সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৪
বুশরা আহমেদ
বুশরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসতেই গিটার আর গানের আওয়াজে সিঁড়ির দরজাতেই থমকে গেলো ,,
বুশরা ভাবলো রাহি এতো সুন্দর গান গাইতে পারে তা তো সে জানতো না, অবশ্য জানবেই বা কি করে। গিটার এতো সুন্দর বাজায় ।এতো গুণ একটা মানুষের মধ্যে থাকতে নেই । সুদর্শন পুরুষদের এতো গুণ থাকতে নেই।বুশরা দেখলো রাহি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
রাহির গান শেষ, সবাই বলছে তালি দিলো । আয়ান রাহি কোলে বসে আসে আফরিন বললো বাহ ভাইয়া তুমি তো অনেক সুন্দর গান গাও । তুমি আসলেই একটা রকস্টার সঙ্গে All rounder। কিন্তু এই দেখ রাদ ভাইয়া পড়াশোনাতে ভালো কিন্তু গান তো আর গাইতেই পারে না।
রাদ(রিফাত ): দেখ আফরিন আমি যথেষ্ট ভালো গান গাই। তোর পছন্দ হয় না কিন্তু সবাই পছন্দ করে আমার গান ।
আফরিনঃ পছন্দ না ছাই তোমার মন খারাপ হবে তাই কিছু বলে না।
তৌফিকঃতোদের ঝগড়া থামাবি,,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাদ আর আফরিন চুপ করে গেলো । তৌফিক দেখলো বুশরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
তৌফিক: বনু ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আয় আমার এখানে এসে বস।
আফরিনঃ আপু তোকে শাড়িতে একদম পরীর মতো লাগছে। তার উপর সাদা শাড়ি একদম সাদা পরী। কিন্তু আপু তুই তো শাড়ি পরতে পারিস না। গলায় এই নিকলেসটা তে আরো সুন্দর লাগছে।
রিফাত: তোর তো সব দিকেই বুদ্ধি বেশি এইটা বুঝতে পারিস না যে আপু ফোন দেখে শাড়ি পরেছে ।
আফরিন: আপু দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে।এই ড্রেসটা ভাইয়া গিফট করেছে। সুন্দর না!
বুশরা : হ্যাঁ আনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।
রিফাত: সুন্দর না ছাই। একদম পেত্নির মতো লাগছে।
আফরিন রাহির কাছে গিয়ে বলল ভাইয়া দেখো সব সময় রাদ ভাইয়া আমাকে এই ভাবে বলে ।আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগতেছে।
রাহি আফরিন এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো না বনু তোকে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।আনেক কিউট।
ছোট থেকেই রাহি যখন ভিডিও কল দিত আফরিন আর রিফাত এর সঙ্গে কথা বলতো বেশি। রাহি আফরিন কে ছোট বোনের মতোই ভালোবাসে।এই দিকে বুশরার সঙ্গে রাহির কথা না হলেও তৌফিক এর সঙ্গে তার ঠিকই কথা হতো। তৌফিক যেমন বুশরা কে বনু হিসেবে ভলোবাসে ।রাহি ঠিক আফরিন কে ভালোবাসে । রাহি বুশরাকে কখনো বোন হিসেবে মানতে না পারলেও আফরিন কে ঠিকই বোন হিসেবে দেখে।
রাহি : রিফাত এই দিক আসে আমাদের সাহায্য করো । তৌফিক একা একা বারবিকিউ বানাচ্ছে দেখতে পাচ্ছো না।
রিফাত ও তাই করলো কয়লা গুলো জ্বালাতে শুরু করলো।
রাহি আয়ান কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সে মাংসের টুকরা গুলো দিতে লাগলো কয়লার আগুনে।
এই দিকে গরমে রাহির কাপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। কপালে পরে থাকা চুল গুলো লেপ্টে গেছে ঘামে। আগুনের তাপে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে।
বুশরা সেই দিকেই তাকিয়ে আছে।এই মুখটাই তাকালে বুশরার সব কিছু হারিয়ে যায় ।সব কিছু ভুলতে বসে সে । তার খুব ইচ্ছে করছে রাহির কপালে জমে থাকা ঘাম গুলো মুছে দিতে। কিন্তু তা তো আর হয় না। হুট করেই বুশরার ফোনটা বেজে উঠলো।
বুশরা দেখলো হিয়া ফোন করেছে ।
বুশরা ফোনটা রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে ।
হিয়া: কি রে দুনিয়ায় আছিস নাকি মরে গেছিস।আজ ৪ দিন থেকে কোন খোঁজ নাই । আমি ম্যাসেজ দিলেও রিপ্লাই করিছ না ।কি হয়েছে তোর।
বুশরা : এতো প্রশ্ন এক সঙ্গে করলে কি করে উত্তর দিব । একটু থাম।বলতে দে আমাকে ।
হিয়া: তো বল ফোন রিসিভ করিস না কেন?
বুশরা : কালকে ভাইয়া আমার রাহি ভাইয়া আসছে । আর অনেক কিছুই ঘটে গেছে এই দুই দিনে ।তোকে সব বলবো কিন্তু ফোনে না।
হিয়া: তোর ভাইয়া মানে তৌফিক জোবায়েদ?যাকে তুমি ভাই বলিস।আর রাহি ভাইয়া মানে তোমার কাজিন রাইট।
বুশরা: হুম।যার কথা আমি তোকে বলতাম।আর ভাইয়া কে তো তুই চিনিস।
হিয়া : হ্যাঁ চিনবোই তো ।যে তোকে আমার সঙ্গে আসছিলিস বলে কী রাগ টাই না ঝারছিল।
বুশরা: হুম।কালকে বিকেলে আয় আমার বাসায় দেখা হবে।
হিয়া: ওকে । জান্স।বাই।লাভ ইউ।
বুশরা : তোর প্রেমিক রে এই গুলা বলিস। আমারে না। চাইলে কিন্তু আমার ভাই রে বলতে পারিস।
হিয়া: তোর ভাই তোর মতোই। আমার প্রেমিক হবে একদম ভালো মানুষ বুঝছিস।
বুশরা : ওহ্ ।তাই নাকি ।তুই আমার ভাই কে আর আমাকে খারাপ বললি যা তোর সঙ্গে কথা নাই।
হিয়া: তোকে বলি নি জান। তোর ভাই কে বলছি।
বুশরা: একদম জান বলবি না আমাকে । আমি তোর জান নই।
হিয়া : সরি জান রাগ করিছ না।
বুশরা : ওকে ।বাই । কালকে বিকেলে সবাই আসিস।
হিয়া: ওকে বাই।
বুশরা: ওকে।
“তোর জান্স এর সঙ্গে কথা শেষ হলে ফ্রেস হয়ে আয়।
চমকে উঠলো বুশরা।ফোন রাখে পিছনে ঘুরতেই ধাক্কা কারো সঙ্গে। চোখ তুলে দেখলো রাহি।
কিছু ক্ষণ আগে , সবাই ছাদে যে যার মতো খাওয়া দাওয়া করছিল। তৌফিক বললো , আফরিন বুশরা কোথায়?
আফরিন: আপু তো নিচে গেলো ।হিয়া আপু ফোন করেছে এই জন্য।
রাহি: তোরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পর ।আর তৌফিক তুই আয়ান কে তোর সঙ্গে তোর রুমে নিয়ে যা আমি পরে নিয়ে আসবো। আমি বুশরার খাবার ওর রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
রাহি এতক্ষণ সব কথাই শুনতেছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
বুশরা : ওহ্। তুমি কি দেখতে পাও না । সব সময় সামনে এসে দাড়িয়ে থাকো।
রাহি: তুই কি আমাকে অন্ধ বলতে চাস ।
বুশরা : চোখ থাকেও যে অন্ধের মতো কাজ করে তাকে অন্ধ বলাই ঠিক।
রাহি : আমাকে না বলে নিজেকে বল কথাটা।আমি পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম তুই নিজে অন্ধের মতো এসে আমার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এখন আমাকেই বলছিস। নাকি আমার গায়ে পরার জন্য এমন করছিস।
বুশরা কি জানো ভেবে বললো ওহ সরি । আমি দেখিনি।বলেই চলে যেতে লাগলো।
রাহি বুশরার হাত ধরে বললো । এখন নিজেই স্বীকার করলি কে অন্ধ । তোর জান্স কী বলছিল।
বুশরা বললো এইটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ছোট থেকে ।ও আর আমি এক সঙ্গে। মাঝখানে ৫ টা বছর শুধু আমি রাজশাহীতে আর ও দিনাজপুর এ ।এখোন আমরা আবার এক সঙ্গে।
রাহি : জানি। আয় খেয়ে নে।
বুশরা : তুমি কেমন করে জানলে?
রাহি মনে মনে বললো, তোর সব কিছুই আমি জানি। যেখানে আমার অস্তিত্ব তোর মাঝে সেখানে আমি তোর বিষয়ে অমি জানবো না তো কে জানবে।
ভাবনা থেকে হয়ে বুশরার উদ্দেশ্যে বললো আয়ান তৌফিক এর রুমে।সবাই সবার রুমে গিয়ে শুয়ে পরছে । আমি আয়ান কে পরে নিয়ে এসে তোর কাছে দিয়ে যাব ।
বুশরা: ওহ্ ।তুমি খাইছো ??
রাহি : না । ফ্রেস হয়ে আয় এক সঙ্গে খাব।
বুশরা ওয়ারড্রোপটা খুলে টি শার্ট আর ওয়াশ রুমে চলে গেল। যখন ওয়াড্রোপ খুললো তখন সে দেখেছিল শাড়ির পাশাপাশি টিশার্ট আর কয়েকটা প্যান্ট ও ছিল।
বুশরা ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো রাহি বেলকুনি তে দাঁড়িয়ে আছে। বুশরা সেই দিকে না গিয়ে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো। এই সেই হিরের নিকলেস যেইটা রাহি তাকে নিজে হাতে পরিয়ে দিয়েছে। বুশরা নিজেকে দেখছিল তখন রাহি এসে পিছনে দাঁড়ালো ।
রাহি : খেয়ে নে অনেক রাত হয়ে গেছে।খেয়ে শুয়ে পর আমি আয়ান কে দিয়ে যাচ্ছি।
বুশরা : তুমি খাবে না।
রাহি : না।
বুশরা: তাহলে আমিও খাবো না।
রাহি : তোর কথা মতো চলতে হবে আমাকে ?
বুশরা : আমি তোমাকে আমার কথা শুনতে বলি নি।আর তাহলে তুমিও আমাকে কিছু বলতে আসিও না ।
রাহি : তোর জেদ অনেক বেশি হয়ে গেছে আর এই গুলো তোর জন্য অনেক ক্ষতিকর । এখানে এসে বস ।
বুশরাও তাই করলো ।রাহি বুশরার মুখের সামনে খাবার ধরে বললো নি হা কর ।
বুশরা : আমি নিজে খেতে পারবো ।
রাহি : তুইকি চাস এই খাবার টা রেখে আমি চলে যাই।
বুশরা জানে রাহির রাগ তখন খাইয়ে দেয় নি বলে সে নিজেও খেলো না বুশরাকেও খেতে দিল না।আবার যদি এমন করে ।তাই সে রাহির হাত থেকে খেতে লাগলো ।
রাহি পরম যত্নে তার বেবিগার্ল খাইয়ে দিতে লাগলো সে নিজেও খেলো ।
বুশরা বললো ,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ।
রাহি : হুম ,বল ।
বুশরা : আমার জন্য এই সব কিছু কেন।আর এই বাসার নাম নুর ভিলা কেন।
রাহি : সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি। আর সবার জন্য অনেক গিফট নিয়ে আসছি ।তোর জন্য কি নিয়ে আসা ভুল হয়ে গেছে। তোর পছন্দ না হলে ফেলে দিতে পারিস। রাহি অনেক টা অভিমান নিয়ে বললো ।কথা টা ।
বুশরার বুকের ভিতরে চাপা অভিমান জমলো । ফেলে দেওয়ার কথা শুনে। সে তো শুধু জানতে চেয়েছিল এতো কিছু কেন করেছে রাহি তার জন্য।তাই বলে ফেলে দেওয়ার কথা বলবে ।
রাহি আবার বললো আর এই বাসা টা আমাদের ছয় জনের জন্য তৈরি করা । কিন্তু তোর অধিকার টা সবথেকে বেশি।
আর বাসায় সবাই ও তাই জানে ।যে এই বাসা টা আমাদের ৬ জনের জন্য।
বুশরা মনে প্রশ্ন থেকে গেলো কিন্তু সে আর প্রশ্ন করার সাহস পেলো না।
রাহি বুশরার মুখের সামনে আবার খাবার ধরলো,
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৩
বুশরা : আর খেতে পারবো না ।
রাহি কিছু বললো না।সে নিজেই বাকি খাবার টা খেয়ে নিল।তারপর প্লেট টা হাতে নিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে চলে গেল।
বুশরা শুয়ে পরলো । একটু পরে রাহি আয়ানকে কোলে নিয়ে বুশরার রুমে এসে বললো ,
রাহি: নুর !!;
বুশরা : উমম্।
রাহি : আয়ানকে আমার রুমে নিয়ে যাচ্ছি। তুই ঘুমিয়ে পর । ফোন টিপিস না
বুশরা : হুম। তুমি ও যাও ।
রাহি চলে গেল।
সেই রাতে নিশ্চিত হয়ে ঘুমিয়ে করলো পাশাপাশি দুটি রুমে থাকা দুই দেহের এক সত্তা ।