হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১১

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১১
সানা শেখ

মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“মিথ্যে বলার জায়গা পান না?”
“মিথ্যে কেন বলবো আশ্চর্য্য! সত্যি কথা বলছি। আর তোমাকে নিষেধ করলাম না আপনি ডাকতে?”
“একশ বার ডাকব আমি।”
“তাহলে আমি কি করব জানো?”
“কি করবেন?”

“তুমি যত বার আপনি বলবে আমিও তত বার চুমু খাব তোমার এই নরম দুটি ঠোঁটে।”
“বের হন আমার রুম থেকে অসভ্য লোক একটা।”
“অসভ্যতামি করেছি আমি এখনো?”
“আপনার এই ব্যাগ প্যাকেট নিয়ে বের হন আমার রুম থেকে। জীবনে আর দ্বিতীয় বার এই রুমে আসবেন না আপনি।”
“আমি এই রুমের বাইরে গেলে না দ্বিতীয় বার আসবো। আমি তো এই রুম থেকে আর বেরই হব না। এখানেই থাকবো , এখানেই খাব , এখানেই ঘুমাব। সব কিছু এই রুমেই করব।”
বলেই দাঁত বের করে হাসে।
আলভীর হাসি দেখে রাগে মায়ার গা জ্ব/লে ওঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“লজ্জা করছে না এসব কথা বলতে?”
“লজ্জা করলে সকলের সামনে বড় গলা করে কি বলতে পারতাম নাকি?”
“কি?”
“আমার বউয়ের সাথে সংসার করব, আব্বু – আম্মু,
শশুর – শাশুরি কে দশ বারো টা নাতি নাতনী উপহার দেব।”
“মগের মুল্লুক?”
“নাহ্।”

দুজনের মধ্যে এখন আধা হাত সমান দূরত্ব রয়েছে। আলভী এগিয়ে এসেছে মায়ার দিকে। আরেকটু ঝুকলেই মায়া চিৎ হয়ে বেডে পড়ে যাবে। আলভীর গরম শ্বাস মায়ার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। মায়া মহা বিরক্ত আলভীর উপর। নড়া চড়া যে করবে বা সরে যাবে সেই উপায় ও নেই। নিজে থেকে সরতে গেলে আলভী জড়িয়ে ধরতে নেয়। মায়া বুঝতে পারছে ওকে আলভী নামক এই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে ওর নিজের আপন ভাই। আগেই প্ল্যান করে এসেছে দুজন কি কি করবে। দেশে আসার সাথে সাথে ওর নিজের আপন ভাই টা কেও এই বদ লোক টা নিজের দলে টেনে নিয়েছে। খচ্চর একটা। মায়া বিরক্ত মাখা স্বরে বলে,

“গায়ের উপর উঠে আসবেন নাকি এখন?”
“উঠলে সমস্যা কোথায়?”
“অনেক সমস্যা। সরুন সামনে থেকে।”
“তুমি সরাও।”
“আপনাকে ছোঁয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার।”
“আমার আছে অনেক।”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই ব্যাটা কোন মাটি দিয়ে তৈরি?
আলভী মায়ার মুখের উপর ফুঁ দেয়। মায়া নাক মুখ কুচকে বলে,
“আপনার মুখে গন্ধ।”
“সিরিয়াসলি?”
“হ্যাঁ।”
আলভী আবার ফুঁ দেয়। তারপর বলে,

“সমস্যা নেই, তুমি চুমু খেলেই গন্ধ দৌড়ে পালাবে।”
“এই গন্ধ ওয়ালা মুখে জীবনেও চুমু খাব না আমি।”
” ওহ তার মানে গন্ধ না থাকলে চুমু খাবে তাইতো? ভালো করে শুঁকে দেখ একদম গন্ধ নেই। এখন চুমু খেতেই পারো, আমি মাইন্ড করব না একটুও।”
“বদ লোক যাবেন আপনি এখান থেকে?”
“দুটো চুমু দিয়ে দাও চলে যাই।”
“দুনিয়া উল্টে গেলেও না।”
“দুনিয়া উল্টে যাওয়ার আগেই বাসর করে বাপ হয়ে নানা, দাদাও হয়ে যাব।”
মায়া একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে আলভীর বুকে ঠেকায়। তারপর জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেয়। তাড়াহুড়ো করে বেডে উঠে দূরে সরে যায়।
আলভী নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আবার মায়ার দিকে তাকায়।

“বাব্বাহ এই টুকু শরীরে দেখছি অনেক শক্তি।”
মায়া বলে না কিছু।
“ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে গুছিয়ে রেখে নিচে আসো খাবার খাওয়ার জন্য।”
মায়া তবুও কিছু বলে না।
আলভী নিজেও আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আলভী চলে যেতেই মায়া দপ করে বেডে বসে পড়ে।
আলভী দিন দিন নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছে। কথা বার্তার কি শ্রী, কোন কন্ট্রোল নেই।
বেডের উপর থাকা ব্যাগ গুলোর দিকে তাকায়। এত গুলো ব্যাগ? কি কি এনেছে এত? ভেবেছিল তো ওর জন্য কিছুই আনেনি। এখন তো দেখছে অর্ধেক ওর জন্যই এনেছে।

মাহিদ ফ্রেস হয়ে ড্রইং রুমে এসে দাদীর পাশে বসে।
নাহার বেগম মাহিদ এর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলেন,
“সকলের জন্য শপিং করে আনলি মায়ার জন্য কোথায়?”
“শপিং তো আমি করিনি, ভাইয়া করেছে।”
“তাই বলে মায়ার জন্য কিছু আনবি না?”
“মায়ার জন্য যত গুলো এনেছে তত গুলো আমাদের সকলের জন্যও আনেনি। আমাদের সকলের ড্রেসের যেই দাম পড়েছে তার ডবলেরও বেশি দাম মায়ার গুলোর।”
“মায়ার জন্য এনেছে?”

“ভাইয়ার হাতে যত গুলো শপিং ব্যাগ ছিল তার মধ্যে থেকে ভাইয়ার দুটো আর বাকি গুলো মায়ার।”
নাহার বেগমের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তখন বোধহয় সকলের সামনে বউ কে দিতে সরম পাচ্ছিল।
আধা ঘণ্টার মধ্যে সকলে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হয়।
ঐশী রহমানের মুখ থমথমে হয়ে আছে। মেহবুবা মেহের এর মুখ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
আলতাফ মাহমুদ ঐশী রহমান এর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোমার মুখ এমন করে রেখেছো কেন? কি হয়েছে?”
ঐশী রহমান কিছু বলেন না।
নাহার বেগম বলেন,
“ঐশীর মন খারাপ হয়েছে আলভী সকলের জন্য ড্রেস এনেছে কিন্তু মায়ার জন্য আনেনি তাই।”
মাহিদ বলে,

“বড় মা খুশিতে তো তোমার নাচা উচিত। ভাইয়া শপিং মলে গিয়েছিলই মায়ার জন্য ড্রেস কিনতে। সাথে আমাদের সকলের জন্যও এনেছে। ভাইয়া যেই ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে গিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে দুটো ভাইয়ার আর বাকি সব মায়ার জন্য ছিল। এখন খুশি হয়ে মন খুলে হাসো।”
মাহিদ এর কথা শুনে সবাই মাহিদ এর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“সত্যি কথা বলছি। মায়া কে জিজ্ঞেস করো। কিরে মায়া ব্যাগ গুলো তোকে দিয়েছে না?”
মায়া মাথা নাড়ায় আস্তে করে। সকলের চোখে মুখে হাসির আভাস দেখা যায়।
খাবার খেতে খেতে আলভী বলে,
“আমার একটা সিম কার্ড লাগবে বাংলাদেশের।”
সবাই আলভীর দিকে তাকায়।

“এভাবে তাকাচ্ছো কেন সবাই? মনে হচ্ছে সিম কার্ড নয় কয়েকশো কোটি টাকা বা কারো হৃদপিন্ড চেয়েছি।”
আলভীর বলার ধরণ দেখে ফিক করে হেসে ওঠে মাহিদ। বাকি সবাই ও মুচকি হাসে। মায়া হাসতে না চাইলেও হেসে ওঠে।
আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“কোন কোম্পানির সিম কার্ড লাগবে?”
“যেটা তে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে সেটাই।”
“আচ্ছা আগামী কাল এনে দেব।”

খাওয়া শেষে বড়রা নিজেদের রুমে চলে যায়।
আলভী নিজেও নিজের রুমে চলে যায়।
সোফায় বসে মায়া, মাহিদ এর মাহির। সানজিদা মানতাসা কে ঘুম পাড়ানোর জন্য চলে গেছে রুমে।
আলভী রুমে চলে গেছে বলেই মায়া সোফায় বসেছে দুই ভাইয়ের পাশে।
একটু পরেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে আলভী। হাতে পানির খালি বোতল।
মায়া আলভী কে দেখে বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়।
তারপর জোরে জোরেই বলে,

“ভাইয়া তোমরা এমন কেন? তোমাদের মধ্যে লজ্জা সরম বলতে কিছু কি নেই? এত বড় বড় ছেলে হয়েও বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কেমন করে এভাবে এই লম্বা শ্বাস ঠ্যাং গুলো বের করে রাখো? লজ্জা করে না?
দুই ভাই কিছু বলার আগেই আলভী এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
“আমাদের মধ্যে বিন্দু মাত্র লজ্জা সরম নেই। শুধু থ্রি কোয়ার্টার, টু কোয়ার্টার কেন, শর্টস পড়েও ঘুরতে পারব লজ্জা করবে না।”

বলতে বলতে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায়। হা করে তিন ভাই বোন আলভীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। সিরিয়াসলি? থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে থাকে, তাই বলে শর্টস পড়ে ঘুরবে? এত টা নির্লজ্জ্ব ওরা না।
আলভী পানি নিয়ে আবার তিন জনের দিকে এগিয়ে আসে। সোফায় বসে থাকা মাহিদ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই শা/লা আমার রুমে আয়।”
তিন জনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
মাহিদ অবাক স্বরে বলে,
“গালী দিচ্ছ কেন ভাইয়া?”
আলভী নিজেও অবাক হয়ে বলে,
“গালী কখন দিলাম আবার আমি?”
“মাত্রই তো শা/লা বলে গালী দিলে।”

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১০

“তুইতো আমার শা/লাই। তাইতো শা/লা বলেছি। শা/লা বললে গালী দেওয়া হয় সমন্ধী?”
মাহিরের চোখ দুটো যেন এখন কোটর থেকে বেরিয়েই আসবে। এই ছেলে এমন হয়েছে কেন? সবাই কে অবাকের উপর অবাক করাই যেন এর কাজ।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১২