হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২০
Tahrim Muntahana
কপালে বাম হাত রেখে ঘুমিয়ে আছে আফরা। এখনো সে হসপিটালে। আজ কেন জানি একটু বেশীই ঘুম পাচ্ছে। সকাল দশটা পেরিয়ে কয়েক মিনিট চলে গেছে, এখন পর্যন্ত ঘুমিয়ে আছে সে। মধ্যে অবশ্য একবার জেগে গিয়েছিল, নার্সের হাতে সুপের রুপ অখাদ্য দেখে চোখ বুজে নিয়েছে। তার কি কোনো গুরতর অপারেশন হয়েছে? হয় নি তো! তাহলে সে কেন ওসব গরম পানি খাবে! এর থেকে বাড়ি গিয়ে গরম গরম ভাত খাবে, শান্তি।
নার্সটি অনেকবার ডেকে চলে গিয়েছে। চোখ বুজে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছে, এখনো মেয়েটা ঘুমেই বিভোর। ফট করে দরজা খুলে আদিল ঢুকে। রাতের পড়া পোশাকই গাঁয়ে শোভা পাচ্ছে। হয়তো সারারাত এখানেই ছিল! আফরা কে এখনো ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আদিল ফিচেল হাসে। কোনো রকম সময় ব্যয় না করেই পানির গ্লাস হাত তুলে নেয়। একপলক আফরা কে দেখে পুরো গ্লাস পানি মুখের উপর ঢেলে দেয়! তড়িৎ গতিতে উঠার চেষ্টা করে আফরা। রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়েই তো তার ঘুমটা হালকা হয়ে গিয়েছিল। ডান হাতে ব্যাথা পায়, তবে প্রকাশ করে না। চোখ রাঙিয়ে আদিলের দিকে তাকাতেই দৃষ্টি শান্ত হয়ে যায় তার। লোকটা সারা রাত এখানেই ছিল? ভালোভাবে উঠে বসতে বসতে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
~ ভালোটালো বেসে ফেলেছেন নাকি?
আদিলের ভ্রু কুঁচকে আসে। মেয়েটা গুলি খেয়ে ভুলভাল বকছে কেন? চাপা সুরে বললো,
~ এসাইলামে ভর্তি করতে হবে? মাথায় যে এত গুরতর সমস্যা জানতাম না!
অপমানিত হয় আফরা। থমথমে মুখ নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই বললো,
~ আপনি ডক্টর হলে, আমি যেকোনো রোগীই হতে পারবো, আপনার কাছাকাছি থাকতে!
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে আদিল বললো,
~ আপনি খান বা না খান আমার কোনো যায় আসে না! তবে আপনাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও ঔষধ খেয়ে সুস্থ হতে হবে। এরজন্য আগে খাওয়াটা প্রয়োজন। বুঝতে পেরেছেন?
~ আপনি সাইকো লাভার হয়ে গেলেন নাকি? ব্যাথা আমি দিবো, আবার আদর করে আমিই সুস্থ করবো! এরকম টাইপ!
আদিল শান্ত চোখে আফরা’র দিকে তাকায়। এগিয়ে আসে বেডের দিকে। ঠোঁটের ভাঁজে চতুর হাসি। মুখশ্রীটা আফরা’র মুখোমুখি এনে হেঁয়ালি করে বললো,
~ আদর করে? কাছাকাছি এসেছিলাম নাকি? আসবো কাছে?
খানিক ভড়কায় আফরা। আদিলের গরম নিঃশ্বাস তার চোখে মুখে বারি খাচ্ছে। দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে। তবে কেন অনুভূতি নেই? না কোনো আকর্ষণ! দুজনের চোখেই অদ্ভুত এক নেশা! যে নেশা হয়তো একে অপরের রক্ত দেখেই বিরাট রূপ নিবে। আফরা নিজের মুখটা আরেকটু উঁচু করে বললো,
~ আমি তো চাই! কাছে আসুন না, করুন না আদর!
ফট করে দাঁড়িয়ে যায় আদিল। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আফরা হেসে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। বাড়ি ফিরতে হবে! মিরা টা কোথায় কে জানে?
অস্থির চিত্তে পাইচারি করছে মনিরা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে মুখে দুশ্চিন্তা আর অগাধ ভয়। যতবার আফরা’র নম্বরে ফোন দিচ্ছে ততবারই মেয়েলি কন্ঠের একই বুলি তাকে শুনতে হচ্ছে। ‘এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, একটু পর আবার চেষ্টা করুন!’ মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে? কোনো বিপদ হলো না তো? মনিরা’র ভয় যেন একটু একটু করে বাড়তে থাকে। গলা শুকিয়ে আসে, বাম পাশটাই কেমন ব্যাথা করে। অল্প সময়েই মেয়েটা পরিবারের একজন হয়ে গেছে। তার জন্য যদি বিপদে পড়ে সে কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে? বিছানায় বসে মিহি মায়ের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। হুটহাট কেঁপে উঠায় ভয় পেয়ে যায়। মনিরা’র হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ছোট হাত দিয়ে কপালের ঘাম গুলো মুছে দিতে যেতেই মনিরা বাঁধা দেয়। গন্ধ! তবে মিহি শুনে না, মায়ের শরীরের ঘামে গন্ধ করবে বলে সে ধরবে না? তা হয়? যত্ন নিয়ে মুছিয়ে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। বিজ্ঞ দের মতো বলে উঠে,
~ টেনশন করো না আম্মু। ম্যামের কিছুই হবে না। ম্যাম অনেক স্ট্রং।
চিন্তার মাঝেও হেসে উঠে মনিরা। মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে,
~ তাই যেন হয় রে মা। তবে আমি এখন বাইরে যাবো, তুমি দাদুর কাছে থাকতে পারবে না?
মিহি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে দাদুর কাছে চলে যায়। মনিরা পড়নের শাড়িটা পাল্টে রঙীন একটি থ্রিপিস পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। তার জীবনের সকল রঙ ফিরে এসেছে, সে কেন রঙহীন পোশাক পড়বে? সমাজের ভয়ে? সমাজের ভয় সে করি নাকি? বাড়িতে এখনো কয়েকজন মানুষ উপস্থিত। সবার সামনে যেতে মনিরার একটু অস্বস্তিই হয়। কিছু করার নেই, সেকেন্ড কোনো রাস্তা খোলা নেই। ইতস্তত ভাব নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই বয়স্ক ক’জন যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠেন। একেতো এমন সময়ে বাইরে যাচ্ছে, তারউপর বিধবা একজন মেয়ে হয়ে রঙীন জামা পড়েছে। একজন তো বলেই বসেন,
~ হাই আল্লাহ! এটা কি পড়ছো বউমা? তোমার জামাই না মরছে? তারপরেও তুমি এমন রঙের জামা পড়ছো কেন? আমাদের দেখ নাই? আমরা তো ওমন পড়তাম না।
মনিরা এই ভয় টাই পাচ্ছিল। জবাব দিলেও বেয়াদবি, না দিলেই বেয়াদবি! তাকে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হতে হবে। কিছুটা বিরস মুখে বললো,
~ কি করবো চাচি? আপনার ভাতিজা’ই তো এমন চেয়েছে। আমাকে ভালো দেখতে চেয়েছে, সব সময় আনন্দে রাখতে চেয়েছে। কতবার যে বলেছে, ‘মনি আমার কিছু হয়ে গেল আর সবার মতো সাদা, ধূসর এমন রঙহীন পোশাক পড়বে না। আমার বউ কে আমি সবসময় রঙীন ভাবে দেখতে চাই!’
জীবিত থাকতে তো সব কথাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি চাচি, মৃত বলে তার কথা মানবো না? আমার যে পাপ হবে।
মনে মনে হাসে মনিরা। জীবনের মোড়ে মোড়ে ধাক্কা খেয়ে আজ সে দারুণ অভিনেত্রী হয়ে গেছে। অনায়েসেই কত মিথ্যা বলে দিল। বয়স্কদের মন নরম হয়। মেয়েটার প্রতি অগাধ সহানুভূতি টের পান তারা। আরেকজন মনিরার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সান্ত্বনার সুরে বললেন,
~ মন খারাপ করিস না মা। তোর মুখে হাসি দেখলে ছেলেটার আত্তা শান্তি পাইবো। তোর মতো বউ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কোথায় যাচ্ছিস যা, মন ভালো হবে।
মনিরা বিষণ্ণ হেসে হাঁটা ধরে। সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার তার মতো বউ পাওয়া। নাহলে এত এত অন্যায়ের পরেও এতবছর সংসার করেছে? গেইট পেরিয়ে বাইরে বেরোতেই কনস্টেবল আজাদ আলীর মুখোমুখি হয় সে। আজাদ আলী বাঁকা চোখে মনিরা কে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
~ কোথায় যাচ্ছেন মেডাম?
~ শহর ছাড়ছি না। কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাচ্ছি, আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসবো। আপনারা অপরাধীদের নিয়ে ভাবুন, কাজে দিবে! আপনাদের যে অফিসার; কাজের বালাই নেই। দেখেন কেস সলভড করতে পারেন কিনা!
কথাটা বলেই মনিরা রিকশা ডেকে উঠে বসে। আজাদ আলী মুখ হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রিকশা’র দিকে। কি মেয়ে রে বাবাহ! একটা প্রশ্নের পেছনে কতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেল! বাকী দুই কনস্টেবল আজাদ আলীর এক্সপ্রেশন দেখে হেসে উঠে। চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই কেমন চুপ হয়ে যায়! যেন লোকটাকে প্রচুর ভয় পায় তারা!
মিসেস নুরি ঘুম থেকে উঠেছে সবে। আজ একটু দেরীতেই উঠেছে। বেলা এখন ১১ টার কাঁটায়। অনল মাহমুদ বাড়ি ফেরেনি। চাপা শ্বাস ফেলে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যান তিন। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হোন। খিদে পেয়েছে। তবে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার আগেই থেমে যান তিনি। থরথর করে কেঁপে উঠেন। নিঃশ্বাসের গতি কেমন ঘন হয়ে আসে। হাঁপানির রোগীর মতো হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে নামেন তিনি। চেঁচিয়ে বলে উঠেন,
~ আসমানী….
হাতে থাকা ভাতের লোকমা পড়ে যায় নিচে। আতংক ঘিরে ধরে আসমানীকে। চমকিত দৃষ্টিতে মিসেস নুরির দিকে তাকাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে তার। সকাল সকাল সাহস করে অনিক কে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসেছিল। নিজের হাতে রান্না করেছে। যত্ন নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো তাকে। কয়েক লোকমা মাত্র খেয়েছে ছেলেটা। এর মধ্যেই মিসেস নুরির আগমনে দুজনই আঁতকে উঠে। অনিক ভয় পেয়ে আসমানী’র পেছনে লুকিয়ে পড়তেই মিসেস নুরির রাগ যেন বেড়ে যায়। তেড়ে এসে বলতে থাকেন,
~ তোর সাহস কি করে হলো এমন একটা কাজ করার? তোকে যে উপরে যেতে বারণ করেছি। এত বড় স্পর্ধা! আজকে তোকে মেরেই ফেলবো!
ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেন আসমানীর বাম গালে। একবার নয় পরপর চারটে থাপ্পড় মেরে ক্ষান্ত হোন না মিসেস নুরি। আসমানী ভয়, ব্যাথায় শব্দ করে কেঁদে উঠে। ডাইনিং টেবিলের এক কোণায় গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে অনিক। দেখে মনে হচ্ছে সেও কেঁদে দিবে। মিসেস নুরি আসমানী চুল হাত মুঠো করে ধরতেই আসমানী শক্ত হয়ে যায়। নিজেকে প্রটেক্ট করতে মিসেস নুরি’র কাঁধ ধরে ধাক্কা দিতেই পড়ে যান তিনি। রাগ যেন তরতর করে বেড়ে যায়। টেবিলের উপর থাকা কাঁচের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে ছুড়ে মারে আসমানীর দিকে। ডান পাশের কপালে লেগে ভেঙে যায় গ্লাস। নিচে বসে পড়ে আসমানী। মিসেস নুরি যেন একটা ঘোরে আছেন। ঠিক ভুল বিচার করতে ভুলে গেছেন তিনি। গ্লাসের এক টুকরো হাতে তুলে নিয়ে আসমানীর গলায় ধরে বলে উঠেন,
~ তোর কোনো যোগ্যতা আছে মিসেস নুরির সাথে কথা বলার? আবার ধাক্কা মারিস! বুকের পাটা কত বড় আজ দেখবো? সামান্য কাজের মেয়ে হয়ে আমাকে স্পর্শ করার সাহস হয় কি করে?
হয়তো কাঁচের টুকরো আসমানী’র গলা ভেদ করে ভেতরে ঢুকেই যেত যদি না নাদিয়া এসে হাত টা না ধরতো। ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল। বক্সে গান বাজিয়ে এক্সারসাইজ করছিল সে। আসমানীকে জুশ দিতে বলেছিল, অনেক টা সময় চলে যেতেও যখন দেখলো আসমানী আসছে না তখন নিজেই ডাকতে আসছিল। চিৎকার শুনেই দৌড়ে আসে সে। এমন কিছু দেখবে হয়তো আশা করেনি। এক টানে মিসেস নুরি কে অসমানীর থেকে আলাদা করে চেঁচিয়ে বললো,
~ কি করতে যাচ্ছিলে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
মিসেস নুরি রাগে ফুঁসতে থাকেন। কথা বলতে গেলেও যেন ভালো কথা বের হতে চায় না। কিছুক্ষণ যেতেই রাগে চিৎকার করে বললেন,
~ কি হয়েছে দেখতে পারছো না? ওর সাহস কি করে হলো অনিক কে নিচে নামানোর? ও জানলই কি করে? কে ও? এসব তোমার প্লেন নয় তো? অনল জানতে পারলে কি হবে জানো না তুমি?
নাদিয়া চট করে পেছনে তাকায়। গুটিয়ে থাকা অনিক কে দেখে অবাক হয়। একপলক আসমানী কে দেখে এগিয়ে যায় ভাইয়ের দিকে। ভয়ে সিটিয়ে যায় অনিক। হাত ধরতেই বার বার ছাড়িয়ে নেয়। অস্পষ্ট সুরে নাদিয়া বলে উঠে,
~ ছোট ভাইয়া!
শান্ত হয়ে যায় অনিক। অবাক চোখে তাকায় নাদিয়ার ছলছল চোখের দিকে। নাদিয়া কিছু বলে না, ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে কান্নাটা লুকিয়ে নেয়। তার কান্না করা মানায় না। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আসমানীর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় কপাল ফুলে গেছে অনেকটুকু। আসমানী এক পলক নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,
~ আমরা মাইনষের বাড়ি কাম কইরা দু মুঠা ভাত খাই! আপনেরা তো মাইষের রক্ত শুইষা খান। আমরা কি আর আপনাগর মতন হইতে পারমু?
দৌড়ে বাইরে চলে যায় সে। নাদিয়া কিছুই বলে না। নিজের ঘরে চলে যায়। দোষ টা যে আসমানী’র। সে কেন এমন সাহস করলো? কিছু কিছু বিষয়ে আবেগ, ভালোবাসা, মায়া দেখানো পাপ!
রিকশা থামে নিরিবিলি জায়গায়। মনিরা চারপাশ নজর বুলিয়ে দেখে। অদূরের ওই বাড়িটা দেখে হাসি ফুটে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে সে। এত নিরিবিলি জায়গায় মেয়েটা থাকে কি করে মনিরা তাই ভাবছে। তাও আবার একা। ভয় করে না? ভাবতে ভাবতেই মনিরা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গেইট এখনো খোলা। এগিয়ে যায়। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে এক মেয়ে দরজায় বসে আছে। মনিরা’র আশেপাশে আবার তাকায়। ভুল বাড়িতে চলে আসলো নাকি। নিশ্চিত হতে বলে উঠে,
~ এটা আফরা’র বাড়ি না?
কিছুটা চমকায় মিরা। মুখ তুলে মনিরা কে দেখে অবাক হয়। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে,
~ জি, আপনি এখানে?
~ তুমি আমাকে চিনো?
মনিরা’র প্রশ্নে মিরা মুচকি হাসে। চিনবে না? বললো,
~ অবশ্যই! তা বললেন না কেন এসেছেন?
~ আফরা কে ডাকো, ওর ফোন বন্ধ কেন? ওদিকে যে বিপদ। অফিসার নোমান আমার শশুড়ের খু* নের জন্য আফরা কে সন্দেহ করছে। দুপুরের আগে থানায় না গেলে হয়তো ধরে নিয়ে যাবে।
চিন্তিত সুরের কথা শুনে মিরার চমকানোর কথা থাকলেও সেরকম ভাব প্রকাশ পায় না। দরজা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মনিরা কে বসার জন্য একটা টুল এগিয়ে দেয়। ভাবালেশ কন্ঠে বলে,
~ আফরা একটু বাইরে গেছে, আসলে পাঠিয়ে দিবো। ওর ফোনে চার্জ নেই তাই বন্ধ!
মনিরা’র কেমন যেন বিশ্বাস হয় না! লুকানো একটা ভাব। সন্দেহী কন্ঠে প্রশ্ন করে,
~ তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো? আফরা ঠিক আছে?
~ একদম ঠিক আছে! আপনি বাড়ি যান, ও আসলেই পাঠিয়ে দিবো। আমি একটু বাইরে যাবো তো, টিউশন আছে তাই বলছিলাম..
মনিরা চট করে বুঝে নেয় এই মেয়ে তাকে এড়িয়ে চলতে চায়ছে। তাই আর প্রশ্ন না করে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। ঠিক আছে যেহেতু, এত প্রশ্ন করে কি হবে? মনিরা যেতেই মিরা কেমন নিশ্চুপ হয়ে যায়। কঠিন নিরব শান্ত চোখটাও যেন চিৎকার করে উঠে। গড়িয়ে পড়ে জল অবলিলায়। তাকে রেখেই আদিল আফরা কে নিয়ে চলে গিয়েছিল। চিৎকার করে ডেকে, গাড়ির পেছনে দৌড়িয়েও লাভ হয় নি। নিষ্ঠুর মানুষ টার একটুর জন্যও মন গলেনি। শুধু মাত্র একটা থাপ্পড়ের শাস্তি তাকে ১১-১২ ঘন্টা ধরে পেতে হচ্ছে। তবে সে কি এত সহজে ছেড়ে দিবে? যে তাকে আঘাত করে তার কষ্টের কারণ সে না হওয়া পর্যন্ত শান্তিতে সে ঘুমাতে পারে না! কঠোর কন্ঠে বিড়বিড় করে বলে উঠে,
~ আপনাকে পস্তাতে হবে! খুব করে পস্তাতে হবে। আমার চোখ দিয়ে যত ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে; আপনার বুক থেকে আমি তত ফোঁটা রক্তের আত্মচিৎকারের দগ্ধতা লাল লাল সেই গভীর চোখে তাকিয়ে উপভোগ করবো! তখন আপনি বুঝবেন সবাই কষ্ট ভোগ করার জন্য নয়, কেউ কেউ কষ্ট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জন্ম নেয়। আপনার বুক ঝাঁঝরা করে আমি সেই বুকেরই মর্মান্তিক স্পন্দন কান পেতে শ্রবণ করবো। আপনি পুড়বেন, দগ্ধ হবেন তবে আমাকে না বলা’র শক্তিটুকু আপনার থাকবে না। শপথ করছি!
কথাটা শেষ করেই মিরা শক্ত হাতে চোখ মুছে। ঘর থেকে ফোন নিয়ে এসে কাউকে ফোন দেয়। সাথে সাথেই রিসিভ হয়। কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
~ আমি বলেছিলাম, আমার উপর বিষয়টা ছেড়ে দাও! আগ বাড়িয়ে মাতাব্বরি করছো কেন? আমার আফরা’র যদি কিছু হয় আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কথা বলবো না!
অপর পাশের মানুষ টা বিষণ্ণ হাসে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ১৯
~ কেউ কি নিজের প্রাণভোমরা’র এক চিলতে পরিমাণ আঘাত সহ্য করে? আমি করবো কি করে? আমি তো ভালোবাসি নি, তবুও কেন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়! প্রাণভোমরা’র যে দেহতে শান্তি মেলে না, সে তো দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ায়! ছটফট করি, জ্বলি, পুড়ি, নিঃশেষ হয়ে যাই ! প্রাণভোমরা বড্ড চঞ্চল!