সে জন সোনা চিনে না পর্ব ১৪
সাইয়্যারা খান
— জান, তুমি কি করছো এসব? লজ্জা টজ্জা কিছু পাচ্ছো না?
ইফাতের কথায় ভ্রু উঁচু করে সন্ধ্যা। ইফাত নিচের দিকে তাকিয়ে চাপা হাসে। আস্তে করে বলে,
— এভাবে তাকায় কেউ? লজ্জা পাই তো।
— ইফাত!
— হ্যাঁ হ্যাঁ।
— ভেজা কাপড় দাও বলছি।
— আমি তো…
— এখন কিন্তু ময়লা কাপড় তোমার মাথায় দিব আমি।
ভয়ে এবার ইফাত বউয়ের হাতে কাপড় দিলো। সন্ধ্যা আজ ঘরবাড়ী ঝাড়া ঝাড়ি করছে। ফ্যান মোছার সময়ই যখন উঁচু হলো তখন থেকেই ইফাত নামক ভীতু লোকটা দুষ্টামি শুরু করেছে। সন্ধ্যা ফ্যান মুছতেই ইফাত ওর হাত ধরে নামালো। ঘরটা নিজে ঝাড়ু দিতে দিতে বললো,
— গোসলে ঢুকে যাও ফাস্ট ফাস্ট। আমি আজ রান্না করব।
— ইফাত ঝামেলা করবে না একদম।
— কি করেছি?
— তুমি রাঁধবে কেন? বউ নেই তোমার? ব্যাচেলর তুমি? নাকি প্রেমিকা আছে যে সে রান্না করে রেখেছে বাইরে?
রাগে গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। রান্নাঘর থেকে তখন হাঁড়িপাতিলের ঝনঝন শব্দে ঘরবাড়ি মাতোয়ারা হচ্ছে। ইফাত মুচকি মুচকি হাসছে। সুন্দর মতো ঝাড়ু দিচ্ছে সে। সন্ধ্যা আবার ময়লা দেখতে পারে না। তাছাড়াও কারণ আছে। আপাতত বউকে ঘাটা যাবে না৷ সে রেগে আছে। আগে রাগ কমুক তারপর বিড়াল পায়ে যাবে ইফাত।
পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় সন্ধ্যা রাগী স্বরে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— সরো।
— উহুম।
— ঘেমে আছি না? ছাড়ো।
— আমিও তো ঘেমে।
— আমার রাগ লাগছে কিন্তু।
— আমরা কি তাহলে একটা ঠান্ডা শাওয়ার নিব?
— ইফাত আমার হাতের খুন্তি দেখেছো। চটাস করে দুটো পড়বে তোমার পিঠে।
— পড়ুক না। সমস্যা তো নেই।
গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে ইফাত। পাজা কোলে তুলে সন্ধ্যাকে। তাকিয়ে রয় নারীটির চোখের দিকে। সন্ধ্যা চুপ হয়ে যায়। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
— এত কি দেখো এই চোখে?
— তোমাকে দেখি।
— আর কত, হু?
— মন তো ভরে না৷
ইফাত গোসলখানায় ঢুকে গেলো।
চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে সন্ধ্যা বেরিয়ে এলো রান্নাঘরে। ইফাত সালাদ কাটছে। দু’জন মিলে আজ খিচুড়ি রাঁধলো। চট্টগ্রামে ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে। ইফাত আজ ভালোই বায়না ধরলো। নিজ হাতে বউকে খাওয়াবে। সন্ধ্যা চুপচাপ খেলো। তার মন ভীষণ খারাপ হলো আজ। কেন তাকে এত ভালো হতে হবে? আজ-কাল কোন পুরুষ এত ভালো হয়? অথচ এত বছর ধরে ওদের সন্তান হচ্ছে না তা নিয়ে সন্ধ্যা হতাশায় ভুগে। ইফাত কি করে? সে উল্টো স্বান্তনার বাণী শোনায়। ইফাতের বুকে মাথা রেখে ক্লান্ত শ্বাস ফেলে সন্ধ্যা। ইফাত ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। খুব যত্নে চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো,
— হুট করে এত কাজ করো না। অসুস্থ হয়ে যাবে।
— কিচ্ছু হবে না।
— বললেই হয় না সন্ধ্যা। তুমি যে নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো তাতে কি আমার কষ্ট হয় না? আমি তো তোমার বাইরের কেউ?
— ছিঃ, কিসব বলো।
— তাহলে বেরিয়ে আসো এসব থেকে।
— মানে?
— যখন বাবু হবার হবে। আল্লাহ খুশি হয়ে যখন দেবার দেবেন। তুমি এভাবে খাটাখাটুনি করে নিজেকে আর ক্লান্ত করবে না।
সন্ধ্যা চুপ করে রইলো। এরমধ্যে ডাক্তার দেখানো হয়েছিলো। ডাক্তার এবার সন্ধ্যাকে পরিশ্রম করতে বলেছে। শারীরিক কিছু ব্যায়াম দিয়েছেন। দু’জনকে একাকী সময় কাটাতে বলেছেন এবং মানষিক চাপ নিতে নিষেধ করেছেন। সেই থেকে সন্ধ্যা উঠে পড়ে কাজে লেগেছে। বাচ্চার জন্য পা গল হয়ে আছে। ওকে দেখে ইফাতের খারাপ লাগা আরেকটু করে ধাপে ধাপে বাড়ে।
সন্ধ্যা দুই হাতে ইফাতের গলা জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
— বাড়ী যেতে মন চাইছে।
— এখন তো ছুটি মেলাটা খুব মুশকিল।
— তাহলে থাক।
— খুব মন চাইছে?
— উহু। একটু একটু।
— তাহলে ব্যবস্থা করি?
— নাহ। ঈদের ছুটিতে যাব নে।
ইফাত ওর চুলে তখনও হাত বুলাচ্ছে। তার কাছে এই মানুষটা খুব আদরের। যত্নের।
সারাদিন ঘর থেকে সায়রা’কে বের হতে দেখা যায় না। আজ দুই রাত পাড় হয়ে তিন দিন অথচ ও চুপচাপ রুমের আলো নিভিয়ে থাকে। পৃথিবীতে মানুষ গুলো হয় খুব এলোমেলো। এরা কি চায় তা জানে না। আবার মাঝেমধ্যে না চাওয়া কিছুতেও খুব সুখ খুঁজে পায়। কেউ কেউ আবার দুঃখ পেতে পছন্দ করে। তাদের চারপাশে সবসময় দুঃখ থাকে। সায়রা’র মনে হয় ও পৃথিবীতে এসেছে দুঃখময়ী হতে। এহেন শব্দের অর্থ তার জানা নেই কিন্তু নিজেকে তাই মনে হচ্ছে। কোন কিছুই তাকে ভাঙতে পারে নি কখনো। নরম মনটা নিয়ে খুব করে মাহমুদ খেললো তখন সায়রা গলে গলে পড়ছিলো মোমেন ন্যায়৷ কিশোরী হৃদয়ে ফুটছিলো কৃষ্ণচূড়া। লতাপাতা যেন তাকে আঁকড়ে ধরতো। চারপাশে প্রেম প্রেম গন্ধ। মাহমুদের সেই মুচকি এক টুকরো হাসি আর চোখের সেই অসামান্য চাহনি সবটাই যেন পা গল করে নাড়িয়ে দিতো কিশোরী হৃদয়। কেমন আমোদে-প্রমোদে দিনগুলো কাটতো। বাসায় মা সহ ভাই জেনে গেলেও কেউ আপত্তি তো করলো না। মাহমুদ তো টপার ছেলে৷ কে ই বা না করবে?
ফিনফিনে দেহের সেই তরুণী হৃদয়টা একদিন ভেঙে গেলো। চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো সকল ভাঙাচোরা কাঁচ। মাহমুদ নেই। তার খোঁজ নেই, খবর নেই। সায়রা অপেক্ষা করে জানালা ধরে। চোখের কাজল ছুটলো, রাঙা ঠোঁটটা বিবর্ণ হলো। যত্নে থাকা চুলগুলো জটলায় ভরলো। অপেক্ষার রঙ হলো তখন গাঢ়। কালো, কুৎসিত এক রঙ৷
অন্ধকার ঠেলে আলো আসার কথা থাকলেও সায়রা’র ক্ষেত্রে তা হলো না। তাকে বরং মাহমুদ অন্ধকারে আরেকটু জোরেই ধাক্কা দিয়ে ফেললো। সায়রা তখন খাদে পড়লো। খবর এলো মাহমুদ বিয়ে করেছে। চাকরি পেতেই তার মা তার বিয়ে দিয়েছে। ছোট ছেলের বিয়েতে নাকি দেড়ী করতে চান নি ভদ্রমহিলা তাই তো ধরে বিয়ে দিলেন৷ সায়রা ভাবে, হয়তো জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কসম-টসম দিলো কি না কে জানে কিন্তু পুরুষকে কি আর জোর করতে হয়? মাহমুদ খেলার ছলে খেলেছে অতঃপর নতুন পেয়ে পুরাতন ভুলেছে। সায়রা কিন্তু তখন ভাঙে নি বরং ভাঙা থেকেও নিজেকে গড়েছিলো কঠিন রূপে। সেই থেকে এতটা বছর বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়ায় নি৷ কত প্রস্তাব, কত কথা, মানুষের বাকা চাহনি সবটাই সহ্য করেছে একা তবুও বিয়ে সে করে নি। দিন দিন নিজেকে কঠিন ইস্পাত করেছে। সেই কঠিন সায়রাকে বিয়ের রাতেই ম রতে হলো? উচিত তো ছিলো তরুণী সায়রা’র মরে যাওয়া কিন্তু ম রতে চাইছিলো এই ত্রিশ বছর বয়সী সায়রা।
একজন মানুষকে যখন ভাঙতে ভাঙতে সকলে ক্লান্ত তখন আর ভাঙার জন্য হাতুড়ি শাবল লাগে না বরং দুটো কটু কথাই যথেষ্ট। তার শাশুড়ী সেদিন যখন মহিলাদের সাথে তাকে নিয়ে নানান মুখোরোচক গল্পে মশগুল ছিলেন তখন সায়রা সেখানে কঠিন কথা শুনাতে চায়। শাশুড়ী তখন সায়রা’কে টেনে পাশের রুমে নেন। অপবাদ পুরোটাই দিলেন তার আর তার ভাইঝির উপর। মহিলার নোংরা কথায় যদিও সায়রা নামক মেয়েটার কষ্ট পাওয়ার কথা না কিন্তু সেদিন যেন সায়রা’র মনে হলো তার মরে যাওয়াটাই শ্রেয়। একসাথে কতগুলো মানুষ বেঁচে যেতো।
— য়রা?
চোখ ঘুরিয়ে তাকালো সায়রা। সারাদিন পর তাসরিফ’কে দেখা গেলো। ক্লান্ত পায়ে এসেই পাশে বসেছে ওর। সায়রা’র মনে হচ্ছে ছেলেটা বোকা। তার উচিত ছিলো কম বয়সী একটা মেয়ে বিয়ে করা। এই যে ক্লান্ত হয়ে ফিরলো, কপালে তাহলে ঠান্ডা পানি জুটতো। সায়রা এসব করবে না৷ তার কাছে স্বামী মানে তাসরিফ না৷ তার কল্পনায়ও না অথচ আজ যেন সবচাইতে বড় সত্যিই এটা যা সায়রা মানতে পারছে না।
তাসরিফ ওর গালে হাত রাখে। আস্তে ধীরে তা গলায় নামে। জিগ্যেস করে,
— ব্যথা আছে য়রা?
সায়রা উত্তর করে না। তাসরিফ নিজেই বলে,
— ভাবী ফিরেছে। আমি যদিও জানতে পারছি না কোথায় গিয়েছিলো। আপনি বললে ভালো হতো। ভাই এসেছে য়রা। ভাবীর সাথে দেখাও হয়েছে। সব ঠিক থাকলে শিঘ্রই বিয়ে হবে। আপনার তখন আর একা একা লাগবে না।
সায়রা’র গা গুলিয়ে এলো হঠাৎ। দুপুর কেন এসেছে? ওকে কেন এখনই ফিরতে হলো? যা হওয়ার এবার হয়ে যেতো। সায়রা এই বাড়ীতেই আছে। কি আর করতো? মে রেই নাহয় ফেলতো। এক ল্যাটাতো চুকে যেতো। গলায় তখনও তাসরিফে’র হাতটা এলোমেলো ঘুরছে। দাগটা হালকা হচ্ছে না। তাসরিফ বললো,
— আপনি ঘামছেন কেন য়রা?
সায়রা এবারেও চুপ। তাসরিফ ওর গালটায় হাত রেখে বললো,
— কিছু কি লুকাচ্ছেন য়রা?
— না।
— আপনি এভাবে চুপ থাকলে আমার খারাপ লাগে য়রা। কথা কি বলাই যাবে না৷
— খুব বিরক্ত হচ্ছি৷
তাসরিফ গলা থেকে হাত সরিয়ে সায়রা’র একটা হাত ধরে৷ নিজের গালে রাখে তা। তালুতে চুমু দিয়ে বলে,
— বিরক্ত হন য়রা তবুও কথা বলুন। আমার ভালো লাগে না৷ আমরা স্বাভাবিক নেই সবটা।
তাচ্ছিল্য হাসে সায়রা। বলে,
— গু লির ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছো অথচ বলছো স্বাভাবিক নিব? আবদারটা খুব বড় নয় কি?
তাসরিফ চুপ করে মাথা নামায়। সায়রা’র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অভ্যস্ত হলেও এই ভাঙা গলার সায়রাতে সে অভ্যস্ত না। একদমই না। ভেতরে ভেতরেই যেন অস্থির লাগে ওর। এর থেকে মুক্তি মিলবে কিভাবে?
দরজায় টোকা পড়তেই বন্ধ চোখের পাতা খুলে দুপুর। বিকেল দিকে তামজিদ একবার এসে গেলো। বাবা-মা, দাদী সবার সামনে বিয়ের কথা বলে গিয়েছে আজ।
এবার সে কোন ভাবেই সিদ্ধান্ত বদলাবে না৷ ঠান্ডা মাথায় খুব করে দুপুরকে বুঝিয়ে গেলো। সেই থেকে দুপুর চুপ করে আছে। শাহ’কে বললে ও তো নিতে আসে না। তারই বা কি দোষ? সরকারি চাকরি, চাইলেই তো আর ছুটি মিলে না। বাড়ীর অবস্থা ভালো না। এতদিন কঠিন হাতে সায়রা সামলাতো এখন সে নেই। মরা মরা একটা অবস্থা। বড় আপা নেই। মিরাজ সাহেব অসুস্থ কিছুটা বোনের শোকে। দাদী ঝিমিয়ে আছেন৷ মা রান্না করছেন। সবাইকে খাওয়াচ্ছেন। এক মেয়ে জন্ম দিয়ে কোন পাপটাই না করেছে তারা। দুপুরের মন চাইলো নিজের চেহারাটা জ্বালিয়ে দিতে। না থাকবে চেহারা না থাকবে তামজিদের মোহ।
দুপুর উঠে গিয়ে দরজা খুলে। ভেবেছিলো মা অথবা বাবা কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাহজেব। চিরায়ত সেই হাসিতেই সুন্দর মুখটা। অবিশ্বাস্য চোখে দুপুর চেয়ে রইলো। শাহ ক্লান্ত গলায় ডাকলো,
— দুপুর?
— শাহ।
— ভেতরে আসতে বলবে না? অনেকটা পথ জার্নি করে এলাম……
হঠাৎ বুকের মধ্যে ঝড়ের বেগে ঝাপিয়ে পড়ে দুপুর। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে শাহ৷ ঝরঝরে কেঁদে উঠে কাচা হলুদ রঙের শাহ’র বউ। অভিযোগ করে না সে৷ শাহ ওকে সামান্য উঁচু করে ভেতরে ঢুকে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে খাটে বসে। দুপুর কান্না থামিয়েছে। এখন হাসছে। শাহ দুষ্টামি করে বললো,
— এত মিস করছিলে?
— খুব।
— ডেকেছো, এসেছি। এখন?
— এখন?
ঘড়িতে দেখে শাহ। রাত নয়টা। শাহ ওর কানে কানে বললো,
— এগারোটায় বের হব তোমাকে নিয়ে। ছুটি পাইনি বউ। সকালেই কাজ আছে। মাঝে দুই ঘন্টা। এক ঘন্টা আমার। এক ঘন্টা পরিবারের।
দুপুর বোকা বোকা চাহনি দিতেই শাহ সুযোগ মতো বুঝে নিলো। খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। দুলিয়ে দিচ্ছে প্রেমিক মন৷ চোখ বুজে আছে দুপুর। শাহ’র চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
— ক’দিনের জন্য নেবেন?
— বিয়ে করেছি কয়দিনের জন্য?
— বিয়ে কি মানুষ দিন গুনে করে?
— বউ কি কাছে মানুষ দিন গুনে নেয়?
দুপুর কালো বুকটার মাঝে নিজের নরম হাতের আদর দেয়। শাহ ওর ধবধবে ফর্সা হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে। বলে,
— এক ঘন্টা তো শেষ দুপুর। গোসল করে ব্যাগে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর কিছু কাপড় নাও। পুরাতন কাপড় প্রয়োজন নেই।
— কেন?
— আজ থেকে শাড়ী পরবে তুমি। আমি কিন্তু ততটাও ভালো স্বামী নই যে বউকে শাসন করব না। অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে সব।
দুপুর খিলখিল করে হাসলো। বুকের মধ্যে নাক ঘঁষে উঠে গেলো। ওর যাওয়ার পানে শাহ তাকিয়ে রয়। মাঝেমধ্যে তো অবিশ্বাসই হয়৷ দুপুর তার কি করে হলো?
মিরাজ সাহেব আজ কাঁদছেন৷ দুপুর বাবা’র এহেন কান্না দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না৷ মনের ভেতর এত ভয়, জড়তা কাজ করছে। এখন যেতে মন টানছে না৷ তামজিদ ওকে না পেলে কি করবে কে জানে? দাদী কাঁদলেন গুনগুন করে। মা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। দুপুর ওনার সামনে এলো। নিজ থেকেই হাত ধরে বললো,
— তোমার আদর কখনোই আমি ততটা পাই নি আম্মু। দোষ তোমার হলেও আমার রাগ আপির উপর। আপি না থাকলে নিশ্চিত আমি আদরটুকুর পেতাম। এতদিন আফসোস হলেও এখন হয় না৷ আমার আরেকটা মা আছে। আমি না খেলে ধমকায়। আমার প্রতিবেলা মনে পরে আমি খেলাম কি না। আমার চুলের সে যত্ন করে বাবার মতো। আমাকে বকে না বিনাদোষে। আজ তোমার কাছে একটাই আবদার, বাবাকে দেখে রেখো।
দুপুর হঠাৎ ই তাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নারত গলায় কানে ফিসফিস করে বলে,
সে জন সোনা চিনে না পর্ব ১৩
— আমি তামজিদ ভাইকে আমার শরীর দেখিয়ে ফুসলাই নি মা। তুমি সেদিন আমাকে কলেজ থেকে এলাম পর কত মা’রলে। আমার শরীরে এখনও ব্যথা হয়। শাহ জিজ্ঞেস করেছিলো কিসের দাগ। আমি বলি নি। আবার জিজ্ঞেস করলে বলব।
মা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। বাবার হাত ধরে বেরিয়ে এলো রাতের অন্ধকারে। গাড়িতে উঠতেই দেখলো শাহজেব বাবাকে জড়িয়ে ধরে কি কি বলছে। বাবার চোখে তখন বিশ্বাস। ভরসা। তীব্র এক আস্থা। সে তার মেয়েকে তুলে দিয়েছেন এক বিশ্বত্ব হাতে।