হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৪১+৪২+৪৩

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৪১+৪২+৪৩
Tahrim Muntahana

ছোট খাটো সাজানো গোছানো এক রেস্তোরাঁ! চারদিক বিভিন্ন রঙিন আলো আঁধার কে হারিয়ে মাথা উঁচু করে রেস্তোরাঁ টা দাঁড়িয়ে আছে। কানায় কানায় পূর্ণ, গিজগিজ করছে মানুষ। তবুও নেই তেমন হ‌ইচ‌ই, অগোছালো ভাব। প্রত্যেক টেবিলের লোকজন এতটাই সুশ্রী ভাবে কথা বলছে পাশের টেবিল থেকে শোনা যাবে না। মাঝে মাঝে উচ্চ হাসির শব্দ‌ও আসছে। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে এই হাসির শব্দটা পরিবেশ কে আরো জাঁকজমকপূর্ণ করেছে। হাসির শব্দ টা আসা মাত্র‌ই সবাই কেমন মুচকি হেসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হাসির মালিক কে একটু দেখার আশায়। ব্যাপার টা বেশ উপভোগ করছে মনিরা। বাবা মেয়ে পাশাপাশি বসে একমনে ফিসফিস করে কথা বলছে। কি বলছে তারায় জানে। এই ফাঁকে মনিরা নিজের মতো বিভিন্ন মানুষের আচার আচরণ লক্ষ্য করছে‌। প্রেম নামক শব্দটির নতুন আগমনে ভড়কায় নি সে বরং বেশ উপভোগ করছে। অন্তরের দোলা, নতুন মিষ্টি হাওয়া, ঠোঁটের মুচকি হাসি, হুট করেই হারানোর ভয়ে আঁধারে ঢাকা মুখ! সময় টা খারাপ যাচ্ছে না। দশ বছরের তিক্ততা কে ফিকে করতে পেরেছে সে। নতুন জাগরণে নতুন মনিরা’র জন্ম হয়েছে! মুচকি হেসে বললো,

~ আজ লং ড্রাইভে গেলে কেমন হয় মিহি?
নেচে উঠলো মিহি। কথাটি যে বেশ পছন্দ হয়েছে তার। তবে আহিশের ভালো লাগলো না। সময় টা তার খারাপ যাচ্ছে। ছোট্ট মেয়েটার জন্য মনিরা’র সঙ্গটা কে সে সহ্য করে নিলেও তা কতদিন করবে জানে না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এই মেয়েকে কি করবে কে জানে! বিরক্ত দৃষ্টিতে মনিরা’র দিক তাকাতেই মনিরা কিছুটা বিব্রত হলো। তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~ তুমি আব্বুর সাথে লং ড্রাইভে যাবে মিহি! আমি এখান থেকে বাড়ি ফিরবো, দাদু একা আছে তো!
আহিশের বিরক্তটা এক ছুটে পালালো। মনিরার আনন্দে উল্লসিত মুখটা কালো হয়ে এলো। ভেবেছিল আহিশ প্রতিবাদ করবে, বরাবরের মতো বলবে, “এই মেয়ে তোমাকে আমি বাড়ি ফিরতে বলেছি? একসাথেই ফিরবো!” কিন্তু সেরকম আহিশ‌ বললো না। বরং মনিরা কে সাপোর্ট করে বললো,
~ তুমি বাড়ি ফিরে যাও, আমি ক্যাব বুক করে দিচ্ছি। মা অনেকক্ষণ একা আছেন!

বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে এলো রেস্তোরাঁ থেকে‌। ক্যাব আসতে যতক্ষণ সময় লাগলো মিহি মায়ের সাথেই ছিলো। মনিরা উঠে বসতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আহিশ। এখন বেশ ভালো লাগছে। মানুষের বাঁকা, উৎফুল্ল দৃষ্টি ভালো লাগছিল না। হয়তো সবাই ভেবেছে স্বামী স্ত্রী তারা। এটা তো সত্যি নয়, কোনো ভাবেই সত্যি করা সম্ভব নয়! তার জীবনে প্রেমপিয়াসী ব্যতিত কারোর স্থান নেই। কারোর নয়! ধোঁয়া উড়িয়ে ক্যাব যখন ছুটতে শুরু করলো দুটো লোক কে ইশারা দিয়ে নিজের গাড়িতে বসলো আহিশ। লোক দুটো ইশারা পেয়েই ক্যাব কে অনুসরণ করে বাইক নিয়ে ছুটতে লাগলো। কর্তার হুকুম মান্য করায় তাদের কাজ!
গাড়িতে বসে মিহি একপলক জানালা দিয়ে মাথা বের করে ক্যাবের ছুটে যাওয়া দেখলো। মা কে ছাড়া ভালো লাগে না তার। গোমড়া মুখে বললো,

~ আম্মু থাকলে মজা হতো আব্বু!
~ তোমার দাদু যে একা রয়েছেন আম্মা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কে দেখবে? মন খারাপ করে না আম্মাজান, আরেকদিন আমরা চার জন‌ই বের হবো। এখন একটু হাসো।
কথাটা শেষ করেই আহিশ মিহির গাল টেনে দিলো। মিহি আর মন খারাপ ধরে রাখতেই পারলো না। হেসে জড়িয়ে ধরলো আব্বু কে। আহিশ ও মেয়ে কে জড়িয়ে নিয়ে সীমাবদ্ধ জার্নির শুরু টা করেই ফেললো। অজানা গন্তব্যে ছুটে চলার মাঝে বাবা-মেয়ের বন্ধন আরো দৃঢ় হোক!

বড় রাস্তা থেকে বাঁক নিয়ে ছোট রাস্তা ধরতেই অন্ধকার যেন ক্যাবটিকে গ্রাস করে নিলো। ক্যাবের কৃত্রিম আলোয় যতটুকু দেখা যায়। জানালায় দুহাত ভাঁজ করে মাথা রেখে আকাশ দেখছে মনিরা। বুকের ভেতর কি এক জ্বালা হচ্ছে ‌। এতদিন পরেও প্রিয় মানুষটির মনে জায়গা করতে না পারার ব্যর্থতা কোথায় লুকাবে সে? এত কাছে থেকেও প্রিয় মানুষের মনের খবর বুঝতে না পারার অপারগতা কিভাবে পূরণ করবে? ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছে সে। বারবার চোখের পাতায় নাদিয়ার প্রেমময় দৃষ্টি ঘুরছে। তবে কি আহিশ নাদিয়া কে ভালোবাসে? তার আর সুখ পাওয়া হলো না? হুট করেই মন পরিবর্তনের সাথে সাথে মুখশ্রীতে আমূল পরিবর্তন ঘটলো।

একটু আগের ব্যাথার ছাপ নেই, একরাশ রাগ হিংস্রতা ঘিরে ধরেছে তাকে। প্রতিপক্ষ নাদিয়াকে খু*নের নেশা চেপেছে। আকস্মিক ক্যাব থেমে যেতেই ঘোর থেকে বের হয় মনিরা। চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে। কি সব ভাবছিলো। ড্রাইভার কে কিছু বলবে তার আগেই একদল লোক হ‌ই হ‌ই করে ছুটে এসে গাড়ির দরজা খুলে ফেলে। টেনে হিঁচড়ে বের করে মনিরা কে। এক নিমিষেই কি হয়ে গেল বুঝতে বুঝতেই লোক গুলো তাকে তাদের গাড়িতে তুলে ফেলেছে। বাইক টি কাছে আসতে আসতেই তীব্র বেগে ছুটে গেল গাড়িটি। ড্রাইভার কোনো দিক না তাকিয়েই ক্যাব নিয়ে চলে গেল‌। ঝামেলায় জড়াতে কেই বা চায়। লোক দুটো ভয় নিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। এই মেয়ের কিছু হলে জান তাদের‌ও যাবে। অন্ধকারে এক ছিটে আলো কে অনুসরণ করে তারাও ছুটলো পিছু পিছু। হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গাড়িটি থামলো নির্জন এক গোডাউনের সামনে। আবারো হ‌ই হ‌ই করে লোকগুলো মনিরা কে নিয়ে নামলো। মুখটা কালো কাপড়ে ঢাকা, চেনার উপায় নেই। মনিরা কে ভেতরে ঢুকিয়েই বাইরে থেকে তালা দিয়ে লোকগুলো চলে গেল। বাইকে বসা লোক দুটোর মাথায় ঢুকলো না, এতটা অবাক হয়েছে তারা বস কে খবর টা জানাতে ভুলে গেছে‌। এগিয়ে যাবে কি যাবে দোটানায় পড়ে, যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলো দুজন‌ই। দুজন লোক এতজনের সাথে পারবে না। আহিশ কে ফোন দিলো, ধরছে না। কয়েকবার দেওয়ার পর ধরতেই বলে উঠলো,
~ বস, জলদি আসুন। ভাবীকে কারা যেন গোডাউনের এইদিক তুলে নিয়ে আসছে। লোক ছাড়া আসবেন না বস, মারা পড়বো সবগুলো।

আহিশ চট করে মিহি’র দিকে তাকালো। মেয়েটা ঘুরতে এসেছে ঠিক, তবে ঘুমের কাছে হেরে গিয়েছে। বাড়ির দিক‌ই ফিরছিলো সে। বিচলিত হলেও প্রকাশ করলো না। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~ আপু বল! সি ইজ নট মাই ওয়াইফ ইডিয়েট!
লোকটা খুকখুক করে কেশে উঠলো। চিন্তায় কি বলতে কি বলে ফেলেছে, এই লোক এমন সময় ও এসব ধরছে। আবার বকাও দিচ্ছে। ফোন কেটে দিয়ে ভাবতে বসলো সে, ভাইয়ের ব‌উ ভাবী হলে, তাদের‌ও ভাবী হবে! ভুল টা কি বলেছে?

মাঝারি সাইজের ঘরটাই দুটো চেয়ার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না মনিরা’র। মাথার উপরে কম দামী লাল বাতি জ্বলছে। অনেকদিন হয়তো পরিষ্কার করা হয়নি, ময়লা জমে আলোটাও কেমন ঘোলাটে হয়ে আবছা অন্ধকার মিশিয়ে দিয়েছে। অদূরের ওই চেয়ারে একজন বসে আছে। পায়ের উপর পা তুলে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। ভয়ে গাঁ ছমছম করে উঠলো মনিরা’র। এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতেই কৌতুক মিশ্রিত কন্ঠ ভেসে আসলো,
~ ভয় পেয়েছেন মিসেস আতিকুর?
মেয়েলি কণ্ঠস্বর! মনিরা’র ভয় টা কমে এলো। কন্ঠটাও কেমন পরিচিত। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যেতেই নাদিয়া কে দেখে অবাক হলো সে। বিস্মিত কন্ঠে বললো,

~ আপনি? আমাকে এখানে আপনার কথায় এনেছে তারা? কিন্তু কেন?
জবাব এলো না। পরপর দুবার সিগারেটে টান দিয়ে নাক মুখে ধোঁয়া বের করে মনিরা’র দিকে ছুড়ে মারলো। কেশে উঠলো মনিরা‌। শব্দ করে হাসলো নাদিয়া। তার বেশ আমোদ লাগছে। মনিরা’র মনে হচ্ছে, এই সিগারেট খাওয়া পুরুষ কেও হার মানিয়ে দিবে! কাশির প্রভাবে শরীর দুলিয়ে বসে পড়লো মনিরা। কিছুটা রাগ নিয়ে বললো,
~ এটা কেমন অসভ্যতা নাদিয়া?
~ অসভ্য , অভদ্র, নষ্ট মেয়ে মানুষের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করা বোকামো নয় মিসেস আতিকুর?
মিসেস আতিকুর সম্বোধন নিতে পারলো না মনিরা। রক্ত লাল চোখ নিয়ে চেঁচিয়ে বললো,

~ মিসেস মনিরা বলুন, নট আতিকুর!
~ ওকে, নো প্রব্লেম। তো মিসেস মনিরা,‌ স্বামী মারা যাওয়ার কয়েকদিন না যেতেই দেবরের সাথে সেটিং করার চিন্তাভাবনা করে ফেলেছেন। লা জবাব!
~ কি বলতে চাইছেন আপনি? ঠিক করে কথা বলুন।
~ আপনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার মনে এরকম কিছু নেই?
নাদিয়া উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে র‌ইলো মনিরা’র দিকে‌। একটা শব্দ, ‘না’ শোনার আশায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করলো। তবে নাদিয়া কে নিরাশ করে মনিরা মুচকি হাসলো। শান্ত স্বরে বললো,
~ ভুল কিছু দেখছি না তো! ভালোবাসা তো পাপ নয়, না সুখে থাকতে চাওয়া অন্যায়। আমি দুংখের উচাটনে ভাসতে ভাসতে এতদূর এসেছি। একটু সুখের আশায় আরেক জনের হাত আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি। সে অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে!

উগ্র নাদিয়া হঠাৎ করেই নিভে গেল। চোখেতে জলের ফোয়ারা। মনিরা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার শরীর বসে গেছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে, মুখ ফ্যাকাসে, গলার হাড় গুলো কেমন উঁচু দেখাচ্ছে। খানিক খারাপ লাগলেও পাত্তা দিলো না মনিরা। অন্যদের কথা ভাবতে ভাবতেই দশটা বছর কাটিয়ে দিলো। এখন না হয় সে নিজের কথা ভাবলো। নাদিয়া চেয়ার ছেড়ে নিচে বসে পড়লো। একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে পা আঁকড়ে ধরলো মনিরার। চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো মনিরা, পড়ে যেতে নিয়েও চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নিলো। নাদিয়া বার বার এক‌ই শব্দ উচ্চারণ করে বলতে লাগলো,

~ আমি আহিশ কে ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশী। আমি আহিশ কে সত্যিই ভালোবাসি, আমি ভালোবাসি আহিশ কে। সরে যান না আমার আহিশের জীবন থেকে। আমি কিছুদিন ধরে ভালোবাসেন, অথচ আমি সেই তিনটা বছর ধরে ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি, একটু একটু করে আহিশ কে পাওয়ার আশা বুকেতে জমিয়েছি, ধুঁকে ধুঁকে মরেও অপেক্ষা করেছি। বাবা-মা, ভাইয়ার বিরুদ্ধে গিয়েছি, নিজের রক্তের সাথে বেইমানি করেছি,‌বিবেকের সাথে প্রতারণা করেছি, এক আকাশ সমান আবেগ নিয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছি। আমাকে এমন শাস্তি দিবেন না। আমি জানি আন্টি আপনাকে পছন্দ করে আহিশের জন্য। হয়তো আহিশ মায়ের কথায় মেনেও নিবে। কিন্তু আমি? আমার কি হবে? আমি কিভাবে বাঁচবো? আমি আহিশ কে ছাড়া মরে যাবো, মরে যাবো আমি। আপনার তো বাঁচার কেউ আছে, আপনার মেয়ে আছে! কিন্তু আমার ? কেউ নেই! বাবা-মা জন্ম দিয়েই খালাস, ভাইয়ার জীবনে কোনো স্থান নেই, এই একটা মাত্র আশা নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আহিশ কে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি। আমাকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন, আপনি বিনিময়ে যা চাইবেন তাই দিবো। কত টাকা চাই আপনার? আমার নামের সম্পত্তি গুলোও লিখে দিবো। মেয়ে কে নিয়ে ভালোভাবে, সুখে থাকবেন। শুধু আমার আহিশ কে দিন, সরে যান পথ থেকে! আহিশ কে ছাড়া আমি বাঁচবো না। মরে যাবো!

উন্মাদের মতো আচরণ মনিরা’র মনে আঁচড় কাটতে পেরেছে। মেয়েটার কষ্ট তাকে ছুঁতে পেরেছে। তবে কোথাও যেন একটা নিষেধাজ্ঞা এসে মস্তিষ্ক কে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। আহিশ কে আপন করার মনোবাসনা মুহুর্তেই বিবেক কে হারিয়ে দিচ্ছে। নাদিয়ার কথা গুলো কে হাজার মাইল দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। দিশেহারা মনিরা আবার বসে পড়লো চেয়ারে। হঠাৎ করে মনে পড়লো নাদিয়া তাকে টাকার কথা বলেছে। তার ভালোবাসা কে টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছে। আহিশের প্রেমে অবচেতন মন যেন একটা রাস্তা পেয়ে গেল নাদিয়ার আহাজারি কে অবহেলায় দূরে ছুড়ে ফেলতে। কাট কাট গলায় বললো,

~ ভালোবাসা কে নিলামে তুলতে চাইছো? আমার ভালোবাসা এত‌ই ঠুমকো? টাকার গরম দেখাচ্ছো আমাকে? আমার তো মনে হচ্ছে তুমি আহিশ কে ভালোই বাসো নি। শুধু মাত্র জেদের বশে তুমি এমন পাগলামী করছো!
নাদিয়া কিছুক্ষণ মনিরা’র দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। হুট করেই পা ছেড়ে চেয়ারে বসে ফ্লোর থেকে মদের বোতল তুলে নিমিষেই ঢেলে দিলো গলায়। অর্ধেকটা পেটে চালান করে বললো,
~ আমার ভালোবাসা কে তোমার কাছে জেদ মনে হচ্ছে? আচ্ছা জেদ! তো? তুমি কি ভেবেছো তোমাকে অনুরোধ করেছি বলে আমি দুর্বল? যে মেয়ে তোমাকে তুলে আনতে পারে সে কি করতে পারে ধরতে পারো? আমার আহিশের জীবন থেকে প্রতিপক্ষ কে সরাতে আমার হাত কাঁপবে না। নাও ডিসিশন ইজ ইউর!
কথাটা বলা শেষ করেই মদের বোতলের পাশে পড়ে থাকা চাপা* তি হাতে তুলে নিলো নাদিয়া। মনিরা’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রিয়েকশন দেখার আশায় বসে র‌ইলো। তবে মনিরা কে ভয় না পেতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

~ ভয় করছে না তোমার? খেলনা নয়, একটা টানেই মাথাটা আ* লাদা করতে পারি! দেখবে?
এবার শব্দ করে হেসে উঠলো মনিরা। হাসির ছলকে শরীর সহ চেয়ার মৃদু নড়ছে। হাসি থামাতে বেশ বেগ পেতে হলো মনিরা কে। পায়ের উপর পা তুলে রসিকতা করে বলে উঠলো,
~ আচ্ছা দেখাও!
দাঁড়িয়ে পড়লো নাদিয়া। চোখে মুখে ক্রোধ। মেয়েটা তার সাথে মজা নিচ্ছে? নিঃসংকোচে চাপা* তি মনিরা’র হাতের উপর ধরতেই এক ছুটে নাদিয়ার হাত থেকে কেড়ে নিলো মনিরা। চমকে দু পা পিছিয়ে গেল নাদিয়া। চোখে মুখে ভয়, মনিরা ঘর কাঁপিয়ে হেসে বললো,
~ আসো একটু গল্প করি! আহা, আসো! কিছুই করবো না। বসো, বসো!
নাদিয়া সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে মনিরা হাত ধরে জোর করে বসিয়ে দিলো। চাপা* তির মাথায় আঙুল বুলিয়ে বললো,

~ এই চাপা* তি ধরার প্রথম দিনের এক্সপেরিয়েন্সের কথা তোমার সাথে শেয়ার করি! রাতটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। জায়গা টা এক নিষিদ্ধ পল্লীর। ওই গলিতে মেয়ে মানুষ মানেই ফুলটুসি, আর পুরুষ মানুষ মানেই খদ্দের। সন্ধ্যা হলেই মেয়ে মানুষের হাসি কলকল করে গলিটাই। লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে খদ্দের ধরতে। একদিন ইচ্ছে করেই লাইনে দাঁড়ালাম আমি। এত মেয়ে মানুষ ছিলো , আমি যে বাইরের কেউ ধরতেই পারলো না। যার খুঁজে গিয়েছিলাম সে এলো, এমন ভাবে প্রত্যেক টা মেয়েকে দেখছিলো, এক মুহুর্তেই পঞ্চাশ ষাট টা মেয়েকে চোখ দিয়েই ধর্ষ* ণ করে দিলো! তো, ওই লোক আমার সামনে এসে হুট করেই দাঁড়িয়ে গেল…
~ আহিশ মুটেও এমন না, তুমি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছো। মেয়েলি কোনো দাগ আমার আহিশের জীবনে নেই। খবরদার নিজের স্বামীর মতো ভেবো না সবাইকে!

মাঝ পথে আটকে দেওয়ায় বিরক্ত হলো মনিরা। ‘চ’ শব্দ করে তাকালো নাদিয়ার দিকে। এই মেয়ে দেখছি আহিশ ছাড়া কিছুই বুঝে না। সে বলছে কি, আর এ বুঝেছে কি! আবার বললো,
~ কথা শেষ করতে দাও। তোমার আহিশ ওমন হলে মনিরা ভালোবাসাতো না। তো যাই হোক, লোকটা ছিলো মাতাল। আমাকে দেখে পছন্দ হলো। বিড়বিড় করে কিসব বলছিলো। আমি ভেতরে না ঢুকে লোকটাকে নিয়ে বাইরে চলে এলাম। হঠাৎ করে হয়ে যাওয়ায় কেউ ধরতে পারেনি। নির্জন জায়গা,‌ আগে থেকেই একটা পুরোনো বাড়ি দেখে রেখেছিলাম। নিয়ে গেলাম সেখানে! লোকটা হাত শরীর ছোঁয়ার বাহানা করছিলো বার বার, বেঁ* ধে দিলাম। যাহ, এখন শরীর ছুয়ে দেখা! একটা চেয়ারে শক্ত করে বাঁধ* লাম। মাতালের হুঁশ নাই। পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরালাম! নিজেকে অবশ্য মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলাম, চিনতে পারেনি। ছুটার জন্য অতিরিক্ত লাফালাফি করছিলো। তখন‌ই এমন একটা চাপা* তি হাতে তুলে নিলাম! বাম হাতটা বেশ দুষ্টু। আঁচলে হাত দিতে দ্বিধা করতো না। এক কু* প দিলাম শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল! ইশ কি যে আনন্দ হচ্ছিলো!

ভয়ে ঢোক গিললো নাদিয়া। মনিরা কে এখন তার সাইকো মনে হচ্ছে। কি অবলিলায় নিজের দোষ স্বীকার করছে। আবার বললো,
~ আচ্ছা তার পর শুনো, বাম হাত কা* টায় হাতের বাঁধন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। আমার অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে চাপা* তি দিয়েই পায়ের বাঁধন খুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আমাকে। ছুটে বেরিয়ে গেল। আমিও পিছু নিলাম। রক্ত না খে* য়ে শান্তি হবে না। না শেষমেশ ব্যর্থ হলাম! বড় রাস্তায় উঠে যাওয়ায় ধরতে পারলাম না। কি, চিনতে পেরেছো না? বলো তো লোকটি কে? আমি জানি তুমি চিনতে পেরেছো, বলো বলো!
এমন ভাবে হাসলো, নাদিয়া ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,
~ আ রা ফ… ?

~ আ. আ. তুমি নিশ্চয়ই অঙ্কে ভালো ছিলে। সূত্র বলতেই কেমন উত্তর টা বলে দিলে। আই লাইক ইউর ব্রেন!
আঙুল নেড়ে কথা বলেই মিনিট খানিক নিঃশব্দে হাসলো মনিরা। উঠে দাঁড়ালো। কোমর টা সামান্য বেঁকিয়ে ব্যায়ামের মতো করে বুঝালো বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গেছে। চাপা* তি এখনো হাতে! হাঁটতে হাঁটতে বললো,
~ দ্বিতীয় এক্সপেরিয়েন্সের কথা বলি। কেটে গেল অনেকটা দিন। বুঝতে পারছিলাম আমার সংসারে তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকতে যাচ্ছে। সহ্য করি কি করে বলো? দশ বছরের সংসার। কি না করেছি? মুখ বুঝে সহ্য করেছি সকল অত্যাচার। এরপরেও যদি সতীন নিয়ে সংসার করতে হয়, বুঝো মনের উপর কি চাপটাই না পড়ে। রাত বেশী হয়নি। স্বামী যাচ্ছিলো সতীনের মুখে তালা দিতে। তুলে নিলাম, অজ্ঞান করে। ওই নির্জনেই চলে গেলাম। ওখানের মতো শান্তি আর নেই। কেন জানি মুখোশ পড়তে ইচ্ছে করেনি, তবুও পড়তে হলো। কথা বললে তো চিন্তেই পারবে। জ্ঞান ফেরালাম, কন্ঠ ধরে ফেললো!

ফট করে নাম বলতে যাচ্ছিলো, মুখে কস্টিপ মেরে দিলাম। রক্ত আমাকে এমন ভাবে টানছিলো, তবুও শান্ত থেকে একের পর এক আঘাত করছিলাম। দেখলাম অজ্ঞান হয়ে যাবে। রিস্ক নিলাম না, জ্ঞান থাকতে থাকতেই এক কু* পে মাথাটা আ* লাদা করে ফেললাম! কোনো স্বামীর এমন ভাগ্য হয়, স্ত্রীর হাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার‌। এ হিসেবে কিন্তু আমার স্বামী বড্ড ভাগ্যবান। যাক পরের কথায় আসি, শরীরের পা* র্ট গুলো কুঁচি কুঁচি করলাম! এক প্যাকেট নিজের সাথে নিয়ে, বাকি অংশ লোক দিয়ে বিক্রি করে দিলাম। সুস্বাদু মাংস খাক; কত হিসেবি আমি দেখেছো? কিছু টাকাও আয় হলো। বাড়ি ফেরার আগে জ্যাকেট টাও পু* ড়িয়ে ফেললাম। কোনো চিহ্ন রাখিনি। বাড়ি ফিরলাম চুপচাপ। আতিকুর পেছনের দিকে বাইরে যাওয়ার জায়গা করেছিল, রাতের আঁধারে মেয়ে মানুষ ধরতে ওখান দিয়েই যেত। সকাল হলো বরাবরের মতো। মাংস রান্না করলাম।

বাপ ছেলে চেটেপুটে খেল। জানতেই পারলো না, ছেলে- ভাইয়ের মাংস খাচ্ছে। আহা কি তৃপ্তির ঢেঁকুর! সময় টা এলো তখন, যখন পার্সেল এলো। মা* থাটা সুন্দর করে পার্সেল পাঠিয়েছিলাম। এমন ভয় পাওয়ার নাটক করলাম, কেউ ধরতেই পারলো না। কেউ তার নিজের স্বামীকে মারতে পারে? যেখানে ভালোবাসায় ভরপুর ছিল‌ সংসার! কথা হলো সে রাতের পর আরাফ কে একা পাচ্ছিলাম ‌ই না। আতিকুর ম* রে গিয়ে ওর সুবিধা করলো। মেয়ের ক্ষতি হবে ভেবে ফাঁসিয়ে দিলাম আরাফ কে। মেয়ে ভীষণ কাঁদছিল। আগ থেকে যোগাড় করে রাখা বাবার কীর্তি গুলো দেখালাম শান্ত হয়ে গেল মেয়ে। দেখ, এখন পর্যন্ত শান্ত‌ই আছে।

আব্বু পেয়েছে শান্ত হবে না? এখন আমি কি করে পারি মেয়ের আনন্দ টা মাটি করতে! আমার একটা দায়িত্ব আছে না? আমি আবার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকি, সর্বদা!
এবার আর হাসলো না মনিরা! থম মেরে বসে র‌ইলো। নাদিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মনিরা’র দিক। মেয়েটা কে দেখে এমন মনে হয়? শান্তশিষ্ট চেয়ারার পেছনে এতবড় হারামি লুকিয়ে আছে? তবে নাদিয়া মনিরা কে খুব একটা দোষ দিতে পারছে না। সে থাকলে হয়তো কাজ গুলো অনেক আগেই করতো। চরিত্রহীন দের সাথে সংসার করা যায় না! তার মা যে কি করে করছে! নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই মনিরা বললো,

~ চুপ করে আছো কেন নাদিয়া। বললাম গল্প করবো, তুমি তো শুধু শুনছো। কিছুতো বলো? আহিশ কে চাই? নাকি জীবন?
~ যদি বলি আহিশ?
মনিরা হয়তো নাদিয়ার এমন ভাবালেশ উত্তর আশা করিনি। চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো মনিরা। একটু আগেই যে মেয়ে ভয় পাচ্ছিলো, সে এখন হাসছে? কিভাবে? নাদিয়া হেসে বললো,
~ তোমার রক্ত হঠাৎ করে গরম হয়েছিল, তবে তুমি হয়তো জানো না মাহমুদ বংশের রক্ত জন্ম দেখেই গরম! মাহমুদ বংশের সাথে শুধু নি* র্দয়, পা* ষাণ, জুলুম* কারী‌ই যায়! খু*ন, মারা* মারি, কেড়ে নেওয়া আমাদের রক্তে মিশে গেছে! রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আমাকে দেখাতে এসো না প্লিজ! নাদিয়া মাহমুদ অনল, আদিল মাহমুদের মতোই হারামি! ওই যে বললাম রক্ত!

জিন্সের পকেট থেকে সিগারেট বের করে আবার ধরালো নাদিয়া। নিকোটিনের ধোঁয়া তাকে এই মুহূর্তের কষ্ট টাকে আড়াল করতে সাহায্য করছে। মনিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিস্ময়ে তার মুখ কিঞ্চিৎ হা হয়ে গেছে। নাদিয়া হেসে হাত বাড়িয়ে চা* পাতি তে টান দিলো। আকস্মিক হ‌ওয়ার মনিরা’র খানিকটা কেটেও গেল। শব্দ করে হেসে উঠলো নাদিয়া, উঠে দাঁড়িয়ে এক পা এগোবে, দরজায় শব্দ হতেই থেমে গেল সে। জোর ধাক্কায় কেউ দরজা খুলছে। এক সাথে তিন চারটে পা ঘরে ঢুকতেই থমকে গেল নাদিয়া। একপলক সামনে দাঁড়ানো রক্তিম চোখের দিকে তাকিয়ে, আরেকপলক হাতে থাকা চাপা* তির দিকে তাকালো। হাত কাঁপছে তার, এতবড় ভুল করার দায়ে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো। আহিশ কে দেখে মনিরা নাদিয়া’র দিক তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। নিমিষেই নাদিয়া কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো আহিশের বুকে। ফ্যাচফ্যাচে কেঁদে বলে উঠলো,

~ আহিশ বাঁচান আমাকে, ও মেরে ফেলবে আমাকে‌। এখান থেকে চলুন, ও আপনাকেও মেরে ফেলবো। পাগল হয়ে গেছে নাদিয়া, কিসব বলছিলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আহিশ, আমি মারা যাবো!
আহিশ আগলে নিলো মনিরা কে! মেয়েটা ভয় পেয়েছে, শান্ত করার জন্য বললো,
~ শান্ত হ‌ও, কিছু হবে না। আমি আছি। শান্ত হ‌ও মনিরা!
মনিরা শুনে, বুঝেও শান্ত হলো না। বরং আহিশ কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। আহিশের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল, রাগটা যেন বেড়ে গেল। ধমকে বলে উঠলো,

~ এই মেয়ে, শান্ত হ‌ও বলছি। ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবে না!
আকস্মিক ধমকে শান্ত হলো মনিরা। তবুও ছাড়লো না আহিশ কে। বুকে মুখ লুকিয়ে নাদিয়ার দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে, ঢলে পড়লো আহিশের উপর। চমকে গেল আহিশ। দু’রার গালে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বুঝলো জ্ঞান হারিয়েছে। নাদিয়ার দিকে রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে বললো,
~ ভেবেছিলাম মাহমুদ বংশের রক্ত হলেও তুমি আলাদা। বন্ধুত্বের স্থান দিয়েছিলাম। তবে আমি ভুল, মাহমুদ বংশের রক্তে এতটা দুর্গন্ধ, কেউই সেই দুর্গন্ধ টা লুকিয়ে রাখতে পারে না। আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না নাদিয়া। অবশিষ্ট সম্পর্ক টাও এখানেই শেষ। কোনো এক কালে উপকার করেছিলে বলে, আজ ছেড়ে দিলাম। আমার মনে তোমার প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই র‌ইলো না। একমাত্র দায়ী তুই নিজেই!

কোলে তুলে নিলো মনিরা কে। সাথে থাকা লোকগুলো বাইরে দাঁড়িয়েছে। আহিশের আড়ালে মনিরা নাদিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখাতেই ধপ করে বসে পড়লো নাদিয়া। হাতের চা* পাতি কোথায় গিয়ে পড়লো টের পেল না। তার কানে শুধু আহিশের কথাগুলোই ঘুরছে। সে তো শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিলো। প্রথমে তো পায়ে ধরেছিল, ভিক্ষা চেয়েছে! তার হাহাকার কারো কানে বাজে নি। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো নাদিয়া। কান্নার শব্দ গুলো এক কোণ থেকে আরেক কোণে প্রতিধ্বনিত হয়ে তার কাছেই ফিরে আসছিলো। কাঁদতে কাঁদতে সময় কত তে চলে গেল টের পেল না। গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে শুয়েই র‌ইলো। এই ব্যাথা যে সারার না। অস্পষ্ট সুরে বিড়বিড় করতে লাগলো,
~ যতনে ভালোবাসিলাম, সে আমারে যতনে দুঃখ দিয়া গেল!

ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে পাশে বসে থাকতে দেখে মিষ্টি হাসলো কামিনী বেগম। রাত এখন কটা বাজে জানা নেই। হয়তো দুটো তিনটে বাজে। আফীফের দৃষ্টি মেলে ধরা ব‌ইয়ের উপর। কামিনী বেগম হাত বাড়িয়ে ছেলের মাথায় রাখলেন। আফীফ হাতে রাখা হুমায়ূন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ ব‌ইটি ভাঁজ করে রেখে দিলো পাশে। মায়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~ ঘুম হয়েছে আম্মা? চলো খাবে।
কামিনী বেগম মাথা নেড়ে সায় দিলেন। যদিও তার খেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু ছেলে যে খায় নি। আগে তার কিছু হলে বাবা-ছেলে না খেয়ে একসাথে বসে থাকতো পাশে। এখন বাবা নেই, ছেলে নিজ ভুমিকাতেই রয়েছে। এমন সৌভাগ্য কতজন মায়ের হয়? মা কে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খাবার গরম করে নিলো আফীফ। একপলক জিয়াউলের ঘরের দরজায় তাকিয়ে নিম্নস্বরে বলে উঠলো,

~ খিদে পেলে খেয়ে নিতে হয় জিয়া! নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই! এসো, ঠান্ডা হয়ে যাবে খাবার।
এক মিনিট পর মৃদু শব্দে দরজা খুলে গেল। ঘুম ঘুম চোখে জিয়াউল চেয়ারে বসতেই আফীফ মুচকি হাসলো। কিঞ্চিৎ মুহূর্ত‌ও দেরী না করে খাবার বেড়ে রাখা প্লেট টা সামনে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খিদে টা বেশ জোর পেয়েছে। আফীফ সেদিকে তাকিয়ে লজ্জা দিতে চাইলো না। মা কে নিজ হাতে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।‌

দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলো অনান। খাওয়ার পর থেকেই মন টা তার খচখচ করছিলো। জিয়াউলের ভালোবেসে অপেক্ষা করার প্রতিদান দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসেছিল। ভালোবাসা’র বিনিময় দুঃখ যেন তার মনে বসে গিয়েছিল। তবে হুট করেই আফীফের তিনটে বাক্য তার ভুল ধারণা কে সম্পূর্ণ ফিকে করে দিলো। ভালোবাসা দিলে যে ভালোবাসা পাওয়া যায়, আজ যেন নতুন করে আবিষ্কার করলো সে। এই যে জিয়াউলের মুখশ্রীতে আলাদা দ্যুতি খেলা করছে, তা যে আফীফের খেয়াল রাখার জন্য ঢের বুঝতে পেরেছে সে। ভেতর টা হঠাৎ করেই ফাঁকা লাগছে। শৈশবের স্মৃতি তাজা হয়ে কেমন বুকের ক্ষত বাড়াচ্ছে। ঘোরের মধ্যেই দরজার আড়াল থেকে বের হলো অনান। ততক্ষণে কামিনী বেগম শুয়ে পড়েছে। আফীফ জিয়াউল কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো। অনান কে দেখেই থেমে যায় সে। আকস্মিক কথা থেমে যাওয়ায় কিছুটা বিচলিত হয় অনান। তবে বুঝতে দেয় না। চেয়ারে বসে ভাবুক নয়নে উপর দিকে তাকিয়ে বললো,

~ আমরা ধীরগতিতে এগোচ্ছি মনে হচ্ছে।
~ কেন এমন মনে হচ্ছে?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো আফীফ। কিছুক্ষণ চুপ র‌ইলো অনান। দৃঢ় কন্ঠে বললো,
আমাদের উচিত ছিলো এখন ওদের উপর হামলা করা। অথচ বসে বসে আমরা গিলছি!
শেষের কথাটা বলে আড়চোখে জিয়াউলের দিকে তাকালো। সুক্ষ্ম খোঁচা টা ধরতে পেরে অপমানে থমথমে হয়ে এলো জিয়াউলের মুখশ্রী। ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো,
~ সময় উপযোগী যা করা দরকার সেটাই করছি! গিলার সময় গিলছি, কাজের সময় কাজ করছি! অন্যদের মতো আগেই তো পেট পুঁজো করে নিই নি।
~ এই মুখ সামলে কথা বলুন। খিদে পেলে খাবো না?
~ খিদে পেলে খাবে সেটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনার মুখ বন্ধ করুন। এখানে প্রয়োজনীয় কথা হচ্ছিল।
রাখে ফুসফুস করতে থাকে অনান। এভাবে তর্কে হেরে যাওয়া মানতে পারছে না। কিছু একটা বলবে, আফীফ গম্ভীর মুখে দুজনের দিকে তাকায়। শান্ত হয়ে যায় দুজন‌ই। এই ছেলেটার দৃষ্টি তে কি আছে কে জানে। কেমন বুক কেঁপে উঠে। অপ্রসন্ন কন্ঠে আফীফ বললো,

~ দুজন বাচ্চা ন‌য়, আচরণে পরিবর্তন নিয়ে এসো। যাই হোক, কাজের কথায় আসি?
জবাব দেয় না কেউ। পরবর্তী কথা শোনার জন্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। আফীফ ভুমিকা হীন অনান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
~ শাড়ি, গহনা আছে তোমার?
বুঝতে পারে না অনান। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আফীফ বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। মায়ের ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসে। হাতে কমলা রঙের শাড়ি। এই শাড়িটা আফীফ স্কুলে থাকতে মা কে কিনে দিয়েছিল। এত কড়া রঙের শাড়ি কামিনী বেগম পড়ে না জেনেও মা কে পরীক্ষা করতে নিয়েছিল। কামিনী বেগম খুশিতে আটখানা হয়ে শাড়ি পড়ে সারা কোয়ার্টার ঘুরেছিলেন। আফীফের খুশি যেন সেদিন ধরে না। এর পর কামিনী বেগম শাড়িটি আর পরেননি। যত্ন করে তুলে রেখেছিলেন। আজ মায়ের এই শাড়িটাই তার কাজে লাগবে। শাড়িটি অনানের সামনে ধরে কিছুটা তাড়া দিয়ে বললো,
~ গ্রাম্য স্টাইলে শাড়িটি পড়ে এসো। ফাস্ট!
আফীফের কন্ঠে এতটা তাড়া ছিল, অনান প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না। ঘরে ছুটে যায়। কোনো রকম শরীরে শাড়ি জড়িয়ে বেরিয়ে আসে। মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে আস্তে আস্তে বাইরে চলে আসে আফীফ। জানে না আজ সে সফল হবে কিনা, ভেবে ভেবে মন অশান্ত হয়ে উঠেছে। অনান কে নিয়ে জিয়াউল বাইরে আসতেই আফীফ জিয়াউল কে প্রশ্ন করলো,

~ ঠিক ভাবে খবর নিয়েছো? ওই রাস্তা দিয়ে গেলে মিস হবে না তো?
~ আমি একশো পার্সেন্ট শিউর স্যার। ছিনতাইকারী’রা উঁত পেতে বসে থাকে। তবে এতটা রিস্ক নেওয়া উচিত হবে স্যার?
~ আহা! জিয়া তুমি আমার কথা বুঝো‌ নি! আমাদের সলিট একটা অজুহাত চাই। নিজের হাত নিজে কাটলে কোনো প্রমাণ নেই! প্রতিপক্ষ কে দুর্বল ভেবো না। পুরো শহর অনল মাহমুদের কব্জায়!
জিয়াউল আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে উঠে বসলো। নিস্তব্ধ গলি টা ধরতেই কেমন সতর্ক হয়ে গেল আফীফ। ডান বামে তাকালো, নাহ কেউ নেই। হতাশ হলো সে, পরমুহূর্তেই জিয়াউলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুব করে শাসালো। বড়সড় ঢোক গিললো জিয়াউল। তাকে যা জানানো হয়েছে, সে তো তাই বলেছে। কেন যে শিউর দিতে গেল। এখন নিজেই ফেঁসে যাবে। ভাবতে ভাবতেই থেমে গেল গাড়িটি। চমকে উঠলো জিয়াউল। আফীফের ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি। গাড়িটা ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে ছয় সাতটি ছেলে। নেমে দাঁড়ায় আফীফ। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

~ কি চাই? পথ আটকালেন কেন?
~ কি কি আছে বের কর, নাহলে মেরে রেখে দিবো। দেখছিস হাতে কি?
রিভল*বার, ছু* রি দেখিয়ে আফীফ কে ভ‌য় দেখাতে চায় ছেলেগুলো। আফীফের ভীষণ হাসি পায়। নিজ হাতে কত রকমের রিভল* বার ছুঁয়েছে। অথচ ছেলে গুলো তাকে খেলনা বন্দু* ক দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে।
ভয় পাওয়ার ভান করে বলে উঠলো,
~ না না, দিচ্ছি দিচ্ছি। মেরো না প্লিজ! জীবন অনেক দামী। আচ্ছা কি নিবে? টাকা নিবে না মোবাইল নিবে না এটা নিবে?
পকেট থেকে চকচকে বন্দু* কটা বের করে কৌতুক হাসলো আফীফ। ছেলেগুলো দু পা পিছিয়ে গেলো। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে যেই না দৌড় দিতে যাবে ফাঁকা গু* লি ছুড়ে আফীফ। আকস্মিক ভয়ে দাঁড়িয়ে যায় ছেলেগুলো। একজন ভয়মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো,
~ আপনি পুলিশ?
~ নাহ! পুলিশের বাপ! আর্মি! ভয় পেলে বাবুরা? আহা, ভয় পেয়ো না। আমি কিছুই করবো না তোমাদের। চলো বসে কথা বলি।
ছেলেগুলোর সাহস হলো না। হাত পা কাঁপছে ধীর গতিতে। একজন কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
~ মাফ করে দিন স্যার। আজ থেকে ভালো হয়ে যাবো। পেটের টানে আকাম করি। আর করবো না, এইবারের মতো ছেড়ে দিন।
আফীফ হাসলো। আজ তার হাতে অস্ত্র টা না থাকলে এদের মুখে অন্য কথা থাকতো। হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,

~ আমি তোমাদের কিছুই করবো না। যদি তোমরা আমার কথায় কাজ করো! রাজি?
ছেলেগুলো উপায় না পেয়ে কাছে আসলো‌। ধুলো মাখা রাস্তায় বাবু হয়ে বসে ছেলেগুলো কে বসতে ইশারা করলো আফীফ। ভয় কাটেনি কারো। বসলো সবাই। আফীফ বললো,
~ ডিল একটাই! আমি যা বলবো তাই করবে! জাস্ট এতটুকুই!
আরো কিছুক্ষণ কথা বললো আফীফ। বুঝিয়ে দিলো নিজের পরিকল্পনা। লোক গুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এ কেমন লোকের পাল্লায় পড়লো তাই হয়তো ভাবছে। জেলে যাওয়া থেকে বাঁচতে রাজি হয়ে গেল ফট করেই। আফীফ মাথা দুলিয়ে হাসলো। গাড়ির দিক হাত উঠিয়ে ইশারা করতেই জিয়াউল নেমে এলো কিছু কাগজ নিয়ে। ছেলে গুলোর সামনে তুলে ধরে বললো,

~ চট জলদি সাইন করে দাও। আমি আবার কাঁচা কাজ করি না। তোমাদের আমার সামনে লাগবে‌। আশা রাখছি পাশে পাবো। বিনিময়ে টাকা পাবে, নো প্রব্লেম। তবে বেইমানি করো না, তোমার ভুলের মাশুল তোমার পরিবার কে দিতে হবে, এই যা!
লোকগুলো না পড়েই সাইন করে দিলো। কাগজ গুলো জিয়াউলের হাতে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আফীফ। পরবর্তী কাজ একটু পরেই করবে। তবে আশপাশ টা দেখে নেওয়া জরুরি। চারদিকে নজর বুলিয়ে আফীফ একটি বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়া কাউকেই দেখতে পেল না। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
~ নাও এখন আঘাত করো। সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করবে‌।

ছেলেগুলো দিশেহারা হয়ে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। আফীফ সময় ব্যয় করলো না। যে ছেলের হাতে ছুরি ছিলো, হাত আঁকড়ে ধরে নিজেই নিজের হাতে এক‌ টান দিলো। গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। ছেলেটার হাত কাঁপছে। আফীফ বিরক্ত হলো, এইটুকু ক্ষত‌ই কতদিন হসপিটালে থাকতে পারবে? বড়জোর একদিন! একদিনে তো আর হবে না। ছুরিটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বুক বরাবর ঘা বসিয়েই ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে নিলো আফীফ। শক্তপোক্ত দেহটা নরম হয়ে আসছে। ছলছল চোখে স্যারের কাজ দেখছে জিয়াউল। বারবার না করেছিল এমন করতে। নিজের শরীরের ক্ষতি করে কেউ এমন রিস্ক নেয়? হঠাৎ করেই জিয়াউলের মনে হলো হসপিটাল গেলে স্যার তাকে সাথে থাকতে দিবে না। কোনো না কোনো উপায়েই বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। তবে সে যে বড় স্যার কে কথা দিয়েছে। আবেগের বশেই জিয়াউল ঠিক আফীফের মতো কাজ করে বসলো। আফীফের হাতের ভাঁজ থেকে ছুরিটা নিয়ে কাঁধ বরাবর টান দিয়ে , ডান হাতের কাঁধের নিচে ছুরি চালিয়ে দিলো। মুচকি হেসে বললো,

~ ক্ষমা করবেন স্যার, পাতালেও আপনাকে একা ছাড়ছি না!
চরম ভাবে হতাশ হলো আফীফ। দুজন‌ই চেতনা হারালে গাড়ি চালাবে কে? জিয়াউল কে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হলো‌। ইচ্ছে টা চুপচাপ হজম করে গাড়িতে বসলো আফীফ। যতদ্রুত সম্ভব হসপিটাল পৌঁছাতে হবে। ব্লিডিং হচ্ছে খুব! গাড়িতে তে উঠে ছেলেগুলো’র দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আমার লোকদের নজর তোমাদের উপর চব্বিশ ঘন্টায় থাকবে। লুকিয়েও বেইমানি করো না, মারা পড়বে। খুব শীঘ্রই দেখা হবে।

ছুটে চললো গাড়ি। পেছনে কয়েকটা অবাকমিশ্রিত নয়ন দিশেহারা হয়ে পলক ফেলতেও যেন ভুলে গেল। হয়তো বাকি জীবনে আজকের রাতটা’র কথা ভুলবে না। ভুলবে না দুজন সুপুরুষ কে। একে অপরের প্রতি যে ভালোবাসা দেখালো সেটাও হয়তো মনে দাগ থেকে যাবে। আবার তারা নিজ কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আবার কোনো গাড়ির সম্মুখে এভাবেই দাঁড়াবে। তবে আজকের ভয় টা কোনোদিন কাটবে না।
বিরাট বড় হসপিটাল টির আশপাশ আলোয় জ্বলজ্বল করছে। দিন, রাত বোঝার উপায় নেই। গাড়ি থামিয়ে আফীফ পেছনে ঘুরলো। গোবেচারা চেহারায় বসে আছে অনান। তার মাথায় কিছুই ঢুকেনি। আফীফ নিম্ন স্বরে বললো,
~ নিজেকে খানিক এলোমেলো করে নাও, ধস্তাধস্তি হয়েছে এমন‌। ঠিকঠাক অভিনয় না পারলে এসো না, আমি গেলাম!

জিয়াউলের চোট কম লাগায় দৌড়ে এসে আফীফ কে ধরলো সে। কাঁধে ভর করে ছুটে চললো ভেতরে। অনান নিজেও এক ছুটে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। শাড়ি পড়ে তার অবস্থা এমনিই নাজেহাল। নতুন করে আর কি করবে। আফীফের এক হাত আঁকড়ে ধরে, রিসিপশনে যেতেই চিৎকার করে বলে উঠলো,
~ তাড়াতাড়ি আহেন গো, বাঁচান বাবু রে।
রিসিপশনে বসা মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। রাত করে এমন কেস তেমন আসে না। এগিয়ে এসে তিনজন কে দেখে বলে উঠলো,

~ এত তো পুলিশ কেস, লিখিয়েছেন থানায়?
~ অবশ্য‌ই মেডাম। লিখবো না কেন? ছিনতাইকারী থেকে কোনো রকম বেঁচে ফিরে আমাদের আগে পুলিশ স্টেশনে যাওয়া উচিত ছিল। মানুষ মরুক, বাঁচুক সমস্যা নাই তো। লিখিত গিলে খেলেই হলো তাইনা?
উঁচু গলায় বিদ্রুপ মেশানো কথা গুলো শুনে বিব্রত হলো মেয়েটি। জিয়াউল আবার মৃদু চিৎকার করে বললো,
~ আপনাকে হসপিটাল রেখেছে কে? কমনসেন্স নেই? তাড়াতাড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এটা কোনো হসপিটালের পরিবেশ হলো?
চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলো আফীফ। জিয়াউলের কথাগুলো মনে ধরেছে। ছেলেটা ব্যাথা সহ্য না করতে পেরেই যে এত রেগে যাচ্ছে বুঝেছে। মেয়েটি আর কথা বলার সাহস পেল না। ছুটে গেল ব্যবস্থা করতে‌। আফীফ ফিসফিস করে বললো,

~ পারলে আজকেই হসপিটাল টা ঘুরে দেখবে। সকালে হয়তো জেনে যাবে আমাদের কথা। সরকারী লোক, ভয় থাকবে স্বাভাবিক। লোক‌ও লাগিয়ে রাখতে পারে। তাই সুযোগ মিস করা যাবে না!
কিঞ্চিৎ মাথা কাত করে হা বোধক মনোভাব পোষণ করলো জিয়াউল। অনান মাথা ঘুরিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোর টা দেখে নিচ্ছে। নিশ্চুপ পরিবেশ, একটু জোরে বললেই মনে হচ্ছে পুরো হসপিটালের মানুষ শুনতে পাবে। অনান এবার আরেকটু গলা উঁচিয়ে বললো,
~ মানুষ মরে গেলে চিকিৎসা হবে?

কোনো বাচ্চা’র হাতের আঁকা বাঁকা চাঁদের মতো এক ফালি চাঁদ দিগন্তে ঝুলে আছে। ভরা পূর্ণিমার মতো আলো না ছড়ালেও, খারাপ না। মৃদু হাওয়া ব‌ইছে, কখনো জোর হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো কে কেমন দুলিয়ে দিচ্ছে। আপন ছন্দে নেচে উঠে আবার নিরব হয়ে যাচ্ছে। বাঁকা চাঁদের পাশে মিটিমিটি জ্বলছে এক তারা। অন্যান্য দের থেকে তারাটির আলো একটু বেশী! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল আহিশ। চোখে ঘুম নেই, মনের কোণে কোথাও শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না। অন্ধকার দিগন্তে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আহিশ আবিষ্কার করলো একটি তারা খসে পড়ে আরেকটি তারার মাঝে ডুবে গেল। যেন অপর তারাটি শুষে নিচ্ছে ভালোবাসে। আঁধারে ঘেরা মন টা এবার
অদ্ভুত শান্ত হয়ে এলো। ডান হাতটা আপনাআপনিই বুকের বাম পাশ ছুঁলো। হৃদস্পন্দন বড়‌ই নিরব, বুকের উচাটনের সাথে প্রেমপিয়াসী খাপ খাইয়ে চলতে পারছে না? নাকি আজ বুকের বাম পাশে কেউ মুখ গুঁজে ছিল বলে প্রেমপিয়াসী তীব্র অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আহিশ আবিষ্কার করলো ঠিক তার পাশে মুখ ফুলিয়ে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আহিশ ব্যাথা মিশ্রিত কন্ঠে শুধালো,

~ খুব বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেছি প্রেমপিয়াসী? এমন কি কখনো হয়েছে? দুর্ঘটনা ভেবে ভুলে যাও না! বুকের বাম পাশে যে তোমার রাজত্ব। অন্যকেউ কি করে আসবে?
মেয়েটি তবুও মুখ ফুলিয়ে আছে। বেনী করা চুলের ভাঁজ আজ এলোমেলো। কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আহিশের মনে হলো, তার কলিজাটায় কেউ থাবা বসিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ঢোক গিলে মুচকি হেসে বললো,
~ আমার প্রেমপিয়াসী বড়‌ই অভিমানী!

মেয়েটি তাকালো আহিশের দিকে। মিষ্টি হাসলো। এক দু পা করে কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো। আহিশ যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে‌। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইলো, পারলো না। মিলিয়ে যাচ্ছে বারংবার। হাত ভেদ করে হাত বের হয়ে যাচ্ছে, সে ছুঁতে পারছে না। ছটফট করছে আহিশ। একটু ছোঁয়ার আশায় কাতরাচ্ছে। মেয়েটি যেন বেশ মজা পেয়েছে। খিলখিল হেসে থেমে গেলো সে। একটু একটু পিছু হটে বলতে লাগলো,

~ আমার শরীর অপবিত্র আহি। রক্তে মাখামাখি, দুর্গন্ধ ছড়াবে। ছুঁতে পারবে না তুমি! আমি অধরা, তোমার প্রেমপিয়াসী মরে গেছে আহি! মেরে ফেলেছে ওরা। কত আকুতি , সহস্র ফোঁটা জল; শুনেনি আহি! ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আমাকে একটু একটু করে তোমার থেকে দূরে করে দিয়েছে। আজ আমার রাজত্বে অন্যকেউ মুখ গুঁজেছে আহি, বড্ড ব্যাথা গো। শরীর জ্বলে যাচ্ছে, আমাকে মুক্তি দাও আহি। মুক্তি চাই আমি, তোমার কল্পনার জগত থেকে মুক্তি চাই।
মেয়েটি হারিয়ে গেল। বেনী নাচিয়ে অন্ধকারে মিশে গেল। আহিশ হাত বাড়িয়েও আটকে রাখতে পারলো না। বুকের উপর চাপ টা হয়তো বেশীই হয়ে গেছে, চিনচিনে ব্যাথা নিয়ে বসে পড়লো আহিশ। পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদতে পারে না, তাদের কাঁদতে নেই। মানুষ হাসবে। এখানে তো কেউ নেই! সে কাঁদলে খুব বেশী উপহাস তো পাবে না!

ভোরের আলো ফুটেছে। বাঁকা চাঁদ সরে গিয়ে সোনালী সূর্য আসন নিয়েছে। তেজহীন সূর্য পরিবেশ কে অদ্ভুত মোহনায় স্নিগ্ধ করেছে। মিষ্টি হাওয়ার সাথে বাতাসে অচেনা মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে। শুধু তার কাছেই কি এমন মনে হচ্ছে? প্রেমের বহিঃপ্রকাশ কি আদিল মাহমুদের ধরণ পালটে দিলো। এই যে কিছুদিন আগেও সকাল হতেই ভাবতে বসতো মিটিং, ডিলের কথা। আজ ঘুম ঘুম চোখে জড়িয়ে ছিল মেয়েটি। তার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো। ঘুম ভেঙে আশপাশ খুঁজে দেখলো নেই। আপন মনে হাসলো আদিল‌। অধঃপতন হয়েছে তার, তবে আফসোস হচ্ছে না। অদ্ভুত এক অনুভূতি তাকে ঘিরে রেখেছে। পাশ থেকে ফোন নিয়ে ওয়ালে তাকালো আদিল। নিজের একটা ছবি ওয়ালে দিয়ে রেখেছে মিরা। তার ভাষ্য মতে, ফোন অন হলেই তাকে মনে পড়বে। অথচ মেয়েটি জানেই না আদিল মাহমুদ মেয়েটিকে ঠিক বুকের বাম পাশেই চিরস্থায়ী আসন করে দিয়েছে।
রিং হচ্ছে তুলছে না। অপেক্ষা রত আদিল নিরাশ হলো। ধৈর্য হারালো না। রিসিভ হলো, ঘুম জড়ানো কন্ঠ ভেসে এলো,

~ এত সকালে কেউ কাউকে ফোন দেয় না আদিল! ঘুমাচ্ছি আমি! আপনাকে এখন ম্যানারস শেখাতে হবে না নিশ্চয়ই?
আদিলের হাসি পেল। কৌতুক মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
~ শেখাতো পারেন, আমি মাইন্ড করবো না!
বিরক্তির সুর তুললো মিরা। কিছু বললো না, চুপ র‌ইলো। আদিল হুট করেই গাঢ় কন্ঠে বললো,
~ আপনার চিঠির উত্তর দিতে আমি একটি অপারেশন মিস করেছিলাম, রাজনন্দিনী! লোকটি চিকিৎসাহীন মারা গিয়েছিল। আমার কিন্তু আফসোস হয়নি। বরং খবরটা শুনে বিরক্ত হয়েছিলাম, চিঠি লিখায় ব্যাঘাত ঘটলো যে। আদিল মাহমুদের রূপ একটা নয়, আমার ভালোবাসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা হিংস্রতাকে টেনে বের করবেন না রাজনন্দিনী! আমার ভালোবাসা’র থেকে স্বার্থের প্রখরতা বেশী!

একটু একটু করে বেলা বাড়ছে। সূর্যের তেজ ও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। ভ্যাপসা গরমে শুয়ে থাকাও অস্বস্তিকর।‌ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো আফরা। পর পর দু’বার হাই তুলে দু হাত প্রসারিত করে খানিক সাহেবীপণা করে নেমে পড়লো বিছানা থেকে। আশেপাশে মিরা নেই। ভাবলো না আফরা, নিজের মতো ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। তবে আজকের সকাল টা তার জন্য অন্যরকম সিনেমাটিক ব্যাপার ভেবে রেখেছিল সে কি জানতো? সিনেমাটিক নাকি হাস্যকর বলবে আফরা নিজেও বুঝতে পারলো না। আকস্মিক ধাক্কা টা সামলাতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। চুপচাপ শব্দহীন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসলো। চোখ তার অস্বাভাবিক বড়! মস্তিষ্ক যেন নিতে পারছিলো না, চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

~ মহারানী’র কার্য সম্পাদিত হ‌ইলে, বাহির হওয়ার অনুরোধ করিতেছি। আপনার জন্য কেউ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছে। দয়া করিয়া যদি একটু ক্রিপা করিতেন, জীবন ধন্য হ‌ইয়া যাইতো!
বিশাল খোঁচা গাঁয়ে লাগলো মিরা’র। কমোডে বসে র‌ইলো থমথমে মুখে। যতটুকু সম্মান তার অবশিষ্ট ছিল আজ সেটাও জলাঞ্জলি দিলো। শুধু মাত্র সো কল্ড প্রেমের চক্করে। এমনিতেই সকাল থেকে আদিলের একের পর এক বকবক শুনে অতিষ্ঠ সে। ঘুম পূর্ণ না হ‌ওয়ায় কপালের পাশে কেমন চিনচিন করছে। তার‌উপর ন’টা বাজতে চললো প্রাকৃতিক কাজের জন্য‌ও ছাড়ে নি তাকে আদিল। আজ নাকি সে যতক্ষণ ফোনে চার্জ থাকে ততক্ষণ কথা বলবে। নির্লজ্জের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেও সে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলতে পারেনি আদিল কে। সেটাই তার কাল হলো, এত বেশি চাপ পেয়েছিল দরজা আটকাতে ভুলে গিয়েছে। রাগে কটমট করতে করতে কান থেকে ফোন নামিয়ে ডাক্তার নামটার দিকে তাকালো। চোখ দিয়েই যেন অপর পাশের মানুষ টিকে ভস্ম করে দিবে। তিন ঘন্টা তেরো মিনিট উঠে আছে, মিরা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

~ আগামী তিন দিনে যদি আপনার ফোন থেকে আমার ফোনে কল আসে, চিবিয়ে খাবো আপনাকে।
কথাটা বলতে দেরী ফোন কেটে দিতে দেরী হয়নি। তবুও যেন রাগ কমছে না মিরা’র। অপর পাশে আদিল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফোনের দিক তাকিয়ে র‌ইলো। হঠাৎ কি হলো তার মাথায় ঢুকলো না। রাগের কারণ‌ ধরতে না পেরে মাথা চুলকালো সে। ভাবতে বসলো, সে কি প্রেমে পড়ে বোকা হয়ে যাচ্ছে? নাকি আদিল মাহমুদ কে সে ভালোবাসার মাঝে হারিয়ে ফেলেছে। এমন করলে যে খুব বিপদ। প্রিয়জনের জন্য হলেও তাকে কন্ট্রোলে থাকতে হবে। ভেবে অন্যমনস্ক থেকেই ফ্রেশ হতে গেল আদিল। অফিস আজ মিস করা যাবে না।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলো মিরা। মাথা টা তার কিঞ্চিৎ নত। আফরার চোখে চোখ মেলাতে পারবে না বলেই হয়তো এই পন্থা। আফরা মিরা কে দেখেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে কৌতুক কন্ঠে বলে উঠলো,
~ প্রেমিকা’র প্রেম শেষ হলো? বেশ বেশ! আপনাদের দেখেই আজকালের যুবক যুবতিরা প্রেম শিখবে। শেখা উচিত। আপনাদের প্রেম তো লায়লি মজনুর প্রেমকেও হার মানাবে। আর যাই হোক , তারা তো কমোডে বসে প্রেম করার সাহস করেনি! যাহা আপনি করেছেন! লা জবাব!
মিরা কেমন লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। অপরাধীর মতো নত করে রাখা মাথাটা আরেকটু নত হলো। মৃদু স্বরে বললো,
~ সয়ে যেতে হবে, কিছুই করার নেই। ক’টা দিন‌ই তো!
~ ওহ হ্যা। আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম। আপনাদের প্রেম তো ক’টা দিনের। তা আর কোথায় কোথায় গিয়ে কথা বলবেন?

রাগী কন্ঠ আর নেই আফরা’র। কথার সুরে অন্যরকম দুষ্টুমির ছোঁয়া। মিরা সহজ হয়ে আফরা’র পাশে বসলো। দু হাত প্রসারিত করে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে বললো,
~ খুব চাপে ছিলাম। উপায় ছিল না। যাই হোক, বের হবি এখন?
~ গ্রামে যাবো একটু। বোন কে কতদিন দেখি না। আঁখি মেয়েটাকে ও হাতেনাতে ধরবো।
~ ধরে কিছুই হবে না। ও মুখ খুলবে না, বড়জোর চাপ দিলে উড়নার কোণে বেঁধে রাখা বিষের শিশি গলায় ঢেলে দিবে। বরং তুই ওকে আমার হাতে ছেড়ে দে, আমার লোক দেখে নিবে।
আফরা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মিরা’র দিকে। কিছুটা সন্দেহ মিশে রয়েছে। তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
~ তুই কিছু লুকিয়ে যাচ্ছিস আমার থেকে! পরিণাম কিন্তু খুব খারাপ হবে।
মুচকি হেসে উঠে বসলো মিরা। আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে, ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
~ কেমন পরিণাম তা না হয় ভবিষ্যত ঠিক করুক। খিদে পেয়েছে, নাস্তা তৈরি কর। আমি দু’ মিনিটে আসছি।

আজ ঠিক সময়ে অফিসে যেতে চেয়েছিল বলেই মনে হয় এতটা দেরী হলো। ব্যস্ত পায়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে রেডি হচ্ছে আদিল। কোনো কিছুই আজ হাতের কাছে পাচ্ছে না। গোছানো ঘরটা কেমন এলোমেলো লাগছে তার কাছে। মন বলছে ঘর গোছানোর জন্য হলেও কাউকে দরকার। সেই কাউ’কের জায়গায় যে মিরা’র মুখশ্রী টা কল্পনা করে নিয়েছে তা যেন না বললেই নয়। নিজের এমন ভাবনায় মুচকি হাসলো আদিল। মেয়েটা তার কাছে এক মাস সময় চেয়েছে। ঠিক পরের মাসের একুশ তারিখ সম্পূর্ণ তার হবে কথা দিয়েছে। মেনে নিয়েছে সে, খুব তাড়াতাড়ি আপন করার মনোবাসনা কে গোপন করে সায় জানিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে জোর করে কাজি অফিসে নিয়ে গেলেই হতো‌। এত ঝামেলা পোহাতে হতো না। বাম হাতে ঘড়ি জড়িয়ে গাড়ির চাবিটা হাতে নিবে, ব্যাঘাত ঘটিয়ে টুংটুং শব্দে ফোন বেজে উঠলো। শান্ত ভঙ্গিমায় ফোন তুলে হেলো বলতেই অপর পাশের মানুষ টি চাপা উৎকণ্ঠা কে লুকিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

~ বস, আমি মতিন‌। কাল মেডাম একটা মেয়েকে তুলে আনতে বলছিলো। এনেছিলাম, কথা ছিলো সকালে আসবো আমরা। এসে দেখি মেডাম মাটিতে পড়ে আছে, মেয়েটি নাই। আপনি একটু আসবেন? না মানে, আপনি তো মরে গেলেও মেডামের গাঁয়ে হাত দিতে না করছেন।
ভীষণ ভাবে বিচলিত হলো আদিল‌। খাবার হীন পেট টা কেমন গুলিয়ে উঠলো। বুকের উপর বিশাল বড় চাপ অনুভব করলো সে। যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বললো,
~ কোথায় আছো তোমরা?
~ পুরোনো গোডাউনে বস, দুই নম্বরে। আসবেন?

আদিল জবাব দিলো না। ফোন কেটে ধপ করে বসে পড়লো বিছানায়। কপালের রগ ফুলে যাচ্ছে। কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট পা ফেলে বাইরে এলো। গাড়িতে বসে জোরে দম নিলো আদিল। তার সুখ, তার খুশি যে প্রকৃতির সহ্য হয় না, আজ‌ও তার প্রমাণ পেল। গাড়ির স্পিড এতটা বাড়িয়ে দিলো, অন্যান্য গাড়িগুলো কে টক্কর দিয়ে পেছনে ফেলে গাড়ি, জনমানব হীন সরু রাস্তাটায় ঢুকে স্পিড কমিয়ে দিলো। গাড়ি গিয়ে থামলো গোডাউনের সামনে। নেমে পড়লো আদিল। একটু আগের এলোমেলো আদিল কে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। গম্ভীর, কঠোর আদিল দ্বিতীয় গোডাউনে ঢুকে পড়তেই লোকগুলো মাথা নত করে নিলো। জবরদস্তি সম্মান টা ধরে রাখলো। ধুলোর স্তরের উপর নাদিয়া কে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা চমকালো আদিল। এর আগে এতটা বিধস্ত এই মেয়েটিকে দেখে নি। না চাইতেও কঠোর মুখটায় ব্যাথা ছাপ ফুটে উঠতে লাগলো। প্রকাশ পাবে বলেই হয়তো, লোক গুলো কে ইশারা করে চলে যেতে বললো। ইশারা পাওয়া মাত্রই মাথা নত রেখেই পিলপিল করে বেরিয়ে গেলো লোকগুলো। আদিল গিয়ে নাদিয়ার পাশে বসলো। মৃদু কাঁপা হাত মাথায় রাখতেই তর্জনী আঙ্গুলের একাংশ কপাল ছুঁয়ে দিলো। চমকে হাত সরিয়ে নিলো আদিল। এত গরম কেন শরীর? ব্যস্ত হাত কপালে রেখে কয়েকবার পরখ করলো। উপায় না পেয়ে নাদিয়া কে ডেকে উঠলো আদিল,

~ নাদিয়া? এই নাদিয়া? শুনতে পাচ্ছো?
জ্ঞান নেই। আদিল সময় ব্যয় না করেই কোলে তুলে নিলো নাদিয়া কে। ডান হাতের মুঠোয় থেকে মদের বোতল খসে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে ভেঙে গেল। খালি; মদ নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। এতটা মদ সে এক সপ্তাহেও খায় না! সেখানে মেয়েটা ঘন্টায় শেষ করে ফেলে। নিজের অন্যায় টা একটু করে উপলব্ধি করতে পারছে কি সে? নাকি শুধুই কিছুটা টান?

উৎফুল্ল চিত্তে রান্না করছিল মনিরা। কালকের রাত থেকে সময়টা তার এতটা আনন্দে যাচ্ছে, চারদিক শুধু সুখ আর সুখ। প্রিয় মানুষ টার বুকে মুখ গুঁজে এতটা সুখী লাগে? সে তো অন্য কারোর বুকে সুখ খুঁজেছিল, কিন্তু পাইনি। ওই বুকটা তাকে শুধু কষ্টে জর্জরিত‌ই করেছে। এক ফোঁটা সুখের দেখা মেলেনি। কাল রাতে হুট করেই যেন সুখের দেখাটা মিলে গেল। মনিরার আপনমনের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো কারো নরম কন্ঠস্বরে,
~ অজ্ঞান হ‌‌ওয়ার নাটক করে ঠিক করো নি মেয়ে।
শান্ত কন্ঠের তিক্ত কথা মনিরা কে এতটাই এলোমেলো করে দিল, হাতে থাকা চামচ নিচে পড়ে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকালো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো আহিশের দিকে। ধরা পড়ে হাঁসফাঁস করতে লাগলো সে। আহিশ মুচকি হেসে মনিরা কে দেখছে। কিছুটা সময় যেতেই বললো,
~ পার্লস চেইক করলেই যে শরীরের কন্ডিশন বুঝা যায়, ভুলে গিয়েছিলে হয়তো।
মনিরা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। লজ্জায় আহিশের চোখে চোখ‌ও রাখতে পারছে না। আহিশ এখনো শান্ত। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

~ বড্ড অন্যায় করেছো মেয়ে। আমি আহিশ এতটা সস্তা নয়, যতটা তোমরা দুজন নামিয়ে এনেছো। তোমার জীবনের এই ভুলটা দশ বছরের ক্ষত’র থেকেও তীক্ষ্ণ হবে। দেখে নিও, মেয়ে!
দাঁড়ালো না আহিশ। হন হন করে বাড়ির বাইরে চলে গেল। মনিরা স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো একা। কেউ নেই তার পাশে। চারপাশের এত সুখ কোথায় গেল? নেই, কোথাও নেই। গাল বেয়ে জলের ধারা নেমে আসতেই মৃদু কেঁপে উঠলো মনিরা। রান্নাটা সেভাবে রেখেই প্রাণপণে দৌড়াতে লাগলো। একমাত্র ভরসা সালেহা বেগম। সেই পারবে তাকে এই ক্ষত থেকে সারিয়ে তুলতে। এবার যে তার জীবন সর্বনাশা হয়ে উঠবে! বাঁচবে কি করে?

দু নম্বর গলিতে ঢুকেই চোখ মুখ কুঁচকে নিলো আফরা। ভুল পথে চলে আসে নি তো? সে তো ঠিক খবর‌ই রেখেছিল। তবে বিভ্রান্তি তে পড়ছে কেন? গলির শেষ মাথায় গিয়ে আফরা’র নাকের পাটাতন ফুলে উঠলো‌। কি রকম ছেলে মানুষি কাজ করেছে সে। সরাসরি রাস্তাটা ধরে আসলেই বাড়িটা পেয়ে যেত। একে তো সময় নষ্ট, তার‌উপর কতটুকু পথ হেঁটে অযহত পরিশ্রম। মেজাজ চটচটে হয়ে এলো তার। সিদ্ধান্ত নিলো আজ যাবেই না। পরমুহূর্তেই ভাবলো বাড়ির সামনে এসে ফিরে যাওয়া টা উচিত নয়। দোটানা নিয়েই রাস্তা পার হলো আফরা‌। ছোট খাটো বাড়িটা বেশ‌ সুন্দর। কলিং বেল টা ঠিক কোথায় খুঁজে পেল না আফরা। হাত বাড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো। পর পর কয়েকবার টোকা দেওয়ার পর ভেতর থেকে পায়ের শব্দ ভেসে এলো। কেউ এগিয়ে আসছে। আফরা অপ্রসন্ন দৃষ্টি তে তাকিয়ে র‌ইলো সেদিকে। তবে দৃষ্টিটা ততক্ষণ র‌ইলো যতক্ষণ সে কামিনী বেগম কে আসতে দেখলো। মহিলা কে দেখেই দৃষ্টি তার স্বাভাবিক হয়েছে‌। দরজা খুলে আফরা কে দেখেই কামিনী বেগম অবাক হলেন, মুহূর্ত সময় মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আফরার হাত আঁকড়ে ধরলেন। বিচলিত হলো আফরা। কিছু বললো না, মহিলার চোখ মুখে যে খুশি দেখেছে কিছু বলতেও দু বার ভাবতে হবে। কামিনী বেগম আফরা কে নিয়ে সরাসরি নিজের ঘরে গেলেন। বিছানায় বসিয়েও ক্ষান্ত হলেন না, ছুটে এলেন রান্নাঘরে। শুকনো কিছু খাবার নিয়ে আফরা’র সামনে রেখে সম্মুখে বসলেন। মিষ্টি হেসে জানান দিলেন, তার খুশির বার্তা। আফরা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে বললো,

~ আমি মাত্র‌ই খেয়ে এসেছি মিসেস। পেটে একটু জায়গাও নেই!
চোখ রাঙিয়ে তাকালেন কামিনী বেগম। চোখ দিয়েই যেন মুখের ভাষা প্রকাশ করলেন। কতটা সময় হয়ে গেছে, এখনো পেটে কিছু রয়েছে? আফরা কথা বললো না, এমনি এমনি আসেনি। প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যাওয়া তার হয়ে উঠে না। মুখে কিছু চানাচুর তুলে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো। আশেপাশে কেউ নেই। কামিনী বেগম হয়তো বুঝেছেন। পাশ থেকে নোট নিয়ে কিছু লিখলেন। আফরা’র সামনে তুলে ধরতেই দেখলো,
~ আফীফ , জিয়া হসপিটালে! তুমি কি দরকারে এসেছো?
আফরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কামিনী বেগম মুচকি হেসে আবার লিখলেন,
~ ছিনতাইকারী ধরেছিল, চোট পেয়েছে হালকা। ফোন দিয়েছিল, আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে না করেছে‌।
আফরা উঠে দাঁড়ালো। বেশ বিচলিত হয়েছে সে। আফরা’র বিচলিত ভাব দেখে কামিনী বেগম ঠোঁট টিপে হাসলেন।‌ হাসির কারণ খুঁজে পেল না আফরা। অস্থির কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

~ আমার সাথে যাবেন? চলুন!
সহজ সরল কথা টা শুনেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেল, ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন কামিনী বেগম। বড় বড় চোখ মেলে আফরা’র দিকে তাকিয়ে র‌ইলেন। এত দ্রুত মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন, আফরা কিছু বলার সুযোগ পেল না। কামিনী বেগমের হাতের উপর ডান হাত ছুঁয়ে বের হয়ে এলো বাড়ি থেকে। সন্দেহের তীর টা তার ঠিক জায়গায় পৌঁছেছে কিনা ধরতেই সে তাড়াহুড়ো পা চালালো। এত বড় অফিসার কে রাস্তার ছিনতাইকারী জখম করেছে ভাবতেও একটা মিথ্যের আভাস পেল আফরা। তবে সে ভুল‌ও হতে পারে।

তিনটে বেড পাশাপাশি। দুজন পুরুষ, একজন মহিলা শুয়ে আছে। ঘুমে বিভোর, গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ ঘরময় ছড়িয়ে আছে। জানালার পর্দাটা এখনো সরানো হয় নি। ভেতর থেকে বন্ধ দরজা। কয়েকবার নার্স এসে ডেকে গেলেও, আলসেমি তে দরজা খুলেনি কেউ। গলা মৃদু উঁচিয়ে নিজেদের ঠিক থাকার ইঙ্গিত দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দ। আফীফের ঘুম নড়বড়ে হয়ে এলো। পিটপিট করে চোখ খুলে, হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। এগারো টা বেজে গেছে। খানিক চমকানো ভাব দেখা গেল চোখে মুখে। কাল রাতে ঘুমায় নি, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বেশ কয়েকবার হসপিটাল টা রাউন্ড দিয়েছে। সন্দেহ জনক কিছু চোখে পড়েনি। তবে সে নিরাশ হয়নি।

“যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ ভাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন!” প্রবাদ টা বেশ মেনে চলে সে। বাহ্যিক চকচকে দেখে সোনা ভাবার মতো ভুল সে চাকরি’র প্রথম দিন‌ই করেছিল। কি লজ্জায় না সেদিন পড়তে হয়েছিল। এখনো সে কথা মনে হলে কপালের রগ ফুলে উঠে। হাসির পাত্র হয়ে গিয়েছিল সেদিন, চকচকে খেলনা বন্দুক কে আসল বন্দুক ভেবে বাবা’র হাতে তুলে দিয়ে অনভিজ্ঞের প্রমাণ সে ওই দিন‌ই দিয়েছিল। এরপর আর কোনো পরীক্ষায় তাকে কেউ হাসির পাত্র বানাতে পারেনি। বাবা’র গাইড, নিজের ইচ্ছাশক্তি, প্রবল জেদ, দেশপ্রেম আজ তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। কতটা কষ্টের ফসল আজকের আফীফ মুনতাসির, তা শুধু সেই জানে!
দরজা ধাক্কানোর শব্দ জোরালো হচ্ছে। আফীফ মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। দুটোই মরার মতো ঘুমাচ্ছে। আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো সে। হাতের ক্ষত টা তেমন না হলেও বুকের ক্ষতটা গভীর। উত্তেজনা বশত একটু জোরেই ছুরি চালিয়েছিল।দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে তিনজন পুলিশ ইউনিফর্ম পরা লোক ঢুকে পড়লো। একজন তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,

~ এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে! মরছিলেন?
মুখ শক্ত হয়ে এলো আফীফের। দ্বিগুন তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
~ মরলে নিশ্চয় আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম না! হসপিটাল নিশ্চয়ই ভুলে যান নি। এখানে সুস্থ মানুষ থাকে না, অজানা নয়। তা অভদ্রের মতো দরজা ধাক্কানোর কারণ? নার্সের কাছে এক্সট্রা চাবি ছিলো!
বিব্রত হলো তিনজন‌ই। কেমন শক্ত, শরীর হিম করা গলা। আমতা আমতা করে কিছু বলবে, তার আগেই দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কেউ বললো,

~ এদের জানা বা বুঝার পরিধি বেশী থাকলে আমার স্থানে থাকতো, নিচুতে নয়!
তাকিয়ে দেখলো আফীফ। কঠোর মুখশ্রী স্বাভাবিক হ‌ওয়ার বদলে যেন আরো একটু কঠোর হয়ে উঠলো। মুষ্টিবদ্ধ হাতের দিকে নজর বুলিয়ে তুচ্ছ কারণ’টায় নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো। এই ছেলেটাকে শুধু মাত্র আফরা’র পাশে রিকশায় দেখেছিল বলে এত রাগ হচ্ছে কেন? সে কি টিনেজার দের মতো ব্যবহার করছে? কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তো! সর্বনাশ! যত দ্রুত সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
~ আপনারা?

~ ইন্সপেক্টর নোমান! থানার বড় বাবু। অনেক দিন হলো ছিনতাইকারী গ্যাংটাকে ধরার পরিকল্পনা করছি। সুরাহা হচ্ছে না। সকালে হসপিটাল থেকে ফোন এলো, চলে এলাম। আপনার সাহায্য লাগবে।
হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো নোমান। আফীফ অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে বললো,
~ আমি কিভাবে সাহায্য করবো? তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। কাউকেই দেখি নি।
হতাশা’র শ্বাস ফেলে, মুখ বেঁকালো নোমান। এত দূর এসে পুরো পরিশ্রম বৃথা গেল দেখে চরম বিরক্ত হলো সে। আফীফ গম্ভীর দৃষ্টিতে নোমানের ভঙ্গিমা পরখ করছে। হুট করেই নোমান কনস্টেবলের হাত থেকে বাজেয়াপ্ত করা বন্দু* ক টা আফীফের সম্মুখে তুলে ধরে বললো,
~ চিকিৎসাধীন আপনার কাছে পেয়েছে, লাইসেন্স আছে?

হাত বাড়িয়ে বন্দুক টা নিজের হাতে নিয়ে প্যাকেট মুক্ত করলো আফীফ।‌ কালকে এডভেঞ্চারের উত্তেজনায় খেয়াল করেনি। বন্দুকটা তার ভীষণ প্রিয়, যেখানেই যাক সাথে নেওয়া চাই ই চাই। ভালো করে দেখে নিয়ে বললো,
~ বাম পকেটে থাকা বন্দুকের ব্যাপারে খোঁজ দিয়েছে, ডান পকেটে থাকা আইডির খোঁজ দেয়নি?
তীক্ষ্ণ কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করলো না আফীফ। ফের হতাশ কন্ঠে বললো,
~ নাহ! বাহ্যিক সুনাম হিসেবে হসপিটালের সার্ভিস একদম নিম্নে। সচেতনতার অভাব তো রয়েছেই; সবচেয়ে বেশী যেটা রয়েছে সেটি হলো সার্ভিস দিক বা না দিক দু হাত ভরে টাকা নেওয়ার ধান্দা রয়েছে!

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৩৮+৩৯+৪০

নোমানের কুঁচকানো ভ্রু’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো আফীফ। ডান পকেটে থাকা আইডি কার্ড বের করে বললো,
~ জেনারেল আফীফ মুনতাসির, সেনানিবাস ঢাকা! আশা রাখছি আর কোনো প্রশ্ন নেই, এবার আসতে পারেন।
জেনারেল শব্দ টা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র‌ই নোমান সম্মানের সহিত স্যালুট দিলো। আফীফ ঘাড় কাত করে মুচকি হাসলো। অনান ঘুম থেকে উঠে বিষয়টা নিশ্চুপ দেখছে। তবে এতকিছুর মাঝেও জিয়াউলের উঠার কোনো খবর নেই। নোমান মাথা নাড়িয়ে চলে আসতে নিবে, দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,
~ আসতে পারি?

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬