো ,,
Take a cold shower.. আমি বাহিরে আছি ।
বলেই রাহি চলে গেল।
রাহি বাথরুমের থেকে বের হয়ে আসতেই, বুশরা জোরে কান্না করতে লাগলো,, আর বললো ,,
এতো রাগ তোমার রাহি ভাইয়া,যে একজন শুধু আমার হাত টা ধরেছে বলে তুমি আমার হাতে এই ভাবে কেটে দিলে । যখন তুমি আমার অতীত জানাবে তখন তুমি কি করবে ?? বলেই কান্না করতে লাগলো।
রাহি বুশরার কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো । ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। বুশরার অতীত যে রাহির অজানা নয় । তখন রাহি বুশরার কাছে ছিলো না। আর জানার পরেও কিছু করার ছিল না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাহি মনে মনে বললো ,, আমি সব জানি নুর। কিন্তু আমার যে কিছু করার ছিল না। তোর কোন দোষ নেই দোষ তো আমার তোকে নিজের কাছে আনতে সময় লেগে গেলো । তুই এখন আমার কাছে তুবুও তোকে এখনো নিজের করে নিতে পারলাম না নুর। কিন্তু এই প্রমিস যাদের জন্য আজ তুই নিজেকে দোষী ভাবছিস তাদের কে আমি শেষ করে ফেলবো ।
রাহির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। এই দিকে বুশরার কন্নার আওয়াজ ও আর নেই । রাহি এখনো সেই আগের মতই বসে আসে ।
বুশরা বাথরুমের দরজা খুলতেই রাহি উঠে বারান্দায় চলে গেল ,,
বুশরা এখনো বাথরুমের লক খুলে সেই ভিজে জামা পরেই দাঁড়িয়ে আছে। বুশরার চোখ , মুখ অতিথি লাল হয়ে গেছে,কন্নার কারণে। কথাও ঠিক মতো বলতে পারছে না।
এই দিকে বুশরা এখনো রুমে আসছে না সেই জন্য রাহি রুমের মধ্যে এসে দেখে বাথরুমের দরজা খোলা। রাহি বুঝলো ব্যাপার টা,,
রাহি ওয়ারড্রোপ থেকে একটা টাওয়েল টপস্ আর প্যান্ট বের করে দরজার ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আর বললো,,
এই গুলো পরে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নে।
বুশরা অবাক হলো মেয়েদের পোশাক তাহলে কি এর আগেও রাহি ভাইয়া কাউকে,,বুশরা আর ভাবতে পারছে না।
রাহি আবার বললো কি হলো নুর,,,কথা বলছিস না কেন?
বুশরা আর কিছু বললো না,,রাহির হাত থেকে কাপড় গুলো নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ।
বুশরা চেঞ্জ করে বের হয়ে আসলো,, রাহি কে দেখতে পেল না। অতিরিক্ত কন্নার কারণে কারণে বুশরার প্রচুর মাথা ব্যথা করছে, চোখ গুলো ফুলে গেছে।
হাত এর তালুতে তাকিয়ে মুচকি হাসলো বুশরা। মনে মনে বললো,
সামান্য আমার হাত ধরেছে বলে এই অবস্থা করলে আমার হাত এর । অথচ ভালোবাসি কথাটা বলার সাহস নেই । কখনো কখনো মনে হয় তুমি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো কখনো কখনো মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আসলেই কি ভালোবাসো না রাহি ভাইয়া?
রাহি রুমে এসে দেখলো ,,বুশরা হাতের তালুর কাটা টার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহি বুশরাকে ডাকলো,, নুর!!!
বুশরা কিছু বললো না, শুধু রাহির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল।
রাহি দেখলো বুশরার চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে,, রাহি হাতে থাকা ফাস্ট এইড বক্স টা রেখে,,
বুশরাকে বসতে বললো ,,
কিন্তু বুশরা শুনেও না শোনার ভান পাশ কাটিয়ে করে চলে যেতে লাগলো,, রাহি বুঝলো বুশরার খুব অভিমান হয়েছে। রাহি বুশরার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।
টাওয়েল টা নিয়ে বুশরার মাথা মুছে দিতে লাগলো,,
রাহি বুশরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতটা ধরে,
তাতে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলো, বুশরা হাত এর দিকে তাকিয়ে রাহি বললো ,,i am sorry nur ,,
বুশরা: নিশ্চুপ।
রাহি: আমি জানি আমার উপর তুই রাগ করেছিস। কিন্তু in future এই কাজ করবি না। তোর শরীরে যেন কোন পরপুরুষের হাত না লাগে নিজেকে সামলিয়ে রাখবি । না হলে বুঝতেই পারছিস।
বুশরা: কি করবেন আপনি।আমার শরীরে অন্য কেউ হাত দিলে আপনার কি যায় আসে?
রাহি : তখন এই হাত টা ভাঙ্গে রেখে দিব । আবার আমিই ঠিক করবো ।
বুশরা : কেন? কে হই আমি আপনার? কি আসে যায় আপনার আমার শরীরে কে টাচ করলো ,,আর সামান্য হাত টাই তো ধরছে ??
রাহির মেজাস এবার খারাপ হয়ে গেল,রাগে চোখ দুটো রক্তিম হয়ে উঠছে,,
রাহি উঠে গিয়ে টেবিলে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা এক বারি দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো ,, রাহির হাতে কাঁচ লেগে অনেকটাই কেটে গেছে।
কাঁচের ফুলদানি টা ভেঙ্গে যেতেই ঝনঝন করে উঠলো,,
বুশরার ,ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো,,কারণ রাহির এই রকম রাগ সে আগে কখনো দেখিনি। বুশরারো anger issues আছে । কিন্তু রাহির কাছে বুশরার রাগ কিছুই না।
বুশরা রাহির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহি হাত থেকে রক্ত পরছে ।।
বুশরা দৌড়ে গিয়ে রাহির হাত ধরলো,,
রাহি বুশরা থেকে ছেড়ে নিয়ে বুশরা ঘাড় ধরে বললো ,, আমার জায় আসে নুর আমার জায় আসে,, নুর তুই তো যথেষ্ট ম্যাচিয়র এই টুকু বুঝিস না।তোকে কি সব বলে দিতে হবে।
বুশরা : রাহি ভাইয়া, তোমার হাত অনেকটা কেটে গেছে ! একটু সান্ত্ব হও । প্লিজ অনেক রক্ত পরছে।
রাহি : একটা কথা মাথায় ঢুকে নে নুর ,,
আমি তোর হাত কাটবো,
“” আমি তোর শরীরে ক্ষত সৃষ্টি করবো আবার সেই ক্ষততে আমিই মলম লাগাবো, সেই অধিকার শুধু মাত্র আমার।এই অধিকার আমি কাউকে দিব না কাউকে না””
বলেই চলে গেল রুম থেকে । বুশরার বুক কেঁপে উঠলো রাহির কথায়,,,
রাহির হাত অনেকটা কেটে গেছে। বুশরার হাতের তালুতে যতটা কেটে গেছিলো তার তিনগুণ রাহির হাত কেটে গেছে। বুশরা রুম থেকে বের হয়ে আসলো । কিন্তু রাহি কে দেখতে পেল না।
এই ম্যারি প্যালেস এর কিছুই বুশরা ঠিক করে চিনে না। সামনে একটা রুমের দরজা খোলা একটু আলো জ্বলছে। বুশরা সেই রুমে ঢুকলো ,,,।
কয়েক পা দিতেই বুশরা বুশরার পায়ের কাছে কিছু একটা লাগলো বুশরা ভালো করে দেখলো ,,তারপর জোরে চিৎকার দিল,,
“” সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল,,৩ টা কঙ্কাল উল্টো দিক করে ঝুলিয়ে রাখা ” বুশরা নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না । জোরে চিৎকার করলো ,,
” রাহি ভাইয়া “”‘
এই দিকে রাহি ,,,বুশরা যেই রুমে ছিল তার পাশের রুমে বসে গিটার হাতে,,,কাটা হাতেই গিটার এ সুর তুলে গান গাইছে,,
কি করে তোকে বলবো, তুই কে আমার ”
আয়না সাথে চলবো সব পারাপার,,,
মনেরি আশকারাতে তোর কাছে এলাম,, হারিয়ে গেলাম,,,
এই দিকে বুশরা ভয়ে কেঁপে উঠছে ,, রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি তার চোখে পরলো দেওয়ালে থাকা শুকনো রক্ত গুলো। বুশরা ভয়ে আবার,,রাহি কে ডাকলো ,,
বুশরা রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসতেই,, গিটার এর শব্দ পেলো দরজা খোলা দেখে ঢুকে পরলো,, বুশরা রাহিকে দেখলো ,, আর বললো ,,
রাহি ভাইয়া,,,
রাহি মাঝপথে গান ছেড়ে উঠে, পিছনে তাকিয়ে বুশরাকে দেখে চিন্তিত হয়ে বললো ,,
কি হয়েছে নুর,,,??
বুশরা কোন কিছু না বলে রাহিকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। রাহিও বুশরা কে,, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুশরা কান্না করছে ।।
রাহি বুশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিঙ্গেস করলো ,,
কি হয়েছে নুর?
বুশরা : স্বাভাবিক হয়েই বললো,,ঐ রুমে এতো কঙ্কাল কেন ? আর এতো এতো রক্ত কেন??
রাহি বুঝলো বুশরার ভয় পাওয়ার কারণ টা,, কিন্তু সে বুশরাকে বললো ,,তুই ভুল দেখেছিস নুর।ভয় পাস না।
বুশরা: তাই বলে আমি এতোটা ভুল দেখবো ?
রাহি : come down ,,, কিছু হয় নি আমি আছি তো,,
বুশরা এখনো রাহিকে জরিয়ে ধরে আছে ।
রাহি পকেট থেকে ফোন বের করে,,
একজনকে ম্যাসেজ করলো ,,,
“” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুম টা পরিষ্কার চাই আমার,,, আর সব রুমে যেন লক থাকে,,, তিন তালা বাদে ,,,
রাহি বুশরার নিয়ে পাশের রুমে গেল,, যেখানে বুশরা ছিল,, রাহি বুশরাকে নিয়ে বেলকুনি তে গেল,,,
যেখানে দুইটা চেয়ার রয়েছে,,, রাহি বুশরাকে বসে দিয়ে সেও বসে পরলো,,,
সামনে দেখা যাচ্ছে নদী ,, নদী পার হয়ে যতদূর দেখা যায় শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল ,,,
বুশরা মনে অনেক প্রশ্ন,,
বুশরা: একটা কথা বলবো ?
রাহি : বলে ফেল কি বলতে চাস ? কিন্তু তোর করা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।
বুশরা: এইটা কোন জায়গা,,এইটা তো কোন বাড়ি না,,এইটা তো একটা রাজপ্রাসাদ কিন্তু এতো ভয়ংকর কেন বাহিরে থেকে,,
আর এখানে কেন তুমি আমাকে নিয়ে এসেছো ?? এখানে কেউ নেই কেন? আর আমি জানতে চাই সবকিছু? আর আমি এই ড্রেসটা পরেছি এইটা কার??
রাহি: শুধু এই টুকুই জেনে রাখ এই প্যালেস টা আমার ,আর এই ড্রেসটা তোর জন্যই। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না,,সময় হলে জানতে পারবি।
এখানে বস আমি আসতেছি অনেক রাত হয়ে গেছে।
বুশরাকে বসতে বলে রাহি চলে গেল,, কিন্তু বুশরার মাথায় সেই একি প্রশ্ন বার বার ঘুরঘুর করছে ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাহি ফিরে এলো , হাতে খাবার এর প্লেট । বুশরা এতোক্ষণ ভুলেই গেছিলো রাহির হাত কেটে যাওয়ায় কথা ,,বুশরা দেখলো রাহির হাতে একটা কাপড় পেচানো ,,বুশরা রুমে আসলো ,,
রাহি: তাড়াতাড়ি খেয়ে নে,আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
বুশরা: তোমার হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেই আগে তারপর খাব।
রাহি: কিছু হয় নি,,বাদ দে ,,
বুশরা: তুমি কি চাও আমি আবার রেগে যাই ,,
বুশরা রাহির হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে এক সাইডে রেখে,তারপর রাহির হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো ,,
রাহি হাত ধুয়ে বুশরাকে খাইয়ে দিল,নিজেও খেয়ে নিল।
রাহি এই কাজ টাই করে যখনি সময় পায় তখনি সে বুশরাকে খাইয়ে দেই ,,
বুশরাও কিছু বলে না, প্রিয়জনের হাত থেকে খাবার খাইতে তারো ভালো লাগে।
বুশরা মনে মনে বললো,, আমিও দেখবো রাহি ভাইয়া তুমি কি করে সহ্য করো আমার ইগনোর, তুমি যতদিন না তোমার মনের কথা গুলো বলছো ।
এখন প্রায় রাত এগারোটা,,বুশরা ঘুমে বিভোর,রাহি এখনো সেই আগের মতই ল্যাপটপ এ কাজ করছে,,,।
বাংলাদেশ,, ঢাকা,,,
আজ সেই সকাল থেকেই মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার সময় প্রায় ১০ ঘন্টা পিছনে,,,
চারিদিকে মেঘের গর্জন, আকাশে কালো মেঘ ,আর ঝুম বৃষ্টি। দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু সবে মাত্র দুপুর ২ টা।আর এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই আফরিন ভিজে বাসায় ফিরলো , রিফাত ও বাসায় ছিল,,
রিফাত নিজের রুমে ছিল,,
রেবা আহমেদ আফরিন কে ভিজে অবস্থায় দেখে বকতে লাগলেন ,,
রেবা আহমেদ: এ কি অবস্থা তোমার নাহার?
আফরিন: আসলে আম্মু সব ফ্রেন্ডরা ভিজছিল তো তাই ,,
রেবা আহমেদ: তাই তোমাকে ভিজতে হবে ?? বাসায় ১টা না ২ টা না ৪ টা গাড়ি সেই গুলো কি বসে রাখার জন্য? দুই টা মেয়েই একি ,, এখন বুশরা নেই এখন তুমি শুরু করছো বৃষ্টিতে ভিজতে?
রোকসানা আহমেদ: এতো বকতে হবে না,, বৃষ্টিতে একটু ভিজছে তো কি হয়েছে।
রেবা আহমেদ: একটু বলে না এইটাকে ,, জ্বর হলে তখন যেন আমাকে না ডাকে ।
আফরিন: আম্মু কিছু হবে না আমার।
রেবা আহমেদ,: হ্যাঁ কিছু হবে না,,তাই তো ,আগে বৃষ্টি হলে বুশরা ছাদে গিয়ে ভিজতো এখন তুই ভিজে বাসায় ফিরছিস ,,যা সখ কর ।
আফরিন: আম্মু আপুর সঙ্গে কথা হয়েছে ?
রেবা আহমেদ: না আজকে হয় নি,, সেইদিন তৌফিক এর ফোন থেকে কথা বলেছি। আর কথা হয় নি।
আফরিন: রাহি ভাইয়ার ফোনে দিতে ।
রেবা আহমেদ: রাহিকে ফোনে পাচ্ছি না। তৌফিক কাজে বাইরে আছে । কালকে কথা বলো । এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নেও । ভিজে অবস্থায় আর থেকো না।
রিফাত এতোক্ষণ উপর থেকে সব দেখছিল ।
আফরিন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো , দেখলো,,
রিফাত তার রুমে এসে বসে আছে,,,
রিফাত: এইভাবে ভিজে বাসায় ফিরছিস কেন?
আফরিন: মন চাইছে তাই ।
রিফাত: ওহ আচ্ছা।
আফরিন: আর কিছু বলবে ?
রিফাত: স্কুলে যাওয়ার সময় আর আসার সময় গাড়িতে যাবি।আর হ্যাঁ ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছিস এইটা আমার একদম পছন্দ নয়।
আফরিন: কেন?
রিফাত: কালকে থেকে আমি নিয়ে যাব আর নিয়ে আসবো ।
আফরিন: না ।
রিফাত: কেন?
আফরিন: তোমার মতো বাচ্চা ছেলের সঙ্গে গেলে আমাকে সবাই বলবে যে এই বাচ্চা টা আবার কে ??
রিফাত: আমি বাচ্চা?
আফরিন: হুম ,, তুমি তো রাহি ভাইয়া এর মতো না যে কেউ কিছু বললে প্রতিবাদ করবে । তুমি তো কেউ কিছু বললে হুঁ হুঁ করে কেঁদে দেও ।।
রিফাত: একদম ফালতু কথা বলবি না নাহার? আর তুই কি শুঁটকি মাছ এর মতো হচ্ছিস দিন দিন,,না খাইয়ে না খাইয়ে … ঝড় আসলে তোকে উড়ে নিয়ে যাবে,,
আফরিন: তুমি একটা ভীতুর ডিম,,,
রিফাত: শুঁটকি মাছ।
আফরিন: আমার মতো বডি সেফ সবাই করতে পারে না বুঝছো ,, বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে আমার S body shape ,, এইটা তো অনেকের ড্রিম ,,,
রিফাত: S বডি সেফ না ছাই , ঐ জন্য দুই তিন দিন পরপর মাথা ঘুরে পড়ে যাস ,, আর বেশি কথা ।।
কথা বলতে বলতে দুইজনেই ঝগড়া লেগে গেল,,
একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারে না আবার কথা বললেই ঝগড়া শুরু করে দেয়।
আফরিন: ভিতুর ডিম, তোমার সঙ্গে কথা বলাই বেকার,,বলেই ভেংচি কেটে চলে গেল,,।
রিফাত অবাক হয়ে বললে ,, আর যা যা তোকে ভালো কথা বলতে আশা টাই আমার ভুল। হুম,,, আমার মতো বুদ্ধি কেউ তোকে দিবে না,,
এইদিকে নিঝুম বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে,,আছে এক নারী ,পরনে তার সেলোয়ার ,কামিজ হাটু ছুই ছুই চুল গুলো তার ভিজে লেপ্টে গেছে ,,
সে আর কেউ না,বুশরার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তাবাসসুম হিয়া।
,,হিয়া মনে মনে বললো,, ” আপনাকে বড্ডো বেশি মিস করছি মি.তৌফিক জোবায়েদ। একতরফা ভালোবাসার কি নির্মাম তাই না আপনি আমার থেকে এতো টা দুরে তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আপনি কি বুঝবেন আমার ভালোবাসা।
বুশরার সঙ্গেও কথা হয় না। কেমন আছে কে জানে….?
তৌফিক এর কথা ভাবতে ভাবতে হিয়ার চোখ দিয়ে এক ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।
এতোক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে হিয়া তৌফিক এর কথা ভাবছিল এর মাঝেই বৃষ্টি এসে তাকে একদন ভিজিয়ে দিয়েছে। হিয়া নিচে এসে ফ্রেস হয়ে নিল।
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৫
একা একটা বাসাই, মনের সখে আর সময় কাটানোর জন্য টিউশনি করাচ্ছে সে। আগে তো বুশরা ছিল সবসময় এক সঙ্গে থাকতো,ঘুরতো সব কিছু ভালোই ছিল।বুশরা সে খুব মিস করছে ।
এই দিকে তৌফিক ফোন টা হাতে নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না,, তার মনে হলো হিয়া একটু খোঁজ খরব নেওয়া উচিত,,
তাই সে হিয়াকে মেসেজ করলো ,,
” কেমন আছো হিয়া”??।