স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৬

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৬
সানজিদা আক্তার মুন্নী

নাজহা আর তৌসির বেরিয়েছে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে এই কিছু সময় আগে বাড়ি হতে। তৌসিরের পরনে সাদা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি সাথে তো আছেই একটা কালো মুজিব কোট। নাজহা কালো বোরকায় মুড়ানো চোখ দুটো শুধু দেখা যাচ্ছে। তৌসির হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্টেশন অবধি, গাড়ির স্টেশনে গিয়ে গাড়িতে উঠবে। নাজহা আপন মনে হাঁটছে আর নিজের মনকে ভয় ডর থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তৌসিরকে বউ নিয়ে হাঁটতে দেখে পথিমধ্যে সবাই আড়চোখে দেখছেন নাজহার। এতে বড্ড অসুস্থি হচ্ছে। তৌসির সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে হাঁটতে হাঁটতে নাক মুখ কুঁচকে বলে,

“সাউয়ার এক মানুষজন এদের লাইগা বউ নিয়াও একটু হাঁটতে পারব না।”
নাজহা গালি শুনেই নাক মুখ কুঁচকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“সবসময় এক গালি!”
তৌসির নাজহার কথায় ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে, “তালুকদারের মাইয়া গালি দিলে মন শান্তি হয়, মন মেজাজ ভালো রাখতে হলেও অন্তত গালি চর্চা করা জরুরি।”
নাজহা আর কিছু বলে না এটা শুনে কারণ বলার মতো কিছু নেই। এদের মতো মানুষের সাথে তর্কে না জড়ানোই উত্তম। কিছু সময় হেঁটে নাজহা আর হাঁটে না, দাঁড়িয়ে যায় আর হাঁটতে পারছে না। স্টেশন এখনও অনেকটা পথ বাকি। এত হাঁটা নাজহার রুচির মধ্যে পড়ে না। তৌসির ওকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে নিজেও দাঁড়িয়ে যায়, তারপর পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হইলো আও না ক্যান?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি আর হাঁটতে পারছি না, গাড়ি নিন!”
তৌসির নাজহার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে, “নবাবের বেটি চুপচাপ চল, এই রাস্তায় তোর বাপ গাড়ি নিয়া বইসা আছে যে তুই গাড়ি চড়বি?”
কথায় কথায় বাপকে টানতে দেখে নাজহা দাঁত চেপে বলে, “আমি যাব না গাড়ি ছাড়া, আগে গাড়ি নিন!”
তৌসির নাজহার জেদ দেখে নিজের লুঙ্গির কোণ দুই হাত তুলে দিয়ে নাজহার কাছে আসতে আসতে বলে, “চুপচাপ চল, সাউয়াগিরি করিস না এই মাঝরাস্তায়!”
নাজহাও নাছোড়বান্দা তাইতো ঘাড়ত্যাড়ামি করে উত্তর দেয়, “আমি হেঁটে যাব না গাড়ি ছাড়া, আপনি গাড়ি রিজার্ভ করুন।”
তৌসির এটা শুনে মুখ বাঁকিয়ে বলে, “লুঙ্গির নিচে আন্ডারপ্যান্ট পড়ি না পয়সার অভাবে, আর তুই রিজার্ভ গাড়ি মারাস?”

নাজহা তৌসিরের কথায় বড্ড লজ্জায় পড়ে যায়, ছিঃ কি বাণী! তারপরও বলে, “আমি গাড়ি ছাড়া যাব না!”
তৌসির নাজহার কথায় ওর দিকে আড়চোখে কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, “তুই না গেলে না যাইস পরীক্ষা তোর আমার না। আমি বাড়ি গেলাম।”
বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে নাজহা ঘাবড়ে গিয়ে আর একটাও শব্দ ব্যয় না করে চুপচাপ সামনে আগায়! তৌসির এটা দেখে আপন মনেই বলে, “এক নাটক ঝুলাইছে দয়াল আমার গলায়!”
এ বলে নিজের ডান হাত দিয়ে লুঙ্গি তুলে ধরে আর বা হাত দিয়ে নাজহার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নাজহা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, “আমার হাত ছাড়ুন, হাত ধরলেন কেন?”
তৌসির নাজহার হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে, “রাইতে আমার কোলে ঘুমাইতে পারো, আর দিনে হাত ধরতেই ফ্যাত ফ্যাত করো?”

নাজহা তৌসিরের মুখের এই বিষাক্ত বাণী শুনে রাগে ফাটতে শুরু করে। কত বড় কথা বললো! নাজহা ফিসফিসিয়ে রাগি গলায় বলে, “আজ রাতে শুধু আইসেন জড়িয়ে ধরে ঘুমাইতে, তখন দেখবেন কি করি!”
“সেদিনের মতো বিচ্ছু ঢুকাইয়া দিবা লুঙ্গির নিচ দিয়া?”
নাজহা সামনে পা ফেলতে ফেলতে বলে, “সেদিন তো সরিয়ে নিয়েছি, আজ রাতে আর সরাবো না!”
“এই তুই তো দেখি বউ নামের শত্রু!”
নাজহা তৌসিরের কথায় ওর মুখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “শত্রু ঘরের মেয়ে করছেন তাহলে শত্রুই তো হবো!”
“তুই শত্রু ঘরের মাইয়া হইলেও এখন তুই আমার বউ, আর আমি আমার বউরে সবচেয়ে আপন মনে করি, যদিও হয় শত্রু।”

নাজহা তৌসিরের কথায় ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “প্রেম তো দেখি বাটি বাটি হয়ে গলে পড়তেছে।”
তৌসির নাজহার কথায় ক্ষীণ হাসে তারপর বলে, “উমম, এইডা প্রেম না, এইডা খালি দায়িত্ব। আর তোমার বয়স অনেক কম তাই তোমার প্রতি আমার ভাবনাটাও বেশি।”
তৌসিরের কথা শুনে নিশব্দে কিছু সময় চেয়ে রয় নাজহা তৌসিরের মুখ পানে। কি মিঠা বাণী ঝড়ল ওর তিতা মুখ থেকে। তখনি ওদের পাশে একটা সিএনজি এসে থামে। সিএনজির ড্রাইভার মাথা বের করে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে, “ও তৌসির ভাই, কই যাইবেন, এক টান দিতাম নাকি আফনারে?”
তৌসির থেমে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “দরগা গেইট যাইমু!”

“ও তাইলে আইয়েন, সাথে কেডা আফনার বউ? আমাদের ভাবি নাকি?”
তৌসির ওর কথায় নাজহার দিকে এক নজর তাকায় তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলে, “না, আমার মাইয়া, বউ না!”
নাজহার হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা। কি বলছে কি এই তৌসির! ড্রাইভার লায়েক এটা শুনে বলে, “ছিঃ ছিঃ কি কন যে ভাই, আমি জানি এইডা আমাগো ভাবি!”
ওর কথায় তৌসির নাজহাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে, “যখন জানস তাইলে আর জিগাস ক্যান, চল তাড়াতাড়ি!”

লায়েক আর কিছু বলে না, চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছু সময় বাইরে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে তৌসির লায়েককে জিজ্ঞেস করে, “এই লায়েক, পেঁয়াজের কেজি কত আইলো রে?”
লায়েক হাবলার মতো হেসে বলে, “ভাই আর কইয়েন না, গতকাল রাইতে সত্তর টাকা ছিল, আইজ সকালে আশি হইয়া গেছে!”
তৌসির দামের কদর শুনে বলে, “যেই দাম বাড়তাছে সবকিছুর, তিন পথের মোড়ে থালা নিয়া বসতে হইবো দেখতাছি।”
লায়েক হাসি দিয়ে বলে, “কি কন ভাই, আপনাদের পয়সার অভাব আছে নাকি!”

“পয়সার অভাব কার নাই ভাই, ক তো? এই দুনিয়ায় অভাব আর অভাব, খালি অভাব!”
“তাও ঠিক কইছেন ভাই, অভাবে করে নষ্ট স্বভাব।”
তৌসির তখনি বাইরে তাকিয়ে দেখে একটা জমি কুড়া হচ্ছে। এটা দেখে বলে, “সাউয়ার নাতিরা সব জমি জামি কুইড়া খাইয়া নিতাছে।”
লায়েক হাসি দিয়ে বলে, “কি কমু ভাই, মাইনষে কিছু বুঝে না, গরিব কৃষকগুলার মাথার উপর ছাদ ভাঙ্গে।”
তৌসির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “ভাবতাছি এবার বৈশাখ মাসে আমারা ক্ষেত করমু না, গ্রামের কৃষকদে দিয়া দিমু ক্ষেত করার লাইগা। কি করবো, সংসার তো চলতে হইবো ওগো!”
লায়েক বলে, “আফনারা আছেন বইলাই ভাই, এহনও এই গরিবদের মুখে দুমুঠো ভাত জুটে। এই যে গাড়িটা লইয়া দিলেন আমারে।”
তৌসির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “কোনো বাল তো ছিঁড়তে পারি নাই মাইনষের লাইগা, তাই এই বালি ছিঁড়ি আর কি করমু।”

লায়েক হট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বলে, “আফনার মুখের গাইলগুলোও অনেক ভালো লাগে ভাই।”
নাজহা চুপচাপ এতক্ষণ এদের কথাবার্তা শুনছিলো। তৌসিরের মুখের গালি শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। শুধু গালাগালি আর গালাগালি। নাজহার ফোন বেজে ওঠে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ওর সাহেব চাচ্চু ফোন দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। চুপচাপ ফোন ধরে ক্ষীণ গলায় সালাম দেয়, “আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম সালাম। কি অবস্থা তোর আম্মা?”
নাজহা নরম গলায় বলে, “এই তো, আলহামদুলিল্লাহ। তোমার?”
“আমিও আছি এক রকম। আজ পরীক্ষা না? কখন যাচ্ছিস?”
“এই তো, গাড়িতে যাওয়ার পথে!”
“কে নিয়ে যাচ্ছে? নাদের এসেছে?”
“না, মাস্টার চাচ্চু আসেননি। উনি নিয়ে যাচ্ছেন।”
“তৌসির সাথে আছেন তোর?”
“জ্বী।”
“আচ্ছা উনার কাছে দে তো!”
নাজহা তৌসিরের দিকে একনজর তাকায় তারপর ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, “আপনার সাথে কথা বলবেন।”
তৌসির ভুরু কুঁচকে বলে, “কে?”
“মারজান চাচ্চু।”

তৌসির নাজহার কথায় নাজহার থেকে ফোন নিয়ে কানে লাগিয়ে একটা লম্বা সালাম দেয়, “আসসালামু আলাইকুম শ্বশুর মশাই, কেমন আছেন?”
মারজান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, “আপনার মতো কুমিরের কাছে মেয়ে কে দিয়ে আর কেমন থাকতে পারি বাবা বলো তো। যাই হোক, আপনার কি অবস্থা?”
তৌসির মারজানের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, “আপনাদের মতো গাদ্দারের মাইয়া ঘর তুইলা আর কেমনে ভালো থাকমু? তারপরও দয়ালের দয়ায় পাক্কা আছি।”
নাজহা দাঁত চেপে বসে রয়। সবসময় তৌসির এমন করে। ওর বাপ চাচার পিছনে না লাগলেই না হয়। মারজান চাচ্চু বলেন, “আমাদের মেয়ে টাকে আগলে রেখো বাবা, বড্ড আদরের।”
“আদরে তো আমিও রাখতে চাই, কিন্তু আফনাদের মেয়ে তো মুনাফেকি ছাড়া কথাই কয় না আমার লগে।”
“ওর বয়সটা কম, একটু বুঝাবেন, খুবই জেদি।”

“চিন্তা করবেন না, বউ আমার তাই ভালো রাখার দায়িত্বও আমার!”
“আচ্ছা তাহলে ভালো থাকুন, নাজহার কাছে একটাবার দিন!”
তৌসির নাজহার কাছে ফোন দেয়। মারজান নাজহাকে বলেন, “তোর যা রাগ আর জেদ, ঝাড়ার ঝাড়িস। মনে রাখিস, ও আমাদের শত্রু। যদি সুযোগে পাস তো কুপ দু একটা মারিস। আচ্ছা আমি রাখি।”
তৌসির নাজহার দিকে আড়চোখে চেয়ে রয়। হাত লেগে ফোনের সাউন্ড বেড়ে যাওয়ায় তৌসিরও এ কথা শুনতে পায়। নাজহা লজ্জায় পড়ে যায়। তৌসির কটাক্ষ করে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে, “কইছিলাম না তোর বাপ চাচা সবগুলা খানকির পোলা, সবগুলাই গাদ্দার, কোনটা ভালো না।”
নাজহা তৌসির কথার প্রতিত্তোরে বলে, “তাতে আপনার কি? মনে রাখুন একটা স্পষ্ট কথা, আমার বাপ চাচা যদি মহা খারাপ হয় তারপরও আমি তাদের পক্ষে, তাই এসব বলে কোনো লাভ নেই।”
তৌসির নাজহার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বাইরে তাকাতে তাকাতে বলে, “সাউয়ায় বারি পড়লে এমনিই পক্ষ দেওয়া ছাড়বি

পরীক্ষা শেষে এসে আসরের নামাজ পড়ে ঘুমে পড়েছে নাজহা। আজ সারাদিন তৌসির ওর সাথেই ছিল। তৌসির পার্টি অফিসেও যায়নি আর। নাজহা বেদম ঘুমে টালমাটাল হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে, গায়ে কাঁথা জড়িয়ে কোঁকড়ানো তরঙ্গের মতো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছিটিয়ে আছে বিছানায়। নাজহার পাঁচ নাম্বার চাচা মিরাজের বড় ছেলে তালহা ভাই এসেছেন শিকদার বাড়িতে। আসার কারণ, নাজহার তিনটে বিড়াল রয়েছে, ওগুলো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নাজহাকে ছাড়া। তাই তাদের দিতে এসেছেন তালহা ভাই। যদিও উনি আসতে চাননি, দাদাজান পাঠিয়েছেন। নয়তো কে আসতে চাইবে নিজের পছন্দের নারীর শ্বশুরবাড়ি? হ্যাঁ, তালহা ভাই হলেন নাজহার শ্যাম পুরুষ। তালহা ভাই বড্ড ভালোবাসেন এই জেদি ঘাড়ত্যাড়া নাজহাকে। তিনি জানেন নাজহাও উনাকে পছন্দ করে। কিন্তু আফসোস, তাদের পরিণতি বিচ্ছেদেই।

তালহা ভাইকে তৌসির নিয়ে এসেছে নাজহার কাছে, তাদের রুমে, যাতে উনি দেখা করে বিড়ালগুলো দিতে পারেন। তালহা ভাই এসে ওকে ঘুমে দেখে তৌসিরের দিকে একনজর তাকিয়ে বলেন,
“ভাই, ওকে জাগানোর প্রয়োজন নেই, থাকুক ঘুমে, আমি চলে যাই।”
তৌসির নাজহার পাশে এসে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,
“না না, আফনে এসে বন, আমি ডাইকা দিচ্ছি।”
তালহা ভাই আর কী-ই বা করবেন, চুপচাপ এগিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসেন। চারপাশে এক পলক তাকান। আজ উনার রৌদ্ররাগিনী অন্য কারো যত্নের ফুল কী মিষ্টি ভাবে ঘুমিয়ে আছে। তালহা ভাই নির্মল নয়নে চেয়ে তাকেম ঘুমন্ত নাজহার পানে, চোখের কী ভয়ংকর তৃষ্ণা! আজ কদিন পর দেখলেন, প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছিল একটিবার আপন প্রণয়রাণীকে দেখার জন্য।
তৌসির নাজহার দিকে ঝুঁকে ওর বাহু আলতো টেনে বলে,

“নাজহা, ওঠো, কে এসেছে দেখো।”
ঘুমের মধ্যে বিরক্ত হয়ে নাজহা ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে বলে,”রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দেননি, এখন বিরক্ত করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”
তৌসির নাজহার কথায় ওকে এক টানে তুলে মনে মনে বলে,”মান সম্মান আর কিছু রাখতো না এই নাদান!”
রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দেননি, এই কথাখানি তালহা ভাইয়ের কর্ণপাত হতেই মনে হয় উনার কলিজাটা কেউ অল্প অল্প করে ধীরে ধীরে টেনে বের করে নিল। তালহা ভাইয়ের অন্তর ফাটতে শুরু করেছে, অস্থির হয়ে পড়ছেন উনি। হাত পা আপনাআপনি কাঁপতে শুরু করেছে, নিজেকে দমিয়ে রাখা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তৌসির নাজহাকে এক টানে তুলে বসায়। নাজহা চোখ কচলিয়ে চোখ খোলে, সামনে যেই না তালহা ভাইকে বসে থাকতে দেখে, ওমনি ভেতর স্তব্ধ হয়ে যায়। শরীরের লোম খাড়া হয়ে যেতে শুরু করে। তৌসির ওর ওড়নাটা পাশ থেকে নিয়ে ওর গলায় জড়িয়ে দিতে দিতে বলে,

“নাও, ভাইর লগে কথা কও, আমি গোসল দিয়া আই।”
এ বলে তৌসির ওয়ারড্রোব থেকে একটা কালো আর নীল চেকের লুঙ্গি নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রেখে যায় পিছনে দুই অবক্তাকে, যারা কি না একে অপরকে বলতে পারেনি দুজনেই অমরণ ভালোবাসে।
নাজহা ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে বিছানা থেকে নেমে তালহা ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে, বুক ধড়ফড় করছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি অন্তরে কেউ বিষাক্ত কাঁটা ফুটিয়ে দিল। নাজহা তালহা ভাইয়ের সামনে দাঁড়াতে উনি চোখ তুলে তাকান অসহায় চোখে, একপলক ওর দিকে আর জিজ্ঞেস করেন,
“কেমন আছিস?”

নাজহা নিজের পান্নার মতো কালচে সবুজ চোখে অদ্ভুত দৃষ্টিতে অগোছালো তালহা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তালহা ভাইয়ের পড়নে হালকা নীল রঙের একটি ক্লাসিক শার্ট আর কালো প্যান্ট, চুলগুলো এলোমেলো, সিগারেট খাওয়া কালচে খয়েরি ঠোঁট, ক্লিন শেভের শ্যামলা চেহারা বড্ড মায়াবী লাগে এই পুরুষটা। নাজহা কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে থেকে উত্তর দেয় মেকি হেসে,”ভালো থাকতে দিয়েছেন? ভালো থাকবো?”
তালহা ভাই চোখ নামিয়ে নেন। নাজহার কথায় বিয়ের কথা শুনেই পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাচ্চাদের মতো কান্না করে আবদার করেছিল নাজহা তালহা ভাইয়ের কাছে। কিন্তু আফসোস, তালহা ভাই শুনেননি, বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করেননি। পরিবারের সম্মানের ন্যায় চেয়ে বলেছিলেন নাজহাকে,”তোর আবেগ আমি ভালোবাসা নই।”

এই কথাখানি যতবার নাজহা ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, ততবারই উনি বলেছেন আবেগ। আবেগ বলতে বলতেই পর হয়ে গেলো ও।
নাজহা দেখে তালহা ভাই ঘেমে গেছেন, তাই আগে যেমন উনাকে পানি দিত, তেমনি আজও তালহা ভাইকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নিন তালহা ভাই, পানি!”
তালহা ভাই অক্ষুণ্ণ চোখে নাজহার হাতে ধরা গ্লাসের দিকে তাকান। ওর হাতে চুড়ি দেখে এক নিরুপায় চক্ষুসম্ভার নিয়ে নাজহার ন্যায় তাকিয়ে বলেন,
“অন্যের নামে চুড়ি পড়া হাতে আমায় পানি দিচ্ছিস, এই পানি আমার গলা দিয়ে নামবে?”

নাজহার কলিজায় লাগে তালহা ভাইয়ের আঁধার গ্লানির আর্তনাদ। চুপচাপ পানির গ্লাসটা জায়গামতো রেখে আবারও তালহা ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় আর নিস্তেজ গলায় বলে,
“তালহা ভাই, মৃত্যুর আগ অবধি মনে থাকবে, আমার চোখের অসহায় পানিগুলোও আপনার মন গলাতে পারেনি।”
তালহা ভাই নাজহার কথায় বুকভরা বিমর্ষ নিয়েও মৃদু হেসে বলেন,
“আমাদের মিলন কখনো হওয়ারই ছিল না!”
” হ্যা ছিল না তো আপনি চাননি এটা তাই হয়নি।
তালহা ভাই নির্মুল হেসে বলেন,”কিছু জিনিস চাওয়া সাধ্যের বাইরে থাকে!
নাজহার চোখে পানি চলে আসছে ধীরে ধীরে। বুক ফেঁপে উঠছে বারবার কষ্টে। কিন্তু কিছু করার নেই, ক্ষীণ গলায় বলে, “হঠাৎ আমার শ্বশুরবাড়িতে এলেন যে? লাশ অবস্থায় দেখতে এসেছেন বুঝি?

তালহা ভাই নাজহার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন, তবে ওর এই কথা শুনে আবারো নাজহার মুখ পানে কাতর দৃষ্টি তাকান। আজ উনার প্রেমসঞ্চারিণীর মুখে অভিমানের চাপ স্পষ্ট। আজ তালহা ভাইয়ের কঠোরঅলসার অভিমানে নয়নদ্বয়ে জ্বলছে সিক্ত অনুরাগে। এই অভিমান দেখে তালহা ভাই মেকি হেসে বলেন, “জানিস? অভিমানশীলা রমণীরা নীরবতায় প্রেমকাব্য রচনা করে।”

তালহা ভাইয়ের কথায় স্রেফ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নাজহা উনার পানে। কতটা নিষ্ঠুর উনি। তালহা ভাই বুঝেন এখানে থাকা আর উচিত নয় তাই উঠতে উঠতে বলেন, “আমি যাই রে। তোর বিড়ালগুলো দিতে এলাম, নিচে লিভিং রুমে তিনজন রাখা আছে!”

নাজহা উনাকে যেতে দেখে আলতো সুরে বলে, “আরেকটু থাকা যায় না? একটুখানি সময়?”
তালহা ভাই ওর কথায় হেসে বলেন, “কি করব থেকে? থেকে গেলেই তো আর তুই আমার হবি না!”
নাজহার ভেতরটা ফেটে পড়তে থাকে, মনে হচ্ছে পাহাড় ধসে পড়লো এর উপরে। এভাবে যদি আগে বলতেন তাহলে মুহূর্তেই উনার নামে দশ-বারো বার কবুল বলে দিত নাজহা। আজ বলতে পারবে না, আর আজি এমন কথা বলছেন তিনি। নাজহা তালহা ভাইকে বলে, “ও পারে হবো। আপনি ওপার অবধি অপেক্ষা করবেন তো আমার?”
তালহা ভাই নাজহার কথায় মুচকি হাসেন, কারণ তিনি জানেন এটা বাস্তব নয়। আর কিছু দিন পর নাজহা তালহা ভাই বলতে কেউ আছে ভুলে যাবে, নিজের সংসারে মন দেবে। তাই এসব আশা সবই বৃথা। তালহা ভাই মুচকি হেসে যেতে যেতে বলেন, “ভালো থাকিস, আমি গেলাম!”

এ বলে উনি সামনে আগান। পা তিরতির করে কাঁপছে, পা ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, মন চাচ্ছে কিছু সময়, আরো কিছু সময় নিজের প্রিয় নারীর সঙ্গ দিতে, দু’গাল কথা বলতে। সে কথা হোক না তিক্ত, তারপরও তিক্ত কথাই বলতে। কিন্তু তা যে সম্ভব নয়। নাজহা অচেতন হয়ে কাতর চোখে তালহা ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি আসবো, আমি আপনার কাছেই আসবো। আপনাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বাঁচা। আমাদের আবার দেখা হবে। ”
ওর কথা কর্ণপাত হতেই আপনাআপনি থেমে যায় তালহা ভাইয়ের পা। উনি ঘাড় ফিরিয়ে নাজহার ন্যায় তাকিয়ে ঠোঁটে অল্প হাসি ঝুলিয়ে বলেন, “এ জীবনে আমাদের আর কখনও দেখা না হোক।”

এ বলে উনি দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। নিজের প্রিয় নারী আজ অন্য কারো স্ত্রী এটা অনুভব হতেই অন্তরের বাঁধ ভেঙে যন্ত্রণার ঢেউ উপচে পড়ছে। অন্তর কাঁপছে যন্ত্রণায়, হাত পা ভেঙে পড়ছে, অবস হয়ে যাচ্ছে, পা ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে। শরীরে আর শক্তিই নেই। নাজহার আর্তনাদ কলিজা বিচ্ছিন্ন করে, ব্যথায় নত করে নিয়েছে।

তালহা ভাই বেরিয়ে যেতেই ‎নাজহা দৌড়ে একপ্রকার বেলকনিতে যায়। উদ্দেশ্য শেষ দেখা, একটি বার তালহা ভাইকে দেখে নেওয়া। নিচে অনেক জোরে জোরে কে গান বাজাচ্ছে, এতে নাজহার আরো বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে। কান ভ্যান ভ্যান করছে গানের শব্দে বেলকনিতে আসায়। কিন্তু তাও নাজহা রুমে যায় না, বেলকনির কিনারায় এসে রেলিং এর হাতলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু মুহূর্ত পর তালহা ভাই বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে বের হন আপন বাড়ি যাওয়ার জন্য। আর নাজহা নিরাশ্রয় নেত্রে চেয়ে রয় উনার যাওয়ার পানে, ভেতরটা গলে পড়ছে। নাজহা বুঝতে পারছে তালহা ভাই হাঁটতে পারছেন না, জোর করে শরীর টেনে হাঁটছেন। পা বারবার আটকে যাচ্ছে, উনি এলোমেলো পা ফেলছেন। নাজহার চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ওর আর তালহা ভাইকে পাওয়া হলো না। এই ভবনে সবার আপন মানুষ আছে, কিন্তু আল্লাহর পর তালহা ভাইয়ের আপন বলতে নাজহাই ছিল, আজ সেও পর হয়ে গেলো। মা নেই, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তালহা ভাই থেমে যান গেটের সামনে গিয়ে। তারপর দাঁড়িয়ে ঘাড় ফিরিয়ে নাজহার বেলকনির দিকে তাকান। দেখতে পান উনার নাজহা উনার ন্যায় ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে, আবার সেই চোখে পানিও। হয়তো এই চোখ বলছে, “আরেকটু থাকেন না, একটুখানি সময় থাকুন!”

নাজহা তালহা ভাইকে থেমে ওর দিকে তাকাতে দেখে অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। চোখ বেয়ে সমানতালে পানি ঝরতে থাকে, আর মন বলে, “আরেকটু থাকুন না, আরেকটু!”
তখনই স্পিকারে বেজে ওঠে

Aise Na Jao Piya, Aise Na Jao Piya
Judi Hai Rahein Sari Tujhse Meri (x2)
Ja Ranjhan, Ranjhan, Ranjhan Tu Bhi Kya Yad Rakhega, Ja Heer Ne Tainu Chhod Diya
Lakh Samjhaun Main Tan Dil Samajh Ni Pata, Mange Teri Khairiyan
Sona Tha Tera Ve Jhootha, Rang Do Dinon Mein Chhuta, Kaise Bhulaun Bairiyan

নাজহার এই গানটা শুনে হাউমাউ করে কান্না করে তালহা ভাইকে এই লাইনগুলো বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তালহা ভাই আর থাকেন না। চুপিসারে চোখ মুছে একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যান শিকদার বাড়ি হতে।
উনি যেতেই নাজহা শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলে, “আজও আমার চোখের অসহায় চাহনি আপনি বুঝলেন না।”

Khwaishe jo thi meri
Bus tujko paane ki
Khaweshe woh hi meri
Bus khawaish hi reh gai
Aaa.. Khwaishe jo thi meri
Bus tujko paane ki
Khaweshe woh hi meri
Bus khawaish hi reh gai
Maine kabhi na chora tuhje
Bus roya yunhi khudse yun dil ko
Yun dil ko sambhalta raha

একটা রুমে এই গান স্লো বিটে বাজছে চারদিকে আবছা আলো ড্রিম লাইটের। এই ক্ষীণ আলোর রুমে বসে আছেন একজন, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হাতে একটা কলম, উরুর উপর রাখা একটি ডায়রি। তিনি ডায়েরিতে কিছু লিখছেন, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, এতে তার হাত ডায়রির পাতা ভিজে যাচ্ছে। ডায়েরির পাতায় সে লিখছে তো ঠিকই, কিন্তু মন দিয়ে লিখতে পারছে না, হাত কাঁপছে বারংবার, তারপরও লিখছে :
প্রিয় প্রাণসঞ্চারিণী,
জানি তোকে কখনো আমার পাওয়া হবে না, তারপরও এই বোকা আমি তোকে ভালোবেসেছি, তোর মায়ায় নিজেকে ডুবিয়ে নিয়েছি। আমি জানতাম ইকরাব তোকে, আর তুই তালহাকে পছন্দ করিস তারপরও ভালোবেসেছি। জানিস কেন বেসেছি? এই ভেবেই বেসেছি, যদি আমার নিয়তি আমার উপর একটুখানি দয়া করে আর কোনোভাবে তুই আমার হয়ে যাস, সেই আশায় বেসেছি।

কিন্তু দেখ, আমার নিষ্ঠুর নিয়তি আমায় দয়া করেনি। একটুখানি দয়া করেনি। তুই আমার হসনি। পৃথিবীর সব নিয়ম ভঙ্গ করে তুই যদি আমার হতে, তবে কি এমন ক্ষতি হতো? খুব বেশি কি ক্ষতি হতো? হয়তো হয়ে যেতো তাই তো তুই আমার হসনি।
আমি আজও তোর সেই খিলখিলিয়ে হাসিতে মাতোয়ারা। তুই আমার অন্তরের গহ্বরে লুকিয়ে থাকা এক টুকরো বাঁচার আশা যা আজও নিভে যায়নি।
এ বলে তিনি নিজের চোখের পানি মুছলেন, গলা শুকিয়ে আসছে যন্ত্রণায়। তবু কলম থামল না, আবারো কাঁপা হাতে লিখলেন :
তোকে পাইনি এতে দুঃখ নেই। কিন্তু তোকে বলা হয়নি যে, তুই বলতেই আমি নিঃশ্ব। আর হয়তো কখনো বলাও হবে না।
তুই আমার হওয়ার ছিলি না, তাই হসনি।কিন্তু মন যে বড্ড বেহায়া! তুই অন্য কারো, অথচ আজও তোকে নিয়ে বুনি হাজারো স্বপ্ন। না পেয়েও পাওয়ার লোভ পিছু ছাড়ে না।
কখনো মনে হয় হয়তো কোনো জন্মে, অন্য কোনো আকাশের নিচে, আমরা সত্যিই এক হবো। সেদিন তোর হাত ধরতে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। আর যদি তা না-ও হয়, তবু জেনে রাখিস প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি অশ্রুবিন্দুতে, আমি কেবল তোরই নাম লিখে যাই।
~চিরঅপূর্ণ প্রেমিক~

তৌসির তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে। নাজহা টেবিলে বসে স্পিকিং প্র্যাকটিস করছে। হঠাৎ তৌসিরকে এমন হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে দেখে নিজের অনিচ্ছায় উঠে দাঁড়ায়। তৌসির কোনোদিকে না তাকিয়ে ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার খোলে কিছু খোঁজে। কিছু সময় খুঁজে না পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে নাজহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“নাজহা, এইখানে বারোটা পাউডারের ছোট প্যাকেট রাখা ছিল, ওগুলো দেখছো?”
নাজহা পাউডারের কথা শুনে তৌসিরের দিকে তিক্ত নয়নে চেয়ে বলে,
“পাউডার বলছেন কেন? ওগুলো ড্রাগস বলুন না!”
তৌসির নাজহার মুখ থেকে এসব কথা শুনে দ্রুত পায়ে ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,

“ও তুমি দেখছো? এগুলো কই? তাড়াতাড়ি দাও।”
নাজহা আশেপাশে আলসেমি চোখে চোখ বুলিয়ে তারপর সোজা উত্তর দেয়,
“ওগো, ওগুলো আমি ওয়াশরুমে ফ্লাশ করে দিয়েছি।”
ফ্লাশ করে দিয়েছি শুনে তৌসিরের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে অগ্নিদগ্ধ চোখে তাকিয়ে নাজহার দিকে ত্যাড়ে এসে বলে,
“কি কস মাগি! তুই এইরকম কাজ কেমনে করলি?”
তৌসিরের মুখের এমন বিশ্রী গালি শুনে রাগের আঁচে পুড়ে যায় সারাটা দেহ নাজহার। তাই দাঁত চেপে বলে,
“যা শুনেছেন তাই বলেছি, আমি ফ্লাশ করে দিয়েছি।”
তৌসির নাজহার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাগ তার বুকে গুমরে উঠছে, ওর এক একটি নিঃশ্বাস বজ্রপাতের সমান। তৌসির হুংকার দিয়ে বলে,
“নাদানের বাচ্চা! চুপচাপ বের কইরা দে, নয়তো তোর কলিজার উপর উঠে আযান দিমু, মুনাফেকি ছাড়ায়া দিমু একদিনে।”

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৫

নাজহার বড্ড ভয় লাগতে শুরু করে, কিন্তু তারপরও সাহস নিয়ে তৌসিরের চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমি ফ্লাশ করে দিয়েছি।”
তৌসির লুঙ্গির কোণ তুলে হাতে নিতে নিতে বলে,
“এক টানে ধইরা সাউয়া ফাইরা নিমু, চুপচাপ বের কর। কাস্টমার টাকা দিয়া দিছে।”
নাজহা সোজা উত্তর দেয়,
“আমি বললাম তো, ফ্লাশ করে দিছি। তো কোথা থেকে পাবো?”
তৌসির অগ্নিচোখে নাজহার ন্যায় তাকিয়ে ওর দিকে হাত বাড়ায়।উদ্দেশ্য গলা টিপে মেরে ফেলা, ধ্বংস করে দেওয়া। তৌসিরের কাছে কোনো কিছুর মাফ নেই।

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here